প্রণয়ের অমল কাব্য সারপ্রাইজ পর্ব 

প্রণয়ের অমল কাব্য সারপ্রাইজ পর্ব 
Drm Shohag

রাত ১০ টার পর,
শুদ্ধ ফারাহ্’কে নিয়ে ইরফানদের বাড়ি এসেছিল। মাইরা শুদ্ধকে বলে, তাকে ইরফানের অফিসে নিয়ে যেতে। শুদ্ধ মাইরার কথা মেনে মাইরাকে নিয়ে ইরফানের অফিসে এসেছে। তার উদ্দেশ্য মাইরাকে ইরফানের কাছে রেখে ফারাহ্’কে নিয়ে রাতের শহর ঘুরবে।
শুদ্ধ ইরফানের অফিসের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মাইরা আর ফারাহ্’কে নিয়ে অফিসের ভেতর প্রবেশ করে। ইরফানের অফিসরুমে গিয়ে দেখল, ইরফান সেখানে নেই। শুদ্ধ ইরফানের পিএ-কে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, ইরফান মিটিংরুমে।
মাইরা শুদ্ধ’কে জিজ্ঞেস করে,

– ভাইয়া উনার মিটিং রুম কোনটা?
শুদ্ধ হেসে বলে,
– আজ দেখছি মাইরা আমার ভাইটাকে একটু বেশিই মিস করছে! ব্যাপার কি মাইরা?
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
– এমনিই।
শুদ্ধ ফারাহ্’র হাত ধরে ইরফানের মিটিংরুমের দিকে যেতে যেতে বলে,
– আমার ভাইবউয়ের থেকে একটু শেখো ফারাহ্। দেখেছ, কিভাবে স্বামীকে মিস করছে আমার একমাত্র ভাবীসাহেবা!
মাইরা ল’জ্জা পায়। কিন্তু কিছু বলল না। এদিকে ফারাহ্ শুদ্ধ’র হাতে একটা চিমটি কাটলে, শুদ্ধ ফারাহ্’র দিকে তাকায়। ফিসফিসিয়ে বলে,
– রাস্তাঘাটে এসব কি বাজে ইঙ্গিত দিচ্ছ ফারাহ্। ছ্যাহ! ঘরের ব্যাপার বাইরে ঘটাতে চাইছ! ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যাহ!
ফারাহ্ কটমট চোখে তাকায় শুদ্ধ’র দিকে। শুদ্ধ ফারাহ্’র দিকে চেয়ে মিটিমিটি হেসে এক চোখ টিপ দেয়। বা হাতে শার্টের কলার টেনে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– ভেবেই গরম লাগছে।
ফারাহ্ মাথা মিচু করে নিল। তাকাবেই না আর শুদ্ধ’র দিকে। বিড়বিড় করে,
– বে’হা’য়া লোক।
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
– শুধু ফারাহ্ পাখির।
ফারাহ্ মাথা নিচু করে রাখলো।
মিটিংরুমের সামনে এসে দাঁড়ায় শুদ্ধ। ফারাহ্’র হাত ছেড়ে বা হাতে রুমের দরজা ঠেলে খুলে ইরফানের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হেসে বলে,
– তুমি কি আর ইরফানের কোলে ওঠো না মাইরা?

মাইরা রে’গে তাকিয়ে আছে ইরফানের দিকে। ইরফান একদম তার সোজা চেয়ারে বসে অনবরত ইংলিশে কথা বলছে। প্রবলেম এটা নয়। প্রবলেম টা হলো, ইরফানের পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যে পারলে উরফানের কোলে উঠে বসবে এমন ভাব। আর ইরফান মেয়েটিকে কিছু বলছেও না।
মাইরা রা’গে দু’হাতে তার পার্স মোচড়ায়, যেন আজ এটা ছিঁড়ে তবেই দম নিবে।
পাশ থেকে শুদ্ধ দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলে,
– ক’ষ্ট পেও না মাইরা৷ ইরফান টা কেন যে এমন হয়ে গেল! তোমাকে কোলে নেয়ার কথা ভুলে গিয়ে আরেকজনকে কোলে বসার জায়গা করে দিচ্ছে! আমি তো ভাবতেই পারছিনা, ইরফান এমনটা কি করে করতে পারে! হাউ?
ফারাহ্ চোখ ছোট ছোট করে তাকায় শুদ্ধ’র দিকে। ইরফানের নামে কিসব বলছে! কিছু বলতে নিলে শুদ্ধ বলে,
– ফারাহ্ পাখি আর দু’মিনিট অপেক্ষা কর, তারপরেই তোমাকে আদ…….
ফারাহ্ শুদ্ধর হাত চেপে বলে ধরে রে’গে বলে,

– চুপ কর।
শুদ্ধ হাসল। এরপর মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার দৃষ্টি এখনো ইরফানের দিকে। মাইরা যে রে’গে’ছে, এটা মাইরার দু’হাতের দিকে তাকিয়েই বুঝল শুদ্ধ। অতঃপর গলা ঝেড়ে আবার-ও বলে,
– ইরফানের আশেপাশে মেয়েগুলো কত সুন্দর! তাইনা মাইরা? ইশ! ইরফানটা বোধয় তোমাকে ভুলেই গেল!
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে,
– ভুলে যাক। তাতে আমার কি?
মাইরার কণ্ঠে ইরফানের কথা থেমে যায়। দরজার দিকে তাকালে মাইরাকে দেখে ইরফানের কপালে ভাঁজ পড়ে। মাইরার রাগী দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়।
মাইরা আর এখানে দাঁড়ালো না। উল্টো ঘুরে ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে যায়।
মাইরাকে এভাবে যেতে দেখে ইরফান দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। কাউকে কিছু না বলে মিটিংরুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে ডাকে,

– মাই মিসেস?
মিটিংরুমে বসা সকলে ইরফানের দিকে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। মাইরাকে ইরফানের বউ হিসেবে চেনে না তারা। তাছাড়া ইরফানের মতো কাজের প্রতি এতো সিরিয়াস মানুষকে মিটিংরুম থেকে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে সকলে বেশি অবাক হয়েছে।
ইরফান মাইরার পিছু পিছু যায় আর মাইরাকে ডাকে,
– বার্ডফ্লাওয়ার, স্টপ।
মাইরা পায়ের গতি আরও বাড়ায়। ইরফান আরও দু’বার ডাকলো। কিন্তু মাইরাকে থামতে না দেখে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

– স্টুপিড গার্ল, স্টপ।
পিছন থেকে শুদ্ধ বলে ওঠে,
– এখানে এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে রেখে কার পিছনে ছুটছিস ইরফান?
শুদ্ধ’র কথায় ইরফান থেমে যায়। শুদ্ধ’র দিকে তেড়ে এসে দু’হাতে শুদ্ধ’র কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– ওকে এখানে কেন এনেছিস?
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
– তোর কু’কীর্তি দেখাতে।
ইরফান রে’গে বলে,
– হোয়াট?
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে গায়,

– গরম লাগে আমার রাত্রে,
শিহরিত ইরফানের সম্ভাবনাময় থা’প্প’ড়ে।
ইরফান রে’গে বলে,
– তোকে আমি ছাড়বো না।
এরপর দ্রুত উল্টো ঘুরে আবার-ও মাইরার পিছু যেতে নিলে, ইরফানের পিএ বলে,
– স্যার আপনার মিটিং টা……
ইরফান রে’গে তাকালে ছেলেটি ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
– বুঝেছি স্যার, মিটিং ক্যান্সেল।
ইরফান আর এখানে দাঁড়িয়ে সময় ন’ষ্ট করল না। দ্রুতপায়ে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে।
বাইরে বেরিয়ে এসে আশেপাশে মাইরাকে খুঁজলে পায় না। এদিক-ওদিক এলোমেলোভাবে মাইরাকে খুঁজে-ও না পেয়ে ইরফানের চোখেমুখে চিন্তা ভর করে। ঘড়িতে এখন ১০:৩০ প্রায়। ইরফান একবার ডাকে,
– বার্ডফ্লাওয়ার?
কোনো সাড়া না পেয়ে ইরফান দ্রুত গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। ডান হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে মাইরাকে কল দেয় বারবার। কল রিসিভ হয় না। ইরফান তার ফোন ছুড়ে ফেলে দু’হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরায় সাথে চোয়াল শ’ক্ত করে বিড়বিড় করে,
– একবার হাতের কাছে পাই, থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার। স্টুপিড!

শুদ্ধ ফারাহ্’কে নিয়ে অফিস থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ফারাহ্ শুদ্ধ’র দিকে চেয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,
– তুমি ভালো হবা না?
শুদ্ধ ফারাহ্’র দিকে চেয়ে অবাক হওয়ান ভান করে বলে,
– ইন্না-লিল্লাহ! তোমার চোখে তো মারাত্মক প্রবলেম হয়েছে পাখি। আমার মতো এতো ভালো মানুষকে তুমি আরও ভালো হতে বলছ! কালকেই তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব। নো চিন্তা বউ।
ফারাহ্ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– ইরফান ভাই আর মাইরার মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে দিলে কেন?
শুদ্ধ বা হাতে ফারাহ্’কে জড়িয়ে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হেসে বলে,
– কোথায় ঝামেলা লাগালাম? এটা ভালোবাসা বাড়ানোর মন্ত্র বুঝলে?
ফারাহ্ বলে,

– তোমার ফা’ল’তু মন্ত্রে মানুষের সংসারে আ’গু’ন লেগে যায়।
শুদ্ধ ফারাহ্’কে টেনে তার সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,
– আ’গু’ন তো আমার বুকে লেগেছে। এক্ষুনি বাসায় চলো। আ’গু’ন নেভাতে হবে।
কথাটা বলে শুদ্ধ ফারাহ্’র হাত ধরে তার গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলে ফারাহ্ অবাক হয়ে বলে,
– বাসায় যাবো মানে? তুমি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেনা? আর আমি ফুচকা খাবো।
শুদ্ধ গাড়ির দরজা খুলে ফারাহ্’র দিকে চেয়ে বলে,
– সব কালকে হবে। দ্রুত ওঠো।
ফারাহ্ অভিমানী চোখে তাকালো শুদ্ধ’র দিকে। কিছু না বলে শব্দ করে গাড়িতে উঠে বসল। শুদ্ধ একটু ঝুঁকে ফারাহ্’র সিটবেল্ট লাগিয়ে দিতে নিলে ফারাহ্ ঝাড়া মে’রে শুদ্ধ’র হাত সরিয়ে দিয়ে রে’গে বলে,
– লাগবে না।
এরপর ফারাহ্ নিজেই সিল্টবেল্ট লাগালো।
শুদ্ধ’র চোখেমুখে অসহায়ত্ব। বুঝল, বউ ক্ষেপেছে! সে ইরফানকে ডোজ দিল, সেই ডোজ ঘুরে তার দিকেই চলে এলো। এই ছিল কপালে!
শুদ্ধ গাড়ির দরজা আটকে আশেপাশে তাকিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে পেয়ে সেদিকে যায়। প্রায় পাঁচ মিনিটের মাথায় শুদ্ধ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে এসে বসে। বাম পা সিটের উপর তুলে ফারাহ’র দিকে ফিরে বসে। প্যাকেটটি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

