প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭১

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭১
Drm Shohag

ইরফান মাইরাকে নিয়ে গ্রামে এসেছে। মূলত মাইরা আসতে চেয়েছিল। সে কবে থেকে তার মা আর ভাইটাকে দেখতে আসতে চাইছে, কিন্তু ইরফান আজ নিয়ে আসলো। তার শুধু কাজ আর কাজ। মাইরার বিরক্ত লাগে।
মাইরা একটা ব্যাপারে ভীষণ অবাক হয়েছে, লাবিবের বাবা তাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে কেমন আছে। মাইরা যেন আকাশ থেকে পড়েছে। এখনও তার বিশ্বাস-ই হয় না, এটা কিভাবে সম্ভব? লাবিবের বাবা এতো ভালো কি করে হয়ে গেল? তার অসুস্থতার জন্য? কিন্তু মাইরার কেন যেন বিশ্বাস-ই হয় না। লাবিব মাইরার কোলে বসে ডাকে,

– আপুই আমাকে তুমু কাও।
লাবিবের কথায় মাইরা হেসে ফেলল। লাবিবের দু’গালে টপাটপ কয়েকটা চুমু খায়। লাবিব মাইরার কোলের উপর দাঁড়িয়ে দু’হাতে মাইরার গলা জড়িয়ে ধরে মাইরার গালে চুমু খায়। ইরফান বেডের এক কোণায় বসে দু’ভাইবোনের কাহিনী দেখছিল। বিরক্ত হয়ে বেড থেকে নেমে মাইরার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
– কি হচ্ছে এখানে?
মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে হেসে তাকায় ইরফানের দিকে। সে কিছু বলার আগেই লাবিব আঙুল উঁচিয়ে বলে,
– খুচিব ডুলাবাই, টুমি পুচা।
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। মাইরা লাবিবের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কেন পঁচা ভাইয়া?
লাবিব মাইরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আপুই খুচিব ডুলাবাই বুলে, তুমু বালো না।
মাইরা বেড থেকে নেমে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনি ওকে কি বলেছেন?
ইরফান ভাবলেশহীনভাবে বলে,
– তোমার ভাইয়ের ব্যাড হ্যাবিট। অন্যের বউকে কিস করে। ইট’স ভেরি ব্যাড।
মাইরা অবুঝ গলায় বলে,
– মানে? ও কার বউকে কিস করেছে?
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– আমার।
মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আপনি কি পা’গ’ল? ও আমার ভাই।
লাবিও তাল মিলিয়ে বলে,
– হু। আমি বাই। খুচিব ডুলাবাই, আউত।

মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় তার ভাইয়ের দিকে। অবাক হয়ে বলে,
– এসব কোথা থেকে শিখেছিস?
লাবিব মুখে আঙুল পুড়ে বলে,
– খুচিব ডুলাবাই তেকে শিকেচি।
মাইরা কপাল চাপড়ায়। তার স্বামী, ভাই দু’টোই পা’গ’ল। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– ওকে তোমার আম্মুর কাছে রেখে এসো।
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– মানে? কেন?
– আমি বলেছি তাই।
লাবিব বলে ওঠে,
– আমি বুউ কাচে যাবু।
তখন-ই মাইরার মা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়। লাবিবের কথা শুনে ওখানে দাঁড়িয়েই অবাক হয়ে বলে,
– এই পাজি ছেলে এসব কি কথা?
লাবিব বলে,

– টুমি পাদি,
মাইরা শব্দ করে হেসে ফেলে। বোনের হাসিতে লাবিবও অবুঝের মতো হাসে। এরপর বলে,
– বুউ বালো। বুউকে আদল কলতে হয়।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। হেসে বলে
– আরে এসব কে শিখিয়েছে তোকে?
লাবিব সাথে সাথে বলে ওঠে, – খুচিব ডুলাবাই।
লাবিবের কথা শুনে ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। মাইরা একবার ইরফানের দিকে তাকায়, আরেকবার লাবিবের দিকে তো আরেকবার দরজায় দাঁড়ানো তার মায়ের দিকে। মাইরার নিজের-ই কেমন ল’জ্জা লাগলো। মাইরার মা নিজেও বিব্রতবোধ করে। দ্রুত বলে,
– মা লাবিবকে নিয়ে একটু এদিকে আয় তো।
কথাটা বলে জায়গাটি প্রস্থান করেন তিনি। ভদ্রমহিলা চলে যেতেই মাইরা ইরফানের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে,

– আপনি আমার ভাইকে এসব কি শেখান?
ইরফান দু’হাত প্যান্টের পকেটে রেখে বলে,
– যা তুমি, তোমার আম্মু কেউ শেখাতে পারো না।
মাইরা কপাল চাপড়ে বলে,
– মা শুনে গিয়েছে, আপনি আমার ভাইটাকে বউকে আদর করা শেখাচ্ছেন। বুঝলেন?
ইরফান মৃদুস্বরে বলে, – আই নো।
মাইরা চোখমুখ কোঁচকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আমার মা শুনে নিল, বিশ্বাস করুন, আপনার একটু হলেও ল’জ্জা পাওয়া উচিৎ।
ইরফান বা হাতের দু’আঙুলের সাহায্যে মাইরার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বলে,
– ল’জ্জা পাওয়া মেয়েদের কাজ। নট মি।
মাইরা হতাশ। মানে এই লোকটা কি অদ্ভুদ! এনার সাথে কথা বলে লাভ নেই। সে লাবিবকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে ইরফান বলে ওঠে,

– ফাস্ট আসবে।
মাইরা যেতে যেতে ত্যাড়া কণ্ঠে বলে, – আসবোনা।
ইরফান বিরক্ত হয়। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে মাইরার সামনে দাঁড়ায়। মাইরা ইরফানের পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে ইরফান দ্রুত মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। কোলের বা পাশে লাবিব। মাইরা বা হাতে লাবিব কে ধরে, ডান হাতে ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। ইরফানকে একচুল নাড়াতে পারে না। উল্টে ইরফানের সাথে না পেরে পিছিয়ে যায়, যেন ইরফান তাকে ঠেলছে। পিছু যেতে যেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় মাইরার। তবুও ইরফান ছাড়লো না।
লাবিব ডেকে ওঠে,
– আপুই?

মাইরা গায়ের জোরে ইরফানের গলায় খামচে ধরে। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। এই লোকটা এমন কেন? তার ভাই নাহয় কিছু বোঝে না, কিন্তু তবুও এটা কেমন লাগে! তার ভাবনার মাঝেই ইরফান লাবিবকে মাইরার কোল থেকে নামিয়ে টেবিলের উপর থেকে বেশ কয়েকটি চকলেট লাবিবের হাতে দেয়। এরপর মৃদুস্বরে বলে,
– তোমার আম্মুকে গিয়ে বলো, আপুইকে তার হাসবেন্ড আদর করছে।
কথাটা শুনেই মাইরা তড়াক করে মাথা উঁচু করে তাকায়। লাবিব দৌড়ে যেতে যেতে বলতে থাকে,
– খুচিব ডুলাবাই আপুইকে আদল কচ্চে। খুচিব ডুলাবাই আপুইকে….
আর শোনা গেল না। মাইরা রে’গে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনি একটা নি’র্ল’জ্জ লোক। আমার মাকে গিয়ে ও এসব বলবে। আপনি বাচ্চাটাকে কি শেখাচ্ছেন এসব? আর কোনো কাজ নেই আপনার?
ইরফান ঘরের দরজা আটকে মাইরার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

– আছে। বাট, দিস ইজ অলস আ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট টাস্ক।
মাইরা কি বলবে বুঝে পায় না। মানে তার চার বছরের ভাইকে শেখাচ্ছে বউকে আদর করার কথা। এটা না-কি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ। এই লোকটাকে কি করা উচিৎ?
ভাবনার মাঝেই ইরফান মাইরাকে কোলে নিয়ে বেডে শুয়ে পড়ে। মাইরা মোচড়ামুচড়ি করে। ইরফান মাইরাকে শক্ত করে ধরে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে বলে,
– পুরো দিন তোমার মা, ভাইকে দিয়ে দিয়েছ। ওয়ান আওয়ার এখানে থাকো।
মাইরা নড়েচড়ে বলে,
– আমি থাকবোনা, ছাড়ুন আমায়।
ইরফান মাইরার গলায় দাঁত বসায়। মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান ছেড়ে দেয়। গলায় মুখ গুঁজে রেখেই বলে,

– স্টুপিট গার্ল, এসব নেগেটিভ ওয়ার্ড আমার সামনে ইউস করলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।
মাইরা দমে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর পর মিনমিন করে,
– আজকে এখানে থাকি?
– নো। আমার কাজ আছে।
মাইরা রে’গে বলে,
– হ্যাঁ সেই তো শুধু কাজ আর কাজ। আমি যাবো না আপনার সাথে।
ইরফান সূক্ষ্ম হাসলো। মাইরাকে আরেকটু শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে নিয়ে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– আর দু’দিন পর বিয়ে। প্রিপেয়ার ফর মাই ডিপ অ্যাটেনশন।
ইরফানের কথার অর্থ বুঝতে পেরে মাইরা ল’জ্জায় কেঁপে ওঠে। চোখ বুজে নেয় দ্রুত।

ইরফান-মাইরা গ্রাম থেকে মাত্র রওয়ানা হলো। শুদ্ধ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোনে কিছু করছে। নাছিম কে দেখে এগিয়ে আসে। নাছিম-ও শুদ্ধ কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। শুদ্ধ ফোন পকেটে রেখে বলে,
– আরে তুই গ্রামে যে! আসবি, বললি না কেন?
নাছিম ছোট করে বলে,
– এমনি-ই চলে এলাম। মামার বাড়ি সপ্তাহখানেক থাকবো। মা-ও আছে এখানে।
শুদ্ধ নাছিম এর কাঁধে হাত রেখে বলে,
– আমার বিয়ায় তুই থাকবি না? পা’গ’ল না-কি!
নাছিম মৃদু হেসে বলে
– তোর আর ফাইজ এর বোনের জন্য অনেক দোয়া দিয়ে দিলাম। আমি যেতে পারবো না দোস্ত।
শুদ্ধ নাছিমের কথা উড়ে দিয়ে বলে,
– গা’ঞ্জা খাইছো সোনা? খাবি তো খাবি, ডেট দেখে খাবি না? তোদের জ্বালায় আমি শুদ্ধ আর বাঁচিনা। বল কোথা থেকে কিনে খেয়েছিস? আমি দোকানদারের সাথে যোগাযোগ করে তোকে ডেট আছে এমন গা’ঞ্জা দিতে বলব। ঠিকানা কি রে?
নাছিম বিরক্ত চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলে,

– এভাবে তাকিয়ে লাভ নাই। আমাকে মহান হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।
নাছিম হতাশ কণ্ঠে বলে,
– একটু ভালো হ। তোর দু’দিন পর বিয়ে।
শুদ্ধ হেসে বলে,
– এক বন্ধু ছাড়া আরেক বন্ধুর বিয়ে হয় না, জানিস না?
নাছিম মৃদু হাসলো। এরপর শূণ্যে দৃষ্টি রেখে বলে,
– ইরফান, বার্ডি ডল গ্রামে এসেছিল, আমাকে যদি একবার জানাতি শুদ্ধ!
শুদ্ধ নাছিমের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। নাছিম মলিন গলায় বলে,
– প্রথম বার্বি ডল কে একবার দেখেছিলাম যাস্ট। তার সাথে কখনো কথা হয়নি আমার। অথচ কত করে চাইতাম আমি তাকে! এরপর একদিন কথা বলার সুযোগ হয়, তবে বার্বি ডল আমাকে এক প্রকার এভয়েড করেছে। এরপর জানলাম সে আমার বন্ধুর বউ। এরপর জানলাম বার্ডি ডল আমার বন্ধুকে ভীষণ ভালোবাসে। তার দিক থেকে আমি কোনো পজিটিভ সাইন পাইনি। তাকে তো আমার ভুলে যাওয়ার কথা তাই না? কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, বার্বি ডলের প্রতি আমার অনুভূতির তীব্রতা বাড়ছে। আমি ভুলতে পারছি না ওকে।
একটু থেমে শ্বাস নেয়। এরপর আবারও বলে,

– বার্ডি ডল যখন আমার ভাগ্যে নেই, তবে আমার মনে ওর জন্য প্রতিনিয়ত এতো অনুভূতির জন্ম কেন হয় শুদ্ধ?
শুদ্ধ অবাক হয়ে নাছিমের দিকে চেয়ে আছে। নাছিমের কণ্ঠ কাঁপছে। নিজেকে সামলে মৃদুস্বরে বলে,
– ইরফান আমার সাথে আর কথা বলে না কেন রে?
শুদ্ধর খারাপ লাগলো। বোঝানোর স্বরে বলে,
– জানিস তো, ও কেমন মাথা পা’গ’ল। আর মাইরার প্রতি একটু বেশিই পসেসিভ। তুই মাইরাকে পছন্দ করিস, এটুকুই ও মানতে পারে না।
একটু থেমে আবারও বলে,
– তুই ওর আপন। তাই তোকে কিছু বলতেও পারেনা, আবার সইতেও পারেনা। ও কেমন জানিস-ই তো।
নাছিম মৃদু হেসে বলল,
– জানি। তোর খালাতো ভাইয়ের, সৌভিক এর দু’টোর-ই পা ভেঙে দিয়েছিল, শুনলাম।
শুদ্ধ হেসে ফেলল। কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

– বিশ্বাস করবি না ভাই, আমি মাঝে মাঝে পা’গ’লের ডক্টরের কাছে যেতে চাই। আমি পা’গ’ল হয়ে ভুলভাল দেখছি কি-না, সেই ভ’য়ে। মানে তুই বুঝতে পারছিস? ভার্সিটিতে অন্তরা ওকে টাচ করেছিল বলে দু’দুটো থা’প্প’ড় খেয়েছিল বেচারি। সে মাইরার জন্য এখন কি কি করে! সবচেয়ে বড় কথা ওর চুলের বাহার দেখে ভাবতাম এ পাক্কা সন্ন্যাসী-ই হবে। ওমা এখন তো ও পুরোই পাল্টালো। মাঝখান থেকে আমার নিজেকে পা’গ’ল লাগে।
ফোন ভাইব্রেট হলে পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে হেসে বলে,
– মাইরার বহুত গুণ বুঝলি! ইরফানকে পুরাই উল্টে দিয়ে পাল্টে দিয়েছে।
ফোনে ফারাহ’র কল দেখে শুদ্ধর হাসি চওড়া হয়। রিসিভ করে কানে দিয়ে বলে,
– পাখি তোমার ভাই কি খাট কিনেছে?
নাছিম শুদ্ধর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এ ফাইজের থেকে খাট চাইছে কেন?
শুদ্ধ হতাশ কণ্ঠে বলে,

– আমি কি বা’স’র করব না? এসব কি? নাহ, আর মানা যায় না।
নাছিম অদ্ভুদভাবে তাকায়। শুদ্ধ এগিয়ে এসে নাছিমের কাঁধে বাম হাত তুলে দিলে, নাছিম ভ্রু কুঁচকে বলে,
– ফাইজের থেকে খাট চাইছিস কেন? তোর খাট নেই?
শুদ্ধ হেসে বলে,
– আরে শা’লার দেয়া খাটে বা’স’র করলে আলাদা একটা ভাইব পাওয়া যাবে, বুঝলি? কোনো চিন্তা করিস না, আমি থাকতে তুই তোর শা’লার কিনে দেয়া খাটেই সব করতে পারবি। নিশ্চিন্তে আমার উপর ছেড়ে দে।
নাছিম শুদ্ধর পিঠে একটা থা’প্প’ড় দিয়ে বলে,
– বাঁদরের বাচ্চা ভালো হ। তোর অ’ত্যা’চা’রে তো দেখছি তোর বউ দৌড়ে পালাবে। তখন তুই শা’লার কিনে দেয়া খাটের সাথেই বা’স’র করিস বসে বসে।
শুদ্ধ মেকি রা’গ দেখিয়ে বলে,

– এসব কি বদদোয়া? এই নাছিমা খালা তোর জীবনে বিয়ে হবে না বলে দিলাম।
নাছিম কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। শুদ্ধ ঠোঁট টিপে হেসে বলে,
– ফারাহ পাখি, আমাদের স্পেশাল নাছিমা খালাকে চিনো?
ফারাহ হতাশ এই লোকটাকে নিয়ে। তবে হাসলো বেশ শুদ্ধর কথায়। একটু পর থেমে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আমি একটা জরুরি কথা বলতে কল করেছি। তুমি কি আমার কথা শুনবে?
শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
– শুনছি পাখি বলো।
– অন্তরা আপু কোথায় জানো?
শুদ্ধ কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
– অন্তরাকে দিয়ে তোমার কি কাজ?
– অন্তরা আপুর ছোট বোন নুসরাত আমাদের সাথে পড়ে। সে প্রায় ১ সপ্তাহের বেশি হলো ভার্সিটি আসে না। প্রথমে ভেবেছিলাম এমনি-ই হয়তো। চলে আসবে। কিন্তু এখনও আসে না। আর ওকে অনলাইনেও কোথাও পাচ্ছি না। আমার ফ্রেন্ডরাও খোঁজ নিয়েছে, ওরা যে বাসায় থাকতো, সেখানে ওরা নেই। বাসা ছেড়ে দিয়েছে।
ফারাহ’র পুরো কথা মন দিয়ে শুনলো শুদ্ধ। বেশ ভালোই অবাক হয়। মাইরার অসুস্থতার পর তো অন্তরার আর খোঁজ নেয়া হয়নি। নাছিমের দিকে তাকিয়ে বলে,

– কি রে? অন্তরার খবর জানিস?
নাছিম ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
– না। আমি কিভাবে জানবো?
শুদ্ধ ফারাহ’র উদ্দেশ্যে বলে,
– আপাতত আমরা কেউ ওর খোঁজ জানিনা। আমি খোঁজ নিয়ে তোমাকে জানাবো।
ফারাহ মৃদুস্বরে বলে,
– আচ্ছা।
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
– ফারাহ পাখি, তোমার ভাইকে বলো, ও যেন কিপ্টামি বাদ দিয়ে আমাকে ব্রান্ডের খাট কিনে দেয়।
ফারাহ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– তুমি চরম লেভেলের অসভ্য শুদ্ধ ভ…..
শুদ্ধ ধমকে বলে,
– ভাই বলে দেখো একবার, তুলে আছাড় মারবো একদম।
ফারাহ কল কেটে দেয়। শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে নাছিমের দিকে চেয়ে বলে,

– বা’ল বউয়ের থেকে ভাই শুনতে শুনতে কবে না জানি নিজের বাচ্চা হলে, তার মুখে আমাকে মামা ডাক শুনতে হয়!
নাছিম তার বাড়ির দিকে যেতে যেতে বলে,
– এই কথাটা যেন ফলে যায়, এজন্য আমি সামনে শুক্রবার মসজিদে জিলাপি বিলাবো।
শুদ্ধ রে’গে বলে,
– এই বেদ্দপ তোর বিয়ে হবে না যাহ, দোয়া করে দিলাম।
নাছিম মৃদুস্বরে বলে,
– আমি বিয়ে করবো-ও না।
শুদ্ধ নাছিমের কথাটা শুনে বলে,
– আমার বিয়েতে আসবি কিন্তু।
নাছিম একবার পিছু ফিরে তাকায়৷ মৃদু হেসে বলে,
– ওতো কষ্ট কিভাবে সহ্য করবো? বার্বি ডলের বিয়ে দেখার শক্তি নাই। জোর করিস না ভাই। থাক যাই।
কথাটা বলে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়। শুদ্ধ মলিন মুখে চেয়ে রইল নাছিমের দিকে। ছেলেটা অদ্ভুদ! খারাপ লাগে তার। এর সমাধান কি?

শুদ্ধ বেশ ভালোভাবেই খোঁজখবর নেয়, কয়েকজনকে কল করে। কিন্তু অন্তরার কোনো খোঁজ-ই পেল না। কোথায় উধাও হলো এ? বেশ চিন্তিত হলো। ভাবলো আগামীকাল শহরে গিয়ে আরও ভালোভাবে খোঁজ নিবে। অন্তরার গ্রামের বাড়ি চেনেনা, নয়তো সেখানে খোঁজ নেয়া যেত। তবে শুদ্ধ আন্দাজ করছে, অন্তরা ইচ্ছে করেই এই শহরে নেই, অথবা থাকলেও তাদের সবার আড়ালে থাকতে চাইছে। ইরফান আর মাইরার মাঝে ঝামেলা+মাইরার ব্রেইনে চাপ ফেলা দু’টোতেই অন্তরার বেশ বিরক্তিকর কাজ ছিল। ভাগ্যিস ইরফান জানেনা, নয়তো অন্তরাকে কি করত কে জানে। বড় হয়ে বন্ধুদের মাঝে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েই যায়। এদিকে নাছিম, ওদিকে অন্তরা। কথাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

সন্ধ্যার পর পর ইরফান আর মাইরা গ্রাম থেকে এসে পৌঁছেছে। ইরফান বাড়ির ভেতরে আসেনি। মাইরাকে নামিয়ে দিয়ে সে অফিসের দিকে গিয়েছে। মাইরা বিরক্তি নিয়ে বাড়িতে আসে। নামাজ পড়ে মিলাকে কল করে। সে কল রিসিভ করেনা। মাইরার মন খারাপ হয়। মিলা তার উপর মারাত্মক রে’গে’ছে। কলেজে গিয়ে কত তেল মেখেছে, কিন্তু ওই বান্দি গলেনি। মাইরার সাথে এতো কিছু ঘটেছে অথচ সে কিছু জানেনা। এটা নিয়ে তার রা’গ। কবে যে ভাঙাতে পারবে বেচারির রা’গ। তবে আজ সে পণ করেছে এই মেয়ে যতক্ষণ তার ফোন তুলবে না সেও কল দেয়া থামাবে না। সত্যি সত্যিই মাইরা পুরো ১৫ বার টানা কল দিলো ধৈর্য নিয়ে। এরপর একটা ক্লান্তির শ্বাস ফেলে ১৬ তম বার কল দিলে কল রিসিভ হয়। মাইরা খুশিতে কিছুটা লাফিয়ে ওঠে। সাথে সাথে অনুনয়ের সুরে বলে,

– তুই আমার সোনাপাখি। আমি ১০০০ বার কান ধরে উঠবস করব ময়না। একটু কথা ক আমার সাথে। এই ময়না?
ওপাশে মিলা ঠোঁট টিপে হাসছে। একে ভালোই জব্দ করেছে। কত্ত বড় সাহস শুধু মুখে বলবে বান্ধবী। আর কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। তা তো হবে না৷ এতো বড় অসুখ বাঁধিয়ে কাটিয়ে এলো, অথচ তাকে দু’দিন আগে জানালো। এসব সে মানবে না-কি! মাইরা আবারও অসহায় কণ্ঠে বলে,
– এই কথা বল রে। তুই আমার শ্যামা মায়ের বোন, আমার খালা। এমন করলে কিন্তু আমার সেই খারাপ লাগে।
মিলা এবার গলা ঝেড়ে বলে,
– হু ঠিক আছে। ভবিষ্যতে যেন আর এরকম ভুল না হয়।
মাইরা হাঁটতে হাঁটতে মাথা নেড়ে বলে,
– অবশ্যই অবশ্যই। আমি তো এরপর থেকে সবার আগে তোকেই বলব। শিসওয়ালার আগেও তোকে বলব, পাক্কা ময়না।
মিলা হেসে বলে,

– ওমা! তোর বরের থেকে আমায় বেশি ইম্পর্ট্যান্ট দিবি না-কি! দিলে বা’স’র রাতে আমাকে প্রক্সি দিস। তোর জামাই আঙুল চুষবে বসে বসে।
মাইরা চোখমুখ কুঁচকে তাকায়। রে’গে বলে,
– এক থাবড়া খাবি, বে’দ্দ’প।
মিলা মিটিমিটি হেসে বলে,
– বুঝেছি বুঝেছি। এতোদিন ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়েছে। এখন তোর তৃষ্ণার্ত বর কে সঙ্গ না দিলে তোর অঙ্গ-ই পুড়বে তাই না ময়না?
মাইরা কোমড়ে হাত দিয়ে রে’গে বলে,
– আর একটা ফালতু কথা বললে তোর ভবিষ্যত জামাইরে উগান্ডা পাঠাবো বলে দিলাম।
মিলা হেসে বলে,
– আমাকেও পাঠাস রে। টিকিট ছাড়া বিনে পয়সায় যেতে মজাই লাগবে।
মাইরা হেসে বলে,
– আহারে ময়না! ওখানে গিয়ে তোর জামাইয়ের চারপাশে হাত পা টিপে দেয়া মেয়েদের দেখিয়ে তোর অঙ্গ জ্বালানোর ব্যবস্থা করব আমি।
মিলা ভোতা মুখ করে রাখে। ছিঃ! মেয়েরা কি ছোট ছোট কাপড় পড়ে থাকে। ওমন জায়গায় তার জামাই গেলে সে হার্টফেল করবে। মাইরা এসব রেখে বলে,
– তুই কালকে এখানে আসবি কিন্তু মিলা। একটা বাহানা দেখাইলে চটকানা খাবি।

রাত প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। ইরফান অফিস থেকে ফিরে বেডের দিকে নজর করলে দেখল মাইরা ঘুমিয়ে গিয়েছে।
মাইরার বিড়াল লিও মাইরার পাশেই ঘুমিয়ে আছে। মাইরা লিও কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইরফান বিরক্ত হলো। এগিয়ে গিয়ে লিও কে নিয়ে মেঝেতে রাখা অনেকটা দোলনার মতো, তার উপর শুইয়ে দিল। মাইরার জন্য এই বিড়ালকে তার বাচ্চার মতো পালতে হয়। তার উপর আবার এটা তার বউয়ের সাথে ঘুমানোর শখ করে। মাঝে মাঝে ইরফানের ইচ্ছে করে একে আছাড় মারতে।
লিও কে যথাস্থানে রেখে ইরফান মাইরার দিকে একবার তাকালো। এরপর সে ফ্রেশ হতে যায়। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে দেখল মাইরার এলোমেলো অবস্থা। প্রথম যেদিন মাইরা তার রুমের বেডে ঘুমিয়েছিল, অনেকটা সেভাবে ঘুমিয়েছে। বেডের কোণায় মাথা রাখা। চুলগুলো মেঝে ছুঁয়েছে। জামা উঠে ফর্সা পেট উম্মুক্ত হয়েছে। ইরফান জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাইরার দিকে এগিয়ে এসে মাইরাকে ঠিক করে শুইয়ে দেয়৷ জামা ঠিক করতে গিয়ে ঢোক গিলে শুকনো গলা ভেজায়। নিজেকে না দমিয়ে উম্মুক্ত পেটে দু’টো গাঢ় চুমু আঁকে। দাঁড়ির খোঁচা লাগায় মাইরা ঘুমের ঘোরে একটু নড়েচড়ে ওঠে।
ইরফান এগিয়ে এসে মাইরার কপালে একটু চুমু খেয়ে সরে যায় মাইরার থেকে। নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

মাইরার হঠাৎ-ই ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে ঘরের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইরফানকে খুঁজলে পায় না। বেডে লিও কে না দেখে চিন্তিত হয়। বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে লিও-র জায়গায় তাকে ঘুমাতে দেখে বুঝল ইরফান এই কাজ করেছে। মাইরা এগিয়ে গিয়ে বেলকনিতে ইরফানকে খুঁজলে পায় না। মাইরার ভীষণ বিরক্ত লাগে। একে তো এসেছে ১০০ ঘণ্টা পর। এসেই আবার নেই। মে’জা’জ খারাপ লাগে। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দেয়। এরপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায়।
ছাদের শেষ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে মাইরার নাকে সিগারেট এর গন্ধ আসে। মাইরা দ্রুত তার গলায় পেঁচানো ওড়না দিয়ে নাক চেপে ধরে। এরপর দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে ছাদের মেঝেতে পা রাখে। ছাদের ডানদিকের কোণার দিকে ইরফানকে উল্টো হয়ে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখে। ছাদের এপাশের স্বল্প আলোর লাইট জ্বালানো। মাইরা একবার ছাদের বামদিকে তাকায়।

ছাদের বাম পাশে দোলনা টানানো আছে। বেডরুমে যে দোলনাগুলো থাকে, বেশ বড় সাইজের, গোল। কানাডা থেকে আসার পর পর-ই ইরফান মাইরার জন্য দু’টো এমন দোলনা এনেছে । একটি ইরফানের পেইন্টিং রুমে রাখা। আরেকটি ছাদে। এখানের দোলনার উপর ছাউনি টানানো আছে। তবে তা ক্ষেত্রবিশেষে সরিয়ে ফেলা যায়। বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে ছাউনি দেয়ার কারণ রোদ, বৃষ্টিতেও যেন মাইরার কষ্ট না হয়। মাইরার দোলনাটি দেখে মনটা একটু ফুরফুরে হয়। তবে এসব রেখে ইরফানের দিকে মনোযোগ দেয়।
মাইরার মনে হলো, ইরফান ভীষণ মনোযোগ দিয়ে কিছু করছে। মাইরা এগিয়ে গিয়ে ইরফানের পিছনে দাঁড়ালে দেখতে পায় ইরফানের সামনে একটি বোর্ডের মতো কিছু যেখানে সে তার একটি ছবি এঁকেছে, সম্পূর্ণ হয়নি এখনো। পাশেই ছোট্ট একটি টেবিল, যেখানে বিভিন্ন রঙ রাখা, ইরফান একটু পর পর তুলিতে রঙ মাখিয়ে ছবির আকৃতি দিতে ব্যস্ত হয়।

ইরফানের ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট। একটু পর পর সিগারেট টি বা হাতে নেয়, আবারও ঠোঁটের ফাঁকে রাখে। ডান হাত পেইন্টিং-এ ব্যস্ত। মাইরা এখনো নাকে তার ওড়না চেপে আছে। ইরফানের পিছন থেকে একটু বাম দিকে সরে এসে বা হাত বাড়িয়ে ইরফানের ঠোঁটে চেপে রাখা সিগারেট টি টান মেরে নিয়ে নেয়। ইরফান বা হাত এগিয়ে নিয়েছিল সিগারেট ধরার জন্য, তার আগেই কেউ টান দেয়ায় সাথে সাথে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালে মাইরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়৷ মাইরাকে নাক চেপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইরফান দ্রুত ঘাড় বাঁকায় ডান দিকে। তার নাক মুখ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
মাইরা বেশ অনেকক্ষণ এমন সিগারেটের ধোঁয়ার মাঝে থেকে এখন কেশে উঠল। ইরফান পকেট থেকে দ্রুত হাতে চুইনগাম বের করে মুখে দেয়। মাইরার প্রবলেম জানার পর থেকে সিগারেট আর চুইনগাম সবসময় একসাথেই রাখে সে।

চুইনগাম চিবোতে চিবোতে মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরা এখনো সিগারেট টি হাতে ধরে আছে। ইরফান মাইরার হাত থেকে সিগারেট টি নিতে গেলে মাইরা দ্রুত তার হাত সরিয়ে নেয়। ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– নিভিয়ে দিচ্ছি। এদিকে দাও।
মাইরা নাক থেকে ওড়না সরিয়ে বলে,
– এই সিগারেট আমি খাবো।
ইরফান বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
– হোয়াট?
মাইরা দু’বার কেশে নিয়ে বলে,
– আপনি সিগারেট খেয়ে নিজের আয়ু কমাচ্ছেন, আমিও এভাবে নিজের আয়ু কমাবো। আমি আপনার বউ হই না? আমার একটা দায়িত্ব আছে তো না-কি!
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– স্টুপিট, এসব ফালতু কথা বলছ কেন?
মাইরা রে’গে বলে,
– আপনি ফালতু জিনিস খাচ্ছেন, আর আমি ফালতু কথা বললেই দোষ? আমিও সিগারেট খাবো।
কথাটা বলে আরও বেশ কয়েকবার কাশলো মাইরা। ধীরে ধীরে কাশি বাড়ছে। ইরফান দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে মাইরার হাত থেকে সিগারেট নিতে গেলে মাইরা পিছিয়ে যায়। ইরফান রে’গে যায়। এই স্টুপিট সমানে কাশছে, তবুও জেদ করছে।

দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে মাইরাকে চেপে ধরে মাইরার হাত জোর করে সিগারেট নিয়ে দু’আঙুলের মাঝে চেপে জ্বলন্ত সিগারেট নিভিয়ে দেয়। মাইরার শরীর খারাপ লাগছে। ইরফান হাতের সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে ডান হাত মাইরার গালে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– বেশি খারাপ লাগছে?
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। মৃদুস্বরে বলে,
– হু, খারাপ লাগছে।
ইরফান মুখের চুইনগাম ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এরপর মাইরার ঠোঁটজোড়ায় শুকনো চুমু খেয়ে বলে,
– জেদ করবে না। রে’গে যাই আমি।
মাইরা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– আপনি এসব ছাইপাঁশ খেলে আমিও রে’গে যাই।
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– রা’গ করার পারমিশন দিয়েছি। বাট জেদ করবেনা, ওকে?
মাইরা বাচ্চাদের মতো করে বলে,
– আপনি আর সিগারেট খাবেন না।

ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কিছু বলল না। মাইরা টেনে নিয়ে গিয়ে তার পেইন্টিং বোর্ড এর সামনে বসে, মাইরাকে তার কোলে বসায়। মৃদুস্বরে বলে,
– দূর থেকে সিগনাল দিবে, তাহলে তুমি আসার আগেই সিগারেট ছুঁড়ে ফেলব।
মাইরা কিছু বলতে চাইলে ইরফান এড়িয়ে গিয়ে বলে,
– তোমার লিও কে এঁকেছি। যদিও ও আমার এনিমি। বাট তোমার ভালো লাগবে বলে এঁকেছি। ইট’স ভেডি ডিফিকাল্ট ফর মি। ইউ নো? তোমার জন্য আমি আমার এনিমিকে এঁকেছি। হাউ ইজ ইট পসিবল?
ইরফানের কথায় মাইরা হেসে ফেলল। পিকটির দিকে তাকালে দেখল তার দু’টো পিক আঁকা। একটিতে সে লিওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আরেকটি বেডের কোণায় শুয়েছে, চুলগুলো মেঝেতে ছুয়েছে। তবে পেটের দিকে নজর পড়লে মাইরা ল’জ্জা পায়। ইরফানকে ঠেলে বলে,

– আপনি আসলেই অ’স’ভ্য লোক। এসব কি এঁকেছেন?
ইরফান এই কাগজ রেখে আরেকটি সাদা কাগজ রাখে, সামনের বোর্ডের উপর। আবারও নতুন কিছু আঁকতে হাতের সাহায্যে তুলি ঘোরায় আর ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– আরও অনেক কিছু আঁকতে পারি। তুমি চাইলে স্টার্ট করব।
মাইরা খুব ভালোই বুঝল এই লোক উল্টাপাল্টা মিন করছে। দ্রুত বলে,
– আমি পেইন্টিং শিখতে চাই।
ইরফানের হাত থেমে যায়। আড়চোখে মাইরার দিকে তাকায়। হাতের তুলি মাইরার ডান হাতে ধরিয়ে দেয়। এরপর ইরফান মাইরার ডান হাত তার হাতের মাঝে নিয়ে হাত ঘোরায়। মাইরা বেশ খুশি হলো। ইরফান খুব বেশি সময় নেয় না। প্রায় ২০ মিনিট এর মাঝেই একটি ছবি আঁকে। মাইরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ইরফান এখন যে পিকটি এঁকেছে, এটা তাদের বর্তমান অবস্থার পিক। মানে ইরফানের কোলে মাইরা বসে আছে। এটা সাইট থেকে এঁকেছে। ছাদের কিছু অংশ এঁকেছে, সাথে রাতের আকাশ। মাইরা বাম হাত গালে দিয়ে ইরফানের বুকে মাথা রেখে হেলান দিয়ে বলে,

– আপনি এতো সুন্দর করে কিভাবে আঁকেন?
ইরফান বা হাতে মাইরার কাঁধ থেকে ওড়না সরিয়ে কাঁধে একটা চুমু আঁকে। মাইরা ঢোক গিলে ঠিক হয়ে বসে। ইরফান ঠোঁট বাঁকায়। ছবিটির বাকি ফিনিশিং দিতে দিতে মৃদুস্বরে গায়,
– জনমে জনমে
তোমারে গো চাই
মরনেও পাই যেন
ওপারে…..
এটুকু গেয়ে থামে ইরফান। মাইরা এদিক ফিরে নিজে থেকেই দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে। ইরফান আড়চোখে তাকালো মাইরার দিকে। মাইরা ইরফানের গলায় মুখ ঠেকিয়ে মিষ্টি কণ্ঠে এরপর গেয়ে ওঠে,
– শখা তোমারে বাঁধিবো
তোমারই থাকিবো
বাসিবো ভালো শুধু তোমারে
ইরফান ভীষণ অবাক হয় মাইরা কণ্ঠে এটুকু গান শুনে। হাতের তুলি রেখে দেয় টেবিলের উপর। দু’হাতে মাইরাকে জড়িয়ে নিয়ে মাইরার বাম কাঁধে চুমু এঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,
– ভেরি সুইট ভয়েস!
মাইরা ল’জ্জা পায়। ইরফানকে ধরে রেখেই চোখ বুজে রাখে। ইরফান মাইরার গাওয়া পরের লাইন থেকে গায়,

– শখি তোমারে বাঁধিবো
তোমারই থাকিবো
বাসিবো ভালো শুধু তোমারে।
এটুকু গেয়ে ইরফান মাইরার মুখ তার গলা থেকে সরিয়ে আনে। মাইরা চোখ বুজে রেখেছে। মৃদু আলোয় ইরফান মাইরার পুরো মুখটা নিঁখুতভাবে অবলোকন করে।
দু’হাতের বাঁধন শক্ত করে মাইরাকে আগলে নেয়। সময় নষ্ট না করে অধরে অধর মেলায়। মাইরা কেঁপে ওঠে।
বেশ কিছু সময় পেরোলে ইরফান মাইরাকে ছেড়ে নেশালো চোখে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা-ও চোখ মেলে তাকায়। ইরফানের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাতে পারে না। দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। ইরফান ঢোক গিলে বলে,
“আই নিড ইউ বার্ডফ্লাওয়ার, রাইট নাও।”

কথাটি শুনে মাইরা তড়াক করে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফানের কণ্ঠ মাইরার কাছে সেদিনের মাতাল ইরফানের মতো লাগলো। তার শরীর মৃদু কাঁপছে।
দৃষ্টি নামিয়ে ইরফানকে ছেড়ে ইরফানের কোল থেকে নেমে দাঁড়ায় মাইরা।
সময় নষ্ট না করে ইরফান-ও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। মাইরা পিছিয়ে যেতে যেতে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
– আর ক’দিন পর আমাদের বিয়ে।
ইরফান ঘোরের মাঝেই একটু একটু করে এগিয়ে যায় মাইরার দিকে। একই সুরে বলে,
– সো হোয়াট? ফার্স্ট ওয়াইফের সাথে ফার্স্ট বা’সর, সেকেন্ড ওয়াইফের সাথে সেকেন্ড বা’সর।
মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। পিছিয়ে যেতে থাকে। আমতা আমতা করে বলে,
– এটা তো বেড রুম নয়।
ইরফান সাথে সাথে উত্তর করে,

– আ’ইল ম্যানেজ।
মাইরা তবুও পিছিয়ে যায়। ইরফান প্রশ্ন করে,
– আমি তোমার কে বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরা ঢোক গিলে। শুকনো গলা ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
– হাসবেন্ড
ইরফান তার পায়ের গতি থামায়। এগিয়ে গিয়ে ছাদের দরজা আটকে দেয়। ছাদের লাইট অফ করে দেয়। এরপর মাইরার থেকে খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– অ্যা’ম ওয়েটিং ফর ইউ। স্টপ অ্যান্ড কাম।
ইরফানের কথায় মাইরা থেমে যায়। ইরফান মৃদু হেসে ডান হাত বাড়িয়ে আবারও মাতাল কণ্ঠে বলে,
– কাম বার্ডফ্লাওয়ার

মাইরা বারবার ঢোক গিলে। এলোমেলো পায়ে দু’পা এগোলে ইরফান টান মেরে মাইরাকে তার কাছে নিয়ে আসে। মাইরা ইরফানের বুকে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ইরফান তার ডান হাতে মাইরার মুখ উঁচু করে ধরে। মাইরার দৃষ্টি নিচু। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
– তুমি কাঁপছো কেন?
মাইরা মাথা নিচু করে রেখেই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মিনমিন করে বলে,
– স্যরি!
ইরফান মাইরার কথায় সূক্ষ্ম হাসলো। হঠাৎ-ই মাইরাকে উল্টো ঘুরিয়ে একটানে মাইরার জামার চেইন খুলে দেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান মাইরার পিঠে বিদ্যমান কালো তিলটায় ঠোঁট ছোঁয়ায়। মাইরা থেমে থেমে ডাকে,
– শিসরাজ?
ইরফান মাইরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে নেয়। কাঁধ থেকে মাইরার ওড়না টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে। পিছন থেকে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে মৃদুস্বরে বলে,

– আই লাইক দিস নিউ নেইম।
মাইরা ইরফানের বুকে শরীরের ভার ছাড়ে। ইরফান মাইরাকে আগলে নিয়ে মৃদুস্বরে গেয়ে ওঠে,
– চলো বলে ফেলি,
কত কথা কলি
জন্মেছে বলতে তোমায়
তোমাকে চাই।
এরপর থেমে যায়। মাইরার মুখ ডান দিকে ফেরায়৷ হুট করেই মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা যেটুকু ভর নিজের উপর রেখেছিল, সেটুকুও ইরফানের উপর ছেড়ে দেয়।
ইরফান পিছন থেকেই দু’হাতে মাইরাকে উঁচু করে ধরে এভাবেই কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে দোলনার সামনে দাঁড়ায়। এরপর মাইরার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় দোলনার মাঝে মাইরাকে।
মাইরা নামতে নিলে ইরফান এক সেকেন্ড-ও সময় নষ্ট না করে দোলনার ভেতর গিয়ে মাইরাকে জাপ্টে ধরে। ফিসফিসিয়ে বলে,

– ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। আজ দমবন্ধ হয়ে ম’রে গেলেও একচুল পরিমাণ ছাড়ছি না।
ইরফানের কথাগুলো শুনে মাইরার শরীরে কাঁপন ধরে। কেমন ছটফট করে। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– স্টুপিট কি প্রবলেম?
মাইরা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে মিনমিন করে,
– আপনাকে ভ’য় লাগছে।
ইরফান ব্যস্ত হাতে তার পরনের শার্টের বোতাম খোলে। মাইরা পিছিয়ে যায়। ভীত চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান তার শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলে, মাইরার ডান পা ধরে টেনে তার কাছে আনে। দু’হাতে শক্ত করে মাইরাকে জড়িয়ে নিয়ে নরম সুরে কণ্ঠে মাদকতা মিশিয়ে বলে,
– Don’t be scared. You know? You are my heart. I won’t hurt my heart.
[ভয় পেও না। তুমি জানো? তুমি আমার হার্ট। আমি আমার হার্টকে আঘাত করব না।]
কথাটা বলে ইরফান মাইরার গলায় গাঢ় চুমু এঁকে একই সুরে বলে,
– Try to understand, I need you birdflower.
I’ll do my best to be a gentleman with you, ok?
মাইরা বোধয় একটু শান্ত হলো। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। ডান হাতে টান মেরে মাইরার জামা কাঁধ থেকে নামিয়ে দেয়। সময় যত পেরোয়, ইরফান তত মাইরাতে মত্ত হয়।
মাইরা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আওড়ায়,

– শিসরাজ?
এলোমেলো ইরফান মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে আওড়ায়,
– মাই বার্ডফ্লাওয়ার
মাইরা দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে। ইরফান মাইরার কানের পিঠে চুমু এঁকে মাতাল কণ্ঠে গেয়ে ওঠে,
– ঝলসানো রাতের
এ পোড়া বরাতে
তুমি আমার অন্ধকার
আর রোশ নাই।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭০

মাইরা চোখ বুজে নেয়। ইরফান আরও খানিক এলোমেলো হলো। মাইরাকে এলোমেলো করতে ব্যস্ত হলো।
আজ ইরফান-মাইরার সাথে সাথে প্রকৃতি-ও যেন হঠাৎ-ই এলোমেলো হলো। দমকা হাওয়া ছড়িয়ে পড়ল প্রকৃতি জুড়ে। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। ইরফানের সেসব খেয়াল নেই।
এতোদিনে একটু একটু করে জমিয়ে রাখা সবটুকু ভালোবাসা তার বার্ডফ্লাওয়ারকে মাখাতে ভীষণ-ই ব্যস্ত সে।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭২