প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫০
Drm Shohag
শুদ্ধ সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে আছে। ফারাহ পাশের সিটে মাথা নিচু করে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। বেশ কিছুক্ষণ পর শুদ্ধ বামদিকে ফারাহ’র দিকে ফিরে তাকায়। অসহায় চোখে ফারাহ’র পানে চায়। চোখ দু’টো স্বাভাবিক এর চেয়ে লাল। মৃদুস্বরে ডাকে,
“ফারাহ পাখি?”
ফারাহ কিচ্ছু বললো না। একটু নড়লো না, একটি টুঁশব্দ করল না। নিরব অশ্রু চোখের কোণ ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধর ভীষণ আফসোস হলো। সে তো এভাবে রেগে যায় না। সে ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। এই উপাধি সবার থেকে পাওয়া আছে তার। আজ হঠাৎ কেন যেন একদম নিজের কন্ট্রোলে ছিল না। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে কণ্ঠ নরম করে বলে,
“ফারাহ পাখি, স্যরি! প্লিজ কান্না অফ কর।”
ফারাহ এবারেও একটুও নড়লো না। শুদ্ধ এগিয়ে ফারাহ’কে নিজের দিকে ফেরায়। মেয়েটা বাঁধা দিল না। হ্যাঁ, না কিছুই বললো না। শুদ্ধ তার দু’হাতের মাঝে ফারাহ’র দু’হাত আঁকড়ে ধরে মৃদুস্বরে বলে,
“অনেক ব্য’থা পেয়েছ? আমি স্যরি!”
ফারাহ নিরুত্তর। শুদ্ধ ফারাহ’র মাথা থেকে হিজাবের পিনগুলো খুলে দেয়, তবে মাথা থেকে কাপড় নামালো না। কিছুটা আলগা করে ফারাহ’হর মাথা উঁচু করে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখের অবস্থা বেহাল। এখনো চোখে বেয়ে পানি পড়ছে। তবে কোনো শব্দ নেই। শুদ্ধর বুকে চিনচিনে ব্য’থা করে উঠল। চোখ নামিয়ে ফারাহ’র গলা দেখার চেষ্টা করে। ফারাহ জড়বস্তুর মতো বসে আছে। শুদ্ধ ফারাহ’র গলায় নজর করলে দেখল জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে আছে। শুদ্ধর দমবন্ধ লাগলো। চোখ বুজে বহুকষ্টে দু’টো ঢোক গিলল। চোখ তুলে ফারাহ’র দিকে তাকায়, ফারাহ’র চোখ বন্ধ। শুদ্ধ তার ডান হাত তুলে ফারাহ’র গলা স্পর্শ করে। কেন যেন কাঁপছে তার হাত। ফারাহ শিউরে উঠল। কিন্তুু একটা কথা বলল না।
শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ফারাহ পাখি, আমি স্যরি! আমি না বুঝে করে ফেলেছি।
!
কথা বলো প্লিজ!
!
আমার মাথা কাজ করছিল না। ওই ছেলেটাকে তোমার কাঁধে কেন জায়গা দিলে? আমি ব্য’থা পেয়েছি।
!
তোমার ব্য’থার দাগ আছে। আমার ব্য’থার দাগ নেই। বাট বিলিভ মি ফারাহ পাখি, এখনো বুকে ব্য’থা করছে। তবুও আমি স্যরি! তোমাকে বুঝিয়ে বলা উচিৎ ছিল। আর এতো রেগে যাবো না, স্যরি!
!
ফারাহ পাখি কথা বলো। আমাকে বকো। আই প্রমিস, আমি তোমাকে কিচ্ছু বলব না।
!
এই ফারাহ, ব্য’থা পাই আমি, তোমার তেজ না দেখতে পেলে।
ফারাহ নিরুত্তর। শুদ্ধ তার দু’হাতে ফারাহ’র দু’হাত ধরে বেহিসাব চুমু আঁকল। একটু এগিয়ে গিয়ে কপালে ঠোঁটে আলতো স্পর্শ দেয়। এরপর দু’হাতের আঁজলায় ফারাহ’র মুখটা নিয়ে করুণ কণ্ঠে বলে,
“এই ফারাহ পাখি! স্যরি তো! প্লিজ কথা বলো।
!
আচ্ছা ওই ছেলেটাকে কেন তোমার কাঁধে মাথা রাখতে দিলে বলো? তুমি জানো না আমার ফারাহ পাখি যাস্ট আমার। সেখানে অন্যকেউ ভাগ বসালে আমি কিভাবে মেনে নিব?
!
একটু কথা বললে কি হয়? একটুখানি নাহয় ব্য’থা দিয়েছি, মেরে ফেলিনি তো। ওতো সাহস নেই তো পাখি। কথা বলো প্লিজ!
