প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৭
Drm Shohag
মাইরা কলেজে যাওয়ার জন্য বোরখা পরছিল। ইরফান হঠাৎ-ই কোথা থেকে যেন এসে মাইরার হাত টেনে ধরে। মাইরা ভ্রু কুঁচকে পিছু ফিরে তাকায়। ইরফান মাইরার হাত থেকে বোরখা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। মাইরা বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“কি করছেন? আমি কলেজ যাবো তো!”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ওই কলেজ এ আর পড়বে না।”
মাইরা কি বলবে বুঝে পায় না। অবাক হয়ে বলে,
“তাহলে কোথায় পড়ব?”
ইরফান মাইরার মাথার এলোমেলো চুল কানের পিঠে গুঁজে দেয়। মৃদুস্বরে বলে,
“নিউ কলেজ।”
মাইরা বিরক্ত হয়। এই লোকটা একটা অদ্ভুদ প্রাণী। সে এই কলেজেই পড়বে। গতকালকেই কয়েকজনের সাথে একটু একটু বন্ধুত্ব হয়েছে। আর এই লোকটার বান্ধবী টাও কত ভালো। কলেজ টাও খুব ভালো৷ সব মিলিয়ে মাইরার এই কলেজ ভালো লেগেছে৷ মাইরা ইরফানের সামনে থেকে সরে গিয়ে মেঝে থেকে বোরখা তুলে নেয়। ইরফান আবারও মাইরার হাত থেকে বোরখা কেড়ে নিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে,
“স্টুপিট আমায় রাগিয়ো না।
একটু থেমে মাইরার গালে হাত দিয়ে নরম গলায় বলে,
ওর চেয়ে ভালো কলেজে তোমায় অ্যাডমিট করিয়ে দিব, ওকে?”
মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কিন্তুু এই কলেজে পড়লে কি হবে?”
“এই কলেজের কিছু পার্সন তোমার প্রোপার্টির দিকে নজর দেয়।”
মাইরা বোকা চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। অতঃপর বলে,
“আপনি কি পা’গ’ল? আমার তো সম্পদ-ই নেই। কেউ নজর দিবে কিভাবে? কিসব আজগুবি কথাবার্তা!”
ইরফান বিরক্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার দু’কাঁধ দু’হাতে চেপে ধরে রেগে বলে,
“স্টুপিট, থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা মুখ ফোলায়। মাথা নিচু করে বলে,
“আমি ওই কলেজেই পড়তে চাই, প্লিজ!”
ইরফান মাইরাকে ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“নো।”
মাইরা হঠাৎ-ই ইরফানের দু’হাত তার দু’হাতে ধরে বাচ্চাদের মতো আবদার করে,
“প্লিজ! আমি ওই কলেজে পড়তে চাই। আপনার সব কথা শুনবো, একদম প্রমিস।”
ইরফান কেমন অদ্ভুদচোখে তার দু’হাতের দিকে চেয়ে আছে। যে দু’হাত আপাতত মাইরা তার দু’হাতে ধরে আছে। ঠিক যেমন বাচ্চারা কারো কাছে তাদের ইচ্ছে পূরণ করতে আবদার করে।
ইরফান দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার মুখের দিকে তাকায়। মাইরা চাতক পাখির ন্যায় ইরফানের দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায়। ইরফান মাইরার দিকে একটু চেপে দাঁড়িয়ে বলে,
“ওকে।”
মাইরার চোখ দু’টো চকচক করে ওঠে। খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
“সত্যি?”
