প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২২
আদ্রিতা নিশি
“ সারহান ভাই দূরে সরে দাঁড়ান প্লিজ। কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে আমার। ঠিকঠাক ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। ”
অরিত্রিকা নতমস্তকে জড়ানো ধীর কন্ঠে বলে উঠল। সারহান নিঃশব্দে হাসল।সে অরিত্রিকার কানের সন্নিকটে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল;
“ এখনো তো ঠিকঠাক ভাবে স্পর্শ করলাম না তাতেই শ্বাসকষ্টের রোগীর মতো শ্বাস নিতে পারছিস না! আরেকটু গভীর ভাবে স্পর্শ করলে দেখা যাবে সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকবি। ”
অরিত্রিকার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য চাহনিতে নেত্র উঁচিয়ে তাকাল শ্যামমানবটির দিকে। তীক্ষ্ণ চাহনিতে তার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে। ওষ্ঠে বিরাজ করছে দুষ্ট হাসি। সারহান ভাই তাকে এমন ধরনের কথা বলছে ভাবতেই কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। হৃদপিণ্ড তীব্র গতিতে লাফাচ্ছে তাল মিলিয়ে। সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তার কানে। সারহান সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ওষ্ঠ কামড়ে হাসে। একদম সঠিক জায়গায় তীর লেগেছে বুঝতে সময় লাগে না তার। গম্ভীর ভাবমূর্তি যেন কোথাও বিলীন হয়ে গেছে। গলা খাদে নামিয়ে বলল ;
“ আমি তোর চোখে খারাপ হতে পারি কিন্তু তুই এখন যতোটা খারাপ ভাবছিস ততোটা নই। পরবর্তীতে তোর অনুমতি ব্যতিত ছুঁয়ে ও দেখবো না আই প্রমিজ। তবে আমাকে যদি রাগিয়ে দিস তখন দুই চারটা থাপ্পড় মেরে শিক্ষা দিয়ে দেবো। এটা মাইন্ডে সেট করে রাখ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন? ”
“ হ্যা। ”
“ আপনি একটা মেয়েকে নিজের বেড রুমে ডেকে আঁটকে রেখেছেন আবার এতো বড় বড় কথা বলছেন। এখন যদি চিৎকার করি আপনার মানসম্মানের কি হবে ভেবে দেখেছেন।”
“ তুই আসলে আস্ত নির্বোধ। চিৎকার করবি কর। এতে আমারই ভালো হবে। ”
অরিত্রিকা নাক সিটকায়। সারহানের বলা কথাগুলো এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। সারহানের ইঙ্গিত উপেক্ষা করে হঠাৎ চিৎকার দিতে লাগে। তৎক্ষনাৎ সারহান তার হাত দ্বারা অরিত্রিকার মুখ চেপে ধরে। চোয়াল শক্ত করে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায়।
পুরুষালী শক্ত মসৃণ হাতে বন্দি অরিত্রিকার অধরযুগল।অনেকটা জোড়ালো ভাবেই মুখ চেপে ধরেছে সারহান।অরিত্রিকা কন্ঠনালী হতে কথা বেরোলো না। সে হতবিহ্বল ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল সারহানের মুখ পাণে।সে যেন হঠাৎ এহেন কান্ডে কিয়ৎকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে। সারহান সরাসরি তাকায় দরজার দিকে। দরজা অল্প খোলা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করল সেদিকটা। অরিত্রিকার এমন আবদ্ধ অবস্থায় থাকতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। শরীর কেমন শীতল হয়ে আসছে । সবকিছু বেসামাল লাগছে। সে কখনো কোনো পুরুষের এতোটা সন্নিকটে আসেনি এই প্রথম সে কারো এতোটা কাছে এসেছে।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে । কিন্তু এই অনুভূতি দমিয়ে রাখা কঠিন।
সারহান তির্যক দৃষ্টিতে অরিত্রিকার দিকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে;
“ ষ্টুপিডের মতো চিৎকার করে নিজেকে বুদ্ধিমতী প্রমাণ করতে চাইছিলি? আমাদের এভাবে একসাথে এক রুমে পরিবারের সবাই দেখলে কী হতো ভাবতে পারছিস!”
