প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৮
আদ্রিতা নিশি
রাত আটটা বেজে পনেরো মিনিট। অরিত্রিকা ক্লান্ত শরীরে ধীরে ধীরে নিজের রুমে প্রবেশ করল। শরীরটা মেজমেজ করছে।দীর্ঘ সময়ের ঘোরাফেরায় শরীরটাকে ক্লান্তি চম্বুকের ন্যায় আঁকড়ে ধরেছে। আজ দুপুর হতে বাড়ির বাহিরে অবস্থান করছে। প্রায় ছয় সাত ঘন্টা অচেনা একজনের বাসায় বোবার ন্যায় বসে থাকা এবং দুপুরে অসহনীয় উত্তাপে বেহাল অবস্থায় পতিত হয়েছিল। তবুও ধৈর্য ধারণ করে ছিল সারহানের কারণে। অন্য কারো সাথে গেলে হয়তো তাকে রেখেই চলে আসতো এবং এতোক্ষণ বাড়িতে এসে রুমে হাত পা ছড়িয়ে ফোন টিপতো।সেসব ভাবনা ভেবে হেলেদুলে রুমের ভেতরে এগিয়ে আসতেই তার দৃষ্টি আটকে গেল বিছানার দিকে।
লেভি সেখানে বসে আছে ভদ্র ভাবে। মুখে ধরা ছোট্ট একটা সাদা কাগজ নিয়ে নিঃশব্দে আনন্দের সহিত খেলা খেলছে।অরিত্রিকার কপালে ভাজ পড়ল। সে নিঃশব্দ পায়ে এগিয়ে গেল। ক্লান্ত, বলহীন শরীরটাকে কোনো মতে টেনে এগিয়ে গেল। তার দৃষ্টি গিয়ে স্থির হলো বিছানার উপর বিছানো এক অপূর্ব কারুখন্ডিত শাড়ির উপর।হালকা গোলাপি রঙের রেশমি শাড়ি। যার জমিনে সূক্ষ্ম হাতে বসানো স্টোনের কারুকাজ। রুমের সাদাটে আলোয় ঝলমল করছে শাড়ি। তাতেই চক্ষুদ্বয় ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। শাড়ির পাশেই রাখা একটি ছোট্ট ডালা।তাতে সাজানো রয়েছে সেই একই রঙের চুড়ি আর সাদা স্টোনের গহনার একখানা অপূর্ব সেট।অরিত্রিকা থমকে দাঁড়াল। বিস্ময়ে আঁখিযুগল বড় হয়ে গেল। ওষ্ঠদ্বয় কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল। আশ্চর্যিত চোখে তাকিয়ে রইল কিছু ক্ষণ।বিস্ময়াহত হয়ে নিজের অজান্তেই শরীরটা বিছানার দিকে টেনে নিয়ে গেল তাকে। ফ্রেশ হওয়ার কথাটুকুও ভুলে গিয়ে সে দ্রুত বিছানায় উঠে বসে পড়ল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিস্ময়াবহ পরিস্থিতি সামলে নিয়ে হাতের মুঠোবন্দী পার্সটা ছটফটে ভঙ্গিমায় পাশে অবহেলায় ফেলে রাখল। নিজের মনের চঞ্চলতা না দমিয়ে সবেগে আলতো হাতে শাড়িটা ছুঁয়ে দেখতে লাগল। কাপড়টা যেন আঙুলের ফাঁক দিয়ে গলে যেতে চায়। তার উষ্ণ নিঃশ্বাসে খানিক কম্পিত হয় কারুকার্যখচিত রেশম। নরম মেয়েলী হাত খানা মোলায়েম কাপড়ের ভাঁজে বিচরণ করতে থাকে। শাড়িটা অসম্ভব সুন্দর। সে যদি পড়ে তাহলে কি চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাবে তার দিক থেকে? অরিত্রিকা একটুও সময় নষ্ট না করে সে শাড়িটা তুলে নিল হাতে।লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে সোজা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল। শাড়িটা নিজের শরীরের উপর রেখে আয়নায় নিজের প্রতিফলন দেখতে লাগল, একবার ডান পাশ থেকে, একবার বাম পাশ থেকে।তার ওষ্ঠপুটে প্রশান্ত ও মোহময় হাসি খেলে গেল মুহুর্তে। শাড়িটা সত্যিই অসাধারণ। এমন শাড়ি প্রথম দর্শনেই মন কাড়বে সবার। যেমনটা তার ক্ষেত্রে হয়েছে।
