প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৫

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৫
Zannat Xhowdury

বিছানার চাদরে এলোমেলো ভাঁজ, বাতাসে এখনো ভালোবাসার গন্ধ । জানালার পর্দা একটু নড়ে উঠলে, বাইরে মৃদু বাতাস ব‌ইছে।
রোজা চোখ বন্ধ রেখেই খুব আস্তে বলে ওঠে,
—আপনি ভীষণ অসভ্য সাহেব।
নির্ণয়ের পুরো শরীরে ভর তখনো রোজার উপরে ছাড়া। নাক ডুবানো রোজার কাঁধে , দুহাত জড়িয়ে রেখেছে রোজা দু হাত।
নির্ণয় নাক ঘসতে থাকে রোজার গলায় ,, সাথে হাস্কি টোনে বলে..

– Yow know বেবি , আমি অসভ্যর মূল চাবি কাঠি তুই। তোকে পাশে দেখলেই আমি মাতাল।
রোজা হালকা হেসে বলে,
-তাহলে আমি হারিয়ে যাই ..
থেমে যায় নির্ণয় , মুখ তোলে রোজার গলা থেকে খুব মনোযোগে দিয়ে দেখে তার মুখের প্রতিটা ভাঁজ,। গভীর এক দৃষ্টি রাখে রোজার চোখে
-মারতে চাস আমাকে , চাইলে বল নিজের জান দিয়ে দেই। নাকি বুক চিরে কলিজা এনে হাতে দেবো। কোনটা বল ?
থমকে যায় রোজা , মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হয়না তার নির্ণয় নেমে যায় রোজার উপর থেকে। বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ড্রেস খুঁজে জড়িয়ে নেয় গায়ে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– ‘ভালোবাসি তোহ ! মারতে চাইবো কেনো? ভীষণ ভালোবাসি নির্ণয় ভাই। এই যে দেখুন !
নির্ণয় তাকায় না রোজার দিকে , বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে চায় তবে তা আর কি হয়। নির্ণয় উঠতে নিলেই হাত টেনে আবারো বসিয়ে দেয় রোজা।
– ও নির্ণয় ভাই !
নিশ্চুপ নির্ণয়, একবার ফিরেও তাকায় না রোজার দিকে দাঁতে দাঁত কটমট করছে সে।
– নির্ণয় ভাই !
বিছানায় বসা অবস্থায় পা ঘষে ঘষে একদম নির্ণয়ের কাছাকাছি আসে রোজা, দুহাতে নির্ণয় হাত জড়িয়ে মাথা রাখে তার বাহুতে।
-সরি তো ! আচ্ছা আর বলবো না হারানো কথা?
“শান্ত হয় না নির্ণয়ের মন , তবুও এবারেও কোনো উত্তর করে না সে। বিরক্ত হয় রোজা, কাঁদো কাঁদো গলায় বলে …

-দেখুন , আমার কিন্তু ভীষণ কান্না পাচ্ছে , এইতো কান্না করেই দিলাম। এই এখুনি কান্না করলাম ! চোখের পানি পড়লো বলে ওও বুঝেছি পুরাতন হয়েছি তো তাই কদর করছেন। এখন তো ‘চাকের মুধু পান করছেন মৌমাছি কে তাড়াতে হবে , তাই এমন করছেন তাইনা?
কিছুটা থেমে হালকা দম নেয় রোজা। কোনো মতো নাকে এক টান দিয়ে আবারো বলতে শুরু করে ” সব পুরুষই এক হ….
বাকিটা বলার আগেই গালের ওপর শক্ত , হাতের থাবায় পরে। নির্ণয় দুই আঙ্গুল চেপে ধরেছে রোজার গাল। ফর্সা গাল মুহূর্তে লাল হয়ে উঠেছে
-“কয়জন পুরুষে শরীল দিয়েছিস , কয়জনে কুয়ো ভরেছিস। সব পুরুষই এক তাইনা। কয়জন পুরুষের শরীর ঘ্রাণ গিয়েছে তোর নাকে।
রোজার মুখ থেকে কথা বেড়ায় না। আজ তার চোখেও নেই বিন্দু পরিমাণ পানি। অন্য সময় হয়তো কেঁদে এক বালতি পানি জমিয়ে ফেলতো তবে আজ সে ব্যথার মাঝেও নির্ণয়ের চোখে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে ! ‌
কী হলো কথা বল ?

