প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ৩৩
মুসতারিন মুসাররাত
একটি কর্মচঞ্চল দিনের পরেই আগমন ঘটে সুন্দর বিকেলের। সূর্যের নরম সোনালী রোদ্দুরে বিকেলের মাধুর্য কয়েকগুণ বাড়ে। দিন শেষে বিকেলের এই সময়টুকু আমজনতার কাছে অনেক প্রিয়। পার্কে পার্কে দেখা যায় শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সী ছেলেমেয়েদের, সাথে বুড়ো-বুড়িদের গল্পের আসর। একসাথে তিনটা মেয়ে আর একটা ছেলে হেঁটে আসছে আর উচ্চস্বরে কিছু বলছে তো আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। খোলা আকাশের নিচে, মুক্ত যায়গায় হাসির শব্দ পাখিদের কলতানের মতো বাতাসে মিশে চারদিকে সুর তুলে ছড়িয়ে পরে। পার্কের পুকুরের সাইডে শান বাঁধানো বসার জায়গায় নিতি আর ওর ফ্রেন্ডরা বসতে নেয়। এমন সময় বিশালাকার গাছটির মগডালে বসা একটি কাক পটি করে। কপাল ভালো থাকায় অল্পের থেকে নিতি বেচারি বড় বাঁচা বেঁচে যায়। আর এক ইঞ্চি এমন-তেমন হলেই সোজা পড়ত নিতির মাথায়। শ্যাম্পু করা ঘ্রাণ ছড়ানো চুলগুলো মূহুর্তেই নোং/রা হতো। এটা ভাবতেই নিতি শিউরে উঠল। একলাফে দু’কদম পিছিয়ে গেল। বন্ধুরা নিতিকে নিয়ে একদফা মজা লুটতে ভুলেনি। বন্ধুদের উচ্চস্বরে হাসির শব্দে নিতি রাগান্বিত মুখবিবরে চাইল। চেঁচিয়ে উঠল,
-” অ্যাই হা/রা/মির দল। মাথার উপর পটি পড়েনি তাই এমন মজা নিচ্ছিস, যদি হতো তাহলে কীনা কী করতিস? ইয়া আল্লাহ! রক্ষা করেছো। বড়সড় বিপদ থেকে বেঁচে গেলাম।”
থেমে ফ্রেন্ডদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে ফের বলল,
-” কোথায় আমার সাথে সাথে দুই হাত তুলে শুকরিয়া জানাবি। তা না এরা কী না হে হে করে হাসছে। যত্তসব!”
নিতির কাঁধে একহাত রেখে অন্যহাতে পেট চেপে হাসতে হাসতে রিয়া বলল,
-” স-স্যরি দোস্ত।”
নিতি এক ঝটকায় কাঁধ থেকে রিয়ার হাতটা নামিয়ে চোখ গরম করে চাইল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” বে’ক্কে’লের মতো হাসি বাদ দে। আর চল ওদিকে গিয়ে বসি। আমি আর এখানে কোনো গাছের তলায়-টলায় থাকছি না ভাই।”
তুষার বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” নিতি এই জায়গাটা কিন্তু নিরিবিলি ছিলো। এদিকে ভিড়ও একটু কমই। কী সুন্দর পুকুরের স্বচ্ছ টলটলে পানি! তারপর সুন্দর হিমেল হাওয়া বইছে! এক কথায়…”
কথার মাঝেই দাঁড়ি টেনে দেয় নিতি। দুই হাত তুলে স্যারেন্ডার করার ভঙিতে বলে,
-” ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়। আমি আর এক সেকেন্ডও এখানে নেই ভাই। তোরা থাক। পুকুরের স্বচ্ছ জল আয়না বানিয়ে তোদের থোবড়াখানা দেখ। আমি গেলাম।”
নিতির বলতে দেরি তবে পা চালাতে সময় নেয় না। শেষ কথাটা বলতে বলতে হনহনিয়ে হাঁটা ধরে। ফ্রেন্ডরা একসাথে ডেকে ওঠে,
-” অ্যাই নিতি? চলে যাচ্ছিস নাকি?”
উপরে কংক্রিটের তৈরি ছাতার মতো ছাউনী। মাঝে একটা গোল টেবিল চারপাশে চেয়ার। সেখানে এসে ধপ করে বসে নিতি। পরপর বাকি সবাইও এসে বসে পরে। তুষারের হাতে থাকা বক্সটা টেবিলে নামায়। রিয়া হঠাৎ প্রশ্ন করল,
-” অ্যাই কি’প’টের রাজা জন্মদিনে ট্রিট দিতে রাজি হচ্ছিলি না কেনো? আগের বছরগুলোতেও তোকে অনেক করে বলেছি, এটাসেটা বলে পাশ কে’টে গিয়েছিস। এবার যখন সবাই মিলে ধরলাম কূলকিনারা না পেয়ে মাইনকাচিপায় পরে রাজি হলি।”
তুষার মশা তাড়ানোর ভঙি করে একহাত কানের পাশে নাড়িয়ে বলল,
-” আরে এসব জন্মদিন-টন্মদিনের কালচার আমাদের ফ্যামেলিতে তেমন করা হয় না। ছোটবোন বায়না করলেও আমার গিন্নী তো ক্ষেপে ওঠে। তোদের ট্রিট দেওয়ার জন্য মায়ের থেকে টাকা চাইতেই তিনি শুনে তো কথা শুনিয়ে দিলেন। বুড়ো বয়সে আবার জন্মদিন কীসের? যেদিন জন্ম নেয়, ঐদিনই তো হয় জন্মদিন। এখন এত্ত বড় দামড়া ছেলে নাকি কেক-ফেক কিনে রঙ তামাশা করবে। মুখের উপর এমন কথা শুনে মেজাজ খা’রা’প হয়েছিলো।”
নিতি কপাল কুঁচকে বলল,
-” তোর দাদি?”
-” হুম।”
-” আমার নানু আপুর অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন নাকি! কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে।”
রিয়া বক্সের উপরের বাঁধন দুই হাতের সাহায্যে খুলে একটা মাঝারি সাইজের চকলেট কেক বের করে। তারপর ক্যান্ডেলগুলো সাজিয়ে দেয়।
দিব্যর এক ফ্রেন্ড প্রজেক্টে ভালো একটা জব পেয়েছে। সেই খুশিতে বন্ধুদেরকে চা-নাস্তা খাওয়াবে। এরা এই দিকেই ছিলো আড্ডা দিচ্ছিলো। এরমধ্যে একজন বলে সামনের পার্কের ভেতর ভালো একটা ক্যাফেটেরিয়া আছে চল ওখানে গিয়ে নাস্তা করি। যেমন বলা তেমন কাজ। বন্ধুদের সাথে আসতে নিয়ে হঠাৎ দিব্যর দৃষ্টি আটকায় নিতির দিকে। নিতি গ্যাস লাইটার অন করে একএক করে ক্যান্ডেল জ্বা’লি’য়ে দিচ্ছে। নিতি দাঁড়িয়ে টেবিলের দিকে ঝুঁকে কাজটি করছে। ওর খোলা চুল পাশের চেয়ারে বসা ছেলেটির মুখের উপর পড়েছে। এটা দেখে কেনো জানি দিব্যর হাতের আঙুল আপনাআপনি মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। প্রচন্ড রাগ হয়। কার উপর রাগটা হচ্ছে? কী জন্য হচ্ছে? দিব্যর রাগি সত্ত্বা তা জানে না। তবে না চাইতেও চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে।
ওদের থেকে সামান্য দূরত্বে থাকা বসবার জায়গায় দিব্যরা বসে। একজন ক্যাফেটেরিয়ার ভেতর ঢুকে অর্ডার দিতে। দিব্য চেয়ারে বসে আড়চোখে বারবার ওদিকে চাইছে। রিয়া ফিসফিসিয়ে বলল,
-” যেই এখানে মেয়ে দেখেছে আর অমনি পিছুপিছু ঘুরঘুর করতে বসে পড়েছে। লুজাররা!”
নিতি কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে শুধায়,
-” মানে? কাকে কী বলছিস? বুঝতে পারছি না।”
কণ্ঠ একদম খাদে নামিয়ে বলল,
-” আরে দেখ না। ঐযে কয়েকটা ছেলে পাশের টেবিলে বসেছে। আমি তো ভ’য়ে আছি ব্যাড টোন আবার না দেয়। মেয়ে দেখলেই তো..”
কথার মাঝেই তুষার ভাব নিয়ে শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে বলল,
-” আরে ভ’য় পাচ্ছিস কেনো? আমি আছি না। আমি থাকতে নো চিন্তা, ডু ফুর্তি। চিল কর আজেবাজে কিছু বললেই একেকটার চৌদ্দ গুষ্টির নাম ভুলিয়ে দিবো।”
রিয়া ভেংচি কে’টে বলল,
-” আরে গায়ে এক মুরগির বল নেই, আর ভাব নিচ্ছিস সিংহের মতো। খালি বাঁশের মতো লম্বা একটা দেহই তোর। ছাঁটাই করলে দু কিলো গোশত পাওয়া যাবে কীনা সন্দেহ!”
রোগা-পাতলা শরীরটাকে নিয়ে মুখের উপর ঠাসঠাস এরুপ বলায় বেচারার মুখটা অপমানে থমথমে হয়ে যায়। নিতি আর অন্য বান্ধবী ঠোঁট চেপে হাসে। রিয়া আরো বলে,
-” আর অ্যাই নিতি আর স্মৃতি তোরা কিছু বল। মনে নেই সে বছর কলেজে র্যাগিং এর স্বীকার হয়েছিলাম। আমাদের থেকে বেশি ভ’য় তো এই ব্যাম্বু তুষার পেয়েছিলো। ইয়া আল্লাহ! সে কী থরথরিয়ে কাঁপা। আরেকটু হলে তো প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলতো। ভাগ্যিস স্যার চলে আসে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা আর ঘটে না।”
নিতি একহাতে মুখ চেপে হাসতে থাকে। তুষার রিয়ার দিকে চোখ পাকিয়ে চায়। এদিকে হাসির রোল পড়েছে। অন্যদিকে কেমন পো’ড়া পো’ড়া গন্ধ ভুরভুর করছে। কখন যেনো ধপ করে ধোঁয়া বেরুতে পারে। হঠাৎ পাশের টেবিলে নজর দিতেই নিতির চোখ গিয়ে পরে সর্ব প্রথম দিব্যর দিকে। দিব্যও ফের চায়। দু’জনের চোখে চোখ পরে। দিব্য দু সেকেন্ড সময় ব্যয় না করে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। নিতিও নজর সরিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মশগুল হয়। নিতির ডোন্ট কেয়ার ভাবে দিব্যর রাগ তরতরিয়ে বাড়ে। কোকোকলার ক্যানের মুখ খুলে ঢকঢক করে অর্ধেক শেষ করে শব্দ করে টেবিলে নামায় দিব্য।
ওদিকে কেক কে’টে ওরা খেতে থাকে। সাথে একে অপরের মুখে মাখাতেও থাকে। দিব্যর ফ্রেন্ডরা এটাসেটা কথায় মশগুল থাকলেও দিব্য চুপচাপ। নিতির মুখে কেক লেগে থাকায় কেমন যেনো চুলকাতে থাকে। নিতি ওয়েট টিস্যু বের করে মুছতে মুছতে বলল,
-” ধ্যাত! রিয়া তোকে বললাম মুখে দিস না ভাই। কেমন তেলতেলে লাগছে। চুলকাচ্ছে।”
থেমে আরো বলে,
-” দ্যাখ তো মুখে আরো আছে কিনা। মুখের এই হাল করে বাসায় ফিরলে আমার মান্ধাতার আমলের নানুআপু এক পাও ভিতরে ঢুকতে দিবে না।”
তুষার নিজের ফোনটা একহাতে নিতির সামনে ধরে বলে,
-” ওয়েট। তাড়াহুড়ো করিস না। এবার দেখে ধীরে ধীরে পরিষ্কার কর।”
ওদিকে এহেন দৃশ্য আর আবছা কথা কর্ণপাত হতেই দিব্যর রাগ আকাশ ছুঁলো। দপ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। হাতের ক্যানটা নিচে ফেলে পা দিয়ে সজোড়ে লা’থি মা’রে। ক্যানটা গিয়ে সোজা নিতিদের টেবিলে পরে। এটা দেখে দিব্যর ফ্রেন্ডরা ভড়কায়, আতংকিত হয়। নিতি কপাল গুটিয়ে চাইল। রিয়া রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
-” দেখেছিস তো কী ফা’জি’লের দল। তখন বললাম না। এখনই অ’সভ্য’তামি শুরু করে দিলো। তবে চল কিছু বলে আসি। চুপ থাকলে মাথায় উঠে ধে ধে করে নাচবে। সুযোগ পাবে।”
কথাটা শেষ করেই চেয়ার ছেড়ে ওঠে গটগট পা ফেলে এগোয় রিয়া। পিছুপিছু নিতি আর বাকিরা আসে। রিয়া একহাত কোমড়ে রেখে অন্যহাতের আঙুল তুলে বলল,
-” এটা কী ধরণের অ’সভ্য’তামি? ভেতরে কোনো ম্যা..”
কথার মাঝেই দিব্যর এক ফ্রেন্ড বলল,
-” স্যরি আপু স্যরি। আসলে ও খেয়াল করেনি।”
দিব্য নিজ বন্ধুর দিকে রাগি দৃষ্টিতে চায়। এত সাফাই কেনো দিতে হবে! দিব্যর মাঝে ছিটেফোঁটা অনুশোচনার লেশ মাত্রও দেখা যাচ্ছে না। পাশের ছেলেটির কথায় রিয়ার রাগ খানিকটা পড়লেও দিব্যর নির্লিপ্ত নির্বিকার ভাব দেখে বলল,
-” আপনি কেনো স্যরি বলছেন। কাজটি করেছে উনি। তাই ওনাকে স্যরি বলতে হবে।”
দিব্য মুখ খুলবে তন্মধ্যে আগেভাগে নিতি তড়িৎ বলল,
-” অ্যাই রিয়া বাদ দে না। ”
নিতির কথা শুনে দিব্যর ফ্রেন্ড নিতির দিকে চাইল। মস্তিষ্কে প্রেশার দিয়ে কিছু মনে করল। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেলল। সেদিন কাজী অফিসে সাক্ষী ছিলো এরা। মূহুর্তেই আবছা অবয়ব স্পষ্ট হয়। হ্যা এটাই তো দিব্যর কাজিন প্লাস বউ। এটা মনেমনে বলেই তড়িঘড়ি করে বলে উঠল,
-” দোস্ত এইটা ভা..”
নিতির কথায় এর কথা অসম্পূর্ণ রয়। নিতি বলল,
-” উনি আমার পরিচিত বাদ দে।”
রিয়া, স্মৃতি একসাথে বলল,
-” পরিচিত!”
-” হ্যাঁ। আমার কাজিন।”
দিব্যর বন্ধুরা খুকখুক করে কেশে উঠল। তড়াক করে দিব্যর মেজাজ তীব্র চটল। দিব্যর অবচেতন মন অন্য পরিচয়টা আশা করেছিলো হয়তো। তাই তো কাজিন পরিচয়টায় রাগ বাড়ল। নিতির দিকে নিটোল চাহনিতে একপল চেয়ে হনহনিয়ে হাঁটা ধরে দিব্য। স্মৃতি এক্সাইটেড হয়ে বলল,
-” তোর কাজিন কিন্তু দেখতে মাশাআল্লাহ হেব্বি সুন্দর! একদম হ্যান্ডসামের ডিব্বা। কী রাগি লুক মাইরি! আমি তো এক পলকেই ফিদা।”
একহাতে চুলগুলো পিছনে বাতাসে উড়িয়ে দিতে দিতে নিতি বলে,
-” একদম ওদিকে নজর দিবি না। ওটা অলরেডি বুকড।”
মূহুর্তেই স্মৃতির মুখের হাসি কর্পূরের মতো উবে যায়। মুখটা ম্লান হয়। ঠোঁট উল্টে বলল,
-” সত্যি?”
নিতি মাথা নাড়িয়ে বলল,
-” হুম।”
নিতি হঠাৎ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। বন্ধুদেরকে তার বিয়ের কথা বলে। এরা সব কটা সপ্তম আকাশ থেকে সোজা জমিনে পড়ার মতো বিস্মিত হয়। একসাথে উচ্চস্বরে বলে উঠল,
-” সত্যিই ওটা তোর বর! তুই ঐ রাগি হ্যান্ডসামের বউ?”
নিতি মুচকি হেসে ভাব নিয়ে বলল,
-” হুম সত্যি সত্যি তিন সত্যি। রাগি মহারাজের ঘাড়ত্যাড়া বউ আমি।”
কয়েকদিন পর…
ঘড়ির কাঁটা রাত একটার ঘর ছুঁইছুঁই। নিতি মেসেজে কথা বলছে। মেসেজের টুং টুং শব্দ দিব্যর কানে পৌঁছাতেই শরীরের শিরা-উপশিরায় র/ক্ত টগবগ টগবগ করছে। যখন শুনেছে নিতি তুষারের সাথে চ্যাট করছে তখন থেকেই মেসেজ নোটিফিকেশনের শব্দটা গায়ে কা’টা’র মতো ফুটছে। মনে হচ্ছে মৌমাছি হুল ফোটাচ্ছে। দিব্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” ফোনটা সাইলেন্ট করে যত গল্প করার কর। এরকম
টুং টং শব্দে আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। ঘুমাতে পারছি না।”
নিতি এককান দিয়ে কথাটা ঢুকিয়ে অন্যকান দিয়ে বের করে দেয়। গায়েই মাখে না। ওর মতো চ্যাট করছে। এরকম বেশ কিছুক্ষণ চলতে চলতে দিব্য নিতির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে। নিতি উঠে বসে অসহায় চোখে ফোনের দিকে চাইল। মাথায় একহাত রেখে আফসোস করে বলল,
-” ইয়া মাবুদ! আমার সাধের ফোনটার কী হাল করলে?”
দিব্যর সোজাসাপ্টা উত্তর,
-” এবার চ্যাটিং কর। তখন থেকে বলছি কথা তোর কানেই ঢুকছিলো না তো।”
নিতির রাগ হলো। বলে উঠল,
-” ইশশ্! এই ফোনটা আমার পাপা আমার তেইশতম বার্থডে তে গিফট করেছিলো। এটা আমার কাছে কতটা স্পেশাল ছিলো তোমার কোনো ধারণা আছে?”
থেমে ফোঁসফোঁস নিঃশ্বাস ফেলে হুমকি দিয়ে বলল,
-” দাঁড়াও তোমার ফোনের কী অবস্থা করি দ্যাখো।”
এই বলে ঝট করে বালিশের পাশ থেকে দিব্যর ফোনটা হাতে তুলে নেয়। দিব্য তড়িৎ গতিতে উঠে বসে নিতির হাতটা ধরে ফেলে। বলে,
-” নিতি রাখ আমার ফোন। রাখ বলছি। নইলে খারাপ হবে কিন্তু!”
দিব্যর হাতটা অন্যহাতের সাহায্যে ছড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে নিতি। শক্তিতে না পেরে দুষ্টু বুদ্ধি আঁটে। ভাবার সাথে সাথেই নিতি চিমটি কা’টে দিব্যর হাতে। দিব্য কপাল কুঁচকে হাত সরিয়ে নিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। নিতি হাতটা উঁচুতে তুলে ফেলে দিবে বলে। এমন সময় দিব্যও নিতির দিকে সরে হাত বাড়ায়। আচমকা দু’জনে এদিক সেদিক ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে দিব্য নিতির গায়ের উপর পরে। পরপর দিব্য নিতির একটা হাত নিজের হাত দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে। নিতি শুকনো ঢোক গিলে অসহায় চোখে চায়। দিব্য অন্যহাত দিয়ে নিতির হাত থেকে ফোন খুব সহজেই কেড়ে নেয়। পরপর ফোনটা বালিশের কাছে ছুঁ’ড়ে নিতির মুক্ত হাতটাও বিছানার সাথে চেপে ধরে। কপালে গাঢ় ভাঁজ ফেলে নিতির দিকে ঝুঁকে। শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
-” তোর সমস্যা টা’কি বলতো?”
নিতি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-” ক-কীসের সমস্যা?”
দিব্য আরেকটু নিতির দিকে ঝুঁকে। কপালের ভাঁজ মিলিয়ে নেয়। শান্ত শীতল চোখে চেয়ে বলল,
-” বিয়ে করার জন্য তো উঠে পড়ে লেগেছিলি। আচ্ছা এবার বল তো সেদিন বন্ধুদের সামনে শুধু কাজিন কেনো বললি? আর ইদানিং তোর হাবভাব আমার মোটেই সুবিধার ঠেকছে না। ইচ্ছে করে আমাকে রাগিয়ে দিস। আর সবার সামনে আমাকে খারাপ প্রমাণ করিস।”
নিতির শ্বাস প্রশ্বাস ক্রমশ বাড়ছে। দিব্যর নিঃশ্বাস মুখের উপর এসে পড়ছে। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিতি উত্তর না দিয়ে মিহি স্বরে বলল,
-” ছাড়ো। আমার লাগছে তো।”
দিব্য ডান ভ্রু উঁচিয়ে ব্যঙ্গ করে বলল,
-” বিয়ে করার জন্য যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছিলি। তারপর সু-ই-সা-ই-ডের হুমকি-ধামকি সব দেখেশুনে আমি তো ভেবেছিলাম অ’ন্ধের মতো ভালোবাসিস। একেবারে ভালোবেসে অন্ধ হয়ে গিয়েছিস তাই ম’র’তে গিয়েছিস।”
নিতি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
-” মাথা খা’রাপ হয়েছে আমার।”
-” তোর মাথা নতুন করে খারাপ হবে কী? কোনো সময় ভালো ছিলো? আমার জানামতে তো ছিলো না।”
নিতি ভেংচি কাটল। ওর মতো বলল,
-” কথা না বাড়িয়ে আসল কথায় আসি; আমার বয়েই গিয়েছে ভালোবেসে অ’ন্ধ হতে। আমি অন্ধ হই আর তুমি সুযোগ লুফে নাও।”
দিব্যর কপালে সুক্ষ্ম রেখার উদয় হয়। বিস্ময়ে কৌতুহলী গলায় প্রশ্ন করল,
প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ৩২
-” সুযোগ নেই মানে?”
-” ভালোবেসে অ’ন্ধ হই। আর তুমি সেই অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে আমার হাতে একটা বাটি তুলে দাও ভি-ক্ষা করতে। বেকার মানুষ তুমি তোমায় নিয়ে বিশ্বাস নেই এমনটা করতেও পারো। মনে তো ভালোবাসা-টালোবাসা এক আনাও নেই। তাই বউ দিয়ে ভি’ক্ষা করাতে দুদুবার ভাববে না।”