ইরফান মাইরার পানে চেয়ে আছে। মাইরা হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“আপনি অনেক ভালো।”
কথাটা বলে ইরফানের দু’হাত ছেড়ে পিছু যেতে নিলে ইরফান বা হাতে মাইরাকে তার সাথে চেপে ধরে। মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার গালে ডান হাত ডুবিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“আই নো, তুমি তোমার উইশ অনুযায়ী চলাফেরা করতে চাও। ফ্রিডম চাও। বাট তোমার সব উইশ পূরণ হবে না। লাইক, তোমার সব কাজে ইরফান নেওয়াজ-ই থাকবে। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
মাইরা বোঝার চেষ্টা করছে, তার কোন ইচ্ছে পূরণ হবে না। তাকে তো কলেজে পড়তে দিবে বললো। নাকি মত চেঞ্জ করলো? মাইরা অসহায় মুখ করে বলে,
“আমি এই কলেজেই পড়তে চাই।”
ইরফান মাইরাকে ছেড়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলে,
“স্টুপিট। বলেছি তো, ওকে।”
মাইরার মন ভালো হয়। কিন্তুু তার কোণ ইচ্ছে পূরণ হবে না, এটা মাইরা বুঝলো না।
ভাবনা রেখে সে ঝটপট রেডি হয়ে নিল। নয়তো কলেজের লেট হয়ে যাবে। তার রেডি হওয়া শেষ, এর মধ্যে ইরফান শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে।
মাইরা একবার ইরফানের দিকে তাকিয়ে বাইরে বেরতে নিলে ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“বাইরে ওয়েট করবে।”
মাইরা প্রশ্নাত্মক চোখে চায় ইরফানের দিকে। ইরফান রেডি হতে ব্যস্ত হলো। মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কেন ওয়েট করবো?”
ইরফান তার গায়ে শার্ট জড়াতে জড়াতে মাইরার দিকে চেয়ে ছোট করে বলে,
“কজ, তুমি আমার সাথে যাবে।”
মাইরা মুখ বাঁকায়। এতোদিন তাকে ভুলে ছিল, এখন ঢং করছে। লাগবে না। কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে যায়।
ইরফান রেডি হয়ে নিচে নামলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মাইরাকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রুমা নেওয়াজ ইরফানকে খেতে বসতে বলে। ইরফান তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“ও কোথায়?”
রুমা নেওয়াজ ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো খানিক। ইরফান যে মাইরার কথা জিজ্ঞেস করেছে তিনি বুঝেছেন। অনেকদিন হলো তো মাইরাকে কলেজ নিয়ে যায় না। তা নিয়ে তারেক নেওয়াজ খুব বিরক্ত ছিল ইরফানের উপর। আর গতকাল যা ঘটলো এরপর তারেক নেওয়াজ অনেক বেশি রেগে আছে ইরফানের উপর।
ইরফান তার মায়ের দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায়। রুমা নেওয়াজ মৃদুস্বরে বলে,
“তুমি খেয়ে ভার্সিটি যাও বাবা। মাইরাকে তোমার বাবা ওর কলেজে রাখতে গিয়েছে।”
ইরফান কথাটা শুনেই অবাক হয়ে বলে,
“হোয়াট?”
রুমা নেওয়াজ ছেলের ব্যবহারে একটু অবাক হয়। এতোদিন তো ইরফান নিজেই মাইরার প্রতি উদাসীন ছিল। ঠিক উদাসীন বলা যায় না। সে নিজে মাইরার কাজগুলো না করে তার বাবাকে দিয়ে করিয়ে নিতো। এক্ষেত্রে কখনো অবহেলা করেনি। কিন্তুু এখন নিজেই চাইছে, তাই খানিকটা অবাক হলেন। ইরফান সময় নষ্ট না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে রুমা নেওয়াজ পিছু ডাকে।
“ইরফান খেয়ে যাও।”
ইরফান ছোট্ট করে বলে,
“বাইরে খেয়ে নিব আম্মু।”
ছেলেটার রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে। সে এই স্টুপিট কে বলেই দিয়েছে যেন ওয়েট করে। পাকনামি করে চলে গিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে,
“স্টুপিট গার্ল। থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার আমি।”
মাইরা কলেজ গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারেক নেওয়াজ মাত্রই তাকে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে। মাইরা এদিক-ওদিক তাকায়৷ তার মাথায় কিছু চলছে। কাঁধের ব্যাগ ডান হাতে ধরে রেখে আশেপাশে চোখ বুলায়। একটু দূরে দোকান খোলা পেয়ে দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। এরপর দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে,
“আঙ্কেল সুপার গ্লু আছে?”
ভদ্রলোক সম্মতি দিলে মাইরা দোকানওয়ালাকে চারটে সুপার গ্লু দিতে বলে। মাইরার কথা অনুযায়ী ভদ্রলোক চারটে সুপার গ্লু মাইরার দিকে এগিয়ে দেয়। মাইরা কিছু একটা ভেবে মিটিমিটি হাসছে। সুপার গ্লু গুলে ব্যাগে রেখে দেয়। এরপর দোকানদারের দিকে ৫০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলে ভদ্রলোক জানান খুচরা নেই। মাইরা অসহায় চোখে তাকায়। তারেক নেওয়াজ তো তাকে খুচরা টাকা দেয় না। এমন নোট টাকা দেয় মাঝে মাঝেই।এখন কি করবে?
ভাবনার মাঝেই মাইরার পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে দোকানদারের নিকট একশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“সুপার গ্লুর দাম এখান থেকে রাখুন।”
দোকানদার ছেলেটির থেকে টাকা নেয়। মাইরা দ্রুত পাশ ফিরে তাকায়। ছেলেটি দোকানদারের দিকে তাকিয়ে আছে। মাইরা সাইড থেকে দেখল, তার চেনা চেনা লাগলো। কিন্তুু মনে করতে পারলো না কোথায় দেখেছে। অবাক হয়ে বলে,
“আপনি আমার টাকা দিচ্ছেন কেন?”
সাজিদ খুব স্বাভাবিক মুখাবয়বে তাকায় মাইরার দিকে। মৃদু হেসে বলে,
“তেমার কাছে নেই। তাই তোমাকে হেল্প করছি।”
কথাটা বলে আবারও সামনে তাকায়। মাইরা কিছু একটা ভেবে বলে,
“আপনি ফারাহ আপুর ফ্রেন্ড না?”
সাজিদ ছোট করে বলে, “হুম।”
মাইরা মাথা নাড়িয়ে বলে, “থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আমি আপনাকে পরে দিয়ে দিব।”
সাজিদ দোকানদারের থেকে বাকি টাকা ফেরত নিয়ে পকেটে টাকা রাখতে রাখতে মাইরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“লাগবে না। তুমি থ্যাংক ইউ দিলে, এতেই হয়ে যাবে।”
কথাটা বলে আর দাঁড়ায় না। দ্রুত পায়ে উল্টো ঘুরে ভার্সিটির দিকে চলে যায়। মাইরা বেশি কিছু ভাবলো না। সেও তার কলেজ গেইটের ভেতর যেতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে ধরে। মাইরা পিছু ফিরে তাকিয়ে ইরফানকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
“আপনি?”
ইরফান রেগে বলে,
“স্টুপিট, আমি তোমাকে ওয়েট করতে বলিনি?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“বাবা বলেছে তার সাথে আসতে।”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“বাইরে কি করছ?”
মাইরা কিছু বলার আগেই ইরফানের পাশে অন্তরাকে দেখে সালাম দেয় ম্যাম সম্মোধন করে। অন্তরা সালাম এর উত্তর নেয়। ইরফান অন্তরার দিকে তাকালো না। মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,
“ছুটির পর কলেজ থেকে বের হবে না। ভেতরে যাও।”
মাইরা একবার অন্তরার দিকে তাকালো। অন্তরা কেমন করে যেন ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান ধমক দেয়, “ভেতরে যেতে বলেছি আমি।”
মাইরা কেঁপে ওঠে। দ্রুত অন্তরার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে উল্টো ঘুরে কলেজ গেইটের দিকে পা বাড়ায়। অন্তরা ঢোক গিলে বলে,
“ইরফান আমার সাথে দু’মিনিট কথা বলবে? প্লিজ!”
ইরফান মাইরার দিকে চেয়েই গম্ভীর গলায় বলে, “নো।”
অন্তরা ইরফানের হাত ধরতে গিয়েও গুটিয়ে নিল। ইরফান ভীষণ রেগে যায় এই কাজ করলে। থাপ্পড় মারতে একবারও ভাববে না। ইরফান দু’হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে মাইরার পানে চেয়ে রইল। মাইরা একবার পিছু ফিরে তাকায়। দেখল ইরফান তার দিকেই চেয়ে আছে। এটা দেখে কেন যেন মাইরার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। তবে ইরফানের দিকে অন্তরার দৃষ্টি দেখে মাইরার কেমন যেন লাগে। ভালো লাগে না। বন্ধুর দিকে কেউ এভাবে তাকায়? ভাবনা রেখে সামনে এগোয়।
মাইরাকে যতক্ষণ দেখা ইরফান ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। মাইরা মিলিয়ে গেলে ইরফান তার গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। অন্তরা মৃদুস্বরে বলে,
“মাইরাকে কেন ভালোবাসলে ইরফান?”
