প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৪৬ (২)
আদ্রিতা নিশি
“ অন্য সময় আমার কাছে আসতেই ভয় পাস অথচ আজ দিব্যি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছিস আর কতোক্ষণ এভাবে থাকার ইচ্ছে আছে তোর? ”
বৃষ্টি কমেছে কিয়ৎ সময় পূর্বে। দমকা হাওয়ার বেগ কমে এসেছে প্রায়। প্রকৃতি যেন বৈশাখের প্রথমে নিজ সত্তা প্রকাশ করছে। ঝড় না হলেও ঝড়ের ন্যায় উত্তাল হয়েছিল প্রকৃতি। মেঘাচ্ছন্ন অম্বর, বৃষ্টিস্নাত রাত এবং শীতল হাওয়ায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এক পশলা বৃষ্টি যেন প্রেমিক পুরুষদের মনে প্রেম হয়ে নেমে এসেছিল অম্বর হতে। কঠিন হৃদয়ের খোলস ছিঁড়ে প্রণয়ানুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ছাদে দীর্ঘ বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু অবস্থা দুজনের। দুজনের শরীর ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। হকীম শীতল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে মানব মানবীর ভেজা শরীর।
পুরুষালী বক্ষে লেপ্টে থাকা মেয়েলী ছোট্ট দেহখানা শীতল হাওয়ার স্পর্শে থেমে থেমে কেঁপে উঠছে। নিশ্চিন্ত ভঙ্গিমায় চুপ করে পড়ে রয় একান্ত নিরাপদ স্থান কল্প পুরুষের বাহুডোরে। নানা ভাবনার মাঝে শান্ত, দৃঢ় কন্ঠস্বর শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করে অরিত্রিকার। তৎক্ষনাৎ চক্ষুদ্বয় মেলে তাকায়। কিঞ্চিৎ দ্বিধা, লজ্জা, অস্বস্তিতে মুখখানা অস্বাভাবিক হয়ে উঠে। বক্ষ থেকে মাথা উঠিয়ে ধরফরিয়ে সরে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু পুরুষালী বাহুতে আবদ্ধ থাকায় দূরে যেতে পারে না। কুন্ঠিত ভঙ্গিতে মাথা নত করে ওষ্ঠ কামড়াতে থাকে। সে উত্তর কি দিবে ভাবতে লাগল। কেন সে মানুষটার বক্ষে লুকালো? ছুটে পালালে কী বড্ড খারাপ হতো? বরং লজ্জাজনক পরিস্থিতে পড়তে হতো না। সারহান পলকহীন চোখে তাকিয়ে রয় নিভৃতসুধার নত মুখপানে। লজ্জা, জড়তায় ছেয়ে যাওয়া মুখশ্রী দেখে নিঃশব্দে হাসে। অন্য হাতে অরিত্রিকার চিবুক উঁচিয়ে অতি শান্ত কন্ঠে বলে ;
“ তুই নির্বোধ কেন ফাইরুজ? পরিচয় লুকিয়ে আমায় দিনের পর দিন ডিস্টার্ব করবি অথচ আমি কিছু বুঝতে পারবো না। চিরকুটে কি লিখেছিলি যেন, আমার মতো কাঠখোট্টা মানুষকে বিয়ে করবি আর কল করে আজেবাজে কথা বলেছিস সেসব কিন্তু ভুলিনি আমি। ”
অরিত্রিকা শঙ্কিত বদনে চাইল সারহানের তীক্ষ্ণ চোখজোড়ায়। ভয়, আতংকে কেঁপে ওঠে। ওষ্ঠ ভিজিয়ে মিনমিন করে বলে ;
“ আসলে.. আমি..। ”
“ তুই!”
“ আমি.. মজা করেছিলাম। ”
“ নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখে কী হলো? অবশেষে তো জেনে ফেললাম। ”
সারহানের স্বর দৃঢ় শোনালো। অরিত্রিকা আড়ষ্টতায় গুটিয়ে নিলো নিজেকে। কম্পিত গলায় বলল ;
“ বৃষ্টি পড়ছে চলুন ভেতরে যাই। ”
সারহান ভ্রু বাঁকিয়ে বলল ;
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ পালাতে চাইছিস? ”
“ উহু.. ঠান্ডা লাগছে। ”
“ আধা ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগেনি অথচ আমি গুন কীর্তি প্রকাশ করতেই ঠান্ডায় কাঁপা কাপি শুরু হয়ে গেল! ”
“ আমায় ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে। ”
অরিত্রিকা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল। সারহানের দৃষ্টি গাঢ় হলো। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো ;
“ দেখুক। ”
অরিত্রিকা অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকাল। চাপা স্বরে বলল ;
“ আমাকে ছাড়ুন দয়া করে। ”
“ আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। পরবর্তীতে ছাড়াছাড়ির কথা বললে কিন্তু আমি শুনবো না। ”
“ আপনি লাগামহীন কথাবার্তা বলছেন কেন? ”
অরিত্রিকা লজ্জায় নেতিয়ে পড়ে বলল। অল্পস্বল্প কথায় কন্ঠনালী রোধ হয়ে আসল। সারহান অরিত্রিকাকে ছেড়ে দিয়ে দু’কদম পেছালো। ওষ্ঠ কামড়ে হেসে ।প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না। পূর্ণ দৃষ্টিতে পরখ করল অরিত্রিকাকে। মুহুর্তে দৃষ্টি ঘুরিয়ে অন্যত্র তাকালো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল ;
“ দ্রুত রুমে যা আর ভেজা ড্রেস চেঞ্জ কর। ”
অরিত্রিকা নিজের দিকে তাকাল। মুহুর্তে চক্ষুদ্বয় বড় হয়ে গেল। তটস্ত ওড়না দ্বারা নিজেকে আবৃত করল। মনে মনে নিজেকে বকতে বকতে চঞ্চলা পায়ে ছুটল নিচের দিকে। সারহান অনুধাবন করল অরিত্রিকার চলে যাওয়া। সে দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকাল চিলেকোঠার দিকে। মেয়েটিকে আর দেখা যাচ্ছে না। সে এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না সেথায়। দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে যাওয়ায় তৎপর হয়ে ওঠে।
রাত এগারোটা পয়তাল্লিশ মিনিট,
অরিত্রিকার চক্ষুদ্বয়ে ঘুমের আভাস নেই। দু-চোখ মেলে কিছুক্ষণ পরপর এপাশ ওপাশ করে চলেছে সে। সে বুঝতে পেরেছে ঘুম মহাশয় রাতে উৎকন্ঠিত চোখে ধরা দেবে না। গভীর শ্বাস টানল। এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল সিলিংয়ের দিকে। পাশে ইশরা নাক ডেকে কুম্ভকর্ণের ন্যায় তন্দ্রাঘোরে আচ্ছন্ন । গভীর নিদ্রিত অবস্থা। অরিত্রিকা ভীষণ বিরক্ত হয়ে গেছে। মন মেজাজের অবস্থা খারাপ। শীতানুভূতি হচ্ছে। গায়ে আরামদায়ক কম্বল জড়ানো। শুধু ঘুম নেই চোখের পাতায়। এই মুহুর্ত ঘুমানো জরুরী। সে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রয়াস চালায়। তখনি মনে পড়ে রুমে আসার পরের কাহিনী। ভেজা কাপড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় দেখা হয়েছিল ইশরার সাথে। কেমন অদ্ভুত চোখে দেখছিল তাকে। সে অদ্ভুত চাহনি উপেক্ষা ছুটে এসেছিল রুমে। ভেজা ড্রেস পরিবর্তন করে বিছানায় আরাম করে বসেছিল। তখনি ইশরা দৌড়ে এসে শাকচুন্নীর মতো ঘাড়ে চাপে। সে আর সারহান ভাই এতোক্ষণ ছাদে কী করছিল সেসব প্রশ্নের পসরা সাজিয়ে বসে। অরিত্রিকা নাছোড়বান্দা। সে শরম – টরমের কথা মুখ থেকে বের করেনি। মুখ ফসকে বের করলে মানসম্মান কিছুই রাখতো না মেয়েটা। ইশরা ঘন্টাখানেক ঘ্যানঘ্যান করেও কোনো উত্তর পায়নি।
অরিত্রিকা দু’চোখ মেলে তাকাল। ঘুম মহাশয় তখনও নাগালের বাহিরে। ভাবনাগুলোর সমাপ্তি ঘটিয়ে বালিশের পাশ হতে আলসে ভঙ্গিতে ফোন হাতড়ে বের করল। অতঃপর লক খুলে তার ফেসবুক আইডিতে ঢুকল। তার ফেসবুক আইডির বয়স তিন বছরের অধিক। বাড়ির সবাইকে লুকিয়ে অরিনের ফোনে খুলেছিল। আইডির খবর শুধু অরিন জানতো। অবসর সময়ে বোনের ফোন পেলে ফেসবুকে ঢুকে উল্টো পাল্টা পোস্ট করতো। এখন আর তা করে না। তার মনে পড়ে ফেসবুক আইডি খুলেছিল এক অদ্ভুত নামে। নামটা ছিল “ আমি মঞ্জুলিকা। ” নামটা রাখার আসল কারণ ছিল পরিবারের কেউ বা সারহান যেন জানতে না পারে সে ফেসবুক একাউন্ট খুলেছে। হয়েছিল তেমনই কেউ জানতে পারেনি। অতঃপর নাম পাল্টে রেখেছিল “ হৃদস্মিতা চৌধুরী।” যখন এ বাড়ি ছেড়েছিল তখন আইডির নাম পাল্টে “ অরিত্রিকা ফাইরুজ চৌধুরী ” রাখে। সেসব স্মৃতি মনে পড়তেই সে মুচকি হাসে।মনোযোগী হয় ফোন স্ক্রোল করতে। অতি আগ্রহী হয়ে ফ্রেন্ডলিস্টের সকলের পোস্ট দেখতে থাকে। তিশা, রাহা, রুদ্র আর রুহানের পোস্ট দেখতে পেল। সবাই একযোগে বৃষ্টি কেন্দ্রিক পোস্ট দিয়েছে। সে সকলের পোস্টে রিয়েক্ট, কমেন্ট করে। তার নিজেরও ইচ্ছে করে বৃষ্টিস্নাত রাত কেন্দ্রিক কিছু লিখে পোস্ট করতে। সে কিছুক্ষণ মৌন থেকে ভাবতে লাগল কি লেখা যায়?
❝ বিষন্ন সন্ধ্যা, বৃষ্টিস্নাত শহর আর নিঃশব্দ প্রকৃতির গল্পে আপনি এবং আমি বৃষ্টিভেজা আলাপন করতে চাই। ❞
ছোট্ট ক্যাপশন লিখে পাশে বৃষ্টি এবং মেঘের ইমোজি দিয়ে পোস্ট করে। পোস্ট করার সাথে সাথে ফ্রেন্ডলিস্টের সকলে রিয়েক্ট এবং কমেন্টের ঝড় বইয়ে দিল। অরিত্রিকা দেখেও প্রতিক্রিয়া দেখালো না। কিয়ৎ সময় নিশ্চুপতা বজায় রাখল। কিছু একটা ভেবে সারহানের ফেসবুক আইডি সার্চ দিতে উদ্যত হলো। হাতের আঙুল বুলিয়ে রয়েসয়ে ইংরেজি অক্ষরে সারহানের পুরো নাম দিয়ে সার্চ দিলো। তখনি সবার ওপরে কাঙ্খিত আইডি দেখা পেল। আইডিটি ভেরিফাই করা। নামের পাশে ছোট্ট নীলচে টিক চিহ্ন দৃশ্যমান। কিঞ্চিৎ উত্তেজনা নিয়ে দুরুদুরু বুকে আইডিতে ঢুকল।দৃষ্টি স্থির হলো প্রোফাইলের ছবিতে। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় ভাব নিয়ে ছবি উঠেছে। সে নিঃশব্দে হাসল। তার দুচোখে যেন মুগ্ধতা বিরাজ করতে লাগল।
মানুষটার মাত্রাতিরিক্ত সৌন্দর্যে চঞ্চলা মন থমকে গেল। বেসামাল হলো অন্তঃস্থল। নতুন করে প্রেমে পিছলে পড়ল। সারহান ফেসবুকে বেশী এক্টিভ নয়। মাঝে মাঝে ছবি পোস্ট করে এই যাহ! তবে বর্তমানে মানুষটার নামে একটা পেজ আছে। সেটা পরিচালনা করে আবির।বিভিন্ন রাজনৈতিক পোস্ট,ছবি, ভিডিও শেয়ার করে পেজে। সেসব নিয়ে আপাততঃ অরিত্রিকার কোনো মাথা ব্যথা নেই। রাজনীতি তার পছন্দ এমনটা নয় তবে রাজনীতি করা মানুষটা তার বড্ড শখের। স্বল্প সময়ে প্রণয় নামক অসুখ এতো দৃঢ় হবে সে কল্পনা করতে পারেনি। যার থেকে দূরে থেকেছে সবসময় তার প্রেমে মুখ থুবড়ে কীভাবে পড়ল সে জানে না। সে হাস্যজ্জ্বল মুখে আইডিতে পোস্ট করা ছবিগুলো দেখ স্ক্রোল করতে করতে একটা ছবিতে তার দৃষ্টি আঁটকে গেলো। সারহানের কালো শার্ট পরিহিত ছবি। রগচটা মানুষটাকে একটু বেশীই সুদর্শন লাগছে। সুঠাম দেহী আট সাট শরীরে কালো শার্ট যেন সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।শ্যাম পুরুষকেও যে কালো শার্টে অতিরিক্ত মাত্রায় সুদর্শন লাগে তা হয়তো সারহানের ছবি না দেখলে বিশ্বাস করতো না।
ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। ছবিতে লাইক,কমেন্টের ঝড় বয়ে গেছে সাতদিনে। সে একটু অবাক হলো। পরক্ষণে আগ্রহী হয়ে কমেন্ট বক্সের কমেন্ট দেখতে লাগল। কে কি কমেন্ট করেছে তা বিরবির করে পড়া শুরু করল।কমেন্টগুলোর অর্ধেকের বেশী মেয়েরা করেছে। মনে হচ্ছে সিঙ্গেল ছেলের কমেন্ট বক্সে শিকারীর ন্যায় হামলে পড়েছে। অধিকাংশ মেয়ে প্যারাগ্রাফের মতো লুতুপুতু মার্কা কমেন্ট করেছে । যা দেখে শরীর জ্বলে গেল। এতোক্ষণের ভালো লাগা উবে গিয়ে মন বিষিয়ে উঠল। মাথা রাগে দপদপ করে জ্বলতে লাগল। অসভ্য, বেহায়া মেয়েগুলো লাজ শরম খুইয়ে যাতা কমেন্ট করেছে। সারহানের ফ্রেন্ডলিষ্টে মেয়ে খুব কম সংখ্যক মেয়ে রয়েছে। যারা যুক্ত রয়েছে তারা রাজনৈতিক দলের কিংবা বন্ধুমহলে আর ক্লাসমেট। এসব দেখে অরিত্রিকা বিরক্ত হলো। মেয়ে মানুষ নম্র ভদ্র ধাঁচের হবে কিন্তু এখানে পুরোই উল্টো।এসব আর দেখার ইচ্ছে হলোনা অরিত্রিকার। সে রাগান্বিত ভঙ্গিতে ফোন বন্ধ করে ঠাস করে বিছানার ওপর ফেলল।
রাত বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট। আরশাদ সাহেব গম্ভীর মুখে নিজ রুমে বিছানায় বসে পত্রিকা পড়ছেন। চশমার গ্লাস ভেদ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি জোড়া বুলাচ্ছেন পত্রিকার পাতায়। প্রতিটি শিরোনাম, কলাম মনোযোগ সহকারে পড়ছেন যেন কোনো বিঙ্গ মনিষী। তানিয়া বেগম হেরফের করে কিয়ৎ থেমে থেমে নজর ফেলছেন স্বামীর পানে। কিন্তু স্বামী মশাই পত্রিকাকে আপন করে পত্নীকে পর করেছেন। একটু উদাস হলেন। টিভির রিমোট তুলে নিয়ে টিভি চালু করলেন। বিবস মুখে বসে টিভি দেখতে লাগলেন। দরজার বাহির হতে ক্ষীণ আওয়াজে করাঘাত করছে কেউ। একটু থেমে থেমে ভেসে আসছে শব্দ। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা। অতি গভীর মনোযোগী হওয়ায় আরশাদ সাহেবের কপাল কুঁচকে যায়। মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয়। তানিয়া বেগম স্বামীর মনোভাব বুঝলেন। টিভি দেখা বাদ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালেন। শাড়ির আঁচল মাথায় দিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। দরজা খুলে বাহিরে তাকাতেই দেখলেন সারহান দাঁড়িয়ে আছে। বড় ছেলেকে এতো রাতে আসতে দেখে একটু অবাক হলেন।
“ বাবা জেগে আছে? ”
সারহানের কাষ্ঠপিষ্ঠ স্বর। বিনিদ্রত চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি। ভাবমূর্তি অগোছালো এবং অদ্ভুত। তানিয়া বেগম খানিকটা চেপে দাঁড়ালেন। অবাকতার রেষ কাটিয়ে হাসলেন ;
“ তোর বাবা জেগে আছে। দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে আয়। ”
সারহান একপলক মায়ের হাস্যজ্জ্বল মুখখানা পরখ করল। অন্তঃকোণ প্রশান্ত হয়ে গেল। মমতাময়ী মায়ের হাসি যেন সব কষ্ট নিবারণ করল। সে মাথা দুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। পিছু পিছু ভেতরে আসলেন তানিয়া বেগম। নিঃশব্দে গিয়ে বসলেন স্বামীর পাশে। আরশাদ সাহেব পত্রিকা গুছিয়ে পাশে রাখলেন। চোখের চশমা ঠেলে ছেলেকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন ;
“ দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো। ”
সারহান বাবার কথা মতো রুমের পূর্ব দিকে রাখা কাঠের সোফায় বসল দাম্ভিক ভঙ্গিতে। নিবিড় চাহনিতে তাকাল বাবার দিকে। আরশাদ সাহেব নিরবচিত্তে ছেলের ভাবভঙ্গি অবলোকন করেন। অতঃপর বলেন ;
“ কি বলবে দ্রুত বলো। ”
তানিয়া বেগম আড় চোখে তাকালেন। ঠেস দিয়ে বললেন ;
“ ছেলেটা নিজ থেকে দেখা করতে এসেছে অথচ কেমন আছে, কী অবস্থা খবর এসব জিজ্ঞেস না করে কি বলবে বলো! এটা কী কোনো বাপের কথার ধরণ হতে পারে?”
“ তোমার ছেলে কোনো কাজ ব্যতিত আমার সাথে বসে কথা বলতে দেখেছো? বাপ মা ভুলে সবসময় থাকে রাজনীতি নিয়ে। আমাদের সাথে ভালো মন্দ, সুখ, দুঃখের কথা বলার সময় আছে নাকি তোমার গুনধর ছেলেকে জিজ্ঞেস করো। ”
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৪৬
“ আপনি যেমন আপনার ছেলেও তেমন। ”
তানিয়া বেগম ত্যাড়া স্বরে বললেন। আরশাদ সাহেব স্ত্রীর কথায় বিরক্তবোধ করলেন। তিনি আদর্শ স্বামীর ন্যায় স্ত্রীকে উল্টো পাল্টা কথা বলে রাগিয়ে দিলেন না। এই মুহুর্ত চুপ থাকা যেন শ্রেয় মনে করলেন। সারহান দেখল মা বাবার মিষ্টি ঝগড়া। কেন যেন ভালো লাগল তা দেখে।