প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৫
Drm Shohag
ইরফান মাইরাকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে মাইরা ছাড়ে না। আরও শক্ত করে ইরফানকে জড়িয়ে ধরে। ইরফান নিঃশব্দে হাসলো। বা হাতে মাইরার চুলগুলো সরিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– তোমার ল’জ্জা ভাঙে না কেন বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরা আরও ল’জ্জা পায়। এই লোকটা তাকে এভাবে মে’রেই ফেলবে একদিন। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
– তোমার আর্ট ভীষণ বাজে হয়েছে।
কথাটা শুনতেই মাইরা তড়াক করে চোখ মেলে তাকায়। সাথে সাথে ইরফানকে ছেড়ে অদ্ভুদভাবে ইরফানের দিকে তাকায়। সে কত শখ করে ইরফানের জন্য আঁকলো বসে বসে। আর লোকটা কিভাবে বলে দিল বাজে হয়েছে। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরার চোখজোড়ায় জমা পানির কণা চোখ এড়ায় না ইরফানের। তবে কিছু বলল না।
মাইরা শাড়ির আঁচল টেনে ঠিক করে ইরফানের দিকে আড়চোখে তাকালো, এরপর দোলনার ভেতর থেকে নামতে গেলে ইরফান মাইরাকে টেনে ধরে। মাইরা হাত মোচড়ামুচড়ি করে ছাড়াতে চায়। ইরফান টেনে এনে মাইরাকে তার কোলে বসায়। বা হাতে মাইরার পেট শক্ত করে চেপে ধরে। মাইরা একটা কথাও বললো না। দু’হাতে ইরফানের হাত সরাতে চাইলে ইরফান পিছন থেকেই মাইরার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। এলোমেলো চুমু আঁকে। বা হাত শাড়ি ভেদ করে উম্মুক্ত পেটে রাখে। হাতের বিচরণ এলোমেলো করে। মাইরা হাসফাস করে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
– ছাড়ু….
ইরফান মাইরার গলায় নাক ঘষে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– এ্যাই ছাড়ুন ওয়ার্ড কোথা থেকে শিখেছ স্টুপিট?
মাইরা ঢোক গিলল। ইরফান হঠাৎ-ই মাইরাকে নিয়ে দোলনার ভেতর থেকে নেমে দাঁড়ায়। মাইরা কিছু বোঝার আগেই ইরফান মাইরার শাড়ির আঁচল টেনে ফেলে দেয়। কোমরে গুঁজে রাখা শাড়ি ব্যস্ত হাতে আলগা করতে থাকে। মাইরা ইরফানকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পাশের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে ইরফান মাইরার শাড়ি টেনে পুরোটাই খুলে দেয়৷ মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। রে’গে বলে,
– অ’স’ভ্য লোক, আপনি আমার সব খুলে নিচ্ছেন কেন?
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
– উইথআউট ড্রেসে তোমাকে মারাত্মক সুন্দর লাগে বউ!
মাইরা চোখ বড় বড় তাকায়। মাইরার মনে হলো ইরফান সত্যিই একটা বখাটে, যে তাকে চরমভাবে টিজ করছে। কিন্তু তা কি করে হয়? ইরফান তো তার স্বামী। কিন্তু ইরফান তো এভাবে কথা বলে না। আজ কি হয়েছে ইরফানের? অবাক হয়ে বলে,
– আপনি কি আজকেও নেশা করেছেন?
ইরফান মাইরার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। মাইরা ইরফানের এমন অস্থিরতায় ঘেরা দৃষ্টিতে টিকতে না পেরে তার দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। ভীষণ ল’জ্জা লাগছে তার। ইরফান জড়ানো কণ্ঠে বলে,
– আমি স্ট্রং ড্রা’গ খেতে চাই।
ইরফানের কথা শুনে মাইরা দ্রুত মাথা তুলে তাকায়। রে’গে বলে,
– আর একদিন ওসব ছাইপাঁশ খেলে আপনাকে আমি ছাড়বো না বলে দিলাম।
ইরফান সূক্ষ্ম হেসে বলে,
– স্ট্রং ড্রা’গ খেতে, তোমার আমাকে ধরে রাখা ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট। গুড জব।
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। ইরফানের কথাটা বুঝেছে সে। কত্ত বড় খারাপ লোক। তাকে ড্রা’গ বানিয়ে দিচ্ছে।
ইরফানকে তার একদম কাছে দেখে উল্টো ঘুরে পাশের রুমে যেতে চাইলে ইরফান দ্রুত এগিয়ে এসে মাইরাকে জাপ্টে ধরে। মাইরা বেচারি ল’জ্জায় কেঁদে দিয়ে বলে,
– নিজে কাপড় পরে আমার সব খুলে নিয়েছেন। অ’স’ভ্য লোক ছাড়ুন আমায়।
ইরফান হতভম্ব চোখে তাকায় মাইরার দিকে। চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– তুমি আমার কি দেখতে চাও?
মাইরা থতমত খেয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
– কিছু না কিছু না। আপনি কাপড় পরে থাকুন।
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– দেখতে হবে।
মাইরা চোখ বড় বড় করে বলে,
– কি?
ইরফান একই ভঙ্গিতে বলে,
– তুমি যা ভাবছো, তাই।
কথাটা বলে মাইরাকে বা হাতে শক্ত করে ধরে ডান হাতে তার শেরওয়ানির কয়েকটা বোতাম খুলে শরীর থেকে ছাড়িয়ে ছুঁড়ে ফেলে। মাইরা রে’গে বলে,
– আপনি একটা যা তা,, ছাড়ুন আমায়। উফ! আপনার সাথে আমি থাকবোই না।
ইরফান মাইরার নড়াচড়ায় বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– থাকতেও হবে, দেখতেও হবে।
মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে তাকায়। কি শুরু করেছে এই লোকটা। মাইরার ভাবনার মাঝেই ইরফান মাইরাকে কোলে তুলে নিলে মাইরা দ্রুত ইরফানের দিকে সিটিয়ে যায়। ইরফান দোলনার দিকে এগোলে মাইরা ঢোক গিলে রে’গে বলে,
– আবার আপনি ওদিকে যাচ্ছেন? আপনার ঘরের বিছানা কিন্তু আমি সত্যি সত্যি বেঁচে দিব বলে দিলাম।
ইরফান আড়চোখে মাইরার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– আপাতত সাজানো বেড ছাড়া অন্য কোথাও মুড নেই।
কথাটা বলে টেবিলের উপর থেকে মাইরার আঁকা পিকটি নিয়ে তার পাশের রুমে যায়। মাইরাকে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে ইরফান মাইরার পাশে বসে। মাইরা হাঁটু ভাঁজ করে রেখেছে। পাশ থেকে চাদর টেনে নিজেকে ঢেকে নেয়। ইরফান কিছু বললো না। সে মাইরার আঁকা পেজের অপর পাশে প্রায় ৫ মিনিটের মাঝে কিছু আঁকে। মাইরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তাকে শাড়ি ছাড়া এঁকেছে। একটু আগের সে। মাইরা রেগেমেগে ইরফানের গলা বুকে খামচি দিতে দিতে বলে,
– অ’স’ভ্য লোক এসব কি এঁকেছেন আপনি?
ইরফান দু’হাতে মাইরাকে জাপ্টে ধরে চোখমুখ কুঁচকে বলে,
– স্টুপিট কি করছ?
মাইরা ভীষণ রে’গে আছে। কিভাবে এসব আঁকে এই লোক। নি’র্ল’জ্জ লোক একটা।
ইরফান হাতের পিক রেখে মাইরাকে জাপ্টে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে মাইরার উপর আধশোয়া হয়। মাইরা ছাড়া পেতে মোচড়ামুচড়ি করে। ইরফান মাইরার দু’হাত তার দু’হাতের মাঝে চেপে ধরে। সামান্য উঁচু হয়ে মাইরার পুরো বডিতে চোখ বুলায়৷ শুকনো ঢোক গিলে চোখ বুজে মাথা দু’দিকে নাড়ায়। ঘোরের মাঝে থেকে বলে,
– ভ’য়া’ন’ক সুন্দর তুমি বার্ডফ্লাওয়ার!
মাইরা ইরফানের কথা সাথে ইরফানের দৃষ্টি দেখে ল’জ্জায় চোখমুখ খিঁচে নেয়। ইরফান নিঃশব্দে হাসলো। এগিয়ে এসে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে। বিড়বিড়িয়ে বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ারের হাতে ম্যাজিক আছে। তার হাতে আঁকা পিক এর কাছে আমার আঁকা সব পিক ফিকে হয়ে গিয়েছে।
ইরফানের আবেগমাখা প্রশংসা পেয়ে মাইরার ভীষণ ভালো লাগলো। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– তুমি আমার কি দেখতে চাও?
মাইরা দ্রুত ইরফানের মুখ চেপে ধরে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
– দয়া করে এসব বলা বন্ধ করুন। আমি কিন্তু কাঁদবো বলে দিলাম।
ইরফান মাইরার কথা শুনেছে না-কি! তার মুখ থেকে মাইরার হাত সরিয়ে মাইরাকে নিজের দিকে টেনে নেয়। মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে নিয়ে দু’হাতে মাইরার দেহে অবাধ্য হাতে বিচরণ চালায়। মাইরাতে মত্ত হতে নিজের সব আবেগ, ভালোবাসা ঢেলে দিতে চায় মাইরাতে।
সময়ে গতির সাথে সাথে ছোট মাইরার প্রতি ইরফানের উম্মাদনা বাড়ে। মাইরা ছটফটিয়ে ওঠে। না চাইতেও ফুঁপিয়ে ওঠে। ইরফান ফোঁপানোর শব্দ পেয়ে দ্রুত মাইরাকে ছেড়ে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
– হোয়াট হ্যাপেন্ড বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরা কিছু বলে না। ইরফানের দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব। গত পরশুর কথা ভাবতেই ইরফানের সকল উ’ত্তে’জ’না যেন অদৃশ্য বাঁধনে আটকে গেল। তার বউ তো ছোট। সে গত পরশু যেমন দুই দুই বার কথাটা ভুলে বসেছিল, আজও ভুলে বসেছে।
কেন যেন রা’গ হলো নিজের উপর। সেই প্রথম প্রথম যেমন রা’গ হতো মাইরাকে বাচ্চা ভাবলে,, আজ তেমন-ই রা’গ হলো। ইচ্ছে করল মাইরার গালে দু’টো থা’প্প’ড় লাগাতে তার সামনে আসার জন্য। কিন্তু মাইরার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার সব নিভে গেল। মাইরা চোখ বুজে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। ইরফান দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার হাজারটা ইচ্ছেকে দমিয়ে, পিষে ফেলে মাইরার উপর থেকে উঠে গেল।
মাইরা নিজের উপর হালকা অনুভব করতেই দ্রুত চোখ মেলে তাকালে দেখল ইরফান বেড থেকে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাইরা ঢোক গিলল।
ইরফান ফাস্টএইড বক্স থেকে ঘুমের ঔষধ বের করে, পুরো তিনটে ঔষধ একেবারে খেয়ে নেয়। মাইরা পিছন থেকে দেখতে পায় না। ইরফান ঔষধ খেয়ে বেলকনিতে যায়। মাইরা বুঝলো না ইরফানের হঠাৎ কি হলো।
ইরফান দরজা জানালা আটকে চারটে সিগারেট শেষ করে। এরপর চুইনগাম চিবিয়ে ঘরে আসলে দেখল মাইরা গায়ে চাদর জড়িয়ে বসে আছে। ইরফান ভ্রু কোঁচকালো। কিন্তু কিছু বললো না। এগিয়ে এসে মাইরার পাশে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।
মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। ইরফান কি তার উপর রে’গে আছে? নিজের জড়তা কাটিয়ে ইরফানের বাহুতে হাত রেখে মিনমিন করে বলে,
– আপনি কি আমার উপর রা’গ……
ইরফান মাইরাকে কথাটুকু শেষ করতে না দিয়ে মাইরার হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে ধমকে বলে,
– স্টুপিট টাচ করছ কেন?
মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। হঠাৎ ইরফানের এমন ব্যবহার একটুও হজম হলো না মেয়েটির। মুহূর্তেই চোখজোড়া ভরে ওঠে। চোখভর্তি পানি নিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইরফান মাইরার ভেজা চোখ দেখে নিজেকে দমিয়ে নিল। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে হাত বাড়িয়ে মাইরাকে টেনে তার বুকে শুইয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– স্যরি!
মাইরা ফুঁপিয়ে কাঁদে। সে তো কিছুই করেনি, তবুও ইরফান এমন করল কেন? ইরফান মাইরার গায়ে পেঁচানো চাদর আরও ভালোভাবে পেঁচিয় দিয়ে মাইরাকে দু’হাতে জড়িয়ে নিয়ে চুলের ভাঁজে চুমু এঁকে বলে,
– আমার হেডএক হচ্ছে। ঘুমাও।
মাইরা নাক টেনে বলে,
– ওষুধ খান।
– খেয়েছি।
মাইরা মাথা তুলে বলে,
– আমি আপনার চুল টেনে দিই?
ইরফান মাইরার দিকে তাকালো। মেয়েটা এতো আদুরে কেন! একটুতেই কেঁদে ভাসিয়েছে। ডান হাতে মাইরা মুখ মুছে দিয়ে মাইরার কপালে চুমু আঁকে। এরপর মাইরাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
– নো নিড, ঘুমাও।
মাইরা ইরফানকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজল।
ইরফান ওষুধের প্রভাবে বেশ কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু মাইরার চোখে ঘুম আসলো না। মাথা উঁচু করে ইরফানকে দেখে বুঝলো ইরফান ঘুমিয়েছে। মাইরা ইরফানের মুখে হাত বুলিয়ে দেয়। ইরফানের ব্যবহারে ভীষণ অবাক হয়েছে মাইরা। পুরো ব্যাপারটা তার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। আবার ইরফান এতো দ্রুত ঘুমানোয় অবাক হয়। অনেক বেশি মাথা ব্য’থা করছিল কি? প্রশ্নটি মাথায় আসতেই মাইরা উঠে বসে।
বা হাতে ইরফানের মাথার চুল আলতো করে টেনে দিতে থাকে। ওভাবে বসে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে ইরফানের কপালে গাল ঠেকিয়ে মাইরা-ও ঘুমিয়ে যায়।
শুদ্ধ অসহায় মুখ করে বসে আছে। ফারাহ শুদ্ধর ঘরের এক কোণায় বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কিছুক্ষণ পর তৃণা বেগম শুদ্ধর ঘরে এসে বলে,
– শুদ্ধ তুই আজ তোর কাজিনদের সাথে গিয়ে থাক বাবা। আমি ফারাহ আম্মুর কাছে থাকছি।
কথাটা শোনার সাথে সাথে শুদ্ধ শব্দ করে বলে ওঠে,
– কিহহহহ?
তৃণা বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফারাহ কাঁদছে বাবা মায়ের জন্য। সে থাকলে মেয়েটার একটু ভালো লাগবে। মেয়েটা তো খুব বড় নয়। তাছাড়া তৃণা বেগমের ভীষণ মায়া লাগে মেয়েদের দেখলে। তার একটা মেয়ের খুব শখ ছিল। এজন্যই যেকোনো মেয়েকেই যেন অন্তর দিয়ে ভালোবেসে ফেলে। মাইরার ক্ষেত্রেও এমন হতো। আর সেখানে ফারাহ তার ছেলের বউ। তাকে যতভাবে ভালো রাখা যাবে তিনি সবভাবেই ভালো রাখবেন।
শুদ্ধ মাথা চুলকে বলে,
– মানে বলছিলাম কি, আমি ওর কাছে থাকলে কি হবে মা?
তৃণা বেগম ফারাহ’র পাশে বসে বলে,
– যেতে বলেছি যা। আজ আমি ওর কাছে থাকবো।
শুদ্ধর হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করল। তার মা একটু বেশিই দরদী। তাই বলে অন্যের জন্য দরদী হতে গিয়ে নিজের ছেলের কথা ভাববে না? অসহায় মুখ করে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে ফারাহ’র দিকে একবার তাকালো। বিড়বিড় করল,
– আজকের রাতটা শুধু যাক, তারপর কত প্রকার ভাবে কাঁদতে পারো, তাই দেখবো ফারাহ পাখি।
এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ভাগ্যিস গতকাল গিয়েছিল ফারাহ’র বাড়ি। তাই তার ভার্জিনিটি নষ্ট করতে পেরেছে। নয়তো আজকেও না পারার শোকে সে হার্ট অ্যাটাক, ফ্যাটাক করে ফেলত। ফারাহ পাখি কত জ্বালায় তাকে! ইশ! বিয়ের রাতটাও ছাড় দিল না।
পরদিন ইরফান অফিসের কাজ শেষে রাত আটটার মাঝে বাড়ি ফিরেছে। মাইরা ইরফানকে এতো দ্রুত ফিরতে দেখে অবাক হয়। ইরফান অনেক দ্রুত বাড়ি ফিরলেও সেটা হয় ১০-১১ টা, তার আগে কখনো ফেরেনা। মাইরা ডিভানের উপর বসে ইরফানকে দেখছে।
ইরফান নাছিমকে বলা কথা অনুযায়ী কয়েকবছর পর আজ বাইক রাইড এর জন্য নিজেকে প্রিপেয়ার করছে। কাভার্ড এর এক কোণায় পড়ে থাকা সবকিছু বের করে বেডের উপর রাখে। মাইরার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করে,
– মেডিসিন নিয়েছ?
মাইরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। জিজ্ঞেস করে,
– এসব কি বের করলেন?
ইরফান ছোট করে বলে,
– ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস।
এরপর সে গায়ে রাইডিং জ্যাকেট জড়িয়ে নেয়, তারপর রাইডিং প্যাণ্ট, পায়ে বুট পরে। এরপর দু’হাতে গ্লাভস্ পরে নিয়ে ডান হাতে হেলমেট নেয়। মাইরা অদ্ভুদভাবে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। কেমন অদ্ভুদ লাগছে ইরফানকে।
মাইরার গ্রামে ইরফানকে দেখার কথা মনে পড়লো। ইরফান মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– আমার ফিরতে লেইট হলে মেডিসিন নিয়ে ফাস্ট ঘুমাবে।
মাইরা ইরফানের কথার উত্তর না দিয়ে বলে,
– আপনাকে কালা মামা লাগছে।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– স্টুপিট, আমি তোমার মামা?
মাইরা মিটিমিটি হেসে বলে,
– হবেন?
ইরফান চোখ পাকিয়ে তাকায়। মাইরা মুখ বাঁকায়। ইরফান বাইরে যেতে যেতে বলে,
– ফিরে এসে বোঝাবো, আমি তোমার কি। বাঁদর কোথাকার!
মাইরা মুখ ভেঙায়।
নাছিম বেশ কিছুক্ষণ ভেবে ভেবে, থেমে থেমে একটি কাগজে কিছু লিখল। এরপর কাগজটি চারভাজ করে তার পকেটে রেখে দেয়। রাইডে যাওয়ার জন্য আগেই রেডি হয়েছে। এখন যাস্ট দু’হাতে গ্লাভস্ পরে নিল।
সে মূলত জিততে যাচ্ছেনা, বা হেরে গিয়ে বিয়ে করবে এজন্য-ও যাচ্ছে না। আসলে অনেকদিন পর ইরফানের থেকে এমন অফার পেয়ে ইরফানের সাথে একটু সঙ্গ দিতে যাচ্ছে। আর কখনো দেখা হবে না হয়তো!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেলমেট নিয়ে তার ঘর থেকে বেরোলে দেখল তার মা ডায়নিং-এ মন খারাপ করে বসে আছে। প্রায় বছর পাঁচেক আগে তার বাবা মারা যায়। সে আর তার মা এই বাড়িতে থাকে। হঠাৎ দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোয় তার মায়ের মন খারাপ। তিনি কি করে থাকবেন ওখানে গিয়ে এই নিয়ে নাছিমের সাথেও ঠিক করে কথা বলছে না। নাছিম মৃদু হাসলো। এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর হেলমেট রেখে হাঁটু মুড়ে বসে তার মায়ের সামনে। ভদ্রমহিলা নাছিমকে দেখেও কিছু বললেন না। নাছিম মায়ের অভিমানে হাসলো। দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
– তুমি চাও না মা? তোমার ছেলে এই দেশ ছেড়ে একটু মুক্ত বাতাসের ঘ্রাণ নিক। না-কি চাও, এই দেশের বাতাসে আমি দমবন্ধ হয়ে ছটফট করি?
নাছিমের মা ঝাপসা চোখে ছেলের পানে চাইলেন। নাছিম মলিন হাসলো। তার মা জানে নাছিমের সিচুয়েশন এর কথা। নাছিম তার মায়ের সাথে ভীষণ ফ্রেন্ডলি। সে মাইরাকে দেখার পর সবার আগে তার মাকে এসে বলেছিল, নাছিমের মা-ও ভীষণ খুশি ছিল ছেলের কাউকে পছন্দ হয়েছে শুনে। তিনি মেয়ের বাড়ি যেতে চাইলে নাছিম বলেছিল, মেয়েটি অনেক ছোট,, আরেকটু বড় হোক। কিন্তু বড় হতে গিয়ে যে আরেক জায়গায় বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
ভদ্রমহিলা জানে নাছিম যে মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, মেয়েটার অন্যএকজনের সাথে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, মেয়েটি যে মাইরা এটা তিনি জানেন না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
– সব গুছিয়ে রেখেছি বাবা। আমাদের ফ্লাইট কবে?
নাছিম তার মায়ের হাতে চুমু এঁকে বলে,
– আগামীকাল।
– কোথায় যাচ্ছিস?
– একটা কাজে। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
– ওখানে গিয়ে আমি তোকে সুন্দরী বিদেশি মেয়ে দেখে বিয়ে দিব।
নাছিম হেলমেট পরতে পরতে শব্দ করে হেসে ফেলল। বাইরে যেতে যেতে বিড়বিড় করে,
– জীবনের একটি অংশ থেমে গিয়েছে। তুমি যদি বুঝতে মা!
ইরফান প্রায় ৩০ মিনিট বাইক চালিয়ে বাইপাস রোডে আসে। দু’মিনিট পেরোতেই নাছিম সেইম গেটআপে ইরফানের পাশে এসে বাইক থামায়। ইরফান ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল নাছিমকে। দু’জনের মাথায় হেলমেট থাকায় কেউ কারো মুখ দেখতে পায় না। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– বিয়ের প্রিপারেশন নিয়ে এসেছিস?
নাছিম চোখ বুঝল। বিয়ে শব্দটার সাথে তার শত্রুতা জন্মেছে। অথচ এটাই সবার মুখে শুনতে হচ্ছে। আাসার আগে মায়ের মুখে, এখন ইরফান। নিজেকে সামলে কিছু বলার আগেই ইরফান বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে,
– কাকে বিয়ে করবি বলে ঠিক করলি?
নাছিম ঢোক গিলে ইরফানকে রা’গা’তে কৌতুকস্বরে হেসে বলে,
– বার্বি ডল কে।
ইরফান রাগে বাইকের হ্যান্ডেলবার দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরে। সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে শক্ত গলায় বলে,
– তোর জন্য কঠিন মৃ’ত্যু অপেক্ষা করছে।
নাছিম মিলন হেসে বলে,
– বার্বিডলের জন্য জীবন দিতে পারা তো ভাগ্যের ব্যাপার। যত বেশি কঠিন মৃ’ত্যু হবে, তত ওকে ফিল…..
নাছিম থেমে গেল। নাছিমের ওইটুকু কথা শুনেই যেন ইরফানের কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটার ন্যায় শরীর জ্বলে উঠলো। রা’গে চিৎকার করে বলে,
– নাছিম, আমায় আর রা’গাস না। তোর মা বেঁচে আছে। তার কথা ভাবা উচিৎ তোর। বারবার সাপের লেজে পা দিয়ে তোর মা কে সন্তানহারা করিস না।
নাছিম হাসলো ইরফানের কথায়। ইরফানকে আর রা’গা’লো না। তার ভীষণ আত্মসম্মানে লাগে মাইরাকে বার্বিডল নামে ডাকতেও। কারণ সে তার বন্ধুর বউ। সেখানে এসব কথা বলা ভীষণ অস্বস্তিকর! এসব ভাবনা রেখে নাছিম হেসে বলে,
– তোর ডায়লগ গুলো অনেক জোশ হয় ভাই!
ইরফান ততক্ষণে বাইক স্টার্ট দিয়েছে। নাছিম নিজেও বাইক স্টার্ট দেয়।
দাঁড়িয়ে থাকা বাতাস ফুঁড়ে তারা ছুটে চলে। মাঝেমাঝে রাস্তাটি সাপের মতো বাঁক নেয়, একবার ডানে, আবার বামে। ইরফান, নাছিম পাশাপাশি এখন।
রাস্তার মাঝে মাঝে রোডলাইট, আবার কোথাও অন্ধকারে ঢাকা।
ইরফান হ্যান্ডেলবারে দৃঢ়ভাবে হাত রাখে, হেলমেটের ভেতর থেকে উঁকি দেয় ইরফানের আত্মবিশ্বাসী চোখজোড়া। ইরফান হঠাৎ পূর্ণ উদ্দমে হাজার্ড লাইট সুইচ অন করে থ্রটল তথা গ্রিপ ঘুরিয়ে ওভাবেই বেশ কিছুক্ষণ চেপে ধরলো,তার বাইক কাঁপছে থরথর করে,সাথে ইরফানও।
ইরফান ইচ্ছাকৃতভাবে একটি জার্ক দেয়, এরপর দক্ষহাতে বাইকের স্পিড বাড়ায়।
ইরফান এত তীব্র বাতাসেও ঘেমে যায়, সে অপলক নেত্রে রাইডার সাজে সামনের দিকে তাকিয়ে ছুটে চলল, নাছিম বোধহয় অনেকটা পিছনে পড়ে গেছে, কিন্তু সে ছুটছে তো ছুটছেই।
নাছিম জানে, ইরফান হঠাৎ-ই চোখের পলকে তাকে পিছু ফেলে যাবে। ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই ইরফান এগিয়ে যায়। নাছিম এই ব্যাপারটাতেই কেন যেন বেশ এনজয় করল। অনেকদিন পর পুরনো সেই রাত পেয়ে নাছিম হাসলো।
নাছিম থ্রটল ঘুরাতেই বাইকের গতি বৃদ্ধি পায়। ইরফানের পিছু সে-ও ছুটল। কেন যেন ভীষণ উইক লাগছে তার। নিজেকে জোরপূর্বক সামলে বাইকে মনোযোগ দেয়।
ইরফান তার বাইক ডানদিকে সামান্য বাঁকিয়ে
ঠোট বাঁকিয়ে একটু হাসে। কিছুটা শব্দ করে বলে,
– মিস ইউ মাই হার্ট।
কথাটা হেলমেটের প্রভাবে তার নিজের কানেই এসে বাড়ি খায়। ইরফান বাইক সোজা করে ছুটে চলে।
আশেপাশের সকল চলন্ত গাড়ি পেরিয়ে শোঁশোঁ করে এগিয়ে চলল, মনে হচ্ছে আশেপাশের গাছপালা গুলোও তার বিপরীতে ছুটছে।
কিছুক্ষণ পরে ইরফান তাদের গন্তব্যে পৌঁছিয়ে ডিস্ক ব্রেক চেপে বাইক থামালো। পিছনে ফিরে নাছিমকে দেখতে না পেয়ে গম্ভীর চোখে বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে।
ইরফান আবারও বাইক স্টার্ট দিয়ে উল্টো পথে এগোয়। কয়েক সেকেন্ড এর মাঝেই নাছিমকে দেখতে পায়। কিন্তু হঠাৎ-ই কি হলো কে জানে! নাছিম বাইক সহ উল্টে পড়ে। ইরফান হতভম্ব হয়ে যায়। বাইকের সামনে একটি পাঞ্চ মেরে শব্দ করে বলে ওঠে, – শীট!
বাইকের স্পিড বাড়িয়ে কয়েক সেকেন্ডে নাছিমের পাশে বাইক থামিয়ে দৌড়ে গিয়ে নাছিমের বাইক টেনে তোলে। নাছিম চোখমুখ কুঁচকে রাস্তায় বসে আছে। ইরফান রা’গে নাছিমের বাইক অপর দিকে ঠাস করে ছুঁড়ে ফেলে। দ্রুত নাছিমের হাঁটু টেনে বলে,
– আর ইউ ওকে?
নাছিম ব্য’থাজড়িত কণ্ঠে বলে,
– না ভাই। মারাত্মক ব্য’থা পেয়েছি। তুই আমাকে একটু বাড়িতে নামিয়ে দিবি?
ইরফান চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
– হসপিটাল যেতে হবে।
কথাটা বলে রাকিবকে কল করতে চায়, তার গাড়ি নিয়ে আসতে বলার জন্য, নাছিম দ্রুত বলে ওঠে,
– আরে আহামরি কিছু নয়। তাছাড়া বাড়ির পাশেই ডক্টর আঙ্কেল থাকে, এটা উনিই সারিয়ে দিতে পারবে। তুই আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসবি?
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– ওকে।
কথাটা বলতেই নাছিম খুড়িয়ে এসে ইরফানের বাইকে উঠে বসে। ইরফান রে’গে নাছিমের কলার ধরে বলে,
– তুই আমার বাইকে বসলি কেন?
নাছিম অসহায় কণ্ঠে বলে,
– তুই পৌঁছে দিবি বললি যে! তাছাড়া আমার এই পা নিয়ে বাইক চালাতে পারবো না।
নাছিমের কথা শুনে ইরফান নাছিমের কলার ছেড়ে দিল। বিরক্ত হলো এই ভেবে, এই বাইকে মাইরাকে আর বসাতে পারবে না।
নাছিম তার অফিসের লোককে এইখান থেকে তার বাইক নিয়ে যেতে বলে দেয়। ইরফান বাইক স্টার্ট দেয়। নাছিম মৃদু হাসলো। ডান পা পিছন দিকে কয়েকবার টানা দেয়। কোনো ব্য’থা-ট্যথা পায় নি। ইরফানের সাথে যাওয়ার ফন্দি ছিল। তখন ইরফানকে দেখে হঠাৎ করে বাইক থামিয়ে ইচ্ছে করে পড়ে যায়।
যাইহোক, দেশ ছাড়ার আগে কিছু ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ হলো ভেবে একটু ভালো লাগছে। পকেট থেকে একটি কাগজ বের করে ধীরে ধীরে ইরফানের পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। ইরফান বুঝতে পারেনি। সব কাজ শেষে নাছিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ইরফান গম্ভীর সাথে শক্ত গলায় বলে,
– বিয়ের প্রিপারেশন নে।
নাছিম কিছু বললো না। লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশপানে তাকায়। চোখজোড়া ঝাপসা হয়। বিয়ে শব্দটার সাথে বার্বিডল নাম টা জড়িয়ে আছে। যেখানে বার্বিডল হারিয়ে গিয়েছে, সেখানে বিয়ে শব্দটা কেন বারবার ভেসে আসে!
পরদিন,
ইরফান অফিস থেকে ফিরেছে প্রায় ১১:৩০ এ। গতকাল বাইক নিয়ে বেরোনোয় অনেক কাজ পেন্ডিং-এ ছিল। আজ সব সামলে নিতে পারেনি। কালকের জন্য কিছু জমিয়ে রেখে বাড়ি ফিরলো। বেশি রাত করে ফিরলে মাইরার চঞ্চলতা টুকু আর দেখতে পায়না। মেয়েটি শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকে। যেটা ইরফানের ভালো লাগে না।
ফোন স্ক্রোল করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল। হঠাৎ ফোনে টুং করে মেসেজ পেয়ে ইরফান মেসেজটি অপেন করলে দেখল নাছিমের নাম্বার থেকে থেকে এক লাইনের একটি মেসেজ এসেছে।
– তোর রাইডিং প্যান্টের পকেট চেক করিস, কিছু আছে।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফোন পকেটে রেখে দরজা ঠেলে তার ঘরে প্রবেশ করে।
মাইরা ইরফানের গতকালকের কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখছিল। প্যান্টের পকেট থেকে একটি চিরকুট এর মতো কিছু পেয়ে চিরকুটের ভাঁজ খুলে চোখ বুলায়।
– স্যরি ভাই! তোর শর্ত মানতে পারলাম না।
চলে যাচ্ছি এখান থেকে। তুই আমার উপর রা’গ পুষে রাখিস না প্লিজ!……
এটুকু পড়তেই ইরফান ঝড়ের বেগে এসে মাইরার হাত থেকে কাগজটি টান মেরে নিয়ে নেয়। মাইরা ইরফানকে খেয়াল না করায় হঠাৎ-ই ভীষণ ভ’য় পেয়ে যায়। মাথা তুলে ইরফানকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু ইরফান ওভাবে তার দিকে চেয়ে আছে কেন? কিছু বলার আগেই ইরফান ডান হাতে শক্ত করে মাইরার চোয়াল ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– এসবে কেন হাত দিয়েছিস? বল? চুপ করে বসে থাকতে পারিস না?
মাইরা গালে ভীষণ ব্য’থা পায়। দু’হাতে ইরফানের হাত সরাতে চাইলে ইরফান আরও শক্তহাতে ধরে।
নাছিমের দেয়া কি না কি মাইরা টাচ করেছে, আবার যেন কত মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল, ভাবতেই ইরফানের মাথায় র’ক্ত উঠে গেল।
বা হাতে মাইরার হাত থেকে তার প্যান্ট নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে মাইরাকে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে বলে,
– কেন হাত লাগিয়েছিস এসবে? বল স্টুপিট গার্ল?
কথাটা বলতে বলতে মাইরাকে থা’প্প’ড় মারার জন্য হাত উঠিয়ে মাঝপাথে থেমে যায়।
মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় ইরফানের পানে। মেয়েটির চোখ ভরে ওঠে। ইরফানের এসব ব্যবহারে মেয়েটি আজকাল এতো কষ্ট পায়! আবার তাকে থা’প্প’ড় মারতে চাইছে। মাইরা মাথা নিচু করে নিল। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফান ঢোক গিলে তার হাত গুটিয়ে নেয়। অতঃপর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
মাইরা ফুঁপিয়ে ওঠে। সে কি এমন করেছে? এই লোকটার জিনিসে হাত দেয়া যাবে না, তা তো আগে কখনো বলেনি। বললে সে জীবনেও ধরতো না। গতকাল রাতেও কেমন ব্যবহার করল তার সাথে। আজ কতদিন পর মারার জন্য হাত তুলল। সে আর জীবনেও এই লোকটার কোনো জিনিস ছুঁয়েও দেখবে না। কথাগুলো ভেবে আবারও ফুঁপিয়ে ওঠে।
ইরফান বাইরে বেরিয়ে হাতের কাগজ মুঠো করে ছুঁড়ে ফেলতে গিয়েও কি মনে করে কাগজ মেলে ধরে চোখ বুলায়,
স্যরি ভাই! তোর শর্ত মানতে পারলাম না।
চলে যাচ্ছি এখান থেকে। তুই আমার উপর রা’গ পুষে রাখিস না প্লিজ! আমি তোর বউয়ের কোনো ছবি রাখিনি আমার কাছে, আর কখনো ওকে দেখব না, ভাবার চেষ্টাও করব না।
তবে ওকে আমি ভুলতে পারবো না ভাই।
তুই যদি মানতে না পারিস,, আমার মনে তোর বউ কেন থাকবে। তাহলে তুই আমাকে খুঁজে বের করে মে’রে ফেলিস। আর সেটা না পারলে, দোয়া করিস যেন আমি কোনো এক অজানা কারণে ম’রে যাই।
আমি অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারবো না রে। ওকে হারিয়ে নিয়তির কাছে হেরে গিয়ে আমি এক পাথর হয়েছি। তাকে ভুলতে গিয়ে সেই পাথর থেকে আর অশ্রু ঝরাতে চাই না। এতো শক্তি নেই আমার ভেতর।
নাছিম নামে কেউ তোর লাইফে ছিল, ভুলে যাস। কথা দিচ্ছি, আমি আর কখনো তোর সামনে এসে দাঁড়াবো না। তোদের জন্য অসংখ্য দোয়া রইল।
ইতি
নাছিম
ইরফান লেখাটুকু পড়ে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। কাগজটি ছুঁড়ে ফেলে দ্রুত বাইক নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যায়।
বেশ কিছুক্ষণের মাঝে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায়। সেখানে গিয়ে দ্রুত খোঁজ নেয়, নাছিম আছে, না-কি চলে গিয়েছে। গেলেও কোথায়? তাকে তো বেশিক্ষণ হলো মেসেজ দেয়নি। তাহলে এখানে থাকার কথা।
কিন্তু সে কোনো খোঁজ-ই পেলনা।
বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বেশ কয়েকটা সিগারেট পোড়ায়। মাইরার সাথে ওভাবে কথা বলায় নিজের উপর রা’গ লাগছে। মারার জন্য হাত-ও উঠিয়েছিল ভাবতেই রেগে সামনে একটা গাছে পাঞ্চ মারে। অ’স’হ্য লাগছে সব।
হাতের আধখাওয়া সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে বাইকে উঠে বসতে গিয়েও শুদ্ধকে দেখে ভ্রু কোঁচকালো। এগিয়ে গিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– এখানে কি করছিস?
শুদ্ধ ঝাঁকি দিয়ে বুকে থুতু দেয়। ইরফানকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
– তুই এখানে?
ইরফান সরু চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করে,
– নাছিম কোথায়?
শুদ্ধ ঢোক গিলল। মাথা চুলকে বলে,
– আমি তো জানিনা। কেন?
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে শুদ্ধকে দেখে। শুদ্ধ আমতা আমতা করে বলে,
– আরে ব্যবসার কাজে আমার এদিকে মাঝে মাঝেই আসা হয়, জানিস-ই তো। তুই কানাডা থেকে আসলে তখনও তো আমার সাথে তোর এখানে দেখা হলো, মনে নেই?
ইরফান কিছু বললো না। চুপচাপ তার বাইক বসে বাইক স্টার্ট দেয়। শুদ্ধ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
রাত তখন প্রায় ১ টা।
ইরফান ঘরে প্রবেশ করে বেডের উপর নজর করলে দেখল মাইরা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। ইরফান
আগে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নেয়। এরপর কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুত পায়ে এসে মাইরার পাশে শুয়ে মাইরাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। মাইরা ঘুমের ঘোরে একটু নড়েচড়ে ওঠে। ইরফান মাইরার মুখের দিকে তাকালো। মেয়েটি কেঁদেকেটে মুখের কি অবস্থা করেছে! ইরফানের নিজেকে অসহায় লাগলো। ডান হাত মাইরার গালে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– স্যরি!
এরপর মাইরাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে
বিড়বিড় করে বলে,
– আমার বার্ডফ্লাওয়ার আমি ছাড়া সবার মন থেকে নিঁখুতভাবে মুছে যাক।
মাইরার ঘুম ভেঙেছে। কিন্তু গাট্টা মেরে পড়ে আছে। কথা বলবে না এই লোকের সাথে।
ইরফান মাইরাকে আলগা করে মাইরার কপালে ঠোঁট দাবিয়ে চুমু আঁকে। এরপর ডান হাত মাইরার গালে রেখে মাইরার ঘুমন্ত মুখপানে দৃষ্টি রেখে অভিযোগের সুরে বলে,
– তুমি শুধু আমার অনুভবে কেন সীমাবদ্ধ থাকলে না বার্ডফ্লাওয়ার?
অন্যের হৃদয়ে তোমার অবয়বের ছায়া থাকলে, আমার প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে ব্য’থার কাঁটা বিধে যায়।
এটা কি আমার অপরাধ?
ইরফানের এমন আবেগমাখা কথায় মাইরা চোখ মেলে তাকায়। ইরফানের সাথে চোখাচোখি হয়। ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মাইরার দিকে। এই স্টুপিট জেগে জেগে ঘুমের ভান করছিল?
মাইরা ইরফানকে ঠেলে উল্টো ঘুরে শোয়। ইরফান বিরক্ত হয়। মাইরাকে টেনে তার দিকে ফেরায়। মাইরা কোনো কথা বলেনা। ইরফানকে ঠেলে নিজেকে ছাড়াতে চায়। ইরফান জোর করে মাইরাকে জাপ্টে ধরে।
মাইরা মোচড়ামুচড়ি করে। ইরফান ধমকে বলে,
– স্টুপিট কি প্রবলেম?
মাইরার চোখ ভরে ওঠে। লোকটা আবারও তাকে ধমকাচ্ছে। ইরফান মাইরাকে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– ওই কাগজের কতটুকু পড়েছিলে?
মাইরা কথা বলল না। ইরফান বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেও মাইরা একটা টুঁ-শব্দটিও করল না। ইরফান রে’গে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– কথা বল স্টুপিট গার্ল। নয়তো থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোর।
মাইরা এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ইরফান চোখ বুজল। ডান হাতে কপাল ঘষে বারকয়েক। নিজেকে শান্ত করে লম্বা শ্বাস টানে। এরপর মাইরার গালে হাত দিয়ে নরম কণ্ঠে বলে,
– রা’গা’চ্ছ কেন আমায়? কথা বলো।
মাইরা চোখ বুজে রেখেছে। বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে অশ্রু গড়ায়। ইরফান অসহায় চোখে চেয়ে বলে,
– স্যরি বউ! কথা বলো।
এবার মাইরা চোখ মেলে তাকায়। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। ইরফান দু’হাতে মাইরার ভেজা চোখ মুছে দেয়। মৃদুস্বরে বলে,
– ডোন্ট ক্রাই। তখন রে’গে ছিলাম।
মাইরা নাক টানে। ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়ায় চুমু খেয়ে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে,
– কতটুকু লেখা পড়েছিলে বলো?
মাইরা ভাঙা গলায় বলে,
– দু’লাইনের মতো। তারপর তো আপনি নিয়ে নিলেন।
ইরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মাইরা পড়েনি ভেবে। দু’হাতে মাইরাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
– স্যরি! কি চাই তোমার? নেক্সট ডে এনে দিব।
মাইরা নাক টেনে বলে,
– আমাকে ছাড়ুন, আমি ঘুমাবো।
ইরফান হাতের বাঁধন আরও শক্ত করল। মাইরার অভিমানী কণ্ঠে মৃদু হাসে। মাইরার গলায় শব্দ করে চুমু এঁকে মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে গেয়ে ওঠে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৪
জানিনা কী করে, তুমি এসে হৃদয়ে
খুলে দিলে সব জানালা
তোমার-ই উষ্ণ হাতে
তোমার পথে আমি দাঁড়িয়ে থাকি
একটু সময় করে কী
নিয়ে যাবে আমাকে?