ইরফানের পা থেমে যায়। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। উল্টো ঘুরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“সেই কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিব? হু আর ইউ?”
অন্তরা চোখ নামিয়ে নেয়। তার যে গতকাল থেকে কষ্টের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। যখন থেকে বুঝেছে ইরফান মাইরাকে ভালোবাসে। তার নিজেকে পা’গ’ল পা’গ’ল লাগে। ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“ইরফান আমি….”
ইরফান অন্তরার কথা শুনলোই না। উল্টো ঘুরে গটগট পায়ে চলে যায়। অন্তরা ছলছল চোখে ইরফানের প্রস্থানের দিকে চেয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একসময় নিজেকে সামলে নিয়ে কলেজে চলে যায়।
মাইরার দু’টো ক্লাস শেষ হয়েছে। মাইরার সাথেতিনটে মেয়ের পরিচয় হয়েছে গতকাল। আজ তাদের সাথেই বসেছে। একজন বলে ওঠে,
“মাইরা তুই এনেছিস তো সুপার গ্লু?”
মাইরা মেয়েটার কথা শুনে ব্যাগ থেকে চারটে সুপার গ্লু বের করে সবাইকে দেখিয়ে হেসে বলে,
“জীবনেও ভুলব না। এসব কাজ করতে কেউ ভুলে যায় নাকি?”
আরেকটি মেয়ে মাইরার পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে,
“তুমি কি বুদ্ধিমতী রে মাইরা!”
মাইরা তার হিজাবের দু’পাশ নাড়িয়ে ভাব নিয়ে বলে,
“দেখতে হবে না মাথা টা কার!”
মাইরার কথায় সবাই হেসে ফেলল। তাদের কথার মাঝেই তাদের তৃতীয় ক্লাস নেয়ার জন্য অন্তরা রুমে প্রবেশ করে। মাইরা দ্রুত সুপার গ্লু গুলো ব্যাগে ভরে তার পাশের জনকে বলে,
“জানিস, এই ম্যাম অনেক ভালো।”
মেয়েটি বলে,
“হ্যাঁ রে হ্যাঁ জানি। এ পর্যন্ত ২০০ বার বলে ফেলেছিস।”
মাইরা একটু হাসলো। কিছুক্ষণ পেরোতেই অন্তরা মাইরাকে দাঁড় করায়। মাইরা কিছু মনে করল না। বরং হাসি মুখে দাঁড়ালো। অন্তরার মুখাবয়ব আজ স্বাভাবিক নয়, বরং শক্ত। যেন মাইরাকে এক্ষুনি খেয়ে ফেললে তার মনের জ্বালা মিটতো। অন্তরা মাইরাকে সামনে ডাকলো। মাইরা ভদ্র মেয়ের মতে তার ম্যাম এর কথা মেনে অন্তরার সামনে এসে দাঁড়ায়। অন্তরা সামনে উঁচু জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে। মাইরাকে দু’টো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে বলে। মাইরা এবারেও মেনে নিল।
অন্তরার মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে বই য়ের একদম শেষ অংশ থেকে কোয়শ্চন করে। দুঃখের বিষয় মাইরা একটাও পারছে না। পারবে কি করে? সে মাত্র কলেজে উঠলো। সর্বোচ্চ প্রথম থেকে দু’টো থেকে তিনএে অধ্যায় পড়া হয়েছে তার। সেখানে কোথা থেকে যে প্রশ্ন ধরছে মাইরার সব মাথার উপর দিয়ে যায়। মাইরা মিনমিন করে বলে,
“ম্যাম এগুলো তে আমাদের পড়ানো…”
অন্তরা চিল্লিয়ে ধমক দেয়, “সাট আপ।”
মাইরা সহ ক্লাসের সকলেই কেঁপে ওঠে। মাইরা দু’হাত জমা করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
অন্তরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে স্টিলের স্কেল চায়। একজন স্কেল বের করে অন্তরার হাতে দেয়। অন্তরা এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট করল না। গটগট পায়ে এগিয়ে এসে মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় বলে,
“হাত বাড়াও।”
