প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ৩১

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ৩১
মুসতারিন মুসাররাত

সময়ের সাথে বহমান জীবন চরাই-উতরাই পেরিয়ে আপন ছন্দে প্রবাহিত হতে থাকে। কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না। থেমে রাখা ঠিকও নয়। বাস্তবতা তো বড্ড বেশিই কঠিন আর নি’ষ্ঠু’র হয়। আর ভাগ্যর লিখন তা তো খন্ডনের ক্ষমতা কারোর নেই। ভাগ্যকে, বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে দিব্য। ভাগ্যর উপর আফসোস রাখলে ধীরে ধীরে তলিয়ে নিঃশেষ হয়ে যেতে হয়। তাই তো কবেই সমুদ্র সমান আফসোসকে বিশাল আকাশের বুকে হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছে দিব্য। নিজের মনমস্তিষ্কে গেঁথে নিয়েছে,

-” যা আমার হয়নি, তা কখনো আমার হওয়ার ছিলোও না। জানি না এটা সান্ত্বনা বাণী কীনা! মিথ্যা প্রবোধ নিয়ে যদি ভালো থাকা যায়! বেঁচে থাকা সহজ হয়! তবে সেটাই ভালো নয় কী?”
তনুজা ইভানের অর্ধাঙ্গিনী। নিজের ভাবী। অবাধ্য মনকে সম্পর্কের বেড়াজালে আঁ’ট’কে, কড়া শাসনে শাসিয়ে নিয়েছে দিব্য। তবে দু’জনে সামনাসামনি হলে এখনও অপ্রস্তুত হয়। দু’জনের মাঝেই জড়তারা ভীড় করে। এই জড়তা ঠেলে পরিবারের বাকী সবার মতো তাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক হবে কীনা? তা অনিশ্চিত। দিব্য নিজেকে তটস্থ করে জোরপূর্বক ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলেছে। ইভান হাত মেলাতেই দিব্য ইভানকে জড়িয়ে ধরে। নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে। উচ্ছ্বাসিত প্রকাশ করতে ফের বলে দিব্য,
-” কনগ্রাচুলেশন ব্রো।”
-” থ্যাংকস ডিয়ার।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইভান আলিঙ্গন শক্ত করে। দিব্য আড়চোখে তনুজার দিকে চায়। এই তো কিছুপল আগেও তনুজার মুখটা লজ্জা মিশ্রিত আনন্দময় প্রফুল্লে ভরপুর ছিলো। সেখানে দিব্যকে দেখে নিমিষেই ম্লান হয় মুখের হাসি। গুটিয়ে জড়সড় করে নেয় নিজেকে। দিব্য আলোর বেগে তনুজার দিক হতে স্বীয় দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তনুজার অস্বস্তি সবটাই বুঝতে পারে সে। দিব্য মন থেকে চায়, ইভান-তনুজা একেঅপরের সাথে ভালো থাকুক। ওদের দু’জনের মধ্যে নিজেকে অস্বস্তি হিসেবে রাখতে চায় না দিব্য। ইভান-তনুজার জন্য হলেও নিতির সাথে তার স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা জরুরী। আর চার পাঁচজন স্বামী-স্ত্রীর মতোই তাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক এটা প্রুভ করতে হবে। তাহলে ইভান-তনুজা ওদের মধ্যেও কোনো হেজিটেশন থাকবে না। অন্যদিকে নিতি একটা স্বাভাবিক সুন্দর জীবন ডিজার্ভ করে। ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে না পারুক। হ্যাপি রাখা, আগলে রাখার চেষ্টা তো করতেই পারে। এই ভেবে দিব্য ডিসিশন নেয় নিতির সাথে তার সম্পর্কটা দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে। দিব্যর ভাবনার ছেদন হয় নুরজাহানের মশকরার ছলে বলা কথায়,

-” তা ছোটো মির্জা এভাবে মিষ্টি এনে তুমি কবে সবাইকে চমকে দিচ্ছো?”
দিব্য সোজা হয়ে দাঁড়ায়। জবাবে কপাল কুঁচকে বলে,
-” মিষ্টি আনলেই যদি কাউকে চমকানো যায়! তাহলে এটা তো তুড়ি বাজানোর মতো। এখনই দোকানে গ__”
নুরজাহান হইহই করে উঠলেন। থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-” আরে ছোটো কর্তা আমার কথা বুঝোনি? মিষ্টির সাথে অতি মিষ্টি সুখবর থাকা চাই।”
দিব্য রসকষহীন গলায় বলল,
-” একসাথে বেশি মিষ্টি খাওয়া ভালো নয়। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়বে।”
আর কথা বাড়ায় না দিব্য। তাড়া দেখিয়ে গটগট পা ফেলে প্রস্থান করে।

পড়ন্ত বিকেল। সাদা টিশার্টের উপরে চেক শার্ট গায়ে জড়ানো দিব্যর। নীল রঙা ডেনিম প্যান্টের উপরে শার্টের বাটন খোলা। সিঁড়ি ভেঙে ত্রস্ত পা ফেলে নামার দরুণ শার্টের দুকোণা দুদিকে মৃদু নড়েচড়ে যাচ্ছে। এক হাতে ফোন কানে চেপে অন্যহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে ব্যস্ত ভঙিতে নামছে দিব্য। অফিস থেকে সবেমাত্র ফিরছিলো ইভান। দিব্যর সাথে চোখাচোখি হয়। সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা ফেলবে ইভান। ঠিক দুই ধাপ উপরে দাঁড়ানো দিব্যর দিকে নজর পড়তেই ইভানের চোখদুটো দিব্যর গলার দিকে আটকায়। ইভানের চাহনি দিব‌্যর কাছে একটু অন্যরকম ঠেকল। দিব্য ফোন কানে চেপেই চোখে চোখে ইশারায় শুধায়,

-” কী?”
সফেদ দন্তপাটি ঠোঁটের ডান পাশে চেপে ধরে ইভান। কাঁধ ঝাঁকিয়ে ইশারায় প্রত্যুত্তর দেয়,
-” কই?”
ইভানের অন্যরকম দৃষ্টি দেখে দিব্য ভেবেছিলো কিছু বলবে হয়তো। ফোনের ওপাশের ব্যক্তির প্রশ্নে দিব‌্য ভাবনা থেকে বেরিয়ে জবাব করে,
-” এই তো এক্ষুনি আসছি।”
এই বলে দিব্য যেতে থাকে। ইভানও ওর মতো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নেয়। দ্বিধা দ্বন্দ্বের দোলাচলে থাকা ইভানের মন আচমকা হঠাৎ করেই পিছু ঘুরে দিব্যকে ডাকল,

-” দিব্য?”
দিব্য তৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল,
-” হুঁ।”
-” কোথাও বেরুচ্ছিস?”
-” হ্যা। কিছু বলবি?”
মুখটা খুলতে গিয়েও অদৃশ্য এক জড়তা এসে জমায় কথাটা বলা আর হয়ে উঠল না। অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখা দেওয়ালে জমা শ্যাওলার মতোই তাদের সম্পর্কে একটা অদৃশ্য বেড়াজাল তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন কথা নেই বার্তা নেই। এখন অল্প ক’দিনে চাইলেও খুব সহজেই আগের সেই বন্ধু সুলভ আচরণে ফেরা দায়। স্কুল-কলেজ, ভার্সিটিতে পড়াকালীন দু’জনের মধ্যে যে ফ্রেন্ডলি আচরণ ছিলো, প্রায় পৌনে দুই বছরের ব্যবধানে তা আজ আর নেই। পূর্বের জায়গায় ফিরতে দু’জনেরই সময় লাগবে। দিব্যর শার্টের কলারের বরাবর ফর্সা গলায় নজর পড়তেই ইভানের দিব্যকে হুঁশিয়ারি করতে মন টানলেও; হঠাৎ ভাতৃত্বের আড়ষ্টতায় বলা হয় না। ইভান ভ্রু বাঁকিয়ে ছোট করে জবাব দেয়,

-” না। এমনিই।”
বেচারা বাইরে যাচ্ছে। লোকজনের মাঝে নিশ্চিত অস্বস্তিতে লজ্জায় পড়বে। এইজন্য ইভানের বড্ড বেশিই মায়া হয়। তীব্র বলতে ইচ্ছে হয়। তবে জড়তা আসায় বলতে ব্যর্থ হয়।

বা হাতের ভাঁজে থাকা ব্লেজার সোফায় ছু’ড়ে ফেলে ব্যালকনিতে পা বাড়ায় ইভান। ঘরময় নজর বুলিয়ে কাংখিত রমণীর চিহ্নও দেখা মেলে না। এই সময় হয় ব্যালকনিতে বা ছাদে থাকবে তনুজা। ভাবতে ভাবতে ব্যালকনির দোরগোড়ায় পৌঁছেতেই ইভানের ঠোঁটের কোণ বাঁকা হয়। সন্তর্পণে এগোয়। শেষ বিকেলের নরম শান্ত আলো এসে পড়েছে ব্যালকনির আঙিনায়। তনুজা দুইহাত বুকে গুঁজে দূরে শূণ্য দৃষ্টিতে চেয়ে কিছু ভাবতে বিভোর। হঠাৎ শাড়ির আঁচল গলিয়ে কোমড়ে একজোড়া শক্তপোক্ত হাতের স্পর্শ, সাথে গরম নিঃশ্বাসের বর্ষণ; আছড়ে পরে কাঁধে। তনুজার উদাসী ভাবনার সুতো ছিঁ’ড়ে যায়। নিমিষেই দুশ্চিন্তা, আতংক, হতাশার নিঃশ্বাস ছুট লাগায়। মুখ থেকে আলতো স্বরে বেরোয়,

-” আপনি? আজ হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি?”
নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতে নিতে ইভান উত্তরে বলে,
-” কেনো তুমি খুশি হওনি?”
-” আমি সেরকম বলছি না। আজ রোজকার থেকে আগেই ফিরলেন তাই বললাম।”
তনুজার মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে। চোখের ঘনপল্লব ভেজা যা ইভানের দৃষ্টির অগোচর হয় না। ইভানের কপালে মূহুর্তেই খাঁজ পরে। ভ্রু যুগল গুটিয়ে সন্দিহান স্বরে প্রশ্ন করে,
-” তুমি কাঁদছিলে? কিন্তু কেনো?”
তনুজা লুকাতে চায়। মুখে হাসি ফোটাতে তোড়জোড় চালায়। জড় গলায় ঠোঁট প্রসারিত করে আওড়ায়,
-” ক-কই”
ইভান ঠান্ডা শীতল চাহনিতে চেয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

-” একদম মিথ্যে বলবে না। তোমার ফেস দেখেই বোঝা যাচ্ছে মন খা’রাপ। কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে? কে বলেছে? নামটা ব.”
তনুজা তড়িঘড়ি করে বলে উঠল,
-” আরেহ না না। আপনি ভুল ভাবছেন। কেউ কিছু বলেনি।”
-” তাহলে তোমার চোখের কোণে পানি। তুমি কান্না করছিলে কেনো?”
ইভান মুখটা শক্ত করে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে। তনুজা পিটপিট করে চায়। পলক ফেলে ছোট শ্বাস টেনে নেয়। ম্লান মুখে ভারী স্বরে বলে,
-” আজ প্রচন্ড মায়ের কথা মনে পড়ছিলো। দুপুরে ভাতঘুম দেওয়ার সময় স্বপ্নে মা’কে দেখি।”
কথা বলতে গিয়ে তনুজার আঁখিজোড়া চিকচিক করে ওঠে। ইভান অপরাধ বোধে জর্জরিত হয়ে নিম্নস্বরে বলল,

-” ওহ্। স্যরি! আবার মনে করিয়ে কষ্ট দেওয়ার জন্য খুব দুঃখিত।”
তনুজা ছলছল চোখে ইভানের দিকে চায়। ফের স্বপ্নের দৃশ্য স্মরণ হতেই তনুজার ভেতরটা আতংকে গাঁট হয়। ভেতরটায় সমুদ্রের উথাল-পাতাল ঝ’ড় বয়। তনুজার ভীতু সন্ত্রস্ত আতংকিত মুখাবয়ব ইভানের নজরে পড়ে। ইভান আলতোভাবে তনুজার নরম দুইগালে রুক্ষ হাত রাখে। তনুজার মাথাটা কিঞ্চিৎ উঁচু করে। ডান ভ্রু উঁচিয়ে শুধোয়,
-” তনুজা কী হয়েছে? তোমাকে স্বাভাবিক লাগছে না। আর ইউ ওকে?”
-” আমি ঠিক আছি। স্বপ্নে মা আমাকে ডাকছিলো। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত। আমার ভীষণ ভ’য় হচ্ছিলো। হঠাৎ অন্ধকারের ভেতর আবছা আলোর রেখার উদয় হয়। সাথে সাদা ধোঁয়া বুদবুদ করে বেরোতে থাকে। সাদা শাড়ি গায়ে মা’কে দেখি। শাড়ির আঁচল পাহাড় সমান উঁচু থেকে জমিনে বিছানো। আমি ভয়ার্ত চোখে চেয়ে। মা আমাকে আকুতির স্বরে ডাকছে, তনু? আমার লক্ষী মেয়ে তনু? তুই শুনতে পাচ্ছিস? অ্যাই তনু জানিস! আমার না খুব একলা লাগে।”

বলতে গিয়ে ফুঁপিয়ে উঠে তনুজা। থেমে ফের বলে,
-” আমার ভয় লাগছিলো আমি উল্টো দিক হয়েই পিছাতে থাকি। আর..আর অমনি পাহাড়ের উঁচু চূড়া হতে পা ফস্কে নিচে পরে যাই। তক্ষুনি চোখ মেলে নিজেকে বেডে দেখি। সময় নিয়ে ঠাহর করি এটা স্বপ্ন ছিলো।”
তনুজার কপালে ঘাম জমে যায়। কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়। ফুঁপানোর শব্দ বাড়ে। তনুজার মাথা বুকে চেপে ধরে ইভান সাহস যোগাতে বলে,
-” তনুজা? এটা স্বপ্ন। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা আর মন খারাপ করো না। স্বপ্ন তো স্বপ্নই।”
কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে তনুজা নিজেকে স্বাভাবিক করে। উদ্বিগ্ন গলায় বলে,

-” ইভান, জানেন। আমার না মাঝে মাঝে ভীষণ ভ’য় হয়। কারন ছোটো বেলা থেকেই আমার ভাগ্যটা খুব খা’রা’প। ঘর পোড়া গরুর অনুরুপ আমি। একফালি সুখ যেন সিঁদুরে মেঘের ইঙ্গিত দিচ্ছে আমায়। অন্ধকারে যার বসবাস। আলোতে যে হয় তার সর্বনাশ। জীবনের দীর্ঘ সময়টায় সুখের থেকে কষ্টই পেয়েছি বেশি। কষ্টের সাগরে নিমজ্জিত আমিটা; যখনই সুখের মুখ দেখেছি, ঠিক তক্ষুনি উত্তাল ঊর্মির মতো দুঃখ-কষ্ট আঁছড়ে পড়েছে। ভাগ্যর পালাক্রমে জীবনের চাওয়া পাওয়ার সুখের খাতায় আজ যখন নিজেকে পরিপূর্ণ একজন মনে হচ্ছে; ঠিক তক্ষুনি দুঃস্বপ্ন এসে হানা দিলো। মনের গহীনে ভ’য় জেঁকে বসল। মনে হচ্ছে এই সুখ বুঝি ক্ষণস্থায়ী।”
একহাতে পিঠ পেঁচিয়ে ধরে অন্যহাতটা তনুজার মাথায় বুলিয়ে বলে ইভান,

-” আমি আবারো বলছি, স্বপ্ন তো স্বপ্নই। তুমি কেনো স্বপ্নকে সিরিয়াসলি নিচ্ছো? আর আমার ভাগ্যটাও না অনেকটাই তোমার অনুরুপ। তাই বলছি, মাইনাসে মাইনাসে যেমন প্লাস হয়। ঠিক তোমার আমার অসহায় ভাগ্যটা এক হয়ে মহিমান্বিত হবে। তুমি দেখো মহিমান্বিত ভাগ্যর পালাক্রমে আমাদের জীবনে ভালো কিছুই হবে।”
তনুজা চোখ বুঁজে প্রশান্তিতে শ্বাস টেনে নেয়। অশান্ত চিত্তটা ইভানের সংস্পর্শে এসে ভরসার বাণী পেয়ে নিমিষেই শান্ত হয়। সহধর্মিণীকে বুকে জড়িয়ে সারাদিনের অবসাদ আর ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয় ইভানের। ইভান আলিঙ্গন দৃঢ় করে বলে,

-” উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখে আর এরকম বো’কা”র মতো ভাবনা চিন্তা করে মন খা’রাপ করবে না। আর কান্না তো একদমই নয়।”
তনুজা কিছু বলে না নিশ্চুপ রয়। ইভান আফসোসের সুরে বলে,
-” ভাবলাম তাড়াতাড়ি ফিরে বউয়ের মিষ্টি মুখ দেখে মন-মেজাজ ফুরফুরে করি। সেখানে কীনা এসে মিসেসের মন ভালো করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। আবার ক’দিন পর তো অফিস থেকে ফিরে বাচ্চার কান্না থামাতে হবে।”
তনুজার অধর কোণে হাসি ফোঁটে। নিঃশব্দে মৃদু হাসে। কিছুপল এভাবে নীরবে কা’টে। তনুজা ইভানের বাঁধন থেকে নিজেকে আলগা করতে বলে,

-” ইভান আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি আপনার জন্য কফি আনছি।”
তনুজাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় ইভান। পরপর কিঞ্চিৎ ঝুঁকে তনুজার কপালের উপর থাকা বেবি হেয়ার ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দেয়। তনুজা মৃগনয়নের ঘনপল্লব বুঁজে নেয়। তনুজাকে অবাক বনে শুষ্ক অধরে অধর ডুবায় ইভান। মিনিট দুয়েক পর ছাড়া পেতেই তনুজা বড়বড় করে শ্বাস ফেলতে থাকে। ইভান হ্যাঁচকা টানে তনুজার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নেয়। কেমন শান্তি শান্তি ফিল হয়। তনুজা লজ্জায় গুটিয়ে ইভানের বুকে মুখ গুঁজে রয়। ইভান শান্ত শীতল মোলায়েম স্বরে বলল,

-” মাই মিসেস একটু আধটু নয়; তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি! হাজার জন নয়, তুমিই আমার একমাত্র মানসিক প্রশান্তি!”
তনুজা একহাতে আলতো করে ইভানের পিঠের কাছের শার্ট মুঠো করে ধরে। মিহি স্বরে বলে,
-” আপনার বুকে আছে আমার জন্য অঢেল পরিমাণ শান্তি। আপনি জীবনে এসেছেন এটা খোদার অনেক মেহেরবানী।”

বাইকে বসে দিব্য। জ্যামে আটকা পড়েছে। পাশের এক রিকশাচালক মামা দিব্যর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। রিকশাওয়ালা কৌতুহলী গলায় আচমকা বলে উঠল,
-” মামা নতুন বিয়ে করছেন নাকি?”
মাথাটা উঁচু করে সামনের দিকে তাকিয়ে যানজট কতদূর দেখতে ব্যস্ত ছিলো দিব‌্য। হঠাৎ এহেন প্রশ্নে দিব্য থমকায়। উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। তবে ভেতরে প্রশ্নের সঞ্চার হয়। মনটা ভাবায়, ব্যাপার-স্যাপার কী? আজ সবাই কেমন কেমন চোখে তার দিকে চেয়ে। তাকে কী এলিয়েন লাগছে নাকি? নিজেই নিজেকে শুধায় দিব্য। কিন্তু উত্তর মিলাতে পারল না।

স্পিড বাড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিব্য। টং দোকানের সামনে দু-তিন জন ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো। তাদের থেকে একটু দূরত্বে বাইকের ব্রেক কষে দিব্য। বাইকের শব্দে ওরা পিছু ঘুরে চায়। দিব্যর দিকে কয়েক জোড়া নজর কেমন কেমন চোখে চেয়ে থাকে। ওদের মধ্যে কেউ একজন মুখ খুলবে এমন সময় টং দোকানের ছেলেটি কাগজের ওয়ান টাইম কাপে কফি এনে ছেলেগুলোর সামনে ধরে বলে,

-” ভাইজান এইযে আপনা গো কফি।”
দিব্য একহাতে চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করতে করতে বলল,
-” এখন কফি খাবি। দেরি হয়ে যাবে না। আমাকে তো খুব তাড়া দিচ্ছিলি সব।”
টং দোকানের ছেলেটির চোখদুটো বড় হয়। মিটমিট করে লাজুক হেসে আচমকা দিব্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
-” ভাইজান দাওয়াত না দিয়াই বিয়া কইরা ফেলাইছেন নাকি?”
এখানে প্রায়ই আসা হয়। বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডার আসর। চায়ের দোকানের ছেলেটির সাথে অল্প স্বল্প সখ্যতা আছে। দিব্য ভ্রুকুটি করে চায়। ছেলেটি একগাল হেসে বলে,

-” ভাইজান নতুন বিয়া করছেন?”
দিব‌্যর মেজাজ চটে যায়। চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়, ‘বিয়ে করেছি’ গায়ের সাথে সাইনবোর্ড টাঙানো আছে নাকি। আ’জ’ব! রাস্তায় সবাই একই প্রশ্ন করছে। কোন রকমে রাগ সংবরণ করে বন্ধুদের দিকে চেয়ে দাঁত কটমট করে বলে,
-” কী ব্যাপার কী? তোদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আজ প্রথম আমাকে দেখছিস। আর নয়তো আমাকে এলিয়েনের মতো লাগছে। আমাকে নয় স্বয়ং ভিনগ্রহের প্রাণী দেখছিস।”
দিব্যর রাগি স্বরের তোয়াক্কা না করে উপস্থিত সবাই শব্দ করে হেসে উঠল। খোলা প্রান্তরে হাসির রোল পড়ল। দপ করে দিব‌্যর রাগের বা’রুদ জ্ব’লে উঠল। এদের দাঁত কেলানো হাসি দেখে দিব্যর গা জ্ব’লু’নি দেয়। এখানে আর সেকেন্ড ব্যয় করলে এদের একেকটার দাঁত খুলে হাতে আসতে পারে। দিব‌্য এমনটা চায় না বিধায় রাগি স্বরে বলল,
-” থাক তোরা। আমি গেলাম।”

কথাটা বলতে বলতে দিব্য বাইকে বসে চাবি ঘুরিয়ে ইঞ্চিন চালু করতে থাকে। এক ফ্রেন্ড দিব্যর কাঁধ চা’প’ড়ে বলল,
-” দিব্য ওয়েট ওয়েট। আরে শুনবি তো।”
অন্যজন গা দুলিয়ে হেসে বলল,
-” আরে ব্যাটা বিয়ে করে সিল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। আমরা হাসলেই দোষ! আয়নায় দেখ শা/লা।”
ফ্রেন্ডের কথা শুনে হাত দিয়ে বাইকের আয়নাটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতেই চট করে মেজাজ চারশো চল্লিশ হয় ওর। দাঁত কিড়মিড়িয়ে টেনে বলে,
-” নি…তি।”
গলার একপাশে লাল লিপিস্টিকের দাগ। স্পষ্ট একজোড়া ঠোঁটের ছাপ। দিব্যর বুঝতে দেরি হয় না এটা নিতির কাজ। পকেট হাতড়ে টিস‌্যু বের করে মুছতে থাকে দিব্য। তন্মধ্যে বন্ধুরা একেকজন টিপ্পনি কে’টে মশকরা করতে থাকে। দিব্য এখন বুঝতে পারে তখন ইভানের বলতে চাওয়া কথা। দিব‌্যর ইচ্ছে করছে নিতিকে দশতলা ছাদ থেকে ফেলে দিতে। ফা’জিল মেয়ে সবসময় বাঁদরামি করে। বাইরে লোকজনের মধ্যে লজ্জায় অস্তিত্বে ফেলল।

দুপুরে ভাতঘুমে বিভোর ছিলো দিব্য। কথায় আছে না অলস মস্তিষ্ক শ’য়তানের কারখানা। কাজকর্মহীন অলস মস্তিষ্কটা নিতিকে উস্কানি দেয় সাজুগুজু করতে। নিতি হঠাৎ শাড়ি পরে, হাতে চুড়ি, চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপিস্টিক দেয়। নিতির ফা’জলামো করতে মন চায়। দিব্যকে জ্বালাতে কেনো জানি ওর ভালো লাগে। ঘুমন্ত দিব্যর দিকে ঝুঁকে গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় নিতি। যা দিব‌্যর অগোচরে রয়ে যায়। ঘুম ভেঙে ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ আজ আর মেলেনি দিব্যর। শাড়ি পরিহিত নিতি আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন অঙ্গিভঙ্গিতে ছবি তুলছিলো। দিব্য হাতের সাহায্যে চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করে বাইকের চাবিটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে লিপিস্টিকের দাগ গলায়, তা দিব‌্যর অজানা থেকে যায়।

পরেরদিন….
কুয়াশার জাল সাদা ধোঁয়ার মতো ছড়িয়ে আছে। কুয়াশার জাল ভেদ করে সূর্যের আবির্ভাব এখনো ঘটেনি। নানু আপুর আদেশ পালন করতে নিচ থেকে রুমে আসে নিতি। নানুআপু আদেশ করেছেন দিব্যকে ডাকতে। কিন্তু মহাশয়ের তো এত সক্কাল সক্কাল উঠার অভ্যাস নেই। নিতি একটু ভয়ে আছে এখন ডাকলে নিশ্চিত একটা রাম ধ’ম’ক হজম করতে হবে। শুধু ধ’ম’কই নয়, হাতের নাগালে থাকলে চ-ড়ও পরতে পারে। এমনিতেই কাল রাতে লিপিস্টিকের ঘটনা নিয়ে অনেক ব’কুনি শুনতে হয়েছে। তাই নিতির মুড নেই দিব্যকে ডাকার। আগ বাড়িয়ে কথা বলার।

কিন্তু নানুআপুর আজ্ঞা তা তো রক্ষা করতেই হবে। তাই নিতি মনে মনে ছক কষে। যাতে সাপও ম/রে লাঠিও না ভাঙে। আজ্ঞা রক্ষাও হবে দিব্যর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলাও লাগবে না। বরং স্বয়ং দিব্যর মুখে আগে নিতি নাম বেরুবে। নিতি বাঁকা হেসে ফ্যানের সুইচড অন করে দেয়। মিনিট হওয়ার আগেই কমফোর্টে প্যাকেট হওয়া দিব্য ঠাস করে চোখ মেলে চায়। মাথার উপর ফ্যানটা শাশা করে ঘুরছে। উফ্! দিব্য যেনো সেকেন্ডেই বরফ হয়ে যাচ্ছে। এক ঝটকায় উঠে বসে সামনে তাকাতেই দোরগোড়ায় নিতিকে দেখে মেজাজ চটে। বজ্রস্বরে বলে,

-” নিতি। এসব কী? তাড়াতাড়ি ফ্যান বন্ধ কর। কুইক। এক সেকেন্ড দেরি হলে তোকে কিন্তু সত্যি সত্যিই ছাদ থেকে ফেলে দিবো। সবকিছুর একটা লিমিট আছে।”
নিতি গম্ভীর মুখে বলে,
-” তোমার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলবো না বিধায় ফ্যান ছেড়ে তোমাকে জাগানোর ইউনিক বুদ্ধি পেয়েছি।”
-” রাখ তোর ইউনিক বুদ্ধি। এদিকে ঠান্ডায় জমে আমি কুলফি হচ্ছি।”
নিতি মুখ বাঁকিয়ে বলে,

-” নানুআপু তোমাকে জলদি নিচে ডেকেছে।”
নিতি সুইচড অফ করতে করতে বলে। দিব্য ভ্রুকুটি করে বলল,
-” কেনো?”
-” জানি না। গিয়েই শোনো।”
নিতি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যেতে থাকে। দরজা অবধি গিয়ে ঘাড় ফিরে চায়। বলে,
-” কোনো আকাম-কুমাম করেছো হয়তো। তার বিচার সালিশ বসাবে মেবি।”
ফাঁকা গু/লি ছুড়ার মতো এমনিই আন্দাজে একটা কথা বলে চলে যায় নিতি। তবে কিছু ভেবে দিব্য একটু ভড়কায়।

ওয়াশরুম থেকে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়ে বেরোয় দিব্য। চোখদুটো ওর ঘুমে ঢুলুঢুলু। ড্রয়িংরুমে ইভান বসে হাতে কফির মগ। শিরিন সুলতানা সামনের সোফায়। সিঙেল সোফায় নুরজাহান। দিব‌্য গিয়ে ইভানের পাশে ধপ করে বসে। ইভান কফির মগে শেষ চুমুক বসিয়ে দিব্যর দিকে চেয়ে বলল,
-” গুড মর্নিং।”
দিব্যর বলতে ইচ্ছে হয়,

-” নট গুড মর্নিং। সকাল সকাল ঘুম মাটি করে সেটা কখনো শুভ সকাল হয় নাকি। বরং অশুভ সকাল বল।”
এসব এক কোণে ঠেসে রেখে বড় করে হামি দিয়ে মুখে বলল দিব্য,
-” গুড মর্নিং।”
নুরজাহান নিতিকে ডেকে আদেশ করলেন দিব‌্যর কফি আনতে। বানানো কফি শেষ। নিতি রাগে রাগে কফি বানাতে থাকে। দিব্য বলে,
-” দিদুন কী জন্য আজ হঠাৎ সকাল সকাল ডেকেছো?কারন কী?”
নুরজাহান অসন্তোষ বদনে চেয়ে বললেন,

-” আটটা বাজতে চললো। এখনো তোমার সকাল সকাল রয়ে গেলো। বেলা করে ওঠা ভালো নয়। স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষ’তি’কর। আর কিছু বলার আছে। আগে কফি খাও। ঘুমের রেশ কাটুক ধীরে সুস্থে বলছি।”
ইভান বসে ফোন স্ক্রল করছে। শিরিন আর নুরজাহান টুকটাক কথা বলছে। তনুজা কিচেনে আছে। এরমধ্যে নিতি কফি বানিয়ে এনে দিব্যর সামনে ধরে। দিব‌্য হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়েই থুথু করে উগড়ে দেয়। উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে চায়। দিব্য ঝারি দিয়ে বলে,

-” এটা কফি নাকি আর কিছু। বি/ষও তো খেতে এর থেকে বেটার হবে। ইচ্ছে করে এটা করেছিস তাই না।”
নিতি চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” তুমিই তো কড়া করে কফি খাও। সেটাই তো করেছি।”
-” এটা কড়া কফি? নাকি পুরোটাই তেতো কফি।”
নুরজাহান নিতির দিকে চেয়ে গম্ভীর মুখে বললেন,
-” নিতি দিব্য যা বলছে তা সত্যি। তুমি সামান্য কফিটাও ঠিকঠাক বানাতে পারো না।”
নিতির মুখটা কাঁচুমাচু হয়। নিতি নিজের সাফাই গায়,
-” বি/ষে বি-ষ-ক্ষ-য়। তাই ভাবলাম তেতোই যদি তেতো দূর হয়। ছোটো মির্জার তো মুখের কথা খুব তেতো; যদি তেতো কফি খেয়ে ওরকম মিরাকেল কিছু ঘটে। তেতোয় তেতোক্ষয় হয়। তাই একটু বেশি..”
নুরজাহান কড়া চোখে তাকাতেই নিতি জিভ কা’টে। থেমে যায়। নুরজাহান আদেশ স্বরুপ বললেন,

-” যাও আবার কফি বানিয়ে আনো।”
নিতি বিরক্ত হয়। অসহায় চোখে চেয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
-” আবার বানাতে হবে! না বানালে হয় না।”
নুরজাহান রুষ্ট হয়ে বললেন,
-” আমরা স্বামীর জন্য মাঝরাতেও হেঁসেল জ্বা’লি’য়েছি। গরম খাবার রান্না করেছি। সেখানে সামান্য কফি বানাতে এখনকার মেয়েদের এত আলসেমি।”
নিতি তেরছা চোখে দিব্যর দিকে তাকায়। ফের নুরজাহানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,
-” ধ্যাত ভালো লাগে না। তোমার নাতির জন্য না রাতে শান্তি আছে আর না তো দিনে। রাতে শান্তিতে ঘুমাতে দেয় না। আজ দুদিন তোমার নাতির জ্বা’লা’তনে রাতে ঠিকঠাক ঘুমোতে পারিনি। এখন সক্কাল সক্কাল আবার আরেক কাহিনী।”

নিতির কথা শুনে বৃদ্ধা নুরজাহান খুকখুক কেশে ওঠে। শিরিন মাথাটা নুইয়ে নেয়। ইভান শুনেও না শোনার মতো করে থাকে। দিব্য মোটামোটা চোখে নিতির দিকে চায়। গা-ধী-টা এমন করে বলছে, সবাই কী না কী ভেবেছে! দিব্যর কড়া চাহনি তারপর উপস্থিত সবার অপ্রস্তুত মুখশ্রী দেখে নিতির হুঁশ ফেরে। মনে মনে কপাল চাপড়ে বলে,
-” ইয়া আল্লাহ! ইয়া মাবুদ! কী বললাম! আর সবাই কী বুঝল? কোন জ্বালানির কথা ধারণা করল। আল্লাহ মালুম!”
নিতির লজ্জায় মাটির তলায় লুকোতে ইচ্ছে করছে। বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,
-“হে বসুধা! ভাগ হও! লুকাতে একটু আশ্রয় দাও।”

কাজের মেয়েটি খবরের কাগজ হাতে আসে। সামনের টি-টেবিলে নামায়। নিতির লজ্জা, অস্বস্তি দূর করতে মেয়েটি দেবদূত হয়ে যেন আসে। মনেমনে নিতি অসংখ্য ধন্যবাদ জানায়। খবরের কাগজের প্রথম পাতায় নজর আটকায় সবার। ইভান ছাড়া বাকীরা বিস্মিত নজরে চেয়ে। চশমটা এক আঙুলে নাকের ডগায় এনে ফের চোখে এঁটে নুরজাহান শুধালেন,

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ৩০

-” এইটা সেই মাইয়া না। পত্রিকায় ছবি, যাত্রাপালা শুরু করেছে নাকি?”
শিরিন হেডিং লাইন পড়তে থাকে।

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ৩২