প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬
Drm Shohag

ইরফান গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে। সিটে মাথা এলিয়ে ডান হাতের কনুই জানালার উপর রেখে মুষ্টিবদ্ধ হাত কপালে ঠেকিয়ে চোখ বুজে রাখে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে সামনে আয়নায় চোখ পড়লে মাইরার লালিত ডান গাল ভেসে ওঠে দর্পণে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
মাইরা ইনায়ার কাঁধের উপর মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে আছে। ইনায়া বাম পাশে বসায় মাইরা তার মাথার বাম পাশ ইনায়ার ডান কাঁধে ঠেকিয়ে রেখেছে। যার ফলে গাড়ির হলদেটে আলোয় মাইরার লালিত ফোলা ডান গাল স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে আছে। কিছুটা র’ক্তের ছিটেফোঁটা ফোলা গাল জুড়ে। ইরফান কিছুক্ষণ আয়নায় ফুটে ওঠা মলিন মুখের মাইরার পানে চেয়ে থাকলো। এরপর চোখ সরিয়ে নেয়। ডান হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং-এ একটা থা’প্প’ড় মারে। মাইরা ঘুমের মাঝেই কেঁপে ওঠে। তবে চোখ মেলে তাকায় না। ঘুমিয়েছে বোধয়।
সে সময় শুদ্ধ গাড়িতে ইরফানের পাশে উঠে বসে। ভ্রু কুঁচকে বলে,

“আবার কি হলো তোর?”
ইনায়া আড়চোখে তার ভাইয়ের দিকে তাকায়। ইরফান সামনে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। পিছন দিকে নিয়ে হঠাৎ করেই স্পিড বাড়ালে মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। একটু চোখ লেগেছিল। এতো জোরে ধাক্কা পেয়ে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়।
ইরফান গাড়ির স্পিড বাড়ায়। মাইরা চোখ বড় বড় তাকিয়ে বলে,
“এতো জোরে চলছে কেন গাড়ি? আপনি আমায় মারার জন্য এমন করছেন? খা’রা’প লোক।”
শুদ্ধ পিছন ফিরে ইশারায় বলে,
“মেরি মা চুপ চুপ।”
মাইরা তো শুদ্ধর দিকে তাকালোই না। রেগেমেগে বলে,
“আস্তে চালান বলছি। একটু ঘুমিয়েও শান্তি দেয় না।
ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
আসলেই ভালোর ছিটেফোঁটা নেই তোমার ভাইটার মাঝে।”
ইরফান রেগে গাড়ির স্পিড আরও বাড়ায়। মাইরা কটমট দৃষ্টিতে ইরফানের মাথার পিছনে তাকিয়ে থাকে। দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে বিড়বিড় করে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“অস’হ্য লোক একটা।”
ইনায়া, আর শুদ্ধ অসহায় চোখে একবার মাইরার দিকে তাকায়, একবার ইরফানের দিকে। তাদের মন বলছে, এরা এমন কেন?
মাইরার মাথায় কিছু একটা আসে। ইনায়ার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আচ্ছা আপু, বাবা যদি আমাদের বাইরে আসার কথা জানতে পারে, তাহলে কি করবে?”
ইনায়া মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“অনেক বকবে।”
মাইরা ভীত কণ্ঠে বলে,
“বাবা তো আমাকে নিজের মেয়ে বলেছিল। এখন একটা ভুল করে ফেলেছি, তাহলে যদি বাবা আমায় এই ভুলের জন্য আর নিজের মেয়ে না ভাবে?”

কথাগুলে বলে মনমরা হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মাঝেই ইরফান গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।
মাইরা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে ইরফানের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে,
“বাবাকে একদম বলবেন না আমি আর আপু বাইরে গিয়েছিলাম।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে পিছন ফিরে তাকায়। মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“কথা বলছেন না কেন? একদম বলবেন না বাবাকে।”
ইরফান নিরব চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা বিরক্ত হয়ে দু’পা এগিয়ে এসে বলে,
“আবার মা’রা’র প্ল্যান করছেন? আমি একদম মার খেতে ভয় পাই না। আপনি বাবাকে বলবেন না আমি বাইরে গিয়েছি। আমি না বলে গিয়ে অপরাধ করেছি, আপনি গাল ফেটে দিয়েছেন, শোধবোধ।”
ইরফান চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই গর্ধব জানেই না সে কেন মার খেয়েছে। মাইরা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
“বাবাকে বলে দেয়ার প্ল্যান করছেন তাই না? আপনি আসলেই একটা…..
বলার আগেই ইরফান শক্ত হাতে মাইরার গাল চেপে ধরে। মাইরা ব্য’থা পায়। ইরফান সেকেন্ড কয়েক এর মাঝেই মাইরার গাল ছেড়ে বারবার শ্বাস নেয়। এর সাথে থাকলে এর গায়ে মারের দাগ ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না।
পিছন থেকে তারেক নেওয়াজ বলে ওঠে,
“কি হয়েছে? কে কথা বলে ইরফান?”

শ্বশুরের গলা পেয়ে মাইরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। দ্রুত ইরফানের গা ঘেঁষে ইরফানের পিছে গিয়ে ইরফানের পিঠের দিকের শার্ট দু’হাতে খামচে ধরে।পিছনে মুখ লুকায়।
তার মনে ভয়, তার শ্বশুরের মতে রাতে বাইরে যাওয়া ভুল, সে তো এই ভুল করেছে, তাও আবার ইনায়াকে নিয়ে। এখন তার এই বাবাটাও যদি তাকে আর মেয়ে না মানে।
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সামনে পা বাড়ালে মাইরা ইরফানের শার্ট টেনে ধরে। ইরফানের পা থেমে যায়। ছেলেটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
ওপাশ থেকে শুদ্ধ আর ইনায়া গাড়ি থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুদ্ধ ইরফানের পিছনে মাইরাকে এভাবে দেখে অবাক হয়।

ইরফান পিছনে হাত নিয়ে শক্ত হাতে ঝারা দিয়ে মাইরার হাত ছাড়িয়ে নেয় নিজের শার্ট থেকে। এরপর উল্টো ঘুরে মাইরার দিকে তাকায় গম্ভীর মুখাবয়বে। মাইরা দু’পা পিছিয়ে যায়।
বিড়ালের থেকে বাঁচতে বাঘের কাছে আশ্রয় চেয়েছে। কত বড় ভুল করেছে বুঝতেই দ্রুত মাইরা তার দু’হাত তুলে দু’গালে রাখে। কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“একদম মারবেন না বলে দিচ্ছি। আমি ব্য’থা পাই। গাল টা এখনো জ্বলছে।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার মুখের দিকে চেয়ে রইল। কিছুই বলল না। এরপর মাইরার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। মাইরা বোকা চোখে সামনে তাকালে তার শ্বশুরকে দেখে চোখ বড় বড় করে হয়ে যায়। তরেক নেওয়াজ এগিয়ে এসে মাইরাকে দেখে বলে,
“আম্মু তুমি এখানে? কোথায় গিয়েছিলে?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“ওই, গিয়েছিলাম…
এর মাঝেই তারেক নেওয়াজের চোখ যায় মাইরার গালের দিকে। সন্ধ্যার পর সে মাইরাকে দেখেছিল, মেয়েটার গাল এমন ছিল না। এটুকু সময়ের মাঝে গাল ফেটে র’ক্ত বের হওয়ায় উপক্রম হয়েছে কিভাবে ভেবে পায় না। তাই প্রশ্ন করে,

“তোমার গালের এ অবস্থা হলো কি করে আম্মু?”
তারেক নেওয়াজ এর কথা শুনে ইরফানের পা থেমে যায়। মাইরা বলতে চায়, ‘আপনার ছেলের লোহার হাত দিয়ে আমার এতো কোমল ত্বকে আঘাত করেছে।’ কিন্তুু মনের কথা মনেই রাখল। এমনিতেই তাকে নিয়ে কত অশান্তি হয়েছে, এটা বললে নিশ্চয়ই আরও অশান্তি হবে। বাবা ছেলের মাঝে আরও রাগারাগি হবে, এইসব ভেবে আর বলল না। কিন্তুু কি বলবে কি বলবে ভেবে হঠাৎ-ই মাথায় বুদ্ধি আসে। অতঃপর মৃদু হেসে বলে,
“আমি বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম বাবা, তাই আরকি। ঠিক হয়ে যাবে। কিছু হয়নি।”
তারেক নেওয়াজ ভ্রু কোঁচকালো। তাকে এ নিয়ে আর ভাবতে হয় না। ইরফান এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলে,
“আমি মেরেছি।”
পিছন থেকে ইরফানের কথা শুনে মাইরা পিছন ফিরে চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান রাগান্বিত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,

“ইডিয়েট, লাইয়ার হতে শিখেছে বাচ্চাকালেই।”
তারেক নেওয়াজ রেগে বলে,
“তুমি আবার ওকে মেরেছ?”
ইরফান যেতে যেতে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“বাঁদরামি করেছে, শাস্তি পেয়েছে । দ্যাট’স ইট।”
তারেক নেওয়াজ রেগে বলে,
“তুমি সত্যিই একটা অ’মানুষ হয়েছ, এই মেয়েটাকে মারতে তোমার একটুও মায়া হয় না?”
ইরফান রাগে তাদের মেইন গেইটে একটা লাথি মেরে বাড়ির ভেতর চলে যায়। তারেক নেওয়াজ অবাক হয়ে দেখলেন ইরফানকে। চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এসব আর নতুন কি। তার কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে বিয়েটা দিয়ে তিনি সত্যিই খুব বড় ভুল করেছেন। মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরা তার দিকেই তাকিয়ে আছে অসহায় চোখে। মাইরা হঠাৎ-ই হেসে বলে,
“বাবা আপনি রা’গ করবেন না। আমার ব্য’থা তো অর্ধেক সেরে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর পুরোটাই সেরে যাবে।”
তারেক নেওয়াজকে চুপ থাকতে দেখে মাইরা আবারও বলে,
বাবা আমি একটা কথা বলতে চাই।”
তারেক নেওয়াজ মাইরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“হ্যাঁ আম্মু বলো।”

কথাটা বলে পাশ ফিরে ইনায়া আর শুদ্ধকে দেখে ভ্রু কোঁচকালো। আবার মাইরার দিকে তাকালো। এরা সবাই গিয়েছিল কোথায়? ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?”
মাইরা ভাবে এক্ষুনি ইনায়া আপুকে বকলো বলে, দ্রুত বলে ওঠে,
“আমি নিয়ে গিয়েছিলাম বাবা।”
তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলেন,
“কোথায়?”
মাইরা হেসে বলল,
“আচ্চা আগে আমার একটা কোয়শ্চন এর আন্সার দিন, ধরুন আপনার এক মেয়ে প্রথমবার ইয়া বড় একটা ভুল করেছে, এরপর আপনার কাছে ক্ষমা চাইছে, আর সে ভুল দ্বিতীয়বার করবে না। আপনি কি তাকে ক্ষমা করবেন? না-কি শাস্তি দিবেন?”
তারেক নেওয়াজ কোঁচকানো ভ্রু শিথিল করে বলে,
“তা কি ভুল করেছ আম্মু?”
মাইরা হিহি করে হেসে বলে,
“বাবা আমার ফুসকা অনেক পছন্দের। তাই এক্সাইটমেন্টে একা একাই চলে গিয়েছিলাম।
মাথা নিচু করে অনুতাপের স্বরে বলে,
স্যরি!”

তারেক নেওয়াজ মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“ফাস্ট টাইম। তাই ক্ষমা করলাম। সেকেন্ড টাইম কঠিন পানিশমেন্ট হবে কিন্তুু।”
মাইরা মন খারাপ করে বলল,
“আপনার মেয়ে হওয়া থেকে কাটাকুটি হবো না তো?”
তারেক নেওয়াজ অদ্ভুদ চোখে তাকালো মাইরার দিকে। মেয়েটার মুখে কত মায়া! বাবা মারা গিয়েছে, সে হিসেবে মেয়েটা এতিম। বাবার আদর পায়না, মায়ের আদরও সেভাবে পায়না এজন্যই তিনি তার বন্ধুর মেয়েটাকে তার কাছে নিয়ে আসলো। কিন্তুু তার ছেলে যে মেয়েটার সাথে অমানবিক আচরণ করছে এতে তিনি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছেন। তার বন্ধুকে দেয়া কথাটা যে তিনি রাখতে পারছেন না। ভালো রাখতে পারছেন না মেয়েটাকে।
মাইরা হেসে বলল,
“আপনি খুবই ভালো বাবা। আপনি আমায় আপনার মেয়ে থেকে কাটবেন না জানি। আমি মানুষ চিনতে একদম ভুল করি না। ঠিক বললাম তো?”
তারেক নেওয়াজ মাইরার কথায় হেসে ফেলল। ইনায়া এগিয়ে আসলে তারেক নেওয়াজ তার দুই মেয়ের হাত আগলে নিয়ে বাড়ির ভেতরে যান। শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইরফানের গাড়ি পার্ক করে ভেতরে যায়।

মাইরা সকাল সকাল উঠে ফজর নামাজ পড়ে নেয়। আজ ইনায়া তার সাথে আছে। নামাজ শেষে জানালার দিকে নজর দিলে দেখল ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। মাইরা ইনায়াকে ডাকতে লাগলো। নামাজের আগেও অনেকবার ডেকেছে। উঠাতেই পারেনি। এখনও ডাকছে, মেয়েটা উল্টেপাল্টে শুধু ঘুমিয়েই যাচ্ছে।
মাইরা মিটিমিটি হেসে দুষ্ট বুদ্ধি আঁটল। তার ব্যাগে একটা রাবারের সাপ আছে। এটা দিয়ে তার ছোট ভাইকে ভয় দেখাত মাঝে মাঝে। এগিয়ে গিয়ে ব্যাগ থেকে বের করে আনে। এরপর ইনায়ার গলার সাথে সাপ টা রেখে দেয়।
মুখ চেপে ফিসফিস করে একটু হেসে নেয়। এরপর ইনায়ার দিকে ঝুঁকে বলে,
“আপু আপু, উঠো। সাপ। তোমার গায়ে সাপ।”
ইনায়া আবারও এপাশ ফিরে ওপাশ হয়। ঘুম হালকা হওয়ায় মাইরার সাপ সাপ কথাটা কানে পৌঁছায়। পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকায়, ঝাপসা দেখে আবারও চোখ বুঝতে চোখ নামালে তার হাতের উপর সাপ এর মতো কিছু একটা দেখেই লাফ দিয়ে উঠে সাপ টা ছুঁড়ে ফেলে সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার দেয় ‘সাাাাাাপ’ বলে।
মাইরা নিজেও ভয় পেয়ে ইনায়ার সাথে চিৎকার দেয়। মূলত ইনায়ার এক্সপ্রেশন দেখে মাইরার মনে হয়েছে সত্যি সত্য সাপ বেরিয়েছে।

মাইরা দৌড়ে গিয়ে রাবারের সাপ কুড়িয়ে ইনায়ার সামনে ধরে বলতে চায় এটা রাবারের।
ইনায়া তার সামনে আবারও সাপ দেখে প্রায় কেঁদে দিয়ে আম্মু বলে ডেকে ওঠে।
ওদিকে তারেক নেওয়াজ আর রুমা নেওয়াজ ঘরের দরজা ধাক্কাচ্ছে। মাইরা ঢোক গিলে নেয়। এখন কি হবে? তীব্র ধাক্কানোর আওয়াজে মাইরা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। তারেক নেওয়াজ আর রুমা নেওয়াজ ভেতরে গিয়ে ইনায়াকে ভীত হয়ে চোখে পানি দেখে বাবা মা দু’জনেই চিন্তিত হয়ে যান। রুমা নেওয়াজ ইনায়ার পাশে বসে মেয়েকে আগলে নিয়ে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
“এই মেয়ে কি করেছ আমার মেয়ের সাথে?”
মাইরা আমতা আমতা করে হাতের সাপ টা বের করে বলে,
“আসলে আমি খেলনা সাপ বের করেছিলাম। এটা দেখে আপু ভয় পেয়েছে।”
রুমা নেওয়াজ ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে রেগে বলল,
“কালকে মার খেয়েও হয়নি তাই না? বেয়া’দব মেয়ে। ঘুমের ঘোরে এভাবে দেখে কত মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয় জানো?”

মাইরা মাথা নিচু করে নিল। মিনমিন করে বলল,
“স্যরি! আমি বুঝতে পারিনি।”
ইনায়া তার মাকে জড়িয়ে ধরেছে। হঠাৎ এভাবে দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছে মেয়েটা। এখনো শরীর মৃদু কাঁপছে। রুমা নেওয়াজ নামাজ পড়ে দোয়া পড়ছিলেন, তখনই মেয়ের এমন চিৎকার শুনে ছুটে এসেছে। এদিকে তারেক নেওয়াজ মসজিদ থেকে ফিরছিলেন নামাজ শেষে। তখন মেয়ের এমন চিৎকার শুনতে পায়।
ইনায়ার মা ইনায়ার গায়ে হাত বুলিয়ে আদুরে সুরে বলে,
“ভয় পেও না আম্মু। ওটা কিছু না। খেলনা জিনিস ওটা।”
ইনায়া কিছু বলল না। মাকে জড়িয়ে ধরে রাখল। রুমা নেওয়াজ মেয়েকে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালেন। মাইরা এগিয়ে এসে হাতের সাপ এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আপু দেখ, এটা খেলনা। ভয় পেও না।”

ইনায়া আবারও হঠাৎ দেখে ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। রুমা নেওয়াজ ধমকে ওঠে মাইরাকে। মাইরা মলিন মুখে একবার রুমা নেওয়াজ এর দিকে তাকায়। এরপর আবারও ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপু আমি স্যরি। আসলে নামাজের সময় চলে যাচ্ছিল তাই তোমাকে উঠাতে চাইছিলাম। তাই এভাবে ডেকেছি। স্যরি আপু। আর কখনো এমন করব না।”
ইনায়া হ্যাঁ না কিছুই বলল না। রুমা নেওয়াজ ইনায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। মাইরার চোখে জল টলমল করে ওঠে। তারেক নেওয়াজ এগিয়ে এসে মাইরার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“আর কখনো এমন কর না। এভাবে অনেক বড় ক্ষ’তি হতে পারে। বুঝেছ?”
মাইরা নিজেকে সামলে ফট করে মাথা তুলে হেসে বলে,
“জ্বি বাবা।
হাতের রাবারের সাপ দেখিয়ে বলে,
এটা আজকেই ফেলে দিব। হবে না?”
তারেক নেওয়াজ গম্ভীর গলায় বলল,
“আচ্ছা।”
এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

মাইরার ভীষণ খা’রা’প লাগলো। সবাই কি তার উপর অনেক রে’গে গিয়েছে? ইনায়া আপুও কথা বললো না। বাবাও হাসল না। এগিয়ে গিয়ে ঘরের দরজা ভিড়িয়ে দিল। রুমা নেওয়াজ ইনায়াকে জড়িয়ে ধরেছিল সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভাসলো। এমন দৃশ্য তার মায়ের সাথে কত বছর আগে ফুটেছিল কে জানে।
চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। কিন্তুু এটাকে সে বেশিক্ষণ লালন করে না। দ্রুত দু’হাতে দু’চোখ মুছে নিজে নিজেই হেসে ফেলে। রাবারের সাপ নিয়ে বেলকনিতে দৌড়ে যায়। ভোরের এই আবহাওয়া মাইরার ভীষণ ভালো লাগে।
ইনায়া স্বাভাবিক হলে নামাজ পড়ে মাইরার ঘরে আসে। মাইরা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। ইনায়া পিছন থেকে ভাউ বলে ওঠে। মাইরা লাফ দিয়ে ওঠে। বুকে থুতু দিয়ে পিছন ফিরে ইনায়াকে দেখে দ্রুত ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আপু আমি স্যরি! প্লিজ প্লিজ! আমি আর এমন করব না।”
ইনায়া হেসে মাইরার পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,

“পা’গ’লি মাইরা।”
মাইরা মুখ ফুলিয়ে বলে,
“আমি পা’গ’লি না।
ফিসফিস করে বলে, ‘তোমার ভাই পা’গ’ল।’
পিছন থেকে রুমা নেওয়াজ হাতে এক কাপ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলেন,
“কে পা’গ’ল?”
মাইরা রুমা নেওয়াজকে দেখে ভীত চোখে তাকায়। আমতা আমতা করে হেহে করে হেসে বলে,
“ওই, আমি আমি।”
ইনায়ার মা ইনায়ার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বলে,
“তোমার গুণধর ভাবিকে এটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করতে বলো। আর এসব বেয়া’দবি ছাড়তে বলো।”
মাইরা মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,
“আমি বেয়া’দবি করি না তো আন্টি। আমি খুব ভালো। আপনি আমার সাথে একদিন কাটিয়ে দেখুন।”
রুমা নেওয়াজ ধমকে বলেন,

“একজন বাবা আরেকজন আন্টি?”
মাইরা অবাক হয়ে রুমা নেওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“তাহলে আপনাকে কি বলবো?”
রুমা নেওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইনায়ার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
মাইরা ইনায়ার দিকে তাকালে ইনায়া হেসে বলে,
“তোমাকে আম্মু বলে ডাকার ইঙ্গিত দিয়েছে আম্মু।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে ইনায়ার হাত ধরে ঘুরতে নিলে ইনায়ার হাত থেকে গরম চায়ের কিছুটা মাইরার পায়ের উপর এসে পড়ে। মাইরা ‘উহ্’ শব্দ করে ওঠে। ইনায়া দ্রুত চায়ের কাপ রেখে বলল,
“হায় হায়, কোথায় লাগলো?”
মাইরা মেঝেতে বসে হাত দিয়ে পায়ের উপর থেকে একবার হাত বুলিয়ে হেসে বলে,
“ওই একটু। কিছুই হয়নি। তুমি চা খাও।”
ইনায়া হেসে বলে,

“এই চা তো আম্মু তোমাকে দিয়ে গেল। আমি চা খাবো না। আমি এখন ঘুমাবো। তুমি যে সকালে ঘুমাও না, তাই আম্মু বাবার সাথে তোমার জন্যও চা করেছে।”
মাইরা অবাক হয়ে তাকালো ইনায়ার দিকে। মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“তার মানে তোমার আম্মু আই মিন আমার শ্বাশুড়ি উপরে উপরে দা’জ্জা’ল শ্বাশুড়ি, ভেতরে ভেতরে ভালো শ্বাশুড়ি,, তাই না?”
ইনায়া মাইরার কথায় হেসে ফেলল। বসা থেকে দাঁড়িয়ে ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে বলল,
“আমি ঘুমাচ্ছি মাইরা। আমার সকালে ওঠার অভ্যেস নেই। বাই।”
মাইরা হেসে বলে, “আচ্ছা আপু ঘুমাও। আর ডিস্টার্ব করব না পাক্কা।”
এরপর চায়ের কাপ নিয়ে ফটাফট চা সাবার করল। বিড়বিড় করল, ‘শ্বাশুড়ি মায়ের মুখ থেকে নিম ঝরলেও হাত থেকে তো বহুত মধু ঝরে।’
পা জ্বলছে হালকা। দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে ট্যাপের নিচে পা দিয়ে রাখল কিছুক্ষণ। জ্বলুনি কিছুটা কমেছে। এরপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ইনায়াকে দেখল সে ঘুম। মাইরা ইনায়াকে আর ডিস্টার্ব করল না। ঘরের দরজা চেপে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

এদিক-ওদিক তাকালো। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ। সবাই হয়তো আবারও ঘুমিয়েছে। মাইরা এদিক-ওদিক হাঁটল। এরপর ধীরে ধীরে মেইন গেইট খুলে বাইরে যায়। বাড়ির সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে ফাঁকা রাস্তার মতো। তবে এই জায়গা ইরফানদের একদম মেইন গেইটের ভেতরে। ডান পাশে বেশ বড়সড় বাগান। বামপাশেও অনেক গাছপালা লাগানো। মাইরা আশেপাশে তাকালো। কেউ কোথাও নেই। মেয়েটা খালি পায়েই দৌড় লাগায় বাগানের ভেতর। অনেকটা জায়গা জুড়ে ফাঁকা। মাইরা খালি পায়ে মাটির উপর হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখল।
হঠাৎ তার মাথায় আসে দড়ি খেলার কথা। গ্রামে প্রচুর খেলেছে। এখন খেলার ভীষণ ইচ্ছে জাগলো।
কিন্তুু খেলার দড়ি এখানে নেই। তার বাড়িতে রেখে এসেছে।
কিছু একটা ভেবে বাড়ির ভেতর দৌড় লাগায়। ছাদের উদ্দেশ্যে দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। ছাদে পৌঁছে হাঁটুতে ভর করে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলল। নিজেকে শান্ত করে আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজল। এরপর এগিয়ে গিয়ে কাপড় মেলার একটা মোটা দড়ি বেশ কসরত করে খুলে ফেলে। তারের মতো মোটা দড়ি, এটা দিয়ে খেলতে অসুবিধা হবে না। নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে ভেবে মুখে হাসি ফুটল। এরপর আবারও দৌড় লাগায় বাগানের উদ্দেশ্যে।

মাইরা বাগানে এসে আশেপাশে একবার তাকালো। নাহ, কেউ নেই। গায়ের ওড়না খুলে পাশেই ঘাষের উপর গুটিসুটি করে রাখল। কোমড় এর নিচ পর্যন্ত চুলগুলো শক্ত করে খোঁপা করে নিল। এরপর দু’হাতে দড়ি পেঁচিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা শুরু করে। আর খিলখিলিয়ে হাসে।
বাগানের ডানপাশে দোতলায় ইরফান এর ঘর, সাথে বেলকনি। ইরফান হাতে ব্ল্যাক কফি নিয়ে এসে দাঁড়ায় বেলকনিতে। গায়ে ব্ল্যাক টিশার্ট জড়ানো, পরনে ব্ল্যাক প্যান্ট। ডান হাতে কফির মগ নিয়ে তাতে চুমুক দেয়। বাম হাত পকেটে রেখে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় তার বেলকনি বরাবর নিচের দিকে।
মাইরা লাফিয়ে লাফিয়ে খেলার মাঝে খোঁপা খুলে গিয়েছে। কোমড় এর নিচ পর্যন্ত কালো কিচকিচ ঘন চুলগুলো ছড়িয়ে। মেয়েটা তবুও খেলছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বারবার লাফানোর ফলে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে দুলতে থাকে। সকালের স্নিগ্ধ মৃদু হাওয়া নিজের গায়ে মাখাতে ব্যস্ত মাইরা, সাথে ব্যস্ত খেলতে।
ইরফান গম্ভীর মুখায়বে মাইরার পিঠ ছড়িয়ে যাওয়া কেশের পানে চেয়ে কফির মগে চুমুক দিতে ব্যস্ত। তার হাবভাব কিছুই বোঝা যায়।

মাইরা হাঁপিয়ে গিয়ে খেলা থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ঘেমে গিয়েছে। হাতের দড়ি ফেলে উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়।
ইরফান মাইরার দিকেই চেয়ে ছিল। মাইরার শরীরে ওড়না না থাকায় ইরফান দ্রুত চোখ সরিয়ে বিড়বিড় করে,
“স্টুপিট বাঁদর।”
এরপর তার ঘরে চলে যায়।
মাইরা হাঁপিয়ে গিয়ে মাটিতে বসে জিরিয়ে নেয়। চুলগুলো আবারও হাত খোঁপা করে নেয়। মাটি থেকে ওড়না তুলে গায়ে জড়িয়ে বাসার ভেতর যায়। পায়ে মাটি, তাই পা গুটিয়ে গুটিয়ে এসেছে যেন মেঝে অপরিষ্কার না হয়।
এরপর তার ঘরে কিছুক্ষণ বসে একবার ভাবল, ইনায়াকে ডাকবে। আবার ভাবলো থাক, মেয়েটাকে ভ’য় পাইয়ে ঘুম ভাঙিয়েছিল, এখন ঘুমাক। বিকালে নাহয় এই খেলা দেখিয়ে দিবে ইনায়াকে।
এরপর টেবিলের উপর থাকা জগ থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে আবারও ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানে যায়। আগের মতোই কাউকে না দেখে গায়ের ওড়না পাশে রেখে দড়ি খেলতে লেগে যায়।

মাইরা যখন ঘরে গিয়ে বসেছিল, তখন ইরফান নিচে নেমে আসে। বাগানে বিভিন্ন গাছ আছে, ফুল, ফল আরও বিভিন্ন ধরনের। ইরফান প্রায়ই গাছ ছেটে দেয়। আজও সেজন্যই এসেছিল। কাজ শেষে হাতের কাচি রেখে এগিয়ে আসলে দেখতে পায় তার সামনেই মাইরা আবারও দড়ি খেলছে। ইরফান গম্ভীরমুখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। এরপর মাইরার পাশ দিয়ে চলে যেতে নিলে মাইরা হঠাৎ-ই খেলা থামিয়ে উল্টো ঘুরলে ইরফানের বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ঠাস করে পড়ে যায় পিছন দিকে, সাথে সাথে ছোটখাটো একটা চিৎকার দেয়।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরার হাতে, কোমড়ে, পায়ে কোথাও ব্য’থা পাওয়া বাদ নেই বোধয়।

মাইরা চোখমুখ কুঁচকে সামনে তাকালে দেখল উম্মুক্ত ফর্সা লোমযুক্ত দু’টো পা। প্যান্ট হাঁটুর নিচ পর্যন্ত গুটানো। মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকায় পা দু’টোর দিকে। কিন্তুু কিছু মনে পড়তেই ফট করে মাথা তুলে তাকায়। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকেই চেয়ে আছে। মাইরা চোখ বড় বড় করে সামনে পড়ে থাকা ওড়নার দিকে তাকায়। একবার নিজের দিকে তাকায়। দ্রুত হাঁটু ভাঁজ করে নেয়।
ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান এখনো তার দিকে চেয়ে আছে। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। মেয়েটা লজ্জা পেয়েছে বেশ। মুখে খই ফোটা মাইরা কেমন যেন কথা খুঁজে পায় না। তার ওড়নার দিকে তাকালে দেখল ইরফানের পায়ের কাছেই পড়ে আছে। মাইরা আবারও চোখ তুলে আমতা আমতা করে বলে,
“আমার ওড়না টা একটু দিবেন?”
ইরফান হ্যাঁ না কিছুই বলে না। মাইরা ভেবে পায় না সে কি করবে, ইরফান মাইরার দিকে চেয়েই ডান পায়ের সাহায্যে মাইরার ওড়না তুলে দু’হাতে গুটিশুটি করে মাইরার মুখের উপর ছুঁড়ে মারে।
মাইরা হাত দিয়ে মুখের উপর থেকে ওড়না সরিয়ে রেগে বলে,

“ভালো করে দিতে পারেন না?”
ইরফানের দৃষ্টি দেখে চুপসে যায়।
চাখ নামিয়ে বিড়বিড় করে,
‘মানুষটাই তো ভালো না, কাজ ভালো হবে কি করে?’
বলতে বলতে ওড়না নিয়ে মাথাসহ নিজেকে ঢেকে নিল।
ইরফান পাশ কাটিয়ে যেতে নেয়, মাইরা তখনই বসা থেকে কোনোরকমে উঠে দাঁড়ালে ব্যালেন্স হারিয়ে ঠাস করে ইরফানের বুকে ঢলে পড়ে। পড়ে যাওয়ার ভয়ে দু’হাতে ইরফানের বুকের কাছের শার্ট শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। ইরফান রেগে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছে করে পড়িনি। আমার পায়ে কি যেন হয়েছে, দাঁড়াতে পারছি না।”
ইরফান মাইরার কথা কানে নিল না। ডান হাতে মাইরাকে ধাক্কা দিল। মাইরা ঠাস করে আবারও পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে ‘ওমাগো’ বলে ওঠে।
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে একবার মাইরার দিকে চেয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে তার পাশ দিয়ে জাহিদ মাইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

“আরে মাইরা কি হয়েছে তোমার?”
মাইরা পিটপিট করে চোখ তুলে তাকায়। কোমড়, আর পায়ে বেশি ব্য’থা পেয়েছে। ডান পা তো মাটিতে রাখতেই পারছে না। মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“ভাইয়া আমার পা ভেঙে গিয়েছে।”
জাহিদ চোখ বড় বড় করে বলে,
“কি বলো? দেখি দেখি।”
মাইরা নিজেকে গুটিয়ে বলে,
“না না আপনাকে লাগবে না। কাউকে একটু ডেকে দিন না ভাইয়া!”
জাহিদ হেসে বলে,
“ওহ হো মাইরা, তুমি এতো সংকোচ করছ কেন? আমি তোমায় নিয়ে যাচ্ছি, নো টেনশন।”
কথাটা বলে নিচু হয়ে মাইরাকে ধরার জন্য হাত বাড়ালে, তার আগেই ইরফান মাইরার পিছন থেকে টান মেরে মাইরাকে নিজের কোলে তুলে নেয়। জাহিদ হা করে তাকায়। ব্যাপারটা কি হলো? মাথা উঁচু করে দেখল ইরফান মাইরাকে কোলে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
মাইরা হতভম্ব হয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ব্যাপার টা কি হলো? নিজেই তো একটু আগে তাকে ফেলে দিল। রেগে ইরফানের বুক ঠেলে বলে,

“ছাড়ুন আমায়, কোথায় ফেলতে যাচ্ছেন? ছাড়ুন বলছি।”
ইরফান শক্ত চোখে একবার তাকায় মাইরার দিকে। মাইরাও রেগে বলে,
“একদম আপনাকে ভ’য় পাই না। অস’ভ্য লোক। মেয়েদের ছোঁয়ার বাহানায় থাকে, ছাড়ুন বলছি।”
ইরফান পায়ের গতি বাড়ায়, ডাইনিং এ এখনো কেউ নেই। মাইরা তার ঘরের দরজার দিকে তাকালে দেখল সে ঘর পাস করে যাচ্ছে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫

ইরফান দোতলায় উঠতে থাকে। মাইরা ভয় পায়। হায় আল্লাহ তাকে ছাদ থেকে ফেলতে যাচ্ছে না-কি? রেগেমেগে ইরফানের গলা খামচে ধরে। ইরফান একটা টুঁশব্দ করল না। তার ঘরের দরজা পা দিয়ে লাথি মেরে মাইরাকে এক প্রকার ছুঁড়ে মারে ঘরের ভেতর।
মাইরা ছিঁটকে পড়ে মেঝেতে। কোমড়ে ব্য’থা পেয়ে গুঙিয়ে ওঠে। ইরফান হাঁটু মুড়ে মাইরার গাল বাম হাতে শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এই মুখ চালানোর শিক্ষা তোকে আমি দেব, ওয়েট।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