মাইরা বিস্ময় চোখে তাকায় অন্তরার দিকে। অন্তরা ভয়ংকর রেগে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাইরা ঢোক গিলে। তার দোষ কোথায়, সে আসলে বুঝতে পারছে না। মাইরাকে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অন্তরা নিজেই মাইরার হাত টেনে মেলে ধরে। এরপর গায়ের সব শক্তি দিয়ে মাইরার হাতে বারি দেয়। মাইরা চোখ বুজে নিল। মনে হলো তার জান বের হয়ে গেল। অন্তরা থামলো না, পর পর আরও দু’টো স্কেলের বারি দেয় মাইরার হাতে। মাইরার মনে হলো তার হাত অবশ হয়ে আছে। মেয়েটা সহ্য করতে না পেরে হাত সরিয়ে নেয়। ব্য’থায় তার চোখে পানির কণা জমলো।
অন্তরার বোধয় পছন্দ হলো না মাইরার হাত সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা। আবারও মাইরার হাত জোর করে টেনে এনে হাতে আরও দু’টো বারি দেয়। মাইরার গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করল। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। অন্তরা হাতের স্কেল ছুঁড়ে ফেলে শক্ত গলায় বলে,
“এরপর থেকে আমার পড়া না করে ক্লাসে আসলে এর চেয়েও ভয়ংকর পরিণত হবে।”
ক্লাসের সবাই থমথমে মুখে চেয়ে আছে। পুরো ক্লাস নিস্তব্ধ। মাইরা তার হাতের দিকে তাকালো। জায়গায় জায়গায় কেটে র’ক্ত বেরিয়েছে। অন্তরা মাইরার উদ্দেশ্যে বলে,
“এ্যাই মেয়ে বেঞ্চের উপর উঠে কান ধরে দাঁড়াও যাও।”
মাইরা বিস্ময় চোখে তাকায় অন্তরার দিকে। অন্তরা ধমক দিলে মাইরাকে সত্যি সত্যিই তার জায়গায় গিয়ে বেঞ্চের উপর উঠে কান ধরে দাঁড়াতে হয়। অনেকে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসছে। মাইরা এ জীবনে এতো অপমানিত হয়নি। স্কুল লাইফ পার করে এসেছে, কিন্তুু এমন পরিস্থিতিতে সে কখনো পড়েনি। সে একটু দুষ্টুমি করতো। কিন্তুু ভালো ছাত্রী হওয়ায়, আর বে’য়া’দ’বি না করায়, আবার সবার সাথে মিশুক হওয়ায় মাইরা সবসময় সব স্যার মেডামদের প্রিয় তালিকায় থেকেছে। ফলস্বরূপ এর ধারের কাছেও শাস্তির তার অভিজ্ঞতা নেই মেয়েটার। সেখানে আজ এতো মার, সাথে অপমান। মাইরা তার বুকের সাথে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। মার খেয়ে যতটুকু না লেগেছে তার চেয়ে অপমানে বেশি লাগছে।
মাইরার বান্ধবীরা অসহায় চোখে শুধু চেয়ে রইল।
ক্লাসের বেল বাজলে মাইরা এক সেকেন্ড ও সেখানে দাঁড়ায় না। তার ব্যাগ নিয়ে এক প্রকার দৌড়ে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে কমন রুমের দিকে যায়। পিছু পিছু মাইরার বান্ধবীরা যায়। মাইরাকে ডাকে, মাথায় হাত বুলায়। মাইরা কারো সাথে একটা কথাও বললো না। সে সব মেনে নিতে পারে, কিন্তুু অপমান মানতে পারে না। তাকে তো অপমান করা হয়েছে। সবসময় হাসতে পারলেও এখন কেন যেন শুধু কান্নাই পাচ্ছে মেয়েটার। মাথা নিচু করে নিরবে কাঁদে। ইরফানের কথা মনে পড়লো ভীষণ। যাওয়ার আগে তার গালে হাত রেখে বলেছিল, ‘ছুটি শেষে বের হবে না।’
মাইরা বুঝেছে ইরফান তাকে নিতে আসবে। তার ইচ্ছে করল ইরফান এক্ষুনি এসে তাকে নিয়ে যাক এখান থেকে। তার বান্ধবী একটুও ভালো নয়।
প্রায় ঘণ্টাখানিক মাইরা মাথা নিচু করে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়। এরপর মাইরা নিজেকে সামলে ওয়াশরুম থেকে মুখে পানি দেয়, ডান হাত টা ট্যেপের নিচে ধরে রাখে কয়েক মিনিট। দাঁতে দাঁত চেপে ব্য’থা সহ্য করে নেয়। এরপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।
তার তিনটে নতুন ফ্রেন্ড অসহায় মুখ করে গোল হয়ে বসে আছে। মাইরার খারাপ লাগলো তার জন্যএরা সবাই মন খারাপ করে বসে আছে।
মাইরা তাদের পাশে এসে বসে হেসে বলে,
“এই তোরা এমন কেন? অন্যকেউ মন খারাপ করে থাকলে তোদের উচিৎ তাকে জোক্স বলিয়ে মন ভালো করে দেয়া। তা না করে তোরাও শোক পালন করছিস। ধ্যাত!”
সবাই অবাক হয়ে তাকায় মাইরার পানে। মেয়েটা সত্যিই হাসছে। যেন দুঃখের ছিঁটেফোঁটা তার মাঝে নেই। মাইরা হেসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলে শব্দ করে হাসে। মাইরার কথা শুনে ওরাও না হেসে পারলো না। চার বান্ধবী হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর হাসতে হাসতে হেলে পড়ছে। একটু আগেই যেখানে মাইরা কেঁদে ভাসালো, সে মেয়েই সবাইকে প্রাণখোলা হাসি উপহার দিচ্ছে।
ইরফান ক্লাস রুমে থেকে বেরিয়ে আসে। শুদ্ধ কিছুটা দূরের একটি রুম থেকে ক্লাস নিয়ে বেরিয়ে ইরফানকে দেখে এগিয়ে আসে ইরফানের দিকে। ইরফানের দৃষ্টি অনুসরণ করে আফসোসের সুরে বলে,
“আজ মাইরা ছোট বলে! একটু বড় হলেই কি সুন্দর তোর সাথে ভার্সিটি এসে তোর কোলে বসতে পারতো! আমার কি যে কষ্ট হয়!”
লাস্ট কথাটা চরম দুঃখ দুঃখ মুখ করে বলে।
ইরফান বিরক্তিকর চোখে তাকালো শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আরে সত্যি বলছি, আমার মারাত্মক কষ্ট হয়। এখন মাইরা টা এখানে থাকলেই তুই কি সুন্দর তোর অফিস রুমে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে পারতি!”
ইরফান রেগে বলে,
“সাটআপ।”
শুদ্ধ না বোঝার ভান করে বলে,
“কি টাপ?”
ইরফান বিরক্তি ভরা চাহনী শুদ্ধর থেকে সরিয়ে নিয়ে মাঠের দিকে দৃষ্টি রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“আই থিংক, ফারাহ’র সাথে ছেলেটাকে পার্ফেক্ট লাগছে।”
কথাটা বলে গম্ভীর মুখাবয়বে তার অফিস রুমের দিকে যায়।
শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকায়। ব্যাপার টা হলো তার ফারাহ’র পাশে শাহেদ কে দেখে মেজাজ টা বিগড়ে তো গেলোই। সাথে অবাক হলো ইরফানের কথা শুনে। এতোদিন সে সবাইকে জ্বালিয়েছে, অন্যরাও সুযোগ পেলে জ্বালিয়েছে। এসব নরমাল। কিন্তুু ইরফান? ইরফান তাকে জ্বালাতে চাইছে? ইম্পসিবল! এটা আদৌও ইরফান তো! হাউ পসিবল! এসবের রহস্য পরে উদ্ঘাটন করা যাবে। আগে এই জ্বলুনি ফারাহ’র ব্যবস্থা করতে হবে। সে কি সুন্দর ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। এই একটা মেয়ে শুধু তার ঠাণ্ডা মেজাজ গরম করে দেয়।
শুদ্ধ দ্রুতপায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে, যেখানে ফারাহ সহ তার ফ্রেন্ডরা বসে আছে। শুদ্ধ গম্ভীর গলায় ডাকে,
“ফারাহ?”
