প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৩ (৩)

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৩ (৩)
Zannat Xhowdury

হাসপাতালের থাকা কত‌ই না বিরক্তি। এসব ভেবেই হাসফাস করছে রোজা। সময় কেটেছে তিন দিন , আজ রোজার রিলিজ দেওয়া হবে। যদিও ডাক্তার বলেছেন আরো ২দিন থাকতে হবে, রোজার যেন ঘোর আপত্তি তাতে , সে থাকতে চায় না। একটু ও চায় না থাকতে। পুরো সকাল নির্ণয় কে বুঝিয়ে ফাইনালি রাজি করতে পেরেছে সে। তবুও দেখুন মহারাজের কোনো খবর নেই ,

হালকা রাগ করছে রোজা , গাল ফুলিয়ে বেডে অযত্নে পড়ে ফোনটি হাত নিয়ে ফেসবুকে ঢোকে সে। অনেক নোটিফিকেশন জমা হয়েছে। কৌতুহলী না হয়েও নোটিফিকেশন চেক করতে যায় সে । তবে হঠাৎ তিন দিন আগের আসা এক নোটিফিকেশনে চোখ আঁটকে যায় তার । তা তাতে যেন মুগ্ধ রোজা
নীড় চৌধুরীর গট মেরিড ! নোটিফিকেশনটি যেন এইভাবেই লেখা রোজা ঢোকে নীড়ের আইডিতে। প্রোফাইলে পিকটা মাস্ক পড়া হলেও পুরো প্রোফাইলে জুড়ে যেন হাজারো পিক নির্ণয়ের। রোজা মুসকি হাসে । কালো এক ডেনিম জ্যাকেট পড়া ছবিতে ক্লিক করতেই মূহুর্তে বড় হয়ে যায় ছবি। রোজার হাতে থাকা ফোনটা ঠিক ঠোঁটে কাছে এনে টুক করে এক চুমু খায় ছবিতে। সাথে সাথে ঠোঁট থেকে নামিয়ে নেয় ফোনটি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইসস কি লজ্জা ! এই অসভ্য , নির্লজ্জ লোকটা নাকি আজ রোজার স্বামী। কত‌ই না চেয়েছে মানুষটিকে ,
এসবের মাঝেই হঠাৎ মনে পড়ে যায় পুরনো কিছু কথা
সময়টা প্রায় মধ্যরাত , ঘুমের মাঝে শরীরে ভীষণ ব্যাথা অনুভব করছে রোজা। গায়ে হালকা জোড় , গুলি লাগা ব্যথাতুর হাত, আরো তীব্র ব্যাথায় কনকন করছে রোজার। এদিকে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাচ্চাদের মতো জড়িয়ে রেখেছে নির্ণয় । ঘুমন্ত পুরুষটি যেন ঠিক মায়াবী রাজকুমার।
“আয় হায় নজর না লাগে কারো!
রোজা কিছুটা নড়ে ধীরে ধীরে উঠতে নেয় বিছানা ছেড়ে । তবে, হঠাৎ কিছুটা নড়ে ওঠে নির্ণয়। হালকা কিছুটা নড়েই হাত রাখে রোজার গায়ে , ঠিক যেন বুকের খাচে ।হতভম্ব রোজা, কি করবে কিছুই যেন বুঝতে পারে না। এই মূহুর্তে, ওয়াস রুমে যাওয়ার ভীষণ প্রয়োজন তার।

নির্ণয় ভাই !
ও নির্ণয় ভাই !
হালকা নড়ে ওঠে নির্ণয় , নাক ঘষতে থাকে রোজার বাহুতে। রোজা মুসকি হাসে। এত গম্ভীর লোকটা ঠিক কতটা বাচ্চা সুলভ।
নির্ণয় ভাই সরুন না ।
সরে না নির্ণয় বিন্দু পরিমাণ নড়চড় নেই তার। এইদিকে রোজার ইমার্জেন্সি যেতে হবে তাকে। উপায়ান্তর না পেয়েই চেঁচিয়ে ওঠে রোজা।
নির্ণয় ভাইইইইইইইইইইইইই
ধরফরিয়ে চমকে ওঠে বসে নির্ণয় কি হয়ছে বুঝতে আশেপাশে তাকায় সে , রোজার ভীষণ ইমার্জেন্সি, কোনোমতে বিছানা ছেড়ে উঠে দৌড় দেয় ওয়াস রুমে।
ঘুম ঘুম ভাব কেটে উঠতেই পুরো বিছানা জুড়ে রোজাকে খুজতে থাকে নির্ণয়।নাহ পুরো ঘরে কোথাও নে মেয়েটা। মাঝ রাতেই হাক ছেড়ে ডাকতে থাকে নির্ণয় …

রোজ …
রোজ
উফফফ এই মেয়েটা ! ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তি , উঠে গিয়ে ঠিক ওয়াস রুমের দরজর কাছে দাড়ায় সে। বেশ জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাকে দরজা পাশের
রোজ বেড়িয়ে আয় জলদি !
অপর পাশের কোনো সাড়া আসেনা। কোনো প্রকার উত্তর করে না
রোজা।
উফফ মহা মুশকিল তো। এই মেয়েকি বয়ড়া হয়েছে নাকি ?
রোজ
বারবার ডেকে যখন লাভ হচ্ছে না দেখে , যেই নির্ণয় দরজা ধাক্কাতে উদয় হবে ঠিক তখনি , খট করে খুলে দরজা।
হয়েছে টা কি শুনি পালিয়ে তো যাইনি। নাকি হারিয়ে গেছি ? এভাবে ষাঁড়ের মত চেঁচিয়ে, ঘর মাথায় তুলে নৃত্য করার মানে কি ?
কোথায় গিয়েছিলি ?
বাচ্চা পয়দা করতে ….

কথাগুলো বলতে বলতে বিছানায় এসে বসে রোজা। বেড সাইড টেবিলে থাকা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে পুরো পানি এক নিঃশ্বাসে শেষ করে সে
রেডিমেড বাচ্চার বাবা বানিয়ে এখন বাচ্চা পয়দা করার কি প্রয়োজন।
হাতে থাকা পানি গ্লাস বেড সাইডে রেখেই নির্ণয় মুখ পানে তাকায় রোজা। নির্ণয় শান্ত ভঙ্গিতে দেখে রোজাকে
আমার কিছু প্রয়োজনীয় কথা ছিলো আপনার সাথে ।
হুঁ শুনছি ,
সোফার দিকে এগোতে এগোতে উত্তর করে নির্ণয়। টি টেবিলের উপর থেকে হাতে তুলে নেয় সিগারেটেরের প্যাকেট।

প্যাকেট ওপেন করে ঠোঁটের কোনে এক সিগারেট রেখেই আশেপাশে লাইটার খুঁজতে ব্যস্ত হয় সে।
এদিকে লাইটার হাতে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে রোজা। নির্ণয়ের সামনে এসেই তার দিকে এগিয়ে দেয় লাইটার।
নির্ণয় হাত বাড়িয়ে ওটা নিয়ে সহসাই আগুন ধরায় সিগারেটে।
মুখ ভর্তি ধোঁয়া টেনে, ছুড়ে দেয় ঠিক রোজার মুখ বরাবর।
কি বলবি ।

ব্যাথা হাতে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে নির্ণয়ের ঠিক পাশে বসে রোজা। নির্ণয় ডান হাতে বুকে আগলে নেয় রোজাকে ,
আমি ভাবছি যাওয়ার আগে পাপ্পু কে এখানকার এক হোস্টেল দিয়ে যাই।
নির্ণয় ভ্রু কুঁচকে তাকায় রোজার দিকে হয়তো রোজার মন বুঝতে চাইছে।
প্রয়োজন নেই, সাথে নিয়ে চল। ওকে পালার মতো সক্ষমতা চৌধুরী বংশের রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা নির্ণয় চৌধুরীর আছে,
ব্যপারটা এমন নয় , আমার নিজস্ব কিছু সমস্যায় তাকে দূরে রাখতে চাইছি , অনিশ্চিত জীবনে না হয় তাকে বিপদের নাই ফেলি। আপনি যোগাযোগ করুন ওকে হোস্টেল রাখার ব্যবস্থা করুন। ওর সম্পুর্ন দায়িত্ব আমার।
বাহ টাকার গরম দেখাচ্ছিস ! দ্যা গ্রেট নির্ণয় চৌধুরী কি ফকির নাকি।
ধুর সরুন তোহ।

আচ্ছা হয়েছে হয়েছে ওর কাজ না হয় হলো। আপাতত আমার কাজটা একট..
বাকি কথা বলার আগেই নির্ণয় নাক ডুবাতে চায় রোজা, ব্রাউন কালার চুল গুলোতে। তবে তার আগেই যেন ছিটকে সরে যায় রোজা
একদম নয় , এই দেখুন , দেখুন নাহ! আমার ভীষণ জ্বর এসেছে আমি ভীষণ অসুস্থ। দূরে যান তো । আজ ব‌উ না বলে যত্ন করছে না , তাই না। পুরুষ মানুষ বলতেই এমন চাই চাই, খাই খাই।
তা তো অবশ্যই , পেটের ক্ষুধা থেকে মনের ক্ষুধা বড় ক্ষুধা ,সুইটহার্ট। তাই বাঁচতে হলে খেতে হবে।
ফা* ক ।
নির্ণয় মুসকি হাসে। ঠোঁট কামড়ে ধরে সে,আবারো হালকা ঝুকে আসে রোজার মুখের দিকে
ইয়েস বেবি , আই ফা* ক ইউ।
দূরে যান ।

হো হো করে হেসে ওঠে নির্ণয়। আবারো বুকে টেনে নেয় রোজাকে ,
রোজা আলতো করে মাথা তার বুকের মাঝে , আমায় ভালোবাসেন নির্ণয় ভাই।
উহু একদম নয়।
তবে যে আমাকে ছুঁয়েছেন ?
ভালোবাসার ব্যাখ্যা আজ নয় , সময়ের সাথেই নাহয় দেওয়া যাবে, অপেক্ষায় থাক। সেদিন নাহয় এই নির্ণয় চৌধুরীকে তোর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
ভাবনার মাঝেই মুসকি হাসে রোজা । আজ সে সফল , নির্ণয় চৌধুরী সম্পূর্ণ তার , এই মানুষটি সম্পূর্ণ তার। হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনে টুং করে এক মেসেজের শব্দ ভেসে আসে।
অচেনা এক নাম্বার …..
রোজা নাম্বারে ক্লিক করতেই নিয়ে যায় মেসেজ অপশনে …
তোমার জানটা ঠিক ক‌ই মাছের মতো , এতো বড় এক এক্সিডেন্টেও ঠিক বেঁচে ওঠেছো। পরবর্তী কিছু জন্য অপেক্ষা কর তোমার ধ্বংস খুব শিঘ্রই…
মেসেজ পড়ে ভ্রু কুঁচকে নেয় রোজা। কপালে জেগে ওঠে চিন্তার ভাজ, দ্রুত হাত চালিয়ে মেসেজ লেখে সে ..
কে আপনি ?

দুই মিনিট পর আবারো মেসেজ আসে এক‌ই নাম্বারে ..
তোমার মৃত্যু , তোমার ধ্বংস , তোমার প্রাণনাশের চাবি কাঠি।
হঠাৎ দরজায় কারো পায়ের শব্দ। দ্রুত হাতে ফোন হাত থেকে নামিয়ে বিছানায় রাখে রোজা। দরজার দিকে তাকাতেই চোখ পড়ে‌। কালো এক ফুল স্লিভ টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে এগিয়ে আসছে নির্ণয় হাতে বিভিন্ন রকমের খাবার। রোজা গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকায় ।
নির্ণয় ঘরে ঢুকতেই এক এক করে ঘরে ঢুকে পড়ে আয়ান , অপূর্ব , রিধিমা‌।

নির্ণয় খাবার হাতে এগিয়ে এসে দাঁড়ায় রোজার পাশে কোন কথা না বলেই প্লেটে খাবার বাড়তে শুরু করে সে।
রোজা আড়চোখে দু একবার নির্ণয়ের দিকে তাকালেও নির্ণয় একবারেও তাকায় নি সে দিকে খাবার বাড়া শেষ হলে , প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে বসে রোজার মুখের সামনে , রোজা রাগান্বিত ভীষণ রাগান্বিত
রিধু আপি ওনাকে বলে দাও আমি খেতে চাইনা।
রোজা কথা শুনে শুষ্ক ঢোক গিলে রিধিমা, ভয়ে ভয়ে তাকায় নির্ণয়ের চোখের দিকে। শান্ত চোখ জোড়া এখনো রোজাকেই দেখছে
ইয়ে মানে বোনু বলছিলাম কি !
নো ! কোনো কথা না আমি কোনো কথা শুনবো না , আমি খাবো না।
সময় মাত্র দুই সেকেন্ড এর মধ্যে যদি কেউ না খা…
নির্ণয়ের কথা শেষ করার আগে হা করে রোজা । নির্ণয় হাতের থাকা পুরোটা অংশটুকু পুরে দেয় রোজার মুখে।
রুমেরর সকলের যেন মুখ টিপে হাসছে রোজা রাগি চোখে তাদের দিকে থাকালে থেমে যায় তারা।

সিলেটের পাহাড় মানেই সবুজের বিস্ময়। নীরব, শান্ত, অথচ জীবন্ত এই পাহাড়গুলো যেন প্রকৃতির নির্জন উপাসনা মন্দির। পাখির ডাক, বুনো ফুলের গন্ধ, আর দূরে কোথাও ঝর্ণার অস্পষ্ট ধ্বনি মিলে পাহাড়ি বাতাসে এক মাদকতা ছড়িয়ে দেয়।
আর এই পাহাড়ের বুকে বিস্তৃত চা-বাগানগুলো যেন একেকটা সবুজ স্বপ্ন। ঢেউ খেলানো পাহাড়ি জমিতে সারি সারি চা-গাছ, মনে হয় পৃথিবী এখানে শুয়ে আছে এক সবুজ চাদর গায়ে। কাজের তালে তালে হাঁটে চা-শ্রমিক নারীরা, মাথায় ঝুড়ি, চোখে ক্লান্তি নয়, বরং এক ধরনের আত্মমগ্নতা। তাদের চলার ছন্দে বাগান যেন বেঁধে ফেলে নিজের গান।

রোদে যখন চা-বাগানে আলো পড়ে, গাছের পাতাগুলো চকচক করে, আর মনে হয় হাজারটা সবুজ চোখ তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে যখন নিচের দিকে তাকাও, দেখা যায় চা-বাগান স্রোতের মতো নেমে গেছে গভীরে, আবার গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে আরেকটি পাহাড়কে।
এ যেন এক নিঃশব্দ প্রেম পাহাড় আর চা-বাগানের, প্রকৃতি আর প্রকৃতিপ্রেমীর। তৃধা নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে দেখছে সৌন্দর্য বর্ণনা। এইযে প্রকৃতির এত সুন্দর রূপ যেন বারবার মুগ্ধ করছে তাকে। রিয়ান ব্যস্ত চারপাশে প্রকৃতির আর নিজের ছবি তোলা নিয়ে , তৃধার জোড়া জোড়িতে আজ বেড়িয়েছে তাকে নিয়ে।
ওইযে সামনে থেকে এগিয়ে আসছে কয়েকজনের চা – শ্রমিক, মাথায় ঝুড়ি । তাদের চলার ছন্দ যেন চা বাগান বেঁধে ফেলে নতুন এক ছন্দে। রিয়ান বেশ কয়েকটা ছবি তুলে তাদের তবে হঠাৎ চোখ জোড়া থেমে তৃধার প্রকৃতি বিলাশে । লুকিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে ধীরে ধীরে তৃধা দিকে এগিয়ে যায় রিয়ান
আচমকা গায়ে কিছুর স্পর্শ পেতেই চমকে ওঠে তৃধা ব্যাঘাত ঘটে প্রকৃতি বিলাশের।
সৌন্দর্য অনুভব করছিস ?

চুপ থাকে তৃধা কোনো প্রকার উত্তর না করে দূরে চা -শ্রমিকদের দিকে তাকিয়ে থাকে সে !
তুই আমার হবি ?
তৃধা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকায় রিয়ানের দিকে, তার ঠিক পড় মূহুর্তেই আবারো তাকায় প্রকৃতির দিকে।
ডার্লিং, প্লিজ হ্যাঁ বল । বল আমার হবি !
তৃধা নাক জোড়া কুঁচকে নেয়‌। দাঁড়ানো স্থান থেকে হাটা ধরে গাড়ির দিকে , যেতে যেতে নরম স্বরে বলে ,
কবি বলেছেন, পড়িয়া পুরুষের প্রেমে, করিও না ভুল। পুরুষ হলো পাল্টিবাজ সর্বনাশের মুল।
রক্তচোষা মহিলা
নাক ছিটকায় রিয়ান। এ উত্তরে যেন একটুও খুশি নয় সে। এগিয়ে গিয়ে টেনে ধরে তৃধার হাত।
প্লিজ তৃধা believe me ,i love you !
চোখের কোণা আজ কেমন ভিজে ওঠে তৃধার। খুব চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে তার।
বিয়ে করবি আমায় রিয়ান।

সহসাই তৃধা মুখ বরাবর এসে দাঁড়ায় রিয়ান। মেয়েটা কাঁদছে , বুকের মাঝে মোচড় কাটে তার । দু হাত রাখে তৃধার গালে মাথা উপর নিচে মাথা ঝাকায় সে ,
আজ যেন কান্না বাদ মানছেন না তৃধার পুরো প্রকৃতির সামনে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ভীষণ বলতে ইচ্ছে করছে তার সে পেরেছে , তার ভীষণ আপন এক মানুষ হয়েছে, ভীষণ আপন কেউ
হাঠৎ নিজের সর্বস্ব দিয়ে আঁচড়ে পড়ে রিয়ানের বুকে। আজ যেন নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে। জীবনে কি বা চেয়েছে একটা পরিবার ,আপন কিছু মানুষ একটা সঙ্গী।

খাবার শেষ ! এদিকে রোজার সব কিছু গুছিয়ে নিয়ছে রিধিমা , এখন ফিরতে হবে। আয়ান গিয়েছে হসপিটালের সব ফর্মালিটিজ পূর্ণ করতে। রোজা বেডে বসা। বাচ্চা দের মতো মুখ মাখিয়ে চকলেট খেতে ব্যস্ত সে। নির্ণয় ব্যস্ত ফোনে ,
পুরো ঘরে কেমন এক নিরবতা । এই নীরবতা যেন চারপাশ থেকে গ্রাস করেছে মন ভাঙ্গা এক পুরুষ কে , নিশ্চুপ অপূর্ব , চোখে মুখে ক্লান্তি , হয়তো কত রাত ঘুম জাগা। ফোনে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে নীলিমা এক সুন্দর ছবি।
তার‌ নিচেই লেখা … দুটো লাইন আপনাকে আমার করতে পারলে , হয়তো নিজেই ভীষণ ধন্য হতাম। তবে মাফ করবেন… পারলাম না। আপনি না হয় আপনার মতো ভালো কাউকে খুঁজে নিবেন, জানেন তো আমি কখনোই তেমন উচ্চবিলাসী কোনো কিছু চাইনি , চাইনি খুব দামি কিছু , কেন জানি না জীবনে বিলাসীতার চেয়ে আমার স্বাচ্ছন্দ্য ভীষণ প্রয়োজন। আমার স্বস্তির প্রয়োজন । নিজের মনের মাঝে পুরুষের জন্য তৈরি ঘৃণার কখনো কমতি ছিলো না ,আজো নেই , ভবিষ্যতে কমবে না। আপনি আমায় সাহায্য করছেন বিনিময়ে কিছুই দিতে পারেনি , আমায় চেয়েছেন পারলাম না নিজেকে দিতে। মাফ করবেন ভালো থাকবেন আমায় খুঁজবেন না।

অপূর্ব হাত বুলিয়ে নেয় ফোনের স্ক্রিনে। নীলিমার মায়াবী চোখ জোড়ায় তাকিয়ে বুকের দহন অনুভব হয় তার।
ও নির্ণয় ভাই ….
পুরো ঘরের নিস্তব্ধতা কটাতে রোজার এক মিষ্টি ডাক যথেষ্ট , তবে নির্ণয় যেন কানে তুলো গুজেছে…
নির্ণয় ভাই !
ধুর ছাই …
নির্ণয় ভাইইইইইইইইইইইইইই
দুহাতে কান চেপে ধরে রিধিমা , অপূর্ব ও যেন তার ব্যতিক্রম নয়।তবে নির্ণয় ঠায় বসা। রোজা বসা থেকে একটু একটু করে এগিয়ে আসে নির্ণয়ের দিকে। চোখ দিয়ে রিধিমা কে ইশারা করতেই খুক খুক করে কেশে ওঠে রিধিমা।
বলছিলাম কি অপূর্ব ভাইয়া , চলেন না বাহিরে বসি দেখি ওনার হলো কি না।
অপূর্ব রিধিমা ইশারা বুঝতে পেরেই পুরো রুম ফাঁকা করার ব্যবস্থা করছে।
হ্যা হ্যা তাই বরং চলো।
মূহুর্তেই দুজন পুরো ঘর ফাঁকা করে চলে যায়। নির্ণয় আড়চোখে একবার দেখে সেদিকে। সকলে চলে যেতেই নির্ণয়ের খুব কাছাকাছি চলে আসে রোজা, দুরত্ব বেশি নেই। ধীরে ধীরে নিজের হাত রাখে নির্ণয়ে পায়ের উপর। নির্ণয় নড়ে না একটু রেসপন্স নেই তার ।
কি হয়েছে কথা বলছেন না কেন ?আমি কি কোনো ভুল করেছি নির্ণয় ভাই।
এখনো এক ধ্যানে ফোন দেখে চলেছে নির্ণয়। ভাব এমন যেন আশেপাশে কেউ নেই কারো কথা কানে যাচ্ছে না তার।
আশেপাশে এক নজর বুলিয়ে ধীরে ধীরে নিজের চুলে থাকা রাবার ব্যান্ড খুলে হাতে নেয় রোজা। মুহূর্তে এলোমেলো হয়ে যায় তার সমস্ত চুল। এরপর খুব সাবধানে , দ্রুত সে ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দেয় নির্ণয়ের হাত । নির্ণয়ে চোখ দুটো মূহুর্তে যেন রসগোল্লা হয়ে ওঠে, হাতে থাকা ফোন পড়তে নিলেই টুক করে ধরে ফেলে রোজা‌ । নির্ণয় বিস্ময় তাকিয়ে রয়। তার চাহনি দেখেই চোখ টিপে দেয় রোজা। এক মুহুর্তেই থতমত খায় সে,
ধীরে ধীরে গরম হতে থাকে ঘরের বাতাস।হালকা এগিয়ে নির্ণয়ের আরো কিছুটা কাছে আসে রোজা। বাধা হাত দুটো নিয়ে রাখে ঠিক নিজের ঘাড়ের উপর। নির্ণয়ের হাতের বাঁধনে আবদ্ধ করে নিজকে।
দু’জনের চোখের দৃষ্টি এখন একে ওপরের উপরে আবদ্ধ। হঠাৎ কোনো প্রকার , ওয়ার্নিং ছাড়াই নির্ণয়ের ঠোট জোড়া নিজের দখলে নেয় সে। ডুব দেয় অতল সাগড়ে!!
সময় গড়াতে থাকে এদিকে ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে দুটি হৃদয়। নিজের মনের সকল খায়েস নির্ণয়ের ওষ্ঠের উপর মেটাতে থাকে রোজা। ইতোমধ্যে হালকা নোনতা সাধের অনুভব হতেই নির্ণয়ে ঠোট ছেড়ে দিয়ে তার চোখে তাকিয়ে থাকে সে‌।

লাল তরলের আবির্ভাব ঘটেছে , বাঁকা হাসে রোজা। নাক ঘষে নির্ণয় নাকের সাথে ….
“রাগ করেছেন , লাভ হয়েছে । দেখুন কেমন ক্ষত বিক্ষত করছি আপনাকে। ঠিক আপনার চুপ থাকায় যতটা ক্ষত আমার মনে হয়েছে‌।
বাঁধা হাতে কোনো মতো নিজের ঠোঁট মুছে নির্ণয় , ঠোঁটের কোণ বেয়ে রক্ত ঝড়ছে। আঙুলে লেগে থাকা রক্তে দিকে তাকি বাঁকা হাসে সে। ছিটকে সরে যায় রোজা , দ্রুততার সাথে খোলে নির্ণয় হাতে বাঁধন .
রোজা সরতেই আরো বেশি গাঢ় হয়ে নির্ণয়ের মুখের হাসি ।একটু একটু করে হালকা ঝুঁকে যায় রোজার মুখের উপর
‘তোমার এই খরগোশের মতো পিচ্চি দাঁতে ,আমায় ক্ষত করতে এসেছো জান।
রোজা পেছাতে থাকে তার শরীরটা কেঁপে উঠেছে নির্ণয়ের সেই আধা-মত্ত কণ্ঠে। নির্ণয়ের দৃষ্টি যেন ঠেকেছে রোজার ঘাড়ের কাছে। শুষ্ক ঢোক গিলছে রোজার সাথে তার নিঃশ্বাসে যেন এক উন্মাদ স্পর্শ , ঠিক যেন উত্তপ্ত আগুন।রোজা ফিসফিস করে ওঠে,

দূরে থাকুন…
তার গলার স্বরটা যেন নিজেরই সাথেই বিশ্বাসঘাতক করছে। এইযে হঠাৎ কেমন কেপে উঠছে
নির্ণয় এক ধাক্কায় টেনে নেয় তাকে নিজের বুকের কাছে । তার হাত দুটো এখন রোজার কোমরে।
” আমায় সিডিউস করে পালাতে চাইছো ব‌উ। আমি বুঝি এতো লয়াল। ভুল করেছো ব‌উ, ক্ষুধার্ত বাঘ কে খাবারের লোভ দেখিয়ে কেড়ে নিতে হয় বুঝি। একদম নয় জান …
রোজার বুক ওঠানামা করে তীব্রভাবে। শ্বাসনালীর কেপে উঠছে বার বার। নির্ণয়ের ওই নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে বার বার শুষ্ক ঢোক গিলছে , মনে মনে নীরবে বার বার আল্লাকে ডাকছে
আল্লাহ বাঁচাও ,
হঠাৎ নির্ণয়ের ঠোঁট ছুঁয়ে যায় রোজার গলার ঠিক নিচে, একদম কণ্ঠনালির কাছে। গাঢ় এক চুম্বনের মাঝে কেমন হাড়িয়ে গেছে সে। ক্ষত বিক্ষত করে স্বাদ নিতে থাকে রোজা সাদা চামড়ার।
নির্ণয় থামে না যত সময়ের সাথে গভীর ক্ষত চিহ্ন হয় তার প্রেয়সীর গায়ে।

“আহ…”
ব্যাথায় কুকড়িয়ে ওঠে রোজা …. চোখের কোন বেয়ে পানি ঝড়ছে। তবুও নির্ণয় অনর তার ভয়ংকর কাজে। সময় গড়াতে থাকে, এদিকে রোজার লম্বা নখের আঁচড়ে রক্ত ঝড়ে নির্ণয় হাতে। সেদিকে যেন খেয়াল নেই কারো
ওহ ভাই !
হঠাৎ দরজায় কিছুর শব্দ আসতেই থেমে যায় নির্ণয়। ভঙ্গ মনোযোগ, রোজা নিজেও যেন ধপ করে চোখ মেলে। দরজার দিকে তাকাতেই যেন চোখ পড়ে আয়ানের উপর বেচারা আয়ান এক হাতে চোখ বুঝে পুরো রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে। হাঠাৎ হাতে ব্যাথা অনুভব হতেই চেঁচিয়ে ওঠে নির্ণয়
আ…. আউচ আস্তে ব‌উ লাগছে !

দ্রুত চোখ থেকে হাত নামিয়ে সামনে তাকায় আয়ান। নাক কুঁচকে রাগে রিরি করতে করতে বলে …
ইয়া আল্লাহ , কোনো দুনিয়াতে এসে পড়েছি। পড়েছি তো পড়েছি একদম সিঙ্গেল হয়ে মরছি।
ভাই দোয়া করে কেউ মঙ্গল গ্রহের টিকিট কাট ।
আমার মতো সিঙ্গেলদের জন্য পৃথিবীর অক্সিজেন বিষাক্ত।
আয়ানের এতো এতো বিলাপের মাঝেই এক এক করে ঘরে ঢুকে অপূর্ব , রিধিমা। আয়ানকে বিলাপ বকতে দেখেই কপাল কুঁচকায় অপূর্ব।
কি হয়েছে ?
আমি পাগল হয়েছি , একটু পর রাস্তায় কাগজ কুড়াবো ।
বাহ ! বেশ ভালো বুদ্ধিই তো।
অপূর্বের পিঠে বেশ জোড়ে এক পাঞ্চ মারে আয়ান। নির্ণয় হাত থেকে ব্লাড ঝড়ছে খেয়াল হতেই নিজের আঙ্গুল কামড়ে ধরে রোজা।

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৩

নির্ণয় ভাই ! আপনা…
কল মি স্বামী ?
ধমকে ওঠে নির্ণয়। যেন তার কন্ঠে কত দিনের ক্ষোপ জমানো
কি বললাম কল মি স্বামী !
একরাশ লজ্জা রা এসে ভর করে রোজা চারপাশে। সকলে হা হয়ে দেখছে তাদের ..
সা… স্বামী জান শুনছেন।
উফফব .. ব‌উ তীর যেন ঠিক হার্টে লেগেছে। হায়!
এই যে ভাই , একটু রয়ে সয়ে। নাহলে হার্ট ফুটো হলে
কাঁদা দিয়ে ভরতে হবে। একটু সামলে হ্যাঁ !

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৫