প্রণয়ের সুর বোনাস পর্ব
মহুয়া আমরিন বিন্দু
বাড়ির ছুটা কাজের লোকের কিশোরী মেয়ে রুম্পা,আজ মায়ের বদলে এসেছে,মেয়েটি ভয়ে সড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে এক কোনায়,এই বড় বাড়িতে এসেছে আজ প্রথম, সাধারণ গরিব পরিবারের মেয়ে সে প্রথম দিন এসেই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বীকার হবে বুঝতেই পারেনি,তার কাছে বড় লোক হওয়াটা স্বপ্নের মতো,ভেবেইছিলো বড়লোকরা সব সময় সুখে শান্তিতে থাকে।কিন্তু আজ যা দেখলো তাতে এমন কিছু হওয়ার ইচ্ছেটাই শেষ হয়ে গেছে।
হামিদা বেগম,আর নিখিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি
নিখিল শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,তুমি যা শুনেছে ওটুকুই নির্ভয়ে বলো।আমরা তোমাকে কিছু করবো না,তুমি তো আমার বোনের মতো ভয় পেয়ো না ভাইকে নিরদ্বিধায় সব বলো!
মেয়েটি কিছুটা ভরসা পেলো,টয়া যখন নেহাকে ডেকেছে তখন থেকেই সে সেখানে ছিলো,সেতারা বেগমের ঘরের পাশের অংশ সে পরিষ্কার করছিলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেয়েটা দাঁড়ি কমা সহ সবকিছু বলে দিয়েছে একদমে।নিখিলের রাগে কপালের শিরা ফুলে উঠলো,হামিদা বেগম ছেলের উপর রাগলেন উল্টো,ছেলের এই বিয়ে লুকানোর চক্করে এতোকিছু হয়েছে।
হামিদা বেগম রাগে দুঃখে চেঁচিয়ে উঠলেন নিখিলের উপর
,,তোর জন্য আমার সাজানো গোছানো সংসারটায় এতো এতো সমস্যা হয়েছে নিখিল।আমি আগের মতো চাই সব কিছু তুই যেভাবে সব ধ্বং’স করেছিস ঠিক সেভাবে সব আগের মতো করে দিবি।যতক্ষণ না পারবি ততক্ষণ আমাকে মা বলে ডাকবি না!
হামিদা বেগম হন হন করে চলে গেলেন,নিখিল মৃদু চেঁচিয়ে একবার ডাকলো–,মা!
নিখিল ছুটলো টয়ার রুমের দিকে ওর সাথে বুঝা পড়া তো এখনো বাকি,নিখিল মেহমেত চৌধুরীর বউ হওয়ার এতো সখ এই মেয়ের!
নিখিল কে নিজের ঘরে ঢুকতে দেখে ভয়ে হাতের সামনে গোছানো কাপড় গুলো পড়ে গেলো নিচে।টয়া এটার ভয়ই পাচ্ছিলো তাই চুপচাপ চলে যাওয়ার কথা ভেবেছে।
নিখিল টয়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত কিন্তু খুবই কঠিন কন্ঠে বললো–,চলে যাচ্ছিস?তা বিয়ে করবি না আমাকে? না করেই চলে যাচ্ছিস যে বিয়ে করবি বলেই তো প্রথম দিন থেকে এতো কিছু করলি!
টয়া তরতর করে ঘামতে থাকলো,সে তো এরকম ভাবে কিছু চায়নি, বুঝতে ও পারেনি সেতারা বেগমকে এই সামান্য কথা বলাতে বাড়িতে এতো কিছু ঘটে যাবে!
নিখিল বাড়ি কাঁপিয়ে এক ধমক দিলো টয়া কে
,,ওই কথা বলছিস না কেনো?উত্তর না দিলে তোর জি’ব টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলবো আজ আমি!
টয়া ভয়ে চুপসে গেলো,নিখিল গিয়ে পর পর পাঁচটা চ*ড় মেরেছে টয়ার গালে!
বৃষ্টি দরজায় দাড়িয়ে চম*কে উঠলো,ভাইয়ের অগ্নিমূর্তির ন্যায় রূপে যেনো জ্বল’সে যাবে সব কিছু।জেরিন,সাব্বির সব বাড়ি ফিরেছে,বাড়ির পরিবেশ শান্ত দেখেই বুঝেছে কোনো একটা গন্ডগোল আছে।দুজন উপরে উঠে দাড়িয়ে পড়লো।
টয়ার ঠোঁট কে’টে রক্ত বেরিয়ে গেছে।রাগে তরতর করে কাঁপছে নিখিল,হিতাহিতজ্ঞান ভুলে গেছে প্রায়।
,,তুই কি মনে করেছিস নিখিল ভাই চুপ আছে মানে সে মেরুদণ্ডহীন পুরুষ, তাকে পেয়ে বসেছিস তুই,ওইদিন ও তোকে সাবধান করেছিলাম নেহার থেকে দূরে থাক।
তুই কি যেনো জিজ্ঞেস করেছিস দাদীকে, নিখিল ভাইয়ের বউ হিসাবে কাকে মানাবে।তুই কে এসব বলার?নিখিল মেহমেতের জীবনের প্রথম ও শেষ নারী শুধু নেহা নূর বুঝতে পেরেছিস তুই।তোকে দেখেও ঘৃ’ণায় গাঁ গুলিয়ে আসছে,নিজেকে একটা মেয়ে কিভাবে দাবি করোছ তুই।তুই ছোট বাচ্চা এখনো বুঝতে পারোস নাই, তোকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে জানাতে হবে?নিখিল শুধু নেহার!তুই কি ভেবেছিস নেহা আর আমার মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করে দিলেই,আমি তোকে বিয়ে করবো?
সেতারা বেগম কেনো,পুরো পৃথিবীর মান্যগণ্য ব্যক্তি এসে রিকুয়েষ্ট করলেও নেহা ব্যতিত কাউকে আমি জীবনে জায়গা দিবো না।
শুধু মাত্ররো মেয়ে বলে তোকে এতোদিন সম্মান দেখিয়েছি,কিন্তু তুই একটা কু’ত্তা যার লেজ কোনো দিন সোজা হবে না।যদি ছেলে হতি আজ এখানেই মে’রে পুঁতে দিতাম তোকে।নিখিল টয়া কে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে এবার গলা চেপে ধরে।
,,তুই কি যেনো বলছিলি, কে দেখতে সুন্দর বেশি?নেহা যদি পু’ড়া জ্বল’সানো পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত চেহারা নিয়েও আমার সামনে আসে তবুও আমি শুধু তাকেই বেছে নিবো।শুনতে পেয়েছিস তুই?তোর জন্য আমার নেহা কষ্ট পেয়েছে তোকে আমি খু*ন করে ফেলবো মে’রে ফেলবো একদম!
টয়ার চোখ উল্টে যাওয়ার উপক্রম সাব্বির নিখিল কে বাঁধা দিয়ে ও পারছে না,হামিদা বেগম এসে টয়াকে ছাড়িয়ে নিলো।
নিখিল রাগে চুল খামচে ধরলো।তীব্র আ’ক্রোশে ফেটে পড়ছে যেনো।
,,মা তুমি তোমার বোনের মেয়েকে এই বাড়ি থেকে এখন যেতে বলো।এখন মানে এখন ও যাতে কোনো দিন এই বাড়ির ত্রিসীমানায় না আসে।যদি ভুল করেও পা বাড়ায় তো খোদার কস*ম নিজ হাতে খু*ন করবো আমি। কাল*নাগিনী টাকে সরাও আমার চোখের সামনে থেকে!
হামিদা বেগম টয়া টেনে নিয়ে গেলেন এক প্রকার বোনের মেয়ে এতোটা নির্লজ্জ হবেন জানলে ভুলেও আনতেন না বাড়িতে,তার কন্ঠে স্পষ্ট রাগ।
টয়াকে গাড়ি করে পাঠিয়ে দিলেন তিনি,কড়া ভাষায় বলে দিলেন তোর মাকে সব কিছু জানাবো আমি।টয়া যাওয়ার পূর্বে হামিদা বেগমের পা জড়িয়ে ধরলেন,মিনতি করলেন যাতে তার মাকে কিছু না জানায়!
সেতারা বেগম নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন নিজের ঘরে।তার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।কি থেকে কি হয়ে গেলো!
বৃষ্টি দৌড়ে গেলো নেহার অবস্থা দেখতে মেয়েটার সাথে কথা পর্যন্ত বলতে পারেনি এখন পর্যন্ত।
জেরিন সাব্বির বৃষ্টি কে কিছু জিজ্ঞেস করার সময়ই পেলো না।বৃষ্টি তার আগে ছুট লাগিয়েছে নেহার কাছে।
বৃষ্টি নেহাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেই গগনবিদারী এক চিৎকার দিয়ে উঠলো!
নেহার হাত পা বরফের ন্যায় জমে গেছে।জেরিন সাব্বির তার পেছনেই ছিলো,নিখিল নিজেও চিৎকার শুনে দৌড়ে আসলো,নেহা কে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে ছুটে গিয়ে বৃষ্টির পাশে বসে নেহার গালে হাত রাখলো।
,,নে,,,হা!
নিখিলের কন্ঠ কাঁপা, হাত কাঁপছে। নিখিল নেহার মাথা কোলে তুলে নিলো–,নেহা কথা বলছিস না কেনো?নেহা কথা বল বলছি।
বৃষ্টি ভাইয়ের করুন অবস্থা দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না।বৃষ্টি সাব্বির কে বললো
,,সাব্বির ভাইয়া এম্বুলেন্স ফোন করো নেহা কে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে পুরো। নিখিল নেহা কে কোলে উঠিয়ে নিলো,নেহার ফ্যাকাসে মুখটা নীল বর্ণ ধারন করেছে।তাহমিদা বেগম মেয়ের এমন অবস্থা দেখে সিঁড়ির গোড়ায় এসে নিজেও জ্ঞান হারালেন!হামিদা বেগম পড়লেন অথৈজলে,এ কি হলো তার পরিবারের।সাহারা ছুটে এসে ধরলেন তাহমিদা বেগম কে,সেতারা বেগম বেরিয়ে এসে দেখলেন ছোট বউ আর নাতনির বেহাল দশা।ভিতরটা কেমন ধ’ক করে উঠলো তার।মনের ভিতর থেকে একটা কথাই কানে এসে ঠেকছে,সব কিছুর পেছনে শুধু তুই দায়ী সেতারা,তোর এই ছোট মনমানসিকতা, অপমান,নিজেকে কঠিন ধাঁচে আটকে রাখার ফল ভোগ করছে বাড়ির দুইটি সদস্য!
জেরিন তার বাবা চাচাদের হসপিটালে আসতে বলে গাড়িতে উঠে বসলো,
ইমারজেন্সি তে ভর্তি করা হলো মা মেয়েকে।হামিদা বেগমের প্রেসার কমেছে দুর্বলতায় তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন।
নেহার খবর দিতে পারেননি ডাক্তার, ধারনা করছেন প্যা’নিক অ্যা’টাক করেছে নেহা।মস্তিষ্কে অধিক চাপ পড়ার ফলে জ্ঞান হারিয়েছে।
হসপিটালে এসে পৌঁছেছে মিহির।শাহআলম চৌধুরী, শহিদুল চৌধুরী পেছনে মাহফুজ চৌধুরী।
মিহির নিখিল কে খুঁজতে ব্যস্ত নিখিল নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে।
মিহির নিখিলের কাঁধে হাত রাখলো,নিখিল চোখ বন্ধ করেই বললো–,মিহির!
মিহিরের হতাশ কন্ঠ –, চল আমার সাথে।
নিখিল মিহিরের সাথে যেতে চাইলো না মিহির টেনে নিয়ে গেলো অনেকটা।শাহআলম সহ বাকি দুইজন ও সব শুনলো বৃষ্টির মুখে।
শহিদুল চৌধুরী তপ্ত শ্বাস ছাড়লো সে বরাবরই গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, চুপচাপ।
নিজের স্ত্রীর কোনো অন্যায় খুঁজে পেলেন না তিনি,সে নিজেও মাকে অনেক বার না করেছে নেহা একটু ডানপিটে মেয়ে,কিন্তু মনের দিক দিয়ে তার মতো ভালো দুটো নেই,তাও মা কোনো দিন তার মেয়েকে কথা শুনাতে ছাড় দেয়নি।তাহমিদা প্রায় সময়ই স্বামীর কাছে অভিযোগ তুলতো,শুধু পরিবার থেকে আলাদা না হওয়ার জন্য পরিবারের সবার খুশির কথা চিন্তা করে স্ত্রী কে বুঝাতেন।কিন্তু আজ!তার মায়ের জন্য তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দুইজন মানুষ নিথর হয়ে পরে আছেন।মেয়েটা মৃত্যুর সাথে তাল মিলিয়ে বাঁচা মরার লড়াই চালাচ্ছে।কি করে ক্ষমা করবে নিজের মাকে?
বাবা মা মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দুজন মানুষ, তেমন স্ত্রী সন্তান ও, বাবা মা সব সময় অন্যায় করতে থাকলে তা মেনে নেওয়াটাও উচিত না।যদি স্ত্রীর কথা শুনতেন প্রতিবাদ করতেন তাহলে হয়তো আজ আর এদিন দেখা লাগতো না।
তাহমিদা বেগমের জ্ঞান ফিরেছেন, তিনি উঠেই সে-লাইন হাত থেকে খুলে দৌড়ে বেরিয়ে আসলেন, শাড়ি পরিহিত মধ্যবয়স্কা নারী, একজন সম্মানিত গৃহিণী, যে মহিলা আজ অব্দি বড় ভাইয়ের মতো ভাসুরদের সামনে মাথায় কাপড় ছাড়া আসেনি তিনি আজ আঁচল ছেড়ে দিয়ে চুল ছাড়া অবস্থায় পাগ’লের ন্যায় সবার সামনে এসে স্বামীর বাহু ঝাঁকিয়ে বললো
,,আমার মেয়েকে এনে দাও বলছি।মেয়েকে সুস্থ করে দাও না হয় নিজেকে শেষ করে ফেলবো আমি।তোমরা সবাই আমার মেয়ের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।কথা বলছো না কেনো এখন।আমার একটাই সন্তান তুমি জানো না,,ও চলে গেলে কাকে নিয়ে থাকবো আমি!
শব্দ করে কেঁদে দিলেন এবার তাহমিদা।নিখিল এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দিচ্ছে,
যেদিকে ওর নিজের ভিতরেই এক উত্তাল সমুদ্র! বাঁধ ভাঙ্গা ঝড়ে নিজেই ভিতরে ভিতরে ভেঙ্গে চূড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে,সে কিভাবে অন্য একজন কে সামলানোর ক্ষমতা রাখে!তবে পরিস্থিতি মানুষকে দিয়ে সব করিয়ে নেয় যেনো।
,,তুই বল নিখিল নেহা কথা বলছে না কেনো?উঠে আসছে না কেনো?আমার মেয়েটা তো কথা না বলে থাকে না,ওকে উঠতে বল না তোর সব কথা তো শুনে,আজকেও শুনবে যা বাবা ডেকে দে না একটু!
নিখিলের অতি ভাঙ্গা কন্ঠ গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না ওর।টেনে টেনে শ্বাস নিয়ে বললো
,,নেহা ঠিক হয়ে যাবে তো ছোট মা। সত্যি বলছি আমাদের নেহা অনেক স্ট্রং তুমি জানো না,ঘুমিয়ে আছে তো,ঘুম ভাঙ্গার পর যদি দেখে তুমি এভাবে কেঁদেছো ওর কি ভালো লাগবে বলো?চোখ মুছে ফেলো না ছোট মা,তুমি ভালো মা না আমার!
তাহমিদা এলোমেলো হাতে চোখ মুছলেন,কই কাঁদছি না তো আমি,এই দেখ একদম কাঁদছি না আমি।
শহিদুল চৌধুরী নিজে এবার কেঁদে দিলেন,শাহআলম চৌধুরী জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলেন, হামিদা এক পাশে দাড়িয়ে চোখ মুছলেন জেরিন,সাব্বির,বৃষ্টি এক পাশে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।পরিবারের দুর্দশা যেনো আর চোখে দেখা যাচ্ছে না।কিছু সময়ের ব্যবধানে সব কিছু এলোমেলো হয়ে পড়েছে।
হামিদা বেগম বসলেন তাহমিদা বেগমের পাশে
নিখিল চুপচাপ উঠে গেলো একপাশে।হসপিটালের বাহিরে খোলা রাস্তার পাশে বেঞ্চ টা তে বসে পড়লো সে।
জীবনে সিগারেটের প্যাকেট ও হাতে তুলেনি সে।রাস্তার পাড়ে বসা চা বিক্রেতার কাছে সিগারেট দেখলো সে,হতাশ শ্বাস ফেলে তার থেকে সিগারেট নিয়ে নিলো একটা!
লাইটারের আ’গুন টার দিকে তাকালো কয়েক মিনিট,এই আগু’ন টা থেকেও শত গুন বেশি নিজের ভিতরে জ্ব’লছে এখন।ঠোঁটের আগায় সিগারেট টা চেপে ধরতেই মিহির ছো মেরে কেঁড়ে নিলো ওটা।পায়ের নিচে ফেলে পিষে ফেললো।
মিহির শান্ত কন্ঠে ধমক দিলো একটা
নিখিলে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো!মিহির পাশে বসে বললো
,,তুই তো এমন না, কেনো করতে যাচ্ছিলি ওটা?
,,আমি কেনো বাউণ্ডুলে মানুষ হতে পারলাম না।কোনো এক অগোছালো অনিয়ম প্রেমিক হতে পারলাম না?আমি এতোটা নির্বোধ,স্বার্থপর,পাষা’ণ কেনো হলাম মিহির।কাপুরুষের তকমাটা আজ নিজেকে দিতে ভীষণ ইচ্ছে জাগছে!
,,তুই কাপুরুষ হলে সুপুরুষ বলতে পৃথিবীতে আর কিছু থাকবে না!
,,বন্ধু বলে বলছিস তো?কিন্তু আমার অন্তর আত্মা চেঁচিয়ে বলছে,আমি এক ব্যর্থ মানুষ! একজন ব্যর্থ স্বামী,একজন ব্যর্থ সন্তান!
পরিবারের বড় সন্তান হয়ে জন্মানোটা ভীষণ রকম কঠিন! এতো এতো দায়িত্ব এদের,সব কিছুর মাঝে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটাও এদের কাছে থেকে যায় চির অধরা!
ভাবছি কি জানিস?চলে যাবো!
,,নেহাকে ছেড়ে ভালো থাকবি তুই?
,,ও ভালো থাকবে!আমি কাছে থাকা কালিন তো কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি।জোর করে বিয়ে করে ফেলেছি,ওর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম!এর শাস্তি হিসাবে চির কাল ওর থেকে দূরত্ব রেখে নিজেকে জ্বা’লিয়ে পু’ড়িয়ে মার’তে চাই।
আমি কাউকে ভালোবাসার যোগ্যতাই রাখি না!নেহা ডিজার্ব বেটার দেন মি!
,,তোর থেকে বেশি ভালো নেহাকে কেউ বাসতে পারবে না।তুই যতটুকু ভালো নেহা কে বাসিস ততটুকু হয়তো আমি তোর বোন কে বাসি না নিখিল!
নেহা যদি তোকে ভালোবাসে তার পরও কি তুই ওকে ছেড়ে চলে যাবি নিখিল?
,,আমি ওকে আগলে রাখতে পারলাম কই মিহির,দেখ কেমন করে আইসি’ইউর বেডে শুয়ে আছে।আমি কি পারছি ওর যন্ত্র’ণা কমাতে,উল্টো বাড়িয়ে দিচ্ছি।
,,তোর রাগের মাঝে যে ভালোবাসা আছে,এটা লোক চক্ষুতে ধরা না পড়তেই পারে। নেহার ভালোর জন্য তুই ওকে এভাবে বিয়ে করেছিস না হয় ওই শয়তা’নটা নেহাকে নিজের ভোগের স্বীকার বানাতো!শত্রুদের চিনতে পারা এতো সহজ নয় নিখিল, কিন্তু তুই পেরেছিস!তোর থেকে যোগ্য স্বামী যোগ্য জীবনসঙ্গী আর কেউ হতে পারে না।
,,আমি ভুল করেছি মিহির,আমার লুকানো উচিত হয়নি!
,,এখানেও তোর ভুল নেই,পরিবার বাঁচাতে করেছিস তুই এটা, শহিদুল আংকেল ও তো জানে।কেনো নিজেকে ছোট করতে চাইছিস!
,,দায়িত্বের বেড়াজালে আমার ভালোবাসার মানুষটা হারিয়ে যাচ্ছে মিহির।
,,হারিয়ে যেতে দিবি কেনো তুই।আমি জানি নিখিল কখনো নেহার ক্ষ’তি হতে দিতে পারে না।নেহাকে কষ্ট দিতে পারে না।আমার চেনা নিখিল মেহমেত চৌধুরী কখনো পরিস্থিতির কাছে হেরে যায় না।তুই নিজেও জানিস এখন তোর কি করা উচিত!
,,দূরে যেতে চাইছেন মিসেস চৌধুরী , কিন্তু তাকে এখন আরো কাছের টেনে নেওয়ার সময় এসেছে।এটাই বুঝাতে চাইছিস তুই!
প্রণয়ের সুর পর্ব ৮
মিহির গাল এলিয়ে হাসলো,এতো এতো কমপ্লিকেশন এই নিখিলের জীবনে তার থেকে ভালো কে জানে!শুধু একটাই সমস্যা ওর অনুভূতি প্রকাশে ভীষণ কাঁচা ছেলেটা,তবে মহাশয় রাগের ক্ষেত্রে পিএইচডি করে রেখেছে!মানুষ আসলেই সব দিক দিয়ে পারফেক্ট হয় না।
অনুভূতি প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় না যদি অপর ব্যক্তিটা মন পড়তে জানে!