সবাই শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ কে সালাম দেয়। শুদ্ধ সালাম এর উত্তর দেয়। শাহেদ এর দিকে একবার তাকালো। একেই তো ফারাহ সুন্দর বলেছিল। আবার এর পাশে বসে আছে। কি অবস্থা! সে মানবে কি করে এসব? রেগে তাকায় ফারাহ’র দিকে। ফারাহ সবার মাঝ থেকে উঠে এসে শুদ্ধর সামনে দাঁড়ায়। ফারাহ’র ফ্রেন্ড রা শুদ্ধ আর ফারাহ’র ব্যাপার জানে। এজন্য কিছু বলল না। শুদ্ধ না থাকলে অবশ্য মজা নিত।
ফারাহ শুদ্ধর সামনে এসে দাঁড়ালে শুদ্ধ কোনো কথা না বলেই ফারাহ’র হাত ধরে হাঁটতে থাকে। ফারাহ অবাক হয়ে বলে,
“আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?”
শুদ্ধ কিছুই বলল না। ফারাহ’র হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে তার গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর রেগে বলে,
“এই মেয়ে এই, ছেলেদের পাশে বসার স্বভাব কোথায় পেয়েছ?”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ওরা আমার ফ্রেন্ড।”
শুদ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এতো ফ্রেন্ড লাগবে না। ওরা ভালো না। তোমার পাশে বসার সুতো খোঁজে ওরা।”
“মোটেও না। ওরা সবাই আমাকে বোন ভাবে।”
শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলে,
“এতো ভাবাভাবি বাদ। তোমাকে আমি কয়েকটা সুন্দর ফ্রেন্ড…
একটু থেমে বলে,
তওবা তওবা, এটা বিশ্রী হবে। তোমাকে আমি কয়েকটা বিশ্রী ফ্রেন্ড খুঁজে দিব। ওরা নিজেদের বামুন ভেবে তোমার থেকে এমনিই দূরে থাকবে, আর তুমিও ওদের দেখে ক্রাশ ফ্রাশ খাবা না। শেষ। এতো জ্বালাও। গরম লেগে গেল। উফ!”
ফারাহ শুদ্ধর অবস্থা দেখে মুখ লুকিয়ে একটু হাসলো। শুদ্ধ খেয়াল করতেই হঠাৎ-ই কেমন যেন ভীষণ রাগান্বিত স্বরে ডেকে ওঠে,
“ফারাহ?”
ফারাহ কেঁপে ওঠে। শুদ্ধর দিকে তাকালে দেখল, শুদ্ধ শক্ত চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ নিরেট কণ্ঠে বলে,
“সব ব্যাপারে ত্যাড়ামি মাথা পেতে মেনে নিব ফারাহ। বাট এই ব্যাপারে ফান করে যে ত্যাড়ামি টা করবে,, বিলিভ মি, তোমার অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না তুমি।”
কথাটা বলে চোখ বুজে শ্বাস নিয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
“আর ক্লাস আছে?”