অরিত্রিকা অশান্ত হয়ে কয়েকবার নেত্রপল্লব ঝাপটালো।সে কথা বলার জন্য উতলা হয়ে উঠল। অনেকটা সময় পার হয়ে যাওয়ায় শ্বাস আটকে আসছে অরিত্রিকার।দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে পরে অবস্থা বেহাল।সে হাত দ্বারা সারহানের হাত ধরবে মুখ থেকে সরানোর জন্য। তখনি সারহান উত্তর না পেয়ে আবারও কিছু বলতে যাবে দেখলো অরিত্রিকা ছটফট করছে। সে মুখ হতে হাত সরিয়ে নেয়। চাপা ক্রোধান্বিত কন্ঠে বলে ;
“ আমার সম্মানহানি করতে চাইছিলি চিৎকার করে। ইউ আর অ্যা ইডিয়ট ফাইরুজ। আমার সম্মান গেলে তোর সম্মান কী থাকতো? তোকে চরিত্রহীনা ভাবত। পরিবারের সামনে নিজের সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে কীভাবে সবার সামনে মুখ দেখাতি? এই জন্যই তোকে সবসময় বোকা বলি। ”
উক্ত কথাটি বলার পরেই সার হান অরিত্রিকাকে ছেড়ে দেয়। দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। সিল্কি কৃষ্ণ বর্ণের চুল গুলোর ভাজে আঙুল চালিয়ে দেয়৷ চোয়াল শক্ত করে বিরক্তিসূচক শব্দ করে উঠে। অরিত্রিকা হাঁপানি রোগীর ন্যায় হাঁপাতে থাকে। লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করতে থাকে।
এর মাঝে সাদাতের আগমন ঘটে। দরজা খোলা দেখে নক না করে হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। সারহানকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলবে এমন সময় দৃষ্টি স্থির হয় অরিত্রিকার মুখপানে। কিঞ্চিৎ অবাক হয়।
সাদাত সন্দেহবাতিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ;
“ তুই ভাইয়ের রুমে কি করছিস?”
অরিত্রিকা সাদাতকে দেখে ভড়কে যায়। দ্রুত হেঁটে এসে সাদাতের পেছনে দাঁড়ায়। সাদাতের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে থাকে। সারহান তির্যক দৃষ্টিতে অরিত্রিকার কান্ড দেখল। টাউজারের দুই পকেটে হাত গুঁজে বক্ষ টান করে দাঁড়াল। ভরাট কন্ঠে বলে উঠল ;
“ স্পেশাল থেরাপি দিতে ডেকেছিলাম। আপাতত থেরাপি দেওয়া শেষ। আবার কোনো ফল্ট দেখলে পুনরায় আমার স্পেশাল থেরাপির আন্ডারে অরিত্রিকে নেওয়া হবে।”
অরিত্রিকা চমকে গেল। নিজে যথাসম্ভব আড়াল করার চেষ্টা করল। সাদাত সারহানের হেঁয়ালিপূর্ণ কথার মানে বুঝল না। সে একবার অরিত্রিকার দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার সারহানের দিকে তাকাচ্ছে অবুঝের ন্যায়। কাহিনী কি চলছে ঠাওর করতে পারল না।
“ হঠাৎ আমার রুমে আসলি? কোনো দরকার? ”
সারহান সরাসরি জিজ্ঞেস করে। সাদাত ভাইয়ের দিকে তাকায়। মস্তিষ্কে চলমান ভাবনা বাদ দেয়। জিভ কেটে বলে ;
“ অরিন আপুকে দেখতে পাত্রপক্ষ এসেছে। তোমাকে চাচা ডাকছেন। ”
“ ঠিক আছে। আমি আসছি। ”
সাদাত আর কথা বাড়ায় না মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অরিত্রিকা একপলক পেছনে তাকিয়ে সারহানকে দেখে সাদাতের পেছন পেছন ছুটে বেড়িয়ে যায়।
সারহান দীর্ঘ শ্বাস টেনে কাবার্ডের কাছে যায়। কাবার্ড খুলে শার্ট বের করতে করতে বলে ;
“ এই নির্বোধকে কীভাবে মনে ধরে গেল আমার ওহ গড! সারহান কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ। এতোটা ডেস্পারেট হয়ে নিজেকে অরিত্রির সামনে জাহির করার দরকার নেই। দেখা যাবে পরবর্তীতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। ”
“ তুই সময় মতো না আসলে তোর জল্লাদ ভাই আমাকে মে*রে ফেলতো। বাপরে, তোর ভাইয়ের মনে যে উনিশ বিশ কথা ঘুরঘুর করে জানতাম না। আজ শুনে আমি তো আর একটু হলে অক্কা পেতাম। ”
অরিত্রিকা নিজ রুমের বিছানায় বসে মুখ কুঁচকে বলল। সাদাত দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে হেলান দিয়ে। কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করল ;
“ উনিশ বিশ কথা মানে? ভাই তোকে কী বলেছে? ”
“ তুই আমার ভাই হোস! কীভাবে যে বলি। আমি আগে শিউর হয়ে নেই তোর ভাইয়ের মনে কী চলছে তারপর বলবো। ”
“ কী চলছে? ভাইয়ের মনে তো সবসময় রাজনীতি চলে। অন্য কোনো কিছু চলার প্রশ্নই আসে না। ”
“ অ্যাহ আসছে আরেকজন। তোর ভাইকে আমি খুব ভালো করে চিনে গেছি। ব্যাটা বাইরে এক ভেতরে আরেক। পুরোই একটা উনিশ বিশ। ”
অরিত্রিকা মুখ বাঁকিয়ে বলে। সাদাত শুধু হতবুদ্ধির ন্যায় শুনলো। সারহান আর অরিত্রিকার মাঝে কী নিয়ে এতো কাহিনী হচ্ছে বুঝতে পারল না। এর মাঝেই অরিন এবং ইশরা প্রবেশ করল রুমে। সাদাত দরজায় না দাঁড়িয়ে কদম বাড়িয়ে ভেতরে আসলো। ইশরা অরিনকে নিয়ে এসে বসালো বিছানায়। অরিত্রিকা ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল বোনের দিকে। তাকাতেই মুগ্ধ হলো। অরিন আজ হালকা গোলাপী রঙের জামদানী শাড়ি পড়েছে। মুখে হালকা সাজ এবং হিজাব পড়েছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে।
অরিত্রিকা মৃদু হেসে বলল ;
“ আপু তোমাকে দেখতে হেব্বি লাগছে। ছেলে দেখলে একদম টাস্কি খাবে। ”
অরিন চোখ পাকায়। অরিত্রিকা হেসে উঠে বলে ;
“ সত্যি বলছি। দেখবে ছেলে তোমাকে দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে। ”
“ পাকনামি না করে দ্রুত রেডি হয়ে নে। এখনো ফ্রেশ কেন হসনি। ”
“ ফ্রেশ হওয়ার সময় পায়নি। ”
“ কি এমন কার্যসিদ্ধি করছিলি যে সময় পাসনি। ”
“ একজনের বহুরুপ দেখে টাস্কি খেয়েছিলাম তাই। আচ্ছা তোমরা সবাই থাকো আমি ফটাফট ফ্রেশ হয়ে নি । ”
কথাটি বলে অরিত্রিকা তড়িঘড়ি করে বিছানা উঠে পড়ল। আলমারি থেকে ড্রেস নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেল। ইশরা অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল ;
“ আপু আমি তোমার রুমে গেলাম। এখনো আমার চুলের স্টাইল করা হয়নি। ”
“ আচ্ছা যা। ”
ইশরা একপলক সাদাতের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সাদাত ও কিছু একটা ভেবে বের হয়ে গেল রুম থেকে।
ইশরা চুল বাঁধা শেষে অরিনের রুম থেকে বের হলো। সামনে তাকাতেই দেখল সাদাত করিডোরে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে আর মিটমিট করে হাসছে। ইশরার চক্ষু সংকুচিত হয়ে আসে। কৌতুহলী ভাব নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নিঃশব্দে সাদাতের পেছনে দাঁড়ায়। আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করে কী বলছে? নিশ্চয়ই নতুন গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছে তাই এতো খুশি। আস্ত বজ্জাত ছেলে তো! ক্যারেক্টার পুরাই ঢিলা।
“ জান আজকে তোমার সাথে দেখা করতে পারবো না। বড় আপুকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। এখন যদি তোমার সাথে দেখা করতে যাই ভাই আমাকে পিটিয়ে সোজা করে দিবে। ”
সাদাত মুখ ভার করে বলল। অপর পাশ থেকে মেয়েটি কিছু একটা বলে উঠল। সে পুনরায় প্রতিত্তোর করল ;
“ আচ্ছা জান কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবো না। তোমার থেকে বেশী সুন্দরী হলেও তাকিয়ে দেখবো না আই প্রমিজ। ”
হঠাৎ কল কেটে গেল। সাদাত ভড়কে গেল। মেয়েটা কোনো উত্তর না দিয়ে কল কেটে দিলো কেনো? সে তো কোনো খারাপ কথা বলেনি। হাতের মুঠোবন্দী ফোনের দিকে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে থাকে। চিন্তায় বিভোর হয়ে ফোন পকেটে রেখে দেয়। আনমনা ভাব নিয়ে পাশে তাকাতেই ইশরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠে। ইশরাও সাদাতকে আচানক তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হচকচিয়ে যায়। নিজের চুল ঠিক করতে শুরু করে যেন মনে হয় সে কিছু শুনেনি।
সাদাত ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে বলল ;
“ আমার প্রেমে আবার নজর দিতে এসেছিস?”
ইশরা অদ্ভুত চোখে তাকাল। ভেংচি দিয়ে বলল ;
“ ওসব কুখাদ্য জিনিসে নজর দিতে রুচিতে বাঁধে। ”
“ কি বললি কুখাদ্য?”
“ হ্যা। ”
“ কুখাদ্য তো মনে হবে। আসলে সিঙ্গেল মানুষদের প্রেম দেখে জ্বলে। কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। ”
“ তোর গার্লফ্রেন্ডের মন পুড়ছে বেকুব। মনের কানেকশনে নাকে গন্ধ লাগছে। কেয়া পেরেম হে! হাউ সুইট। ”
“ একদম আজেবাজে কথা বলবি না। ”
“ সত্যি কথা বলেছি ভাই। আমার কথা বিশ্বাস না হলে কল কর তোর গার্লফ্রেন্ডকে।”
সাদাত ক্রোধে গজগজ করে তাকাল ইশারার দিকে। ইশরা বেশ ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সাদাতের তীক্ষ্ণ চাহনি যেন ঝলসে দিতে চাইছে। হঠাৎ কি মনে করে ইশরাকে পরখ করে। তার ক্রোধান্বিত মুখাবয়ব শিথিল হয়ে আসে। তীক্ষ্ণ চাহনি নিভে আসে। রাগ কর্পূরের ন্যায় হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ইশরা আজ মেরুন রঙের টুপিস পড়েছে। ম্যাচিং ওড়না গলার দুপাশে ঝুলিয়ে রেখেছে। কৃষ্ণ বর্ণের চুলগুলো কোমড় ছুঁয়েছে। মুখে হালকা সাজ। মোটেও মন্দ লাগছে না।
সাদাত ভ্রু বাঁকিয়ে ত্যাছড়া কন্ঠে বলে উঠে ;
“ তোকে সাজগোজ করে দেখতে কিন্তু মন্দ লাগছে না। একটু সাবধানে থাকিস বুঝলি। তোকে দেখে যদি পাত্রের ভাইয়ের পছন্দ হয়ে যায় তখন আমার কী হবে। ”
ইশরা এহেন কথায় থতমত খেয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে তাকায়। থমথমে গলায় জানতে চায় ;
“ পাত্রের ভাইয়ের পছন্দ হলে তোর কী হবে মানে? ”
“ তুই একদম নিচে যাবি না টমেটো। পাত্রের ছোট ভাইয়ের থেকে দূরে থাকবি। আমি চাই না অকালে আমি এক ঝগড়ুকে ফ্রেন্ডকে হারাই। ”
“ এসব কি বলছিস? ”
“ ঠিক বলছি। একদম নিচে গিয়ে ঘুরঘুর করবি না। আজকে তোকে একদম গুলুমুলু সুন্দরী লাগছে। দেখা যাবে পাত্রের ছোট ভাই তোকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেল। ”
“ বাজে বকা বন্ধ কর। ”
“ সুন্দরী বলেছি তাই বাজে বকছি? তাহলে টমেটো বলবো?”
“ সাদাত। ”
“ হ্যা বল শুনতে পাচ্ছি! এতো জোরে চিৎকার করার কি আছে? ”
সাদাত ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠল। ইশরা কটমট করে তাকাল। রাগে গমগম করছে সে। মন চাইছে সাদাতের মাথায় বারি মেরে দিতে। এই ছেলে আজকাল তার সাথে যেন ঝগড়ার প্রতিযোগীতায় নেমেছে। ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া লাগিয়ে দেয় আর এমন দায়সারা ভাব মোটেও পছন্দ হলো না।
“ আরে এমন করে তাকাস না আমার হার্ট-অ্যাটার্ক হয়ে যাবে। তখন এর দায়ভার কে নেবে? ”
সাদাত আড় চোখে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে উঠল। ইশরার রাগ যেন আকাশচুম্বী ধারণ করল। রাগে গজগজ করে বলল ;
“ তুই কোন ম্যাটেরিয়ালে তৈরী বলতো ভাই?”
সাদাত ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠল ;
“ বয়ফ্রেন্ড ম্যাটেরিয়াল।”
“ উফ! তোর সাথে কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে। ”
“ তাহলে স্বীকার করলি ভুল তোর। গুড গার্ল। ”
“ অসহ্য একটা। তোকে কে সহ্য করে?”
“ এই যে তুই সহ্য করছিস। ”
ইশরার অবস্থা বেহাল। এতো তর্ক করা যায় নাকি? সে হার মানল। মুখ বেঁকিয়ে সাদাতকে টপকে অরিত্রিকার রুমে চলে গেল। সাদাত বুকে হাত গুঁজে সেদিকে তাকিয়ে রইল সেদিকে। রাহাতের ছোট ভাইয়ের নাম রাফি। অরিনকে দেখতে রাহাত, রাফিসহ আরও তিনজন এসেছে। আরশাদ সাহেব এবং আজমল সাহেবের সাথে লিভিং রুমে সকলের পরিচয় পর্বের সময় ইশরা একবার লিভিং রুমে এসেছিল। তখন রাফি নামের ছেলেটা হা করে তাকিয়ে ছিল ইশরার দিকে। কেউ খেয়াল না করলেও সাদাত খেয়াল করেছিল। কিন্তু মেয়েটাকে কে বোঝাবে? যদি এসব বলা হয় অন্য কিছু বুঝে বসে থাকবে।
“ এমন ঢ্যাং ঢ্যাং করে নাচতে নাচতে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
সারহানের গুরুগম্ভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই অরিত্রিকার পা জোড়া তৎক্ষনাৎ থেমে গেল। নেত্রপল্লব উঁচিয়ে সামনে দন্ডায়মান মানবটির দিকে তাকাল মলিন মুখে। সারহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিয়ে তাকিয়ে আছে। মুখাবয়ব অতিশয় গম্ভীর।
অরিত্রিকা কোনো রাখঢাক না করে বলল ;
“ নিচে যাচ্ছি। ”
সারহান ভরাট কন্ঠে বলল ;
“ নিচে কি সার্কাস চলছে? ”
“ নাহ। ”
“ তাহলে কী দেখতে যাচ্ছিস? ”
“ জিজুকে দেখতে যাচ্ছি। ”
“ বিয়ে না হতেই জিজু? ”
সারহান বিরক্তিরসহিত বলে উঠল। অরিত্রিকার মুখখানা চুপসে গেল। মনে মনে সারহানের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে দিচ্ছে। সারহান শান্ত চাহনিতে পরখ করল অরিত্রিকাকে। বেশ খানিকটা চটে গেল। গমগমে কন্ঠে বলল ;
“ এতো সাজগোজ কেন করেছিস? মনে হচ্ছে আজ অরিনকে নয় তোকে দেখতে এসেছে। ”
অরিত্রিকা এহেন কথায় অবাক হয়ে গেল। নিজের দিকে একবার তাকাল। কালো রঙের একটা গাউন পড়েছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়েছে আর চুল খোলা রেখেছে। এটা আবার কোনো সাজগোজ হলো নাকি?
সারহান রুঢ় গলায় বলল ;
“ লিভিং রুমে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের রুমে যা। ”
অরিত্রিকা ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে ;
“ আমি যাব তাতে আপনার কী? ”
“ আমার অনেককিছু। ”
“ আপনার কথা কেন শুনবো?”
“ যদি না শুনিস পা ভেঙে রুমে বসিয়ে রাখব। ”
অরিত্রিকা বুঝলো এমন ভাবে বলে কোনো লাভ হবে না। ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করে অনুনয়-বিনয় করে বলল ;
“ সার হান ভাই নিচে যেতে দিন প্লিজ। টুপ করে যাব ঠুস করে চলে আসব। ”
সারহান ধমকে বলল ;
“ আমি চাই না তুই ওদের সামনে যাস। ”
“ আপনারা দুই ভাই আসলেই খুব খারাপ একজন ইশরাকে থ্রেট দিচ্ছে আরেকজন আমাকে থ্রেট দিচ্ছে। ধ্যাত ভালো লাগে না। ”
“ তোদের ভালোর জন্য বলছি। কিন্তু সেসব তো তোদের মতো মাথামোটার মাথায় ঢুকবে না। ”
“ আমি আম্মুর কাছে যাব। ”
অরিত্রিকা মুখ ভার করে বলল। সারহান দুকদম এগিয়ে এলো। অরিত্রিকার পিলে চমকে গেল। তটস্থ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গেল। উচ্চস্বরে বলে উঠল ;
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২১
“ আচ্ছা নিচে যাব না। দূরে যান প্লিজ। আপনার দাবাং মার্কা থাপ্পড় পুনরায় খেতে চাই না। ”
সারহান থেমে যায়। ভ্রু বাঁকিয়ে ইশারা করল নিজের রুমে যাওয়ার জন্য। অরিত্রিকা ভারাক্রান্ত মনে রুমের দিকে পা বাড়ালো। সারহান তপ্ত শ্বাস ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল।