প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫১
Drm Shohag
সামিয়া মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ায়। শুদ্ধর জ্বর বাড়ছে তো বাড়ছেই। সে দ্রুত ওয়াশরুম থেকে মগ ভর্তি করে পানি আনে। এরপর তার গায়ের ওড়নার এক কোণা ভিজিয়ে ভিজিয়ে উল্টেপাল্টে শুদ্ধর কপালে পট্টি দিতে থাকে। শুদ্ধ বিড়বিড় করে কি যেন। সামিয়া বুঝল না। তার চোখেমুখে ভীষণ চিন্তা। কয়েকবার ডেকেছে শুনছেন বলে। কিন্তুু শুদ্ধ কোনো সাড়া দেয়নি। একটা ওষুধ খাইয়ে দিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তুু তার কাছে তো ওষুধ নেই। এখানে আছে কি-না তাও জানে না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুঁজে পেল না। তাই হতাশ হয়ে এই জলপট্টি কেই আপাতত ভরসা করে। একটু পর পর ওড়নার কোণা ভিজিয়ে শুদ্ধর কপালে পট্টি দেয়।
রাত বেড়ে যায়। শুদ্ধর জ্বর প্রথমে বাড়লেও জলপট্টি দেয়ায় তাপটা একটু একটু করে কমে আসে। তখন বাজে রাত ৩:৩০ প্রায়। সামিয়ার ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে। মেয়েটা চোখ বুজল না। ক্লান্ত শরীর নিয়েই শুদ্ধর কপালে পট্টি দিতে থাকলো। একটু পর পর হাতের উল্টো পিঠে চেক করে। আরও এক ঘণ্টা পেরিয়ে যখন ঘড়ির কাটা জানান দেয় ৪:৩০, তখন শুদ্ধর জ্বর অনেক নেমে আসে। গা হালকা ঘেমে ওঠে। শুদ্ধ নিজেই তার শরীর থেকে কাঁথা ফেলে দেয়। সামিয়া দেখল শুদ্ধর গলার দিকটা ভেজা। মেয়েটা সময় নষ্ট না করে দ্রুত ফ্যান অন করে দেয়। শুদ্ধ নড়েচড়ে ওঠে। রাতে না খাওয়ায় ভীষণ খিদে পেয়েছে। ঘরের লাইট অফ না থাকায়, পেটের ক্ষুধায় ছেলেটার ঘুম ছুটে যায়। পিটপিট করে চোখ মেলে ডান দিকে ঘাড় কাত করে সামিয়াকে দেখে অবাক হয়। ডান হাতে কপালে দু’বার স্লাইড করে। এরপর উঠে বসে। ঘড়ির কাটায় সময় দেখল ৪:৪০। শুদ্ধ বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুমি এখানে কি করছ?”
সামিয়া ভয় পায়। লোকটা আবার তাকে বকবে না-কি? শুদ্ধ গম্ভীর গলায় বলে,
“এতো রাতে আমার ঘরে কি করছ?”
সামিয়া মাথা নিচু করে চাপা স্বরে বলে,
“আপনার জ্বর এসেছিল, এজন্য জলপট্টি দিয়েছি।”
শুদ্ধর শরীর টা এখনো খারাপ লাগছে। সে মেয়েটাকে কিছু বলতে গিয়েও বলল না। বেশ কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইল সামিয়ার দিকে। সামিয়া মাথা তুলে শুদ্ধর দিকে তাকালে একে-অপরের চোখাচোখি হয়। সামিয়া সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“আপনি বাইরে আসুন। আমি আপনাকে খাবার দিচ্ছি। আপনি তো রাতে খাননি।”
শুদ্ধ অবাক হলো। মেয়েটা সব খেয়াল রাখে তার। ইন্টারেস্টিং লাগার কথা। কিন্তুু শুদ্ধর উল্টো লাগলো। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ। মৃদুস্বরে বলে,
“তুমি রাতে ঘুমাওনি?”