ফারাহ মাথা নাড়িয়ে না সম্মতি দেয়। শুদ্ধ গাড়ির দরজা খুলে দেয়। ফারাহ একবার শুদ্ধর দিকে তাকালো। ফারাহ’র অবাক লাগে শুদ্ধর হঠাৎ এমন রূপ দেখে।
শুদ্ধ আশেপাশে একবার তাকালো। এরপর সুযোগ বুঝে হঠাৎ-ই ফারাহ’র গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নেয়। ফারাহ থতমত খেয়ে যায়। শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
“এভাবে তাকালে কন্ট্রোল থাকে না ফারাহ পাখি। আপাতত চোখ নামিয়েই রাখো।”
ফারাহ দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে। শুদ্ধ গাড়ির ডোর লাগিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
মাইরা প্রথম তিনটে ক্লাস করে আর ক্লাসে যায়নি। কমন রুমেই বসে আছে। তার ফ্রেন্ডদের যেতে বলেছিল তারা মাইরাকে রেখে যায়নি। ছুটির ঘণ্টা কানে আসলে চার বান্ধবী কাঁধে ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে পা রাখতেই মাইরার মনটা বিষন্নতায় ঘিরে ধরে। সে তো অন্তরাকে কত ভালো বলছিল। তবে তার সাথে কারণ ছাড়া এমন কেন করল? মেয়েটা কিছুই বুঝতে পারে না। মাথা উঁচু করে মাঠের এক সাইডে ইরফানকে দেখে মাইরা বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সেদিকে। এরপর তার ফ্রেন্ডদের থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুতপায়ে ইরফানের দিকে এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে দৌড় দেয় মেয়েটা। ইরফান ফোন স্ক্রোল করছিল। মাথা উঁচু করে মাইরাকে তার দিকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে অবাক হয়। ফোন পকেটে রেখে দ্রুত সামনের দিকে পা চালায়। রাগ হলো তার। এই স্টুপিট এভাবে দৌড়েচ্ছে কেন? এক্ষুনি তো পড়ে যাবে। মাইরা ইরফানের কাছাকাছি আসলে থেমে যায়। ইরফান জোরে ধমক দেয়,
“থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার। দৌড়াচ্ছিলে কেন?”
মাইরা মাথা নিচু করে হাঁপাচ্ছিল। মাথা তোলার আগেই ইরফানের এমন ধমক খেয়ে মেয়েটার ভীষণ খারাপ লাগলো। এমনিতেই এই লোকটার বান্ধবী তাকে আজ কত অপমান করল। এই লোকটাও তার সাথে এমন করছে। অভিমানে চোখের কোণে পানি জমলো। মাথা তুললো না আর। সে একাই যাবে। এই লোকটার সাথে যাবে না। তার কাউকে লাগবে না। উল্টো ঘুরে এক পা এগোলে ইরফান মাইরার হাত টেনে ধরে। মাইরা মাথা নিচু করেই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। ইরফান মাইরাকে টেনে তার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আবারও ধমক দিতে গিয়ে থেমে যায় মাইরার দিকে তাকিয়ে। মাইরা মাথা উঁচু করে কান্নামাখা গলায় বলে,
“আমায় ছাড়ুন, আমি বাড়ি যাবো। সবগুলো পা’ষা’ণ, শুধু আমাকে মারতে আসে।”
মাইরার চোখমুখ যেমন লাল, তেমনি ফোলা।
ইরফান মাইরার দিকে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। দ্রুত মাইরার মুখ দু’হাতের আঁজলায় নিয়ে বিচলিত হয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ট? কেঁদেছ কেন?”
ইরফানের এমন নরম সুর পেয়ে মাইরার দলা পাকিয়ে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইলো। ভীষণ মন খারাপের দিনে কাউকে পাশে পেয়ে গেলে বোধয় মন গলে যায়, কাঁদতে ইচ্ছে করে ভীষণ। মাইরারও ইচ্ছে করল। তবে মেয়েটা একদম কাঁদতে চায় না। সে কি সস্তা না-কি! কান্না মানুষের দুর্বলতা। আর নিজের দুর্বলতা আপন মানুষ ছাড়া কারো সামনে কখনো প্রকাশ করতে নেই। মাইরা কান্নাগুলো গিলে নিতে চাইলো। তবে মাইরার মনের হাজারো বাঁধা পেরিয়ে অবাধ্য চোখের পানি চোখ বেয়ে গালে গড়িয়ে পড়ে। ইরফান ভীষণ বিচলিত হয়। কি হয়েছে তার বার্ডফ্লাওয়ারের? ভীষণ নরম গলায় আদুরে সুরে বলে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৬
“What happened, little girl? Don’t cry. I will fix everything, just tell me.”
এমন আদুরে সুরে মাইরার আরও কান্না পায়। আশেপাশে অনেকেই বাঁকা চোখে তাকায় ইরফান মাইরার দিকে। তবে কেউ কিছু বলে না। ইরফান সেসব পাত্তা দেয় না।
মাইরা ইরফানের আদুরে সুর পেয়ে মাথা নিচু করে ইরফানের বুকে মুখ ঠেকিয়ে দু’হাতে ইরফানকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। ইরফান স্তম্ভিত হয়ে যায় মাইরার কান্ডে।