রোজার চুপ থাকা যেন নির্ণয়ের ভিরত আরো আগুন জ্বালিয়ে দেয়। রাগ যেন আরো তিরতির করে বাড়ছে তার . রোজার চোখে চোখ পড়তেই ধমকে যায় নির্ণয়! সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে
‘”এই মেয়ে এই দৃষ্টি নিচে। মেনুপুলেট করতে চাইছিস ? লাভ নেই !
আই জাস্ট ফা* ক ইউ !
গালে অসহ্য ব্যাথার মাঝেও ফিক করে হেসে ওঠে রোজা, আলগা হয় নির্ণয়ের হাত।
– প্লিজ ফা * ক মি মোর এন্ড মোর। যতটা আপনার এনার্জিতে কুলোয় ঠিক ততটা । আই এম ভেরি ইনজয় দ্যাট
তন্দ্রা লেগে যায় নির্ণয় ,এই মেয়ে দিন দিন ভীষণ অসভ্য হয়ে উঠছে তো। তাকে বিন্দু মাত্র ভয় করছে না , নির্ণয় ভ্রু জোড়া কুচকে নেয়।

“রিয়েলি! ইউ ইনজয় ইট” ? তাহ..
বাকি কোথা বলার আগেই , নির্ণয়ের মুখ চেপে ধরে রোজা । ভীষণ লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা। নির্ণয় কোথায় যেন শুনেছিলো লজ্জা পেলে মেয়েদের গাল লাল হয়, আসলেই কি তাই। হ্যা একদম সত্য এইযে তার রোজ পাখির গাল গুলো কেমন ব্লাস করছে।
– পাখি , আই ওয়ান্ট টু টেস্ট ইয়োর লিপস্টিক।
নেশাক্ত চোখ রোজার ঠোঁট দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে ঝুকে আসতে থাকে নির্ণয় হঠাৎ দরজায় শব্দ পড়ে বাহিরে কেউ আছে। মাঝ রাস্তায় বেক কষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে নেয় সে । এদিকে দ্রুত গতিতে আশে নিজের পোশাক গুলো খুজতে থাকে রোজা… অবশেষে খেয়াল করে ফ্লোরে পড়ে রয়েছে সেগুলো। দ্রুত হাতে সেগুলো তুলে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নেয় সে।

রোজার পোশাক পড়া হতেই নির্ণয় গিয়ে দাঁড়ায় দরাজার কাছে , এক নাগাড়ে নক করে চলছে কেউ তখন সময় প্রায় রাত তিনটা কাছাকাছি দরজা খুলতেই বাহিরে দাঁড়ানো রিসোর্টে এক কর্মচারী। কাপলে ভাজ সৃষ্টি হয় নির্ণয়ের
আপনি ?
- “স্যার, সিকিউরিটি থেকে এসেছি। রিসোর্ট ম্যানেজার আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন।”
কি প্রয়োজন ?
-আসলেও স্যার আমি ঠিক জানি না , তবে স্যার বলছেন অনেক দরকারি কিছু প্লীজ স্যার যদি একটু আসতেন !
নির্ণয় চোখ কুঁচকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকে । তারপর ভেতরে ফিরে রোজার দিকে তাকিয়ে বলে,
—তুই রেস্ট কর, আমি একটু দেখে আসি কী ব্যাপারটা ।
রোজা মাথা নাড়ে। সরল চোখে তাকিয়ে থাকে নির্ণয়ের যাওয়ার দিকে। হাতের ব্যান্ডেজটা একবার ছুঁয়ে দেখে। চামড়ার নিচে এখনো জ্বালা করছে,।

নির্ণয় বেড়িয়েছে কিছু টা সময় , নিজের ফোন হাতে ধীরে ধীরে বেলকনিতে এগিয়ে যায় রোজা। নিস্তব্ধ এক আকাশ , হাজারো তারার মেলা। মাথা উপর থাকা জ্বলতে থাকা দুটো উজ্জ্বল তারার দিকে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে রোজা।
ডানপাশের বড় তারার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলে , “এইযে এই তারাটা আমি , আর তার পাশের তারটা আপনি নির্ণয় ভাই। ”
রোজা ভাবতে -ভাবতে আঙ্গুল নামিয়ে আনে নিজের ঠোঁটে কাছে। কিছুটা সময় ভেবে আবারো বলে , যখন আমাদের ফিউচার আসবে , ওইযে ওই তারাগুলো থেকে একটা এনে নাহয় আমাদের মাঝে বসিয়ে দিবো ।
হাতে থাকা ফোনটা কেঁপে ওঠে সরকারি নাম্বারে কল এসেছে , এসছে বললে ভুল হবে। কিছু সময় আগেই রোজা মেসেজ করছে, প্রেমের নাম্বারে তাই তো কল দিয়েছে।

হ্যালো !
অপর পাশে ভেসে আসে প্রেমে শান্ত গলা। তবে ভীষণ ভঙ্গুর এক গলা ঠিক যেন অতি প্রতিক্ষার পর প্রিয় জিনিসের ছোঁয়া পাওয়া ঠিক তেমন। প্রেম শান্ত সুরে ডাকে
-মেহরিন ..
রোজার ছোট জাবাব..” হুঁ”
-মনে পড়লো তাহলে ;
নিশ্চুপ থাকে রোজা। কি বলবে ভেবে পায় না সে , প্রেম হয়তো বুঝে কিছু

-তা কি খবর বলো , হঠাৎ ফোন করেছো? তোমার ছুটি শেষ হতে তো আরো সময় বাকি !
“আ আসলে স্যার আমার কিছু ইনফরমেশন প্রয়োজন ছিলো !
-ফোঁস করে এক নিঃশ্বাস ফেলে প্রেম , ” কি প্রয়োজন বলো ”
“”আপনাকে এক নাম্বার পাঠিয়েছি , তার সকল ডিটেইল আমার ভীষণ প্রয়োজন !
প্রেম হাতের ফোনের দিকে তাকায় মেসেজ ঢুকেছে , আবারো কানে রাখে ফোন !
-আচ্ছা দেখছি !
ফোন রেখে দেয় রোজা ,আবারো তাকায় আকাশের দিকে ,
আমি ভীষণ স্বার্থপর , নিজের জিনিস অন্যের হতে একদম দেখতে পারবো না।১লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গমাইলে ২০ কোটি মানুষের মাঝে বিধাতা আমার মনে তার জন্য ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে , ভালোবাসি ভয়ংকর ভাবে ভালোবাসি।

দরজায় খট করে এক শব্দ হয় হয়তো নির্ণয় এসে , রোজা নড়ে না তখনো সে আকাশের সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত।
সময়টা ভীষণ নিস্তব্ধ , রোজা ঠায় দাঁড়ানো বেলকোনিতে। মদু শীতল বাসে যেন মনে তৃপ্তি অনুভব হচ্ছে তার!
হঠাৎ অপরিচিত এক পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে ভেসে আসতে চৌকিতে মাথা ঘুরায় রোজা।
কালো পোশাক পরিহিত কাউকে দেখতে কিছুটা পিছিয়ে যায় সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে থাকে ,
ক কে ?
অপর পাশে কোনো উত্তর আসেনা রোজা নিজেকে সামলে আবারো প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই মুখে সামনে স্প্রে জাতীয় কিছু পড়তেই , চোখ বুঝে আসে রোজার। মাথা ঘুরছে , মূহুর্তেই অচেতন হয়ে যায় সে। বিকৃত এক হাসি ছড়িয়ে পড়ে ফাঁকা বেলকনিতে ,

