প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৬
আদ্রিতা নিশি
~সারহান তোর পরাণের শ ত্রু এই হোটেলেই আছে খবর পেলাম।শা*লা সব জায়গায় পিছু পিছু চলে আসে।আমাদের মনে হয় শান্তি দিবেনা।
সারহান ল্যাপটপে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করছে।কপালে দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। আগামীকাল নমিনেশন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে দলীয় প্রতীক কে পাবে তা নির্বাচন অফিসে ঘোষণা করা হবে। সারহান জানে প্রতীক তাদের দলই পাবে। কিন্তু নয়ন তালুকদারকে ভরসা করা ঠিক হবে না। নিশ্চয়ই কোনো কান্ড ঘটাবে। তাই সাবধানতা বজায় রেখে চলা শ্রেয় বলে মনে হচ্ছে তার কাছে।
সারহান ল্যাপটপেই অক্ষিযুগল স্থির রেখেই আবিরকে বললো~ নিশাদ দুইদিন আগে এই হোটেলে উঠেছে। সে জানে আমরা এখানেই আছি। তবুও এখনো শান্ত আছে কেনো বুঝলাম না। চোখ কান খোলা রাখবি। বলা যায় না কখন ফাঁসিয়ে দেয়।
আবির চেয়ারে বসে আপেল খাচ্ছে। সে খেতে খেতে বললো~ টেনশন করিস না। নিশাদের ওপরে আমাদের লোক নজর রাখছে।
~ অন্য হোটেল বুক কর। আমরা সন্ধ্যার দিকে এখান থেকে বেরিয়ে যাবো। এখানে থাকা রিস্ক মনে হচ্ছে।
~এমপি সাহেব যে হোটেলে আছে ওখানে রুম বুক করবো?
~ কর।
আবিরের কল বাজছে।সে খাওয়া থামিয়ে কল রিসিভ করলো। ফোনের অপর প্রান্তে হোটেলের রিসিপশন হতে কেউ একজন কল করেছে।আবির তার কথা শুনে ফোন হোল্ড করে সারহানকে ডেকে বললো~ তোর সাথে জরুরী ভিত্তিতে কেউ একজন দেখা করতে চায়। বললো খুব আর্জেন্ট।দেখা করবি কি?
সারহানের ভ্রু কুঁচকে গেলো।ঢাকায় আবার তার সাথে কে দেখা করতে চায়?কোনো রাজনৈতিক নেতা!নাকি অন্য কেউ?
সারহান কিছুক্ষণ ভেবে বললো~ কোথায় দেখা করবে?
~ এখানেই।নিচে দাঁড়িয়ে আছে।
~ঠিক আছে আসতে বল।
আবির আসার অনুমতি দিয়ে কল কেটে দিলো। ফোন পকেটে পুরে বললো~ এই সময়ে আবার কে দেখা করার জন্য আসছে?
~হয়তো কোনো পরিচিত কেউ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রায় দশমিনিট পর হোটেল রুমের কলিং বেল বেজে উঠলো।সারহান ল্যাপটপ বন্ধ করে আবির কে বললো দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। সে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আবির সময় নষ্ট না করে দ্রুততার সহিত দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই অপরিচিত একজন শাড়ি পরিহিত মেয়েকে দেখে আবির ভড়কে গেলো। বুকে ফুঁ দিয়ে সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কি না? নেই। এই মেয়ে কি করছে এখানে?
~এক্সকিউজ মি মিস্টার! এটা সারহান ইদায়াত চৌধুরীর বুকড্ করা রুম?
আবির এতোক্ষণ পর বুঝলো সারহানের সাথে কোনো ছেলে নয় বরং কোনো মেয়ে দেখা করতে এসেছে। অচেনা মেয়ের সুরেলা কণ্ঠ শুনে আবিরের তো মনে ঢাক ঢোল পেটানো শুরু হয়ে গেছি। আহা!এই মেয়েটাও যদি তার গার্লফ্রেন্ড হতো নাহ বউ হলে মন্দ হতো না! কতোটা মার্জনীয় পোশাক, দেখতেও তেমনই ভদ্র,নম্র, সুন্দরী।
আবির মাথা চুলকে বোকা বোকা হেসে বললো~ ইয়েস। এটা সারহানের রুম।ভেতরে আসুন।
আবির রুমের দরজা থেকে সরে দাড়াতেই মেয়েটি রুমের ভেতর প্রবেশ করলো।আবির দরজা আটকালোনা আর। আধখোলা রাখলো দরজা। আবির ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো মেয়েটি রুম দেখতে অনেকটা ব্যস্ত।
আবির ভদ্রতা রক্ষার্থে বললো~ ম্যাম আপনি সোফায় বসুন। আর কি খাবেন চা অর কফি?
মেয়েটি হালকা হেসে বললো~ আমি এখন কিছু খাবো না।মিস্টার সারহান কোথায়?
~আপনি বসুন। এক্ষুণি এসে যাবে।
মেয়েটা সোফায় বসে পরলো। চোখ মুখ ভীতিগ্রস্ত কিছুটা।হ্যান্ড ব্যাগ হতে রুমাল বের করে ঘাম মুছে চলেছে।দৃষ্টি রুমের প্রতিটি স্থানে। যেনো কোনো স্থান স্ক্যান করতে ব্যস্ত।আবির চেয়ার টেনে বসে মেয়েটির ভাবগতি লক্ষ্য করছে।মেয়েটির মতিগতি মোটেও ভালো লাগছে না। ভদ্রবেশী শাড়ি পরিহিত ইনোসেন্ট ফেসের আড়ালে কোনো চক্রান্তকারী নেই তো? নজর রাখা জরুরী। মেয়ে বলে ছাড় দেয়া যাবে না। এরাই আরও বেশী ভয়ংকর হয়।তবে চেহারাতে মায়াবীনি ভাব আছে। চোখের চাহনিও সম্মোহনী।
সারহান ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখতে পেলো এক রমনীকে। স্থির দৃষ্টিতেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টিতে কোনো খারাপ কিছুর আভাস পেলো না সারহান।
মেয়েটি সারহানকে দেখে চমৎকার হেসে বললো~ হ্যালো মিস্টার সারহান। অবশেষে আপনার দেখা পেলাম।
সারহান সৌজন্যতা রক্ষার্থে চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসে হালকা হেসে বললো~ হাই মিস অর মিসেস। আপনাকে চিনলাম না। পরিচয়টা দিলে সুবিধা হতো।
~ মিহিকা আয়াত আমার নাম। নির্বাচন অফিসে আমার বাবা জব করে। আপনাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি কিন্তু সময় হয়ে উঠেনি দেখা করার। আজ খবর পেলাম আপনি এই হোটেলে উঠেছেন তাই চলে আসলাম।মাইন্ড করেননি তো?
সারহান আবিরের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকালো। আবির তো টেনশনে পরে গেছে।এই মেয়ে সারহানের সাথে শুধু দেখা করার জন্য এসেছে কিন্তু ফোনে এমন করে বললো যে কোনো জরুরী কাজের জন্য এসেছে। তাই জন্য সারহানও রাজী হয়েছে। এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন কাহিনী চলছে। এই মেয়েও কি সারহানকে দেখে ক্রাশ খেয়ে দেখা করতে এসেছে নাকি? সর্বনাশ করেছে। আবির তো ভয়ে আছে। কখন সারহান তার উল্টো ক্লাস নিতে লাগে।
সারহান বিরক্তিভাব আড়াল করে বললো~ নাহহ মাইন্ড করি নি।শুধু কি আমার সাথে দেখা করা আপনার মূখ্য উদ্দেশ্য নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
মিহি থতমত খেলো। সারহানের প্রশ্ন করা দেখে আতংকগ্রস্থ সে। নিজেকে সামলে বললো~তেমন কিছু নয়। আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছে ছিলো।
সারহানের বিরক্ত লাগছে। মেয়েটির হাবভাব তার কাছে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। সে ফোন হাতে নিয়ে ইনানকে ম্যাসেজ করে দিলো গাড়ি পাঠানোর জন্য।তারপর আবিরকে উদ্দেশ্য করে বললো ~ আবির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নে।
আবির বললো ~ ঠিক আছে। টেনশন নট ব্রো। ক্যারি অন কর বৈঠক।
সারহানের মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে রাগান্বিত দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালো। সারহানের ইচ্ছে করছে আবিরকে দু চারটা থাপ্পড় দিতে। ভালোভাবে না শুনে আসতে বলে দিয়েছে। এখন এই অচেনা মেয়ের চক্করে পরে সময় নষ্ট হচ্ছে তার। আবির সারহানের রাগাশ্রিত মুখ যেনো দেখোও দেখলো না এমন ভাব করে কাজে মনোযোগী হলো।
মিহির দৃষ্টি অনেক আগেই সারহানের ফোন স্কিনে পরেছে। এক দৃষ্টিতে কিছু দেখে যাচ্ছে সে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সে ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে উঠলো। তাহলে নিশাদের কথা মোটেও ফেলে দেওয়ার মতো নয়।সারহান মিহির হঠাৎ পরিবর্তনের কারণটা বুঝলোনা।
মিহি হাস্যরত অবস্থায় বললো~ আপনার ফোনের ওয়ালপেপারে যে রমণীর ছবি দৃশ্যমান সে নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী।কারণ আপনার মতো একজন সুপুরুষ তার ভাগ্য রয়েছে। মেয়েটি কিন্তু মাশাল্লাহ। আপনাদের দুজনের জুটি দারুণ মানাবে।
সারহান ভ্রু কুঁচকে নিজ ফোনের দিকে তাকালো। লাল শাড়িতে হালকা সাজে খোলা চুলে হাস্যরত রমণীর মুখ ভেসে উঠলো চক্ষু পটে। মুহুর্তেই সব বিরক্তি যেনো কোথাও উধাও হয়ে গেলো।মনের মাঝে শান্তি অনুভব হচ্ছে তার।
ফোন নিজ পকেটে রেখে সারহান মিহিকে গুরু গম্ভীর কণ্ঠে বললো~ পার্সোনাল বিষয় নিয়ে আমি কাউকে কোনো কথা বলতে আমি ইন্টারেস্টেড নই। ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।আমার সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয়ে গিয়েছে আর কোনো কথা থাকলে দ্রুত শেষ করুন। আমাদের একটু পর বেরোতে হবে।
মিহি কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো~ কোথায় যাবেন?
~ নিউ হোটেল বুক করেছি সেখানে।
মিহির হাসি মুখখানা চুপসে গেলো।সারহান চলে গেলে তো তার কাজ হবে না।কিন্তু কোনো উপায় নেই এখানে আঁটকে রাখার।নিশাদকে কল করে দ্রুত জানাতে হবে বিষয়টা। আর এখানে দেরী করা যাবে না।এখান থেকে যেতে হবে তাকে।
মিহি হন্তদন্ত হয়ে সারহানকে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।সারহান মিহিকে হন্তদন্ত হয়ে চলে যেতে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।
আবির সারহানকে অবাক হয়ে বললো~ মেয়েটি চলে গেলো কেনো?
সারহান মুখ গম্ভীর করে বললো~ মেয়েটি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এসেছিলো।হয়তো নিশাদের স্পাই। মেয়েটির সকল বায়োডাটা আমার চাই আবির এ্যাজ সুন এ্যাজ পসিবল। এদের দেখছি খুব সাহস বেড়েছে।
~ কাজ হয়ে যাবে। তার আগে একটা কথা জানার ছিলো।
~বল।
~ তোর ফোনের ওয়ালপেপারে কার ছবি দেওয়া?
~সময় হলে জানতে পারবি নিজের কাজ শেষ কর আগে।
গভীর রাত। মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম শহরের রাস্তায়। সোডিয়াম আলোয় চারিদিকে আলোকিত হয়ে হয়ে আছে। রাতের রাস্তায় কপোত কপোতীদের দেখা যায় অনেক বেশী। সকলে হাতে হাত ধরে শহরের রাস্তায় প্রেম নিবেদন করছে। নামীদামী রেস্টুরেন্টে বসে আছে নিশাদ।চোখে মুখে বিরক্তির ক্লেশ।মুখে কাঠিন্যতা বজায় রেখে শক্ত চাহনিতে এক দৃষ্টিতে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে সে। তারপাশেই চিন্তাগ্রস্থ বদনে বসে আছে মিহি। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কাজটা শেষ করতে পারেনি এটাই ভয়ের কারণ।বারবার আড়চোখে সামনে বসে থাকা মানুষটিকে দেখছে সে।নিশাদের কোনো ভাব বুঝে উঠতে পারলো না। কি চলছে মানুষটার মনে? প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এভাবে থম মেরে বসে আছে নিশাদ।
মিহি ঢোক গিলে শুধালো~ এখন কি করবে নিশাদ? ড্রাগ/স দিয়ে ফাঁসানোর প্ল্যান তো ফ্লপ হয়ে গেলো। আর ওই এমপির কাছে তো বাহিরের কেউ যেতে পারবে না।
নিশাদ মিহির দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো~ একটা প্ল্যান ফ্লপ হয়েছে তো কি হয়েছে? প্ল্যান বি অনুযায়ী কাজ শুরু করতে হবে।
মিহি ঠোঁট ভিজিয়ে বললো~ কি করতে হবে আমাকে?
নিশাদ পানির গ্লাস নাড়তে নাড়তে বললো~ তোমার কোনো কাজ নেই আর। নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দাও।তোমার এখানে আর কাজ নেই।
মিহি নিশাদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। এই মানুষটা তার মন কেনো বোঝে না?চোখের সামনে অন্যায় করতে দেখেও চুপ থাকে সে। ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত হওয়া থেকে সে আটকাতে পারছে না।সে ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো করতে ব্যর্থ।
মিহি সাহস করে নিশাদের পুরুষালী হাত নিজের হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করলো।নিশাদ মিহির হাতের স্পর্শে অবাক হয়ে তাকালো। সে ভেতরে ভেতরে অনেকটাই চমকে গেছে। যে মেয়ে তাকে দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতো আজ হাত ধরেছে?মিহির চোখে অশ্রু টলমল করছে।নিশাদ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।
মিহি নিশাদের চমকে ওঠা বুঝতে পেরে কম্পনরত স্বরে বললো~ সরি নিশাদ তোমার অনুমতি ব্যতিত হাত ধরার জন্য।কি করবো বলো তোমায় ছোঁয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।আজই হয়তো তোমার সাথে এতোটা কাছ হতে আমার শেষ কথা। একটা কথা বলি তুমি একটু ভেবে দেখো।প্লিজ নিজেকে অন্যায় কাজে জরিয়ো না। এসব থেকে দূরে সরে আসো। নিজের জীবন নিজ হাতে ধ্বংস করো না।মা,বাবার কথা ভেবে এগুলো থেকে বিরত থাকো।নিজের জীবন নিজ হাতে গুছিয়ে নাও। নিজেকে সময় দাও।
নিশাদ হাত ছাড়িয়ে রাশভারী আওয়াজে বললো~ একদম ঘরের বউয়ের মতো বিহেভ করবে না আমার সাথে।এমন আচরণ করে কি বোঝাতে চাও? তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো? আই নো ভালোবাসো আমায়। বাট আমি অরিত্রিকাকে চাই। আই লাইক হার সো মাচ। প্লিজ আমার সামনে নিজের ফিলিংস দেখাতে আসবে না। তুমি তোমার মতো থাকো আমায় আমার মতো থাকতে দাও।
মিহি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললো~ তোমার লাইফে যে মিহিকা বলে কেউ ছিলো ভুলে যেও।আর কখনো তোমার সাথে আমার দেখা না হোক এই কামনা করছি। ভালো থেকো নিশাদ।খুব ভালো থেকো।শেষ বারের মতো বললাম আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ সো মাচ। টেক কেয়ার অফ ইউর সেলফ। বাই।
মিহি আর এক মুহুর্ত রেস্টুরেন্টে অবস্থান করলো না। কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো সেখান হতে।নিশাদ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল মিহির যাওয়ার দিকে।মিহির কথা ভেবেই বুক চিড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো তার। মিহি কেনো বোঝে না সে তাকে ভালোবাসে না।তবুও পিছে পরে আছে। আসলে দুনিয়াটা এমনই। সে যাকে চায় সে তাকে চায় না অথচ অন্য একটা মেয়ে তাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। নিশাদের খেয়াল হলো এখন তো রাত বারোটা পেরিয়ে গিয়েছে। ঢাকা শহরে রাতের বেলা চলাচল খুবই রিস্কের।একা একা এই অবুঝ মেয়েটা কোথায় গেলো? নিশাদ সময় নষ্ট না করে মিহিকে খুঁজতে গেলো।
আজ অরিত্রিকার ঘুম পরিপূর্ণ হয়েছে।মনে হচ্ছে কতোদিন পর তৃপ্তি সহকারে আরামে ঘুমিয়েছে সে। এতোটাই ঘুমিয়েছে যে কখন দুপুর পেরিয়ে গেছে বুঝতেও পারেনি । এটা যে সারহানের সাথে কথা বলার সাইড এফেক্ট ভালো করেই বুঝতে পেরেছে সে।মনও খুশি খুশি লাগছে। মাথাও আজ ভারমুক্ত লাগছে। আড়মোড়া ঘুম থেকে উঠে বিছানার সাথে বিদায় অনুষ্ঠান শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো সে।সুন্দর পরিপাটি হয়ে ইশরাকে কল করলো। ফোনে রিং হয়ে যাচ্ছে তবুও কোনো খবর নেই।কল রিসিভ করছে না।নিচ হতে জোরে জোরে ভেসে আসছে বেশ কয়েকজনের কথোপকথন। আজ কি কিছু হয়েছে? সবাই বাড়িতে কি করছে? অরিত্রিকা ছুটলো নিচে।
আরশাদ সাহেব আর আজমল সাহেব টিভিতে খবর দেখছেন।বেশ আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে চৌধুরী বাড়িতে। সাদাত বাবা,চাচার সাথে তাল মিলিয়ে টিভি দেখছে সেও ভীষণ খুশি আজ। সাথী বেগম আর তানিয়া বেগম রান্নাঘরে রান্না করছেন।ছেলে অনেকদিন পর বাড়িতে আসবে তাই কতো আয়োজন।
আরশাদ সাহেব প্রফুল্লচিত্তে বললেন ~দেখেছো এবারও প্রতীক অন্য দলের আন্ডারে যায় নি। আমাদের দলের প্রতীক আমরা পেয়েছি।এবারও নিশ্চিত এমপি মহোদয় আবারও এমপি হবেন।
আজমল সাহেবও হেসে বললেন~ তা তো পাবেই ভাইসাব। সারহান থাকতে অন্য কোনো দলের কাছে প্রতীক যাবে না। নয়ন তালুকদার এবারও হেরে যাবে।মনে হয় না আর কোনোদিন এমপির চেয়ারে নয়ন তালুকদার বসতে পারবে।
~ চারটা বেজে গিয়েছে। সারহান তো ঢাকা থেকে বারোটার আগেই রওনা দিয়েছে।রাজশাহীতে পৌছাতে হয়তো দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগবে। কখন যে পৌঁছাবে ছেলেটা?
~ চিন্তা করবেননা ভাইসাব। এসে যাবে।
~আমার আজ ভীষণ ভালো লাগছে।নয়ন তালুকদারের মুখখানা দেখার ইচ্ছে জাগছে। ইস রে আবারও হাঁটুর বয়সী ছেলের কাছে হেরে গেলো।
সাদাত বাবার কথা শুনে বললো~ বাবা আজ রাতে ছোট করে সেলিব্রেশন করা যায়।অনেক মজা হবে।
~ সারহান আসুক আগে তারপর ওর সাথে কথা বলে নিও।
~ঠিক আছে।
অরিত্রিকা ফুরফুরে মেজাজে নিচে নামতেই দেখলো বাবা,বড় বাবা আর সাদাত নিজেদের ভেতর কথার পশরা সাজিয়ে বসেছে।সকলের মুখ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। আজ কি কোনো স্পেশাল দিন বাবা, বড় বাবা বাড়িতে। সকলের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ?অরিত্রিকা কিছুক্ষণ ভাবলো কারণ কি হতে পারে কিন্তু ছোট মস্তিষ্ক ধরতে পারলোনা।সে তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই দেওয়ালের দিকে টিভিতে চলমান সংবাদে চোখ আঁটকে গেলো।অপলক চেয়ে রইল টিভির দিকে। সেখানে সারহানকে দেখে অরিত্রিকার হার্টবিট মিস হয়ে গিয়েছে। শুভ্র পাঞ্জাবিতে এমপির পাশে হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে মানুষটি। পাঞ্জাবিতে যেনো চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে।বক্ষে যেনো হাতুড়ি পেটাচ্ছে তার।কতোদিন পর মানুষটিকে দেখলো সে। অনুভূতিতে বেসামাল হয়ে গেছে তার সত্তা। তাহলে আজই আসবে সারহান ভাই। ইস! এখনই মনে হচ্ছে লজ্জায় লজ্জাবতী গাছের ন্যায় নুয়ে পরছে।এতো দিনে অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে তবে। ভাবতেই গাল গরম হয়ে এলো অরিত্রিকার। লজ্জামিশ্রিত হাসি হেসে অরিত্রিকা রান্নাঘরে মায়ের কাছে চলে গেলো সে।
তানিয়া বেগম আর সাথী বেগম বাহারী রকমের খাবার রান্না শেষ করলো সবেমাত্র। সবকিছু গুছিয়ে ডাইনিং রুমে আসলেন তারা।অরিত্রিকা ডেইরিমিল্ক খেতে খেতে তানিয়া বেগম আর সাথী বেগমের পিছু পিছু গেলো।
আরশাদ সাহেব তানিয়া বেগমকে দেখে বললেন~ খবর পেয়েছো? তোমার ছেলে ঢাকা হতে রওনা দিয়েছে।
তানিয়া বেগম বললেন ~শুনেছি তোমার আগেই। ছেলে আসছে তাই তো ভালোমন্দ পদে রান্না করলাম দুই জা মিলে।
~ বাহহ তাহলে তো ভালোই। আজ কব্জি ডুবিয়ে সবাই মিলে ভোজন করবো। ইনান আর আবির কেও আসতে বলবো?
~ তোমার চিন্তা করতে হবে না আমি ওদের আগেই বলে দিয়েছি আসতে।
~ভালোই করেছি। এই না হলে আমার গিন্নি।
তানিয়া বেগম আরশাদ সাহেবকে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন~ সকলে আছে ভদ্র হয়ে কথা বলো।
~জ্বি মহারাণী।
আরশাদ সাহেবের ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। তিনি ফোন হাতে নিয়ে নাম দেখে সবাইকে বললেন~সারহান কল দিয়েছে।
তানিয়া বেগম তাড়া দিয়ে বললেন~ তাড়াতাড়ি কল ধরো।
আরশাদ সাহেব কল রিসিভ করে বললেন~ আসসালামু আলাইকুম আব্বা।
ফোনের অপরপ্রান্ত হতে ভেসে আসলো কিছু কথা। যা শুনেই আরশাদ সাহেবের মুখ থমথমে হয়ে গেলো। হাত হতে ফোন ছিটকে পরলো মেঝেতে।ফোন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো চোখের পলকে।
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৫
ডাইনিং রুমে সকলে আঁতকে উঠলো।তানিয়া বেগম আতংকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন~ কি হয়েছে? তুমি এমন করে বসে রইলে কেনো? সারহান কি বললো? বলো?
আরশাদ সাহেব কিছু না লুকিয়ে ভেজা কন্ঠে বলে উঠলেন~ সারহানের গাড়ি নাটোর রোডে এক্সিডেন্ট করেছে।