ফারাহ’র নিরব, স্তব্ধ। যেন বোবা। শুদ্ধ ছটফট করে। ফারাহ কে ছেড়ে তার সিটে শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে নেয়। ডান হাতটা চোখের উপর রাখে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি থেকে বেরিয়ে দোকান থেকে একটা মলম কিনে আনে। এরপর ফারাহ’র দিকে এগিয়ে গেলে ফারাহ আতঙ্কিত চোখে তাকায় শুদ্ধর পানে। কিছুটা সিটিয়ে যায় দরজার দিকে। শুদ্ধ দেখল। তার দৃষ্টিতে বিস্ময়৷ ফারাহ তাকে ভয় পাচ্ছে? কথাটা মনে মনে আওড়াতেই বুকে চিনচিন ব্য’থা হলো। ফারাহ মাথা নিচু করে কুঁকড়ে বসে আছে। শুদ্ধ মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হাতের মলম টা ফারাহ’র কোলের উপর রেখে মৃদুস্বরে বলে,
“এটা লাগিয়ে নাও।”
ফারাহ নিশ্চুপ। শুদ্ধ প্রায় মিনিট পাঁচেক ফারাহ’র পানে নিরবে চেয়ে রইল। এরপর আবারও বলে,
“ফারাহ পাখি এটা লাগিয়ে নাও।”
আরও মিনিট পাঁচ অতিবাহিত হয়। কোনো সাড়া নেই ফারাহ’র। শুদ্ধর দৃষ্টির নড়চড় নেই। আবারও বলে,
“ফারাহ পাখি, আমার কথা শোনো।”
দুই মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন ফারাহ’র কোনো রেসপন্স পেল না। তখন শুদ্ধ রেগে গাড়ির স্টিয়ারিং-এ লাগাতার চারটে পাঞ্চ মারে। ফারাহ’র দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এমন ত্যাড়া মেয়ে আর কারো কপালে না জুটুক। সহ্যের সীমা পার করে ফেলল আমার। এই মেয়ে কথা কানে যায় না? তা’মা’শা করছি আমি?”
ফারাহ কেঁপে ওঠে। গাল বেয়ে অবাধ্য অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তাকে নিয়ে শুদ্ধ ভাই কত বিরক্ত! কথাটা ভাবতেই কি ভীষণ কান্না পায়! তবে কান্নাগুলো গিলতে না পারলে শব্দগুলো গিলে নেয়। শুদ্ধ আবারও ধমকে বলে,
“কি হলো, কথা কানে যায় না? মলম লাগাতে বলেছি আমি।”
ফারাহ কাঁপা হাতে মলম টা নেয়। এরপর ধীরে ধীরে মলমের মুখ ছুটিয়ে নেয়। এরপর দুর্বল হাতে এলোমেলো ভাবে গলায় মলম লাগিয়ে নেয়। শুদ্ধ শীতল চোখে চেয়ে রইল ফারাহ’র দিকে। বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলে ফারাহ মাথা নিচু করেই ভাঙা গলায় থেমে থেমে বলে,
“আমি বাড়ি যাবো।”
শুদ্ধ ফারাহ’র থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। কোনো কথা না বলেই গাড়ি স্টার্ট দেয়। ফারাহ জড়বস্তুর মতন চুপ করে বসে রইল। থেকে থেকে কেঁপে উঠছে এতোক্ষণ কান্নার ফলে।
ফারাহ’র বাসার সামনে শুদ্ধ গাড়ি থামায়। ফারাহ এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করল না। দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে দেখল ফারাহ’র কাজকারবার। সেও দ্রুত পায়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এগিয়ে গিয়ে ফারাহ’র সামনে দাঁড়ায়। ফারাহ দ্রুত কয়েক পা পিছিয়ে যায়। মাথা তুলল না। শুদ্ধ চোখ বুজে শ্বাস ফেলে। এরপর ফারাহ’র উদ্দেশ্যে নরম কণ্ঠে বলে,
“স্যরি! তুমি ঠিক হয়ে যাও। কথা বলো ফারাহ পাখি।”
ফাড়াহ নিরুত্তর। শুদ্ধ দু’পা ফারাহ’র দিকে এগোলে ফারাহ ভীত চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধর পা থেমে যায়। ফারাহ তাকে ভয় পাচ্ছে। ব্যাপারটা শুদ্ধর একদমই হজম হচ্ছে না। কি যে অসহায় লাগলো নিজেকে। শুদ্ধ নিজের অশান্ত মনকে সামলে ফারাহ’র দিকে এগিয়ে গিয়ে নরম গলায় বলে,