সামিয়া মাথা নিচু করে রেখেই উত্তর করে,
“না।”
শুদ্ধ মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল। মেয়েটা তার একটু বেশিই খেয়াল রাখে না? তার মা যখন থেকে এই মেয়েটাকে নিয়ে এখানে থাকতে শুরু করে। এর ১৫ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর শুদ্ধ তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, মেয়েটার ব্যাপারে। মেয়েটার বাড়ির কেউ কিছু বলেনা এখানে থাকার জন্য। তার মা উত্তরে বলেছিল, ‘কিছু বলবে না। বরং খুশিই হবে।’
শুদ্ধ কথাটা শুনে অবাক হয়েছিল। নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়ি গিয়ে থাকলে কেউ খুশি হয়! তার মা আবারও বলেছিল, ‘মেয়েটা তার দূরসম্পর্কের মামা মামির বাড়িতে থাকে। বাবা মা নেই। তার বাড়িতেও মাঝে মাঝেই গিয়ে থাকে।’
শুদ্ধর খারাপ লেগেছিল। সে আর কোনো কথা বলেনি। কিন্তুু তার মা যে মেয়েটাকে তার সাথে জুড়ে দেয়ার কথা ভাবছে এ ব্যাপারে কথা বলেনি। সে বুঝেছে, তার মা মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে। খুব আদর-যত্ন করে। তার মাকে সে বুঝিয়ে নিবেই কোনোভাবে। কিন্তুু এখন তার কাছে মেয়েটাকে ভয়ানক লাগছে। এতোদিনে মেয়েটার তার প্রতি এতো খেয়াল রাখার ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও আজ ভীষণ চোখে লাগলো। শুদ্ধ গলা ঝেড়ে বলে,
“আমি এখন খাবো না। তুমি বসো। তোমার সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। মন দিয়ে কথাগুলো শুনবে, বুঝেছ?”
সামিয়া অবাক হয়ে শুদ্ধর দিকে তাকায়। তার সাথে কথা বলবে? তাও আবার ইম্পর্ট্যান্ট? কি কথা বলবে? প্রশ্নাত্মক চোখে শুদ্ধর দিকে তাকায় মেয়েটা। শুদ্ধ সামিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো। এরপর মৃদুস্বরে বলে,
“ওকে বসতে হবে না। মন দিয়ে শোনো আমার কথাগুলো, তাহলেই হবে।”
শুদ্ধ তার ঘরের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অর্ধেক খোলা জানালার থাই ঠেলে পুরোটা খুলে দেয়। এরপর অন্ধকার রাতের আকাশে দৃষ্টি নিবন্ধ করে রেখে বলে,
“তোমাকে কথাগুলো বলব, কজ এসব তোমাকে বলা প্রয়োজন। তবে এতো ডিটেইলসে বলছি, কারণ তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। ভীষণ শান্তশিষ্ট একটি মেয়ে তুমি। লাইক ইউ আর মাই ফ্রেন্ড। আমি জানি তুমি খুব ছোট, তবে আমার মনে হয়, তুমি যথেষ্ট বুঝদার।”
কথাগুলো বলে শুদ্ধ একটু থামলো। সামিয়া অবাক হয়ে শুদ্ধর পানে চেয়ে আছে। শুদ্ধর তাকে ভালো লেগেছে কথাটা শুনে সামিয়ার কি যে ভালো লাগে। কিন্তুু লোকটা তাকে কি বলতে চায়? ভাবনার মাঝেই শুদ্ধ বলতে শুরু করে,
“ভার্সিটি লাইফে যখন পা রাখি। তখন ভীষণ বোকাসোকা এক ছেলে ছিলাম। লাইক আ’বা’ল টাইপ।”
কথাটা বলে শুদ্ধ হেসে ফেলে। এরপর আবারও বলে,
“আসলে আমি গ্রামের ছেলে। তোমাদের গ্রামের ছেলেই। যদিও আমি তোমাকে চিনিনা। মেয়েদের চিনতাম না সেভাবে। সে যাই হোক, গ্রাম থেকে শহরে আ’বা’ল ছেলেদের কি শহুরে মেয়েরা পছন্দ করে? একদম নয়। আমি আ’বা’ল ছেলে হওয়ায় ফাস্ট ইয়ারে অনেক র্যাগ এর স্বীকার হয়েছিলাম। যদিও পরবর্তীতে আমার ভাই ইরফান জানতে পারলে সবগুলোকে ধোলাই দিয়েছে, ফাস্ট ইয়ার হয়েও। এরপর আমাকে আর এসব ঝামেলায় পড়তে হয়নি। সে যাক, যেটা বলছিলাম,, গ্রামের আ’বা’ল দের তো কোনো শহুরে মেয়ে পছন্দ করে না। এই ধারণা নিয়ে খুব সাদামাটাভাবেই পড়াশুনা করতাম, টিউশন করাতাম। কিন্তুু আমার ধারণা ভুল ছিল। কারণ কখনো কখনো গ্রামের মেয়েরা অহংকারী হয়, তারা আ’বা’ল ছেলেদের দেখে থুতু ফেলে। আবার কিছু শহুরে মেয়ে, পবিত্র ফুলের মতো মনের অধিকারী হয়, যারা সেই আ’বা’ল দের পারলে মাথা থেকে আরও উপরে উঠাতে চায়।”
শুদ্ধ দু’হাত প্যান্টের পকেটে রাখে। দূর থেকে ফজরের ফজরের আযান ভেসে আসে। শুদ্ধ ততক্ষণ চুপ থাকলো। সামিয়াও নিরবে অপেক্ষা করল শুদ্ধর পরবর্তী কথা শোনার জন্য। শুদ্ধ রাতের অন্ধকারে ফারাহ’র মুখ দেখতে পায়। তার ফারাহ পাখিটা কি ভীষণ যত্নশীল! ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে ওঠে। আযান শেষ হয়ে গেলে শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
“ফারাহ তেমনি এক পবিত্র ফুলের ন্যায় মনের অধিকারী, যে আমার মতো আ’বা’ল কে পছন্দ করেছিল। মেয়েটা ছোট্ট ছিল, কিন্তুু তার অণুভূতি কি যে নিঁখুত ছিল! আমার পা তো আগেই পিছলেছিল, কিন্তুু কি করে বলতাম? আমি কিন্তুু তোমাদের গ্রামের এক মধ্যবিত্ত সন্তান। আমি শহুরে মেয়ে ফারাহ’র যোগ্য নই। তাই ভেবেছিলাম ফারাহ আমার চেয়ে ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে। ডিসিশন নিয়েছিলাম আমাকে চিরকুমার থাকতে হবে। ফারাহ’র জায়গা কাউকে দিতে পারবো না। নেভার।”
শুদ্ধর লাস্ট শব্দটা কেমন ভারী শোনালো। সামিয়া টলমল চোখে পিঠ ফিরিয়ে রাখা শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ পিছু ফিরলে সামিয়া দ্রুত মাথা নিচু করে নেয়। শুদ্ধ কয়েক পা এগিয়ে এসে বলে,
“তোমাকে এসব বলার কারণ অবশ্যই তুমি ধরতে পেরেছ, আমি জানি। তুমি ভাবতে পারো, আমি যদি আ’বা’ল-ই থেকে যেতাম সারাজীবন, তবে আমাকে অন্যকেউ পেতে পারতো, রাইট? বাট, ইট’স রঙ। বউ হলে ফারাহ-ই হতো, নয়তো চিরকুমারের ট্যাগ নিয়ে ঘুরতে হতো! এখন তো অবশ্যই ফারাহ বউ হবে। তাই আমি চাইছি না আমাকে নিয়ে কেউ মিথ্যে ভাবনা ভাবুক।”
শুদ্ধ এগিয়ে এসে বেডের উপর থেকে তার ফোন বের করে ফারাহ’র একটা পিক বের করে। শুদ্ধ নিজে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে পিকটার দিকে। এরপর সামিয়ার সামনে পিকটা ধরে বলে,
“এই যে আমার হবু বউ।”
সামিয়া পিটপিট করে দেখে ফোনের স্ক্রিনে এক হাস্যজ্জ্বল মেয়ের মুখ। তার চোখ পানিতে টইটুম্বুর। শুদ্ধ তার ফোন পকেটে রেখে মৃদুস্বরে বলে,
“এতোসব তেমাকে কেন বললাম, এমনকি পিকটাও দেখালাম। এর কারণ আছে অবশ্যই। আমি চাই কেউ আমায় না চেয়ে আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যেন দোয়া করে। কারণ আমাকে চাওয়া মানে তার টাইম ওয়েস্ট। আর আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য দোয়া করলে আমার ইচ্ছে পূরণের রাস্তায় ছোট ছোট কাঁটা থাকলে সেগুলো পিষে যাবে দোয়ার বদৌলতে। বুঝেছ?”
সামিয়া বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার চোখের জলগুলো টুপ করে পড়া থেকে বহুকষ্টে নিজেকে সামলায়। এরপর মাথা নিচু করেই ছোট করে বলে, “জ্বি।”
শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
“তোমাকে আমি আমার ফ্রেন্ড বলেছি। ফ্রেন্ডদের মাঝে বয়স, ডাজেন্ট মেটার। আমার মায়ের সাথে আমি কথা বলবো। আমার মা তোমাকে কিভাবে কি বলেছে, কিভাবে কথা দিয়েছে, এসব কিছু আমি জানি না। আমার মনে হলো, আমার মায়ের চেয়ে তুমি বেশি কষ্ট পেতে পারো। তাই আগে তোমার সাথে ক্লিয়ার করে নিলাম। আমার মা আমার মতামত না নিয়ে তোমাকে কথা দিয়েছে, তার জন্য অ্যা’ম রিয়েলি ভেরি ভেরি স্যরি!”
সামিয়া চুপ থাকে। শুদ্ধ আবারও বলে,
“তোমার নাম টা যেন কি?”
সামিয়া ঢোক গিলে ছোট্ট করে বলে,
“জ্বি, সামিয়া।”
“ওহ ওকে, নাইস নেইম। তুমি এবার যেতে পারো। আমার কোনো কাজে আর হাত লাগাবে না। আমার না হওয়া বউ ভয়ংকর রকম ভালো বুঝলে? আমার কপালে কোনো মেয়ে হাত দিয়েছে জানলে বটি দিয়ে কপাল দু’ভাগ করে দিবে। যদিও কাজটা ভয়ংকর, কিন্তুু ব্যাপারটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং!
একটু থেমে বলে,
আচ্ছা এসব বাদ দাও। তোমার কীরকম ছেলে পছন্দ আমাকে একটা লিস্ট দিও, আমি এক উইকের মাঝে ফাস্ট ক্লাস ছেলে খুঁজে এনে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো।”
সামিয়া ভেজা চোখে মলিন হাসলো। সে তো এই মানুষটাকেই চায়! বলতে ইচ্ছে করল, আমি তো আপনাকে চাই সাহেব। কিন্তুু মনের কথা মুখে উচ্চারণ করার সাহস পেল না। শুদ্ধ হেসে বলে,
“আমার মতো কাউকে চাইলে দিন-রাত কাঁদতে হবে। তুমি শান্তশিষ্ট মেয়ে, তোমার এতো কাঁদতে হবে না। আমি তোমাকে এক ভদ্র ছেলে এনে দিবোনে। নো টেনশন।”
শুদ্ধর চোখে পড়ে সামিয়ার হাতের আংটি। জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করেনা। মেয়েটা বিব্রতবোধ করবে। এর চেয়ে এই ব্যাপারে তার মায়ের সাথে কথা বললে ব্যাটার হবে। এরপর শুদ্ধ সামিয়ার পাশ কেটে তার ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
“আমি আবারও খুব স্যরি! তোমার সাথে এ ব্যাপারে লেট করে আলোচনা করার জন্য, আর আমার মায়ের তোমাকে কথা দেয়ার জন্য আরও বেশি বেশি স্যরি।”
শুদ্ধ তার ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলে সামিয়ার চোখে জমানো এতোক্ষণের অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। তার জীবন টা কেমন যেন! ডান হাতে চোখের পানি মুছে চুপচাপ শুদ্ধর ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে মলিন হেসে বিড়বিড় করে,
“আপনাকে পেতে সৌভাগ্য নিয়ে জন্মাতে হতো সাহেব, কিন্তুু আমি যে অভাগী!”
শুদ্ধ ডায়নিং টেবিলের ফলের ঝুড়ি থেকে একটি আপেল কা’ম’ড়ে কা’ম’ড়ে খাচ্ছিল। সামিয়াকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখল। তার মায়ের উপর রাগ হলো। তার মা এরকম একটা বোকামি কেন করল? সে তো অসুস্থ নয়, একদম সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক। তার মতামত না নিয়ে এরকম একটা কাজ করায় এই মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। সে কিছু একটা ভেবে হাসলো।
শুদ্ধ ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। পকেট থেকে ফোন বের করে ফাইজকে একটা কল করলে সাথে সাথে কল রিসিভ হয়। শুদ্ধ বা হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরায় সাথে ফাইজকে প্রশ্ন করে,
“ফারাহ কোথায়? কি করছে? কেমন আছে? খেয়েছে?”