অরিত্রিকা বেশ কিছুক্ষণ ধরে আয়নার সামনে মুগ্ধ নয়নে নিজের প্রতিবিম্ব দেখল। তার ক্লান্ত ভাব কর্পূরের ন্যায় মিলিয়ে গেল হাওয়ায়। হঠাৎ করে মনে পড়ল আকদের শপিং আগামীকাল করতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে শাড়ি, গহনা কে কিনল? আকদের শাড়ির লাল বা খয়েরী কেনার কথা ছিল। তাহলে হালকা গোলাপী শাড়ি কেনো কিনল? অরিত্রিকা ভাবনার জগতে পাড়ি জমাতে গিয়েও ফিরে এলো। সে শাড়িটা ভাজ করে পুনরায় বিছানার ওপর এনে রাখল। লেভি তখন বেশ কয়েকবার ডেকে উঠল। অরিত্রিকার সেই ডাকে লেভির দিকে মনোযোগী হলো। ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে হেঁটে গিয়ে ওষ্ঠকোণে মৃদু হাসি সঞ্চার করে লেভিকে কোলে তুলে নিলো।
পরপর তিন চারটা চুমু খেল নরম লোমশ তুলতুলে প্রাণীটির গালে। লেভিও আদর পেয়ে যেন মিশে গেল তার সাথে। অরিত্রিকা হাসল শব্দ করে। বাচ্চাটা তার ভীষণ আদুরে। সে আদুরে হাত বুলিয়ে দিলো লেভির শরীরে। বিছানায় আধখোলা অবস্থায় পড়ে আছে সাদা ছোট চিরকুটের ন্যায় কাগজটা। অরিত্রিকা বিছানার দিকে তাকাতেই চোখে বাঁধল। সে কৌতুহলী হলো কাগজটায় কী লেখা আছে সেটা পড়ার জন্য। লেভিকে আদর করা বাদ দিয়ে বিছানায় বসে কাগজটা হাতে নিয়ে পুরোটা খুলে দৃষ্টি স্থির করল। সেখানে দৃশ্যমাণ লেখাগুলো পড়ে অরিত্রিকা একপ্রকার থমকে গেল। চমকিত হলো অন্তঃস্থিত মন। আচমকা উত্তেজনায় হাত কাঁপতে লাগল। মাত্রাতিরিক্ত সুখে চক্ষুদ্বয়ে ভীড় করল অশ্রু। বক্ষস্থলে ধকধকানির মাত্রা বাড়ছে। অব্যক্ত ভালো লাগায় সিক্ত হয়ে উঠছে অন্তঃস্থল। সে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল। চাপা উত্তেজনা নিয়ে কম্পনরত কন্ঠে পড়তে শুরু করল হাতে থাকা চিরকুট খানি।
“এক সময় মনে হতো ভালোবাসা যদি অন্তঃকোণে লুকিয়ে রাখা যায় তবেই তা হয়ে ওঠে সবচেয়ে মূল্যবান এবং সবচেয়ে পবিত্র। ভেবেছিলাম মুখে না বললেও হৃদয়ের গভীরতা সে নিজেই একদিন বুঝে নেবে অনুভূতির সীমানা । কিন্তু আজ বুঝলাম ভুল ছিলাম আমি।সব ভালোবাসা নিঃশব্দে বাঁচে না। কিছু ভালোবাসাকে ভাষা দিতে হয়, ছুঁয়ে দিতে হয় স্পর্শে, ভাসিয়ে দিতে হয় প্রকাশের স্রোতে। কখনও রাগ ভাঙাতে, কখনও শুধু প্রিয়জনের ছোট্ট একটি ইচ্ছেকে বাস্তব করে তুলতেই তাকে জানান দিতে হয় সে কতখানি আপন কতখানি প্রয়োজন।ভালোবাসার মানুষটির তৃষ্ণার্ত হৃদয় কেবল তখনই ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারে যখন তার ইচ্ছেগুলোকে নিঃশব্দে পূরণ করে দেওয়া হয়। কারণ ভালোবাসা মানেই শুধু আবেগ নয় দায়িত্বও বটে।আর তাই আজ আমি আমার নিভৃত ভালোবাসার আমার নিভৃতসুধার সেই ক্ষণিক অমূল্য ইচ্ছেটুকু পূরণ করলাম। তোকে ঘিরে আমার অনুভূতি স্বল্প পরিমাণ প্রকাশ করলাম।
ভালোবাসি ফাইরুজ, ভালোবাসি আমার হৃদয়ে রাজত্ব করা একমাত্র রমণীকে এবং এখনো পুরোটা আমার না হওয়া বিবিজানকে।
— তোর কল্পপুরুষ”
(শাড়িটা পড়ে সুন্দর ভাবে সেজেগুজে রাত সাড়ে দশটায় ছাদে চলে আসবি। তোর অপেক্ষায় থাকবো আমি।)
চিরকুটের নিচাংশ ছোট্ট করে নোট লিখা।অরিত্রিকা ধীরজ ভারী কন্ঠে প্রতিটি শব্দ আবারও উচ্চারণ করল।পুনরায় অবিশ্বাস্য চাহনিতে পরখ করে প্রতিটি অক্ষরের গভীরে আওড়াতে থাকে।তার শরীরের কাঁপন যেন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।হৃদয়ের ভিতরটায় কোথাও হঠাৎ করে চাপা বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে।আবার পড়ল সে। তিনবার, চারবার করে একনাগারে প্রতিটি লাইন প্রতিটি কথা অনুভব করতে লাগল।এই যে অল্প লেখনিতে ভেসে উঠেছে এক প্রেমিক পুরুষের গভীর অনুভব।যে পুরুষের চোখের চাহনি তীক্ষ্ণ এবং বজ্রের ন্যায়।
কিন্তু মনের গভীরে কোমল অনুভূতির ঢেউয়ে পরিপূর্ণ ।সেই কঠিন আবরণে মোড়া পৌরুষের আবরণ ভেদ করেঅরিত্রিকার নারীমন অবশেষে উপলব্ধি করল সেই গভীরতা।সে নিমেষেই বুঝে ফেলল শ্যামবরণ সেই পুরুষটির হৃদয়ের একমাত্র অধিকারিণী সে নিজেই।পুরো অস্তিত্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সেই অনুভব, সেই অব্যক্ত আবেগ সবটাই শুধুই তার জন্য।সে অনুভব করল এ হৃদয়ের কঠিন প্রাচীরের ভিতরেও এক কোমল রাজ্য আছে। যেখানে রাজত্ব করে “অরিত্রিকা” নামক রমণী।তার নিশ্বাস ঘন হয়ে উঠল।মনে এক অনির্বচনীয় আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে গেল শীতল শিহরণ। চঞ্চলা মন চাইল ছুটে যেতে সেই সুখসাগরে।
ভেসে যেতে আবেগের উথাল জোয়ারে।সারহান ভাই যে এনগেজমেন্টের ব্যবস্থা করেছে সে ভাবনায় কিঞ্চিৎ বিস্ময় জাগলেও এই মুহূর্তে সে নিজেকে মনে করল এক পরিপূর্ণ সুখী রমণী।ভালোবাসার মানুষটা যদি সব ইচ্ছে এক নিমিষে পূর্ণ করে দিতে চায় তাহলে জীবন থেকে আর চাওয়ার কী-ই বা থাকে?অরিত্রিকা হঠাৎ করেই কোল থেকে লেভিকে নামিয়ে দিলো।তারপর বিছানায় উঠে দাঁড়াল হুড়মুড়িয়ে।তার দেহে, মনে অপার আনন্দের জোয়ার বইয়ে গেল।ভাবাবেগ আর আবেগের স্রোত আটকে রাখতে পারল না সে।উন্মাদ আনন্দে, বেপরোয়া উদ্যমেসে নাচতে লাগল।পায়ের শব্দে শরীরের ছন্দে ছড়িয়ে পড়ল সেই উচ্ছ্বাস। নাচের সাথে গলা ফাটিয়ে গাইতে শুরু করল গান। হঠাৎ প্রেমের অদৃশ্য বৃষ্টিতে ভিজে ওঠা সুর।যা শুধু তার ভালোবাসার মানুষের জন্যই উৎসর্গিত করল।যার হৃদয়প্রদীপ জ্বলে উঠেছে সেই শ্যামপুরুষের প্রেমময় স্বীকৃতিতে।
❝এই মনেরই সীমানায়,তুমি ছাড়া কেউ নাই
আড়াল হলে যেন, ম*রে যাই
এই মনেরই সীমানায়,তুমি ছাড়া কেউ নাই
আড়াল হলে যেন, ম*রে যাই
সহে না যাতনা, কী করি বলো না
যতনে রেখেছি তোমাকে কতো না। ❞
নিশিথের দিগন্তে সন্ধ্যার আলো বিলীন হয়েছে অনেক আগেই।অম্বরের জ্বলজ্বলে রঙের যে রুপটি প্রতিদিন সন্ধ্যাপর্বে মঞ্চস্থ হয় আজ তা ছিল অনুপস্থিত। ধরণীর বক্ষে ধীরলয়ে নেমে এসেছে এক ফালি অন্ধকার।রাত ক্রমে আরও গভীর হয়ে উঠছে।সমগ্র প্রকৃতিকে ঘিরে ধরেছে অপার নিস্তব্ধতা।আজকের আবহাওয়া স্বভাবচ্যুত। নিতান্ত সাদামাটা নয়।অম্বরে জমেছে মেঘ। অম্বরের বক্ষে উদ্যম গতিতে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘেরা। চারপাশে বয়ে যাচ্ছে মৃদু মন্দ হাওয়া।নরম, শীতল স্পর্শে হিমশীতলতার আভাস।যা শুধু শরীরের সাথে মনকেও ছুঁয়ে যায় বিষণ্ণ স্নিগ্ধতায়।এ হাওয়ার পরশে জেগে ওঠে ভাবালুতা।এক অনির্বচনীয় অনুভূতি হঠাৎ করেই কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। পুরো ছাদ সাজানো হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ফুল ও রঙ বেরঙের টিপটাপ লাইট দ্বারা। ছাদের মাঝখানে ছোট করে স্টেজ করা হয়েছে। সেটাও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। স্টেজের কিছু অংশে লাল টকটকে গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে।
“দুলহে রাজা আপনাকে দেখতে ঝাক্কাস লাগছে। আমাদের হবু ভাবী দেখে নিশ্চিত টাস্কি খাবে। এদিকে আসুন নজর টিকা লাগিয়ে দেই কানের পেছনে যেন কারো নজর না লাগে আপনার।”
ছাদে বাড়ির তিনজন সদস্য বাদে সকলে উপস্থিত। সবাই সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে সারহান এবং অরিত্রিকার জন্য। অবশেষে সারহানের দেখা পাওয়া গেল। আবিরও বন্ধুর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। অবশেষে অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে উদয় হলো। ব্যস, সারহানকে খোঁচানো শুরু করে দিল। সারহান ছাদে পা রাখতেই আবিরের কথা শুনে ভ্রুযুগল গুটিয়ে নিল। তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকাল সামনে। গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“বাঁদরের মতো হাসা বন্ধ কর। হাত ভেঙে বসে আছিস অথচ তোর ঘাওড়ামি কমল না।”
আবিরের ওষ্ঠপুট প্রশস্ত হলো। দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়াল। বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল;
“তোর মতো বন্ধু থাকলে কি আর ঘাওড়ামি বাদ দেওয়া যায়! ব্রো বিয়ের পর অরিত্রিকা পেয়ে আমাকে ভুলে যাস না। যদি ভুলে যাস আমি কিন্তু ভাত খাব না।”
সারহানের নাক মুখ কুঁচকে উঠল। ভরাট কন্ঠে বলল;
“একদম গায়ে পড়া মেয়েদের মতো বিহেব করবি না আবির। দূরে সর তুই। তোর ভাবসাব ভালো ঠেকছে না।”
“তুই আমাকে ওসবের সাথে তুলনা করতে পারলি? তুই নিষ্ঠুর কেনো সারহান? আমার ভাইয়ের মতো ভালোবাসার মূল্য দিলি না?”
“আপাতত তোর ভাইয়ের মতো ভালোবাসাকে আশকারা দিতে চাইছি না।”
সারহান আবিরের কাঁধ চাপড়ে বলল। আবির মুখ ভার করার ভাণ করল। সাদাত এতোক্ষণ দুজনের কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছিল। সে এগিয়ে এলো। ভ্রু নাচিয়ে শব্দ করে হেসে বলল;
“তোমাদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে প্রেমিক প্রেমিকা। প্রেমিকের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর প্রেমিকা অভিমাণ করেছে। এটাকে বলা যায়, প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসা উহু ব্রোমেন্স।
কথাটি বলে হুহা করে হেসে দিলো সাদাত। সারহান জ্বলন্ত চাহনিতে তাকাল ভাইয়ের দিকে। আবির লাফিয়ে উঠে তড়িঘড়ি করে বলল;
“ আসতাগফিরুল্লাহ্। এসব কি বলো শালাবাবু? চুপ করো নয়তো কেউ শুনে ফেলবে। তখন কী হবে ভাবতে পারছো? সবাই ভাববে সারহানের লেসুর প্রবলেম আছে। তখন তোমার ভাইয়ের বিয়ে হবে না।”
সারহান চাপা স্বরে ধমকে বলল;
“চুপ কর নয়তো তোকে মে’রে আরেক হাত ভেঙে দেব।”
“আচ্ছা ভাই চুপ করলাম।”
আবির মুখে আঙুল গুঁজে ভদ্র ছেলের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। সাদাত কিছুটা দূরে গিয়ে হাসতে লাগল। সারহান বিরক্তসূচক শব্দ করে এগিয়ে গেল স্টেজের দিকে। ইসমা বেগম দুইদিন হলে বাড়িতে নেই। বগুড়াতে গিয়েছেন কোনো কাজে। আজকে আসার কথা থাকলে ও তিনি বাহানা ধরে আসেননি। চৌধুরী বাড়ির সকল সদস্য অবশ্য বুঝেছে ইচ্ছাকৃত আকদে উপস্থিত থাকবেন না তাই বগুড়া গিয়েছেন ইসমাইল বেগম। আরশাদ সাহেব এবং আজমল সাহেবও জোর করেননি আসার জন্য। অরিন ও ইশরা অরিত্রিকাকে সাজিতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হবে তারা। ইরফান রেলিঙ ঘেষে ম্লান মুখে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা আজ অশান্ত। বক্ষে পাথর চাপা রেখে ভালোবাসার মানুষটির এনগেজমেন্টে উপস্থিত হয়েছে এর থেকে কষ্টের কি বা হতে পারতো। গল্পটা কেন অন্যরকম হলো না? কেন অরিত্রিকা তার অনুভূতির কদর করল না? কেন ভালোবাসলো না? এসব ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। অবাধ্য মনকে বোঝায়, হয়তো অরিত্রিকাকে না পাওয়ার মাঝেই ভালো কিছু লুকিয়ে ছিল। সারহান স্টেজে বসে আছে। ধৈর্য হারিয়ে বার বার চিলেকোঠার দরজার দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার ঘড়ির দিকে সময় দেখছে। অতি কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। সে বরাবরই ধৈর্যশীল মানুষ। তবুও আজকে অধৈর্যের ন্যায় আচরণ করছে। পূর্বে কখনো এহেন আচরণ করেছে বলে মনে হলো না। প্রণয়িনীকে তার পছন্দের শাড়িতে ভীষণ মায়াবী লাগছে। সেই দৃশ্য একপলক দেখার জন্য মরিয়া উঠেছে সে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মন।
আরশাদ সাহেব দূর থেকে ছেলের হাবভাব লক্ষ্য করে হাসল। ছেলেটা তার মতোই অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে। তিনিও এনগেজমেন্টের দিন তানিয়া বেগমকে দেখার জন্য এহেন আচরণ করেছিলেন। তখন তার বাবা ধমকে চুপ করে বসতে বলেছিলেন। তিনি লজ্জা পেয়েছিলেন বটে। তানিয়া বেগম ছেলের কান্ড দেখে হাসলেন। তিনি এগিয়ে এসে আরশাদ সাহেবের সামনে দাঁড়ালেন। হাসি বজায় রেখে বললেন;
“বিয়ে না করতেই আপনার ছেলে বউ পাগল হয়ে যাচ্ছে। দেখুন, অরিত্রিকাকে দেখার জন্য কেমন ছটফট করছে?”
আরশাদ সাহেব তাল মিলিয়ে বললেন;
“একদম ঠিক বলেছো। ছেলেটা আমার মতো হয়েছে বুঝলে। মনে আছে তোমাকে একপলক দেখার জন্য কেমন পাগলামি করেছিলাম?”
“মনে থাকবে না? বাবা আপনাকে সবার সামনে ধমক দিয়েছিল অসভ্য বলে।”
“আমার সম্মানটা সবার সামনে শেষ করে দিয়েছিল।”
সাথী বেগম স্টেজে উপস্থিত হলেন। সারহানের উদ্বিগ্ন ও বিচলিত ভাব দেখলেন। বুঝতে পারলেন সন্তানসম ছেলেটার মনের ভাব। মায়ের মন শান্ত অনুভব হলো। তিনি বুঝতে পারলেন সারহান অরিত্রিকাকে কতোটা ভালোবাসে। যদিও ছেলেটা কখনো নিজের অনুভূতির কথা কাউকে ঠাওর করতে দেয়নি কাউকে। তবুও ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি আদুরে হাত সারহানের মাথায় রাখল। সারহান কিঞ্চিৎ চমকে গেল। চিলেকোঠার দরজার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে সামনে তাকাল। তাকাতেই সাথী বেগমকে দেখল। নিজেকে সামলে স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“কিছু বলবে চাচী?”
সাথী বেগমের ভেতরটা কেঁপে উঠল। আচানক চক্ষুদ্বয়ে ভীড় করল অশ্রু। মায়া মিশিয়ে বলল;
“আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে সপে দিলাম৷ সারাজীবন আগলে রেখো আব্বা। জানোই তো, মেয়েটা শুধু বড় হয়েছে কিন্তু ভার বুদ্ধি হয়নি। সারাক্ষণ ছেলেমানুষী করে। ভুলভাল করলে শিখিয়ে দিও।”
সারহান সাথী বেগমের হাত ধরল। ভরসা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলল;
“আপনার মেয়েকে সারাজীবন আগলে রাখার দায়িত্ব এখন থেকে আমার। সুখে, দুঃখে সবসময় অরিত্রিকার পাশে থাকবো। তুমি চিন্তা করো না চাচী!”
সাথী বেগম এতটুকু ভরসা পেয়ে শান্ত হয়ে গেল। ভিজে ওঠা চক্ষুদ্বয় মুছে নিলেন। অতঃপর সারহানের মাথা হাত বুলিয়ে প্রস্থান করলেন। আজমল সাহেব এ মুহুর্তে সারহানের সামনে গেলেন না। এ ছেলের একদম ভরসা নেই। যখন তখন মান সম্মান নিয়ে টানাটানি করা শুরু করে দিতে পারে। এর মাঝেই টিপটাপ লাইট গুলো বন্ধ হয়ে গেল। মৃদু শব্দে বক্সে গান বেজে উঠল। স্পটলাইট আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল চিলেকোঠার সামনের অংশ। আবির ও সাদাত তড়িঘড়ি করে সারহানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। একসঙ্গে উত্তেজিত হয়ে চাপা স্বরে বলে উঠল;
“আমাদের ভাবি আসছে।”
সারহান মুহূর্তেই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। তীক্ষ্ণ, প্রগাঢ় চাহনিতে তাকাল। দৃষ্টি স্থির করল দরজার দিকে। চিলেকোঠার দরজা পেরিয়ে প্রবেশ করল অরিত্রিকা।হালকা গোলাপি রঙের শাড়িতে আচ্ছাদিত তার মেয়েলী অবয়ব।স্নিগ্ধ, মোহনীয় রুপে ঘায়েল হলো এক গম্ভীর মানবের কঠিন হৃদয়।সারহান পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে।অরিত্রিকার খোলা কৃষ্ণাভ চুলগুলো হাওয়ার মৃদু পরশে দুলছে ধীর ছন্দে। আঁখিযুগলে হালকা কাজল, গোলাপী ওষ্ঠদ্বয়ে সূক্ষ্ম হাসির রেখা। সেই রুপ অপার মুগ্ধতার সৌরভ ছড়িয়ে দিচ্ছে কারো বক্ষে।স্টোনের গহনায় প্রতিফলিত হচ্ছে ম্লান সাদাটে আলো। সেই আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার জোগাড় সবার।অরিত্রিকা ভীষণ নার্ভাস। বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে হৃদস্পন্দন ছন্দ হারাচ্ছে ক্রমশ। তবুও মুখে একটুকরো শান্ত দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে আসে সে।পেছন পেছনে আসছে ইশরা আর অরিন।তাদের মুখেও মৃদু উত্তেজনার রেখা।অন্যদিকে ক্যামেরাম্যান ব্যস্ত সেই মুহূর্তগুলোকে চিরস্থায়ী করে রাখতে।
অরিত্রিকা ধীরজ পায়ে এগিয়ে গেল স্টেজের সামনে। চারপাশের আলো-আবহ, পরিবারের সদস্যদের উৎচ্ছাস সব মিলিয়ে গেল হঠাৎ। সবার উচ্ছসিত চাহনি বাড়ির ছোট মেয়ের দিকে।শাড়ির আঁচল সামলে ঠিক তখনই স্টেজে উঠতে যাবে এমন সময় সারহান সামনে এসে থেমে দাঁড়াল।তার শ্যামবর্ণ হাতখানা আলতো করে বাড়িয়ে দিল।অরিত্রিকা থমকে গেল। চক্ষুদ্বয় বিস্ময়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।সেই প্রস্তাবিত হাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে সরাসরি দৃষ্টি স্থির করল সারহানের তীক্ষ্ণ চোখে।সারহান আজ যেন স্বপ্নের পুরুষ রুপে ধরা দিয়েছে তার কাছে। সে গাঢ় চাহনিতে একবার পরখ করল শ্যামমানবকে। সাদা শার্টের ওপর কালো ব্লেজারে আবৃত সুঠামদেহী শরীর। হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি পায়ে কালো জুতা আর চুল সযত্নে জেল দিয়ে সেট করা।অরিত্রিকার হৃদয়ে অজানা আলোড়ন আবির্ভাব।এই মানুষটিকে কতবার যে কল্পনায় এঁকেছে তা নিজেও জানে না।কিন্তু আজকের এই শুভক্ষণে বাস্তব মানুষটা কল্পনার চেয়েও বেশি সুদর্শন এবং প্রেমিক পুরুষ মনে হচ্ছে।
“অরিত্রিকা, আমার বন্ধু হাত বাড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি হাতটা ধরে উঠে পড়ো স্টেজে।”
আবিরের মজার ছলে বলা কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই অরিত্রিকার ভাবনার ছেদ ঘটল। লজ্জায় মিইয়ে গেল। অস্বস্তি নিয়ে কম্পনরত হাত দ্বারা পুরুষালী হাতটা ধরল। সেই স্পর্শে মিলিয়ে গেল সংশয়। সারহান নিঃশব্দে হাসল। মুঠোবন্দি হাতটা আলতো করে ধরে অরিত্রিকাকে স্টেজে নিয়ে এসে দাঁড় করালো। সঙ্গে সঙ্গে সাদাত উচ্চস্বরে বলল;
“ক্যামেরাম্যান জালদি ফোকাস করো ভাই এবং ভাবির প্রেমময় মুহূর্তের দিকে।”
অরিত্রিকা ততক্ষণাৎ সারহানের হাত ছেড়ে দিলো। লজ্জা, আড়ষ্টতায় হাসফাঁস করে উঠল। চোরা চোখে নজর বুলিয়ে নিলো আশেপাশে। দেখল সবাই মিটিমিটি হাসছে তাদের দিকে তাকিয়ে। তা দেখে লজ্জার মাত্রা বাড়ল। সারহান তা পরখ করে অরিত্রিকা দিকে ঘেষে দাঁড়াল। শীতল চাহনি মেয়েলী মুখশ্রীতে স্থির করে গলা খাদে নামিয়ে নিভৃত কন্ঠে বলল;
“রাতের আঁধারে ফোটা নৈশফুলের থেকেও বেশী স্নিগ্ধ লাগছে তোকে।”
অরিত্রিকা বিস্মিত হয়ে তাকাল সারহানের মুখপানে। অতঃপর মিষ্টি করে হাসল। সাদাত ইশরাকে ডাকল এনগেজমেন্টের রিংয়ের ডালা দুইটা নিয়ে আসার জন্য। তারপরেই বাড়ির সব সদস্যকে স্টেজে আসার জন্য বলল। সাদাতের কথা অনুযায়ী সবাই এসে দাঁড়াল। সারহানের পাশে অরিন একটা ডালা নিয়ে দাঁড়াল। অরিত্রিকার পাশে ইশরা একটা ডালা নিয়ে দাঁড়াল। সাদাত ক্যামেরাম্যানকে ইশারা করল ফ্যামিলি ফটো নেওয়ার জন্য। ফটো নেওয়া হতেই সাদাত ঘোষণা করল আংটি বদল করার।
সারহান অরিনের হাতের ডালা থেকে বক্সটা খুলে আংটি বের করল। অরিত্রিকাকে ইশারা করল হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। অরিত্রিকা লাজুক হেসে হাত বাড়িয়ে দিল। সারহান আংটিটা সযতনে পড়িয়ে দিলো আঙুলে। অতঃপর ইশরার ডালা থেকে বক্স খুলে আংটি বের করল। সারহান হাত বাড়িয়ে দিতেই টুপ করে পড়িয়ে দিলো। এতো তাড়াহুড়ো করে আংটি পড়ানো দেখে শব্দ করে হেসে উঠল সকলে। পরক্ষণে হাত তালিতে মুখরিত হয়ে উঠল পরিবেশ। সবাই একে একে এসে অভিনন্দন জানাল অরিত্রিকা ও সারহানকে। সবার শেষে ইরফান অভিনন্দন জানাল। ম্লান হেসে শুধু বলল;
“শুভ কামনা রইল।দোয়া করি তোরা দুজন সুখী হো।”
এতোটুকু বলে প্রস্থান করল ছাদ থেকে। বাড়ির কেউ পিছু ডাকলো না আর। সাদাত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল;
“ভাই ও ভাবীর এনগেজমেন্ট উপলক্ষে আমি একটা গান গাইবো। সবাই শুনতে প্রস্তুত তো?”
উপস্থিত সকলে একযোগে হ্যাসূচক বলে স্টেজ থেকে নেমে দাঁড়াল সারহান ও অরিত্রিকা ব্যতিত
। সাদাত দৌড়ে গিয়ে ছাদের এককোণে রাখা গিটার নিয়ে আসলো। গলায় ঝুলিয়ে উচ্চস্বরে বলল;
“ আমি গান গাইব আর তোমরা সবাই আমাকে চ্যায়ার-আপ করবে।
ইশরা মুখ বাঁকিয়ে বলল;
“কোন দেশের সঙ্গীত শিল্পী এসেছে রে! তাকে আবার চ্যায়ার আপ করতে হবে।”
সাদাত রাগল না বরং হাসল। অতঃপর গিটারে আঙুল ছুঁইয়ে বাজিয়ে মনোমুগ্ধকর কন্ঠে গান গাওয়া শুরু করল।
❝পড়েছি প্রেমে প্রথম দেখায়,
রেখো আমায় কাজল রেখায়।(২)
শুধু একবার বলো তুমি যে আমার,
তুমি ছাড়া এ মনটা চায় না কিছু আর।
সাদাত থামতেই ইশরা স্টেজে উঠে গিয়ে হেসে তাল মিলিয়ে গান গাইতে লাগল। উপস্থিত সকলে অবাক হলো বেশ। সাদাত বিস্মিত নয়নে ইশরার দিকে তাকাল। ইশরা সেই চাহনি দেখে গাওয়ারত অবস্থায় চোখ মা*রলো। তা দেখে সাদাত ধরফরিয়ে উঠল।
❝আমি বার বার বলি আমি যে তোমার,
তুমি ছাড়া জীবনটা সয় না কিছু আর।
পড়েছি প্রেমে প্রথম দেখায়, ❞
ইশরা থামতেই সাদাত গিটার বাজিয়ে ইশরার আশেপাশে ঘুরে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে মৃদু হাসি সঞ্চার করে গেয়ে উঠে গান।
❝রেখো আমায় কাজল রেখায়,
ওহ, হো ওহো হো……❞
সাদাত গিটার বাজাচ্ছে। অরিত্রিকা ওষ্ঠকোণে হাসি ফুটিয়ে গানের তালে তাল মিলিয়ে শরীর দোলাচ্ছে। সারহান তা এক ধ্যানে তাকিয়ে দেখছে। সেই ধ্যান ভঙ্গ হলো অরিত্রিকার আচমকা গেয়ে ওঠা মিষ্টি মধুর কন্ঠস্বর।
❝মন জানেনা তো আর যে কতো,
সইবে জ্বালাতন, ❞
অরিত্রিকা থামল। সে থামতেই সারহান দু কদম এগিয়ে অরিত্রিকার সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ গেয়ে উঠল। অরিত্রিকা অবাক হয়ে গেল।
❝পণ করেছি আমি..
রইবো প্রেমী পাশে সারাক্ষণ। ”
সারহান থামতেই অরিন আবিরকে উদ্দেশ্য করে গাইল। আবির স্তব্ধ হয়ে গেল যেন।
❝মন জানেনা তো আর যে কতো,
সইবে জ্বালাতন।❞
আবির অরিনের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেয়ে উঠল।সবাই হঠাৎ এমন সারপ্রাইজ পেয়ে বিস্মিত।
❝পণ করেছি আমি..
রইবো প্রেমী পাশে সারাক্ষণ।❞
আবির থামতেই সারহান অরিত্রিকার হাত ধরে ভ্রু নাচিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে গেয়ে উঠল।
❝শুধু একবার বলো তুমি যে আমার,
তুমি ছাড়া এ মনটা চায় না কিছু আর। ❞
অরিত্রিকা হাতের দিকে নজর দিলো। আবেগে ভেসে উত্তর স্বরুপ গান গেয়ে বুঝিয়ে দিলো তার মনে চলমান অনুভূতির কথা।
❝আমি বারবার বলি আমি যে তোমার,
তুমি ছাড়া জীবনটা সয় না কিছু আর।❞
অরিত্রিকা থামল। সাদাত পুরো স্টেজে ঘুরে ঘুরে গিটার বাজাতে ব্যস্ত। এভাবেই একের পর এক গান গেয়ে সমাপ্তি ঘটালো। অতঃপর হাত তালি দিলো বাকীরা। ক্যামেরাম্যান এতো সুন্দর মুহুর্তগুলো ক্যামেরা বন্দি করে রাখল। সাদাত ও ইশরা স্টেজ থেকে নেমে দাঁড়াল। হাস্যজ্জ্বল ভঙ্গিমায় সামনে তাকাতেই চক্ষুদ্বয় বড় হয়ে গেল। পাশে দাঁড়ানো সবার একই অবস্থা। সারহান অরিত্রিকার সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছে। এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে;
“ইউ উইল বি মাই কম্প্যানিয়ন থ্রু অল দ্য জয়েস অ্যান্ড সরোজ অফ মাই লাইফ, ফাইরুজ।”
অরিত্রিকার বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ল। সে ডাগড় আঁখিযুগল মেলে সারহানের দিকে তাকাল। সে বাকরুদ্ধ এ মুহুর্তে। মানুষটার কতো অজানা রুমের সাথে পরিচয় হওয়া বাকি তার। সারহান অরিত্রিকা চুপ থাকতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“আর কতোক্ষণ চুপ করে থাকবি? পা ব্যথা হয়ে যাচ্ছে তো।”
অরিত্রিকা ফিক করে হেসে দিলো। সারহানের বাড়িয়ে রাখা হাতটা ধরে উচ্ছসিত ভাব নিয়ে বলল;
“ইয়েস আই উইল।”
সারহান প্রসন্ন হেসে উঠে দাঁড়াল। আচমকা তার হাতের মুঠোয় থাকা অরিত্রিকার হাতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। তপ্ত ওষ্ঠপুট স্থায়ী হলো না বেশীক্ষণ। অরিত্রিকা শিউরে উঠল। স্তম্ভিত নয়নে সরাসরি তাকাল সারহানের মুখাবয়বের দিকে। সেই চাহনি দেখে সারহান ওষ্ঠ কামড়ে হাসল। উপস্থিত সকলে হা হয়ে গেল। আবির লাফিয়ে উঠে শিষ বাজিয়ে বলল;
“ জিও দোস্ত। একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস।”
ইশরা হতবাক হয়ে বলল ;
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৭
“এটা কি হলো?”
সাদাত দুষ্টুমি করে বলল;
“এটা রোমান্স হলো। আহা! ভাই আমার আকদের আনন্দে চু*মুখোর হয়ে যাচ্ছে। আমি যে কবে হবো?”
ইশরা কটমট করে তাকিয়ে বলল;
“অসভ্য।”
সাদাত ভাব নিয়ে বলল;
“শুধু তোর জন্য।”