প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৭ (২)
Zannat Xhowdury
ভোরের দিকে নির্ণয়ের বাগান বাড়ি ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছে সকলে।
দুটো গাড়ি ছিল, প্রথমটায় নির্ণয় আর রোজা । তাদের পরেই ঠিক অপর গাড়িটি সেখানে চমলোক্ক গ্যাং, সকলে উঠেছে
যদিও রিয়ান নির্ণয়ের গাড়িতে উঠতে চেয়েছিলো, কিন্তু নির্ণয় গোপালের কাটা হিসাবে রিয়ানকে একদম চায় নি ।
বেচারা বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে গাড়ির পিছন ছিটে বসে । একপাশে রিধিমা অপর পাশে তৃধা দুটো মেয়ের মাঝখানে চিপকে চিমক্যন্ডি হয়ে যাচ্ছে সে । এসির মধ্যে শরীর ঘামছে , গাড়িতে
গাড়ি চলছে তো চলছেই।
একটানা পথ, গ্রামের জঙ্গল পেরিয়ে মেইড রোডে এসেছে এই তো মাত্র কয়েক মিনিট আগে । শান্ত পরিবেশ পেরিয়ে শহূরে পরিবেশে ভিরে আবারো নিজেকে বাধতে হবে ।
জানালার কাঁচে হালকা কাচে রোদ পড়ছে , গাড়ির মাঝে এক রাশ বিরক্তি ……
সবচেয়ে অবাক কাণ্ড — আজ তৃধা আর রিয়ান পাশাপাশি বসে।
ড্রাইভিং সিটে বসা আয়ান বার বার আড়চোখে দেখছে । মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিত সুন্দরী রমনী কে । তবে রিধিমা শান্ত চোখ কাঁচের বাহিরের সবুজ পর্যবেক্ষণ করতেই ব্যাস্ত । সময় বয়ে চলছে ….
অসহ্য এই রোদ আর বেলা যেন সমান তালে দৌড়ে চলছে । অপূর্ব বেচারা ক্লান্ত চোখে অনেক আগেই ঘুমের দেশে স্বপ্ন সাজাতে শুরু করে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দিনাজপুর শহরের শেষপ্রান্ত পেরিয়ে গাড়িটা যখন ঢাকার উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলো , মফস্বলের ধুলো ছেড়ে পাকা রাস্তার ছোঁয়া পেল, তখন রোদের ঝিলিক আর কাচঘেরা জানালা যেন এক অদ্ভুত ক্লান্তি বইয়ে আনল। গাড়ির ভেতর সবাই চুপচাপ। কেউ জানালার বাইরে তাকিয়ে, কেউ আবার আধো ঘুমে ঢলে পড়েছে। কিন্তু গানটা…
গাড়ির স্টেরিওতে চলতে থাকা গানের সুর— “চলো না ঘরে ফিরে যাই…” —যেন কারও মনেই সুর হয়ে বাজছে না।
বরং বিরক্তি ধরিয়ে দিচ্ছে একঘেয়েমি আর ভারাক্রান্ত মনে।
তৃধার কপালের ভাঁজ আরও গভীর হয়। —”এই গানটা কি একটু বন্ধ করা যায় না?” তার গলা ঠান্ডা, কিন্তু তাতে লুকানো নেই একধরনের অস্থিরতা।
চুপচাপ ড্রাইভিং করতে থাকা আয়ান একবার তাকিয়ে নীরবে স্টেরিও বন্ধ করে দেয়। মুহূর্তেই যেন গাড়ির ভেতর নিস্তব্ধতার এক চাপা শব্দ ঘুরে বেড়ায়।
সামনে ঢাকার রাস্তা, পেছনে দিনাজপুর ।
কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়েই আচমকা থেমে যায় চলতে থাকা গাড়িগুলো। যেন হঠাৎই রাস্তার গায়ে জমাট বাধে এক অদৃশ্য দেয়াল। দুটো গাড়িই জ্যামে আটকে পড়ে, তবে নির্ণয়ের গাড়িটা ছিল খানিকটা সামনের দিকে, অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায়। ফলে ওর গাড়ির সামনে ধীরে ধীরে হলেও চলাচল সম্ভব।
কিন্তু রিয়ানদের গাড়িটা— সেটা যেন ঢুকে পড়েছে এক নিঃশব্দ কুয়াশার ফাঁদে। চারপাশে কেবল গাড়ির হর্ণ, ক্লান্ত মুখ, আর ধুলোর গন্ধে ভরা এই ধুঁয়াটে বিকেল। একটার গায়ে ঠেকিয়ে দাঁড়ানো আরেকটা, মাঝখানে সিএনজি, মোটরসাইকেল, ভ্যান—সবকিছু মিলিয়ে যেন এক দমবন্ধ আঁধার।
আয়ান গাড়ির জানালার কাঁচটা খানিকটা নামিয়ে দেয়। হঠাৎই বাইরের শব্দগুলো যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর। পাশের গাড়িতে একটা শিশু কাঁদছে, রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একজন ভিক্ষুক গাড়ির কাচে টোকা দিচ্ছে, দূরে কোথাও হকারের গলায় ছাপা কাপড়র ডাক
জ্যামের দমবন্ধ কষে ধরা পড়েছে গাড়িটা চারপাশে ঝলসে ওঠা ধাতব গন্ধ, আর কাঁচের ভিতর জমে ওঠা গুমোট বাতাসে যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
রিয়ান কাচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। একে তো তীব্র জ্যাম, তার উপর সে বসে আছে ঠিক দুটো মেয়ের মাঝখানে—বাম পাশে তৃধা ডান পাশে রিধিমা।
দুজনেই চুপ, কিন্তু নিঃশব্দের মধ্যেও অস্বস্তির হাওয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। রিধিমা জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে, চোখে একরকম বিরক্তি।তৃধা ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে বারবার ফোনটা বের করে দেখছে, যেন তাতেও কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পায়।
রিয়ান চোখ বন্ধ করে মাথাটা সিটের ওপরে ঠেকায়। মনে হচ্ছে গাড়ির ভেতরের অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছে। ওর কাঁধ ছুঁয়ে আছে দুজনের, কিন্তু তাতে কোনো উত্তাপ নেই—শুধু ভারী, অস্বস্তিকর একটা অস্তিত্ব।
এই নীরবতা যেন কথা বলছে।
না বলা কথা, চাপা রাগ, চোরাস্রোতের মতো কোন টানাপোড়েন।
নীরবতা ভেঙে, চোখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে কাঠখোট্টা গলায় তৃধা বলে উঠল, —”একে তো এই অসহ্য জ্যাম, তার ওপর পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে! মানুষ কি আর পাথর? কিছু খেতে না পেলে আমি কিন্তু মরে যাব, বলে দিলাম!”
তার গলায় এক ধরনের কড়া রাগ, আবার ভেতরে কোথাও যেন ক্লান্তির ছোঁয়া। সিটে পেছন দিকে হেলে পড়ে সে মুখ ফিরিয়ে জানালার বাইরে তাকায়, মুখে যেন বোঝা যাচ্ছে—সব কিছুর জন্য রিয়ানই দায়ী।
তৃধা এক নাগাড়ে ধাক্কাতে থাকে চোখ বন্ধ করে বসে থাকা রিয়ানকে। প্রথমে কাঁধে, তারপর বুকের কাছে—একটা রাগের ছন্দেই যেন।
—”এই হারামখোর… এই শালা… উঠ! এখনই উঠ!
তার কণ্ঠস্বর গলা ফাটিয়ে উঠছে না ঠিক, কিন্তু এতটাই সোজাসাপ্টা, কাঁটার মতো খোঁচা দিচ্ছে গাড়ির নিস্তব্ধ ভেতরটায়।
রিয়ান নড়ছে না। যেন ঘুমিয়ে নেই, বরং নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
তৃধা এবার আর সামলাতে পারে না হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সজোরে ঘুসি মারে রিয়ানের হাঁটুতে।
মরেছিস নাকি বা* ল?
ধপ করে রিয়ানের চোখ খোলে। একটুও ভয় বা চমক নেই , চোখে
শুধু বিরক্তি। সে ধীরে মাথা ঘোরায়, তৃধার দিকে তাকায়, চোখে তীব্র কণ্ঠহীন প্রশ্ন
কি হয়েছে ?
জব্বর খিদে পেয়েছে ভাই !
—তুই চাইলে আমাকে টেস্ট করতে পারিস ..!!
OH really;
Yes honey , please Test me, Eat me,
And at last kill me ..
এই চু*থিয়্যা আমি খিদে মরে যাচ্ছি তুমি শা* লা রোমান্স নিবেদন করছো । তোমার রোমান্সে থোবড়ায় লাথি …
রিধিমা মুখ টিপে হেসে ফেলে, তবে ঠোঁটের কোণে সেই হাসিটা যেন বিষাদের ধারে খচিত। রিয়ান তৃধার দিকে না তাকিয়েই বলে,
—এক বেলা না খেলে কেউ মরে না নিশ্চয়ই
আমি মরবো আমার এখনি খেতে হবে …!! জলদি খাবার চাই আমার !!
রিধিমা এবার যেন আর চুপ থাকতে পারে না। অস্থির গলায় বলে উঠল,
—”খাবে কী করে বলো? সব খাবার তো নীড় ভাইয়ার গাড়িতে! আর এই জ্যামে তো ওদের গাড়িটা একেবারে চোখের বাইরে চলে গেছে।”
তার গলায় উদ্বেগ,কন্ঠে একটা চাপা অসহায়তা মিশে আছে। গরমে ভেজা চুল কপালের গায়ে লেগে আছে, চোখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।
তৃধা মুখ ঘুরিয়ে তেড়ে ওঠে,
—”তাহলে কী করবো এখন? গাড়ি উড়িয়ে চলে যাব নাকি? সকাল থেকেই এই গাধাটার প্ল্যানিং, আর এখন দেখ কী অবস্থা!”
রিয়ান ঠোঁট চেপে বসে থাকে। মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। শুধু জানালার বাইরের রাস্তার এক ফালি গাছের ডালিতে পাখি বসেছে, সেটার দিকে তাকিয়ে থাকে নির্বাকভাবে। যেন এই ঝগড়া, ক্লান্তি , সবকিছুর বাইরে সে।
রিধিমা এবার হালকা গলায় বলে,
—”এক কাজ করা যায়… দেখো আশেপাশে দোকান আছে যদি কিছু পাওয়া যায়, তুমি একটু দেখে এসো
তৃধা রেগে বলে যায় , নাকের পাটি হালকা লাল হতে থাকে । তেজি কন্ঠে বলে
—”আমি যাবো? এই রোদের মধ্যে আমি খাবার আনতে নামবো, আর ও বসে বসে হিমশীতল ভাব মারবে?
না গেলে , তোর এই টেপ রেকর্ডার বন্ধ কর । আমি নামছি না …. একদম না এই ধুলো বালি , গন্ধের মাঝে
তোরা ঝামেলা বাদ দিয়ে নীড় কে কল লাগা তাই তো হয়
আয়ানের কথার কোন টেনে তৃধা এবার রাগ আর ক্লান্তি গিলে একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়ে বলে ওঠে,
— “একদম ঠিক , এ্যানসিরে একটু কল লাগা তো। দেখি ও গাড়ি নিয়ে কতদূর গেছে।”
গলার স্বরে একরকম হালকা অনুরোধের ছাপ, কিন্তু চোখে-মুখে সেই পুরনো রাগ এখনো ঝলসে আছে। ভিতরের গরম হাওয়া, জ্যামের দমবন্ধ পরিস্থিতি আর ক্ষুধার তাড়না—সব মিলে যেন মুহূর্তটা এক বিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
রিয়ান মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে ধীরেসুস্থে স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকল এক মুহূর্ত। তারপর নীড়ের নামটায় আঙুল ঠেকাল। চারপাশে গাড়ির হর্ন, পাশের রাস্তায় বিক্রেতার হাঁকডাক, পেছনের শিশুর কান্না—সবকিছু থেমে গেল যেন এই ফোনকলের অপেক্ষায়।
স্ক্রিনে লেখা উঠল: “Calling… Bhai”
রিধিমা একপলক রিয়ানের দিকে তাকাল। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।
তৃধা এবার যেন আর ধৈর্য রাখতে পারছে না। নিজের ঠোঁট কামড়ে বলল,
— “এ্যানসি যদি ফোন না ধরেন, আমি সত্যি বলছি, নেমে হেঁটে চলে যাব। পেছনে যেটুকু রাস্তা গেছে, তাতেই কোনো খাবার পেয়ে যাব—তাতে অন্তত কারও মুখ না দেখতে হয়!”
রিয়ান শান্ত গলায় বলে,
— “ধরবে। একটু ধৈর্য ধর।”
ঠিক তখনই ফোনটা রিং থেমে গেল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল — Bhai: Incoming…”
রিয়ান একটুও না চমকে কলটা ধরল, হেঁয়ালি কন্ঠে বলে
কী করছো ব্রো ?
ওপাশ থেকে ভেসে এলো নীড়ের গলা—চিরচেনা ঢং, কিন্তু তার পরের কথাটা এমন যে মুহূর্তেই গাড়ির গরম হাওয়ার চেয়েও গা জ্বালিয়ে দেয়
তোর বোনের সাথে আরেক রাউন্ডের প্লান !
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রিয়ান।
কোন প্রশ্নের কি উত্তর, বুঝে উঠতে পারে না। মুহূর্তে যেন বুকের ভেতর কিছু একটায় ধাক্কা লাগে। মাথায় ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে, চোখের সামনে ঝাপসা। দুপাশ থেকে তৃধা আর রিধিমা তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে, যেন ঠিক তখনি কিছু আঁচ করতে চাইছে।
রিয়ান চুপ করে থাকে। কল কানে ধরেই, ঠোঁটদুটো কেঁপে ওঠে একরকম বিস্ময়ে, তারপর জোরে না হেসে গলার নিচে জমে থাকা একরাশ রাগ আর বিরক্তি নিয়ে বলে ,
—”কি বললে ভাই?”
যা শুনেছিস তাই ..!
খেকে ওঠে রিয়ান
আমার বোন রে একটু রেস্ট নিতে দে ভাই বেচারি তোর চাপে কয়দিন পর চ্যাপ্টা হয়ে।
চ্যাপ্টা হলেও আমার কাছেই থাকতে হবে , সুন্দর হলেও আমারি। এসব নিয়ে তোর না ভাবলেও চলবে ।
তুই শালা, শালার মতো থাকবি ।
ফাস্ট অফ অল আমি তোমার শালা নই , এন্ড সেকেন্ডি আমার বোনের কিছু হলে , তোমাকে প্রস্তাতে হবে ।
তখন মেশিন বাবাজি ধরে কেঁদেও কুল পাবেনা ।
বাচ্চা মেয়ে টারে এইভাবে টর্চার ধর্মে সইবেনা বলে দিলাম।
কে বাচ্চা ?
কে আবার রোজ ।
দুজনের কথপোকথনে বিরক্ত তৃধা রিধিমা । ফোনে এক পাশে রিয়ানের শুনতে পেলেও নির্ণয়ের কথা বিন্দু পরিমাণ কানে আসে না তাদেরর
একবার জানালার পাশে তো একবার রিয়ান কে দেখছে দুজনে।।
চোখে বিরক্তি দুজনের।
তৃধা কপাল কুঁচকে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন বাইরের জ্যামটাও এখন তার মনের মধ্যে গেড়ে বসেছে।
রিধিমা ঠোঁট চেপে ধরে, মুখটা শক্ত। রিয়ান আর নীড়ের কথোপকথন তাদের কাছে এখন কেবল বিরক্তিকর নয়, অপ্রয়োজনীয়।
গাড়ির ভেতরের বাতাস ভারী।
একদিকে দুই ছেলের কথার ঠোকাঠুকি, অন্যদিকে দুটো মেয়ের জমে থাকা বিরক্তি—এ যেন এক গাড়ির ভিতরেই দুটো আলাদা যুদ্ধ।
আয়ান সাইড মিররে নিজের মুখ দেখে চুলে ব্রাশ চালিয়ে যাচ্ছে, যেন এসব ঝামেলা তার ধারে-কাছে নেই।
তার চোখে মুখে শুধু নিজের স্টাইল নিয়ে সন্তুষ্টির ছায়া।
বাচ্চা মেয়ে “সিরিয়াসলি”
২ ইঞ্চি হয়ে অনায়াসে ৯ ইঞ্চির লোড সামলে নিলো।
তাকে বাচ্চা সাজাতে আসলেই স্টেম বাকা করে দিবো
” সমুন্দি শালা ”
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৭
খট করে ফোনের লাইন কেটে দেয় না রিয়ান । দু হাতে নিজের চেপে ধরে কান ।
এই ছেলে একদিন আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে দিবে ।