“ফারাহ পাখি। ভালেবাসি। আমাকে ভয় পাচ্ছো কেন? আমি আর এভাবে রাগ দেখাবো না। প্রমিস করেছি তো। প্লিজ, বি নরমাল।”
ফারাহ মাথা নিচু করে নেয়। শুদ্ধর চোখমুখে অসহায়ত্ব। পিছন থেকে ফাইজের গলা পেয়ে শুদ্ধ পিছু ফিরে তাকায়৷ ফারাহ তার ভাইকে দেখতে পেয়ে শুদ্ধর পাশ কেটে দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে ফাইজকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। ফাইজ তব্দা খেয়ে যায়। ফারাহ তো এমন টা করে না সাধারণত। এমন প্রথম তা নয়। কিন্তুু নরমাল কোনো কিছুতে মেয়েটা এমন অদ্ভুদ বিহেভ করে না। ফাইজ শুদ্ধর দিকে তাকালে দেখল শুদ্ধর দৃষ্টি ফারাহ’র দিকে। ফাইজ তীক্ষ্ণ চোখে শুদ্ধর দিকে কিছু সময় চেয়ে থাকে। শুদ্ধ চোখ তুলে তাকালে ফাইজের সাথে চোখাচোখি হয়। ফাইজ ভারী অবাক হলো। শুদ্ধকে স্বাভাবিক লাগলো না। মুখ জুড়ে যেমন অসহায়ত্ব, তেমনি চোখ দু’টো কেমন যেন হালকা লাল লাগলো, যা স্বাভাবিক নয়। এদের মধ্যে কিছু হয়েছে। ঝামেলা তো চলতেই থাকে। এ তো নতুন নয়। কিন্তুু দু’জনের কারো অবস্থাই তো এতো শেচনীয় হয় না। ফাইজ চিন্তিত হলো। শুদ্ধর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফারাহ’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“কি হয়েছে ফারাহ? কাঁদছিস কেন?”
ফারাহ কোনো কথা বললো না। নিঃশব্দে তার ভাইয়ের শার্ট ভেজালো। যেন বড় ভাইয়ের কাছে নিরব অভিযোগ সপে দিচ্ছে। ফাইজ ফারাহ’র মাথা তুলে বোনের চোখমুুখ মুছে দিল। ফারাহ তার লালিত চোখজোড়া ভাইয়ের পানে নিবদ্ধ করে রাখে। ফাইজ ভীষণ অবাক হয়। ফারাহ তো এভাবে কাঁদে না সাধারণত। আদুরে সুরে বলে,
“কি হয়েছে ফারাহ বোন? শুদ্ধ কিছু বলেছে? শুধু একবার বল। ওর পিঠের ছাল তুলে নিব আমি। আমার বোনকে এভাবে কাঁদিয়ে পার পাবে না কেউ।”
ফারাহ নাক টানলো। তার ভাইকে ছেড়ে মাথা নাড়িয়ে ছোট করে বলে,
“কি ছু না।”
কথাটা বলে বাড়ির দিকে পথ ধরে। ফাইজ ফারাহ কে কিছু বললো না। শুদ্ধর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি করেছিস আমার বোনের সাথে?”
শুদ্ধর অসহায় চোখজোড়া ফারাহ’র পানেই ছিল। ফাইজের কথায় দৃষ্টি ঘুরিয়ে আনে। ঢোক গিলে বলে,
“তোর বোন ভালো না রে। আমার জীবন টা শেষ করে দিল।”
ফাইজ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“আচ্ছা তাহলে ওর জন্য ছেলে দেখছি। এমনিতেও ও বড় হয়ে গিয়েছে। বিয়ে দিতে হবে।”
শুদ্ধ চেঁচিয়ে বলে,
আবার আমার বউকে অন্যের ঘাড়ে দিতে চাইছিস?
!
নিজেই বললি আমার বোন ভালো নয়। তো কি করব?
শুদ্ধ রেগে বলে,
“তোর বোন এই পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মেয়ে হলেও ওই আমার বউ হবে। তোর বোন যেমন তেমন বলতে পারব না আমি? বা’ল গুলো।”
!
হয়েছে টা কি তোদের? কি করেছিস আমার বোনের সাথে?
!
যা ইচ্ছা করেছি। কিন্তুু তোর বোনটা আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য কি শুধু আমার কলিজা টা-ই খুঁজে পায়?