– দই-ফুচকা এনেছি।
কথাটা শুনতেই ফারাহ্ সাথে সাথে শুদ্ধ’র দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে,
– আসলেই?
শুদ্ধ হেসে বলে,
– নাহ, নকলেই।
ফারাহ্ আবার-ও মুখ ফুলিয়ে বলে,
– তোমার নকল ফুচকা তুমি খাও।
শুদ্ধ একটু হাসল। প্যাকেট এর ভেতর থেকে ফুচকা বের করতে করতে বলে,
– খাচ্ছি তাহলে।
ফারাহ্ সাথে সাথে ছো মেরে শুদ্ধ’র হাত থেকে ফুচকার প্যাকেট নিয়ে বলে,
– তুমি এনে খাও। এই খাবার আমার স্বামী আমার জন্য এনেছে। অন্যের খাবারে নজর দেয়ার স্বভাব কোথায় পেয়েছ?
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকায় ফারাহ্’র দিকে। ফারাহ্ মিটিমিটি হেসে প্যাকেটের ভেতর থেকে ফুচকা বের করে মুখে দেয়।
শুদ্ধ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,

– ঠিকআছে, আমি অন্যের খাবারে নজর দিচ্ছি না। আমি বরং আমার পার্সোনাল খাবার খাওয়ার প্রিপারেশন নিই।
ফারাহ্ মুখে ফুচকা পুড়ে শুদ্ধ’র দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। শুদ্ধ হেসে বলে,
– আজ আমি সুন্দর বলে, বউ আমার থেকে চোখ সরাতে পারেনা।
ফারাহ্ মুখের ফুচকা গিলে বলে,
– কচুর মতো দেখতে তুমি।
শুদ্ধ হেসে বলে,
– তার মানে আমার ফারাহ্ পাখির কচু খুব পছন্দ। এজন্যই আমি কচুকে একদিন খেতে না পারলে সেই শোকে আমার ফারাহ্ পাখিটা নাকের পানি, চোখের পানি সব লবণ ভেবে খেয়ে ফেলে।
ফারাহ্ চোখমুখ কোঁচকালো। তবে কিছু বলল না।

ইরফান সারারাস্তা মাইরাকে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি চলে এসেছে। অথচ মাইরার দেখা নেই। রা’গে কপালের র’গ ফুলে উঠেছে। তবে রা’গের চেয়ে চিন্তা বেশি হচ্ছে। এতো রাতে এই স্টুপিড কোনদিকে চলে গিয়েছে কে জানে! ইরফান গাড়ি থেকে নেমে দ্রুতপায়ে বাড়ির সামনে এসে অনবরত কলিংবেল বাজাতে থাকে। এক সেকেন্ডের জন্য-ও থেমে নেই। প্রায় মিনিট দুই পর তারেক নেওয়াজ এসে দরজা খুলে দেয়। সাথে সাথে ইরফান বলে,
– ও কোথায়? ও কি বাসায় এসেছে?
তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– ও কে?
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– অলটাইলম তুমি তোমার বউকে খুঁজলে, আমি তোমার ছেলে হয়ে অভিয়েসলি আমার বউকেই খুঁজব! রাইট?
ইরফানের কথায় তারেক নেওয়াজ কেশে ওঠে। নিজেকে সামলে বলে,
– এতো পেঁচিয়ে কথা বলো কেন?
ইরফান উত্তর দেয়,

– মাই উইশ! ও কোথায়?
তারেক নেওয়াজ ছেলের উত্তরে বিরক্ত হলো।
সে বুঝল, ইরফান মাইরার কথা বলছে। মাইরা কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে এসেছে। ভদ্রলোক ভেবেছে, শুদ্ধ মাইরাকে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
তবে ইরফনের উদ্দেশ্যে বলে,
– তোমার বউ বাসায় নেই। কেন?
বাবার কথায় ইরফানের চোখেমুখে আরও চিন্তা ভর করে। ঢোক গিলল ছেলেটা। এতো রাতে তার বার্ডফ্লাওয়ার কোথায় গেল? খারাপ কিছু হলে, কথাটা ভাবতেই ইরফানের গলা শুকিয়ে আসলো। এখানে আর এক সেকেন্ড-ও না দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে দ্রুত কয়েক পা এগোলে পিছন থেকে তারেক নেওয়াজ বলে,

– আমার বউমা কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছে।
বাবার কথায় ইরফানের পা আবার-ও থেমে যায়। দ্রুত এগিয়ে এসে বলে,
– আর ইউ সিওর?
তারেক নেওয়াজ উত্তর দেয়,
– আমি-ই দরজা খুলে দিয়েছি।
মাইরা ঠিক আছে জেনে ইরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। অতঃপর রে’গে বলে,
– ফার্স্টে মিথ্যা বললে কেন?
তারেক নেওয়াজ ছেলের মতোই ত্যাড়াভাবে সহজ উত্তর দিলেন,
– মাই উইশ!
ইরফান বিরক্ত হয়। তবে কিছু বলল না। বাবাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। বড় বড় পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।

ইরফান ঘরে এসে মাইরাকে দেখতে না পেয়ে বিরক্তির মাত্রা বেড়ে যায়। বেডের উপর মাইরার পার্সসহ ওড়না দেখল। ভেতরের রুমের দরজা ভিড়ানো দেখে বুজল, মাইরা পাশের রুমে গিয়েছে।
ইরফানের প্রচন্ড রা’গ লাগছে। ইচ্ছে তো করছে, মাইরার দু’গালে বেহিসাব থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিতে। বিড়বিড় করল,
– স্টুপিড গার্ল।
ইরফান নিজেকে শান্ত করতে আগে ওয়াশরুমে গেল শাওয়ার নিতে। ঝটপট শাওয়ার নিয়ে প্রায় মিনিট পাঁচ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে ইরফান। মাথা আগের চেয়ে ঠান্ডা হয়েছে। রা’গ পড়ে গিয়েছে।
ইরফানের পরনে কালো গ্যাভার্ডিং প্যান্ট। শরীরে আর কিছু জড়ালো না। ভেতরের রুমের দরজা ঠেললে দেখল খোলেনা। বুঝল মাইরা ওপাশ থেকে আটকে দিয়েছে। ইরফান জানে, সে ডাকলেও মাইরা ইচ্ছে করে দরজা খুলবে না। দরজায় জোরে আঘাত করে ভাঙতে গিয়েও থেমে গেল। ভাবলো, মাইরা ঘুমিয়ে গেলে হঠাৎ এতো জোরে আওয়াজে, মাইরার কাঁচা ঘুম ভেঙে যাবে, যেটা ইরফনের মন সায় দিল না।
অতঃপর ইরফান তার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

