প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৯
Drm Shohag
তারেক নেওয়াজ ছেলের পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। পিছনে বাঁধা হাত শিথীল করে দু’পা এগিয়ে এসে বললেন,
“ইরফান ভেতরে এসো। তোমার সাথে আমার কথা আছে। ইম্পর্ট্যান্ট টপিক।”
ইরফানের দৃষ্টি শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ঢোক গিলল। মেঝে থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। দুই হাতের গোটানো শার্ট কব্জি পর্যন্ত নামিয়ে নিল। ইরফানের দিকে চেয়ে ডান হাতে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করল। তার উদ্দেশ্য সে এখন আবুল সাজতে চাইছে। আর মাইরা তাকে দেখে বলবে,
‘অসম্ভব, এই আবুল কে আমি কিছুতেই বিয়ে করব না।’
তারেক নেওয়াজ বিরক্ত হয়ে বলল,
“ইরফান আমি তোমাকে কিছু বলছি।”
ইরফান শুদ্ধর থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তার বাবার দিকে ফেরায়। গম্ভীর গলায় বলে,
“আ’ম নট ইন্টারেস্টেড।”
কথাটা বলে এক সেকেন্ডও সেখানে দাঁড়ায় না। গটগট পায়ে চলে যায়। পিছন থেকে তারেক নেওয়াজ ডাকে,
“ইরফান, তুমি আর কত অ’ভদ্রতার পরিচয় দিবে? আমার কথা শুনতে হবে তোমাকে। ইরফান দাঁড়াও।”
ইরফানের হেলদোল নেই। তারেক নেওয়াজ তীব্র বিরক্ততে চোখমুখ কোঁচকালেন। শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার ভাইকে বলে দিও। আর তুমি প্রিপারেশন নাও। ডিভোর্সের ব্যাপার আমি দেখছি। তুমি বিয়ের প্রিপারেশন নিলেই হবে।”
শুদ্ধ কাঁদোকাঁদো মুখ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রান্নাঘর থেকে ইনায়া মাইরার জন্য খাবার হাতে নিয়ে আসে। ইনায়াকে দেখে শুদ্ধ ইনায়ার সামনে দাঁড়িয়ে গেলে ইনায়া ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে যায়। মাথা তুলে শুদ্ধ কে দেখে বলে,
“তুমি কখন আসলে?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শুদ্ধ ইনায়ার বা হাতে ছোট গোল প্লেটে কয়েকটা মিষ্টি দেখল, ডান হাতে পরোটা।
শুদ্ধ ডান হাতের শার্ট গুটিয়ে একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে পুড়লো। ইনায়া শুদ্ধর দিকে রেগে তাকায়। শুদ্ধ মুখেরটা শেষ করে দ্বিতীয় বার নিতে গেলে ইনায়া পিছন দিকে সরে গিয়ে তার হাত সরিয়ে নেয়। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“মেহমান আসলে যে খাতির করতে হয়, তা তো কোনো জন্মে করলি না। নিজে নিজে আপ্যায়ণ নিচ্ছি তাও দিচ্ছিস না। ঘষেটি বেগম এর মতো আচরণ কম করে কর। বেয়া’দব।”
ইনায়া বিরক্ত হয়ে বলে,
“এটা মাইরার খাবার। তুমি বসো। তোমাকে দিচ্ছি।”
এটা বলে শুদ্ধর পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে শুদ্ধ আরেকটা মিষ্টি টুপ করে তার মুখে পুড়ে নেয়। ইনায়া রে’গে তাকালে শুদ্ধ মুখের মিষ্টি শেষ করে হেসে একটু গলা উঁচিয়ে বলে,
“দু’দিন পর ও আমার বউ হবে, তাই আগে থেকে ভাগ বসাচ্ছি, বুঝলি গাঁধা?”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মানে?”
শুদ্ধ ইনায়ার হিজাবে ডান হাত মুছতে মুছতে বলে,
“আগে বল, এই বাসায় কি কাহিনী ঘটেছে? ইরফান আর ওই মাইরা মেয়েটার মাঝে?”
ইনায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“ভাইয়া মাইরাকে আবার মেরেছে।”
শুদ্ধ অবাক হলো না। এটাই আন্দাজ করেছিল। তাদের সোজা বেশ অনেকটা দূরে ইরফানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল শুদ্ধ। গলা উঁচিয়ে হেসে বলল,
“মাইরা আমার বউ হতে যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই। তোর ভাই ডিভোর্স দিয়ে দিবে ওকে।”
ইনায়া অদ্ভুদ চোখে শুদ্ধর দিকে তাকালো। অবাক হয়ে বলল,
“তোমার মাথা আছে না গেছে?”
শুদ্ধ ইরফানের পিছন অবয়বের দিকে তাকায় আরেকবার। ইনায়ার কপালে একটা টোকা দিয়ে হেসে বলে,
“কানি দেখ, মাথা মাথার জায়গায়-ই আছে। তুই চোখের ডক্টর দেখা। আমার বিয়েতে তোকে অনেক কিছু খাওয়াবো, একদম কিপ্টামি করব না।”
এটা বলে সে ইরফানের দিকে এগিয়ে যায়। ইনায়া তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। চিন্তিত মুখে ধীরপায়ে এগিয়ে যায় মাইরার ঘরের দিকে।
শুদ্ধ ইরফানের পাশে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“এখানে কি করছিস?”
কথাটা বলে সে নিজেও দেখাও চেষ্টা করল, তার আগেই ইরফান শুদ্ধর কলার শক্ত হাতে চেপে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে যায়। শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
“আরে ছাড়, ছাড়। আমি নিজেই যাচ্ছি।”
ইরফান ছাড়লো না। উল্টে আরও শক্ত করে কলার চেপে দৃষ্টি সামনে রেখে পায়ের গতি বাড়ালো।
ইরফান সরে গেলে ইনায়া সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। ঘরের দরজা একদম খোলা। সে নিজেই এভাবে রেখে গিয়েছিল হয়তো মনের ভুলে।
মাইরা এদিক ফিরে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়েছে। ঘাড় বাঁকিয়ে ইরফান আর শুদ্ধর দিকে তাকালো। ইরফান এখানে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল, ইনায়া খেয়াল করেছে। কি যে, তার ভাইয়ের হাবভাব বোঝা যায় না।
অতঃপর সে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। হাতের প্লেট রেখে মাইরার পাশে বসে মাইরাকে ডাকে। এটুকু সময়ের মাঝেই মেয়েটা ঘুমিয়েছে?
ইনায়ার ডাকে মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। ধীরে ধীরে উঠে বসে। দু’হাতে মুখে হাত বুলিয়ে এলোমেলো চুলগুলো খোঁপা করে নেয়।
“তোমার শরীর উইক লাগছে মাইরা?”
মাইরা হেসে বলে,
“না আপু, ঠিক আছি। মাথা ব্য’থা করছিল, তাই একটু চোখ লেগেছিল।”
ইনায়া পাশ থেকে প্লেট নিয়ে মাইরার সামনে ধরলে মাইরা পরোটা আর মিষ্টি দেখে হেসে বলে,
“এই খাবার তো আমার ফেভরিট আপু।”
ইনায়া মৃদু হেসে বলল,
“আমি জানি।, তুমি বলেছিলে।”
মাইরা একবার মুখে নেয়, মুখের খাবার গিলে নিয়ে বলে,
“আচ্ছা আপু, তোমাদের বাগানে অনেক সবজি দেখেছিলাম, ফুল, ফলের গাছও ছিল,, কিন্তুু করলার গাছ নেই কেন?”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কারণ এই বাসায় করলা খাওয়ার সদস্য নেই। ওই অখাদ্য কে খায়?”
মাইরা হেসে বলে,
“অখাদ্য কেন বলছো? করলা আমার অনেক মানে অনেক ফেভরিট।”
ইনায়া অবাক হয়ে মাইরার দিকে তাকায়। গালে হাত দিয়ে বলে,
“করলা তোমার এতো পছন্দ? কিন্তুু তোমার মুখ থেকে তো সবসময় মধু ঝরে। আর ওদিকে আমার ভাইয়া করলার তরকারি যে টেবিলে থাকে, সেই টেবিলে ভাইয়া খেতেই বসে না। ব্যাপার টা তো পুরো উল্টে গেল।”
মাইরা হেসে বলে,
“তোমার ভাই একটা জ’ল্লা’দ বুঝলে? যারা জ’ল্লা’দ হয়, তাদের করলা খাওয়া লাগে না। এমনিই জ’ল্লা’দপনা করে।”
ইনায়া মৃদু হাসল। কিছু বলল না। মাইরা খাওয়া শেষ করে ব্য’থার ওষুধ খেয়ে একটা টাফলিন খেয়ে নেয়।
ইরফান তার পার্কিং করে রাখা গাড়ির পাশে এসে দাঁড়ায়। শুদ্ধর কলার থেকে হাত সরিয়ে নেয়। এরপর শুদ্ধর সামনে দাঁড়িয়ে শুদ্ধর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে প্যাণ্টের পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ঠোঁটে চেপে প্যাকেটটা আবার পকেটে রাখে। সিগারেট ঠোঁটের ফাঁকে রেখেই গম্ভীর স্বরে বলে,
“লাইটার?”