শুদ্ধর কথাটা কেমন যেন শোনালো। ফাইজ কি বলবে বুঝে পায় না। এরা এমন কেন? বিয়ের আগেই একে অন্যের জীবন ভেজে ভেজে খাচ্ছে। বিয়ের পর যে কি করবে সেটা ভেবেই ফাইজ কুল পায় না।
শুদ্ধ সিরিয়াস হয়ে বলে,
“আমি খুব তাড়াতাড়ি ফারাহকে আমার বউ করে চাই ফাইজ।”
তখনই ফারাহ ফাইজের হাত ধরে টেনে ভাঙা গলায় বলে,
“ভাইয়া ভেতরে এসো।”
ফারাহ মূলত একটু দূরেই আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। শুদ্ধর লাস্ট কথাটা শুনেই এগিয়ে এসেছে। ফারাহ’র কথা শুনে ফাইজ শুদ্ধ দু’জনেই ফারাহ’র দিকে তাকায়। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে ফারাহ’র দিকে। ফারাহ আবারও করুণ গলায় বলে,
“ভাইয়া প্লিজ এসো।”
ফাইজ বোনের কথা মানলো। মেয়েটার অবস্থা কাহিল। শুদ্ধর দিকে চেয়ে বলে,
“শুদ্ধ ভেতরে আয়।”
শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে শক্ত চোখে চেয়ে আছে। খুব বুঝেছে এই মেয়ে তার ভাইকে নিয়ে যাচ্ছে সে বিয়ের টপিক উঠিয়েছে বলে। ফারাহ’র দিকে চেয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তোর বোনকে অনেক কিছু বোঝানো বাকি আছে। বিয়ের বহুত দেরি আছে।”
কথাটা বলে এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না। গটগট পায়ে তার গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। বিড়বিড় করে,
“ত্যাড়ামি করে একটুও ভালো করলে না ফারাহ পাখি। যা জ্বালিয়েছ, কত বহুগুণে যে তা ফেরত পাবে, এটা যাস্ট তোমার ইমাজিনেশন এর বাইরে। আমার অপর পিঠ দেখাতে বাধ্য করলে তুমি।
লেট’স সি ফারাহ বেইবি।”
অন্তরা মাইরার মেডাম। সে ছাত্রী। যে কয়দিন দেখা হয়েছিল, তাতে তো তাদের মাঝে এই সম্পর্কটিই বিদ্যমান। সেখানে মাইরা ছাত্রী হয়ে তার মেডাম এর মুখে সালাম শুনে সালাম এর উত্তর আর করতে পারলো না। অন্তরা মৃদু হেসে বলে,
“সালাম এর উত্তর দেয়া কিন্তুু ওয়াজিব মাইরা।”
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মিনমিন করে সালাম এর উত্তর নিল। তার ভীষণ অস্বস্তি হলো। অন্তরা জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছো মাইরা?”
মাইরা মাথা তুলে অন্তরার পানে চায়। ডান দিকে মাথা কাত করে জোরপূর্বক হেসে বলে,
“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ম্যাম। আপনি কেমন আছেন?”
!
আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
কথাটা বলে অন্তরা এদিক-ওদিক তাকিয়ে মাইরার দিকে তাকায়। এরপর বলে,
“আমাকে দশ মিনিট টাইম দিবে মাইরা? তোমার সাথে কোথাও বসে একটু কথা বলতাম!”
মাইরা ভীষণ অবাক হয়। তার সাথে এনার কি কথা?
মাইরার মনে পড়ে সেই দিন এর মারের কথা, আবার বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে রেখেছিল সে কথা। ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। সেখানে তার তিনটে ফ্রেন্ড হয়েছিল, যদিও একদম নতুন ফ্রেন্ড, তবুও সে মিশে গিয়েছিল, তাদের সাথে আর দেখা হলো না। ক্লাসের সবাই তাকে দেখে হেসেছিল। মাথা নিচু করেই আড়চোখে ইরফানকে খুঁজল। তার দারে দুঃখ এসে হাজির হয়েছে। সেজন্যই বোধয় তার অনুসন্ধানী চোখজোড়া ইরফানকে খুঁজল খুব করে। অভিমানও হলো, তাকে ছুটির পর কেন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়? সে কেন অপেক্ষা করবে? ইরফান আগে থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করবে না কেন?
মাইরার অভিমানী মনে ভাবনা এসে ভিড় জমায়, অন্তরা তো ইরফানের ফ্রেন্ড। সেই রিলেটেড কিছু জানতে পারবে কি?
অন্তরার ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। মেডামকে কিভাবে নিষেধ করবে সে? কিন্তুু তাকে নিতে ইরফান আসবে যে! গলা ঝেড়ে বলে,
“ম্যাম আমাকে নিতে আসবে যে!”
অন্তরা মৃদু হেসে বলে,
“আমি দশ মিনিট এর বেশি টাইম নিব না মাইরা। পাশেই একটা ক্যাফেতে বসব। আসবে প্লিজ!”
মাইরা না করতে পারলো না। সম্মতি দিল অন্তরার কথায়। এগিয়ে গেল অন্তরার পাশে হেঁটে হেঁটে।
কলেজ এর পাশেই একটি ক্যাফেতে মাইরা আর অন্তরা সামনাসামনি বসেছে। মাইরা উশখুশ করছে। তার মনে হয় ইরফান আর অন্তরার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। কিন্তুু কি এটা সে বুঝতে পারে না। এতোদিন বেশ কৌতুহল হতো, আজ হয়তো একটু হলেও বুঝতে পারবে। এটা ভেবে একটু ভালো লাগছে। তেমনি মাইরার চিন্তা হচ্ছে ইরফানকে নিয়ে। তাকে তো নিয়ম করে কলেজ গেইটের বাইরে বেরোতে নিষেধ করে দেয়। সেখানে সে কলেজ গেইট থেকে বেরিয়ে ক্যাফেতে এসে বসেছে। কি যে করবে তাকে, ভেবেই ঘাম ছুটে য়ায় মাইরার। মেডামকে তো মুখের উপর না ও বলা যায় না। তাছাড়া মাইরার ও কৌতুল আছে, সবমিলিয়ে কৌতুহল, অস্থিরতা কে ঘিরে মাইরা বসে রয়েছে অন্তরার সামনাসামনি।
অন্তরা মাইরার জন্য পাস্তা আর তার জন্য এক কাপ কফি অর্ডার করে। অন্তরা মাইরাকে জিজ্ঞেস করলে মাইরা প্রথমে না সূচক মতামত জানালে অন্তরা মানে না। নিজে থেকেই মাইরার জন্য পাস্তা অর্ডার করে।
এরপর মাইরার উদ্দেশ্যে বলে,
“মাইরা অ্যা’ম স্যরি!”
মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় অন্তরার দিকে। তাকে স্যরি কেন বলছে? লাস্ট দিন তাকে যেভাবে মেরেছিল এজন্য? ভাবনার মাঝেই অন্তরা তার দু’হাত বাড়িয়ে মাইরার হাত দু’টো আঁকড়ে ধরে। মাইরা অবাক এর উপর অবাক হয়। অন্তরা অনুতপ্ত স্বরে বলে,
“আমি ভীষণ স্যরি মাইরা। লাস্ট দিনে আমি তোমার সাথে যে বিহেভ করেছিলাম, এর জন্য তুমি মনে কষ্ট নিও না মাইরা। আসলে আমি ভীষণ ডিস্টার্ব ছিলাম, এর ফলে কি করতে কি করেছিলাম। আমি স্যরি মাইরা। Please forgive me, mayra.”
মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় অন্তরার দিকে। সে কথা বলতে ভুলে গিয়েছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অন্তরা উঠে এসে মাইরার পাশে চেয়ারে বসে মাইরার মাথায় ডান হাত রেখে বলে,
“তুমি আমার ছোট বোনের চেয়েও ছোট। আমার আরেকটা ছোট বোন হবে মাইরা? আমি সেদিনের জন্য খুব স্যরি মাইরা। আমি জানি তোমার কোনো দোষ ছিল না। আমি ভুল করেছি, তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা কর। নয়তো আমি একটুও শান্তি পাচ্ছি না।”
মাইরা ভীষণ অস্বস্তিতে পরেছে। মেডাম হয়ে স্টুডেন্ট এর কাছে এভাবে কেউ ক্ষমা চায়? মাইরা নড়েচড়ে বসে। অন্তরা মাইরাকে চুপ দেখে অসহায় কণ্ঠে ডেকে ওঠে,
“মাইরা?”
মাইরা অস্বস্তিতে ঘেরা মনে দ্রুত বলে ওঠে,
“ম্যাম আপনি এভাবে বলছেন কেন? আমি কিছু মনে করিনি। এসব ভুলে যান। প্লিজ এভাবে বলবেন না। আমি তো আপনার অনেক ছোট।”
“তুমি সত্যিই কিছু মনে করনি তো মাইরা? আমি স্যরি বোন। আমার ভীষণ গিল্টি ফিল হয়। তুমি প্লিজ আমায় ক্ষমা কর।”
মাইরা অন্তরার হাত ধরে বলে,
“ছিঃ! ছিঃ! বারবার আপনি এভাবে বলবেন না প্লিজ! এসব ভুলে যান। আমি ভুলে গিয়েছি।”
অন্তরা মাইরার মুখের দিকে তাকালো। মেয়েটা সত্যিই খুব ভালো। এতো কিছুর পরও কি সুন্দর হেসে কথা বলছে তার সাথে। অন্তারা মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,
“তুমি খুব মিষ্টি মেয়ে মাইরা।”
মাইরা মৃদু হাসলো। সেই প্রথম দিন যেমন তাকে হেল্প করেছিল। খুব সুন্দর ব্যবহার করেছিল, আজ তেমন অন্তরাকে পেয়ে মাইরার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়। কিছু একটা ভেবে আমতা আমতা করে প্রশ্ন করে,
“ম্যাম একটা কথা বলি?”
অন্তরা মৃদু হেসে বলে,
“তুমি তো আমাদের কলেজে পড়লে না। এঝন আর মেডাম নেই তোমার। আমাকে আপু ডাকবে কেমন?”
মাইরার ভীষণ ভালো লাগে। এমনিতেই সে মিশুক স্বভাবের। তার সাথে যদি এমন মানুষ পাওয়া যায়, তাহলে তো মাইরার কথাই নেই। ঘনঘন মাথা নেড়ে বলে,
“জ্বি জ্বি অবশ্যই আপু। আমার এসবে জড়তা নেই। আর ভুল হবে না। একবারেই আপু ডেকে দিয়েছি। কেমন লাগলো আপু?”
অন্তরা মাইরার চঞ্চলতায় হেসে ফেলল। এ তো তার বোনের থেকে আরও কয়েকশ ধাপ উপরে মনে হলো। মাইরা চবারও বলে,
“আপু একটা কথা বলি?”
“বলো।”
মাইরা ইতস্তত করে বলে,
“আপনার আর আপনার বন্ধুর মাঝে কি কোনো প্রবলেম আছে?”
অন্তরার মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে যায়। ঢোক গিলে নেয়। সে বুঝল তাকে ইরফানের কথা জিজ্ঞেস করেছে মাইরা। আবারো মুখে জোরপূর্বক হেসে বহুকষ্টে দু’টো শব্দ বের করে, “তোমার বর..
কথাটা একটু থামে। এরপর নিজেকে সামলে বলে,
“সে আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। তার সাথে আমার একটু ঝামেলা হয়েছে।”
মাইরা কৌতুহলবশত সাথে সাথে প্রশ্ন করে,
“কি নিয়ে ঝামেলা?”
অন্তরা অবাক হয়ে তাকায় মাইরার পানে। মাইরা একটু বিব্রতবোধ করল। অন্তরা মৃদু হেসে বলে,
“কোনো একদিন বলব, একদিনে সব শুনে নিলে পরে কি নিয়ে গল্প করবে?”
মাইরার যদিও খুব ইচ্ছে করছে শুনতে। কিন্তুু যেচে প্রশ্ন করতে পারলো না। নিজের কাছেই কেমন যেন লাগলো। অন্তরা মাইরার পাশ থেকে উঠে বলে,
“তুমি খেয়ে নাও পাস্তাটুকু। আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি কেমন?”
মাইরা মৃদু হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। অন্তরা দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তার চোখের কোণে পানি। গাল বেয়ে পড়ার আগেই পালালো যেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর অন্তরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। মুখে পানির ছিঁটেফোঁটা। মাইরার দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েও থেমে যায় বাম পাশের একটি টেবিলে শুদ্ধকে দেখে। চেয়ারে হেলান দিয়ে দু’হাত বুকে গুঁজে চোখ বন্ধ করে আছে। অন্তরা এগিয়ে গিয়ে ডাকে, “শুদ্ধ?”
অন্তরার ডাকে শুদ্ধ চোখ মেলে তাকায়। চোখ দু’টো বেশ লাল। অন্তরা অবাক হয়। শুদ্ধর পাশে চেয়ারে বসে বলে,
“তুই কি অসুস্থ?”
শুদ্ধ চোখ বুজল। কিছু বলল না। অন্তরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“এখানে কেন এসেছিস?”
শুদ্ধ বন্ধ চোখেই একটু হেসে বলে,
“হা’গ’তে এসেছি। ওয়াশরুম থেকেই তো ফিরলি। স্মেল পাস নি?”
অন্তরা চোখমুখ কুঁচকে নিল। বিরক্তি কণ্ঠে বলল,
“তুই কি জীবনে ভালো হবি না?”
শুদ্ধ চোখ মেলে বলে,
“আরও ভালো হলে তো তোরা সব বেহুশ হয়ে যাবি। আমি ভাই দরদী মানুষ। এতো মানুষকে বেহুশ করার ইচ্ছে আমার নাই।”
অন্তরা রেগে বলে,
“এখানে কেন এসেছিস? আর তোর হয়েছে টা কি? একদম হাসবি না।”
শুদ্ধ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“ক্যাফেতে মানুষ কেন আসে? পেট ভরাতে আসে। পেট পরিষ্কার করতে তো আসে না!”
কথাটা বলে শুদ্ধ আবারও আগের ভঙ্গিতে চোখ বুজল। এরপর মৃদুস্বরে বলে,
“তুই কি করছিস এখানে?”
!
“তোর কি হয়েছে বলবি? তোকে ঠিক লাগছে না।”
শুদ্ধর কণ্ঠে অসহায়ত্ব, তবে মুখে হাসি।
“কষ্ট লাগে বা’ল। জীবনডা এমন ক্যান? ফারাহ টা কেমন যেন। কি যে কষ্ট দেয় ইয়ার! আর ভাল্লাগে না।”
অন্তরা শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে ভাবলো কিছু। এর আর ফারাহ’র প্রবলেম কি? সুখে থাকতে ভূতে কিলায় এদের? মৃদুস্বরে বলে,
“আচ্ছা আমি ফারাহ’র সাথে কথা বলবো। দেখি তোদের কি প্রবলেম।”
শুদ্ধ সোজা হয়ে বসে হেসে বলে,
“বলবি সামিয়ার সাথে আমার সামনের মাসে বিয়ে।”
!
“সামিয়া কে?”
!