ওপাশে ফাইজ বিরক্তি মুখে চোখ বুজে আছে। চোখের উপর ডান হাত রাখা। শুদ্ধর কথার উত্তর না করে ডান হাত বাড়িয়ে বেডের অপর পাশে হাতিয়ে ইনায়াকে খুঁজে। ফাঁকা মনে হওয়ায় তড়াক করে চোখ মেলে তাকায়। ইনায়া নেই। ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে ইনায়াকে না পেয়ে হতাশ হয়। ওপাশে শুদ্ধর চেঁচানোয় ফাইজ উঠে বসে। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“দিব না আমার বোনের খোঁজ তোকে। তোর বোন যে অটিস্টিক, বিয়ের আগে বলিস নি কেন?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“অটিস্টিক মানে? আমার বোন বেশি হয়েছিল না-কি? ওর জন্য হাজারটা সু-পাত্র ছিল। তোর মতো বে’য়া’দ’ব শেয়ালের জন্যই তো আমার।বোনের চাঁদ কপাল পুড়ে গেল।”
ফাইজ রেগে বলে,
“এক থাবড়া খাবি। তোর বোনের আসলেই প্রবলেম রে। আমি বিয়ে করেও ভার্জিন এখনো। বুঝ একটু।”
শুদ্ধ বিরক্ত হলো। এসব কি কথা? সেও বলল,
“তুই ও একটু বুঝ সোনা। আমি তোর বোনের ভার্জিনিটি ঘেটে দিচ্ছি না বলে, ও শুধু ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছে।”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলল,
“বা’ল। আমার বোনের মারাত্মক জ্বর। আর তুই মজা নিস! তোর বোন তো এক সুস্থ-সবল রমণী, অথচ আমি তার দুই ইঞ্চি কাছে যাইতে পারিনা।”
শুদ্ধ কল কেটে দিয়েছে ফারাহ’র জ্বর শুনেই। ফাইজ হতাশ! ফাটা কপাল তার। চলুক জীবন, যেভাবে চলছে।
মাইরা বেডের উপর বসে হাত দিয়ে তার পায়ের নখ খুঁটছে আর গুণগুণ করছে কি যেন।
ইরফান গম্ভীর চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। একটা টুঁশব্দ ও করল না।
বেশ কিছুক্ষণ পর মাইরা বেড থেকে নামতে গেলে বেডের কোণায় ইরফানের বুকে ধাক্কা খেয়ে বেচারি ঠাস করে পড়ে যায়। মৃদু আর্তনাদ করে সামনে তাকিয়ে ইরফানকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো। দ্রুত শোয়া থেকে উঠে ভদ্রভাবে বসে বলে,
“আপনি কখন আসলেন? আপনি তে আচ্ছা পাবলিক! লুকিয়ে চুরিয়ে আমার গুণগুণিয়ে গান শুনছিলেন!”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে, “স্টুপিট। তুমি কেন শুনেছিলে আমার গান?”
মাইরা অবাক হয়। ওমাগো, এই রোবট মানবের মুখে বুলি ফুটেছে। মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
“আমি কখন শুনলাম? আপনিই তো নাচতে নাচতে এসে আমাকে শোনালেন। আমি তো জানতামই না আপনি গান গাইতে পারেন।”
ইরফান দু’হাত প্যান্টের পকেটে দু’হাত রেখে মাইরার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“আমি গাইনি।”
মাইরা মাথায় হাত দিয়ে বলে, “তাহলে কে গেয়েছে?”
বিড়বিড় করে, ‘কি ধরিবাজ! চোখে দেখা জিনিস অস্বীকার করে!’
ইরফান ডান হাতের দু’আঙুলের সাহায্যে মাইরার কপালে একটা টোকা দিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“আমি গেয়েছি, but completely unwillingly
You control me, just like a stupid girl.”
কথাটা বলে ইরফান ওয়াশরুমের দিকে যায়। মাইরা বোকা চোখে চেয়ে বলে,
“কন্ট্রোল করার জন্য রিমোট লাগে। আপনি কিনে দিয়েছেন আমাকে সেই রিমোট?”
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসলো। বিড়বিড় করে, ‘স্টুপিট লিটল গার্ল।’
কথাটা বলে ইরফান তার গতিপথ ঘুরিয়ে মাইরার কাছে এসে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে, “আরে কি করছেন?”
ইরফান কিছু বলল না। ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে মাইরাকে শাওয়ার এর নিচে দাঁড় করিয়ে দেয়। মাইরা বুঝতে পারে তাকে গোসল করতে বলবে। ইরফান কিছু বলার আগেই সে বলে,
“আমি এখন গোসল করব না। আমার ঠাণ্ডা লাগছে। এখন তো সকাল। কলেজ থেকে এসে করব। সরুন।”
ইরফান মাইরাকে বা হাতে তার চেপে রেগে বলে,
“স্টুপিট, এক্ষুনি শাওয়ার নিবে। এসব স্টুপিট হ্যাবিট নিয়ে ঘোরাঘুরি করলে থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা মোচড়ামুচড়ি করতে করতে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“না প্লিজ! আমার ঠাণ্ডা লাগছে। আপনার শরীরে র’ক্ত বেশি। তাই দিনে একশবার গোসল করেন। আমার এতো র’ক্ত নেই। ছাড়ুন তো।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার পানে চেয়ে ডান হাতে শাওয়ার ছেড়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফান দু’হাতে মাইরাকে নিজের সাথে চেপে মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
“ব্লাড বাড়ানোর মেডিসিন খাওয়াবো, ডোন্ট ওয়ারি। তুমি দিনে একশবার শাওয়ার নেয়ার প্রিপারেশন নাও।”
মাইরা মাথা তুলে ইরফানকে দেখতে চায়। পানির ঝাপটা চোখের উপর পড়ায় চোখ বন্ধ হয়ে আসে বারবার। তবুও ঝাপসা চোখে ইরফানকে দেখে বোকাচোখে প্রশ্ন করে ওঠে, “কেন?”
ইরফান মাইরার মুখাবয়বে দৃষ্টি বুলায়। পানির কণা মাইরার মুখে একের পর এক ছুঁয়ে দিচ্ছে। তার নাক মুখ বেয়ে পড়া পানি কিছুটা মাইরার মুখে পড়ছে। ইরফান মোহিত চোখে মাইরার মুখপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে। ঠোঁট বাঁকায় সামান্য, বিড়বিড় করে, ‘স্টুপিট। বড় হও।’
কথাটা বলে মাইরার ভেজা ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে।
শুদ্ধ ফারাহ’র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ফারাহ’র দরজা আটকানো। শুদ্ধ ফাইজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোর বোনকে দরজা খুলতে বল। মেজাজ খারাপ হচ্ছে বলে দিলাম।”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলল,
“তুই রেগে গিয়ে কিছু একটা করেছিলি। কি করেছিলি রে? না বললে না বল। তোদের ব্যাপার। কিন্তুু আমার বোন এতো কেঁদেছে মানে মারাত্মক কিছুই হবে।
তুই গতকাল আমার বোনটা খোঁজ না নিয়ে উল্টে বলেছিস সামিয়া না টামিয়াকে বিয়ে করবি। এখন আমার বোনও রাগ করেছে যা। তুই খেয়েদেয়ে বিদেয় হো, যা।”
শুদ্ধ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় ফাইজের দিকে। রেগে বলে,
“এই বে’য়া’দ’ব, তুই ওকে খবর দিয়ে দরজা বন্ধ করিয়েছিস তাই না?”
ফাইজ শুদ্ধর মাথায় হাত বুলিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে,
“চুল ছোট হলেও বুদ্ধি আছে তোর! হাউ বুদ্ধি!”
শুদ্ধর রাগ লাগছে। তার সাথে মজা নিচ্ছে এই বে’য়া’দ’ব টা। শুদ্ধ দরজা আলতো হাতে থাপ্পড় দিয়ে নরম কণ্ঠে বলে,
“ফারাহ পাখি দরজা খোলো।”
ফাইজ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“এই আমি তোর শালা। ল’জ্জা করেনা আমার সামনে আমার বোনকে এভাবে ডাকতে?”
শুদ্ধ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“না করে না। তোর ল’জ্জা করলে শার্ট খুলে মুখ ঢেকে রাখ যাহ। বে’য়া’দ’ব, ইনায়াকে আজকেই নিয়ে যাবো দাঁড়া। শুধু ফারাহ কে একবার দেখে নিই।”
কথার মাঝেই ফারাহ দরজা খুলে দেয়। শরীর দুর্বল হওয়ায় শুধু ঘুম পাচ্ছে। আর শুদ্ধর গলা পেয়ে মেয়েটা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও এখন নিজেই খুলে দেয়। তার ভীষণ ইচ্ছে করছে শুদ্ধকে দেখতে। অসুস্থ শরীরে সব রাগ, অভিমান চেপে শুদ্ধকে দেখতে দরজা খুলে দাঁড়ায়।
শুদ্ধ দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ফাইজকে বাদ দিয়ে দ্রুত পিছু ফিরে তাকায়। ফারাহ নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে। মুখজুড়ে অসুস্থতার ছোঁয়া। শুদ্ধর বুকে ব্য’থা হলো। দ্রুত ঘরের ভেতর পা রেখে ফারাহ কে জড়িয়ে ধরে। ফারাহ চোখ বড় বড় করে তার সামনে দাঁড়ানো ভাইয়ের দিকে তাকায়। ল’জ্জায় দ্রুত চোখ বুজে নেয়।
ফাইজ হা করে তাকায় শুদ্ধর দিকে। এটা কি নি’র্ল’জ্জ! পিছন থেকে শুদ্ধর কলার ধরে টেনে বলে,
“এই বে’য়া’দ’ব আমার বোনকে ছাড়। বিয়ে না করে এসব কি ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করেছিস?”
শুদ্ধ ফারাহ কে ছেড়ে ফাইজকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিয়ে বলে,
“যা তোর বাবা মায়ের সাথে আলোচনায় বস সোনা। আমি একটু পর আসছি। শুধু একটু ধরছি তোর বোনকে। আর কিছু করব না যা। তুই আমার ভালো সোনা।”
বলেই ফাইজের মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। ফাইজ তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে দরজার দিকে। কি ফা’জি’ল এটা ভাবা যায়!
শুদ্ধ দরজা আটকে ফারাহকে আবারও জড়িয়ে ধরে। ফারাহ ক্লান্ত স্বরে বলে,
“কি করছ? ছাড়ো আমায়।”
শুদ্ধ অপরাধীর সুরে বলে,
“স্যরি পাখি। এখনো তোমার গায়ে জ্বর। জ্বর বাঁধালে কিভাবে? ওহ আমার জন্যই তো। স্যরি ফারাহ পাখি! আর ওসব ফালতু কাজ করব না রেগে।”
ফারাহ’র চোখ ভিজে যায়। শুদ্ধ ফারাহকে ছেড়ে ফারাহকে কোলে নিতে গেলে ফারাহ শুদ্ধ কে আটকে বলে,
“কি করছ? আমাদের বিয়ে হয়নি!”
শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,
“সবাই শুধু এটাই বলছে কেন? আজকেই বিয়ে করব। চিন্তা কর না।”
ফারাহ নিজে নিজেই ধীর পায়ে তার বেডের উপর বসে। শুদ্ধ ফারাহ’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“তুমি আমার সাথে ঠিক করে কথা বলো তো ফারাহ পাখি!”
ফারাহ মাথা নিচু করে রইল। ত্যাড়া কণ্ঠে বলে,
“আমি তোমাকে বিয়ে করব না।”
শুদ্ধ ফারাহ’র মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“আহারে! এতো দুঃস্বপ্ন দেখতে নেই পাখি। মন ভেঙে যাবে।”
কথাগুলো বলে ফারাহ’র পাশে বসে। কালকে যে ফারাহ গলায় ব্য’থা পেয়েছিল সেটা দেখার চেষ্টা করে। ফারাহ বুঝতে পারে না। শুদ্ধ কে তার কাছে দেখেই রেগে দুর্বল শরীরেই শুদ্ধকে ধাক্কা দেয়। শুদ্ধর মাথা নিচু ছিল, যার ফলে ফারাহ’র দেয়া ধাক্কা টা শুদ্ধর গালে থাপ্পড়ের মতো হয়ে যায়।
শুদ্ধ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় ফারাহ’র দিকে। ফারাহ নিজেও বুঝতে পারেনি। অবাক হয়ে শুদ্ধর দিকে তাকায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না। শুদ্ধ তার চেয়ে অনেক বড়। সে শুদ্ধ কে মারার কথা ভাবতে পারেনা। এখন শুদ্ধকে তার থেকে সরাতে চেয়েছিল। উল্টো হয়ে গিয়েছে। শুদ্ধ মুহূর্তেই কেমন রেগে যায়। ফারাহ ভীত চোখে তাকায়। কালকের মতো কিছু করবে না তো!
শুদ্ধ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বেডে একটা লাথি দিয়ে বলে,
“থাপ্পড় দিলি কেন? বউ বানাবো বলে? বউ তো বানাবোই। কিন্তুু তার আগে তোর ত্যাড়ামি ছুটিয়েই ছাড়বো আমি। বিয়ের কথা তোলায় কাউকেও ত্যাড়ামি করেছিস, সব ভুলে গিয়ে চলে আসলাম। এবার একদম থাপ্পড় দিয়ে দিলি? বে’য়া’দ’ব মেয়ে। বে’য়া’দ’বি ছোটাবো, ওয়েট।”
ফারাহ ঢোক গিলে কিছু বলতে চায়। তার আগেই শুদ্ধ হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ফারাহ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। চোখ দু’টো ঝাপসা।
মাইরা তার কলেজ শেষে কলেজ গেইট থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। ইরফানের জন্য অপেক্ষা করছে মূলত। মাইরার ছটফটে মন দাঁড়াতে চায় না। আশেপাশে আরেকবার চোখ বুলিয়ে ইরফানের ভার্সিটির দিকে পথ ধরে। এই কলেজ থেকে ইরফানের ভার্সিটি যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট এর মতো। আগের কলেজটি এই কলেজের অপর প্রান্তে।
মাইরা একা একা পথ ধরে। ইরফান এই পথেই তাকে নিতে আসবে। দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে হাঁটা ভালো। কিছুদূর যেতেই দু’টো ছেলে বাইকের উপর বসে কিসব বাজে বাজে কথা বলছে, সবই মাইরার কানে আসে। থেকে থেকে তাকে নিয়েও বলছে। মাইরা পিছু ফিরে একবার তাকায়। ছেলে দু’টো তার দিকেই চেয়ে আছে। মাইরার রাগ হলো। ইচ্ছে করল ঝটপট থাপ্পড় দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে। ভাবনাটা ভেবে উল্টো ঘুরে নিজের মাথায় একটা চাটি মারলো। ধ্যাত! ওই ইরফানের থেকে সেও এখন অন্যদের থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলতে চাইছে। আবারও কয়েক পা এগোলে ছেলেগুলোর বে’য়া’দ’বি মার্কা কথা শুনে মাইরা দাঁড়িয়ে পড়ে। তার পায়ে থাকা জুতো দু’টোর দিকে তাকায়। সামান্য নিচু হয়ে পায়ের জুতো দু’টো খুলে হাতে নেয়। এরপর ঘাড় বাঁকিয়ে ছেলেদু’টোকে দেখল তারা সিগারেট ফুঁকছে আর বাজেবাজে কথা বলছে। মাইরার কি যে রাগ হলো। গ্রাম হলে তো এদের হাত পা ভেঙে দিতো। শহর বলে একটু আধটু ভয় পাচ্ছে। তবে দূর থেকে অ্যাকশন নিবে। ভাবনা অনুযায়ী খুব সূক্ষ্ম চোখে নিশানা অনুযায়ী হাতের দু’টো জুতো ছেলে দু’টোর দিকে ছুঁড়ে মারে।
জায়গা মতোই লেগেছে, একদম ছেলে দু’টোর নাক বরাবর। মাইরাকে আর পায় কে। মেয়েটা খালি পায়েই দৌড় লাগায় সামনের দিকে। একবার পিছু ফিরে তাকায়, ছেলে দু’টো মাত্র তার পিছু নিল। মাইরা দৌড়ের গতি বাড়ায়। কিছুদূর গিয়ে আরেকবার পিছু ফিরে তাকালে সামনে কারো সাথে জোরেসোরে এক ধাক্কা খায়। সামনের দিকে তাকিয়ে মাথা তুলে ইরফানকে দেখে দ্রুত ইরফানকে দু’হাতে সাপটে ধরে।
ইরফান মাইরার পিছনে থাকা ছেলে দু’টোর দিকে তাকায়। ছেলে দু’টো ইরফানকে দেখে থেমে গিয়েছে। ইরফানকে দেখে তাদের চোখেমুখে ভয় জড়ো হয়। ইরফান বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে,
“বাস্টার্ড, ইউ আর ফিনিশড্”
এরপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরাকে বা হাতে আগলে নিয়ে ডান হাতে মাইরা মাথা তুলে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি প্রবল। ইরফান ডান হাতে মাইরার গাল চেপে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“ওরা তোমায় টাচ করেছিল?”
মাইরা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। ইরফান শান্ত হয়। গাল ছেড়ে দিয়ে মাইরার মুখে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“কলেজ থেকে বের হতে নিষেধ করেছিলাম না? স্টুপিট গার্ল, থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। পাশ থেকে সৌভিক অবাক হয়ে বলে,
“কি রে ইরফান, এটা তোর কে? সেই বাচ্চা বউ টা না-কি?”
মাইরা ইরফানকে ছেড়ে দেয়। কিন্তুু ইরফান ছাড়লো না। বিরক্ত চোখে সৌভিকের দিকে তাকায়। সৌভিক মাইরার দিকে চেয়ে হেসে বলে,
“এতো সুন্দর বউ কোথায় পেলি?”
ইরফানের চোয়াল শক্ত হয়। মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। কিন্তুু চেঁচালো না। মিনমিন করে বলে,
“নামান নামান। হায় হায় অনেক মানুষ।”
ইরফান ভাবলেশহীনভাবে মাইরাকে তার গাড়িতে বসিয়ে দেয়। বা হাতে মাইরার গাল চেপে, দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “এখান থেকে এক পা বাইরে রেখেছিস তো, তোকে খু’ন করব স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফন গাড়ির দরজা লাগিয়ে সৌভিকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“চোখ নিচে রাখবি। আফটার অল চোখ তুলে নেয়ার অভিজ্ঞতা আমার একটু বেশিই আছে।”
সৌভিক হেসে বলে,
“তুই আবার কার চোখ তুলেছিস? সবচেয়ে বড় কথা কার জন্য?”
ইরফান ঠোঁট বাঁকালো একটু। সৌভিক হেসে বলে,
“এসব বাদ দে। তুই যে এখানে বউয়ের সাথে জড়াজড়ি করলি, অনেক স্টুডেন্ট হয়তো দেখেছে তোদের। আমিও তোর ছোটোখাটো একটা শত্রু। বাল্যবিবাহের খবর তো এবার ছড়িয়ে যাবে, তুই চাকরি হারাবি।”
ইরফান ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয়,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫০
“I don’t care.
একটু থেমে বা হাত প্যান্টের পকেটে রেখে ডান হাতে সৌভিকের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“I think you will become blind very soon.”
কথাটা বলে সৌভিকে একটা ধাক্কা দিয়ে গটগট পায়ে তার গাড়ির দিকে যায়। খুবই লো ভয়েসে শিষ বাজায়। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি।