প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭
Drm Shohag

মাইরা কেঁপে ওঠে ইরফানের ভয়েস টোনে। কি করেছে সে? রেগে দু’হাতে ইরফানকে ধাক্কা দিলে ইরফান মাইরার দু’হাত তার একহাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে। মাইরা ফুঁপিয়ে ওঠে। বিড়বিড় করে,
“এই পা’ষা’ণ লোক আমায় মারতে মারতে মেরেই ফেলবে। বাবা, মা মিস ইউ।
কাঁদতে কাঁদতেই ইরফানের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
“অস’ভ্য লোক, পা’ষা’ণ লোক। ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান শক্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। হঠাৎ-ই মাইরার গলা থেকে ওড়না টান মেরে নিয়ে নেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান হেলে গিয়ে মাইরার দু’হাত পিছনে নিয়ে ওড়না দিয়ে বাঁধতে থাকে। মাইরার মুখ গিয়ে ঠেকে ইরফানের বুকে। মাইরা কেঁদেকেটে অস্থির। মেয়েটা এমনিতে কাঁদে না। কিন্তুু এই লোক তার সাথে এমন করছে কেন?

ইরফান মাইরার হাত বেঁধে সরে গেলে মাইরা কান্নামাখা চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। লজ্জা সংকোচে নুইয়ে আসে মেয়েটা। কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টি নত করে বলে,
“আপনি আসলেই একটা অস’ভ্য। আমার পা ভেঙে গিয়েছে। এখন আপনি আমার কোমড় ভেঙেছেন। আমার থেকে কাপড় খুলে নিয়েছেন। আমার হাত বেঁধে দিয়েছেন। উফ! ছেড়ে দিন আমায়।”
ইরফান মাইরার এতো বকবক নিতে পারল না। ডানহাতে মাইরার মুখ চেপে বলে,
“স্টপ। যাস্ট স্টপ।”
মাইরা ভেজা চোখে পিটপিট করে তাকায় ইরফানের পানে। ইরফান মাইরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে মাইরার ডান পায়ে হাত দিলে মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। কেঁদে কেঁদে বলে,
“আমার পা ভেঙে গিয়েছে, ছেড়ে দিন। ধরবেন না প্লিজ!”
ইরফান বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে একবার মাইরার মুখের দিকে তাকালো। চোখ সরিয়ে নিয়ে মাইরার পা ধরে একপাশে জোরে টান দেয়। মাইরা জোরে কেঁদে দেয়।
ইরফান মাইরার পা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে দেখে। এরপর মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ায়। মাইরাকে এখনো কাঁদতে দেখে বিড়বিড় করে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা মাথা তুলে বলে,
“আমার হাত খুলে দিন খা’রা’প লোক। একা একটা মেয়েকে পেয়ে সুযোগ নিতে ল’জ্জা করে না? অস’ভ্য, ইতর, বেয়া’দব, আপনাকে আমি জে’লের ভাত খাওয়াবো। ভদ্র বাবার অস’ভ্য পোলা একটা।”
ইরফান রেগে এক টান দিয়ে মাইরাকে দাঁড় করায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, স্টপ। নয়তো এই দু’গাল আস্ত থাকবে না।”
মাইরা রেগে আরও জোরে চেঁচিয়ে বলে,
“করবো না। আমার মুখ। আমি বলবো। অস’ভ্য ছেলে, অস’ভ্য লোক, শুধু মেয়েদের ছোঁয়ার বাহানা খোঁজে। আমার ই’জ্জ’তের ফালুদা করে দিল। অ’স….”

আর বলতে পারে না। বামগালে একটা শক্তপোক্ত থা’প্প’ড় পড়ে। মাইরা ডান দিকে হেলে যায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“ওহ আল্লাহ! আমার জীবনটা দু’দিনে থা’প্প’ড়ময় হয়ে গেল এই পা’ষা’ণ লোকের জন্য।”
মেয়েটার মুখ বন্ধ হয় না। কাঁদে তবুও কথা বলতেই থাকে।
ইরফান তীব্র বিরক্তিতে টেবিলের ড্রয়ার থেকে স্কচটেপ এনে মাইরাকে টেনে মাইরার মুখে লাগিয়ে দেয়। মাইরা চোখ বড় বড় তাকায়। ইরফান তার কাজ শেষ করে চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এগিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দেয়।
এরপর গায়ের টিশার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায়। মাইরা ইরফানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে উমউম করে।
অসহায় চোখে একবার নিজের দিকে তাকায়। আরেকবার বন্ধ দরজার দিকে। এগিয়ে এসে বিছানার উপর বসলে কেমন ডেবে যায়। মাইরা ভয় পেয়ে দ্রুত দাঁড়িয়ে যায়। ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এই বিছানা এমন নরম কেন? অদ্ভুদ!
হঠাৎ-ই ডান পা তুলে এদিক-ওদিক নাড়ায়। এই পায়ে তো ব্য’থা পেয়েছিল। এখন ব্য’থা লাগছে না কেন? ইরফান পা জোরে টান দিল, এরপর-ই তো দাঁড়িয়ে আর কোনো প্রবলেম হলো না। মাইরার মনে পড়ে, ‘কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হয়।’

মাইরা বাঁধা মুখে মনে মনে বিড়বিড় করে,
‘ব্য’থা দিয়েই ব্য’থা সারিয়েছে এই অস’ভ্য লোক টা।’
ঘরের চারপাশে তাকায়। ঘরের সবগুলো পর্দা টানা। হালকা দিনের আলো ঘরে এসেছে। মাইরার কেমন দমবন্ধ লাগলো। এমনিতেই মেয়েটা গ্রামে বড় হয়েছে। এখানে এসে সবগুলো জানালা খুলে দিয়ে রাখে, তবুও বদ্ধ লাগে। আর এই ঘরে সব জানালা দরজা লাগানো। মাইরা বাঁধা মুখেই বিড়বিড় করে,
‘এই প্রতিবন্ধী পরিবেশে থেকে থেকেই এই লোক অটিস্টিক হয়ে গিয়েছে, মাথায় গণ্ডগোল হয়েছে।’
পিছনে তার ওড়না দিয়ে হাত বাঁধা। বেশ অনেক সময় নিয়ে হাতের বাঁধন খোলার চেষ্টা করল। হাঁপিয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে ওড়না ঢিল হয়ে আসে। মাইরা বুঝতে পারে ওড়নার গিট খুলতে পারবে। মনে মনে খুশি হয়। দু’হাত মোচড়ামুচড়ি করতে করতে কিছুক্ষণের মাঝেই ওড়না খুলে মেঝেতে পড়ে যায়। মাইরা খুশিতে ছোটোখাটো একটা লাফ দেয়। দ্রুত মুখ থেকে স্কচটেপ খুলে ছুঁড়ে ফেলে। এর মাঝেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে দৌড় লাগায় দরজার দিকে। এই রুম থেকে বের হতে পারলেই বাঁচে যেন। কিন্তুু দুঃখের বিষয় দরজা তো খুলতে পারছে না।

ওয়াশরুম থেকে ইরফান বেরিয়ে আসে। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে ইরফান। পরনে তাওয়াল জড়ানো। উদাম শরীর। মাইরাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কোঁচকালো। মাইরা দরজা খোলায় ব্যর্থ হয়ে পিছন ফিরে তাকালে চোখ বড়বড় হয়ে যায়। চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“আসতাগফিরুল্লাহ, আপনার মতো অস’ভ্য মানুষ আমি দু’টো দেখিনি। আমার ই’জ্জ’ত শেষ করে এখন নিজের ই’জ্জ’ত লুটাচ্ছেন। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!
চোখমুখ কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ বুজে বলে,
“যান যান জামাকাপড় পড়ে আসুন।”
ইরফান মাইরার অযৌক্তিক কথায় বিরক্ত হয়। কিছুটা এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলে,
“ই’জ্জ’ত শেষ করেছি বলে নিজের মানচিত্র নিজেই মেলে দাঁড়িয়ে আছো? ইডিয়েট!”

মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। মেঝেতে তার ওড়না পড়ে আছে। ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে দৌড় দিয়েছে, একদম খেয়াল নেই। দ্রুত তার খোলা চুলগুলো ভাগ করে দু’পাশে আনলো।
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা এদিক-ওদিক তাকায়। মেয়েটা জীবনে এমন পরিস্থিতিতে এর আগে পড়েনি। এভাবে তো বাইরে যাওয়া যাবে না। মাথা তুলে একবার ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান তার দিকেই চেয়ে আছে। চোখ নামিয়ে তার ওড়নার দিকে তাকায়। মাইরার এবার ল’জ্জা’য় কান্না পাচ্ছে। তার সব শেষ করে দিল এই বেয়া’দব লোকটা।
এলোমেলো দৃষ্টিতে এগিয়ে গিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা ওড়না কুড়িয়ে নিজেকে ঢেকে নেয়। এরপর দ্রুত দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে আবারও খোলার চেষ্টা করে। কিন্তুু পারে না। পিছন ফিরে কিছু বলতে নিলে একদম তার সামনে ইরফানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঢোক গিলে নেয়।

‘এই লোকের পুরো শরীরে এতো লোম কেন?’
কথাটা মনে মনে বিড়বিড় করে। মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান গম্ভীর মুখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। এই লোকের সব দৃষ্টি-ই ভয়ংকর, একদম খেয়ে ফেলার মতো লাগে। মাইরা দু’হাতে দু’গাল চেপে ধরে। ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
“আর একবার মারলে আপনাকে জেলের ভাত খাওয়াবো বলে দিলাম। দেখুন আমি কোমড়ে অনেক ব্য’থা পেয়েছি,, আপনি দুই দুইবার ফেলেছেন আমাকে। পা ঠিক করে দিয়েছেন, কিন্তুু সেই উপকার খুবই সামান্য, থা’প্প’ড় ও মেরেছেন। আমার অর্ধেক ই’জ্জ’ত শেষ করে দিয়েছেন। আর একবার মারলে আপনাকে….”
মাইরা বাক্য শেষ করার আগেই ইরফান দরজা খুলে মাইরার হাত ধরে তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বাইরে বের করে দেয়। এরপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। মাইরা হা করে বন্ধ দরজার দিকে তাকায়। চিল্লিয়ে বলে,
“জ’ঘ’ণ্য, অস’হ্য, অ’সভ্য লোক একটা।”

বলেই দৌড় লাগায় তার ঘরের দিকে। সিড়ি বেয়ে নেমে দৌড়ে তার ঘরের দিকে যেতে নিলে জাহিদ ডেকে বলে,
“মাইরা তুমি কোথায় ছিলে?”
জাহিদ এর কথায় মাইরা দাঁড়িয়ে যায়। হেসে চোখ বড় বড় করে বলে,
“জম এর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি।”
ইরফান পরনে প্যান্ট পরেই কি মনে করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। নিচে তাকিয়ে জাহিদকে দেখে, পাশে মাইরা। শক্ত কণ্ঠে ডাকে,
“জাহিদ?”
ইরফানের ডাকে জাহিদ মাথা তুলে উপরে তাকিয়ে বলে,
“জ্বি ইরফার ভাই?”
“উপরে এসো।”
“ইরফান ভাই দু’মিনিট দাঁড়াও। আসছি।”
এরপর মাইরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই আবারও ইরফান অগ্নি ঝরা কণ্ঠে বলে,
“এক্ষুনি আসতে বলেছি।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি ইরফান ভাই,, এক মিনিট, ওয়েট।”
কথাটা বলে মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“মাইরা তোমার তো পা ভে’ঙে গিয়েছিল, দাঁড়িয়ে আছো কীভাবে?”
ইরফান রাগে বাঘের ন্যায় গর্জনিত কণ্ঠে চিৎকার করে উচ্চারণ করে,
“জাহিদ?”
মাইরা ভয়ে লাফিয়ে ওঠে। জাহিদ নিজেও থতমত খেয়ে ইরফানের দিকে তাকায়।
মাইরা বুকে থুতু দিয়ে বিরক্ত হয়ে পিছন ফিরে মাথা উঁচু করে তাকায়। ইরফানকে মুখ ভেঙচি দিয়ে তার ঘরের দিকে দৌড় দেয়। ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে মাইরার দিকে চেয়ে রইলো। এরপর হনহন করে তার ঘরে যায়। জাহিদ হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে উপরে উঠে আসে।
“ইরফান ভাই কিছু বলবে?”

ইরফান বেলকনির দরজার সামনে উল্টো ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল। জাহিদের কথায় পিছন ফিরে তাকায়। জাহিদ ইরফানের দৃষ্টি দেখে ভাবলো, সে কি কিছু করেছে? আবার ভাবলো নাহ, তাদের এই ভাই তো এমনই, নতুন করে আর কি হবে।
ইরফান এগিয়ে গিয়ে কাভার্ড থেকে তার সবগুলো শার্ট-প্যান্ট বের করে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে। জাহিদ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। ইরফানের সব কাপড় ছুঁড়ে ফেলা হলে জাহিদ এর দিকে এগিয়ে এসে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“এগুলো নিয়ে যাও।”
জাহিদ অবাক হয়ে বলে,
“কোথায়?”
“আয়রন করাতে।”
জাহিদ বিছানায় পড়ে থাকা শার্ট-প্যান্টের দিকে তাকালো। সব নতুন লাগছে। একদম সুন্দরভাবে আয়রন করে রাখা। ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিন্তুু এগুলো তো সব আয়রন করা ইরফান ভাই।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“সেকেন্ড টাইম আয়রন করাবো। নিয়ে যাও।”
জাহিদ মাথা চুলকালো। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
“রহমত কাকা বা রিতাকে নিবে না। তুমি করিয়ে আনবে। সব শার্ট-প্যান্ট আয়রন করানো শেষ হলে তবেই বাড়ি ফিরবে।”

জাহিদ অসহায় চোখে বিছানায় পড়ে থাকা কাপড়গুলোর দিকে তাকালো। আবার ইরফানের দিকে চেয়ে বলল,
“এতোগুলো কাপড় আয়রন করতে তো অনেক টাইম লাগবে। সারাদিনেও শেষ হবে না ইরফান ভাই।”
ইরফান নিজের গায়ে একটা ব্ল্যাক শার্ট জড়িয়ে বোতাম লাগাতে লাগতে গম্ভীর গলায় বলে,
“নিয়ে যাও।”
জাহিদ অসহায় কণ্ঠে বলল,
“মাইরাকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম। ও খুব মিশুক, আর ভীষণ ভালো। ঘুরতে নিয়ে গেলে খুব খুশি হবে। তুমি
রহমত চাচাকে দিয়ে করিয়ে নাও না ইরফান ভাই!”
ইরফান দ্বিতীয় বোতামটা লাগিয়ে জাহিদের দিকে শক্ত চোখে তাকায়।
জাহিদ ইরফানের দৃষ্টি দেখে ঢোক গিলে। মাইরাকে তো দেখতেই পারে না ইরফান ভাই, সে তার সাথেই ঘুরতে যাওয়ার কথা ভুল করে বলে ফেলেছে, মিস্টেক মিস্টেক,,

তখন মাইরার সাথে কথা বলছিল বলে হয়তো রেগে গিয়েছে, মেয়েটা কত ভালো, ইরফান যে কেন দেখতে পারে না মেয়েটাকে বুঝে পায় না জাহিদ। অতঃপর মেকি হেসে বলে,
“না না আমিই আয়রন করাতে পারব। যাচ্ছি যাচ্ছি। ঘুরতে যাব না। মজা করলাম আর কি।”
ইরফান দু’হাতের শার্ট এর হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে হাতঘড়ি পড়তে পড়তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। জাহিদকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিছন ফিরেই বলল,
“কি হলো, এসো।”

জাহিদ এগিয়ে গিয়ে সব শার্ট- প্যাণ্ট দু’হাতের সাহায্যে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। খালার বাড়িতে বেড়াতে এসে খালাতো ভাইয়ের কাজ করতেই দিন চলে যাবে। আগে জানলে একটা ট্যুর দিত, এখানে না এসে। ভেবেছিল নতুন ভাবিকে দেখবে, কত মজা করবে। কিন্তুু কিছুই তো হচ্ছে না। উল্টে তাকে কাজের মাসি হতে হচ্ছে।
ইরফান গটগট পায়ে এগিয়ে যায়। জাহারা আর তার মা ইরফানের একটা ঘর পরেই থাকছে। জাহারা ঘর থেকে বেরিয়ে তার ভাই জাহিদকে এতোগুলো কাপড় নিয়ে যেতে দেখে এগিয়ে এসে বলে,
“ভাইয়া কোথায় যাও? আর এসব কার শার্ট-প্যান্ট? চুরি-টুরি করলে না-কি?”
পিছন ফিরে জাহিদ কাপড়ের আড়ালে কটমট দৃষ্টিতে ছোট বোনের দিকে তাকায়। পিছন দিকে তাকালে দেখে ইরফান অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। জাহিদ দ্রুত হাতের সব কাপড় জাহারার গায়ের উপর দিয়ে বলে,
“তোকে দিয়ে দিলাম। তোর জামাইকে গিফট করে দিস।”

এই বলে দৌড়ে তার মায়ের ঘরে যায়। জাহারা তব্দা খেয়ে চেয়ে রইল। ভাবনার মাঝেই ইরফানের কণ্ঠ পায়,
“তুই এগুলো নিয়েছিস কেন? জাহিদ কোথায়?”
জাহারা ইরফানের গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে বলে,
“মনে হয় আম্মুর ঘরে গিয়েছে।”
ইরফান সামনে তাকালে দেখল জাহিদ তার খালামণির ঘরে ঢুকছে। ইরফান দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়। জাহিদ দরজা থেকে ভেতরে দু’পা এগিয়েছে, তখনই ইরফান পিছন থেকে জাহিদের শার্ট এর কলার টেনে বলে,
“এক কথা বারবার রিপিট করতে আমার ভালো লাগে না।”
জাহিদ কাঁদোকাঁদো মুখ করে পিছন ফিরে তাকালো। অতঃপর বলল,
“ইরফান ভাই, আমার নাম্বার ওয়ান পেয়েছে।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে জাহিদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। হাতঘড়িতে একবার সময় দেখে বলে,
“ফাস্ট যাও। আমি ওয়েট করছি।”
জাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তুমি যাবে? তাহলে আমাকে কেন নিচ্ছ? তুমি-ই যাও।”
ইরফান বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে জাহিদের কলার ধরে টেনে বাইরে আনে। পিছন থেকে ইরফানের খালা ডেকে বলে,

“কোথায় যাচ্ছ ইরফান বাবা? জাহিদ কোথায় যাও?”
ইরফান যেতে যেতে উত্তর দেয়,
“ভার্সিটি যাচ্ছি খালামণি। জাহিদকে লাগবে আমার।”
ইরফান জাহিদের কলার ছেড়ে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলে,
“জাহিদ, জাহারার থেকে সবগুলো প্যাণ্ট-শার্ট নিয়ে বাইরে এসো, ফাস্ট।”
জাহিদ বিরক্ত হলো। কিন্তুু কিছু বললো না। ইরফান তার চেয়ে বড়। ছেলেটা হাসিখুশি হলে তাও কিছু বলা যেত। যা মুড এই ছেলের। থাক, সে নাহয় একদিন বড় ভাইয়ের কাজ করে দিক। অতঃপর জাহারার থেকে কাপড়গুলো নিয়ে এগিয়ে যায়।

ইরফান নিচে নেমে বাইরে যেতে নিলে তার মায়ের ডাকে থেমে যায়।
“ইরফান খেয়ে যাও।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলল,
“বাইরে খেয়ে নিব আম্মু।”
“ইনায়াকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যাও তাহলে।”
ইরফান একবার হাতঘড়ি দেখল। অতঃপর বলে,
“দ্রুত আসতে বলো। আমার লেট হয়েছে।”
এরপর বাইরে বেরিয়ে যায়। পিছন পিছন জাহিদও বেরিয়ে যায়। রুমা নেওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। জাহিদকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে কেন বুঝলো না। কিছু বললোও না। বলে লাভ নেই জানে। তিনি ইনায়াকে দ্রুত রেডি হতে বললেন।
মাইরা তখন থেকে এসে ইনায়ার সাথে কথা বলছে।
“আপু তোমার ভাইয়া আমাকে আবার মেরেছে।”
ইনায়া মন খারাপ করে বললো,
“আসলে ভাইয়া একটুতেই রে’গে যায়। তুমি আর ভাইয়ার সামনে যেও না, কেমন?”
মাইরা মৃদু রে’গে বলল,

“আরে আপু, আমি তোমার ভাইয়ার সামনে যাই নি। ওই লোকটাই আমাকে ফেলে দিয়েছে। আমার ই’জ্জ’তের ফালুদা বানিয়েছে, তারপর আবার কোলে তুলে ছুঁড়ে ফেলেছে। কোমড়ে এখনো একটু একটু ব্য’থা আছে, বুঝলে?”
ইনায়া অদ্ভুদভাবে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরার সব কথা তার মাথার উপর দিয়ে গেল। সে তো ঘুমাচ্ছিলো। এর মাঝে কি যে করেছে এই মেয়ে।
মাইরা হেসে বলল,
“আচ্ছা এসব বাদ দাও। তোমার ভাই তো মানুষ নয়। এতো ভাবা দরকার নেই তার কথা। আপু শোনো, আমাকে তোমার কলেজে নিয়ে যাবা? আমি ঘুরে ঘুরে দেখব।”
ইনায়া অবাক হয়ে বলল,
“আমি তো কলেজে গিয়ে ক্লাস করব। তুমি কি করবে?”
“আমি খোলা জায়গায় ঘুরব। তোমার ছুটি হলে আবার একসাথে আসব। প্লিজ আপু যাই তেমার সাথে?”
ইনায়া মাইরার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

“ওকে।”
মাইরা খুশি হয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। কোমড়ে একবার হাত বুলালো। ইনায়া বলল,
“বেশি ব্য’থা পেয়েছ?”
মাইরা হেসে বলল,
“না না আপু। ঠিক হয়ে যাবে।”
এটা বলে গায়ে বোরখা জড়ালো। একদম রেডি হয়ে এসে বলল,
“আপু আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। আমার মনে হয় তোমার ভাইয়ার মাথায় গণ্ডগোল আছে। আসলে পা’গ’লকে পা’গ’ল বললে তারা রে’গে যায় বুঝলে? তোমার আম্মু মানে আমার শ্বাশুড়ি মা ও রে’গে যায়। তাই বলছি আমি আর তুমি দু’জন মিলে তোমার ভাইয়ার জন্য ভালো হওয়ার ঔষধ কিনে এনে পানির সাথে গুলিয়ে খাওয়াবো তোমার ভাইকে। এখন কেমন জঙ্গলিদের মতো বিহেব করে, দেখতেও জঙ্গলিদের মতোই লাগে। চুলগুলো কেমন ইয়া বড় বড়। ভালো হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। চুলগুলো কেটে নিলে একদম হিরোদের মতো লাগবে। এখন ভিলেনী নায়ক লাগে বুঝলে?
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে হেসে বলল,

কেমন লাগলো আইডিয়াটা?”
ইনায়া চোখ বড় বড় করে তাকায় মাইরার দিকে। লাস্ট কথায় না চাইতেও হেসে ফেলে। পিছন থেকে ইরফানের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে,
“ইনায়া?”
মাইরা বিরক্ত হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আবারও ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপু তোমার ভাই নিজে তো পা’গ’ল। আমিও পা’গ’ল হয়ে যাচ্ছি তার মার খেয়ে খেয়ে। ছোঁয়াচে রোগের মতো। তোমার ভাইয়া এখানে নেই, তবুও আমি দেখতে পাচ্ছি। এগুলো পাগল হওয়ার লক্ষ্মণ। তার চেয়ে চলো দ্রুত তোমার ভাইকে সুস্থ করে দেয়ার ঔষধ আনি। তাহলে আমিও আর পুরোপুরি পা’গ’ল হবো না।”
ইনায়া ঢোক গিলে পিছন ফিরে তার ভাইয়ের দিকে তাকালো। ইরফান চোখমুখ শক্ত করে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা আবারও কিছু বলতে নিলে ইনায়া মাইরার মুখ চেপে বলে,

“মাইরা এটা সত্যি সত্যি ভাইয়া। তুমি পা’গ’ল হও নি। প্লিজ চুপ কর।”
মাইরা চোখ বড় বড় দরজার দিকে তাকায়। চোখ জুড়ে ভীতি। মুখ থেকে ইনায়ার হাত সরিয়ে বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। আজ সে শেষ। ইরফান রেগে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“হাউ ডেয়ার ইউ?”
মাইরা ভয়ে লাফিয়ে ওঠে। দ্রুত ইনায়ার পিছনে লুকিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলে,
“আপু বাঁচাও, এই জ’ল্লা’দ এর হাত থেকে আমায় বাঁচাও।”
ইনায়ার নিজের গালেই দু’টো থা’প্প’ড় দিতে ইচ্ছে করল। মাইরার মুখটাও সংযত হয়না, তার ভাইয়ের রাগটাও সংয়ত হয়না, এখন সে কি করবে?
ইরফান চিৎকার করে বলে,
“বেরিয়ে এসো, স্টুপিট।”

মাইরা ভয়ে কেঁদে দিবে প্রায়। এই লোককে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তার বলা সব কথা শুনে নিয়েছে। এখন তাকে কে বাঁচাবে? মাথাটা একটু বাঁকিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“দেখুন আমি কিন্তুু আপনাকে নায়ক বলেছি, এতো রা’গার কি আছে? হ্যাঁ? প্রশংসাই তো করেছি একটু। বাকিগুলো মিথ্যে মিথ্যে বলেছি। ওগুলো ভুলে যান।”
ইরফান জ্বলন্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা ইরফানের দৃষ্টি দেখে ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নেয়।
ইরফান এগিয়ে এসে রাগে মাইরার সামনে থেকে ইনায়াকে টেনে সরিয়ে দেয়। ইনায়া ডান দিকে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬

মাইরা ইনায়ার পিঠের সাথে অনেকটা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, হঠাৎ করে সামনে থেকে ইনায়া সরে যাওয়ায় মাইরা পড়ে যেতে নেয়, তবে ইনায়ার জায়গায় ইরফান দাঁড়ানোয় মাইরা হেলে গিয়ে পড়ে ইরফানের বুকে। মাইরার আত্মার পানি শুকিয়ে গিয়েছে। মেয়েটা ভয়েই জ্ঞান হারালো বলে! ইরফানের বুকেই শরীরের পুরো ভার ছেড়ে দেয়। ইরফান ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানে।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৮