আমার মায়ের পছন্দ করা শান্তশিষ্ট, সুইট একটা মেয়ে। দারুণ একটা মেয়ে, বুঝলি।
!
তুই অন্য মেয়ের প্রশংসা করছিস। আবার ফারাহ কে চাইছিস! অদ্ভুদ!
শুদ্ধ হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“সে তো ইরফান ও তোকে লাইক করতো। বাট ওর দম আটকে যায় মাইরার জন্য।”
অন্তরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শুদ্ধ হেসে বলে,
“ভালোবাসা একটা ভয়ংকর ওষুধ। এর ধার বিষের চেয়েও তীক্ষ্ণ। পছন্দ তো এই ক্যাফে টাকেও করা যায়।
একটু থেমে বলে,
বাদ দে। তুই এখানে কি করছিস?”
!
মাইরাকে নিয়ে এসেছিলাম।
!
ইন্না-লিল্লাহ! এবার নিশ্চয়ই পা পোড়ানোর জন্য তোর পা দু’টো নাচতে নাচতে চলে এসেছে তাই না?
অন্তরা কিছু বললো না।
মাইরা ভীষণ উশখুশ করছে। কয়েকবার পাস্তা মুখে দিয়েছে। তার এটা ভালো লাগলো না। তাই চুপচাপ বসে আছে। এক পর্যায়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে সামনে এক পা এগোলে হঠাৎ-ই কেউ এসে তাকে সাপটে ধরে। মাইরার মুখ ইরফানের বুকে গিয়ে ধাক্কা লাগে। মাইরা মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে। তবে শব্দ বেরোলো না সেভাবে। ইরফান তাকে চেপে ধরেছে তার সাথে। মাইরা ইরফানকে দেখতে না পেলেও খুব চিনলো ইরফানকে।
মাইরা নড়াচড়া করতে গিয়েও করলো না। আজ ভীষণ অদ্ভুদ এক কিছু সে শুনতে পায়। ইরফানের হৃৎস্পন্দনের টিপটিপ শব্দ। কেউ অনেক ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করলে যেমন হয় ঠিক তেমন।
ইরফান বিড়বিড়িয়ে বলে,
“ইউ আর আ স্টুপিট গার্ল। স্টুপিট গার্ল, স্টুপিট।”
মাইরা নড়েচড়ে ওঠে। ইরফান নিজেই মাইরাকে ছেড়ে দু’হাতে মাইরার গাল ধরে মৃদুস্বরে বলে,
“আর ইউ ওকে?”
মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরাকে অক্ষত অবস্থায় দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হঠাৎ-ই চোখমুখ শক্ত হয়ে যায়। ডান হাতে মাইরার গাল চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“কলেজ থেকে বেরোতে নিষেধ করিনি? থাপ্পড় খাওয়ার শখ জেগেছে?”
মাইরা গালে ব্য’থা পায়। ইরফানের হাত ধরে তার গাল থেকে ছাড়াতে চায়। ইরফান শক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে। মাইরা অসহায় চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে ছটফট করে।
হঠাৎ-ই ইরফানের হাত শিথীল হয়। মাইরার শুকনো মুখটা দেখে মুহূর্তেই তার মুখে অসহায়ত্ব ভিড় করে। মাইরার পিছনের টেবিলে চোখ পড়লে একটু খাওয়া পাস্তার প্লেট দেখল। এরপর মাইরার দিকে চেয়ে দু’হাতের আঁজলায় মাইরার মুখটা নিয়ে নরম গলায় প্রশ্ন করে,
“Are you hungry?”
মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
“It’s ok. খাবে এসো।”
মাইরা বিড়বিড় করে বলে, “নিষ্ঠুর শিষওয়ালা।”
ইরফান বোধয় শুনলো মাইরার আওড়ানো কথাটা।সাথে সাথেই মাইরার পিঠে দু’হাত রেখে, মাইরাকে ঠেলে তার দিকে এনে তার বুকে চেপে ধরে। মাইরার মুখ আবারও ইরফানের বুকে গিয়ে ধাক্কা খায়। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসলো। মৃদুস্বরে বলে,
“স্টুপিট গার্ল। আর কখনো কলেজ গেইটের বাইরে পা রাখলে পা কেটে ফেলব।”
মাইরা ভয় পেল না ইরফানের কথায়। ইরফানের গলা ছিল স্বাভাবিক। সে ভয় পাবে কি করে? ইরফান মাইরাকে ছেড়ে মাইরাকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে নিজে থেকেই বলে,
“আমি বিরিয়ানি খেতে চাই।”
ইরফান মাইরার পাশে বসে মৃদুস্বরে বলে, “ওকে।”
মাইরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এই পাস্তা সে একটুও খেতে পারছিল না। তার আজ হঠাৎ করেই ভীষণ বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তুু অন্তরাকে তো বলা যায় না! তবে ইরফানের কাছে নির্দ্বিধায় আবদার করল।
কিছুক্ষণের মাঝে মাইরার সামনে একটি কাচ্চির প্লেট রাখা হয়। মাইরা একবার ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান ফোনে ডুবেছে। মাইরা ভাবনা রেখে খাওয়া স্টার্ট করে।
ইরফান আর মাইরার কাণ্ড এতোক্ষণ শুদ্ধ অন্তরা চুপচাপ দেখল। অন্তরার চোখের কোণে পানি। শুদ্ধ বসা থেকে দাঁড়িয়ে অন্তরার উদ্দেশ্যে বলে,
“অন্তরা এখান থেকে যা।”
অন্তরা ভ্রু কুঁচকে বলে, “কেন?”
শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলে,
“কেন মানে? এর আগে হাত পুড়িয়েও তোর হয়নি? এখন ইরফান যদি জানে তুই মাইরাকে এখানে এনেছিস, তোকে সামনে পেলে ও কি করবে ধারণা আছে কোনো?”
অন্তরা কিছু বললো না। ভেজা চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। শুদ্ধ আগের চেয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“বা’ল যাবি? এমনিতেই মন মেজাজ ভালো না। এর মধ্যে তুই ভেজাল লাগাস না তো। যা।”
কোথা থেকে নাছিম এসে অন্তরার হাত ধরে টেনে বলে,
“এই বে’য়া’দ’ব আয়। কখন থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।”
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“তুই কোথা থেকে আসলি?”
নাছিম অন্তরাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
“পরে বলব। এখন তুই ইরফানকে ম্যানেজ কর। পারলে বলিস বার্ডি ডলকে তুই এনেছিস।”
শুদ্ধ কিছু বলল না। নাছিম অন্তরাকে নিয়ে ইরফান মাইরার আড়ালে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। নাছিম এর গাড়ির কাছে এসে নাছিম অন্তরার হাত ছেড়ে দেয়। অন্তরা নাছিমের দিকে তাকালো। নাছিমের দৃষ্টি ক্যাফের ভেতরে বসা মাইরার পানে। অন্তরা নাছিমের দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে তাকালো। বুঝলো নাছিম এর ভাব। ঘাড় ঘুরিয়ে নাছিমের দিকে তাকায়। বেশ কিছুক্ষণ ভালোভাবে চেয়ে রইল নাছিমের চোখের দিকে। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“নাছিম তোর চোখে পানি।”
নাছিম মাইরার দিকে চোখ রেখেই শব্দ করে হেসে ফেলল। একটু পর মৃদুস্বরে বলে,
“বার্ডি ডল কে না পাওয়ার আক্ষেপ মিটছে না।”
অন্তরার মুখ মলিন হলো। তাদের প্রায় সব ফ্রেন্ডরা এমন খাপছাড়া কেন? নাছিম খুব দ্রুত নিজেকে সামলে অন্তরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“বার্বি ডল কে কষ্ট দিবি না আর। ও ভীষণ ভালো আর কিউট। আরেকবার ভুলভাল কিছু করলে তোর গলা ঠিপে মারবো আমি বে’য়া’দ’ব।”
অন্তরা হাসলো। নাছিমের বাহুতে চাপড় মেরে নাছিমকে ঠেলে গাড়িতে উঠে বসে। এরপর মলিন স্বরে বলে,
“আমায় মানুষ যতটা অ’মানুষ ভাবে, ততটা অ’মানুষও নই।”
শুদ্ধ এগিয়ে এসে ইরফানের সামনের চেয়ারে বসে। এরপর মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
“কি সুন্দর করে খাও তুমি মাইরা! হাউ কিউট! আমি ক্রাশ খেয়ে গেলাম গো।”
মাইরা সামনে তাকিয়ে খুকখুক করে কেশে ওঠে। ইরফান রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে গালে হাত দিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“মাইরার সব কিউট। এমনকি খাওয়ার স্টাইল টাও! ইশ! আমাদের মতো সিঙ্গেল মানুষদের যত কষ্ট। মাইরা তুমি খাও। আমি একটু আমার চক্ষু শীতল করি।”
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৯
মাইরার মুখের সামনে হাত ভর্তি বিরিয়ানি। বেচারি মুখে নিতে চেয়েছিল, শুদ্ধর কথা শুনে তার হাত আর এগোয় না। এদিকে ইরফান রেগে মাইরার হাত থেকে বিরিয়ানি ফেলে দেয়। এরপর মাইরার হাত ধরে টেনে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে বিল মিটিয়ে দিয়েছে। মাইরা অসহায় চোখে তার আধখাওয়া বিরিয়ানি টা দেখল। একবার বলল, ‘আমার বিরিয়ানি।’
ইরফান মাইরার গাল চেপে রেগে বলে,
“বিরিয়ানির নদীতে সাঁতার কাটিয়ে আনবো স্টুপিট।”