শুদ্ধ পকেট থেকে লাইটার বের করে এগিয়ে দেয় ইরফানের দিকে। ইরফান লাইটার নিল। দৃষ্টি তার শুদ্ধর উপর, নড়চড় নেই। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি শুদ্ধর পানে রেখে ডান হাতের সাহায্যে লাইটার দিয়ে সিগারেটে আগুণ ধরালো।
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান লাইটার ডান হাতের মুঠোয় চেপে বাম হাত উঠিয়ে সিগারেট ধরল। শুদ্ধর থেকে দু’পা পিছিয়ে গিয়ে দেদারসে সিগারেট ফুঁকতে লাগলো। শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমাকে কি সিগারেট খাওয়া শেখাতে চাইছিস? তোর চেয়ে কম খাই ঠিক আছে, কিন্তুু খাই, আর খেতেও পারি।”
ইরফান হ্যাঁ না কিছুই বলল না। চুপচাপ সিগারেট এর ধোঁয়া শূণ্যে উড়াতে লাগলো। শুদ্ধ আবারও বলে,
“তোর বাবা কি বলেছে শুনেছিস?”
ইরফান সিগারেট হাতে নিয়ে নাকমুখ দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“শুনেছি।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তোকে তো ঠাণ্ডাই লাগছে। এর মানে তোর মত আছে। তোর বউকে তাহলে আমাকে দিয়ে দিচ্ছিস?”
ইরফান শুদ্ধর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাঁকা চোখে সিগারেট এর দিকে তাকায়। এরপর আবারও শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“নিবি তুই?”
শুদ্ধ হেসে নামিয়ে রাখা শার্ট এর হাতা সুন্দর করে গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে। মাথার এলোমেলো চুলগুলোর ভাঁজে হাত চালিয়ে গুছিয়ে নিয়ে বলে,
“তুই দিলে নিব না কেন? জাহিদ বলেছিল মাইরা একটা পুতুল। মিথ্যা বলেনি। ও আসলেই একটা পুতুল।”
ইরফান শুদ্ধর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে, সিগারেটে আরও দু’তিনবার টান দেয়। এরপর বামহাতে সিগারেট নিয়ে ডান হাতের মুঠোয় থাকা লাইটারের সাহায্যে আধখাওয়া সিগারেটে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আগুন ধরায়।
শুদ্ধ মিটিমিটি হাসছে। গতকাল ডিভোর্স এর কথা বলায় যা রাগ দেখালো, আজ এর চুপ থাকাটা শুদ্ধ মানতে পারছে না। তাই একটু বাড়িয়ে বলে ইরফানকে দেখতে চাইছে। ভাবনার মাঝেই ইরফান এগিয়ে এসে দাঁড়ায় শুদ্ধর সামনে।
শুদ্ধ নিজেকে স্বাভাবিক করে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“পুতুলটাকে সারাদিন মারিস, তার চেয়ে বরং তুই ডিভোর্স টা দিয়ে দে, আমি ওকে বিয়ে করে আদ…..”
লাইনটা শেষ করার আগেই ইরফানের বাম হাতের মুঠোয় রাখা আগুন ধরানো সিগারেট শুদ্ধর ঠোঁটে চেপে ধরে। শুদ্ধ ছিটকে সরে যায় দু’পা। ইরফান তার বাম পা শুদ্ধর পিছনে দিলে শুদ্ধ ঠাস করে পড়ে যায় ইরফানের পায়ের সাথে বেজে।
ইরফান বাম হাঁটু মাটিতে ঠেকিয়ে ডান হাঁটু কিছুটা উঁচু করে শুদ্ধর ঠোঁটে আবারও জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে। শুদ্ধর মাথা মাটির সাথে লাগানো। ছেলেটা আর নড়তেও পারছে না। ইরফান রক্তলাল চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ইরফানের দু’ঠোঁটের উপর জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে রাখে। শুদ্ধ কেমন দাপিয়ে ওঠে। মনে হচ্ছে তার ঠোঁটে কেউ রান্না বসিয়েছে। হাত দিয়ে ইরফানকে ধাক্কাও দিল খানিক। ছেলেটাকে একচুল সরাতে পারল না।
মিনিট দুই পরে ইরফান হাত সরিয়ে নেয়। শুদ্ধ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বুজে নেয়। পোড়া ঠোঁটজোড়ায় হাত বোলায়। ইরফান দাঁড়িয়ে যায়। দু’হাত প্যাণ্টের পকেটে রেখে পা ফাঁক করে দাঁড়ায়। খুবই সামান্য ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। কয়েক মিলি সেকেণ্ড এর মাঝে তা মিলিয়ে চোখমুখ শক্ত করে রাগান্বিত কণ্ঠে বলে,
“ফরচুনেটলি, ইউ আর মাই কাজিন। আদারওয়াইস, ইউ উড বি ফিনিশড্।”
কথাটা বলে ইরফান কয়েক পা ডান দিকে গিয়ে তার গাড়িতে উঠে বসে।
শুদ্ধর ইচ্ছে করল এর ভাই নামক শত্রুকে পঁচা পানিতে ডোবাতে। তার মন-মানুষ থাকতে সে ওই মেয়েকে বিয়ে করবে কোন দুঃখে? চাইল এর ভাব বুঝতে, কিন্তুু হয়ে গেল, সাক্ষাৎ ভিলেন।
একটু পর ধীরে ধীরে উঠে বসল। তারেক নেওয়াজ তখন বাইরে বেরিয়েছে। শুদ্ধকে গাড়ি পার্কিং লটে এভাবে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বলল,
“তুমি এখানে বসে কি করছ? আজ শুধু মাটিতে বসছ কেন? ঘরে যাও।”
শুদ্ধ মাথা নিচু করে দাঁত কিড়মিড় করল। এই দু’টো বাপ ব্যাটা তাকে কি যে পেয়েছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গা ঝেড়ে বলল,
“আসছি মামা, ভার্সিটির লেট হয়ে যাবে নয়তো।”
এটা বলে ইরফানের গাড়ির দিকে তাকায়। ইরফান গাড়ি স্টার্ট দেয়নি এখনো। তার জন্যই দেয়নি হয়তো। শুদ্ধ দ্রুত পায়ে ইরফানের পাশের সিটে বসে। তার গাড়িতে আর বসল না। ড্রাইভ করার ইচ্ছে নেই। ঠোঁট দু’টো জ্বলছে। শুদ্ধ বসার সাথে সাথেই ইরফান গাড়ি স্টার্ট দেয়।
শুদ্ধ চোখ বুজে বলে,
“আমি তোর ডিভোর্স করাতাম না।”
ইরফান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে গম্ভীর স্বরে বলে,
“জানি।”
শুদ্ধ রেগে বলল,
“তো আমাকে ভিলেন ভাবার কি প্রয়োজন ছিল?”
“যে প্রয়োজনে তোর অন্যের বউকে বিয়ে করার স্বাদ জেগেছিল।”
শুদ্ধ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“মেয়েটাকে নিজের ঘরে নিয়ে যা এবার। আর আমায় উদ্ধার কর তোদের বাপ ছেলের মাঝ থেকে।”
ইরফান স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“আই ডোন্ট লাইক দ্যাট গার্ল।”
শুদ্ধ অদ্ভুদভাবে তাকালো ইরফানের দিকে। ঠোঁটের উপর বামহাতের দু’আঙুল রাখল। ভাবছে তার এই অবস্থা করল কেন, হিসাব তো মিলছে না। রেগে বলল,
“মশকরা করছিস আমার সাথে? আমার বউ এর প্রাথমিক সম্পদ পুড়িয়ে বলছিস, তুই মাসুম।”
ইরফান কিছু বলল না। গম্ভীর মুখে সামনে দৃষ্টি রেখে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যায়। কপালে অসংখ্য বিরক্তর ভাঁজ। শুদ্ধ বিরক্তি নিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ভার্সিটির প্রাঙ্গণে পৌঁছে ইরফান গাড়ি পার্কিং লটে সাইড করে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। চোখ বুজে বার কয়েক শ্বাস ফেলে এগোয় অফিস-রুমের দিকে।
শুদ্ধ পিছন পিছন আসে ইরফানের। কয়েক পা দ্রুত ফেলে ইরফানের পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“কিছু বলছিস না কেন? এসব কি খাপছাড়া ব্যবহার? আমি কি মাই….”
