প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১২

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১২
Zannat Xhowdury

হঠাৎ কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গে রোজার । আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো ক্লাস রুম ফাঁকা একজন মেয়ে তাকে ডাকছে ।
আর ইউ ওকে ?
ইয়েস ! উত্তর দিয়েই নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো মেয়েটিকে । বিদেশিদের মতো বেশ ভুষণ নয় তার । লং কুর্তি সাথে জিন্স উপরে ডেনিম জ্যাকেট । চুল গুলো কাঁধ পেরিয়ে পিঠ আবদ্ধি রাখা । কেমন বাংলাদেশি বাংলাদেশি একটা ভাব ! মেয়েটিকে অবাক করে দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে রোজা
তুমি বাংলাদেশি ?

রোজার মুখে নিজের দেশের ভাষা শুনে খুশিতে চকচক করে উঠে মেয়েটির চোখ ।
হ্যাঁ ! তুমিও বাংলাদেশি ?
রোজা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে মেয়েটিকে মেয়েটিও আপন করে নেয় রোজাকে।
আমি রোজা চৌধুরী ।
রোজা কথার পৃষ্ঠে সহসাই উত্তর দেয় মেয়েটি
আমি নীলিমা । চল যেতে যেতে কথা বলা যাক ।
রোজা আর নিলীমা নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায় ক্লাস রুম থেকে । যেতে যেতে আরো বিভিন্ন ব্যাপারে কথা বলে তারা । গেটে কাছে আসতেই কালো BMW দেখতে পায় তারি সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে নির্ণয় রোজা নিলীমার কাছে বিদায় নিয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে নির্ণয়কে , নির্ণয় যেন এর অপেক্ষায় ছিলো । সেও খুশি মনে দুহাতে আগলে নেয় তার কলিজার টুকরা কে ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কলিজা টুকরা ” কথাটা বেশ কম হয়ে গেলো না । নির্ণয়ের জান প্রান সব তার এই ছোট পাখিটা। রাক্ষসদের প্রান ভোমরা যেমন অন্য প্রাণীর মধ্যে সুরক্ষিত থাকে । নির্ণয়ের প্রাণ তার এই পাখিতে আবদ্ধ । যাকে কি না জন্মের পরেই নিজের দখলে নিয়েছিলো ।
ভার্সিটি কেমন লাগলো তোর ?
পুরো ফাটাফাটি নির্ণয় ভাই । জানেন বাংলাদেশি একটা ফ্রেন্ড পেয়েছি ভার্সিটিতে আসার ইচ্ছে আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো । ধন্যবাদ নির্ণয় !! বলেই টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলো নির্ণয়ের গালে । কিছু সময়ের জন্য থমকে গেলো নির্ণয়ের হার্ট । শ্বাস নিতেই যেন ভুলে গেছে সে ।
ও নির্ণয় ভাই যাবেন না ।
রোজার কথায় হুসে আসতেই , রোজার নাক টেনে দিলো নির্ণয়। হাসি মুখে বললো
যা গাড়িতে গিয়ে বস ।
তবে হঠাৎ বাচ্চাদের মত ঠোট উল্টিয়ে নিলো রোজা তা দেখে কাপালে ভাজ পড়লো নির্ণয়ের
যা বাবা এখনি তো বললি বাসায় যাবি । হঠাৎ কি হলো ….
আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে নির্ণয় ভাই । এখনি খাবার খেতে হবে বুঝেছেন আপনি ।
মুসকি হাসলো নির্ণয় । এই মেয়ে আর কবে বড় হবে কে জানে ।।

ভার্সিটি শেষে হেঁটে পথ ধরেছে নীলিমা এখন তাকে রেস্টুরেন্টে যেতে যাবে অর্ধেক পথে গিয়েই হঠাৎ হাতে টান অনুভব করতেই ভয়ে কাচুমাচু হয়ে পেছনে ঘরে সে । চোখ দুটো খিচে বন্ধ করা
চোখ খুলুন মিস ।
চেনা পরিচিত কন্ঠে দ্রুত চোখ খুলে সে । সামনে অর্ণব কে দেখে যেন ধরে প্রান আসে তার ।
ও আপনি । তো এভাবে হাত ধরে কেউ টানে আমি তো ভয়েই হার্ট অ্যাটাক করতাম ।
তাই বুঝি !
তা নয়তো কি ,আমাকে মারতে চান নাকি ?
একদমি না আপনি মরলেন আমি ব‌উ বানাবো কাকে ?
“ব‌উ” কথাটি শ্রবণ হতেই যেন লজ্জা এসে ভর করছে নীলিমার সর্বাঙ্গে। লজ্জায় গাল দুটো বেশ ব্লাস করছে তার ..
অর্ণব বেশ বুঝলো তা তবে নীলিমার লজ্জা আরো বাড়িয়ে দিতে বললো
হাত ধরতেই হার্ট অ্যাটাক , তাহলে বাসর করলে তো আপনাকে খুজেই পাবো না । না না বাবা আমার বাচ্চার ভবিষ্যত মাকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে । নাহলে সন্টু মন্টু রা ক‌ই থেকে আসবে বলুন তো । বলেই মুসকি হাসলো সে ।

নীলিমার তো ইচ্ছে হ‌চ্ছিলো মাটির নিচে ঢুকে যেতে । তবে মাটিও বুঝি এখন বেইমানি করছে তার সাথে।
চলুন আপনাকে পৌঁছে দেই !
ন ন নাহ আমি একাই যেতে পারবো ।
হ্যাঁ কত পারবেন তা আমার বেশ জানা আছে । আর এখনো আমার উত্তর নেওয়া বাকি তাই কথা নাহ বাড়িয়ে জলদি গাড়িতে উঠুন ।
নীলিমা বেশ বুঝলো এই ছেলে নাছড় বান্দা কোনো ভাবেই তাকে বুঝানো তার কর্ম নয় এই কয়েক দিন তা বেশ বুঝেছে সে কম তো ইগনোর করেনি তাকে । তাই কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো সে । হাতে থাকা কালো সানগ্লাস টা চোখে দিয়ে অরৃণ গাড়িতে বসালো ।

বড়ো এক রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়ি থামালো নির্ণয় । গাড়িতে বকবক করতে করতে কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়েছে রোজা। নির্ণয় গাড়ির থেকে নেমে কোলে তুলে নিলো তাকে। হঠাৎ হাওয়ায় ভাসছে এমন অনুভূতি হতেই চোখ খুলে রোজা নিজেকে নির্ণয়ের কোলে আবিষ্কার করে যেন বড় একটা শক খায় সে ।
একি নির্ণয় ভাই আমাকে কোলে কেনো তুলেছেন , হাতে ব্যাথা পাবেন তোহ ।
লাইক সিরিয়াসলি রোজ ! তোর কি আমাকে কোনো দিক দিয়ে নাদান বাচ্চা মনে হয় ।
ওমা ! তাই কখন বললাম ।
এই যে বললি হাতে ব্যাথা পাবো । তোর মতো দেরফুটি তুলোর বস্তাকে কোলে নিতে হাতে ব্যাথা হাহ ।
আমি মোটেও দেরফুটি না নির্ণয় ভাই আপনি একটু বেশি লম্বা।
আর তুলো তো হবোই দেখছেন কতো কিউট আমি আপনার মতো তো আর হাতি না ।

আমি হাতি ?
না জিরাফ ।
কি বললি ?
বললাম অনেক সুন্দর ।
এবার নামান তো আমাকে।
আমার জন্য কত মেয়ে পাগল জানিস তুই ? আর তুই কিনা হাতি জিরাফ বানায় দিলি ।
তো ওদের কোলে নিয়ে বসে থাকেন । একটা কে মাথায় , একটা কে ঘাড়ে , একটা কে কপালে, ও সকালে তো একটা কে বুকেও নিয়েছিলেন । আমি কি একবারও বলছি আপনার কোলে উঠবো। কেনো নিয়েছেন আমাকে ?
বাই এনি চান্স তুই কি জেলাস রোজ !
জেলাস মাই ফুট।
ব্যাপারটা কি বলতো সামথিং সামথিং
নাথিং নাথিং নির্ণয় ভাই ।

কথার মাঝেই রোজাকে কোলে নিয়েই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো নির্ণয়। পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা রোজাকে একটা টেবিলে বসিয়ে নিজেও বসে পড়লো তার সামনের টেবিলে ।
একি নির্ণয় ভাই , পুরো রেস্টুরেন্ট তো ফাঁকা আমরা ছাড়া বুঝি কেউ আসেনা ।
তখনি পাশ থেকে একজন ওয়েটার এসে বললো স্যার পুরো রেস্টুরেন্ট বুক করে নিয়েছে ম্যাম । তাই পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা …
কথাটা শ্রবণ হতেই চৌকিতে তাকালো রোজা নির্ণয়ের মুখ পানে , বেশ ভাব লিশ ভাবেই বসে আছে সে ।
ওয়েটার এবার নির্ণয়ের পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ।
স্যার অর্ডার টা ?

আপনাদের এখানের সব খাবার একটা একটা করে নিয়ে আসুন । কথাটা বলেই হাতে ইশারায় চলে যেতে বললো ।
ওয়েটার মাথা নিচু করে কর্ণিশ জানিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ।
রোজ এখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্ণয়ের পানে।
নির্ণয় দুই ভ্রু নাচাতেই মুখ খুললো রোজা ?
আপনি কি কোনো মাফিয়া নির্ণয় ভাই ?
হঠাৎ এমন প্রশ্ন ভরকে গেলো নির্ণয় , কাশি উঠে গেলো তার। নির্ণয় কে কাশতে দেখে সামনে রাখা পানির বোতলের ছিপি খুলে এগিয়ে দিলো তার দিকে ।
পানির বোতল হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করলো নির্ণয় । পানি পান করা শেষে আবারও তাকালো রোজার দিকে
তোর এমন কেন মনে হলো ?

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১১

না মানে আমি উপন্যাসে পড়েছিলাম , মাফিয়া নায়কদের অনেক টাকা হয় তারা যেখানে নাইকাদের নিয়ে যায় পুরো এরিয়া নিজের দখলে নিয়ে রাখে যাতে করে নাইকা কে কেউ না দেখে । আপনিও পুরো রেস্টুরেন্ট বুক করেছেন তাই মনে হলো আর কি ।
সারাদিন ফেসবুকের ওইসব চুম্মাচাম্মির গল্প পড়লে মাথায় ওইসবি ঘুরবে ।
আর তোর কি নিজেকে নাইকা মনে হয় নাকি ?

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১৩