এই বেলকনি থেকে পাশের রুমের বেলকনির মাঝে বেশ দূরত্ব। ইরফান ভাবনা রেখে বেলকনির রেলিঙের উপর উঠে দাঁড়ালো। জোরেসোরে এক লাফ দিয়ে পাশের বেলকনির রেলিঙের উপর দাঁড়ায়। এরপর রেলিঙের উপর থেকে বেলকনিতে নেমে দাঁড়ায়। এই বাঁদর বউয়ের জন্য তাকেও বাঁদরের মতো লাফাতে হচ্ছে! বিড়বিড় করল,
– স্টুপিড বাঁদর।
এরপর ইরফান বেলকনির দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করে।
মাইরা ঘরের জিরো লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। বেলকনিতে ধুপ করে একটি শব্দ পেয়ে মাইরার কাঁচা ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমঘুম চোখ মেলে ঘরে ছায়ার মতো কিছু দেখে ভ’য়ে একটা চিৎকার দেয়, কয়েক সেকেন্ড এর মাঝেই ইরফান মাইরার উপর আধশোয়া হয়ে মাইরার মুখ চেপে ধরে। মৃদুস্বরে বলে,

– হুশ! ডোন্ট শাউট! অ্য’ম ইওর হুইসলার।
মাইরা ইরফানকে চিনতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তার মুখ থেকে ইরফানের হাত সরিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
– কেন এসেছেন এখানে? আমাকে ভর্তা বানাবেন না-কি! সরুন!
ইরফান সাথে সাথে বলে,
– নো।
কথাটা বলে ইরফান মাইরার গলায় মুখ গুঁজে শ্বাস টানে। মাইরা দু’হাতে ইরফানকে ঠেলে আর তেজী কণ্ঠে বলে,
– আমি আর আপনার সাথে থাকবো না। সরুন বলছি।

ইরফান মাইরার গলায় দু’টো চুমু খেয়ে মাইরার উপর থেকে উঠে বসে। মাইরা ছাড়া পেয়ে দ্রুত বিছানা থেকে নামতে গেলে ইরফান মাইরাকে টেনে মাইরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ডান হাতে মাইরার পেট চেপে, বা হাতে মাইরার ঘাড়ের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। এরপর মাইরার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
– স্টুপিড গার্ল, কি প্রবলেম?

মাইরা কিছু বলে না। তার পেটে রাখা ইরফানের হাত সরিয়ে দিতে চায়। ইরফান সেসব পাত্তা দিল না। একটু আগের রা’গ ঝাড়তে মাইরার কাঁধ বরাবর জোরেসোরে দাঁত বসিয়ে দেয়। ব্য’থা পেয়ে মাইরা মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে। তবে ইরফান ছাড়লো না। সে তার সময় মতো দাঁত সরিয়ে, ক্ষ’তস্থানে ঠোঁট চেপে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– স্টুপিড ব্র্যাভ গার্লদের আমি লাইক করিনা। আন্ডারস্ট্যান্ড?
ইরফানের হাতের বাঁধন একটু হালকা হওয়ায় মাইরা ইরফানের হাত থেকে নিজেকে ছুটিয়ে দু’হাতে ইরফানের বুকে ধাক্কা দেয়। এরপর দ্রুত বিছানা থেকে নেমে দিকে চেয়ে ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে রে’গে বলে,
– আপনি একটা রা’ক্ষ’স!
ইরফান ছোট করে বলে,

– ওকে।
কথাটা বলে ইরফান বেড থেকে নামার আগেই মাইরা দৌড়ে গিয়ে এই ঘরের দরজা খুলে পাশের রুমে চলে যায়। ইরফান বিরক্ত হলো। বড় বড় পা ফেলে পাশের রুমে গেলে দেখল মাইরা বেডের এক কোণায় উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে আছে। ইরফান এগিয়ে গিয়ে মাইরার গা ঘেঁষে শুয়ে, মাইরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলে মাইরা আবার-ও ছ্যাত করে ওঠে। ইরফানের হাত সরিয়ে মাইরা উঠে বসলে ইরফান-ও উঠে বসে। মাইরা রে’গে বলে,
– আপনার প্রবলেম কি হ্যাঁ?
ইরফান মাইরার রাগান্বিত মুখটা অবলোকন করে। নাকের পাটা ফুলিয়ে, চোখ দু’টো বড় বড় করে রে’গে তার দিকে চেয়ে আছে মাইরা। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে কেমন করে যেন বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ার আমি সিক।
কথাটা বলে মাইরার ডান হাত নিয়ে তার বুকের বা পাশে রেখে বলে,

– এখানে পেইন হচ্ছে।
মাইরা রে’গে থাকলেও ইরফানের কথা বলার ধরনে ভাবলো, সত্যিই হয়তো ইরফানের অসুস্থ লাগছে। মাইরা ভ’য় পায়। ইরফানের নাক দিয়ে র’ক্ত পড়ে, এই ব্যাপারটি কাছ থেকে দেখার পর থেকে মেয়েটা একটুতেই ভ’য় পেয়ে যায়। বিচলিত হয় ভীষণ। দ্রুত ইরফানের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– কি হয়েছে আপনার? চলুন এক্ষুনি ডক্টরের কাছে যাই।
কথাটা বলে মাইরা ইরফানের হাত ধরে টানলে ইরফান মাইরার হাত টেনে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– ডক্টর বলেছে আমার মেডিসিন বার্ডফ্লাওয়ার।
ইরফানের কথা শুনে মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। তার মানে তাকে বোকা বানাচ্ছিল এতোক্ষণ। অতঃপর রে’গে বলে,

– আপনি আমাকে মিথ্যা বললেন?
ইরফানের গম্ভীর স্বর,
– নো। বার্ডফ্লাওয়ার আমাকে এভোয়েড করলে, বুকে পেইন হয়। ইট’স ট্রু।
কথাটা বলে ইরফান মাইরার ডান গালে তার ডান হাত রেখে তার বরাবর মাইরার মুখ করে। এরপর মাইরার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করে,
– হোয়াট হ্যাপেন্ড?
মাইরা ইরফানের হাত তার গাল থেকে সরিয়ে দিতে চায়, সাথে রে’গে বলে,

– সরুন বলছি। একদম ছোঁবেন না আমায়। আপনার কাছে তো মেয়ের অভাব নেই। তাদের কোলে তুলে বসে থাকুন, যান। আমার কাছে কি হ্যাঁ?
কথাটা বলতে বলতে মাইরার চোখের কোণে পানি জমে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– ওরা আমার কলিগ।
মাইরা উত্তর করে,
– হ্যাঁ কলিগ হয়েছে বলে, আপনার কোলের মধ্যে উঠে আসছিল আর আপনি-ও কোল পেতে বসে ছিলেন।
কথাটা বলে মাইরা আবার-ও ইরফানের থেকে দূরে সরতে চাইলে ইরফান মাইরাকে তার কোলে বসিয়ে দু’হাতে মাইরাকে তার সাথে চেপে ধরে। মাইরার কথায় ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে। মৃদুস্বরে বলে,

– আর ইউ জেলাস?
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– হ্যাঁ জেলাস। তো? পরপুরুষের জন্য তো আর জেলাস হচ্ছি না। স্বামীকে নিয়ে আমার বহুত জেলাস!
ইরফান সূক্ষ্ম হেসে বলে,
– ইয়াহ! আই লাইক ইওর জেলাসি।
মাইরা একটু ল’জ্জা পায়। ইরফানের থেকে চোখ সরিয়ে, মাথা নিচু করে নেয়। ইরফান মাইরার ল’জ্জানত মাইরার দিকে চেয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,
– আমার কোল অলওয়েজ যাস্ট বার্ডফ্লাওয়ারের জন্য রেডি থাকে। নাথিং এল্স।
মাইরা অভিমানী কণ্ঠে বলে,
– মিথ্যুক আপনি। অন্য মেয়েরা আপনার কাছে আসলে আপনি আমাকে ভুলে যান।
কথাটা শুনতেই ইরফান মাইরার গলায় মুখ গুঁজে দু’বার লম্বা শ্বাস টানে। এরপর ওভাবেই মৃদুস্বরে বলে,

– স্টুপিড গার্ল, এসব ফা’ল’তু কথা কোথায় পেয়েছ? ইউ নো? আমি তোমাকে ভুলে থাকার কোনো ওয়ে জানিনা। বাট, তোমাকে মনে রাখার হাজারটা ওয়ে জানি।
কথাটা বলে মাইরার গলায় দু’টো গাঢ় চুমু আঁকে। এরপর মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকালে দু’জনের চোখাচোখি হয়। মাইরা বলে,
– শুনুন, সবসময় মেয়েদের থেকে ১০০ হাত দূরত্ব বজায় রাখবেন, বুঝেছেন?
ইরফান ছোট করে বলে,
– নো।
মাইরা মেকি রা’গ দেখিয়ে বলে,
– না বুঝলে, কালকে থেকে আপনি বাড়ি ফিরলে আপনার বউ বন্ধ।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– হোয়াট?
মাইরা মুখ বাঁকিয়ে বলে,

– হোয়াট এর উত্তর তো আমার চেয়ে আপনিই বেশি বোঝেন। সার্টিফিকেটবিহীন পিএইচডি করা রা’ক্ষ’স কি-না আপনি!
কথাটা বলেই মাইরা ইরফানের কোল থেকে নেমে মেঝেতে দাঁড়ায়। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে,
– স্টুপিড গার্ল।
এরপর ইরফান বেডের থেকে নেমে দাঁড়ায়। এগিয়ে গিয়ে কাভার্ড থেকে মাইরার জন্য আনিয়ে রাখা জামা, প্যান্ট বের করে এনে মাইরার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– চেঞ্জ করে এসো।
মাইরা চুলগুলো হাত খোপা করে বলে,
– কেন?
ইরফান বলে,

– আমি বলেছি তাই। ফাস্ট।
– এতো রাতে আমি জামা চেঞ্জ করব কেন? আর এটা কি এনেছেন?
বলতে বলতে মাইরা ইরফানের হাত থেকে জামা নিলে দেখল,, হাঁটু সমান জর্জেটের একটি গোল জামা, সাথে একটি কালো মেয়েদের প্যান্ট, মাথার জন্য একটি ছোট কালো জর্জেট ওড়না। মাইরা ইরফানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– আমি এখন এসব পরতে পারব না।
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
– পরতে হবে।
মাইরা-ও বিরক্ত হয়ে বলে,
– আপনি পরুন।
ইরফান ধমকে বলে,
– থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।
মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। এই ভালো তো এই ধমক। মাইরা বিড়বিড় করল,
– খ’বি’শ লোক একটা।
এরপর ওড়না বিছানার উপর রেখে জামা, প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর মাইরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে ইরফানকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ইরফানকে সে উদাম শরীরে দেখে গেল। আর এখন মাইরার মনে হচ্ছে, ইরফান পুরো কালা মামা হয়ে আছে। ইরফানের পরনে কালো রাইডিং জ্যাকেট, রাইডিং প্যান্ট, পায়ে বুট।
মাইরা এগিয়ে এসে ইরফানের জ্যাকেট ধরে টেনে বলে,

– আপনি এসব কি পরেছেন? গরমের দিনে শীতের কাপড় পরেছেন কোন দুঃখে?
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– তুমি স্টুপিড গার্ল, সেই দুঃখে!
মাইরা বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে নেয় তার আগেই ইরফান তার বা পা চেয়ারের উপর রেখে, বা হাতে মাইরার কোমর জড়িয়ে মাইরাকে তার বা পায়ের উরুর উপর বসিয়ে দেয়। মাইরা দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে,

– আরে আরে কি করছেন?
ইরফান কিছু বলল না। টেবিলের উপর থেকে মাইরার জন্য আনা কালো জুতোজোড়া নিয়ে সামান্য ঝুঁকে মাইরার দু’পায়ে জুতো পরিয়ে দেয়। এরপর মাইরাকে নামিয়ে দিয়ে বেডের উপর থেকে মাইরার ওড়না নিয়ে মাথা ঢেকে দিয়ে ঘাড়ের দু’পাশে দেয়। এরপর ইরফান মাইরার থেকে দু’পা পিছিয়ে গিয়ে মাইরার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দৃষ্টি বুলিয়ে নেয়।
তার আনা জামা, প্যান্ট, সাথে ছোট্ট একটি জর্জেটের ওড়না পরে মাইরাকে আরও ছোটো বাচ্চা লাগছে। ইরফান সামান্য ঠোঁট বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে,
– মাই লিটল গার্ল।
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,

– কোথায় যাবেন আপনি? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন?
ইরফান এবারেও কিছু বলল না। মাইরাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আমি সুস্থ, আর পা ডাবল সুস্থ।
ইরফান ছোট করে বলে,
– আই নো।
– তাহলে আমাকে কোলে নিয়েছেন কেন?
ইরফান সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে মাইরার দিকে আড়চোখে চেয়ে বলে,
– আমার দু’হাত যাস্ট বার্ডফ্লাওয়ারকে কোলে নেওয়ার জন্য প্রিপেয়ার থাকে। এটা তোমার মতো স্টুপিড গার্লকে বোঝাচ্ছি।
মাইরা মুখ বাঁকালো।

ইরফান মাইরাকে নিয়ে বাইকের পাশে এসে নামিয়ে দেয়। মাইরা বুঝল, ইরফান তাকে বাইকে নিয়ে ঘুরবে। খুশি হলো মেয়েটা। রাতের শহরে বাইক নিয়ে ঘুরতে ভীষণ ভালো লাগবে।
মাইরাকে হেলমেট পরানোর জন্য বাইকের উপর থেকে ইরফান একটি হেলমেট নিতে নিতে মাইরার উদ্দেশ্যে বলে,
– বাইকে শান্ত হয়ে বসে থাকবে অ্যান্ড আমাকে শ’ক্ত করে ধরে বসবে। ওকে?
মাইরা কথার তালে বলে ফেলে,
– কেন?
ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। বা হাতে হেলমেট ধরে রেখে ডান হাতে মাইরার কোমর ধরে মাইরাকে তার আড়ালে এনে দাঁড় করিয়ে চোখের পলকে মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা বেচারি বুঝতেই পারেনি। প্রায় ১ মিনিটের মাথায় ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দেয়। এরপর মাইরার ঠোঁটের কোণায় ইরফান তার ডান হাতের বুড়ো আঙুল রেখে মাইরার দিকে চেয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,

– এটা খেতে পারব না তাই।
কথাটা শুনতেই মাইরা ঝট করে চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। অবাক হয়ে বলে,
– আমার জীবন চলে যাবে, আর আপনার শুধু এসব খাওয়ার চিন্তা, তাইনা? পা’ষা’ণ লোক একটা।
ইরফান সূক্ষ্ম হেসে জিজ্ঞেস করে,
– কিসব খাওয়ার চিন্তা আমার?
ইরফানের কথা সাথে দৃষ্টি দেখে মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। মাথা নিচু করে মৃদুস্বরে বলে,
– কিছু না।
এরপর ইরফানের হেলমেট ধরে রাখা হাত উঠিয়ে বলে,
– পরিয়ে দিন।

ইরফান আর কিছু বলল না। হেলমেটটি মাইরাকে পরিয়ে দেয়। এরপর সে একটি হেলমেট আর দু’হাতে গ্লাভস্ পরে নেয়। এরপর ইরফান বাইকে উঠে বসলে মাইরা ধীরে ধীরে ইরফানের পিছনে দু’পাশে পা দিয়ে বাইকে উঠে বসে। দু’হাতে ইরফানকে শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরলে, ইরফান বাইক স্টার্ট দেয়।
ধীরে ধীরে বাইকের স্পিড বাড়ায় ইরফান। সময়ের সাথে সাথে ব্যস্ত শহর পেরিয়ে ইরফান বাইক নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় ওঠে। সামান্য ঘাড় বাঁকিয়ে ডাকে,
– বার্ডফ্লাওয়ার?
যদিও ভয়েস অস্পষ্ট তবে মাইরা শুনতে পায়। উত্তর করে,
– হু।
ইরফান আওয়াজ করে বলে,

– আমাকে শ’ক্ত করে ধর। আই ওয়ান্ট টু ইট ইউ।
মাইরা ইরফানের কথা বুঝলেও এমনি এমনি-ও রা’গ’লো না। বরং ইরফানের কথা মেনে আরও শ’ক্ত করে ইরফানকে জড়িয়ে ধরল। কি যে শান্তি লাগছে!
ইরফান হঠাৎ-ই বাইকের স্পিড একদম বাড়িয়ে দেয়। মাইরা প্রথমে একটু ভ’য় পেলেও কিছুক্ষণের মাঝেই তা কেটে যায়। তীব্র বাতাস ফুঁড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। মাইরার মনে হচ্ছে সে আর ইরফান হাওয়ায় ভাসছে। মুখে আনন্দের হাসি ঝরতে থাকে।
কখনো অন্ধকার, কখনো ঝাপসা আলো সাথে তীব্র বাতাস সবমিলিয়ে মাইরার হাসি দীর্ঘ হয়। এক পর্যায়ে শব্দ করে হাসে। আওয়াজ করে বলে,

– ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালো লাগছে। আপনাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ শিসওয়ালা।
মাইরার কথাগুলো ইরফানের কানে অস্পষ্টভাবে এসে বারি খায়। হেলমেটের ভেতরে ইরফানের ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে। রাস্তার ডানদিকে বাঁক নেয়ার সময় ইরফান বাইক খুব সামান্য ডান দিকে বাঁকা করে। মাইরা আরও শ’ক্ত করে ইরফানকে জড়িয়ে ধরে। মুখে হাসি লেপ্টে মেয়েটার। তার মনে হচ্ছে এই পথ যদি কখনো শেষ না হতো। ভাবনা থেকে মাইরা শব্দ করে গায়,,
– এই পথ যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হত তুমি বলো তো?
এটুকু গেয়ে মাইরা শব্দ করে হাসে। ইরফানের ঠোঁটের কোণে হাসি। বিড়বিড় করে,
– নাইস!

ইরফান বাইক নিয়ে, মাইরাকে নিয়ে শোঁশোঁ করে এগিয়ে চলছে।
হঠাৎ মাইরার মাথায় একটি কথা আসে। যদিও ভ’য় পাচ্ছে, তবে এই মুহূর্তে ভালো লাগার আনন্দানুভূতি থেকে নিজেকে বঞ্চিত না করার জন্য সব যেন মাথা থেকে বেরিয়ে গেল। মাইরা ইরফানকে ছেড়ে আলগা হয়ে বসে। ব্যাপারটি ইরফান খেয়াল করতেই ঘাড় বাঁকায় সামান্য। তখন-ই মাইরা বেশ সাহস করে কিছুটা উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত মেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে,

– শিসওয়ালা শুনুন? আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি!
ইরফান মাইরার কথা শুনলেও চোখেমুখে খুশির বদলে অজস্র ভীতি হা’না দেয়। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে হঠাৎ-ই ইরফান বাইকের ব্রেক ক’ষলে মাইরা হুমড়ি খেয়ে পড়ার আগেই ইরফান বাঁকা হয়ে দু’হাতে মাইরাকে আগলে ধরে বাইকের সামনে বসিয়ে দেয়। একটুর জন্য মাইরা ছিটকে পড়ে যায়নি। বুক কাঁপছে ইরফানের।
মাইরা ভ’য়ে দু’হাতে ইরফানের গলা শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ইরফান দুর্বল ডান হাতে তার হেলমেট খুলে ছুঁড়ে ফেলে। এরপর মাইরাকে শ’ক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কণ্ঠে আওড়ায়,
– মাই হার্ট।

কিছুক্ষণ পর ইরফান হঠাৎ মাইরাকে নিজের থেকে টেনে সরিয়ে দেয়। শ’ক্ত হাতে মাইরার হেলমেট খুলে ছুড়ে ফেলে। এরপর ডান হাতে মাইরার গাল শ’ক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে,
– স্টুপিড গার্ল। তুই ভালো হবি না? তোর সাহস কি হয় এরকম দুঃসাহসিকতা দেখানোর?
মাইরা গালে ব্য’থা পায়। সে বুঝতে পারেনি। ঝোঁকের বসে ওরকম একটা কাজ করে ফেলেছে। ভীষণ ভ’য় পেয়েছে মেয়েটা। ঢোক গিলে অনুতপ্ত স্বরে বলে,

– স্যরি!
মাইরার স্যরি ইরফানের গায়ে যেন আ’গু’ন ধরিয়ে দিল। আগের চেয়েও শ’ক্ত করে মাইরার গাল চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে,
– আমার বার্ডফ্লায়ারের কিছু হলে তোর স্যরি দিয়ে আমার বার্ডফ্লাওয়ার ফিরে আসতো?
কথাটা বলতে বলতে ইরফান মাইরার বাম গালে একটা শ’ক্তপোক্ত থা’প্প’ড় মে’রে দেয়। মাইরার বাইক থেকে পড়তে নিলে ইরফান বা হাতে মাইরার কোমর জড়িয়ে ধরে। শ’ক্ত দৃষ্টি মাইরার পানে।
মাইরা গালে হাতে দিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে তাকায়। কতদিন পর ইরফান তাকে এভাবে মা’র’লো! বাম গালে হাত দিয়ে কান্নামাখা গলায় বলে,
– আপনি আমাকে মা’র’লেন?
ইরফান শ’ক্ত গলায় বলে,
– বাঁদরামি করলে আরও থা’প্প’ড় খেতে হবে।

মাইরা ঢোক গিলল। কি মনে করে, এগিয়ে এসে দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে,
– স্যরি শিসওয়ালা! আর কখনো এমন করবো না। আমি বুঝতে পারিনি।
এরপর মাইরা ইরফানের গলা ছেড়ে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান তার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে আছে। মাইরা নাক টেনে বলে,
– ভালোবাসি তোমাকে।
ইরফান শীতল দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার পানে। মাইরার মুখে তুমি ডাক শুনে, সাথে আবেগী একটি শব্দে ইরফানের মাথা ঠান্ডা হলো বোধয়। দু’হাতে মাইরার দু’পা ধরে টেনে মাইরার দু’পা তার দু’পাশে রাখে। মাইরাকে তার সাথে ঠেকিয়ে দেয়। এরপর ইরফান মাইরার দিকে মুখ এগোতে নিলে মাইরা ইরফানের মনোভাব বুঝতে পেরে দ্রুত ডান হাতে ইরফানের ঠোঁট চেপে ধরে বলে,

– এটা রাস্তা।
বাঁধা পেয়ে ইরফান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তবে কিছু বলল না। বাইক স্টার্ট দিলে মাইরা সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে,
– এখন বাসায় যাবেন?
ইরফান ছোট করে বলে,
– হুম।
মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আমি আর এরকম করব না। প্লিজ এক্ষুনি বাসায় যাবেন না।
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– বাসায় ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ফেলে এসেছি।
মাইরা মন খারাপ করে বলে,
– আচ্ছা।
এরপর আবার-ও বলে,
– আমাকে আর বাইকে উঠাবেন না?
ইরফান আবার-ও গম্ভীর গলায় উত্তর দেয়,
– বাঁদরামি অফ করলে উঠাবো। আদারওয়াইজ নো।
মাইরা সাথে সাথে বলে,
– এখন থেকে ভদ্র হয়ে থাকবো, সত্যি।
ইরফান ছোট করে বলে,

– ওকে।
এরপর ইরফান বাইক নিয়ে একটু এগোলে মাইরা দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমাকে পিছনে বসতে দিন।
ইরফান ধীরে ধীরে বাইক চালায় আর বলে,
– নো।
মাইরা বলে,
– এভাবে বসলে মানুষ কি বলবে?
ইরফান গম্ভীর স্বরে বলে,
– আই ডোন্ট কেয়ার।
মাইরা আর কিছু বলল না। চুপচাপ ইরফানকে ধরে বসে থাকলো।

বাসায় ফিরে মাইরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজের ফোলা গাল দেখল। ইরফানের থা’প্প’ড় বেচারির এখনো হজম হয়নি। তবে তার দোষ ছিল, তাই এটা নিয়ে ইরফানকে কিছু বলতে চায়না। কিন্তু একটা থা’প্প’ড়ের বদলে দশটা ধমক দিলেও তো হয়। ওই লোকটার আসলে থা’প্প’ড় মা’রা’র জন্য হাত শিরশির করে। কথাটা ভেবে মাইরার মুখে অসহায়ত্ব ভিড় করে।
এসব ভাবনা রেখে মাইরা মাথার ওড়না খুলে টেবিলের উপর রাখল। এরপর জামার পিছনের চেইন খোলার জন্য পিছনে হাত দিলে, ইরফান হঠাৎ ঘরে এসে ঝড়ের বেগে মাইরাকে নিয়ে ঠাস করে বেডের উপর শুয়ে পড়ে। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফানের দিকে চেয়ে চোখ কুঁচকে বলে,
– আপনি কি স্বাভাবিকভাবে কিছু করতে পারেন না? উফ! সরুন আমার উপর থেকে।
ইরফান মাইরার উপর থেকে সরলো না, উল্টো মাইরার দিকে আরেকটু এগিয়ে এসে মাইরার মুখ বরাবর মুখ এনে বলে,

– নো।
এরপর বাহ হাতে উঠিয়ে মাইরার গালে বরফ ঘষে দেয়। মাইরা বুঝতে পেরে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– নিজেই মা’রে, নিজেই দরদ দেখায়!
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– বউ আমার। সব আমিই করব। ওকে?
মাইরা কিছু বলল না। ইরফানের হাতের বরফ ছোট হয়ে আসলে ইরফান বা হাত ঝাড়া দিয়ে দু’হাতে মাইরাকে জড়িয়ে ধরে। এরপর মাইরার গলায় মুখ গুঁজে বলে,
– আর একদিন এসব ফা’ল’তু কাজ করলে একদম খু’ন করে ফেলব তোমায়, স্টুপিড গার্ল।

কথাটা বলতে বলতে মাইরার পুরো গলায় ছোট ছোট চুমু আঁকে। মাইরা ঢোক গিলে ইরফানকে ঠেলে বলে,
– আপনার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ রেখে আমার কাছে এসেছেন কেন? সরুন তো!
ইরফান মাথা উঁচু করে মাইরার দিকে তাকায়। ঠান্ডা গলায় বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ারকে খাওয়ার কাজ পেন্ডিং-এ ছিল। তোমাকে খাওয়ার চেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আমার ডিকশোনারিতে নেই। আন্ডারস্ট্যান্ড?
মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। ইরফান মাইরার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে বলে,
– ইউ নো? ইউ আর মাই এভরিথিং। অলটাইম, আমার জন্য নিজেকে প্রটেক্ট করবে, ওকে? কজ….
এটুকু বলে বলে ইরফান মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তুমিবিহীন আমি নিঃস্ব।

মাইরা অবাক হয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে রইল। সে তো বোঝে, ইরফানের মনের কথা। ইরফানকে কিছু বলতে চায়। তবে ইরফান সে সুযোগ দিল না। তার ঠোঁট দ্বারা মাইরার মুখ বন্ধ করে দেয়। তার আগে ছোট করে বলে,
– ডোন্ট ডিস্টার্ব মি বার্ডফ্লাওয়ার। নাউ, আই’ল ইট ইউ।
ইরফান ডান হাত মাইরার পিঠের নিচে নিয়ে মাইরার জামার চেইন একটানে খুলে দেয়। দু’হাতে মাইরাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। অনবরত অবাধ্য হাতের স্পর্শে মাইরা নেতিয়ে পড়ে।
ইরফান মাইরার যে গালে থা’প্প’ড় মেরেছে, সেই গালে অগণিত চুমু আঁকে। এলোমেলো নিজের সাথে মাইরাকে-ও এলোমেলো করে, সাথে বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করে,

প্রণয়ের অমল কাব্য শেষ পর্ব

– ইউ আর মাই হার্ট। ইউ আর ওয়ানলি মাইন। মাই বার্ডফ্লাওয়ার ইজ মাই হার্ট। মাই হার্ট……..
এলোমেলো ইরফানের পা’গ’লা’মীতে ভরা এলোমেলো কথায় মাইরা চোখের কোণে পানি নিয়েও বারকয়েক হাসল। সাথে ইরফানকে সামলাতে ব্যস্ত হলো।

সমাপ্ত

1 COMMENT

Comments are closed.