ইরফান ডান হাতের শার্ট কনুই এর উপর পর্যন্ত গুটালো খানিকটা। শুদ্ধ এটা দেখে জিভ গুটিয়ে নেয়। সাথে দাঁড়িয়ে যায়। আর এগোয় না। কি জানি ভাই যদি মার টার খায়। এর হাত আবার বেশি-ই চলছে ইদানিং। মার খেলে স্টুডেন্ট দের সামনে মান-ই’জ্জ’ত কিছু থাকবে না।
শুদ্ধ দাঁড়ালেও ইরফান দাঁড়ায় না। এগিয়ে যায়, তবে তার গম্ভীর স্বরে ভেসে আসে কিছু শক্ত কথা,
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
শুদ্ধ ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। ইরফানের বাবা বলছে বিয়ের প্রিপারেশন নিতে, সে প্রিপারেশন নিলে ইরফান এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সে কোথায় যাবে? আর তার বউ এর কি হবে? কবুল বলার আগেই এই বাপ ছেলের জন্য তার হার্ট-অ্যাটাক ফ্যাটাক হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। বাম হাতে পোড়া ঠোঁট বোলায়, ডান হাত বুকের বা পাশে রাখে। মুখটা অসহায়।
সামনে এক মেয়ের উপর চোখ পড়লে ভ্রু কুঁচকে তাকায় শুদ্ধ মেয়েটার দিকে। মেয়েটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কাছে এসে শুদ্ধ কে একটা সালাম দিল। শুদ্ধ নিজেকে স্বাভাবিক করে পকেটে হাত গুঁজে স্টুডেণ্ট এর সালাম এর উত্তর নেয়। মেয়েটা পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে শুদ্ধ গম্ভীর গলায় বলে,
“ওয়েট!”
মেয়েটি পিছন ফিরে তাকালে শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তুমি আমার দিকে এতোক্ষোণ তাকিয়ে ছিলে কেন? হোয়াই? আন্সার মি!”
মেয়েটা বোকা চোখে শুদ্ধর দিকে তাকায়। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। মাথার জর্জেট ওড়নাটা আরেকটু সামনের দিকে টেনে নিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“স্যরি স্যার, এমনিই।”
শুদ্ধ রেগে বলে,
“অন্যের বউ এর হকের দিকে নজর দিলে কানের গোড়ায় একটা থা’প্প’ড় দিয়ে সিধে করব, বেয়া’দব। পড়াশোনা করে টিচারদের সম্মান করতে জানে না। ভুলভাল ইঙ্গিত দেয়।”
মেয়েটা শুদ্ধর কথায় রেগে যায়। মাথা নিচু তার। ডান হাতের পাঁচ আঙুল দলাপাকায়, এটা তাদের স্যার না হলে এক্ষুনি একটা থা’প্প’ড় নিশ্চিত ছিল এই ছেলের গালে।
শুদ্ধ ধমকে বলে,
“আউট!”
মেয়েটা ধমক খেয়ে কেঁপে ওঠে। দ্রুত সেই স্থান প্রস্থান করে। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে দেখল মেয়েটার প্রস্থান। এরপর সেও উল্টো ঘুরে অফিস-রুমের দিকে এগোয়।
মাইরা বসে বসে বই পড়ছিল। তার একমাস পর এসএসসি পরীক্ষা। মাঝে দু’দিন একদমই পড়া হয়নি। আজ রাতে না ঘুমিয়ে মেয়েটা পড়ছে মন দিয়ে। ঘাড় বাঁকিয়ে একবার ইনায়ার দিকে তাকালো। ইনায়া ঘুমে কাঁদা। মাইরা আজ রাত জাগতে পারছে কারণ দিনে অনেক ঘুমিয়েছে, তাই প্রবলেম হচ্ছে না। দেয়াল ঘড়িতে দেখল রাত ১:৩০। চেয়ার থেকে উঠে বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। টেবিলের উপর রাখা জগ তুললে দেখে জগ খালি। মাইরা বিরক্ত হয়। তেষ্টা পেয়েছে তার।
জগ টা টেবিলের উপর রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল পানি আনার জন্য। ডাইনিং এ গিয়ে চেয়ারে বসে তৃপ্তি করে পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ালো। এরপর ঘরের দিকে যেতে গিয়ে কি মনে করে থেমে যায়। কিছু একটা ভেবে তার ঘরে দৌড়ে যায়। ড্রয়ার থেকে একটা ছোট কেচি বের করে। কেচিটার দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসে।
সারাদিন ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে শরীর একটু ভালো হয়েছে, ওমনি লাফঝাঁপ শুরু করেছে মেয়েটা। একবার ইনায়ার দিকে তাকালো। ইনায়ার নড়চড় নেই। মাইরা ডান হাতে কেচি ধরে, অপর হাতে তার ফোনের ফ্লাস জ্বালায়। এরপর ঘরের দরজা চাপিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর ফোনের ফ্লাস সামনের দিকে রেখে ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে দোতলায় যাওয়ার জন্য।
ইরফানের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাইরা। দরজা চাপানো, কিন্তুু ভেতর থেকে লাগানো নয়। মাইরা দরজাটা একটু ফাঁক করলো। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাইরার মনে হলো এই ঘর একটা ভুতুড়ে ঘর। পা দিয়ে একটু একটু করে দরজা ঠেলে মাইরা ভেতরে উঁকি দেয়। মেয়েটা ঢোক গিলে। এতো অন্ধকার করে রাখায় মাইরার বিরক্ত লাগলো। তারা কি সুন্দর জিরো বাতি জ্বালিয়ে ঘুমায়। বিড়বিড় করল,
‘এই লোকটা আসলেই অ’টি’স্টিক।’
দুরুদুরু বুকে পা টিপে টিপে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। ফোনের আলো সামনের দিকে ধরলে চোখে পড়ে বিছানায় কেউ শুয়ে আছে উল্টো হয়ে। মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
একটু শ্বাস নিয়ে আবারও আলতো পা ফেলে এগিয়ে যায়। একদম বিছানার কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ইরফানের পিঠের দিকে লাইট তাক করে রাখে।
ইরফান খালি পিঠ মাইরার চোখে পড়ে। মাইরা ঢোক গিলে। সে ভাবলো এই লোক ফর্সা না-কি তার ফোনটা একটু বেশি-ই উন্নতমানের তাই এমন লাগছে।
ইরফান কোমড় পর্যন্ত কাঁথা ঠেনে উল্টো হয়ে শুয়েছে, দু’হাত উপর দিকে উঠিয়ে মাথা ডান দিকে ফিরিয়ে রেখেছে।
মাইরা ইরফানকে দেখা রেখে ইরফানের মাথার দিকে নজর দেয়। ঝাঁকরা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। মাইরা আবারও একটু হাসে। মনে মনে বিড়বিড় করে,
‘এইবার বুঝবে ঠ্যালা, আমাকে কত মার মারলো। গালটা সরকারি পেয়েছে, এখন তোমায় টাক করিয়ে মজা বোঝাবো, হুহ।’
হাতের ফোন মুখের সাহায্যে ধরে হালকা নিচু হয়। কাঁপা হাত দু’টো এগিয়ে নেয় ইরফানের মাথার দিকে। বাম হাতে কয়েকটা চুল ধরে, ডান হাতে কেচি। দু’হাত অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে, ভয়ে হয়তো। মাইরা ঢোক গিয়ে কেচিতে চাপ দিতে গেলে ইরফান উল্টো ঘুরে তাকায়। মাইরা ঠাস করে পড়ে যায় বিছানায়, হাতের কেচির কোণা তার গলায় এসে বিঁধে। মাইরা ব্য’থা, ভ’য় সবমিলিয়ে চিৎকার দিতে চায়, তার আগেই ইরফান তার শক্ত ডানহাতে মাইরার মুখ চেপে ধরে।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ফোন যে কোথায় পড়েছে, লাইট দেখা যায় না। পুরো ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাইরার পুরো শরীর কাঁপছে। নড়তেও পারছে না। মনে হচ্ছে তার উপর ১০০ কেজি বালির বস্তা রেখেছে, আর তাকে বোবা বানিয়ে দেয়া হয়েছে মুখ চেপে।
মাইরা ঘরে পা রাখার পর পর ই ইরফান বুঝেছিল ঘরে কেউ এসেছে। সে তো ঘুমায়-ই নি। কিছুক্ষণ আগে শুয়েছে, যা একটু চোখ লেগে এসেছিল, মাইরার আগমণে তাও হাওয়া হয়ে গিয়েছে।
তাদের বাড়িতে যে চোর আসবে না তা সবার জানা। এই বাঁদর ছাড়া আর কেউ এভাবে আসবে না ইরফান তাও হয়তো বুঝেছিল, তাই চুপচাপ শুয়ে ছিল এ কী করে দেখার জন্য।
ইরফান তার বাম দিকে হাত বাড়িয়ে বেডসাইড ল্যাম্প জ্বালায়। ঘরজুড়ে স্বল্প আলো ছড়িয়ে পড়ে। মাইরা চোখের পাতা পিটপিট করে তাকায়, তার উপর ইরফানকে দেখে ঢোক গিলে। হাত নাড়াতে চায়, তবে পারে না। মাইরার ভয়ংকর কান্না পাচ্ছে।
ইরফান শক্ত কণ্ঠে বলে,
“এখানে কেন এসেছ?”
মাইরা ঢোক গিলে একটু নড়ার চেষ্টা করল, পারল না। অসহায় চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। আবছা আলোয় ইরফানের শক্ত মুখটা দেখে মাইরার আত্মার পানি শুকিয়ে যায়। মনে মনে বলছে,
‘একবার এই জ’ল্লা’দের হাত থেকে বাঁচিয়ে দাও, এর চুল মাটিতে ঠেকে কেশবতী হয়ে গেলেও আর আসব না।’
ইরফান আবারও শক্ত কণ্ঠে বলে,
“স্টুপিট, কেন এসেছ এখানে? হোয়াই?”
মাইরা কেঁপে ওঠে। চোখ দু’টো বুজে নেয়। আজ আর তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। ইরফান মাইরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলে মাইরা দ্রুত চোখ খুলে উঠতে নেয়, কিন্তুু সে তো শুধু মুখ ছাড়া পেয়েছে, ইরফান তার উপর থেকে একচুল সরেনি। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“বিশ্বাস করুন, আমি আপনাকে মানুষ বানিয়েই চলে যেতাম। ছেড়ে দিন প্লিজ!”
ইরফান রাগান্বিত স্বরে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা কেঁপে ওঠে। ইশ! ভুল জায়গায় সত্য কথা বলে ফেলেছে। মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“স্যরি স্যরি! আমি বলতে চাইছিলাম আমার খিদে পেয়েছে। ছেড়ে দিন দয়া করে।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার মুখের দিকে। গম্ভীর গলায় বলে,
“আমি খাবার নিয়ে বসে ছিলাম? ইডিয়েট!”
মাইরা এদিক-ওদিক চোখ ঘুরিয়ে চট করে বলে,
“আসলে আমি রান্নাঘর ভেবে এই ঘরে ঢুকে পড়েছি। আর এমন ভুল হবে না। সরুন দয়া করে।”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার মুখের দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মাইরা চোখ বুজে দোয়া পড়ছে। বাঘের থাবায় বন্দি সে, দোয়া ছাড়া আর কিছু মাথায় আসছে না। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে উঠে বসলে মাইরা দ্রুত শোয়া থেকে উঠে পড়ে।
গলার কাছের কেচি ঠাস করে পড়ে ইরফানের হাতের উপর। মাইরা সেসব দেখল না, তার ফোনের খোঁজও করল না। সব ভুলে সে শুধু এ ঘর থেকে বেরতে চায়। মেয়েটা বিছানা থেকে নেমে দৌড় দেয়ার জন্য এক পা বাড়ালে, ইরফান মাইরার হাত টেনে ধাক্কা দিলে মাইরা পিছন থেকে এসে ঠাস করে ইরফানের বুকে ধাক্কা খায়। ইরফান বাম হাতে মাইরার পেট পেঁচিয়ে ধরে।
মাইরা ভয়ে কাঁপছে। সে কি এই বাঘের থেকে ছাড়া পাবে না? সবাই তো ঘুমায়। বাঁচাবে কে তাকে?
ইরফান শক্ত কণ্ঠে বলে,
“আমাকে টাক করাতে এসেছিলে, শাস্তি না নিয়েই যাবে?”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। তার পেটে থাকা ইরফানের হাত দু’হাতে ঠেলে সরাতে চায়। পারে না, তবে হাল-ও ছাড়ে না। ইরফান ডান হাতে কেচি তুলে নেয়। মাইরার সামনে নিয়ে কয়েকবার নাড়ায় কেচি। এরপর গম্ভীর স্বরে বলে,
“তোমার চুল কে বাঁচাবে এবার?”
মাইরা কেঁদে দিয়ে বলে,
“না না আমার চুল কারবেন না। প্লিজ! আমার সাধের চুল। ছেড়ে দিন আমায়, আপনি কেশবতী হয়ে গেলেও আর তাকাব না আপনার চুলের দিকে। ছেড়ে দিন আমায়।”
ইরফান ছাড়লো না মাইরাকে। মাইরা উপায় না পেয়ে মাথা নিচু করে ইরফানের হাতে দাঁ’ত বসিয়ে দেয়। ইরফান শক্ত চোখে মাইরার পিঠে ছড়িয়ে পড়া চুলগুলোর দিকে তাকায়। মাইরা ইরফানের হাত কতক্ষণ যে কা’ম’ড়ে ধরে রাখল। ইরফানের কোনো হেলদোল নেই। মাইরার এতে রা’গ লাগলো। হাত থেকে দাঁত সরিয়ে হাতের উপর ঠোঁটজোড়া রেখেই
বিড়বিড় করল,
“উফ আল্লাহ! এই লোকটাকে এমন গণ্ডার বানিয়েছ কেন?”
ইরফান মাইরার পেট ধরে রাখা হাত শিথীল করলে মাইরা পড়ে যেতে নিলে ইরফান মাইরার চুলের গোছা ধরে মাইরাকে তার দিকে ফেরায়। মাইরা ব্য’থা পায়। কেঁদেকেটে বলে,
“ব্য’থা পাই আমি। ছাড়ুন বলছি। আর আপনার চুল কাটতে আসব না।”
ইরফান নিরব চোখে মাইরার মুখপানে চেয়ে। কিছুই বলে না। চুলের গোছা আরও খানিকটা শক্ত করে ধরে। মাইরার মাথা হেলে গিয়ে ইরফানের বুকে ঠেকে। ইরফান শক্ত গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, আউট।”
কথাটা বলে মাইরার চুল থেকে হাত সরিয়ে নেয়। হাতের কেচি ছুঁড়ে মারে। মাইরা ছাড়া পেয়েই দ্রুত ইরফানের থেকে সরে দাঁড়ায়। এক সেকেণ্ডও সময় ন’ষ্ট না করে দৌড় লাগায় ঘর থেকে বেরনোর জন্য। যাওয়ার সময় হাত লেগে একটা ফুলদানি ঠাস করে পড়ে যায়। মাইরা ভয়ে চেঁচিয়ে ওঠে। পিছন ফিরে তাকায় না। দ্রুত দরজার কাছে চলে যায়। দরজায় হাত রেখে একবার পিছন ফিরে রে’গে বলে,
“এই যে শুনুন, আমি সুযোগ পেলে ঠিক-ই আপনাকে মানুষ বানিয়ে ছাড়বো। এমন জঙ্গলি মানুষকে দেখলে যে কেউ ভ’য় পাবে।”
কথাটা বলেই দৌড় লাগায় আবার। ছাড়া পেয়ে সব বলা কথা ভুলে গিয়েছে। ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে মাইরার প্রস্থান দেখল। বিড়বিড় করল,
“স্টুপিট বাঁদর।”
মাইরা ঘর থেকে বেরিয়ে সামনে তার শ্বশুর কে দেখে থতমত খেয়ে যায়। তারেক নেওয়াজের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তিনি পানি নিতে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। উপরে শব্দ পেয়ে দ্রুত উপরে উঠে আসে। ইরফানের ঘর থেকে এতো রাতে মাইরাকে বের হতে দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছেন। যদিও এরা নামে স্বামী-স্ত্রী। কাজে তো নয়। তাছাড়া মাইরার চোখে পানি, দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা কেঁদেছে।
মাইরা দু’হাতে চোখ মুছে আমতা আমতা করে বলে,
“ঘুম পেয়েছে বাবা, যাই আচ্ছা?”
কথাটা বলে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে।
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৮
ওদিকে ইরফান বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। এই বাঁদরের জন্য আর দরজা খুলেও রাখা যাবে না। এগিয়ে এসে দরজা লাগানোর জন্য বাম হাত বাড়িয়ে দরজায় হাত রাখে, কিন্তুু সামনে চোখ পড়লে থেমে যায়।
দরজার সামনে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। ইরফান বাবাকে দেখে অবাক হয়। তারেক নেওয়াজ অদ্ভুদভাবে তাকিয়ে আছে ইরফানের দিকে। চোখ ঘুরিয়ে ইরফানের হাতে চোখ পড়লে আরও অবাক হয়। ইরফান বাম হাত এগিয়ে দিয়েছে দরজা লাগানোর জন্য। মাইরা বাম হাতেই কা’ম’ড় দিয়েছে একটু আগে। ফর্সা হাত হওয়ায় কা’ম’ড় এর লাল দা’গ টা তারেক নেওয়াজ এর চোখ এড়ালো না। তিনি অবাক হয়ে ইরফানের দিকে চোখ তুলে তাকায়।
ইরফানও বাবার দৃষ্টির মানে বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে।