প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৬

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৬
Zannat Xhowdury

হাওয়া থেমে ছিল কয়েক মুহূর্ত। গাছের পাতাগুলো নড়েনি, পাখিরা থেমে ছিল, যেন প্রকৃতি দম নিয়েছিল সহিংসতার পূর্বাভাসে। ঠিক তখনই—
“শুঁইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই…”
একটা তীব্র, কানের পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া শব্দ। যেন একটা সাপ হুড়মুড় করে বেরিয়ে গেল জঙ্গলের বুক চিরে।
“ঠাস!”
একটা তীক্ষ্ণ, ধাতব শব্দ—মাংস আর হাড় ছিঁড়ে ঢুকে গেল গুলি রোজার বাঁ হাতে। সাদা জামার ওপর লাল ফুটে উঠল আচমকা, যেন কেউ রং ছিটিয়ে দিল।
রোজার শরীরটা পিছিয়ে গেল এক ধাক্কায়, হাতে ব্যথার ঝাঁঝ উঠল—চোখে বিস্ময়, কানে তখনো বাজছে সেই উড়ন্ত গুলির সিসকারি।

ভরকে যায় নির্ণয়… একটা মুহূর্তে যেন সবকিছু থেমে যায়। চারপাশে গুলির শব্দ, ঝোপের ফাঁকে শত্রুর ছায়া, কড়া রোদ আর বুনো গন্ধ—সব মিলিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র।
কিন্তু নির্ণয়ের চোখে শুধু একটিই দৃশ্য—রোজার কাতর মুখ।
তার চোখের সামনে দিয়ে লাল রক্ত গড়িয়ে পড়ছে রোজার হাত বেয়ে। আর সেই দৃশ্যটা— কোনো শত্রুর গুলির চেয়ে বেশি জ্বালা ধরিয়ে দেয়।
নির্ণয়ের বুকের ভেতরটা কেমন যেন জ্বলে ওঠে, হঠাৎ করেই। মনে হয় কেউ যেন তার কলিজায় গরম ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে।
শরীর নয়, কেঁপে ওঠে তার অন্তরাত্মা। কী একটা নীরব আর্তনাদ জমে ওঠে গলার ভেতর, কিন্তু বের হয় না।
একটা হাত দিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করে, আরেক হাতে কাঁপতে কাঁপতে স্পর্শ করে রোজার মুখ—
“রোজ আমার পাখি ” ঠিক আছিস তুই
তার গলাটা ভেঙে যায়। শব্দগুলো যেন ছুরি হয়ে বের হয় ঠোঁট ফুঁড়ে। রোজা কিছু বলার আগেই সে ফিসফিসিয়ে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি তোকে রক্ষা করতে এসেছি , তবুও তুই রক্তাক্ত… আমি ব্যর্থ…” জান ,
রোজা শান্ত চোখে নেই ব্যাথা ছাপ , মনে হলো এটা নিত্যদিনের কাহিনী । পকেট থেকে এক রুমাল বের করে পেঁচিয়ে নেয় হাতে ।
আবারো হাতে ন্যায় কাঙ্ক্ষিত জিনিস টি ! চোখে আগুন , বাচ্চাগুলো সেফটি । নিজেকে ‌সামলে আবারো এগোতে‌ থাকে রোজা । তাকে কভার করছে নির্ণয় ,
মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পুরো টিকরুল যেন ঘিরে নিয়েছে কালো পোশাকে আবৃত কতগুলো লোক , ভেতরের এক প্রবীণ যে বাহিরে পালানো সুযোগ নেই। এগিয়ে চলছে রোজা ,
হঠাৎ নিজেকে হাওয়ায় ভাসতে দেখে চমকে যায় সে , ব্যাপার বুঝতে খেকে উঠে সে
কি করছেন টা কি আপনি , নামান আমাকে ?

নিশ্চুপ নির্ণয় , রোজাকে কোলো তুলেই বেড়িয়ে যায় টিকরুল থেকে। হঠাৎ এমন হ‌ওয়াতে ক্ষেপে যায় রোজা ..!
এই আপনি কি পাগল । নামান বলছি !
কে শুনে কার কোথা নিশ্চুপ নির্ণয় নিজে কাজে অনর । এদিকে হাতের ব্যথা জেনো‌ ক্রমশই বেড়ে চলেছে রোজার ।
টিকরুল থেকে বেড়োতেই এক কালো গাড়ি এসে থামে তাদের সাথে , কালো পোশাকে পরিহিত এক গার্ড এসে দরজা খুলে , বেক সিটে রোজাকে বসিয়ে নিজে বসে পড়ে ,
নির্ণয় বসতেই গাড়ি ছাড়ে ড্রাইভার , রোজা দিকে এক পানি বোতল এগিয়ে নির্ণয় তবে ,
-আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে এভাবে তুলে আনার । আপনি জানেন ভেতরে কতো গুলো বাচ্চা বন্দি ..! যেতে দিন আমাকে ..

আচমকাই রোজাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে নির্ণয়
নির্ণয় ভাই দোয়া করো আমাকে যেতে হবে , ওদের বাঁচাতে হবে , না জানি কত মায়ের বুক খালি ….
আউচ..!
ঘাড়ে হাল্কা ব্যথা অনুভব হতেই জ্ঞান হারাতে থাকে রোজা ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে যায় নির্ণয়ের কোলে …!
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে নির্ণয় , কথার মাঝে স্লিপিং ড্রাগের ইনজেকশন পুশ করেছে , এই মূহুর্তে রোজ কে শান্ত চাই তাঁর ।

চোখে আগুন , ক্ষিপ্ত মস্তিষ্ক । বেশ বড় এক ঝড়ের পূর্বাভাস,
ঘুমন্ত রোজা কে কোলে করেই বাগান বাড়ি ফেরে , হাতের রুমাল ভিজে টুপ টুপ রক্ত পড়ছে ।
রিয়ানের ঘর পেড়িয়েই নির্ণয় বিশাল, কারো পায়ের শব্দ কানে আসেতেই বাইরে বেড়িয়ে আসে রিয়ান ‌। রোজা অবস্থায় আতংকিত সে । চোখে মুখে ভয় ।
দ্রুত পথ আটকে দাঁড়ায় নির্ণয়ের । কন্ঠে ব্যাকুলতা , গলায় আতংক , কথাগুলো যে কে আঁটকে দিয়েছে তার ,
ভাই রোজ ..!
কথা বাড়ায় না নির্ণয় ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে ,
কল ফাস্ট ডক্টর রিয়ান ;
অবশ্যই মহিলা ডাক্তার হতে হবে

কথা না বাড়িয়ে দ্রুত নিজের রুমে প্রবেশ করে , রোজা কে বেড়ে শুইয়ে দিয়ে দেয় । নিজের চুল কিছুক্ষণ টেনে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে সে …!
পকেট থেকে ফোন বের করে , পরিচিত এক নম্বরে ডায়েল করে..!
একবার রিং হতেই রিসিভ হয় কলটি ;
-শুইয়ে দে সব জানোয়ার দের ।সব নটির ছেলের লাশ চাই আমি , ধ্বংস করে দেওয়া হোক ,ওই মা*দার*চ* ক্যাসিনো ওর হিসেব নাহয় পরেই নিবো !
কিছু টা থেমে যায় নির্ণয় , কন্ঠে খাদে নামায় ইমাম বাদে সবগুলো রে শুইয়ে দে আর ওরে চেয়ারের সাথে বেঁধে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ফোন কর!

কল ডিসকানেক্ট করেই ফোন আছাড় মারে চোখে জলন্ত অগ্নিশিখা আর রাগের যে রূপ ফুটে উঠেছিল, তা ছিল অমানবিক, ভয়ানক, যেন এক তপ্ত আগ্নেয়গিরির নিঃশব্দ বিস্ফোরণ।
তার চোখদুটো লাল, ঠিক যেন উত্তপ্ত কয়লার মতো জ্বলছিল। চোখের পাতা কাঁপছিলো, কিন্তু তাতে কোনো দুর্বলতা ছিল না—ছিলো অব্যক্ত প্রতিশোধের ভাষা। চোখের কোণ টানটান , যেন রক্ত জমে আছে চক্ষুপল্লবে। তাকানোর ভঙ্গি এমন, যেন দৃষ্টিতেই কেউ ছাই হয়ে যাবে।
নাকের পাশ ফেঁপে উঠছিল প্রতি নিঃশ্বাসে। চোয়াল আঁটসাঁট, দাঁত কিড়মিড় করছে। মুখের এক কোণে যেন বিদ্রুপ লেগে আছে, আরেক কোণে বেদনা। গলার শিরগুলো ফুলে উঠেছে রক্তচাপের তীব্রতায়।
তার শরীর নিঃশব্দ, কিন্তু সেই নীরবতা ছিল ভয়াবহ। যেন ঝড়ের ঠিক আগের মুহূর্ত, যখন বাতাসও নিঃশ্বাস নিতে ভয় পায়।

বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে যায় গরম পানি লাগবে ,
হ্যাঁ গুলি বের করতে গরম পানি লাগবে , কিচেনে গিয়ে চুলায় গরম পানি বসিয়ে দে , ইতিমধ্যে হঠাৎ হৈচৈ কানে আসে নির্ণয়ে কিচেন থেকে উঁকি দিতেই চোখে পড়ে এক মহিলা ডাক্তার কে কাধে করে ঢুকছে রিয়ান । রাগে মহিলা বিভিন্ন রকম ভাষায় বকছে তাকে, তাতেও বিয়ানে কোনো নরচর নেই । কিচেন সামনের ফাকা জায়গায় নামতেই চুপ হয়ে যায় ডাক্তারের মুখ নির্ণয়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে সে , শুষ্ক ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নেয় ডাক্তার
ওই ডাক্তার আমার ব‌উ আছে , এভাবে নজর দিয়ে আমার পাতলা পায়খানা ধরাবেন না !

থতমত খায় ডাক্তার মেয়েটি , এতক্ষণে কাহিনী যেন মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো তার ক্ষিপ্ত চোখে তাকায় রিয়ানের দিকে
আমাকে এখানে ধরে আনার মানে কি ?
-ডাক্তার কে কেনো আনা হয় রোগি দেখতে , আপনাকেও তাই ?
এক কথায় মনের ভাব প্রকাশ করছে রিয়ান ! এতো কথায় যেন আবারো ক্ষিপ্ত হয় নির্ণয়ের মেজাজ ।
এই ডাক্তার এই , আমার বউয়ের কিছু হলে তোকে কুত্তা দিয়ে বাসর করাবো শালি ,
নির্ণয়ের চোখে তাকাতে হার্টবিট থেমে যায় মেয়েটির । কি ভয়ংকর সেই চোখ জোড়া । জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় ডাক্তার,
বেশি কথা না বলে জলদি আমার রোজের ট্রিটমেন্ট করবি, কথার নড়চড় আমি একদম মানবো না
রো রো গি কো থা য় ?
আসুন !

শান্ত কন্ঠে উত্তর করে রিয়ান , ডাক্তার কে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় নির্ণয়ের ঘরে যেখানে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে রয়েছে রোজা ..!
ঘরের ভেতর নিঃশব্দ উত্তেজনা। —এই ঘরের মধ্যে শুধু নিঃশ্বাস আর রক্তের গন্ধ।
রোজা বিছানায় নিথর হয়ে শুয়ে আছে। শরীরটা নিস্তেজ, মুখ ফ্যাকাশে, ঠোঁটের কোণে একফোঁটা শুকনো রক্ত। হাতের পেঁচানো রুমাল রক্তে ভেজা , গুলির ক্ষত থেকে রক্ত এখনো গড়িয়ে পড়ছে।
ডাক্তার এগিয়ে এলেন ধীরে ধীরে। তাঁর হাতে টুলবক্সের মতো ছোট্ট অস্ত্রোপচার কিট। “অচেতন আছে… কিন্তু পালস ধীরে চলেছে। আর দেরি করা যাবে না,” তিনি নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বললেন।
গরম পানি ,

কথা মুখ থেকে বেরোনোর আগেই দরজা দিয়ে গরম পানি হাতে ঢুকে নির্ণয় রোজা বেডে কাছে এসে দাড়িয়ে , এন্টিসেপটিক ঢালে গরম পানিতে ।
বেড টেবিল উপর রাখে গরম পানির বাটি টি । বিছানায় পাশেই এক চেয়ার টেনে বসে ডাক্তার নিখুঁত ডাঃ
ভাবে ক্ষতিয়ে দেখে রোজার হাতের ক্ষত।
গুলিটা ঢুকেছে কনুইয়ের একটু ওপরে, আর কোনো প্রস্থানপথ নেই—মানে গুলি ভিতরে আটকে আছে।
ডাক্তারের কপাল দিয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু হাত কাঁপছে না। তিনি স্যালাইন সেট করলেন এক পাশে, অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করলেন। তারপর চামড়ায় ছোট্ট চিরা কাটলেন।
চুপচাপ সময় গড়িয়ে চলেছে—

ডাক্তার এবার ফরসেপ দিয়ে ধীরে ধীরে মাংসের ভেতর খুঁজছেন গুলিটা। আচমকা এক ফোঁটা গাঢ় রক্ত ছিটকে উঠল—ভেতরের শিরা ছুঁয়ে গেছেন কি?
“আহ, পাওয়া গেছে…”—তিনি ফিসফিস করে বললেন। তারপর গভীর মনোযোগে ধরা ফরসেপের ফাঁকে দেখা গেল সোনালি রঙের বিকৃত গুলির মাথা।
শান্ত চোখে তাকিয়ে পুরো ঘটনাটা দেখছে নির্ণয় রিয়ান । দুজনের চোখে নেই কোনো ক্লান্তি মনে শুধু হারানো ভয় । প্রিয় জন হারানোর ভয় । রিয়ানের কপাল বেয়ে চুয়ে পড়ছে ঘাম.!
দুজন মানুষের কলিজাই যেন বিছানায় অচেতন । তবে ছেলেদের মনে অবস্থা বোঝা দায় ।
হঠাৎ চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় রিয়ান,
একটা টান। রক্ত। তারপর নিঃশব্দ।

ডাক্তার গুলি তুলে রাখলেন ছোট্ট স্টিলের ট্রেতে। তারপর চুপচাপ রোজার নাড়ি পরীক্ষা করলেন।
ধীরে ধীরে রোজার বুক উঠছে… নামছে। জ্যোৎস্নার মতো নিঃশ্বাস… ক্ষীণ, কিন্তু জীবনের লক্ষণ।
ডাক্তার মুখে হাত চাপা দিলেন—না চাপা কান্না না হাসি, বোঝা গেল না।
এগিয়ে এলো নির্ণয়ের ভয়ে তটস্থ হয়ে যায় ডাক্তার ,
নাউ সি ইজ ওকে !
একটা বাক্য পুরো ঘর , সাথে দুটো মানুষের বুক ঠান্ডা করতেই যথেষ্ট । দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিয়ান । এগিয়ে আসে বিছানার কাছে স্যালাইন লাগানো রোজার হাতে ।
সাদা পাতায় কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে , এগিয়ে দেয় রিয়ানের হাতে ।
আজ তাহলে আসি, মিস্টার চৌধুরী !

নিশ্চুপ নির্ণয় তার দৃষ্টি স্থির রোজার দিকে , অপমানিত বোধ করে ডাক্তার মেয়েটি , পানসে হয়ে যায় তার মুখ । ব্যাপারটা খেয়াল হতেই পরিস্থিতি সামলে এগিয়ে আসে রিয়ান।
চলুন আমি এগিয়ে দিচ্ছি !

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৫

কথা বড়ায় না মেয়েটি তবে যাওয়ার আগে প‌ই প‌ই করে বলে দেয় জ্ঞান ফিরলে কিছু খাইয়ে ঔষধ খাওয়াতে ।
রিয়ান ডাক্তার দুজন বেড়োতেই রোজা পাশে ধপ করে বসে নির্ণয় । মুখটা ছোট মোটো লাগছে রোজা , শরীরে অনেক ব্লাড লস হয়েছে , ছোট মোট মুখের পানে তাকিয়ে বুক ধক করে উঠে তার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে দুফোঁটা পানি ,

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৬ (২)