প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৩
আদ্রিতা নিশি
সারহানের উল্লেখিত কথাগুলো শ্রবণ হতেই অরিত্রিকা হাস ফাঁস করতে লাগলো। মন অনেকটাই বিচলিত হলো তার। সে আড়চোখে সারহানের মুখ পাণে দৃষ্টি ফেলছে কিছুক্ষণ পর পর। চোখে মুখে বিরাজ করছে দ্বিধা। সারহান ভাই কি তার লিখা না চিনেই কথাগুলো বলেছে? কিছুদিন আগেও তো তিশার চিঠির জন্য তাকে কতো বকেছিলো। আজ কেনো বকলো না!একবারও তো জিজ্ঞেসও করলো না চিঠিটা কই পেয়েছে সে! নানা ভাবনায় অরিত্রিকার মাথা ঘুরছে। অরিত্রিকার আড়চোখে দেখা দৃষ্টিগোচর হলো না সারহানের।সে পুরো সময়টা খেয়াল করেছে চঞ্চল মেয়েটিকে। আগে অনেক অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়েছে তবে আজকের চিঠি লিখেছে ভাবতেই সারহান ভেতরে ভেতরে বিস্মিত হয়েছে। অরিত্রিকা এমন একটা কাজ করতে পারে ভাবতেই পারেনি। সারহানের বুঝতে বাকী নেই অরিত্রিকার মনে তার জন্য গভীর অনুভূতি তৈরী হয়েছে।
অরিত্রিকা সারহানকে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তি নিয়ে বললো ~ সারহান ভাই চিঠিটা দিন।এটা আমি নিজের কাছে রেখে দিচ্ছি। আপনি তো আগেরবার বকেছিলেন। তখন তো রাখেন নি?আজ কেনো রাখতে চাইছেন?!
সারহান অরিত্রিকার কথার মর্মার্থ ধরতে পারলো ঠিকই।
সে তবুও বুঝতে পারেনি এমন ভাব নিয়ে অরিত্রিকার সহজ সরল প্রশ্নের উত্তর দিলো ~আগেরটা কোনো চিঠি ছিলো না। গার্বেজ ছিলো। অ/শ্লীল টাইপের কোনো লেখা সাদা কাগজে লিখলেই চিঠি হয়ে যায় না। আর আজকের চিঠিটা কেনো রাখতে চাইছি তা আগেই বলেছি। এই বিষয়ে নো মোর টক ওকে?
অরিত্রিকা মুখ ভার করলো।মনে মনে সাদাতকে বাকলো কিছুটা।সে মুখ ফসকে বললো~ চিঠিটা তো আমি…….
অরিত্রিকা আর কিছু বললো না।জিভ কেটে সে দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো।কি বলতে যাচ্ছিলো সে।বললে তো সারহান ভাই নিশ্চিত কথা শুনাতো।তারপর বাড়ির সকলের সামনে কান ধরে উঠ বস করাতো।
সারহান অরিত্রিকাকে হঠাৎ দুহাতে মুখ চেপে রাখতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো। সে ভ্রুযুগল কুঁচকে থাকা অবস্থায় বললো~ কি হয়েছে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অরিত্রিকা মাথা নাড়িয়ে ইশারায় বললো কিছু হয়নি। সারহান রুদ্ধ স্বরে বললো~ এমন পাগলের মতো না দাঁড়িয়ে ভালোভাবে দাঁড়া।
অরিত্রিকা মুখ থেকে হাত নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।তারপর বললো~আপনি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন?
সারহান একপলক তাকিয়ে অরিত্রিকাকে রেখেই পা বাড়ালো বাসার দিকে। অরিত্রিকা তাজ্জব বনে গেলো।কোনো উত্তর না দিয়েই চলে যাচ্ছে। আজব মানুষ একটা। সেও কিছুটা দ্রুততার সাথে হাঁটতে হাঁটতে সারহানের পিছু পিছু চললো।
তানিয়া বেগম বিকেলের নাস্তা ডাইনিং রুমের টি টেবিলে এনে রাখছেন।সাথী বেগম রান্নাঘরে রাতের রান্নার জন্য সবজি কেটে নিচ্ছেন।সাদাত সোফায় বসে একাই নাস্তা সাবার করছে। খেতে খেতে একটু পর পর দরজার দিকে উঁকি দিচ্ছে।ভাই এখনো কেনো আসছে না? নিশ্চয়ই অরিত্রিকাকে বকছে। ইস! বাহিরে চিঠিটা না নিয়ে গেলে ভাইয়ের হাতে পরতো না। আর বেচারা অরিত্রিকা বকাও খেতো না। সাদাত অনেকটা অনুতপ্ত তার কাজে।সবসময় অরিত্রিকা ফেঁসে যায় তার ভাইয়ের কাছে। সাদাত কারো পদধ্বনি শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সারহান সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে।সে ভীত হলো। চোখ ফিরিয়ে না দেখার ভান করে খাওয়ায় মনোযোগী হলো যেনো কিছুই দেখেনি সে।তানিয়া বেগম মাত্রই সাদাতের পাশে এসে বসলেন। সারহানকে ডাইনিং রুমে দেখেও কথা বললেন না।ছেলের ব্যবহারে অভিমান করেছেন তিনি।মায়ের এমন ব্যবহারে সারহানের কষ্ট অনুভব হলো।সারহান আহত দৃষ্টিতে মায়ের পাণে তাকিয়ে তানিয়া বেগমের পাশে গিয়ে বসলো। তানিয়া বেগম বুঝতে পেরেছেন সারহান তার পাশে বসেছে তবুও অন্যদিকে মুখ ভার করে তাকিয়ে আছেন। সারহান বুঝলো এখনো রা/গ কমেনি।সে মায়ের দুহাত ধরে অপ/রাধীর ন্যায় বললো~ মা এখনো এমন ভাবে রা/গ করে থাকবে? দুইদিন ধরে রা/গ করে আছো।একটা কথা অন্তত বলো?
তানিয়া বেগম নিশ্চুপ হয়ে আছেন। তিনি পণ করেছেন সারহানের সাথে কয়েকদিন কথা বলবেন না। শিক্ষা দিবেন ছেলেকে। তার কোনো কথাই সারহান শোনে না। ছেলেটা দিন দিন অবাধ্য হচ্ছে।তানিয়া বেগম চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক। কিন্তু আরশাদ সাহেব রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন সেই সুবাদে সারহানও ওই পথে গেছে।মেডিকেলে না পড়ে ভার্সিটিতে পড়েছে। জড়িয়েছে বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে। ছেলেকে এমন অনিশ্চিত ভয়ং/কর জীবন বেছে নিতে দেখে বার বার বারণ করেছিলেন কিন্তু ছেলে যে একরোখা। যা মন থেকে করতে চাইবে তাই করবে। মা হয়ে এমন একটা জীবনে ছেলেকে জড়াতে দেখে ভেতরে ভেতরে ভ/য়ে মূর্ছে যান। তবুও কোনো কিছু প্রকাশ করে না। ছেলের জন্য সবসময় চিন্তায় থাকেন। সারহানকে রাজনীতি মুখী হতে সরিয়ে আনতে বিয়ের জন্য বলেছেন। বেশ কয়েকবার বলেও কোনো কাজ হয়নি। এবার ইফার সাথে কিছুটা জোর করেই বিয়ে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু সারহানকে বোঝানোর সময় পান নি। রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত থাকায় হয়ে ওঠেনি। তবুও একটু আশা ছিলো। ইফা মেয়েটা সবদিক দিক দিয়েই পারফেক্ট ছিলো।সেই কারণেই ভেবেছিলেন সারহান হয়তো এবার বারণ করতে পারবে না। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে না জানিয়ে দিলো।
সারহান মায়ের কোনো উত্তর না পেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।এমন করে যে রা/গ ভাঙ্গবেনা তা বুঝতে পারলে সে।এবার বেশ রে/গে আছে মনে হচ্ছে। সারহান বললো ~ মা আ’ম সরি।
অরিত্রিকা অপর পাশের সোফায় বসে মা ছেলের কান্ড দেখছে। ভালোই লাগছে তার। এতো সুন্দর দৃশ্য খুবই কম দেখেছে সে।ছেলে মায়ের রাগ ভাঙাচ্ছে। সে সামনের টেবিলে থাকা বিস্কুট নিয়ে চিবোতে চিবোতে মা ছেলের কাহিনী মনোযোগী হয়ে দেখতে লাগলো।সাদাত সারহানকে স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে হাঁপ ছেড়ে বাচলো। সারহান যদি আজ তাকে চেপে ধরতো তাহলে অরিত্রিকার এই বাড়িতে লাস্ট দিন হতো।
সারহান এতোক্ষণ মাকে আদুরে স্বরে ডেকেও দেখলো তানিয়া বেগমের মাঝে কোনো হেলদোল নেই।কেমন মূর্তির ন্যায় বসে আছেন। সারহান ভেতরের ভেতরে দ/গ্ধ হলো।ভীষণভাবে নিজের প্রতি বিরক্ত হলো সে। সবার সামনে সেদিন জবাব না দিয়ে অন্যভাবে বললে অন্তত এতোটা সিরিয়াস হতো না বিষয়টা।
সারহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো~ মা! তুমি যদি চাও বিয়েটা করি তবে তাই হবে কিন্তু আমায় কিছুটা সময় দাও। একটু নিজেকে গুছিয়ে নেই।কয়েকদিন যাবত অনেকটা বিজি আছি এটা তো নিজ চোখে দেখছো। তোমার এমন স্বাভাবিক জীবন হতে দূরে থাকা ছেলেকে তো আর সবাই নিজ বাড়ির জামাই বানাতে চাইবে না। এর জন্য নিশ্চয়ই কাঠ খড় পোড়াতে হবে।সেই সময়টা এখন আমার নেই।সময় হলেই যত কাঠ খড় পোড়াতে হয় পুরিয়ে তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করবো।
তানিয়া বেগম সারহানের কথা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই তড়িৎ বেগে ছেলের দিকে তাকালেন। চোখে মুখে সন্দেহের চিহ্ন। উনার মন বলছে ছেলে হয়তো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছে তবে কিসের বিয়ের নাকি কোনো মেয়ের পরিবারকে মানানোর। তানিয়া বেগম কিছুটা কাঠিন্যতা বজায় রেখে বললেন~ তোমার তো নিজের বাড়িতে খেয়াল নেই। হয়েছো তো বাপের মতো।শুধু রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকো।জীবন কি রাজনীতিতেই আটকে থাকবে নাকি সামনে এগোবে?এক কথা তোমায় অনেকবার বলেছি কিন্তু সবসময় অবহেলা করেছো। আমার কথার কোনো মূল্য নেই তোমাদের কাছে তা ঢের বুঝতে পারছি।
তানিয়া বেগমের এমন রুপ দেখে সকলে ভড়কে গেলো। শান্তশিষ্ট মানুষটা আজ হঠাৎ ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। ভাবতেই অবাক হয়ে যাচ্ছে সকলে।অরিত্রিকা তো ভেবেই পাচ্ছেনা সারহান এতো দ্রুত রাজি হয়ে গেলো। এ যন্ত্র মানবের মনে চলছে টা কি? অরিত্রিকা সরু চোখে তাকিয়ে আছে সারহানের দিকে।ভেতরে ভেতরে সে ফুঁসছে।
সারহান হতাশায় নিমজ্জিত কন্ঠে বললো~ তোমার কথা শুনেই রাজি হলাম আর এখন তুমিই টপিক পাল্টে দিচ্ছো?দিস ইজ নট ফেয়ার মা!
~ তোমার মনে চলছে কি সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।নির্বাচন পর্যন্ত সময় আছে তোমার হাতে। তারপরে যেনো আমি আমার বাড়ির বড় বউকে দেখতে পাই। এবার যদি কথা না রাখো এই বাড়ি থেকে যেখানে চোখ যায় সেখানে চলে যাবো।
তানিয়া বেগম ইচ্ছাকৃত হুমকি দিয়েছেন ছেলেকে।এইভাবে না বললে এই ছেলে রাজনীতিতেই আঁটকে থাকবে।সারহান তানিয়া বেগমের কথা শুনে শ্বাস টেনে বললো ~ঠিক আছে।তুমি যা চাইছো তাই হবে।
তানিয়া বেগমের মন ভালো হয়ে গেলো। তিনি খুশিমনে বললেন~ মেয়ে কবে দেখতে যাবি বল?
অরিত্রিকার মাথা গরম হয়ে গেছে। আবার বিয়ে বিয়ে কলরব। মুখ থমথমে হয়ে গেছে তার। বুক্ষে অদ্ভুত চিনচিনে ব্য/থা হচ্ছে। সে সারহানকে কিছু বলতে না দিয়ে একটু হাসার ভান করে বললো~ বড় মা এখনই কেনো মেয়ে দেখা নিয়ে তাড়া দিচ্ছো। ইলেকশন শেষ হোক ধীরে সুস্থে সুন্দর মেয়ে খোঁজা যাবে।এখন মেয়ে দেখতে গেলে দেখা যাবে সারহান ভাইয়ের কোথাও কাজ পরে যেতে গেছে।বিষয়টা খুব একটা ভালো হবে না।
সারহান অরিত্রিকার চালাকি ধরতে পেরেছে। সে জানে অরিত্রিকা চাচ্ছে না অন্য কোথাও বিয়ে নিয়ে কথা হোক।এই মেয়েকে সে বোকা ভেবেছে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত চালাক। তানিয়া বেগম অরিত্রিকার কথা শুনে বললেন~ ঠিক আছে বুঝেছি। তোর সারহান ভাইয়ের বউ তুই আর আমি মিলে পছন্দ করবো।
অরিত্রিকার মুখে কথা নেই।মুখ শুকনো করে বসে রইল। তানিয়া বেগমের কথা শুনে হাত পা আছড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে। নিজের পছন্দের পুরুষের জন্য সে কখনই মেয়ে দেখতে যাবে না।অরিত্রিকা চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ” বড় মা আমি তোমার বড় ছেলেকে ভালোবাসি।আমি উনাকে অন্যকারো হতে দেখতে পারবো না”। কিন্ত সাহস নেই।সারহান অরিত্রিকা শুকনো মুখ খেয়াল করলো ঠিকই কিন্তু এই মুহুর্তে তার কিছু করার নেই।
সারহান সোফা থেকে উঠে তানিয়া বেগমকে স্বাভাবিকভাবে বললো~ মা আমার জন্য রুমে কফি পাঠিয়ে দিয়ো।
~ দুপুরে খেয়েছো?
~খেয়েছিলাম।
~ঠিক আছে রুমে যাও।কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
সারহান সাদাতের দিকে তাকিয়ে বললো~ রাতে আমার সাথে এবার দেখা করবি।কথা আছে তোর সাথে।
সাদাত ঢোক গিলো। তাকে কি আবার চিঠি নিয়ে বকাঝকা করবে? ভাবতে ঘাম ছুটে গেলো তার।সাদাত ঢোক গিলে বললো~ঠিক আছে ভাই।
সারহান আর কিছু বললো না। সে নিজ রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
তানিয়া বেগম উঠে কফি সারহানের জন্য কফি বানাতে গেলেন।
সাদাত অরিত্রিকাকে ডেকে ধীর কন্ঠে বললো~ ভাই তোকে কিছু বলেছে?
অরিত্রিকা না বুঝে মলিন স্বরে বললো~ কেনো?
~চিঠির জন্য।
অরিত্রিকা গোমড়ামুখে নির্দ্বিধায় জবাব দিলো~ তোর ওই যন্ত্র মানব ভাইয়ের প্রেমপত্র ভালো লেগেছে। তাই নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।আর নাকি ফেরত দিবেন না।
সাদাত আশ্চর্যিত হয়ে উচ্চ স্বরে বলে উঠলো~ ভাই এটা করেছে? অসম্ভব।
অরিত্রিকা সাদাতের কথা শুনে বিরবির করে বললো~তোর ভাইয়ের মতিগতি আমিও বুঝতে পারছিনা। মুখোশধারী মানুষ একটা।কোনটা আসল রুপ আর কোনটা নকল রুপ বোঝায় যায় না। আজ আবার বিয়ে করার জন্য কথা দিয়েও ফেলেছে। আমার যে খারাপ লাগছে তা কখনো উনার চোখেই পরেনা।আমি একটু ছোট বলে ইগ্নোর করছে আমারও সময় আসুক আমিও ইগ্নোর করবো তখন বুঝবে কেমন লাগে।
সারহান গোসল করে মাত্রই ওয়াশরুম থেকে বেরোলো মাত্র। তোয়ালে দিয়ে এলোমেলো চুলে থাকা অবশিষ্ট পানি দুহাতে মুছছে সে। তোয়ালে হাতে চুল মোছা থামিয়ে দিয়ে বিছানার ওপর বসলো।তার পাশে বিছানার ওপরে থাকা ফোন নিয়ে আবিরকে জরুরী তথ্য টেক্সট করলো।দুই দিন পর জনসভা আয়োজন করা হয়েছে।সেখানে এমপি মহোদয়সহ আরও অনেক নেতা-কর্মীরা আসবেন, ভাষণ দিবেন। সারহানও সেখানে উপস্থিত থাকবে। নয়ন তালুকদারের পেছনে লোক লাগানো হয়েছে। শ/ত্রুতার কারণে জনসভায় বি/শৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এটার সম্ভবনা সেভেন্টি পার্সেন্ট। এতোটা শিউর হওয়ার কারণ সে খবর পেয়েছে গন্ডগোল সৃষ্টি করার জন্য প্ল্যানিং হচ্ছে।
কেউ একজন দরজা নক করছে। সারহান ভাবলো হয়তো সাদাত এসেছে সে ফোনের দিকে তাকিয়ে ভরাট কন্ঠে বললো~ ভেতরে আয়।
সারহান নিজ ফোনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস দেখছিলো।যেগুলো নয়ন তালুকদারের বিরু/দ্ধে প্রমাণ স্বরুপ।অরিত্রিকা অনুমতি পেয়ে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলো।হাতে তার কফি গুটি গুটি পায়ে এসে সারহানের সামনে উপস্থিত হলো। কফি দিবে এমন সময় সারহানের দিকে তাকাতেই অরিত্রিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সে স্তব্ধ হয়ে রইল।চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে পানি বিন্দু জমে আছে। কৃষ্ণ বর্ণের সিল্কি চুল গুলো অযত্নে কপালজুড়ে লেপ্টে আছে।কুচাকানো ভ্রুযুগল গম্ভীর মুখশ্রীতে শ্যাম পুরুষকে অসম্ভব সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে। উন্মুক্ত শরীর দেখে অরিত্রিকা ঢোক গিললো। তার শরীর শিরশির করে উঠলো।গলা শুকিয়ে চৌচিড়। হাত পা কাপছে তার।অরিত্রিকার ঘোর কাটলো একটু পরেই। সে কয়েকবার পলক ঝাপটালো।এমন অবতারে সারহানকে সামনে দেখে লজ্জা লাগছে তার।গাল গরম হয়ে এসেছে। সে জোরে জোরে শ্বাস টেনে স্বাভাবিক করছে নিজেকে। সে খেয়াল করলো তার বক্ষ এখনো কাঁপছে। বক্ষে ধুকপুক ধুকপুক করছে। অরিত্রিকার গলা কাঁপছে। সে চোখ মেঝেতে নিবদ্ধ করে কম্পনরত কন্ঠে সারহানের উদ্দেশ্যে বললো~সারহান ভাই আপনার কফি।
কম্পনরত মেয়েলী কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই সারহান ফোন স্ক্রল করা বন্ধ করে তখনই সামনের দিকে তাকালো।নিচু মুখশ্রীতে অরিত্রিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে গেলো তার।অরিত্রিকা এখানে কি করছে?আর এমন ভাবে মাথা নিচু করে আছে কেনো?ভাবা শেষ করেই সারহান ভরাট স্বরে শুধালো ~তুই এখানে কি করছিস?
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২২
অরিত্রিকা নিচু মুখশ্রীতেই কোনোমতে বললো~ বড় মা কফি দিতে পাঠিয়েছে।
সারহান খেয়াল করলো অরিত্রিকার হাত কাঁপছে। সে কফির মগটি অরিত্রিকার হাত থেকে নিজের হাতে নিয়ে নিলো আচমকাই।এম কান্ডে অরিত্রিকা চমকে তাকালো সারহানের দিকে। তাকিয়ে আবার মুখ নিচু করে ফেললো সে।সারহান অরিত্রিকার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার রহস্য এখন উদঘাটন করতে পারলো।কফি মগটি বিছানার ওপর রেখে সে আলমারি থেকে ব্ল্যাক টি শার্ট বের করে পরে নিলো। এগিয়ে এসে কফিতে চুমুক দিয়ে বললো~মুখ নিচু করে থাকতে হবে না এবার তাকাতে পারিস।