ঘরজুড়ে তখন নিস্তব্ধতা। দূরে কোথাও একটা কুকুরের হালকা ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যায়। বেলকোনির দরজাটা খোলা, ঠাণ্ডা বাতাসে পর্দা উড়ছে ধীরে ধীরে। অচেতন রোজার নিঃশ্বাসও যেন স্তিমিত।
কালো পোশাক পরিহিত সেই মানুষটি পকেট থেকে মোবাইল বের করে দ্রুত ডায়াল করে পরিচিত কারো নাম্বারে
‘তাড়াতাড়ি এসো সময় কম ?
কথা শেষেই কেটে দেয় ফোন , হাত ছোঁয়ায় রোজার গালে,
এদিকে মাত্র মিনিট খানেকের মধ্যেই। ঘরে ছায়া পড়ে অপর একজন যুবকের বেশ লম্বা, মুখে পাতলা দাড়ি, চোখে হালকা আতঙ্ক আর তাড়াহুড়োর ছাপ।
-ম্যাম !
“হুসসসস , জলদি কোলে তোলো এটাকে !
যুবকটি কথা বাড়ায় না মালকিনের আদেশ পেতেই পাঁজাকোলা করে নেয় রোজাকে।

ম্যানেজারের সাথে দেখা করে এসে রুমের দরজা খুলেই স্তব্ধ নির্ণয়। ঘরের বাতাস ভারী, রুমের প্রতিটি কোণ খালি। খাটের চাদর এলোমেলো, মৃদু বাতাসে নড়ছে জানালার পর্দা
তবে কোথাও নেই রোজা।
নির্ণয় ঘরে চোখ বুলিয়ে এগিয়ে যায় বেলকনিতে , তবে সেখান টাও ফাঁকা। উপায়ান্তর নেই রুমে বিছানায় বসে পড়ে সে।
হয়তো বার্থ রুমে আছে রোজা। এই ভেবেই শান্ত হয়ে বসে কিছু সময়।
ধীরে ধীরে পেরোতে থাকে সময় রোজার বেড়োনোর নাম নেই। কাপলে চিন্তার ভাজ পড়ে নির্ণয়ের চট জলদি বিছানা ছেড়ে উঠে এগিয়ে যায় বার্থ রুমের দরজার কাছে। কিন্তু দরজার কাছে আসতেই আরেক শকট। দরজা বাহির থেকে লকট মানে ভিতরে কেউ নেই । শুষ্ক ঢোক গিলে নির্ণয় ফিসফিসিয়ে বলে ,
রো …রোজ!

আর কিছু ভাবতে পারে না হন্নি হয়ে খুঁজতে থাকে পুরো ঘর , “হয়তো কোথাও লুকিয়েছে মেয়েটা” এই ভেবেই তন্ন তন্ন করে খুঁজে নির্ণয় “নাহ’ কোথাও নেই‌
আবারো ছুটে যায় বেলকনিতে সেখানটাও ফাঁকা , উপর থেকে নিচে তাকায় , রিসোর্টের গার্ডেন চোখে পড়ে ‌। দুজন গার্ড সেখানে পাহাড়ায় বসা, ঘুমে টলছে । আবারো ঘরে আসবে তখন ঠিক তখনি পায়ে কিছু একটা লাগে তার ।
ফ্লোরের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে রোজার হ্যালো কিট্টি বেক কাভারে মোড়ানো ফোন টা , কাঁপা কাঁপা হাতে ওটাকে হাতে তুলে নেয় সে । অজানা ভয় বাসা বেঁধেছে মনে , দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বেডের কাছে যায় , পুরো বেড খুঁজে বালিশের নিচ থেকে ফোন পেয়ে দ্রুত স্ক্রোল করতে থাকে সে। এইতো , কিছুসময় আগেই রিয়ানের সাথে কথা হয়েছে নাম্বার তাই সামনেই ছিলো নির্ণয় অতি দ্রুত কল করছ সেই নাম্বারে।
বেশ কিছু সময় রিং হয়ে কেটে যায় কল। উন্মাদ নির্ণয় আবারো কল করে সেই নাম্বার এবার আর মিস হয় .. কল‌ রিসিভ হতেই নির্ণয় উত্তেজিত গলা। ঘুম ঘুম ভাবে কল রিসিভ করেছে রিয়ান
রিয়ান !

নির্ণয় গলা কাঁপছে , মূহুর্তেই ঘুম ছুটে যায় রিয়ানে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে ,
ভাই ! What happened ,
নির্ণয়ের হাত কাঁপছে,গলা ধরে আসছে। কোনো মতে শুষ্ক ঢোক গিলে
-রো… রোজ!
রোজ … কি ভাই ?
-রোজ মিসিং …!
কথাটা শেষ করেই দ্রুত কল ডিসকানেক্ট করে নির্ণয়। বিছানার উপরে গাট হয়ে বসে থাকে রিয়ান। নির্ণয়ে কথাগুলো যেন ঠিক তার মস্তিষ্কে প্রসেসিং হতে সময় নিচ্ছে বেশ কিছু সময় মাথা চেপে রাখে , হঠাৎ কিছুর খেয়াল হতে ছুটে বেড়িয়ে যায় ঘর ছেড়ে
কিছু সময়ের ব্যবধানে হাপাতে হাপাতে নির্ণয়ের ঘরে এসে পৌঁছায় রিয়ান।

ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে— নির্ণয় বিছানার উপর গুটিয়ে পড়ে আছে। এক হাতে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে রেখেছে সে। শরীরটা কাঁপছে, চোখ দুটো লাল টকটকে, ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে গেছে। এভাবে বিধ্বস্ত নির্ণয়কে রিয়ান বহু বছর আগে দেখেছিল… রিয়ান।
রিয়ান ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে হাত রাখে নির্ণয়ের কাঁধে, হঠাৎ
খপ করে রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে নির্ণয়! এমন শক্ত করে আঁকড়ে ধরে । তার আচরণ একেবারে বদ্ধ উন্মাদের মতো লাগছে।
চোখের পাতা কাঁপছে, নিঃশ্বাস এলোমেলো, ঠোঁট কাঁপছে অজানা আতঙ্কে।
“ভাই…
রিয়ান কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকে নির্ণয়কে। এদিকে তাকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে নির্ণয়।
আ আমার রোজ … রিয়ান। আ … আমার পাখি।
রিয়ান হতবিহ্বল , বেশ কিছু সময় স্থির হয়ে থেকে কাঁপা কণ্ঠে বলে—
“ভাই… প্লিজ, শান্ত হও। এভাবে ভেঙে পড়ো না। তুমি তো জানো, রোজা একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট মেয়ে।ও নিজেকে বাঁচাতে পারবে।”

নির্ণয় কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ে—কোনো কথাই যেন পৌঁছাচ্ছে না তার মনে। রিয়ান নিজেকে সামলাতে চাইছে , শক্ত থাকার চেষ্টা করে। গলাটা ভারি হয়ে এসেছে তার। কিন্তু তবুও বলে—
“তুমি ভেঙে পড়লে চলবে না ভাই। আমাদের বরং এখন তাকে খুঁজতে হবে। যে করেই হোক, রোজাকে খুঁজে বের করতেই হবে!”
ভেতরে ভেতরে বেশ ভেঙে পড়ছে রিয়ান , বারবার কেন সব বিপদ তার বোনের উপরেই আসে ? কেন সে-ই লক্ষ্য?
সে চোখ বন্ধ করে মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে সে। দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভাইকে
, ভাই আমাদের খুঁজতে হবে রোজকে,
নির্ণয় নিঃশ্বাস নিতে পারছে না ঠিকঠাক। গলা শুকিয়ে কাঠ, চোখ দুটো লালচে আর ফোলা। শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আসছে, কাঁপছে—
যেন একটা মস্তিষ্ক-বিধ্বস্ত মানুষ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।
রিয়ান টের পায়, নির্ণয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে আসছে—এভাবে চলতে থাকলে নির্ণয় যেকোনো সময়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।

ভাই… আমার দিকে তাকাও…!”
বারবার নির্ণয়কে শান্ত করতে চাচ্ছে রিয়ান, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। নির্ণয়ের বুদ্ধি জ্ঞান লোপ পেয়েছে—চোখে একরকমের শূন্যতা, বুক ভরে নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না ঠিকমতো। কোনোকিছুতে কিছু হচ্ছে দ্রুত হাতে পকেট থেকে ফোনটা বের করে সে।
তাড়াহুড়ো করে ফোন অন করে ঢুকে পড়ে কল লিস্টে। আঙুলটা থমকে যায় একটা পরিচিত নামের ওপর ! স্ক্রিনে জ্বলজ্বল আয়ান আয়ানের নাম।
রিয়ান দ্রুত ডায়াল করে সেই নাম্বারে। ফোনটা কানে ধরতেই রিং বাজতে শুরু করে।
একবার… দুইবার… তিনবার…
“তুল আয়ান… প্লিজ তুল…” রিয়ান ফিসফিস করে, অথচ গলাটা কাঁপছে উৎকণ্ঠায়। অন্যদিকে নির্ণয় এখনো জড়িয়ে ধরে বসে আছে, শরীরটা ভার হয়ে আসছে, নিঃশ্বাস হালকা হয়ে যাচ্ছে।
কল রিসিভ হতেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে রিয়ান

“হ্যালো?”
আয়ানের ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর আসে
কিহ ! ভাই ?
রিয়ানে , কাঁপা গলা ব্যস্ততা সাথে বলে , “ভাই দ্রুত ইনজেকশন প্রয়োজন , ভাইয়ের কন্ডিশন খুব খারাপ।
থমকে যায় আয়ান , ঘুম মূহুর্তেই পালিয়ে যায় ফোনটা শক্ত করে ধরে রেখেছে।
কিহ কি হয়েছে , নীড়ের !
প্লিজ ভাইয়ের রুমে আয় !
কথা শেষ করেই ,ফোন কেটে দেয় রিয়ান ….
রিয়ানের বুকের মধ্যে কাঁপুনি ওঠে। চোখে ভয় ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে।সে ফোনটা নামিয়ে রাখে।
আমার …. বোন । আল্লাহ

শেষ রাতের কালো আঁধারের ভেতর দিয়ে ছুটে চলছে এক কালো গাড়ি।
রাস্তার দুই ধারে ছায়া গিলেছে আলো, হেডলাইটের রেখাগুলো ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে যাচ্ছে কুয়াশায়।
গাড়ির পেছনের সিটে অচেতন হয়ে পড়ে আছে রোজা।
মাথাটা একদিকে কাত, চোখ দুটো বোজা, ঠোঁট ফ্যাকাসে।
ঠিক তার পাশেই বসে আছে এক নারী।পড়নে কালো পোশাক, চুল গুলো ছেড়ে রাখা ।চোখে স্পষ্ট নির্লিপ্ততা ,এক টানে মুখের মাস্ক খুলে ,
তারপর ধীরে ধীরে তার আঙুল দিয়ে ,রোজার কপালে কাছ চুল সরিয়ে দিচ্ছে। খুব আলতো করে, হাত ধোঁয়ায় রোজার গালে
তারপর ফিসফিস করে বলে—

“তুই ঠিক যেমনটা নিষ্পাপ … ততটা বিষধর। তবে , বেশ বোকা নারী … আর তোর মূর্খতাই তোর বিনাশের কারণ
গাড়ির ভেতর নেমে আসে আরও গভীর নীরবতা। চাকা গড়িয়ে চলছে গন্তব্যে , দূরে ওই আকাশে মৃদু মৃদু ভোরের আলো ফোটার প্রস্তুতি নিচ্ছে আকাশ।
পাহাড়ি গলির মোড় ঘুরেই অন্ধকারে ঢাকা এক বিশাল, নির্জন আলিশান বাড়ির সামনে এসে থামে গাড়িটি। রাতের নিস্তব্ধতায় শুধু শোনা যায় ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার শব্দ। চারপাশে কুয়াশা জমেছে ঘন হয়ে, যেন অদৃশ্য কোনো রহস্য ঢেকে রেখেছে এই প্রাসাদতুল্য বাড়িটিকে।
বাড়ির ফটক ধীরে ধীরে খুলে যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে, পুরো ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিশাল লোহার গেটের দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা পাথরের সিংহমূর্তি যেন পাহারা দিচ্ছে সেই রহস্যময় ভবনকে।

গাড়ির পিছনের দরজাটা খুলে কালো পোশাক পরিহিত মেয়েটি ধীরে নামে ঠোঁটে খেলে যায় এক রহস্যময় হাসি। খানিক সময় বাড়ির দিকে তাকিয়ে ড্রাইভার কে আদেশ দেয় রোজাকে কোলে তুলতে নিতে ।
ধাপে ধাপে, বাড়ির দিকে এগোতে থাকে। পায়ে পড়া প্রতিটি শব্দ রাতের গভীরতাকে কাঁপিয়ে তোলে।
সদর দরজা কাছে এসে ধাক্কা দিতেই খুলে যায় দরজা। বাতাসে এক ভ্যাঁপসা গন্ধ ভেসে আসে ।
কালো পোশাক পরিহিত মেয়েটি মোবাইলে টর্চ জ্বালিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে,তার ঠিক পিছনে ড্রাইভারের কোলে রোজা ।
চারপাশ নিস্তব্ধ। শুধু কানে ভাসে জুতা আর ফ্লোরের ঘর্ষণ কাঠি
বাবা …
গলা উঁচিয়ে কাউকে ডেকে ওঠে মেয়েটি । তবে সারা নেই ,, এবার আরো কিছুটা জড়ে ডেকে ওঠে সে
বাবা।

মূহুর্তেই আলোকিত হয় যায় পুরো বাড়ি সামনের সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকতে এক মাঝবয়সী লোক। বয়স হলেও এখনো বেশ সুদর্শন সে।
‘হেই জারা ! মাই গার্ল !
জারা এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বাবাকে। আদুরে স্বরে বলে
-কেমন আছো বাবা ?
‘আমি ভালো বেটা !
জারা মুসকি হেসে ইব্রাহিম তালুকদারের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে আসে অচেতন রোজার কাছে…
-আমাদের শিকার !
“ওয়েল ডান মাই গার্ল ! আমি জানতাম তুমি পারবে , এবার একে শেষ করেই আমার মৃত্যু ছেলের আত্মা শান্তি মিলবে।

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৪ (২)

-পারতে তো আমাকে হতো বাবা ! এর জন্য ভাইয়াকে হারিয়ছি , রেহান কে হারাতে পারবো না। এই মেয়ে বেঁচে থাকলে রেহান যে কখনোই আমার হবে না।
‘ আপাতত ওকে ঘরে নিয়ে হাত পা বেঁধে রেখে আয় … কাল ক্লাইন আসবে একটু মজা মাস্তি হোক তাকে নিয়ে তারপর নাহয় … তিলে তিলে মৃত্যু দেওয়া যাবে

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৬