প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৩

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৩
মহুয়া আমরিন বিন্দু

নেহা কে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে গেলেন তাহমিদা বেগম।হামিদা বেগম নিরুপায় হয়ে ছিলেন, যেখানে মেয়েটাই তার বাড়িতে যেতে চায় না সেখানে কোন মুখে বলবেন বাড়ি চল।
হামিদা বেগম বাড়ি ফেরার পর সবাই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,নেহা কেমন আছে?তুমি সকাল সকাল এসে পড়লে কেনো?
হামিদা বেগম যেনো এখনো শ’ক থেকে বের হতে পারলেন না।কি থেকে কি হলো তার একটা নাতনি আছে এ কথা সে কিনা এতোদিন পর জানলো!সবাইকে কি ভাবে এই সত্যি জানাবেন তিনি, আগে তো ছেলেকে বলতে হবে।
তিনি ছোট করে সবাইকে বললো–,,নেহা তাহমিদার সাথে ওদের বাসায় চলে গেছে।

কথাটি বলেই তিনি রুমে চলে গেলেন।শাহআলম চৌধুরী স্ত্রীর মনোভাব কিছুটা আচ করতে পারলেন।
শেষ রাতে সব ভাইবোন রা আর বাড়ি ফিরেনি,সব গুলোতে সাব্বিরদের বাড়িতে ঘুমাচ্ছে।সাহারা বেগম একা হাতে নাস্তা বানাতে ব্যস্ত হলেন।হামিদা বেগম সারা রাত জেগে ছিলো তাকেও তো বলা যায় না,তার উপর তাকে কেমন অন্য মনস্ক লাগছে।সেতারা বেগম রান্না ঘরের বাহিরে দাড়িয়ে বলে উঠলো–,, সাহারা সব পারবি তো আমি আসবো?
সাহারা বেগম ব্যস্ত কন্ঠে বললো–,, না না আম্মা।কলি আপা আছে তো, সব কিছু রান্না তো প্রায় শেষ আপনি গিয়ে বিশ্রাম নিন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘড়িতে সকাল দশটা হাই তুলতে তুলতে বাসায় ঢুকলো সব গুলোতে।মিলি বেগম রুমে গিয়েই আবার ছুটে আসলেন রান্না ঘরের দিকে।গিয়েই সাহারা বেগম কে বললো–,,স্যরি স্যরি মেজো আপা ভোরে ঘুমিয়েছি তো সজাগ পাইনি।
সাহারা বেগম একটু রাগ দেখিয়ে বললো–,,আপা ডাকিস আবার স্যরি ও বলিস ভালোই তো।যা গিয়ে বস খাবার দিতেছি সব গুলোকে,বড় আপার যে কি হলো খেতেও আসলো না, তোরা বস আমি গিয়ে দেখছি।
মিলি বেগম হেসে গেলো সবাই কে খাবার দিতে।
শাহআলম চৌধুরী কখন থেকে হামিদা বেগম কে দেখছে।কখন থেকে সে বারান্দায় বসে আছে।
এবার অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,বলবে কি হয়েছে তোমার?
হামিদা বেগম তাকালেন একবার।শাহআলম চৌধুরী এসে পাশে বসে বললো–,,অফিসে তো যাইনি এখনো,যদি মুখ এমন ভার করে রাখো তবে কি করে যাই বলোতো?

হামিদা বেগম শাহআলম চৌধুরী কে আরো অবাক করে দিয়ে হেসে বললো–,,চলো নাতনিকে দেখে আসি!
শাহআলম চৌধুরী অবাক হয়ে বললো–,,নাতনি?কার নাতনি দেখতে যাবে শুনি।
–,,কার আবার আমাদের নাতনি,নিখিলের মেয়ে যাবে কিনা বলো?
শাহআলম চৌধুরী হতবাক হয়ে চেয়ে রইলেন।কিছু সময় পরই বললো–,,চলো যাই।
হামিদা বেগম বললো–,,প্রশ্ন করলে না যে?
–,,সব প্রশ্ন করতে হয় না হামিদা,তোমাকে এতোবছরে কম চিনি নি আমি।নেহারা কোথায় থাকে এখন জানো তুমি?
–,, জানি চলো।

সোহানা সুস্থ হলো জ্ঞান ফিরলো মেয়েটার।জ্ঞান ফিরেই চোখের সামনে পুলিশ দেখে মেয়েটা বেশ ভয় পেলো।
সোহানা কে ভয় পেতে দেখে দ্রুতই ইরফান বলে
উঠলো–,, ম্যাম ভয় পাবেন না!দুই দিন ধরে আপনি অসুস্থ বিষয় টা গুরুতর না হয় এভাবে আসতাম না।
সাহিল তখন কেবিনে আসলো,পেছনে আরুশি।
আরুশি কে ইরফান ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখলো।আজকেও চুল গুলো এলোমেলো। অদ্ভুত মেয়ে একটা।
সাহিল ভিতরে এসেই প্রথমে জিজ্ঞেস করলো–,,সোহানা আপনি ঠিক আছেন?
সোহানা মাথা নাড়লো।ইরফান সাহিলের দিক তাকিয়ে বললো–,,সাহিল আপনি প্রশ্ন গুলো করেন,একজন ডক্টর হিসেবে আপনিই ভালো বুঝবেন।আমি সব নোট করছি।

সোহানা জিজ্ঞেস করলো–,,কি প্রশ্ন? আর আমার কি হয়েছিল!
সাহিল বেডের পাশে চেয়ারে বসলো সোহানার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তুমি পাশের হসপিটালে কোন ডক্টর দেখাচ্ছিলে?আর কেনো?
সোহানা ইতস্তত করলো কিছুক্ষণ, বিষয় টা সাহিলের নজর এরালো না সে সোহানা কে আস্বস্ত করে বললো–,, গাইনে”কোলজিস্ট?
সোহানা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

–,,কোন ডক্টর? আর কতো দিন ধরে ঔষধ নিচ্ছো তুমি?
সোহানা ভেবে বললো–,,ডক্টর শেলি জামান।আর আমি তো প্রায় ছয়মাস ধরে ঔষধ খাচ্ছি।
সোহানা ঔষধের নাম ও বললো তা শুনে সাহিলের কপালে ভাজ পড়লো।এ ঔষধ তো ড্রা’গ ডক্টর হয়ে এমন কাজ!
ইরফান সাহিলের সাথে বাহিরে গেলো দুজনের মধ্যে কথা হলো কিছুক্ষণ।
সাহিল সোহানার কাছে গেলো গিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,তোমার বাড়ির কেউ কি আছে?হসপিটালে আছো কেউ আসলো না পর্যন্ত!

সোহানা লম্বা শ্বাস টেনে বললো–,,মা গ্রামে থাকে, তাকে জানানোর দরকার নেই অযথাই চিন্তা করবে।
সাহিল সোহানা কে এখনই সব কিছু বলতে চাইলো তার পরে কি ভেবে যেনো বাহিরে চলে গেলো।
সোহানা ভাবলো হসপিটালে ছিলো এতোদিন, না জানি কতো বিল দিতে হয় আবার।কি ভাবে সব ম্যানেজ করবে।
ইরফান হসপিটালে আরুশি খুঁজলো মেয়েটা যেনো চোখের পলকেই হাওয়া হয়ে গেছে,সোহানার কেবিনেও তো নেই।আসলো আবার গেলো কই!

নিখিল বাড়ি আসলো,বাড়িতে এসে দেখলো সবাই বসে আছে বসার ঘরে বিকেল তখন।
নিখিল সবার দিকে একবার তাকালো জিজ্ঞেস করলো-,, মা বাবা কে দেখছি না যে?
সেতারা বেগম বললো–,,জানি না কই যেনো গেলো দুজন
শাহআলম তো আজকে অফিসেও গেলো না।
নিখিল জানে নেহা হসপিটাল থেকে চলে গেছে,এতো জে’দি এ মেয়ে।হসপিটালে আর একদিন থাকলে কি এমন হতো,নিখিল আজকেই যাবে ধরে বেঁধে যেভাবে পারে বাসায় নিয়ে আসবেই।পাখা গজে,ছে একদম কে’টে ঘরে বসিয়ে রেখে দেওয়া উচিত।
নিখিল হনহনিয়ে বাসা থেকে আবার বের হয়ে গেলো সেতারা বেগম বললো–,,আবার কই যাস সারা দিন তো বাড়ির বাহিরেই থাকিস, একবেলাও তো খাস না কি শুরু করেছিস বলতো।
নিখিল গম্ভীর হয়ে বললো–,,তোমার নাতনী কে আনতে যাচ্ছি।সে যদি বাড়ি থাকে আমিও থাকবো,বলে রাখছি যদি এবার বারাবারি করে না তোমার নাতনীর খবর আছে!
সেতারা বেগম কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেলো নিখিল।

বসার ঘরে সোফায় বসে আছে শাহআলম চৌধুরী তার কোলে বসে নামিরা চকলেট খাচ্ছে।
নেহা অপর পাশে বসে আছে, শাহআলম চৌধুরী করুন কন্ঠে বললো–,, কেনো এতো টা নির্দ’য় হলি মা?আমার আগের নেহা মায়েতে মায়ায় ভরপুর ছিলো, এই বুড়োটার উপর একটু দয়া দেখাতে পারলি না?আমার থেকেও লুকাবি আমার একটা বোন আছে?কাজ টা কি ঠিক করেছিস তুই?
তাহমিদা বেগম এক পাশে দাড়িয়ে শাহআলম চৌধুরী তার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তাহমিদা তুমি ও বললে না?নেহা তো ছেলেমানুষ!
তাহমিদা ধীর কন্ঠে বললো–,,কি করতে পারি আমি ভাইজান,মেয়ের মা ই তো তার কথা কাউকে জানাতে চায়নি!আমিও আমার মেয়ের সিদ্ধান্ত কে সম্মান করেছি।
নামিরা ডেকে উঠলো–,,দাদু ভাই।
শাহআলম চৌধুরী প্রসন্ন হয়ে হাসলেন।নেহা কোনো কথারই উত্তর দিলো না কাউকে।

রাত নয়টা লাগাতার কলিং বেলের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে দরজা খুললো নেহা,দরজা খুলেই বলে উঠলো–,,কি সমস্যা রাহা,একটু অপেক্ষা করতে পারিস না নাকি?
নিখিল দু পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে, এমন একটা ভাব সে কিছুই করেনি। নেহা নিখিলকে দেখে আরো বিরক্ত হলো, সে ও অচেনা মানুষ ভেবে জিজ্ঞেস করলো–,,কাকে চাই?
নিখিল হেসে বললো–,,আপনাকে মেডাম!
–,,আমি আপনাকে চিনি না ভাই,আসতে পারেন।
নেহা মুখের উপর দরজা বন্ধ করতে চাইলো,নিখিল পা দিয়ে আটকে দিলো।ভিতর থেকে তাহমিদা বেগম জিজ্ঞেস করলো–,,কে এসেছে রে নেহা?

নেহার আগেই নিখিল বলে উঠলো–,,আমি সেজো মা।তোমার মেয়ের এক মাত্ররো জামাই!
তাহমিদা বেগম বললো–,,ভিতরে আয় নিখিল,নেহা ওকে আসতে দে!
নেহা অবাকের চরম পর্যায় তার মা কি করতে চাইছে কি?নেহা চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো–,, মা!
নিখিল ততক্ষণে ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়েছে।
নেহা বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে, তাহমিদা বেগম তাকে ইশারায় ডাকলো।নেহা রাগে ফুঁ’সছে।
নেহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, কি করতে চাইছো তুমি মা?নিখিল কে কেনো ভিতরে আসতে দিলে?যদি এখন নামিরা আর রাহা নিচ থেকে চলে আসে তো?
তাহমিদা বেগমের গা ছাড়া জবাব–,,আসলে আসবে!
নেহা কটমট করে তাকালো,নিশ্চিত বড় মার সাথে মিলে কোনো খিচুড়ি পাকিয়েছে।
নেহা বসার ঘরে গিয়ে বললো–,,কি চাই? কেনো এসেছেন?
নিখিল আয়েশ করে বসে বললো–,,আমার সাথে যাবি? যেতেই হবে, তুই যাবি না হয় আমি থাকবো কোনটা করবি ভেবে দেখ!

–,,আপনি কিন্তু বারাবাড়ি করছেন,না আমি আপনার সাথে যাবো,না আপনাকে এখানে থাকতে দিবো।
তাহমিদা বেগম এসে নেহার হাতে একটা লাগেজ গুঁজে দিয়ে বললো–,,যা নেহা শ্বশুর বাড়ি ফিরে যা!
–,,মা কি বলছো তুমি,ভেবে বলছো তো!আমি গেলে কি করে হবে।
নেহার বিচলিত কন্ঠ স্বরে নিখিল সন্দিহান চোখে তাকালো।
তাহমিদা বেগম বললো–,, তুই বুঝ এখন না গেলে কি হবে?আমি ভালোর জন্য বলছি যা!
নেহা বুঝলো কেনো এমন টা করছে, সে ও লাগেজ নিয়ে বললো–,, চলুন!

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১২

নিখিল আরো বেশি অবাক এক বার বলাতে যেতে রাজি হয়ে গেলো!কি এমন হবে এখানে নিখিল থাকলে যার জন্য নেহা যেতে চাইছে,রহস্য তো উদঘাটন করতেই হবে নিখিল,নেহা ও কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে!
নেহাই আগে আগে বের হয়ে গেলো,রাহাকে ম্যাসেজ দিয়ে বললো–,,দশ মিনিট পর আসবি,নিখিল এসেছে!
নেহা বেরিয়ে গেলো,নিখিলের সাথে গাড়িতে উঠে বসে চুপচাপ রইলো।

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৪