প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ১৯

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ১৯
আদ্রিতা নিশি

ঘড়ির কাঁটায় নয়টা বেজে পঁচিশ মিনিট। সন্ধ্যা রাত পেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। সন্ধ্যায় আচ্ছন্ন সময় পেরিয়ে ধীরে ধীরে রাত গভীর হচ্ছে। শহুরে কোলাহল বেড়ে চলেছে। শহুরে রাস্তায় মানুষের পদচালনা বেড়েছে। তালুকদার বাড়ির ছাদে ছোট খাটো পার্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে আজ। পার্টিতে লোকজন কম হলেও এর আয়োজন জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে করা হয়েছে। লাইটিং, ডেকোরেশন, ড্রিংকস, স্ন্যাক্সের সমারোহ টেবিল জুড়ে। তালুকদার বাড়ির হঠাৎ পার্টির আয়োজনের মূখ্য ব্যক্তি ইলহাম তালুকদার। নিজের আনন্দ বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য আয়োজন করেছে। বক্সে সফট্ মিউজিক বাজছে। আমন্ত্রিত সকলে ড্রিংকসের গ্লাস হাতে নিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দুলে দুলে নাচছে। কেউবা বসে গল্প করছে, কেউবা খাচ্ছে। কয়েকজন নিজেদের পার্টনারের সাথে মুহুর্ত ইনজয় করছে।

আজকের পার্টিতে ইলহামের স্পেশাল গেস্ট নিশাদ এহসান এবং মিহিকা মুবাশ্বিরা। আজকের পার্টি তাদের দুজনকে উৎসর্গ করছে। এর কারণ আছে বটে। নিশাদ গত তিনবছর দেশের বাহিরে থেকেছে। দুইদিন আগে সে ফিরেছে এবং সিঙ্গাপুর থেকে বাবার ব্যবসায় হেল্প করেছে। মিহি ও সিঙ্গাপুরে পড়াশোনা করতো। দুজনের পরিচয় এবং বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। সেই সুবাদে আজকে ইলহাম মিহিকাকে ইনভাইট করেছে। নিশাদ আর মিহি চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে নাটকীয় ভঙ্গিতে বসে আছে। তাদের চোখে মুখে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাসের ছটাক। প্রাণবন্ত আমোদিত হাসি, ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার বিষয়বস্তু রাজনীতি। তাদের পাশেই ইলহাম বসে আছে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে। এক হাতে ড্রিংকসের গ্লাস নিয়ে ওষ্ঠকোণে মৃদু হাসি টেনে ক্ষণে ক্ষণে চুমুক দিচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ ছাত্র রাজনীতিতে একমাত্র সারহান এতো দ্রুত সাফল্য অর্জন করল। এক নির্বাচনে একবারে এমপি হয়ে গেল। এলেম আছে বলতে হবে। ”
নিশাদ স্ব শব্দে হেসে হঠাৎ বলে উঠল। কেমন যেন প্রফুল্লতা বিরাজ করছে তার মাঝে। ইলহাম ড্রিংকসে লম্বা চুমুক দিয়ে তাল মিলিয়ে বলে উঠল ;
“ সত্যি এলেম আছে। ভাবা যায় এক লাফে এমপি হয়ে গেল। আর আমরা বাপের টাকায় ফুটানি করছি। ”
নিশাদ উচ্চস্বরে হেসে বলল;
“ বাপের বিজনেসে জয়েন করে সেই টাকা উড়াচ্ছি আমি। তবে তোর কথা আলাদা। বাপের একমাত্র ছেলে হওয়ায় বেকার থেকেও মাস্তি করছিস। ”

“ এতো টাকা আমি ছাড়া খরচ করবে কে? ”
“ একদম ঠিক। সারহান যেদিন এমপি নির্বাচিত হয়েছিল সেদিন শুধু একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।”
“ কি?”
“ মামু রাজনীতিতে জীবনের অর্ধেকের বেশী সময় অতিবাহিত করল কিন্তু সাফল্য অর্জন করতে পারলো না। সারহানের দলের বিরোধী পক্ষে লড়ে হেরে গেল। মানে, ছেলের বয়সী একজনের কাছে রাজনীতির শীর্ষ স্থানীয় বিরোধী দলের নেতার পরাজয় ঘটল। এই বিষয়টায় শকড আমি। ”
“ আমার এসব বা*লের রাজনীতিতে কোনো ইন্টারেস্ট নেই। বাবার বুদ্ধিহীনতার জন্য তিনি হেরে গেছেন এটা সকলেই জানে। ”
“ সেটা আমিও জানি।”
“ হুমম।”

নিশাদ ড্রিংকসের গ্লাসে হাত বুলাতে থাকে। ভ্রুকুঞ্চন করে ভরাট কন্ঠে বলে উঠে;
“ সারহান অল্প সময়ে জনগনের ভালোবাসা পেয়েছে। এলাকাতে নাম ডাক খ্যাতি কুড়িয়েছে দ্রুত। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে। এর মাঝেই গুটিকয়েক শত্রুও বানিয়ে ফেলেছে। সেগুলো ইচ্ছাকৃত নয় বরং তার অগোচরে শত্রুতার সুত্রপাত হয়েছে। এর ফল স্বরুপ ভার্সিটি এরিয়াতে সরাসরি অ্যাটাকের স্বীকার হয়েছে। কিন্তু ভাগ্য ভালো কোনো মেয়ে বাঁচিয়ে নিয়েছে। মাঝখানে মেয়েটা না আসলে নবনির্বাচিত এমপি খতম। ”
ইলহাম তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল ;
“ নিউজটা কানে এসেছিল। তবে হঠাৎ এতোবড় মামলা ঠান্ডা হয়ে গেল কীভাবে? বিষয়টা একটু গোলমেলে লাগছে। ”

“ গোলমেলে লাগার কথা। কারণ এসব অ্যাটাকের খবর যত হাইলাইট হবে ততই পরিস্থিতি বিগড়ে যাবে। রাজনীতির মারপ্যাচ বোঝা মুশকিল। ”
মিহি এতোক্ষণ চুপচাপ দুজনের কথোপকথন গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। রাজনৈতিক আলাপ তার একদম অপছন্দের তবে সারহানের কথা শুনে একটু আগ্রহ জন্মেছিল। কৌতুহল বশত নিশাদকে জিজ্ঞেস করল ;
“ সারহান, যে তোমাকে ভরা ক্যাম্পাসে মে’রেছিল অ্যাম আই রাইট নিশাদ। ”
ইলহাম বাঁকা চোখে তাকায় মিহির দিকে। মিহি নিশাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড। নিশাদের বাবা এবং মিহির বাবা বন্ধু হওয়ার সূত্রে দুজনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী এবং মর্ডান। পোশাকে আভিজাত্য ফুটে উঠেছে। নিশাদকে এমন প্রশ্ন করায় বেশ বিরক্ত হলো ইলহাম। সুন্দরী মেয়েদের যে বুদ্ধি হাঁটুর নিচে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ মিহিকা মুবাশ্বিরা।

নিশাদ বিরক্তির সহিত তাকায় মিহির দিকে। দৃষ্টি সরু এবং গাঢ়। চাপা ক্রোধান্বিত কন্ঠে বলল ;
“ এসব চ্যাপ্টার ভার্সিটিতে ক্লোজ করে দিয়েছি। অথচ তুমি এখনো এসব মনে রেখেছো? ”
মিহি দমে গেলেও প্রকাশ করল না। পুনরায় বলে উঠল ;
“ ভোলার মতো বিষয় না এটা। ইলহাম তুমি ভুলতে পেরেছো সেই কাহিনী?”
শেষোক্ত কথাটি ইলহামকে উদ্দেশ্য করে বলল মিহি। ইলহাম থতমত খেয়ে যায়। একটু থেমে বলে উঠে ;
“ নাহ ভুলিনি। ”
“ দেখেছো নিশাদ ইলহাম ভোলেনি। আমি কি করে ভুলতাম বলো। বাই দ্য রাস্তা এটার রিভেঞ্জ নিবে না। ”
নিশাদের প্রচন্ড রাগ হলো। কাটকাট জবাব দিলো ;
“ নাহ। এবার অন্তত চুপ করো। এসব পুরোনো বিষয় ঘেঁটে লাভ নেই। ”
মিহি আলতো হেসে বলল ;

“ তুমি এতো সুইট কেনো নিশাদ? ”
নিশাদ কপালে বিরক্তির ভাজ ফেলে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল। ইলহাম খুক খুক করে কেশে উঠল। মিহি হাসি বজায় রেখে বলল ;
“ এসব রাজনীতির বিষয় বাদ দাও তোমরা। আমরা অন্য টপিকে কথা বলি। ইলহাম তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে? ”
ইলহাম চাপা স্বরে উত্তর দিলো ;
“ নাহ। ”
“ তুমি হ্যান্ডসাম একটা ছেলে গার্লফ্রেন্ড নেই শুনে অবাক লাগছে। যাই হোক, এক্স বা পছন্দের কেউ আছে?”
“ এক্স নামক কালনাগিনী আমার নেই। তবে একজনকে লাইক করি। ”
মিহি নড়েচড়ে উঠল। কৌতুহলী ভাব নিয়ে জানতে চাইল ;
“ মেয়েটার পিক থাকলে দেখাও।”
ইলহাম অদ্ভুত হেসে বলে উঠল ;

“ পিক নেই আমার কাছে। যার চেহারা সর্বক্ষণ আমার চোখের সামনে ভাসে তার পিক রেখে কি করব।”
“ গভীর প্রেমে পড়েছো ইলহাম। মেয়েটার নাম কি? ”
“ বলা যাবে না। ”
“ আরে বলো। ”
ইলহাম চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে। তখনি ভেসে উঠে মেয়েটার ভয়ার্ত চেহারা, আতংকিত চাহনি। সে আনমনে হেসে উঠে। শান্ত কন্ঠে বলে ;
“ অরিত্রিকা ফাইরুজ চৌধুরী। ”
“ বাহ সুন্দর নাম। মেয়েটা ভীষণ সুন্দরী তাই না?”
“ হ্যা। তোমার কল্পনার থেকেও সে অধিক সুন্দরী। ”
মিহি মস্করা করে বলল ;

“ বিয়ে করে ফেলো দ্রুত। নাহলে দেখা যাবে অন্য কেউ তোমার রাণীকে বিয়ে করে নিবে। ”
ইলহাম দ্রুত চক্ষুদ্বয় খুলে ফেলে। মৃদু হেসে বলে ;
“ আমি থাকতে তেমন কিছুই হবে না। ”
“ ওয়াহ! কেয়া কন্ফিডেন্স। ”
“ তবে একটা সমস্যা আছে।”
“ কী? ”
“ অরিত্রিকা সারহানের চাচাতো বোন। ”
নিশাদের উক্ত কথাটি শ্রবণ হতেই দ্রুত তাকায় ইলহামের দিকে। ইলহাম বেশ উচ্ছসিত ভঙ্গিতে বসে আছে। মুখাবয়বে আনন্দের জোয়ার বইছে। সেসব উপেক্ষা করে বলল ;
“ সারহানের বোন? ”
ইলহাম চাপা স্বরে বলল ;
“ হুমম।”
মিহি তড়িঘড়ি করে বলল ;
“ তাহলে তুমি আমার সাথে হাত মিলাও ইলহাম। ”
“ কেনো? ”
“ দুজনে মিলে বুদ্ধি করে পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। তুমি অরিত্রিকা কে পটাবে আর আমি এমপি সারহানকে। সারহান আমার ক্রাশ। ”
নিশাদ ধমকে উঠে বলল ;

“ যাকে দেখো তার ওপর ক্রাশ খাও এটা কোন ধরনের স্বভাব মিহি? ”
মিহি মুখ গোমড়া করে বলল;
“ তোমার ওপরেও তো ক্রাশ খেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি পাত্তা দিলে না। সেই দুঃখে আরেকজনের ওপর খেয়েছি। সব দোষ তোমার নিশাদ। ”
ইলহাম নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না। হু হা করে হেসে উঠল। নিশাদ খিঁচে মেজাজে চুপচাপ বসে রইল। মিহি আড় চোখে তাকাল নিশাদের দিকে।

❝ ভালোবাসা কেনো এতো অসহায়। ❞
সাদাত লিভিং রুমের সোফায় গা এলিয়ে বসে গান শুনছে। তার মন আজ ভীষণ খারাপ। কিছুক্ষণ আগে তার এগারতম ব্রেকআপ হয়েছে। সেই দুঃখে আজ এক্সট্রা দুটো বার্গার বেশী খেয়েছে। আরও খেতে চেয়েছিলো কিন্তু অতিরিক্ত কষ্টে জর্জরিত হয়ে খেতে পারেনি। অরিত্রিকা আর ইশরা দুজনে অপর পাশের সোফায় গালে হাত দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে সাদাতের। দুজনেই বিরক্তির সহিত বসে নাটক দেখছে। এই ছেলে মেয়েদের মতো নটাংকিবাজ কি করে হলো। দেখে মনে হচ্ছে না ছ্যাকা খেয়েছে অথচ এমন ভাব করছে ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছে। বড় ভাই মেয়েদের ধারে কাছে যায় না অথচ ছোট ভাই একের পর এক ছ্যাকা খাওয়ার নাটক করে যাচ্ছে। দেখা যাবে দুইদিন পর নতুন কাউকে পটাবে।

“ তুই গান বন্ধ করবি? ”
অরিত্রিকা কটমট করে বলল। সাদাত তা শুনেও কোনো কিছু বলল না। সেভাবেই ভগ্ন হৃদয়ের প্রেমিকের ন্যায় বসে রইল। ইশরার সহ্য হলো না নাটক। সে দ্রুত গিয়ে সোফার ওপরে থাকা ফোনটা হাতে তুলে নিলো। গান বন্ধ করতে যাবে এমন সময় সাদাত খপ করে ইশরার হাত ধরল। ইশরা এমন আকস্মিক কান্ডে হচকচিয়ে গেল। সংকুচিত নয়নে তাকাল সাদাতের দিকে। সাদাত চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে ইশরার দিকে। চক্ষু রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। চাপা ক্রোধান্বিত কন্ঠে ধমকে বলল ;
“ আমার দুঃখবিলাসে সময় একদম নাক গলাতে আসবি না টমেটো। ”
ইশরা মেকি রাগ দেখিয়ে বলল ;
“ হুহ্ আসছে ডিজিটাল যুগের দেবদাস। দুই দিন পর পর যে গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে তার আবার দুঃখবিলাস। এসব নাটক আমাদের সামনে করবি না একদম। ”
“ আমার দুঃখ তোদের নাটক মনে হচ্ছে? ”
“ হ্যা। ”
“ তোরা আমার শত্রু। শালার তোদের জন্য একটু মন খারাপ করতে পারি না। তোদের কোনো বান্ধবীর নাম্বার দে কথা বলে মন শান্ত করি।”
ইশরা ভেংচি দিয়ে বলে উঠল ;

“ আমাদের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোকে বান্ধবীর নাম্বার দেবো। ভাই এবার এসব নাটক বন্ধ কর। আমরা জানি এসব দুঃখবিলাস আসলে নাটক। ”
সাদাত হেঁচকা টান দেয় ইশরাকে। ইশরা নিজের ভারসাম্য রক্ষা না করতে পেরে ধম করে পড়ে সোফার ওপর। কটমট করে তাকায় সাদাতের দিকে।
সাদাত সেই চাহনি উপেক্ষা করে গমগমে কন্ঠে বলে ;
“ একদম বেশী কথা বলবিনা টমেটো। বেশী বেশী খেয়ে একদম মটু টমেটো হয়ে যাচ্ছিস। নিজের দিকে একটু খেয়াল কর আর আমার বিষয়ে নাক গলানো বন্ধ কর পঁচা টমেটো। ”
ইশরা রাগে ফুঁসে উঠল। অতিরিক্ত রাগের কারনে চক্ষুদ্বয় ছলছল করে উঠল। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকাল সাদাতের দিকে। শয়তান একটা তার খাওয়া নিয়ে কথা শোনালো! হালকা একটু গোলুমোলু সে তাই বলে কথা শোনাবে? সাদাত ইশরার ভাবমূর্তি উপেক্ষা করে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে উঠল ;
“ তোর গাল গুলো রাগে আরও লাল হয়ে যাচ্ছে ইশরা। এখন একদম পাকা টমেটোর মতো লাগছে।”
ইশরার রাগ বেড়ে গেলো। দৃষ্টি পড়ল হাতের দিকে। সাদাতের হাতে তার হাত মুঠোবন্দি। তিরিক্ষি মেজাজে বলে উঠল ;

“ আমার হাত ছাড়। ”
সাদাত হাত ছেড়ে দেয়। আয়েশ ভেঙে উঠে দাঁড়ায়। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ত্যাড়া ভাবে বলে ;
“ তোদের দুজনের নজর খুব খারাপ। আমি শিউর তোদের নজর পড়েছিল আমার রিলেশনে। তাই এগারতম গার্লফ্রেন্ড ভেগে গেছে। অবশ্য এতে আমার তেমন দুঃখ হচ্ছে না। যে যাওয়ার সে তো চলে যাবে। পুরনো চলে গেলে নতুন আসবে।”
“ জামা কাপড়ের মতো গার্লফ্রেন্ড বদলানো বাদ দে। যেদিন সত্যি কাউকে ভালোবাসবি কিন্তু তাকে নিজের করে পাবি না সেদিন বুঝবি ভালোবেসে না পাওয়ার দহন কেমন? ”
“ এই ডিজিটাল যুগে আবার ভালোবাসা! বুঝলি সব টাইম পাস। সত্যি বলতে এসব ভালোবাসা বলতে কিছু নেই দুনিয়ায়। সব মোহ। ”
অরিত্রিকা দুজনের ঝগড়া শুনে রেগে গেল। বিক্ষিপ্ত বিক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল ;

“ তোরা দুজন চুপ কর। নয়তো দুটোর মাথায় বারি মে*রে দেবো। ”
সাদাত দাঁড়াল না। হনহন করে সেখান থেকে চলে গেল। ইশরা অশ্রু মুছে নিলো। অসভ্য একটা ছেলে। সময়ে ভালো সময়ে খারাপ দুমুখো মানুষ একটা। ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র পাল্টায় অসভ্য একটা। অরিন ইরফানের রুমে গিয়েছিল তাদের গিফট আনতে। সে দুহাতে তিনটা প্যাকিং করা ছোট বাক্স আনলো। বাক্সের ওপরে নাম অনুযায়ী অরিত্রিকা আর ইশরাকে দিলো।
“ গিফট পেয়ে গেছিস এবার নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। গুড নাইট বনুরা। ”
“ গুড নাইট। ”
অরিত্রিকা এবং ইশরা দুজনে প্রতিত্তোর করল। অরিন নিজের গিফটটা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। অরিত্রিকা সোফার ওপর তার গিফটের বক্সটা রেখে সোফা থেকে উঠে চঞ্চল পায়ে ইশরার পাশে বসল। আদুরে ভঙ্গিতে বলল ;

“ সাদাতের কোথায় মন খারাপ করিস না। ”
ইশরা ভার মুখে বলে উঠল ;
“ সাদাত একটা আস্ত বেয়াদব। দেখেছিস আমাকে টমেটো বলে খ্যাপায়।”
“ ওর কথা বাদ দে। এবার বলতো ইরফান ভাইয়ের কী হয়েছে? উনাকে আজ একটু অন্যরকম লাগলো। ফুপিকে বগুড়া রেখে চলে এসেছে। জিজ্ঞেস করতেই বলল, গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে অথচ সারাদিন কোথাও বের হয়নি। ”
“ জানিনা ভাইয়ার কি হয়েছে। মনে হয় মন খারাপ। ”
“ হতে পারে। অনেক রাত হয়েছে চল ঘুমাবো। আজকে কিন্তু তুই আমার রুমে থাকবি ঠিক আছে? ”
“ আচ্ছা ঠিক আছে। ”
:
তানিয়া বেগমের শরীর আজ একটু খারাপ। তাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছেন। সারহানকে খাবার খেতে দেওয়ার দায়িত্ব আজ পড়েছে সাথী বেগমের হাতে। তিনি কিচেনে খাবার গরম করছেন আর সার্ভেন্টরা টেবিলে খাবারগুলো রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সারহান আবিরের সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডিসকাশন করতে গিয়ে আজ ফিরতে রাত করে ফেলেছে৷ ঘড়ির কাটায় এখন রাত এগারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট। সে ধীর পায়ে প্রবেশ করল সদর দরজা দিয়ে। সারহানের সাথে থাকা দেহরক্ষীরা বাহিরে অবস্থান করেছে।

সারহান বাড়িতে ঢুকে সতর্কতার সহিত নজর বুলায়। আশে পাশে তেমন কাউকে দেখল না। সিল্কি কালো চুলে হাত বুলিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগল। অরিত্রিকা আনমনে গান গাইতে গাইতে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে নামছে। সোফার ওপর গিফট রেখে চলে গিয়েছিল নিজের রুমে। এখন মনে পড়তেই নিতে এলো। চঞ্চল পায়ে সিঁড়ির শেষে ধাপে এসে পা পিছলে গেল। নিজের শরীরের ভারসাম্য রাখতে চেষ্টা করল কিন্তু পারলনা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ধম করে পড়ল মেঝেতে। পড়তেই চিৎকার দিয়ে উঠল। চোখ মুখ কুঁচকে ব্যথাতুর কন্ঠে উচ্চস্বরে বলে উঠল ;
“ কোন খাম্বারে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওমাগো খাম্বার ধাক্কায় আমার কোমড় ভেঙে গেল রে? ”
“ আমাকে দেখে তোর খাম্বা মনে হচ্ছে? ”
সারহান চোয়াল শক্ত করে ভরাট কন্ঠে বলে উঠল। অরিত্রিকা ব্যথা ভুলে গেল নিমেষে। পিটপিট কর তাকাল দন্ডায়মান মানুষটার দিকে। তড়িঘড়ি করে উঠার চেষ্টা করল। কিন্তু কোমড়ের আঘাত পাওয়ার কারণে উঠতে পারল না। বিষন্ন মুখে বসে রইল। ইচ্ছে করল না মানুষটাকে একটু হেল্প করার জন্য। বললেই দুই এক কথায় অপমান করবে। সারহান একপলক তাকাল ভারাক্রান্ত মেয়েলী মুখশ্রীর দিকে। কিছুটা শান্ত হয়ে গেল সে। দৃঢ় শান্ত কন্ঠে বলল ;

“ আমাকে কী বললি? ”
অরিত্রিকা মাথানত করে আমতা আমতা করে বলল ;
“ সরি। আসলে আপনাকে বলতে চাইনি কিন্তু মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।”
সারহার ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে হাত বাড়িয়ে দিল অরিত্রিকার দিকে। অরিত্রিকা নত অবস্থায় আড় চোখে তাকাল। সারহানকে হাত বাড়িয়ে দিতে দেখে থমকাল বোধ হয়। বিস্মিত নয়নে দৃষ্টি উঁচিয়ে সরাসরি তাকায় সারহানের গম্ভীর মুখপানে। চক্ষু দ্বারা ইশারা করল হাত ধরে উঠার জন্য। অরিত্রিকা ইতস্ততবোধ করল। আর কোনো কিছু না ভেবে সংকোচ নিয়ে হাত ধরলো সারহানে। সারহান অরিত্রিকার নরম মসৃণ হাত মুঠোবন্দি করে টেনে তুলল এবং তৎক্ষনাৎ হাত ছেড়ে দিল। অরিত্রিকা ভদ্র মেয়ের মতো বলে উঠল ;
“ ধন্যবাদ সারহান ভাই।”

সারহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে যেতে লাগল। অরিত্রিকা বেশ অপমানিত হলো এমন উদ্ভট ব্যবহারে। এই মানুষটা এতো আজব কেন? সে খেয়াল করল সারহানের পরনে কালো শার্ট। কিন্তু তার মনে পড়ে গেল সারহান ভাই সাদা পাঞ্জাবি পড়ে গিয়েছিল। ড্রেস কোথায় চেঞ্জ করল? যেখানে ইচ্ছে করুক তার কিছু যায় আসে না। হঠাৎ দৃষ্টি পরল সারহানের হাতের দিকে। শার্টের হাতা ফোল্ড করে রাখায় কনুইয়ের নিচ থেকে দৃশ্যমান। সেখানে লালচে শুকনো র*ক্তের দাগ। সে চমকে উঠল। আতংকিত হয়ে উঠল ভেতরে ভেতরে। ঢোক গিলে কম্পনরত কন্ঠে বলে উঠল ;
“ সারহান ভাই আপনার হাতে র*ক্ত! আপনি কারো সাথে মা*রামারি করে এসেছেন? ”
সারহানের পা থেমে যায় ঘাড় বাঁকিয়ে সরু দৃষ্টিতে তাকায় অরিত্রিকার দিকে। ভাবলেশহীন ভাবে কাঠিন্যতা এঁটে উত্তর দেয় ;

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ১৮

“ উহু। নিজ হাতে খু*ন করে এসেছি। বিকজ অফ ইউ অরিত্রিকা ফাইরুজ চৌধুরী । ”
অরিত্রিকার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। সে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল সেথায়। বিস্ময়ে বিস্ফোরিত নয়ন স্থির করল শ্যামমানবটির পাণে। সারহান সে একমুহূর্ত দাঁড়ায় না। নিজের ভাবাবেগ নিয়ন্ত্রণ করে এগিয়ে যায় রুমের দিকে।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২০