প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৪ (৩)
Zannat Xhowdury
জানালার পর্দা পেরিয়ে ভোরে মৃদু আলো এসে আলোকিত করতে শুরু করেছে পুরো ঘর , রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রোজা পড়নে রাতের অফ হোয়াইট ক্রপ টপ, ডেনিম জিন্স, চুল এলোমেলো,। চোখ দুটোতে নিগরে পরছে আগুন ।
রকিং চেয়ার ছেড়ে উঠে দায় নির্ণয় এগিয়ে যায় বিছানার পাশের থাকা বেড টেবিলের কাছে , পানি ভর্তি গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পুরোটাই শেষ করে আবারো যথা স্থানে রেখে আড় চোখে রোজার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে ,
“এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই , তুই জানিস তোর রাগ আমার জন্য প্রলোভনের মতো।”
রোজা সামনে এগিয়ে এসে থেমে যায়। মুখোমুখি দাঁড়ায় তারা। চোখে চোখ, ভাষা নেই, কিন্তু শ্বাসে উত্তাপ।
“তুমি সব সময় আমার রাগ নিয়ে খেলা করো, জানো?”
রোজার গলা ছিলো নরম কিন্তু ধমক-মেশানো , হালকা হাসে নির্ণয় ,
“তোর ঠোঁট কাঁপে রাগে, কিন্তু আমি জানি সেগুলো আসলে আমাকেই চায়।”
ঠোঁট চেপে ধরে রোজা। কিন্তু নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না। দ্রুত এগিয়ে এসে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে নির্ণয়কে পড়ে যায় নির্ণয় চোখে শক, কিন্তু ঠোঁটে হাসি।রোজা ঝুঁকে আসে তার গালের কাছে ফিসফিস করে বলে,
আপনি যদি এখনো একটা শব্দ করেন, আমি আপনার ঠোঁট ছিঁড়ে ফেলবো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নির্ণয় ঘাড় বাঁকিয়ে বলে, “ছিঁড়ে ফেল, তোর স্পর্শে ছিন্নভিন্ন হতেও রাজি আমি।”
রোজা এক পা দিয়ে বিছানায় উঠে নির্ণয়ের ওপর চড়ে বসে। ঠোঁট টা নিজের দাঁতে হালকা কামড়ে বলে,
“আপনি জানেন না, আমি ঠিক কতটা হিংস্র হতে পারি।”
নির্ণয়ের ঠোঁট ছিঁড়ে হালকা কেটে যায়, রক্ত ঝরে পড়ে। রোজা আঙুল দিয়ে সেটার স্পর্শ নিয়ে ঠোঁটে ঘষে বলে,
“এই রঙটা আমার প্রিয় এটা আপনার রক্ত, এই দাগ আমার করা দাগ।
নির্ণয় ঠোঁট চাটে, রোজার গলা ধরে কাছে টেনে নিয়ে বলে, “এই দাগ কিছই না বেবি , আমি তোর নাম গায়ে খোদাই করে রাখবো।”
চুম্বন নয়, এটা ছিল দাবি। ঠোঁট কাঁটা হলেও, ভালোবাসা ছিল ধারালো।
কি বলিস ? বাঁকা হাসে নির্ণয়,
কিছুক্ষণ পর, রোজা বিছানা থেকে নামল। জিন্স টান করে পরে,বলল
“আপনার প্রতি আকর্ষণই আমার দুর্বলতা। কিন্তু আমি দুর্বল না। এখন আমাকে যেতে হবে , পাপ্পু একা আছে।”
নির্ণয় জানালার দিকে চেয়ে কেবল বলল, “তোর ছায়াও যেন আমার থাকে রোজ।”
রোজা ফিরেও তাকাল না। চুপচাপ দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামছে। তৃধা দাঁড়িয়ে বারান্দায়, হাত ফোন কানে হেডফোন—চুপচাপ, চোখে রাগ জমে আছে আগুনের মতো। টপ আর জিন্সে জড়ানো শরীরটা যেন এক যুদ্ধবাজার ঢাল।
পেছন থেকে হেঁটে আসে রিয়ান। হাতে কফির কাপ, মুখে হালকা ঠোঁটকাটা হাসি।
“এই যে আগুনপরী, আজ কি ঝলসে দিবি শহরটাকে?
তৃধা চোখ না তুলে বলে, চলে এসেছিস জ্বালাতে?
রিয়ান হাসে, এক পা এগিয়ে বলে, তোর এই একটুখানি রাগি মুখেই আমি পাগল হয়ে যাই !” ট্রাস্ট মি
তৃধা এবার তাকায়, চোখ মুখে বিরক্তি নিয়ে দাঁত খিচে বলে,
“পাগল হ না পিঁপড়ে হ, আমার কিছু যায় আসে না। আমি তোকে পছন্দ করিনা, বুঝেছিস?”
রিয়ান মাথা নাড়ে, ঠোঁট বাঁকায়, “হ্যাঁ, জানি। কিন্তু তুই আমাকে অপছন্দ করতে করতেই রোজ কথা বলিস, রোজ চোখে চোখ রাখিস। তোর না পছন্দের ভেতরেই আমি নিজের জায়গা বানিয়েছি।”
তা না হলে আমার সাথে তোর কথা বলার কি কারণ ?
তৃধা হালকা ঘাড় ঝাঁকে, চোখে মুখে রাগ। “কারণ তোকে উপেক্ষা করা যায় না, তোর কথাগুলো থামিয়ে রাখতে পারি না। ঠিক এই কারণেই তুই আমার মাথা খাচ্ছিস!”
রিয়ান হেসে উঠে বলে, “মানে বোঝা গেল, তুই তোর মেজাজে, আমি আমার মুগ্ধতায়
এই খেলাটা চলতেই থাকবে!”
তৃধা একদম তার সামনে এসে দাঁড়ায়, ঠোঁটে হালকা তাচ্ছিল্য, “তুই ভাবিস আমি একদিন প্রেমে পড়ে যাব? দুঃখিত, ঠোঁটের নিচে এক বিন্দু প্রেম নেই।”
তা পরে দেখা যাবে প্রেমে পড়িস নাকি বাসর করিস ..! আপাতত
একা গান শুনাও তোহ ডার্লিং
তোমার কোকিল কন্ঠে গান শুনে
কলিজা ঠান্ডা করি
– গান শুনবি , শুরু করি তাহলে
এহেম , এহেম
জলদি শুরু কর বে*বি ।
– ছাইড়া গেলাম মাটির পৃথিবী
ছেলেদের পা*ছা*য় এক কেজি চর্বি
আ আ আ
ছাইড়া গেলাম মাটির পৃথিবী
রিয়ানের পা*ছা*য় এক কেজি চর্বি
কফিতে শেষ চুমুক দিতেই নিয়ে কাশি উঠে যায় রিয়ানে , এইটা কোন ধরনের গান ছিলো ভেবেই বুকে হাত রাখে সে !
থাক থাক আম্মা অনেক হয়েছে,
আপনার এই গান শুনে আশে পাশে যত কাউয়া
I mean কাক একটাও আর এলাকায় থাকবেনা,
আর আমার তো কলিজার সাথে পেছন টাও ঠান্ডা হয়েছে।
এই সব গান কই শিখেছিস তুই ?
তোকে বলতে বাধ্য নই !
তা কেনো বলবি শা*লি আমার পা*ছা*র চর্বি কী তোকে দিয়ে মাপিয়েছি ।যে তুই গান গাইলি …!
বিরবিরিয়ে কথাগুলো বলছিলো রিয়ান । তবে কিছুটা হয়তো কানে এসেছিলো তৃধার রিয়ানের পিঠে জোরে এক থাপ্পর মেরে নাটকীয় স্বরে বলে
আমারে মনে মনে গালাগালি দিচ্ছিস কেন?
তুই বুঝি আজকাল আমার মনে খবর রাখিস বউ ?
খেপে যায় তৃধা হাতে
থাকা কফির মগ ছুড়ে মারতে নেয় রিয়ানের পানে তবে অতি ধুরন্ধর রিয়ান তা বুঝে ছুটেতে নিলে তৃধাও পিছু নেয় তার , দুজনের হৈচৈ আর সরগোলে ছুটে আসে রিধিমা । এগিয়ে গিয়ে থামাতে চায় দুজকে ।
কি করছো টা কি তোমরা দয়া করে থামো !
রিধিমা কে আসতে দেখেই ছুটে রিয়ান লুকিয়ে পড়ে রিধিমা পিছনে ।
রিধী বোন আমার এই ডাইনির হাত থেকে বাঁচা বোন নাহলে আজকেই আমার জানাজা পড়িয়ে ছাড়বে এই মেয়ে ।
রিয়ানের বাচ্চা! রাগি স্বরে কথা বলতে বলতে হাতে মগ ছুড়ে মারে ,তবে তা দিক মিস্টেক করেই গিয়ে পড়ে দরজার সামনে।
মাত্রই দরজায় পা রেখেছিলো আয়ান , খানিকের জন্য বেঁচে গিয়েছে সে ভেবেই বুকের মাঝে এক ফু দেয় , হাতে এক বাটি পপকর্ন, মুখে মুচমুচে শব্দ।
ধীরে ধীরে সোফায় গিয়ে বসে, “শুরু হয়ে গিয়েছে তোদের টম এন্ড জেরি শো!
‘তৃধা অ্যাটাকস’, আর একে ‘রিয়ান দ্য রানার’!”
রিয়ান আর তৃধা তখন একে অপরের পেছনে
আয়ান ঠাণ্ডা মাথায় আরাম করে একটা পপকর্ন মুখে ফেলে, মুচকি হেসে বলে “Netflix লাগে না ভাই, এইটা লাইভ এপিসোড!”
ঘরজুড়ে তখন দাপাদাপি, আর আয়ানের সামনে যেন পূর্ণদৈর্ঘ্য কমেডি সিনেমা!
আয়ানে কথা কানে আসতেই দৌড় থামিয়ে রাগিব চোখে তাকায় তৃধা। হো হো করে হাসছিল আয়ান তৃধা তাকানো এই হাসি থামিয়ে দেয় সে !
রাগে গটগট করে তৃধা বেরিয়ে যায় রুম ছেড়ে, রিয়ান একপাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে আধো হাসি। আয়ান এখনও সোফায় এলিয়ে বসা, হালকা মজার ভাব ধরে।
ঠিক তখনই রিধিমা এসে দাঁড়ায় তার সামনে, দুই চোখ জ্বলছে যেন আগুন। ঠোঁট চেপে রাখা, কিন্তু চোখ দুটো বলছে “Enough is enough!”
আয়ান একটু হকচকিয়ে যায়। “এই… এমন করে তাকাচ্ছো কেন? আমি কিছুই তো…”
রিধিমা ঠান্ডা কণ্ঠে বলে, “তুমি কিছুই করো না, শুধু বসে বসে আগুনে ঘি ঢালো।”
আয়ান গলাটা একটু কেশে নেয়, “আমি তো শুধু মজা করছিলাম… একটু হালকা হাওয়া…”
এরি মাঝে রুমে প্রবেশ করে অপূর্ব হাতে ফোন ,মুখে চিন্তা ছাপ , চোখে
অস্পষ্ট অস্থিরতা।
“এই যে এই যে, অপূর্ব ও হাজির!”
রিয়ানের কথায়.. রিধিমা, আয়ান দুজনেই তাকায় অপূর্বের দিকে মুখে কেমন বিষন্নতা তিনজন একে অপরের মুখে চাহনি দেয়, সকলের নীরবতা ভেঙ্গে রিয়ান বলে
“ভাই, কিছু হয়েছে নাকি?”
ফোন থেকে চোখ তুলে সোফার দিকে এগিয়ে যযায় অপূর্ব ধীর কন্ঠের বলে তেমন “নীলু ফোন ধরছে না। সকাল থেকে ট্রাই করছি। এমন কখনো হয়নি…”
হঠাৎ পুরো রুমে নীরবতা বিস্ময়ে সবাই একে অপরের দিকে তাকায়।
“নীলু? ও কে?”
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৪ (২)
আয়নে উত্তেজিত কন্ঠে হুস আসে অপূর্বে সে যে ভুল জায়গায় বেফাঁস বলে ফেলেছে ভেবেই চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নেয়।আয়ান ও রিয়ান একসাথে দুজনেই উচ্চস্বরে বলে উঠে
ভাই! তুই লুকিয়ে লুকিয়ে পানি খাচ্ছিস, বলিসনি তো এইসব রসগল্প আছে!”
সরি নীলু পাখি”
মাইনকা চিপায় অপূর্ব , নিজেকে সহস্র গালি দিচ্ছে মনে মনে । সকলে মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“পাখি না… ঝড়। কিন্তু আজ ওর কোনো খবর নেই, আর আমার মন ভালো লাগছে না।”