প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৬৪

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৬৪
আদ্রিতা নিশি

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে। ঘড়ির কাটায় নয়টা বেজে দশ মিনিট। অরিত্রিকা বসে আছে নিজের রুমে। পরনে আকদের শাড়ি। ফ্রেশ না হয়ে পূর্বের সাজে বসে থেকে হাতে থাকা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। কিছুক্ষণ পূর্বে সে ফেসবুকে গট ম্যারেড স্ট্যাটাস দিয়েছে সারহানকে ট্যাগ করেছে। সেই পোস্টকে ঘিরে যেন ঝড় উঠেছে। ছেলে- মেয়ে উভয়ই কমেন্ট বক্স উড়িয়ে ফেলছে।

বিশেষ করে সিঙ্গেল মেয়েরা হৃদয়বিদারক কমেন্ট করেছে। যারা এতোদিন সারহানকে পছন্দ করতো তারা পাগলের মতো আহাজারি করে কমেন্ট করছে। অরিত্রিকা সেই দৃশ্য দেখে হাসছে। একটু খারাপও লাগছে বটে। আহারে মেয়েগুলো ছ্যাকা খেয়ে চোখের পানি আর নাকের পানি এক করছে। কেন যেন হিংসাও হচ্ছে। সারহান ভাইকে এতোগুলো মেয়ে কেন পছন্দ করবে?
“বিয়ে করে আমাদের ভুলে গেছিস অরিত্রি? আমরা এসেছি অথচ তুই দেখা করতে এলি না। এখনি পর করে দিচ্ছিস?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরিত্রিকা হাসি থামিয়ে তাকায় দরজার দিকে। ইফা মুখ ভার করে হেলেদুলে রুমে প্রবেশ করেছে। ভাবমূর্তি দেখে বোঝা যাচ্ছে তার ওপর ভীষণ চটেছে। মামা – মামীরা বিকেলে এসেছে অথচ সে একবারো দেখা করে নি। তাই রাগ করার কথা।সে ফোনটা রেখে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। শাড়ির কুঁচি সামলে এগিয়ে গিয়ে সরাসরি জড়িয়ে ধরল ইফাকে। মিষ্টস্বরে বলল;
“তোমাদের ভুলিনি আমি। সারাদিনের ধকলে ক্লান্ত আমি। তাই রুমে এসে রেস্ট নিচ্ছিলাম আর আমি জানতাম তোমরা দেখা করতে আসবে। এই তো কিছুক্ষণ আগে আফ্রিদি ভাইয়া এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে।”
ইফা অরিত্রিকার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। বধূ বেশে ফুপাতো বোনকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে ক্ষীণ হেসে বলে;

“আমার ছোট্ট পরীটা কত্তো বড় হয়ে গেছে। শাড়ি পড়ে বউয়ের মতো লাগছে।”
অরিত্রিকা লাজুক হাসল ;
“আপু আমি তো নতুন বউ।”
ইফা ফিক করে হেসে দিলো। মাথা দুলিয়ে হাস্যরত কন্ঠে বলল;
“হ্যা। মিস্টার চৌধুরীর বউ। ভাবতেই অবাক লাগছে তুই আমার আগেই বিয়ে করে নিলি অথচ তোর আগে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ছোটবেলায় বড়দের বিয়ে দেখতাম। বড় হয়ে ছোটদের বিয়ে দেখি। কি কপাল আমার! ”
“তুমি আমায় লজ্জা দিচ্ছো আপু?”
“ওমা আমি কখন লজ্জা দিলাম? আমি তো নিজের জন্য লজ্জা পাচ্ছি। জানিস, ভাইয়া আমায় সকাল থেকে একটা কথা বলে যাচ্ছে, আমার নাকি লজ্জা পাওয়া উচিত ছোট বোনের বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার জন্য।”
“ভাইয়া এসব বলেছে! তাহলে তো ভাইয়ারও লজ্জা পাওয়া উচিত।”
“একদম। আচ্ছা শোন, আজ রাতে আমি তোর কাছে থাকব। সারারাত জেগে তোর আর তোর নেতাসাহেবের প্রেম কাহিনী শুনব।”

ইফা মুচকি হেসে বলল। অরিত্রিকা অপ্রস্তুত হলো। মিনমিন করে বলল;
“আসলে আপু আমাদের তেমন প্রেম কাহিনী নেই।”
ইফা আশ্চর্য হয়ে বলল;
“মানে? আমি তো শুনলাম তোর লাভ ম্যারেজ।”
“লাভ, অ্যারেন্জ দুটোই। উনি আমাকে তিনবছর আগে থেকে ভালোবাসতেন।”
“ওহ হো এই কাহিনী। বোন তোর গোমড়ামুখো কাজিনটাকে দেখে মনে হয়নি তোকে ভালোবাসতো। ব্যাটা তো ছুপা রুস্তম বের হলো।”
“আপু তুমি উনাকে গোমড়ামুখো বলবে না।”
“আরেব্বাস এতো ভালোবাসা! আবার বলছিস তেমন প্রেম কাহিনী নেই। আমি ফোনটা নিয়ে আসি। তারপর সারারাত জেগে গল্প শুনবো।”

কথাটি বলে ইফা হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। অরিত্রিকা মৃদু হাসল। ইফা আপুকে সে কি করে বোঝাবে অন্য প্রেমিক প্রেমিকাদের মতো দীর্ঘ সময় প্রেম করেনি তারা। সারহান ভাই তাকে সবার অগোচরে ভালোবেসেছে প্রায় তিন বছর আর সে? যখন প্রেমিক পুরুষের মনে তার জন্য ভালোবাসার গভীরতা ও না পাওয়ার হাহাকার দেখতে পেল। তখন থেকে কৌতূহল জাগল। মানুষটা তাকে কতোটা ভালোবাসে তা জানতে ইচ্ছে হলো। একসময় জেনেও গেল। তারপর ধীরে ধীরে ভালোলাগলো। ভালোলাগা থেকে প্রণয়ের সূচনা হলো। স্বল্প সময়ে এতোটা গভীরভাবে একে ওপরের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে যাবে তা কি ভেবেছিল?

সে তো ভাবেনি। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন মানুষটার সাথে ঝগড়া করল অথচ এখন সেই মানুষটা তার অর্ধাঙ্গ। গুরুগম্ভীর, রগচটা মানুষটার ভালোবাসা, অনুভূতি, যত্ন সবকিছু ছিল তার দৃষ্টিগোচর। কখনো কারো সামনে তা ব্যক্ত করেনি। এখনো সেই ধারা প্রবাহিত। তবে মাঝে মাঝে ভালোবাসার গভীরতা বুঝিয়ে দিয়েছে। অরিত্রিকার কেন যেন মনে হয়, সারহান ভাই ইচ্ছাকৃত তাকে আশকারা দেয়নি বরং ভয় দেখিয়ে, ধমক দিয়ে গন্ডীর ভেতরে রেখেছেন। হয়তো তিনি জানতেন, আশকারা দিয়ে মাথায় তুললে মাথা থেকে নামানো মুশকিল হয়ে যাবে। এ মুহুর্তে তার একটাই আফসোস। বিয়ের আগে প্রেম করতে পারল না। মাত্রই প্রেম নামক অনুভূতি জেগেছিল মনে। তারপর ঝড় বয়ে গেল জীবনে। চোখের পলকে সপ্তাহখানেকের ভেতর আকদ হয়ে গেল আর প্রেম করার ইচ্ছেটাও লেজ গুটিয়ে পালালো।

“চেয়েছিলাম প্রেম, হয়ে গেল আকদ। আহা! দীর্ঘ সময় প্রেম করার পর বিয়ে করার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেল। সে যাই হোক, যাকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে করতে পেরেছি এটাই অনেক।”
অরিত্রিকা আনমনা বিরবির করে আওড়ালো। সেসব ভাবনায় মত্ত হয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল আয়নার সামনে। নববধূ রুপে একবার নিজেকে পর্যবেক্ষণ করল। হঠাৎ মনে পড়ে কারো কথা। সদ্য বিবাহ করা বররুপী মানুষটা এখনো তার প্রশংসা করেনি ও ঠিকঠাক ভাবে তার দিকে তাকায়নি। একবার দেখাও করতে আসেনি। বিয়ে করে ভুলে গেল নাকি বউকে ভুলে রাজনৈতিক কাজে ডুবে গেল? ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করল কেউ। দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করল। অরিত্রিকা পেছনে তাকাল না। সে জানে ইফা আপু এসেছে। সে ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে বউ ওড়নাটা খুলতে লাগল।

“স্টপ ফাইরুজ! ওটা খোলার দরকার নেই।”
পুরুষালি গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করল অরিত্রিকার। তখনি তার দুহাত থেমে গেল বউ ওড়নার ভাঁজে। অনাকাঙ্ক্ষিত কারো আগমনে থমকে গেল সে। হতচকিত নয়নে পেছনে ফিরে তাকাল। ঠিক তার পেছনের দিকটায় দাঁড়িয়ে আছে সারহান। মুখাবয়বে ফুটে উঠেছে বিমোহ। চক্ষুদ্বয়ে বিরাজ করছে মুগ্ধতা। সে খেয়াল করল মানুষটার পরনে সেই অফ হোয়াইট পাঞ্জাবি। আকদের পরে প্রথমবার দুই নয়ন ভরে দেখল তার নেতাসাহেবকে। এতো সুদর্শন কে হতে বলেছে! তার মনের অবস্থা বেসামাল হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। হৃদপিন্ড দ্বিগুন বেগে লাফাচ্ছে। সে অপ্রস্তুত হয়। দৃষ্টি নত করে মিনমিন করে বলল;

“আপনি এখানে?”
সারহান অরিত্রিকার ভাবমূর্তি নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। মেয়েটা যে হঠাৎ তাকে দেখে অবাক হয়েছে তা ঢেড় বুঝতে পারল। সে শাণিত পদযুগল ফেলে এগিয়ে আসলো। স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“কেউ আমার আসার প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিল। তাকে নারাজ করার ইচ্ছে হলো না আমার। তাই চলে আসলাম দেখা করতে।”
অরিত্রিকা চকিত নয়নে তাকাল দন্ডায়মান মানুষটার দিকে। অবিশ্বাস্য ভঙ্গিমায় নেত্রপল্লব ঝাপটালো। কন্ঠে বিস্ময় ঢেলে বলল;

“আপনি আমার মনের ভাবনা কিভাবে বুঝে ফেলেন বলুন তো।”
অরিত্রিকা ও সারহানের মাঝে দুরত্ব অনেকটা কম। নিভৃতসুধার চমকানো, থমকানো মুখশ্রী সূক্ষ্ম চাহনিতে দেখে ওষ্ঠ কামড়ে হাসল। অরিত্রিকা কৌতূহলী হয়ে অধৈর্যের সহিত পুনরায় বলল;
“কি হলো বলুন?নিশ্চয়ই কেউ আপনাকে বলেছে তাই না?”
“আমাকে কেউ বলেনি।”
“তাহলে?”
“এটাকে বলে অন্তরস্পর্শী বন্ধন।”
“আপনি কি রোমান্টিক উপন্যাস পড়ছেন?”
অরিত্রিকার বোকাবোকা সন্দিগ্ধ কন্ঠস্বর। এহেন উদ্ভট প্রশ্ন শুনে সারহানের ওষ্ঠ আরও প্রসারিত। ভ্রুযুগল নাচিয়ে শুধালো ;
“হঠাৎ এমন প্রশ্ন করার কারণ কি?”
অরিত্রিকা এদিক ওদিক তাকিয়ে ধীরে বলল;

“আগে কখনো ধমক বাদে কথা বলেননি অথচ কয়েকদিন ধরে আপনাকে অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে একটু রোমান্টিক হচ্ছেন আর ভালোবাসা প্রকাশ করতে শিখেছেন। শুনুন, মাঝে মাঝে অনুভূতি প্রকাশ করতে শিখুন তাহলেই তো বোঝা যাবে আপনার ভালোবাসার গভীরতা কতোটুকু।”
“রোমান্টিক হতে বা ভালোবাসা প্রকাশ করতে কোনো রোমান্টিক উপন্যাস পড়তে হয় না। সেসব সঠিক সময় এবং পরিস্থিতি ভেদে প্রকাশিত হয়। মানুষ ভেদে ভালোবাসার ধরণ আলাদা হয়। কেউ ভালোবাসা প্রকাশ করে। কেউ ভালোবাসা অপ্রকাশিত রাখে।”

“তাহলে আপনি বলতে চাইছেন আপনার ভালোবাসা ছিল অপ্রকাশিত? ”
“হ্যা! আমার ভালোবাসা ছিল অপ্রকাশিত। যাকে আমি ভালোবেসে এসেছি সে আমায় অপছন্দ করতো। পরিস্থিতি কিংবা সময় অনুকূলে ছিল না। কিভাবে ইজহার করতাম আমার অনুভূতি!”
“আজকের এই শুভদিনে অতীতের কাহিনী মনে করবেন না। অতীতকে ভুলে এখন আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। মাত্র বিয়ে হলো। তারপর বড় করে রিসেপশন হবে। এরপর সংসার সামলানো, ছানাপোনাকে সামলানো আরও কতো কি বাকি!”
অরিত্রিকা মিটিমিটি হেসে আমোদপ্রিয় হয়ে বলল কথাগুলো। সারহানের ওষ্ঠকোণের হাসি মিলিয়ে গেল। মুখাবয়বে ফুটে উঠল হতভম্ব ভাব। তা বজায় রেখে বলল;
“বিয়ে না হতেই বাচ্চার চিন্তা?”

অরিত্রিকা ক্যাবলা মার্কা হেসে হেলেদুলে বলল;
“দাদীর যুগে উনিশ বছর বয়সে তিন- চারটা ল্যাদা বাচ্চা হয়ে যেত।”
সারহান ভ্রুযুগল গুটিয়ে ভরাট কন্ঠে বলল;
“আগে পড়াশোনা। তারপর বাকী সব।”
অরিত্রিকা একটু জ্বালানোর জন্য হাস্যরত কন্ঠে বলল;
“আমার বাচ্চা অনেক পছন্দ। শুনুন না, আমার কিন্তু এক ছেলে আর এক মেয়ে চাই।”
“এই জন্য চেয়েছিলাম তুই একটু ম্যাচিউর হবি তারপর বিয়ে করব। কিন্তু তোর বাপের জেদের জন্য তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা করতে হলো। বিয়ের কয়েক ঘন্টা না পেরুতেই বাচ্চা কাচ্চার ভাবনা! এটা তোর দ্বারাই সম্ভব ফাইরুজ।”
“আমাদের মাঝে আব্বুকে টেনে আনছেন কেন?”
“কারণ তোর বাপ আমাদের দুজনের মধ্যে হাড্ডি হয়ে বসে আছে।”
“সারহান ভাই!”

অরিত্রিকা মুখ গোমড়া করে বলল। সারহান এতোক্ষণ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ভাই ডাকতেই যেন মেজাজ তিনশত ষাট ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরে গেল। খানিকটা এগিয়ে গমগমে কন্ঠে বলল;
“আমি তোর ভাই হই?”
অরিত্রিকা দুই কদম পিছিয়ে গেল। সে জিভ কাটল। মিনমিন করে বলল;
“স্যরি সারহান ভা… থুক্কু স্যরি অমুকের বাবা।”
সারহানের চোয়াল ঝুলে যাওয়ার যোগাড়। বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল সামনে শাড়ি পড়ে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে।অমুকের বাবা! এটা কেমন সম্বোধন? বিয়ের কয়েকঘন্টা না পেরোতেই না হওয়া বাচ্চার বাবা বানিয়ে দিচ্ছে আশ্চর্য। অরিত্রিকা সারহানের ভাবমূর্তি লক্ষ্য করে হাসল। বেচারা রাজনীতিবিদ! সে হাসি থামালো। খুঁচিয়ে বলল;
“কি হলো? ওমন মুখ করে আছেন কেন? সম্বোধন পছন্দ হয়নি?”

সারহান নড়ে চড়ে উঠল। হতভম্ব ভাব দমিয়ে হঠাৎ ফিচেল হাসল;
“সম্বোধণটা পছন্দ হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে অমুকের বাবা ডাকটা শোনার জন্য প্রসেসটা দ্রুত শুরু করতে হবে।আজকে সময় সুযোগ দুটোই আছে কিন্তু।যদি মাইন্ড না করিস..”
“এই না না। এসব কি বলছেন! আমি তো আপনার সাথে মজা করছিলাম।”
“আমি মোটেও মজা করছি না। আই অ্যাম সিরিয়াস।”
“আমি আপনার সাদা শার্টের কসম কেটে বলছি আপনার সাথে মজা করব না। আমি আগামীকাল থেকে ভালো হয়ে যাব।”
“আর ওসব উদ্ভট নামে ডাকবি?”
“হ্যা.. না না ডাকবো না।”
“গুড। মনে যেন থাকে।”
“আচ্ছা।”

অরিত্রিকা ভয় পাওয়ার নাটক করে কথাটি বলল। সে মোটেও সারহানের ধমকিতে ভয় পায়নি। সে আকদের পর থেকে পণ করেছে বাঘের মতো মানুষটাকে মোটেও ভয় পাবেনা। ভয় পেলেই সর্বনাশ। সে সারহানের দিকে নিরবচিত্তে তাকাল। অতঃপর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। পেছনে দাঁড়ানো গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে দাঁড়ানো মানবটিকে উদ্দেশ্য করে সুমিষ্ট রিনরিনে কন্ঠে শুধালো ;
“এই যে শুনছেন, আমাকে দেখতে কেমন লাগছে?”

কথাটি বলে অরিত্রিকা ওষ্ঠ টিপে হাসল। সরাসরি দৃষ্টি স্থির করল আয়নার দিকে। আয়নার প্রতিবিম্বে দেখা যাচ্ছে সারহানকে। সে অধীর আগ্রহে চাতক পাখির ন্যায় উত্তর শোনার জন্য মুখিয়ে থাকল। মানবটির শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করল সেই অতি পরিচিত মেয়েলী কন্ঠস্বর। এক মুহুর্তেই দম্ভ ভাব চূর্ণিত হলো। একরাশ স্নিগ্ধ অনুভূতি যেন বৃষ্টি হয়ে নামল বক্ষে। এতোক্ষণ অরিত্রিকার সাথে কথা বলেছে নিজের মনকে দমিয়ে রাখতে। প্রতিটি বাক্য উচ্চারণের পূর্বে প্রেয়সীকে মুগ্ধ নয়নে দেখেছে। অবোধ রমণীটি কি সেই চাহনি খেয়াল করেছে হয়তো না? সে এগিয়ে গিয়ে অরিত্রিকার ঠিক পেছনে দাঁড়াল। অরিত্রিকার দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ঘোরালো।

আকস্মিক এহেন কান্ডে চমকে গেল অরিত্রিকা। সে ভয়াতুর ভঙ্গিতে তাকাল শ্যামমানবের মুখের দিকে। অজানা শঙ্কায় থেমে থেমে কাঁপতে লাগল সর্বাঙ্গ। সারহান স্পষ্ট অনুভব করল মেয়েলী শরীরের কাঁপন। সে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করল ‘ভয়ের কিছু নেই, আমি আছি।’ মেয়েটি হয়তো বুঝল চোখের ভাষা। শরীরের কাঁপন কমে গেল। অনেকটা স্বাভাবিকতা দেখা গেল।
সারহান এক পলক মেয়েলী মুখশ্রীর দিকে তাকাল। অতঃপর খানিকটা ঝুকে সরাসরি তপ্ত ওষ্ঠপুট ছুঁইয়ে দিল অরিত্রিকার কপালের মধ্যাংশ। সেই উষ্ণ ছোঁয়া যেন বেসামাল করল দুই বিপরীত মেরুর হৃদয়। পুরুষালী ওষ্ঠের ছোঁয়া বেশীক্ষণ স্থায়ীত্ব পেল না সেথায়। অরিত্রিকা স্তব্ধ হয়ে গেল। স্তম্ভিত নয়ন মেলে নির্বাক ভঙ্গিমায় দেখল মানবটিকে। সারহান অরিত্রিকার বাহুদ্বয় ছেড়ে দিয়ে হাত রাখল মেয়েলী গালে। অতি শান্ত এবং বিমোহন কন্ঠে জবাব দিলো;

“তোকে দেখতে আমার বিবিজানের মতো লাগছে ফাইরুজ।”
অরিত্রিকা কেঁপে উঠল। প্রিয় মানুষটার সান্নিধ্যে আবেগাপ্লুত হয়ে গেল। আচানক এক গাল হেসে বলল;
“নেতাসাহেবের বিবিজানের মতো লাগছে তাই না!”
সারহান নিঃশব্দে হাসল। এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল চঞ্চলা হরিণীর হাস্যরত প্রাণোচ্ছল প্রাণবন্ত মুখশ্রীতে। অরিত্রিকা হাসি থামিয়ে ভ্রুযুগল বাঁকিয়ে প্রশ্নাত্মক কন্ঠে বলল;
“কি হলো নেতাসাহেব? আপনার বিবিজানকে অনেক সুন্দর লাগছে বুঝি?”
সারহান মাথা দুলিয়ে সহসা জবাব দিলো;
“মারাত্নক সুন্দর লাগছে। বিবিজান এ রুপে আমার হৃদয় হরণ করছে।”
“আপনার বিবিজান তো চিত্তহারিণী।”

“সেই জন্য বিবিজানকে নিজের কাছে আটকে রেখেছি যেন আমার হৃদয় চুরি করে না পালাতে পারে।”
“কিন্তু আমি তো আপনার হৃদয় তিনবছর আগে চুরি করে পালিয়েছি।”
দুজনের কথোপকথনের মাঝে দরজা নক করা আওয়াজ ভেসে এলো। অরিত্রিকা দরজার দিকে তাকিয়ে সারহানের কাছ থেকে ছিটকে সরে এলো। সে ভুলে বসেছিল ইফার কথা। দুজন একে ওপরের দিকে তাকাল। তখনি ভেসে এলো;
“অরিত্রিকা দরজা খোল।”

ইফা দরজা নক করছে আর ডাকছে। অরিত্রিকার মুখখানা শুকিয়ে গেল।দরজা খুললে ইফা আপু যদি সারহান আর তাকে একসাথে দেখে তাহলে কি ভাববে? নিশ্চিত ভাববে, দরজা আটকে দুজন রোমান্স করছিল। তারপর এ কথা যদি তার বাবার কানে যায় তাহলে মান সম্মান সব চলে যাবে। সেই সঙ্গে তুলকালাম বেঁধে যাওয়ার শঙ্কা আছে। সে করুণ চাহনিতে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে আবার সারহানের দিকে তাকাল। চাপা স্বরে বলল;
“এখন কি করব?”

সারহান নিরুদ্বেগ। দুহাত বুকে গুঁজে নির্লিপ্ত চাহনিতে অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিত্রিকা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল;
“আপনি চুপ করে আছেন কেন? ধ্যাৎ আপনি আমায় কেস খাওয়াবেন। এক কাজ করুন আপনি বরং ওয়াশরুমে লুকিয়ে যান। না না, আপনি খাটের নিচে লুকিয়ে যান।”
সারহান ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়;
“আমি কি তোর প্রেমিক? সবাইকে লুকিয়ে রাতের বেলা তোর সাথে দেখা করতে এসেছি? এতো নাটক না করে গিয়ে দরজা খুলে দে।”
“ইফা আপু আমাদের দুজনকে একসাথে দেখলে কি ভাববে? ”
“ভাবতে দে।”

“আমার মান সম্মান চলে যাবে। প্লিজ একটা আইডিয়া দিন কি বলে আপু কে রুমের বাহির থেকে সরানো যায়।”
“বল, শাড়ি চেঞ্জ করছিস। দশ মিনিট পরে যেন আসে।”
সারহান ভরাট কন্ঠে বলল। অরিত্রিকার আইডিয়াটা ভালো লাগল। সে লাফিয়ে উঠল। দরজার ওপাশে থাকা ইফাকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে বলল;
“ আপু, আমি শাড়ি চেঞ্জ করছি। তুমি দশ মিনিট পরে আসো।”
ইফার জবাব আসলো ;
“আচ্ছা দ্রুত চেঞ্জ করে নে। আমি বাহিরে ওয়েট করছি।”
“আপু আমার দেরি হবে। তুমি বরং ইশরার কাছে যাও। আমি চেঞ্জ করে তোমাকে ডেকে আনবো।”
“আচ্ছা যাচ্ছি।”

দরজার ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। অরিত্রিকা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। হঠাৎ সারহান বলে উঠল;
“চল।”
অরিত্রিকা না বুঝে অবুঝের ন্যায় বলল;
“কোথায়?”
“তোর ইচ্ছে পূরণ করতে।”
“আমার ইচ্ছে? কোথায় নিয়ে যাবেন আগে বলুন।”
“তোর মন ভালো হয়ে যাবে এমন জায়গায়।”
“পদ্মার পাড়ে? এতো রাতে আপনি আমায় নিয়ে যাবেন সেখানে?”
অরিত্রিকা বিস্মায়াবিষ্ট কন্ঠে বলল। সারহান নিরুত্তাপ থেকে মাথা নাড়ালো। অরিত্রিকা শঙ্কিত হয়ে বলল;
“যদি বাড়ির কেউ জেনে যায়? আব্বু যদি জানে তাহলে খবর করে দিবে।”
সারহানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলো। রুঢ় কন্ঠে বলল ;
“এখন তুই আমার বউ। তোর জীবনে চাচার থেকে আমার অধিকার বেশী।”
বউ সম্বোধন শুনে অরিত্রিকার শরীর শিরশির করে উঠল। শব্দটায় কেমন এক অদৃশ্য অধিকারবোধ ঢালা। সেই অধিকার যেন তাকে প্রশান্তিতে পতিত করল। দীর্ঘ শ্বাস টেনে পরিহিত গহনাগাঁটি দেখিয়ে বলল;

“গহনা পড়ে যাব?”
সারহান শান্ত কন্ঠে বলল;
“এগুলো খুলে রেখে যা।”
“আচ্ছা।”
কথাটা বলে এগিয়ে যেতে গিয়েও পুনরায় ফিরে এসে সারহানের দিকে দুহাত এগিয়ে দিয়ে ভুবন ভুলানো হেসে কোমল কন্ঠে আবদার করে বসল ;
“আপনি খুলে দিন।”
সারহান হাসল। কেন যেন সদ্য বিয়ে করা বউয়ের আবদার ফেলতে পারল না। সে অরিত্রিকার হাতটা ধরে বিছানায় বসালো। অতঃপর হাতের হাত, কান, গলার সব গহনা খুলে দিলো। অরিত্রিকা অবাক হয়ে দেখল শুধু। ভেবেছিল আবদার টুকু নাকচ করবে। কিন্তু তা না করে আবদার পূরণ করল। অরিত্রিকাকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুড়ি বাজিয়ে বলল;

“গহনাগুলো আলমারিতে রাখ।”
অরিত্রিকা লজ্জা পেল। লজ্জাভাব আড়াল করতে বলল;
“আপনি গাড়ি বের করুন আমি আসছি।”
“আমরা গাড়িতে যাবোনা। ”
“তাহলে কিসে যাবেন?”
“বাইকে।”
“আপনি বাইকে যাবেন!”
অরিত্রিকা হতবাক হয়ে বলে উঠল। সারহান অরিত্রিকার গোল আলুর মতো গালটা টেনে দিয়ে বলল;
“হ্যা।”

“আপু, অরিত্রিকা আমাদের দুজনকে কোন মুসিবতে ফেলে গেল?”
ইফা অরিত্রিকা বিছানায় বসে আছে। চোখে মুখে ফুটে উঠেছে চিন্তিত ভাব। একগালে হাত দিয়ে আধঘন্টা ধরে কিছু একটা ভেবে চলেছে। ইশরা ছটফটে ভঙ্গিমায় পায়চারী করছে আর একটু পরপর ইফার দিকে তাকাচ্ছে। দুজন আজ ফ্যাসাদে পড়েছে। ইফা ইশরার রুমে গিয়ে গল্প করছিল। সেসময় অরিত্রিকা কল দিয়ে জানায়— সে আর সারহান বাইকে করে ঘুরতে বের হয়েছে। যদি তার সাথে কেউ দেখা করতে চায় তাহলে যেন কোনোভাবে ম্যানেজ করে নেয়। ব্যস এটুকু বলে কল কেটেছিল। সেই কল পাওয়ার পর থেকে দুজনের অবস্থা বেহাল। ঘন্টা খানেক ধরে রুম বন্ধ করে বসে আছে। একের পর এক বাড়ির সদস্য এসে অরিত্রিকাকে আর তাদের ডাকছে খাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা দরজা না খুলে নানা বাহানা দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
ইফা দৃষ্টি স্থির করে দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে। সময় দশটা বেজে দশ মিনিট। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। অতঃপর জবাব দেয়;

“অরিত্রি আমাদের মুসিবতে ফাঁসিয়ে গিয়েছে। একবার যদি বলতো বাহিরে ঘোরার প্লান আছে। সেটা না করে হুট করে উধাও হয়ে গেল আর আমরা ওর জন্য না খেয়ে ম*রছি।”
ইশরাও তাল মিলিয়ে বলল;
“আমারও ক্ষিধে লেগেছে। আমি কি দুজনের জন্য খাবার নিয়ে আসবো?”
ইফা কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলল;
“তোমার যাওয়ার দরকার নেই। সবাই ঘুমিয়ে নিক তারপর দুজনে একসাথে খেয়ে আসবো নিচে গিয়ে।”
“আচ্ছা।”
ইশরা ও ইফা দুজনে এক ঝুলি গল্প নিয়ে বসল। দুজনের দেখা হয়েছে প্রায় চার বছর পর। আগে থেকে দুজনের মধ্যে ভালো সখ্যতা রয়েছে। তাদের কথোপকথনের মাঝে দরজায় নক করল কেউ। এরপরে ভেসে আসলো পুরুষালী কন্ঠস্বর ;
“অরিত্রিকা দরজা খোলো আম্মা।”

আজমল সাহেব এসেছেন মেয়ের সাথে দেখা করতে। ইশরা ও ইফা দুজনে গল্প থামিয়ে থম মেরে রইল। শুকনো ঢোক গিলে শঙ্কা নিয়ে একে অপরের দিকে চাইল। কোনো এক প্রবাদে আছে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। প্রচলিত প্রবাদ বাক্যটি তাদের ক্ষেত্রে মিলে গেল। ইফার মাথায় বুদ্ধি আসলো। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা না খুলে জবাব দিলো;
“আংকেল, অরিত্রি ঘুমিয়ে গেছে।”
ইশরার মুখ জ্বলজ্বল করে উঠল। আতংকিত ভাব মিলিয়ে গিয়ে হাসি ফুটলো। ইফা আপুকে বাহবা দিতে ইচ্ছে করল। কিন্তু ওপরপাশের জবাব শুনে হাসি হাওয়া হয়ে গেল;
“দরজা খোলো।”
“ইফা আপু এখন কি হবে?”
“আইডিয়া! তুমি কম্বল মুড়িয়ে চোখ মুখ ঢেকে অরিত্রিকার জায়গায় চুপ করে শুয়ে থাকো। আমি বাকিটা সামলে নিচ্ছি।”

“যদি ধরা পড়ে যাই।”
“ধরা পড়ব না। আমি যা বলেছি তাই করো।”
ইশরা ইফার কথা মতো গরমের ভেতরেও কম্বল জড়িয়ে বিছানায় গুটিশুটি হয়ে জড়বস্তুর মতো শুয়ে রইল। ইফা বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আজমল সাহেব ভেতরে এসে বললেন;
“তোমরা তিনজন নাকি না খেয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছো?”
ইফা থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল;
“আমাদের তিনজনের ক্ষুধা লাগেনি।”

আজমল সাহেব কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে অবয়বের দিকে তাকিয়ে ভরাট কন্ঠে বললেন;
“অরিত্রিকা কখন ঘুমিয়েছে?”
“এই তো আধা ঘণ্টা আগে।”
“এই গরমের ভেতর কম্বল গায়ে দিয়ে আছে!”
“রাতে গোসল করেছে। তাই হয়তো ঠান্ডা লাগছে।”
আজমল সাহেব আশে পাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন;
“ইশরা কোথায়?”
ইফা হাসার ভাণ করে বলল;
“ওয়াশরুমে গিয়েছে।”
আজমল সাহেবের কেন যেন খটকা লাগল। তিনি তা প্রকাশ না করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। ইফা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। সে দ্রুত দরজা আটকে দিতে গেল। সেসময়ই প্রবেশ করল সাদাত। সাদাতকে হঠাৎ আসতে দেখে সে চমকে গেল।চোরা কন্ঠে বলল;

“তুমি এখানে কি করছো?”
সাদাত দুই প্লেট খাবার স্টাডি টেবিলে রাখালো। তারপর ইফার দিকে তাকিয়ে বলল;
“খাবার দিতে এসেছিলাম।”
“আমাদের ক্ষুধা নেই।”
“আমার সামনে নাটক না করে খেয়ে নাও।”
ইফা হতবাক হয়ে গেল। সাদাত কিছু না বলে বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে কম্বল টান দিয়ে দিয়ে গমগমে কন্ঠ বলল;
“চাচা চলে গেছে এবার কম্বলের ভেতর থেকে বের হো। নয়তো দম আটকে ম*রে যাবি।”
ইশরা তাড়াতাড়ি করে কম্বলের ভেতর থেকে বের হয়ে বসে হাঁপাতে লাগল। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। এই কম্বলের ভেতর আর কিছুক্ষণ থাকলে অক্কা পেত। সে কাশতে লাগল। সাদাত বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এগিয়ে ধরল ইশরার দিকে। ইশরা সাদাতের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে এক গ্লাস পানি পান করল। এতে খানিকটা স্বস্তি পেল। সাদাত গ্লাসটা ইশরার হাত থেকে নিয়ে টেবিলে রেখে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়াল।

“থ্যাংকস ! তুই খাবার নিয়ে না এলে আমাদের কি যে হতো?”
ইশরা ওড়না দিয়ে মুখ মুছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। সাদাতের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। ইফা এগিয়ে আসলো। সন্দিহান কন্ঠে বলল;
“তুমি নিশ্চয়ই আগে থেকে জানতে তোমার ভাইয়ের প্লান। অ্যাম আই রাইট সাদাত?”
সাদাত ছোট্ট করে প্রতিত্তোর করল ;
“রাইট।তোমরা খেয়ে নাও।আমি আসছি।”
ইশরার সাদাতের ভাবমূর্তি ভালো লাগল না। কেমন যেন গাম্ভীর্য ভাব চোখে মুখে লেপ্টে আছে। হঠাৎ এ ছেলের কি হলো? দুপুরে তো দিব্য হাসি- খুশি ছিল। সবার সাথে কথা বলছিল, ছবি তুলছিল। সাদাত রুম থেকে বেরিয়ে যাবে এসময় ইশরার ডাক শুনে থেমে গেল।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৬৩

“সাদাত তোর কি হয়েছে? মন খারাপ?”
ইশরা উদ্বিগ্ন ভাব নিয়ে বলল। সাদাত শুধু ছোট্ট করে প্রতিত্তোর করল;
“আমি ঠিক আছি।”
সাদাত প্রস্থান করল। ইশরার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সাদাতের উপেক্ষা তার সহ্য হলো না।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৬৫