প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭৫ (২)

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭৫ (২)
আদ্রিতা নিশি

“আপনি কেন আমার পায়ে হাত দিয়ে অ্যান্টিসেপটিক লাগাচ্ছেন? দয়া করে দিন, আমি নিজেই লাগিয়ে নিচ্ছি। আপনি আমার হাসবেন্ড। আপনি পায়ে হাত দিলে আমার পাপ হবে।”
সন্ধ্যা পেরিয়ে সময়টা এখন সাড়ে সাতটা। আধা ঘণ্টা আগে সবাই ফিরেছে মেলা থেকে। সবাই একটু আনন্দঘন সময় কাটাতে এসেছিল। হঠাৎ এক আগন্তুকের আগমনে সব এলোমেলো হয়ে গেল। অরিত্রিকা অসাবধানতা বশত পড়ে যাওয়ার ফলে পা মচকে গেছে। মচকে যাওয়া অংশ কিছুটা ফুলে উঠেছে। সে সারহানের বরাদ্দকৃত রুমের বেলকনিতে কেদারায় অতি নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় বসে আছে। কিছুটা উদ্বিগ্ন, অস্থিরতায় পরিপূর্ণ মন। মুখশ্রীতে ভীতিগ্রস্ততার ছাপ। সারহান রুম থেকে অ্যান্টিসেপটিক এনে হাঁটু গেড়ে বসল। অরিত্রিকার মচকে যাওয়া পা টা তার হাঁটুতে রেখে ব্যাথানাশক মলম আঙুলের ডগায় নিয়ে আলতো ভাবে লাগাতে লাগল। অরিত্রিকা পায়ে শীতল কিছুর স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকাল। সারহান ভাইকে পায়ে হাত দিতে দেখে পা টা সরিয়ে নেওয়ার প্রয়াস চালিয়ে ভীত দিশাহীন কন্ঠে বলল।

বেলকনির একপাশের দেয়ালে লাগানো হলদেটে আলোর বাল্ব। আলো তেমন স্বচ্ছ নয়। তবুও একে অপরকে সূক্ষ্ম ভাবে অবলোকন করা যাচ্ছে। সারহানের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে মেয়েলী কন্ঠস্বর। তবুও সে অনড় ভঙ্গিমায় অরিত্রিকার পায়ে ব্যথানাশক মলম লাগাতে তৎপর। কিছুটা সময় নিয়ে অতি যত্ম সহকারে অর্ধাঙ্গিনীর সেবা করল। অতঃপর অরিত্রিকার পা সাবধানে মেঝেতে নামিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল ;
“তোর যত্ন নেওয়াটা আমার দায়িত্ব আর স্ত্রীর যত্ন নেওয়া পাপের মধ্যে পড়ে না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাটি শেষ করে সারহান পাশে রাখা চেয়ারটিতে বসল। দুজন পাশাপাশি, তেমন দুরত্ব নেই। অরিত্রিকা বিমুগ্ধ নয়নে অনিমেষ তাকিয়ে রইল। তার বক্ষে হঠাৎ উচাটন খেলে গেল। নিজেকে অপরাধী মনে হলো। অন্তঃকোণ বিষাদে, তিক্ততায় ভরে গেল। সারহান ভাই রাগী, গম্ভীর, রগচটা হলেও মানুষটা অনেক ভালো। একজন নিখাদ মানুষ। এই যে তাকে তিনবছর দূরে থেকে বিপদ আপদ থেকে আগলে রেখেছেন, গোপনে ভালোবেসেছেন। এখন আগলে রাখা, ভালোবাসার গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে মানুষটিকে তার অতীত থেকে দূরে রাখা কি ঠিক হচ্ছে? সেই জঘন্য অতীত জানানোর পর যদি তার নেতাসাহেব ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দেয় তখন কি নিয়ে বাঁচবে? একবার তো বাবা – মায়ের মুখ দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে কোনো রকম বেঁচে ছিল।অরিত্রিকার হৃদয়খানা শঙ্কিত হয়। পুনরায় ভগ্নদশা, হতাশায় নিমজ্জিত হয়। সে প্রিয় পুরুষটির পানে তাকাতে পারে না। দ্বিধায় জড়িয়ে যায় পুরো সত্তা। মলিন ফিকে চেহারাটা আড়াল করার বৃথা প্রয়াস চালালো । খানিকটা সোজা হয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে মেঘাচ্ছন্ন অম্বরের পানে তাকাল।

মেঘমালার আচ্ছাদনে নিরালম্বিত অর্ধচন্দ্রমা। অম্বর সুবর্ণাভ নয়! বরং ধূসরবর্ণ – শুভ্র মেঘপুঞ্জে পরিব্যাপ্ত। মৃদু মন্দ হাওয়া মেঘপুঞ্জককে তুলার মত এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে বিহঙ্গসম উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, অর্ধচন্দ্রমা স্ব-ইচ্ছায় মুখ গম্ভীর করে আছে। প্রকৃতিতে প্রবাহিত শীতল দমর্দম হাওয়া। কাছে দূরের গাছপালা থেমে থেমে দুলছে।দূরবর্তী অম্বর ভাসমান মেঘগর্জনের ধ্বনি শ্রবণযোগ্য। প্রকৃতি বৃষ্টির পূর্বাভাস প্রদান করছে। সারহানের ভাবমূর্তি অতি শান্ত। মানুষটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই মনের ভেতরের অবস্থা। সে নির্বাক, নির্লিপ্ত চাহনিতে নিভৃতসুধাকে দেখছে। মানুষটা আসলে কি দেখছে বা ভাবছে তা অপর প্রান্তের ব্যক্তি অক্ষম হবে।এভাবে কাটল কিছু সময়। সারহান নিস্তব্ধতা, নীরবতা ভেঙে নিজে থেকে বলল;

“ইরফানের সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছে। ওরা এখন হসপিটালে আছে। রাহার শরীর দুর্বল তাই স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। দুই – তিন ঘন্টার মধ্যে চলে আসবে।”
অরিত্রিকার ধ্যান ভেঙে যায়। দ্রুত সে দৃষ্টি ফেরায় সারহানের দিকে। সন্ধ্যার ঘটনার পর রাহার কথা যেন ভুলেই গিয়েছিল। মেলা থেকে ফেরার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে রাহা। গ্রামে ভালো চিকিৎসক না থাকায় শহরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সারহান রাহাকে নিজেই নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু অরিত্রিকার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা ভেবে আর পারে না। শেষমেশ ইরফান রাহাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। অরিত্রিকা উদ্বিগ্ন মলিন কন্ঠে বলল;

“শরীর দুর্বলের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েছে? আমার তেমনটা মনে হচ্ছে না।”
সারহান কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলল;
“মানসিক টেনশন ও খাওয়া দাওয়ার অনিয়মের জন্য অসুস্থ হয়েছে। ডাক্তার বলেছে চিন্তার কোনো কারণ নেই। স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে আর ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।”
“আমার জীবনে আনন্দ বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না। এই যে দেখুন, আমি এসে পা মচকে নিয়ে বসে আছি। রাহা অসুস্থ।”
“আমাদের জীবন আনন্দ, কষ্ট দিয়ে পরিপূর্ণ। সেসব মেনে নিয়ে চলতে হয়।”
“আপনি কিন্তু বেশ ভালো কথা বলতে পারেন।”
অরিত্রিকা ম্লান হেসে বলল। সারহান প্রতিক্রিয়া দেখাল না। পূর্বের ন্যায় চেয়ারে হেলান দিয়ে পলকহীন চাহনিতে তাকিয়ে রইল মেয়েলী মুখশ্রীতে। অরিত্রিকার কেন যেন সহ্য হলো না মানুষটির নিশ্চুপ, নির্লিপ্ত ভঙ্গিমা। সে নড়ে চড়ে উঠে কিছু বলার কথা ভাবল। অতঃপর বিরস কন্ঠে বলল ;

“আপনি কিভাবে শান্ত আছেন সারহান ভাই? আপনি তো নিজ চোখে ওই অচেনা ব্যক্তিটিকে দেখেছিলেন — যার ভয়ে আমার এমন অবস্থা। তবুও কেন ওই শয়তানকে না ধরে চুপ করে আছেন? আচ্ছা, আপনি কি চিনেন ওই ব্যক্তিকে?”
সারহান নীরব রইল। আনমনা ভাবনায় মত্ত হলো। সে কি আদৌও চিনে অচেনা ব্যক্তিটিকে? হ্যা, চিনে। পুরনো বন্ধুকে কেউ ভুলতে পারে? মাস্ক পরে, ছদ্মবেশ নিয়ে ঘুরলে কি মানুষকে চেনা যায়? অব্যশই চেনা যায়। এই তো আজ দূর থেকে এক দেখায় চিনে ফেলল। সে অগোচরে বিষাদগ্রস্ত হাসল। তিক্ততায় জড়িয়ে গেল বক্ষ। মানুষ আসলেই স্বার্থপর, বেইমান। যাদের বিশ্বাস করা হয় তারা পিঠ পিছে ছু*ড়ি ঢুকিয়ে দেয়।

এই প্রথমবার সারহানের মনে হলো অরিত্রিকার আতংক, ভয়ের কারণ সে নিজে। মনে মনে নিজেকে বহুবার দোষারোপ করল। নিজের কিছু ভুল এবং নির্বুদ্ধিতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালো। যে রাজনীতিকে ধ্যান – জ্ঞানে ধারণ করেছিল তা একপ্রকার জঘন্য মনে হলো।র*ক্তের সম্পর্ক ফিকে মনে হলো।যেদিন তার চাচার গু*লি লেগেছিল সেদিন আরও একটা ঘটনা ঘটেছিল সারহানকে ভেঙেচুরে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য। চক্রান্তটা ছিল তীক্ষ্ণ এবং বিচক্ষণ মস্তিষ্কের। আকদের আগের রাতে ছোট্ট একটা ইনফরমেশন পেয়েছিল।

কেউ একজন নয়ন তালুকদারের সাথে মিলে তাকে মা*রার প্ল্যান করেছিল এবং অরিত্রিকাকে কোনো ট্র্যাপে ফেলেছিল বা চেষ্টা করেছিল। ট্র্যাপ কি দূরে সারানো ছিল নাকি অন্য কিছু ঘটেছিল তা এখনো ধোঁয়াশা। তবে এখন আর বেশী দেরী নেই সত্য এবং অতীত উন্মোচন করার। তবে সে পূর্বে বুঝতে পেরেছিল অরিত্রিকার সাথে ভালো কিছু ঘটেনি। যা ঘটেছে তা অত্যন্ত বাজে। তাই মেয়েটা ভয় পায়, দুশ্চিন্তা করে। সারহান সবকিছু নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় পরখ করেছে। সবার অগোচরে আসল কালপ্রিটকে ধরার চেষ্টা করছে। অবশেষে ধরতেও পেরেছে। কিন্তু সে স্বাভাবিক থাকছে। এটা অস্বাভাবিক বটে। বিশ্বাসঘাতকদের কেন পুলিশে দিচ্ছে না? তবে কি পুনরায় পরিবারের সবার বিশ্বাস, সম্পর্ক ভাঙার ভয় পাচ্ছে?

অরিত্রিকা অপেক্ষা করে জবাব পেল না। সে হতাশা পূর্ন চাহনিতে পুনরায় মেঘের আড়ালে লুকানো অর্ধচন্দ্রের দিকে তাকাল। ঝিমিয়ে ওঠা কন্ঠ নিয়ে হঠাৎ বলল;
“দেখছেন তো সারহান ভাই, আকাশে চাঁদ উঠেছে। এতটা নিখুঁত মনে হলেও জানেন কি ঐ চাঁদেরও নিজের কলঙ্ক আছে!”

সারহান মেয়েলী কন্ঠস্বর শুনে সরাসরি আকাশের পানে তাকায়। চাঁদের কলঙ্ক থাকলেও কতোটা নিখুঁত। এক পলক দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়? তবে এহেন কথাটা স্বাভাবিক মনে হলো না। তবুও গম্ভীর স্বর তুলে প্রতিত্তোর করল;
“হা, জানি। কিন্তু তবুও তো সবচেয়ে বেশি নজর যায় সেই চাঁদের দিকেই!”
“যদি কখনো জানতে পারেন আমারো চাঁদের ন্যায় কলঙ্ক আছে তখন কি করবেন?”
“আমার ভালোবাসা দিয়ে সেই কলঙ্কের দাগ মুছে দেবো।”

সারহান সহজ সরল কন্ঠে স্বীকারোক্তি টানলো। কন্ঠটা কি একটু কাঁপল! অদ্ভুত লাগল। উহু, একদম শক্ত, গম্ভীর কন্ঠস্বর। অরিত্রিকা বিস্ময়াভিভূত চাহনিতে তাকাল শ্যামমানবের মুখ পানে। সে স্তম্ভিত, চমকিত এবং শিহরিত। মন – মস্তিষ্ক হঠাৎ দ্বিধায় স্তব্ধ হলো। শরীরটা একটু টললো। এক ফোটা নোনা জল গাল বেয়ে পড়ল। এটা পরম সুখের অশ্রু।তার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। সে ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করছে কল্পপুরুষের ভালোবাসার প্রখরতা, দৃঢ়তা এবং গভীরতা। মানুষটা নীরবে নিভৃতে এতোটা ভালোবাসে? অন্য কোনো পুরুষ হলে হয়তো তার বলা কথাটা নিয়ে নানা প্রশ্নের বাণ ছুড়তো। কিন্তু সারহান ভাই এমন করেনি। তবে কি তিনি জেনে – বুঝে ইচ্ছাকৃত চুপ করে আছেন?
“আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি ইচ্ছে করেই কিছু একটা আপনাকে জানাচ্ছি না। তবুও আপনি এত শান্ত!একবারও জানতে চাইলেন না, আমি কী লুকোচ্ছি আর কেন লুকোচ্ছি!”
অরিত্রিকা কাতরতাপূর্ণ কন্ঠে বলে উঠল। সারহানের মুখাবয়ব অস্বাভাবিক শক্ত হয়ে গেল। কাঠিন্যতা এঁটে বলল;

“কারণ আমি জানতে আগ্রহী নই।”
অরিত্রিকার মুখখানা পাংশুটে বর্ণ ধারণ করল। কেমন জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল;
“আমি আপনাকে ধোঁয়াশায় রাখতে চাই না আর। চুপচাপ থেকে ধোঁকা দিতে চাই না।”
সারহান হাত বাড়িয়ে অরিত্রিকার হাতটা মুঠোবন্দি করল। মেয়েলী হাতের রেশমী চুড়িগুলো ঝনঝন করে বাজলো। সেই ঝংকার আশপাশ প্রতিধ্বনিত করল। মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে তাকায় মুঠোবন্দি হাতের দিকে। মানুষটা কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না। সে পুনরায় তাকাল সারহানের দিকে। সারহান হঠাৎ নিঃশব্দে হাসল ;
“তুই আমাকে ধোঁয়াশা রাখিসনি। আমি নিজেকে ইচ্ছাকৃত ধোঁয়াশায় রাখছি। মানুষ বড্ড বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ফাইরুজ। যাদের আপন ভাবি তারা পিঠ পিছে ছু*ড়ি ঢুকিয়ে দেয়। জানিস, সহ্য হচ্ছে না আমার থেকে তোকে কেড়ে নেওয়ার চক্রান্তকারী চৌধুরী বাড়ির কেউ।”

অরিত্রিকা স্তব্ধ হয়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারল না। সারহান পূর্বের ন্যায় বলে উঠল;
“বন্ধুত্বের সম্পর্ক, আত্নীয়তার সম্পর্ক, র*ক্তের সম্পর্ককে আমি আপন ভাবি। কিন্তু ওরা আমায় আপন ভাবে না। স্বার্থ হাসিলের সময় আসলে ওদের আসল রুপ দেখিয়ে দেয়।”
“সারহান… ভাই কার কথা বলছেন আপনি?”
“আছে একজন।”

“আকাশের অবস্থা ভালো না। হয়তো বৃষ্টি হবে। ভাই কখন আসবে রাহাকে নিয়ে? কল করছি রিসিভও করছে না। ধ্যাত ভালোলাগে না।”
ইশরা রুমের ভেতর অধৈর্য হয়ে পায়চারি করছে। অনবরত কল করে যাচ্ছে ইরফানকে কিন্তু ওপর পাশ থেকে কল রিসিভ করছে না। সে ভীষণ চিন্তিত। একদিকে অরিত্রিকার ওমন অবস্থা। অপরদিকে রাহা অসুস্থ। সব মিলিয়ে মনটা খারাপ। সাদাত তার বরাদ্দকৃত রুমের বিছানায় বসে আরামসে ফ্রি – ফায়ার গেম খেলছে। একটু পর পর আড় চোখে চিন্তাগ্রস্ত রমণীর পানে তাকাচ্ছে। সে বালিশটা মাথার পেছনে দিয়ে ভালোভাবে বসে। গেম খেলতে খেলতে স্বভাবসিদ্ধ কন্ঠে বলে;

“ইরফান ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিল আমার। এক – দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে আসবে।”
ইশরা একটু শান্ত হয়। কয়েক পা এগিয়ে এসে বিছানায় বাবুর ন্যায় বসে। অশান্ত কন্ঠে বলে;
“সাদাত, অরিত্রিকাকে কে ভয় দেখিয়েছে বলতো?”
সাদাত কিছুক্ষণ মৌন থেকে জবাব দিলো ;
“বুঝতে পারছি না। একবার লোকটাকে ধরতে পারলে মে*রে পটল ভর্তা বানিয়ে সবকিছু জেনে নিতে পারতাম।”
“আমার মনে হয় সারহান ভাইকে যে লোক ভার্সিটিতে মা*রা চেষ্টা করেছিল সেই অসভ্যটা এখানে পিছু করে এসেছে।”

“হতে পারে।”
“তুই এতো শান্ত হয়ে কীভাবে আছিস? আমার তো ভয় করছে।”
ইশরা ভয়ার্ত ভঙ্গিতে বলল। সাদাত নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল;
“শান্ত না থেকে কি মেয়েদের মতো ভয় পাবো?”
ইশরা গমগমে কন্ঠে বলল;
“তুই ঝগড়া করার জন্য সবসময় রেডি থাকিস তাই না?”
“তোর সাথে ঝগড়া না করলে পেটের ভাত হজম হয় না। আর শোন, ঝগড়া করলে ভালোবাসা বাড়ে। ”
“এ্যাহ্! বাহ ভালোই তো অভিজ্ঞতা আছে। আর কি কি করলে ভালোবাসা বাড়ে?”
“আরো অনেককিছু করলে ভালোবাসা বাড়ে। তবে সেসব বলতে চাই না।”
“কেন বলবি না? আমি শুনতে চাই।”
ইশরা কপাল কুঁচকে কৌতূহলী ভাব নিয়ে বলল। সাদাত অদ্ভুত চাহনিতে তাকাল ইশরার দিকে। প্রগাঢ়, শান্ত চাহনি। কিছুক্ষণ মৌন থেকে ওষ্ঠ কামড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল;

“তোর শোনার বয়স হয়নি এখনো।”
ইশরা কটমট করে তাকাল। গমগমে কন্ঠে বলল;
“বয়স হয়নি তাতে কি? আমি শুনতে চাই।”
“বলবো বিয়ের পর।”
“এখনি বিয়ের কথা ভাবছিস? কোনো গ্যারেন্টি আছে তোর সাথে আমার বিয়ে হবে?”
“তাহলে কি করা যায়? চল আমরা লুকিয়ে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করি। হারাম রিলশনে থাকতে ভালো লাগছে না।”

“কত্তো শখ। এক লাফে তাল গাছে চড়ার ধান্দা? আগে তুই পড়াশোনা করবি। প্রতিষ্ঠিত হবি তারপর বিয়ে।”
ইশরা মুখ বাঁকিয়ে বলে। সাদাত নিঃশব্দে হাসল। একহাতে কপালের মধ্যাংশ বরাবর এলোমেলো পড়ে থাকা চুল ঠেলে স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“ততদিন অপেক্ষা করবি নাকি ফুপি, ইরফান ভাইয়ের পছন্দে হুট করে বিয়ে করে নিবি?”
ইশরার মুখশ্রী সমুদ্রের ন্যায় শান্ত দেখাল। মৃদু হেসে বলল;
“তোর জন্য অপেক্ষা করব।”
সাদাত বিমুগ্ধ নয়নে তাকাল সুশ্রী মুখপানে। অভ্যন্তরীণ সত্তাটায় এক পশলা প্রেমময় বৃষ্টি পতিত হলো। ভালোলাগায় সিক্ত হলো সর্বাঙ্গ। ইশরা সেই চাহনি দেখে একটু লজ্জা পেল। তা আড়াল করে বলল;

“অরিত্রিকার সাথে দেখা করে আসি।”
সাদাত তখনি বিরোধিতা করে বলল;
“যাওয়ার দরকার নেই।”
“কেন?”
“দুজনের সুন্দর মুহুর্তের মধ্যে গিয়ে কাবাবের হাড্ডি না হয়ে আমার কাছে বসে থাক।”

অর্ধচন্দ্র মেঘমালায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। সমগ্র অম্বরমণ্ডল গম্ভীর মেঘে পরিপূর্ণ। প্রকৃতির দমকা হাওয়া পরিবেশে একপ্রকার শৈত্য ও স্নিগ্ধতা বিস্তার করেছে। বিরাম-বিরতিতে ধীরে ধীরে বৃষ্টি পতিত হচ্ছে; সেই ঝিরিঝিরি শব্দ নৈঃশব্দ্যের ছন্দ সৃষ্টি হয়েছে। দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির সম্মিলিত তাণ্ডবে শান্ত পরিবেশটি ক্রমে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। দূর দিগন্ত হতে ধাবিত হয়ে আসছে ঝঞ্ঝাবাতের গম্ভীর গর্জন।তা সমগ্র পরিবেশকে করে তুলছে চঞ্চল, অস্থির। রাতের গম্ভীরতা ক্রমশঃ সঘনতর হচ্ছে। বৃষ্টিপাত প্রাবল্যও লঘু হবার পরিবর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যস্ত গ্রাম নিঃশব্দ; কেবল প্রকৃতি আপন রুদ্ররূপে উদ্বেল। খোলা বেলকনির প্রান্তদেশে নীরবসত্ত্বায় আবিষ্ট কপোত ও কপোতী হাওয়ার স্পর্শে স্তব্ধ নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় বসে আছে।

মানব মানবী বাহিরের তাণ্ডবলীলায় নিমগ্ন নয়। তারা অন্তরজগতে অজ্ঞাত সমীকরণের সন্ধানে প্রবৃত্ত। দুটি অশান্ত সত্তা বাণীবিহীনভাবে আলোচনায় লিপ্ত।হঠাৎ প্রবল দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টির ধারা ছুটে এসে কপোত-কপোতীর শরীরে স্পর্শ করল। এমন ভাবে দুই- তিনবার ছুঁয়ে গেল শীতল বৃষ্টি এবং হাওয়া। অর্ধভেজা শরীর বসে থাকতে পারল না। চমক ভাঙল, চোখে চোখ পড়ল সংবেদনের স্রোত উন্মোচিত হলো। মুহুর্তে দুজনের সম্বিত ফিরল।
“সারহান ভাই ভেতরে চলুন! বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি।”

পরিশ্রুত কোমল কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করামাত্র সারহান চমকপ্রদ দৃষ্টি স্থির করল অরিত্রিকার পানে। নীলাভ-আলোকিত তীক্ষ্ণ চক্ষুযুগল নিরবধি বিঁধতে লাগল বৃষ্টিসিক্ত নারীদেহে।অর্ধভেজা প্রত্যঙ্গ অনুচ্চারিত ব্যাকুলতা প্রকাশ করছে।হলদে আলোর পরিপাতে মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভঙ্গে মুক্তারদানা সদৃশ বৃষ্টি কণিকা জ্বলজ্বল করছে। সেই শীতল, সংযত চাহনি অনুসরণ করল লজ্জায় ক্লিষ্ট রমণীর অবধি। জলসিক্ত অঙ্গজ, শরীর-লগ্না জামদানি শাড়ি স্পষ্ট করে তুলেছে উদরের একাংশ। আলো – আঁধারির মাঝে ধূসর প্রতিমার ন্যায় জ্যোতির্বেষ্টিত হয়ে উঠল।সারহানের পুরুষোচিত অন্তরাল মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে পড়ল। চেতন-অচেতনের সীমারেখায় প্রবল আবিষ্টতায় নিঃশ্বাস স্থির করল। অনিমেষ চাহনিতে আবিষ্কার করল এক নিবিড় প্রিয়তমাকে।যে আকুলতায় নিজেই সমর্পিত।দৃষ্টি সংযত করল। পুনরায় দৃষ্টিপাত করল কুণ্ঠিত, অস্থির মুখপানে। মেয়েলী দৃষ্টিতে আশঙ্কা এবং প্রতীক্ষা বিরাজমান। বৃষ্টিধারায় তখনো অবিরাম ঝরে পড়ছে বৃষ্টি! প্রকৃতিও এই মিলনের প্রত্যাশায় বিমূঢ়।হঠাৎ করে অরিত্রিকা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। মৃদু কাঁপিতে লাগল তার ওষ্ঠপল্লব, কণ্ঠে ফুটে উঠল কিছু বলবার ব্যাকুল প্রয়াস।আঁচলটা দিয়ে ভেজা শরীরটা ঢাকার চেষ্টা করে মিনমিন করে কম্পনরত কন্ঠে বলল;

“আমার পায়ে ব্যথা করছে। হাতটা ধরে ভেতরে নিয়ে যাবেন?”
সারহানকে অস্থির ও বিপর্যস্ত প্রতীয়মান হচ্ছে । মোহাবিষ্টের ন্যায় দৃষ্টিপাত নিরন্তর প্রেয়সীর পানে ছুটে চলেছে। তা কোন অপরিসীম আকর্ষণের সূত্রে তাড়িত। সে নিজেকে সংযত রাখবার সর্বাত্মক প্রয়াস করল। উচ্ছৃঙ্খল বাসনামথিত মনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে।এই মুহূর্তে তার পুরুষোচিত আবেগাবিষ্ট মনকে আটকে রাখা তার সাধ্যাতীত হয়ে পড়ছে।বারংবার দীর্ণ শ্বাস ছেড়ে সে অন্তঃস্থলে তীব্র উত্তেজনার বেগ সামাল দেবার চেষ্টা করছে। নিগূঢ় দৃষ্টিতে প্রেয়সীর প্রতি চেয়ে কোন বিভ্রান্ত পথিক দিগ্বিদিকহারা হয়ে পথ সন্ধান করছে। সে চেয়ার থেকে উঠে স্থিরভাবে দাঁড়াল। মুখাবরণে গাম্ভীর্যের মুখোশ এঁটে নিল।সে ক্ষণিক মুহূর্ত দেরী করে হুট অরিত্রিকাকে কোলে তুলে নিল।আকস্মিক এই কার্যকলাপে মেয়েটি অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেল। কঁপিত কায়ায়, দু’হাতে শার্ট আঁকড়ে ধরল। নারীত্বের সুকোমল দেহধারণ কেঁপে উঠল আশংকায়। সারহান আরও দৃঢ়তায় মেয়েলী শরীরটাকে আঁকড়ে রুমে পা বাড়ালো।

সারহান অরিত্রিকাকে সরাসরি বিছানায় বসিয়ে দিল। তখনি বজ্রের গর্জন শোনা গেল। কয়েক সেকেন্ডের ভেতর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলো। অরিত্রিকা ভয় পেল হঠাৎ অন্ধকার হওয়ায়। সে কম্পিত হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল সারহানের শক্তপোক্ত হাত। বজ্রের আলোয় রুমটা একটু পর পর আলোকিত হচ্ছে! বজ্র গর্জে উঠছে। অরিত্রিকা আশে পাশে পরখ করে ক্ষীণ কন্ঠে বলল;
“সারহান ভাই ফোনের ফ্ল্যাশটা জ্বালান।”
সারহান কথাটা শুনল। অন্য হাতে পকেট হাতড়ে ফোনটা বের করল। ফোনের ফ্ল্যাশ অন করতেই নজরে আসলো চার্জ মাত্র তিন পার্সেন্ট! গতকাল দুপুর থেকে ফোনটা চার্জ দেওয়া হয়নি। সে তপ্ত শ্বাস ফেলল। অরিত্রিকাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কন্ঠে বলল;

“ফোনে চার্জ নেই। মোমবাতি, দেশলাই টেবিলের ড্রয়ারে আছে।”
অরিত্রিকা সহসা হাত ছেড়ে দিল। সারহান ফোনটা হাতে নিয়ে কাঠের টেবিলটার দিকে কদম বাড়াল। ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে ড্রয়ার থেকে মোমবাতি এবং দেশলাই বের করল। অতঃপর দুটো মোমবাতি জ্বালিয়ে সেথায় রেখে অরিত্রিকার কাছে এসে দাঁড়াল। রুমটা ক্ষীন আলোয় আলোকিত হয়েছে। বেলকনির খোলা দরজা দিয়ে হুরহুর করে হাওয়া প্রবেশ করছে। অতি শীতল সেই হাওয়া অর্ধভেজা মেয়েলী শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে! সারহান তা লক্ষ্য করে পা বাড়িয়ে কোথাও থেকে তোয়ালে নিয়ে আসল। নিঃশব্দ ভঙ্গিমায় অরিত্রিকার পাশে বসল। দৃঢ় সুগভীর কন্ঠে বলল;

“এদিকে আয়।”
অরিত্রিকা অবুঝের ন্যায় নেত্রপল্লব ঝাপটে তাকাল সারহানের গুরুগম্ভীর মুখপানে। হলদেটে আলোয় স্পষ্ট নজরে পড়ল সম্মোহনী দৃষ্টি! মেয়েটা বুঝি শঙ্কিত হলো! তুতলিয়ে কোনো মতে বলল;
“কেন?”
“বৃষ্টির পানিতে তোর পুরো শরীর ভিজে গেছে। এভাবে থাকলে জ্বর আসবে।”
“তোয়ালেটা আমায় দিন। আমি নিজে মুছে নিচ্ছি।”

কথাটা বলার সাথে সাথে সারহান তোয়ালে দিয়ে দিল। অরিত্রিকা সেটা নিয়ে শরীর মুছতে উদ্যত হলো।হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হলো তার শাড়ি ও ব্লাউজ সম্পূর্ণরূপে সিক্ত হয়ে দেহের সহিত নিবিড়ভাবে লেপ্টে গেছে। শরমে ও সংকোচে মেয়েলী চিত্ত ভারাক্রান্ত হলো।কোনো লজ্জাবতী লতা কুণ্ঠাবনত হয়ে পড়ল মাটিতে। গালদ্বয়ে উষ্ণতাপ ছড়ালো রক্তপ্রবাহ তীক্ষ্ণবেগে উথলে উঠতে লাগল সর্বাঙ্গে। দেহে সূক্ষ্ম কম্পন সঞ্চারিত হলো
। তা উপেক্ষা করে সে দ্রুত তোয়ালেটি শরীরে জড়িয়ে নিল।
“আপনিও ভিজে গেছেন। শার্টটা চেঞ্জ করুন।”

অরিত্রিকা কুন্ঠা ঠেলে ধীরজ কন্ঠে বলল। সারহান কি কিছু কর্ণগোচর করি? সম্ভবত না। কারণ, তার গম্ভীর ও নিগূঢ় চাহনি নিবদ্ধ মেয়েলী মুখপানের অপ্রতিম মোহময়তায়। পুরুষালি মন বিচলিত, দিশাহীন। আজ তার মনের সকল শৃঙ্খল ভেঙে পড়ছে। তার মন ডেকে বলল,এমন অসময়ে প্রেয়সী কেন শাড়ি পড়ল? এই শাড়ি পরিহিতা তার জন্য অপ্রত্যাশিত আবেদন, অনুচিত সৌন্দর্যের উন্মোচন। এটা বিপর্যয়! প্রেয়সীর এমন বিপরীত আচরণ অপরাধের ন্যায় মনে হলো। তা যেন আজ ক্ষমার অযোগ্য। বারংবার নিভৃতসুধা অন্তর্নিহিত, সংযত কামনাকে উসকে দিচ্ছে।
সে মনকে শাসন করতে চায়। তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে নির্মমভাবে দমন করতে চায়। কিন্তু এই অস্থির, মোহনীয় মুহূর্ত তাকে সমস্ত নিয়ন্ত্রণচ্যুত করে দিচ্ছে। তার ভিতরকার মনোবৃত্তি বুঝি আর প্রেয়সীর শারীরিক অসুস্থতাকেও গ্রাহ্য করতে চাইল না।বাহ্য জগতের অস্থিরতা, উদ্বেগ ও সংশয়কে উপেক্ষা করে তার মন কোনও অজানা সুখসাগরে আত্মবিসর্জনের আকাঙ্ক্ষায় ডুব দিতে ইচ্ছে করল। সে অবাধ্য নিয়ন্ত্রণহীন মনটাকে এ মুহুর্তে বাঁধা দিল না। আচানক হাতটা বাড়িয়ে মেয়েলী কোমড়টা সন্নিকটে টেনে বাহু বন্দী করল।

অরিত্রিকা আকস্মিক শীতল স্পর্শে লাফিয়ে উঠল। শরীরটা থরথরিয়ে কাঁপল। চোখ মুখ খিঁচে কম্পনরত কন্ঠে বলল ;
“সারহান ভাই! এটা কি করছেন?”
দমকা হাওয়া ছুটে আসলো উদ্দাম বেগে। মোমবাতির অগ্নিশিখা নিভে দিলো। ফোনটার ফ্ল্যাশ লাইটটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল। তখনি বজ্রপাতে ধরণী কাঁপল। অরিত্রিকা ভয়ে সারহানের প্রশস্ত শরীরটা জড়িয়ে ধরল হুট করে। শঙ্কা ভুলে ভীতিগ্রস্ত কন্ঠে আওড়ালো;
“বেলকনির দরজাটা বন্ধ করে দিন।”
সারহান ভয়ে আচ্ছন্ন অরিত্রিকার মুখখানা হাত দ্বারা উচালো। বজ্রের ক্ষীণ আলোয় আবছাটে মুখখানা দেখল। সে দুর্বোধ্য হাসল! নেশাগ্রস্তের ন্যায় মেয়েলী ওষ্ঠদ্বয়ের কোণে তপ্ত ওষ্ঠপুট ছুঁইয়ে বিরবির করে বলল;

“খোলা থাক।”
“ভয় করছে তো…”
“আমি আছি তো বিবিজান!”
“দেখুন….”
কথাটির সমাপ্তি ঘটল না। সারহানের তখন প্রেয়সীর ওষ্ঠদ্বয় দখল করেছে। মেয়েলী শরীরে বিদ্যুৎ তরঙ্গ গেল। অপ্রত্যাশিত কান্ডে বাকরুদ্ধ, স্তম্ভিত! পুরুষালি হাতের ছোঁয়া ক্রমশ যেন গভীর হচ্ছে। মেয়েলী কায়া ছটফটিয়ে উঠল। দুহাতে মানব দেহটি ঠেলে দেওয়ার বৃথা প্রয়াস চালাল। সারহান বিমোহিত নয়নে তাকাল। ফর্সা গালে চু*ম্বন করে মোহগ্রস্তের ন্যায় আওড়ালো ;
“নড়ছিস কেন?”

অরিত্রিকা জমে গেল অনিয়ন্ত্রিত স্পর্শে। সারহান অধৈর্যহীনের ন্যায় মেয়েলী শরীরে জড়ানো তোয়ালেটা ছুঁড়ে ফেলল মেঝেতে। অতঃপর বিছানায় আলতো করে শুইয়ে খানিকটা ঝুকে আসলো। অরিত্রিকার দিশেহারা লাগতে লাগল পুরুষালি শরীরের সংস্পর্শে এসে। সে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করতে চাইল। কিন্তু অক্ষম হলো। তার পুরো শরীর জমে গেছে।মস্তিষ্ক শূন্য! কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি। পায়ের ব্যথাটা এ মুহুর্তে মাথা চাড়া দিয়েছে। ব্যথাকে ছাপিয়ে অস্থিরতায় পরিপূর্ণ সত্তাকে জাগিয়ে কম্পিত কণ্ঠে বলল;
“সারহান ভাই….. আমি আরেকটু সময় চাই।”
সারহান শুনল কিন্তু প্রতিক্রিয়া করল না। সে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো। মেয়েলী উন্মুক্ত গলদেশের ভাঁজে ওষ্ঠ ডুবিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে;

“স্যরি সুইটহার্ট! এ মুহুর্তে সময় দেওয়ার মতো ভুল করছি না আমি।”
অরিত্রিকা হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেল। আঁতকে ওঠে;
“আমি… ”
কথাটা সমাপ্তি ঘটার আগে সারহান মদ্যক কন্ঠে বলে উঠে;
“আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না সোনা।”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭৫

অরিত্রিকা স্তব্ধপ্রায়!জড়পদার্থে রূপান্তরিত হয়েছে তার সর্বাঙ্গ। কণ্ঠনালীর অতল গহ্বর হতে উচ্চারিত হলো না একটিও শব্দ। নিকট অতীতের উচ্ছ্বাস এক লহমায় নিঃশেষিত। তখনি শীতল শিহরণ বইয়ে গেল এক পুরুষালী কন্ঠস্বরে;
“ভালোবাসি নিভৃতসুধা।”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭৬