প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৭
Zannat Xhowdury
কান্না করে লাল হয়েছে গিয়েছে মেয়েটা।
রেহান রাগি চোখে তাকায় ইমনের দিকে চোখ যেন আগুন ঝড়ছে। রোজা যে জায়গায় পড়েছিল ঠিক তার পাশেই বেশ বড় এক পাথর কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নেয় সে।
ইমন আরো কিছুটা ঝুঁকে আসে রেহানের দিকে , চেপে ধরে রেহানের গাল।
– এই শা’লা এই বুলবুলি তো নির্ণয় চৌধুরীর, তুমি মা’তারি এতো লাফাও কেন। এখন থেকে সুযোগ নিবার চাও নাকি ?
সে চাইবার পারো তবে আমরা ভাগ নেই ।
তেতে ওঠে রেহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে , ” রোজ এখনো একটা ফুল তুই কিনা নোংরামির ভাবছিস …
কথা শেষ করেই , হাতে নেওয়া পাথর দিয়ে আঘাত করে ঠিক ইমনের নাক বরাবর। মূহুর্তেই যেন নাক হতে গলগল করে বেড়িয়ে এলো লাল তরল। মূহুর্তেই ইমনের সকল বন্ধু এসে আগলে নেয় ইমন কে। এর মধ্যে সামির নামের এক ছেলে গিয়ে চেপে ধরে রেহানের গলা। দম আঁটকে আসছে ।কেমন ভয়ংকর এক পরিস্থিতি রোজা সব দেখে কেমন ডুকরে উঠছে, রক্ত দেখেই হঠাৎ করেই অচেতন হয়ে পড়ে মেয়েটা। রেহান কাধ হালকা ঘুড়িয়ে তাকায় রোজার দিকে। নিজেকে বেশ শান্ত করে, শক্ত হাতে আবারো তুলে নেয় একটা পাথর বেশ জোড়েই তা মাথায় মারে সামিরেরে এক মূহুর্তে মাটিতে নেতিয়ে পড়ে ছেলেটা মাথা হতে রক্ত ঝড়তে শুরু করে।
বাকিরা বেশ ভয় পেয়ে যায় ইমন নিজের কথা ভুলে এগিয়ে আসে সামিরের কাছে। অনবরত রক্ত পড়ছে, কিছু সময়ের মধ্যেই জ্ঞান হারায় সামির।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চারপাশে এক নিস্তব্ধতা , রোজার অবস্থা খারাপ রেহান হাত বাড়িয়ে কোলে তুলতে চায় রোজাকে আবারো বাঁধা আটকে দেয় ইমন তবে, ইতোমধ্যে সেখানে আগমন ঘটেছে নির্ণয়ের কাহিনী ভীষণ দ্রুত হয়।
পুরো বাড়ি খুজেও যখন রোজার দেখা মেলে নি বাগানের সেই পথ ধরে এদিকে এগিয়ে আসছিলো সে।
রোজা অবচেতন , কপালের কোণে শুকনো রক্ত , এদিকে রোহান কে আটকে রেখেছে ইমন। মূহুর্তেই যেন হিংস্র বাঘের ন্যায় গর্জে ওঠে নির্ণয়। তার প্রথম আক্রমন গিয়ে পড়ে ইমনের উপর বাকি দুজন ভয়ে পালিয়ছে অনেক আগেই। প্রায় বেশ কিছু সময় বেধড়ক মারে সে ইমনকে। আশেপাশের কোনো খেয়াল নেই তার। রেহান বারবার সরিয়ে আনতে গিয়েও ব্যর্থতা। লাস্ট ইমনে নিঃশ্বাস যখন ফুড়িয়ে এলো ততক্ষণে শান্ত হয় নির্ণয় । রোজার কথা মাথায় আসতে এগিয়ে এসে বসে রোজার পাশে। কোলে তোলে নেয় ছোট নাদুসনুদুস নুদুস শরীল টা। রেহান ধরতে যায় তবে নির্ণয় তেজী দৃষ্টি যেন মাঝ পথেই থামিয়ে দেয় তাকে ..!
নীর কুঞ্জে ফিরে আসতেই রোজাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে …
অতিরিক্ত ভয় আর ব্লাড ফোবিয়াতে মেয়েটা ভুগেছে বেশ কিছু মাস। খুনের খবর ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি নিউজ চ্যানেল।
মূহুর্তেই ঝড় বয়ে যায় পুরো চৌধুরী পরিবারের। রোজার অসুস্থতা ,সাথে খুনের আসমী কিনা বাড়ির বড় ছেলে ভেঙ্গে পড়েন রেজওয়ান চৌধুরী , সিন্ধান্ত নেওয়া হয় দুজনের পাঠানো হবে দেশের বাহিরে। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সেদিন দেশ ছাড়া করা হয়েছিল দুজনকে ।
তবে প্রমাণ লুপাটে পরবর্তীতে বাকি দুজনকেও। বাকি তিনজন কেও শান্তির ঘুম উপহার দিয়েছিলো দুজনে।
দোতলার ঘর হতে কিছুর পড়ার শব্দে অতীতের ধ্যান হতে বেড়িয়ে আসে সকলে! পরিস্থিতি বেগতিক সকলের ধ্যানের মাঝেই উধাও হয়েছে এক ব্যক্তি। প্রেমের দেখা নেই ব্যপারটা খেয়াল হতেই চেঁচিয়ে ওঠে অপূর্ব।
– ওই শালা অফিসার কোথায় !
সকলে সচেতন হয়ে যায় হঠাৎ কতগুলো কালো পোশাক পরিহিত লোক প্রবেশ করে অন্দরমহলে। তৃধা , রিধিমা তখনো ছটফট করছে ছুটার জন্য। দোতলার ঘর হতে ভেসে আসে গুলির শব্দ অপূর্ব ছুটে যেতে নেয় সিঁড়ি দিকে।
হঠাৎ পুরো ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠে নির্ণয় , মূহুর্তে সকলকে আকর্ষিত করে তার সেই হাসি। ভরকে যায় ইব্রাহিম তালুকদার , কি হতে কি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছে না সে। রেহান তখনো গলায় ছুরি ধরে রয়েছে জারার। মেয়ের চোখে এক নমনীয়তা, তবুও যেন তা পুরুষের হৃদয় গলাতে ব্যর্থ।
অপূর্ব সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার আগেই রিভালবার হাতে এগিয়ে আসে রোজা। ধীরে ধীরে নেমে আসে সিঁড়ি দিয়ে … অপূর্বের পা থমকে গিয়েছে। প্রেম এগিয়ে এসে রিভালবার ঠেকায় অপূর্বের মাথায় তবে তার আগেই কালো পোশাক পরিহিত গার্ড রা গুলি তাক করে তৃধা আর রিধিমার।
থ মেরে রয়েছে পুরো পরিবেশে। নীরবতার ভাটা পড়ে জারার বলা একটা কথায় …
ওদের ছেড়ে দাও বাবা !
খেপে যান ইব্রাহিম তালুকদার রাগী চোখে তাকায় জারায় দিকে। সবার মনোযোগ যখন জারার দিকে। বেশ কয়েকটি পুলিশ এসে ঘিরে নেয় পুরো অন্দরমহল রোজা সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে , গা এলিয়ে দেয় সোফায়। পরিবেশ ঠান্ডা …
আমায় কেন ভালোবাসলে না রেহান !
জারার গলায় ধরা ছুড়িটা আরো কিছু চেপে ধরে রেহান। ধারালো বস্তু গলায় ঢুকে ফিকনি দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে আসছে তার রেহান রাগি কন্ঠ বলে !
– বেইমান শালি ! বলেছিলাম আমার রোজের থেকে তোর শকুনি নজর দুরে রাখতে .. শুনিস নি।
উচ্চ স্বরে হেসে উঠে জারা..!! কষ্টের তড়ি ভীষণ গভীর, মনের মাঝে কষ্টগুলো জ্বলে পুরে খাঁ খাঁ করছে।
-পরজনম যদি সত্যি হয় তবে সে জন্মে আমি আবারো তোমায় চাইবো। বিধাতার সাথে চুক্তিতে নামবো, তোমাকে যেন আমার করেই দুনিয়াতে পাঠায়।
তাচ্ছিল্যের হাসে রেহান কন্ঠ খাদে নামিয়ে তাকায় রোজার দিকে। হাতে থাকা পিস্তলের নল মাথায় ঘোষচ্ছে মেয়েটা। রেহান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে .. জারা বুকের ভিতর ঝড় উঠেছে। তবে সেই ঝড় আরো কিছুটা বাড়িয়ে দিতে রেহান বলে
– শুধু পরের জন্ম না আগামী ৭জন্মেও আমি আমার রোজ কেই চাইবো। না পাওয়ায় তৃষ্ণায় আবারো মৃত্যু হবে তোমার ।
মলিন হাসে জারা , আর কি পাওয়ার আছে তার দুনিয়ার থেকে রেহানের আলগা হওয়া হাত শক্ত হাতে চেপে ধরে নিজের গলায় নিজেই ছুড়ি চালিয়ে দেয়। কেঁপে ওঠে পুরো অন্দরমহল।
চেঁচিয়ে ওঠেন ইব্রাহিম তালুকদার। এমন টা তো সে চায় নি , নিজের না হোক তাকে বাবা তো ডাকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জাড়া গলা ছিঁড়া মুরগীর মতো ফাল পাড়ে কিছু সময় সে।
ইব্রাহিম তালুকদার ছুতে চায় মেয়ে কে। তবে পুলিশ ইতোমধ্যে বেঁধে নিয়েছে ইব্রাহিম সহ বাকি লোকদের। রেহান নড়ে না একবারে তাকায় না জারার দিকে। সকলেই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে জারার পানে। রিয়ানের চোখ হতে পানি পড়ে , ভালোবাসা কি ভয়ংকর। শেষ একফোঁটা চোখের পানি উপচে পড়ে জারার চোখ থেক।
এতো সময়ের এই ভয়াবহ কাহিনীতেও দুজন পুরুষ নিষ্পল চাহনিতে তার প্রেয়সীকে দেখছে! রোজাও বেশ শান্ত এটা যেন হবার ছিলো।
প্রেম এগিয়ে আসে হাতে গ্লাভস পড়ে ক্ষুতিয়ে দেখে লাশ। চোখ দিয়ে ইশারা করতেই সে বাহিরে চলে যায়। প্রেম এগিয়ে যায় ইব্রাহিম তালুকদারের দিকে , হাত রাখে তার কাধে ফিসফিসিয়ে বলে।
সে বাঘিনী , চিনতে ভুল করেছো । বাকিটা নাহয় জেলে চিনবে… বলেই পুলিশদের ইশারা করে প্রেম ইব্রাহিম সহ বাকি লোকদের নিতে।
রাতের শহর নিস্তব্ধ , মাঝ রাতের কাছাকাছি আজ আর দুই পুরুষের মাঝে ঝগড়া নেই। শান্ত সময় ঢাকায় ফিরেছে সকলে।মোড়ের রাস্তার বাক নিয়েই চলছে গাড়ি পিছনের সিটে রিধিমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে রোজার। আয়ান ঠিক রিধিমা পাশাপাশি বসা কারো মুখে নেই কোনো কথা। দুজনেই নিশ্চুপ …
নিস্তব্ধ হয়েই চলছে সব হঠাৎ কিছুটা দুরে গিয়ে রাস্তায় বিট পড়েই নড়ে ওঠে গাড়ি। রিধিমা পড়তে নিলেই ধরে ফেলে আয়ান তবে এদিকে গাড়িতেই ধপ করে পড়ে যায় রোজা।
আহহ আম্মা ! মরে গেলাম গো।
দ্রুত গাড়ির ব্রেক কষে নির্ণয়। ঘুম পালিয়েছে ,কোমড় চেপে ধরে আছে সে। রেহান পিছন ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে রোজাকে।। রিধিমা দ্রুত টেনে তুলে রোজাকে।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করে রোজা দাঁত কটমট করে একশ গালি ছুড়ে দেয় নির্ণয় কে। কাহিনী নির্ণয়ের অজানা নয়।
গলির পথ পেড়িয়ে গাড়ি এসে থামে নীড় কুঞ্জে সকলে এক এক করে গাড়ি হতে নেমে দাঁড়ায় , সদর দরজার কাছে।
ফজরের আজান পড়েছে রত্না চৌধুরী নামাজ পড়তেই উঠেছিলেন ঘুম ঘুম ভাব চোখে হাই তুলছেন অনববরত। দরজার কড়া পড়ছে এতো সকলে কে এসেছে এই ভেবেই এগিয়ে যায় দরজার কাছে। দরজার খুলতে এক এক করে ভিতরে প্রবেশ করে সবাই। রত্না চৌধুরী কিছু বলতে নিবে তার আগেই থামিয়ে দেয় রিয়ান।
এখন না আম্মু পড়ে কথা হবে।সটলে ভীষণ ক্লান্ত …
রত্না চৌধুরী কালো করে নেয় মুখ কিছুই বলে না তিনি সকলে যেতেই দরজা পেড়িয়ে তিনিও চলে যান নিজের কাজে।
বেলা ১১টা
বসার ঘরে ভীর জমেছে সকলে , সকলেই বেশ চিন্তিত আজ যে বাড়ির বড় ছেলের তলফ পড়েছে এই নিয়েই সকলে বেশ ভাবনায় রয়েছে।
ভীষণ শোরগোল তবে নবাবের আসার নাম নেই । খাবার টেবিলে জানিয়ে দিয়েছে আয়ান – আজ নাকি নির্ণয় তলফ আছে।
তবে কখন আসবে সে , রোজা বসে বসে চিপস খাচ্ছে। টিভিতে আই লাভ ইউ ছবি চলছে। দেব শুকনো মরিচের গুঁড়া দিয়ে ভাত খাচ্ছে।রোজা বেশ মনোযোগ দিয়ে তার খাওয়া দেখছে
রায়হান চৌধুরী ,তর সইছে না নির্ণয় কি বলবে এই ভেবে তার নাজেহাল অবস্থা নিজের কৌতুহল দমাতে রিয়ান কে প্রশ্ন করেন তিনি।
– তা নির্ণয় দাদুভাই কি বলবে ও কি তোমার জানা রিয়ান দাদুভাই।
রিয়ান ফোন নিয়ে ব্যস্ত রায়হান চৌধুরী দিকে না তাকিয়েই উত্তর করে।
– জানি তো দাদুভাই তবে ভুলে গেছি।
পান চিবোচ্ছে রওশনা চৌধুরী। মুখে থাকা পানের পিচ বাটিতে ফেলে বলে ,
আহ একটু ধৈর্য্য ধরো তো বাপু আমার নির্ণয় দাদুভাই আসলে জানতে পারবে।
ঘড়ির কাঁটা ১১টা৫০ ছুঁই,
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামেছে নির্ণয় পড়নে কালো ট্রাউজার আর আর সাদা গেঞ্জি , চুলগুলো এলোমেলো।হাতে ফোন স্ক্রোল করতে করতে এগিয়ে এসে বসে রওশনা চৌধুরীর পাশে কারো দিকে না তাকিয়ে বলে ,
রিধি এক কাপ ব্লাক কফি ?
ভাইয়ের আদেশ পেয়েই কফি বানাতে ছোটে রিধিমা।
নির্ণয় ফোন ঘাটছে সকলকে বসিয়ে রেখেছে সে দিকে যেন তার কোনো খেয়াল নেই। রওশনা চৌধুরী আঙ্গুলে গাল ঠেলে বলে
-তুমি কি জানি বলবে দাদুভাই ?
– বিয়ে করবো !
মাত্রই চায়ে চুমুক দিয়েছিলেন রাহাত চৌধুরী। রেজোয়ান চৌধুরী আর নাজমা চৌধুরী বাসায় নেই । কোন দরকারি কাজে যেন বেড়িয়েছে। চা যে চালুতে উঠে গিয়ে। রায়হান চৌধুরী একবার ছেলে দিকে তাকিয়ে আবারো প্রশ্ন করে।
কি করবে ?
বিয়ে করবো , আমার বউ দরকার । রিয়ান বিয়ে করতে চায় – রিধিমার বয়স হয়েছে আমাদের বিয়ে দিতে হবে।
নির্ণয় কথায় কাশি উঠে যায় রিয়ানে – আয়ান বেচারা বেশ শক খেয়েছে। রাহাত চৌধুরীর ভনিতা ছাড়া বলে ,
-তোমাদের বিয়ে করবে এমন পাত্র পাত্রী তল্লাটে কেউ নেই ।
হেসে ওঠে নির্ণয়, ” কেউ না থাকলে আপনার মেয়ে তো আছেই চাচ্চু।
ভরকে যায় রাহাত চৌধুরী , এই ছেলে যে ঠোট কাটা তা আর অজানা নয়।
ইতোমধ্যে রিধিমা কফিনিয়ে এসে নির্ণয়ের হাত দেয়। রওশনা চৌধুরী সেদিকে একবার তাকিয়ে বলে ।
কবে বিয়ে করতে চাও ?
– আজ রাতেই।
নাক কুঁচকে নেয় রায়হান চৌধুরী দাম্ভিক গলায় বলে ,
চৌধুরী বাড়ির বিয়ে বলে কথা এতো দ্রুত কিভাবে সম্ভব। আয়োজনের একটা ব্যাপার তো আছে।
দরকার নেই বিয়ে আজ হবে ?
– কিন্তু আয়ান দাদুভাইয়ে যদি এই বাড়ির মেয়েকে বিয়েতে আপত্তি থাকে ।
রিয়ান তাকায় আয়ানে চোখে , বেশকড়া গলায় বলে-
সিকদার বাড়ির ছেলের নিশ্চয়ই কোনো আপত্তি নেই চৌধুরী বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করতে ।
আয়ান ডানে বামে মাথা ঝাঁকায় – তার আসত্তি নেই তবে এর মাঝেই বাম হাত দেয় রিধিমা বেশ কড়া গলায় বলে –
সিকদার বাড়ির ছেলের না থাকতে পারে আমার আছে । আমি বিয়ে করবো না – তাকে।
শুধু তাকে কেন- কোনো ছেলেকেই না!
কথাগুলো শেষ করে ছুটে সিঁড়ি দিকে চলে যায় রিধিমা। আয়ান ধ্যানে পড়েছে তবে তৃধার খোঁচা খেতে সে ধ্যান ভেঙ্গে যায় তার। দ্রুত উঠে বলে
-আ আমি একটু আসছি!
রিধিমা ছুটে একদম ছাদের কিনারায় এসে দাঁড়ায় , আবহাওয়া টা আজ ভীষণ ঠান্ডা। দক্ষিণের ফিনফিনে বাতাস এহে গায়ে লাগছে । সাথে চোখে কোনা হতে টুপ করে পড়া ফোটা ফোটা পানি।
গাছের সবুজ পাতার দিকে তাকিয়ে গান ধরে রিধিমা
চাঁদনী পসরে কে আমায় স্বরণ করে ,
কে আইসা দাড়াইছে গো আমার দুয়ারে ।।
তাহারে চিনি না আমি
সে আমারে চিনে
চাঁদনী পসরে কে আমায় স্বরণ করে ,
কে আইসা দাড়াইছে গো আমার দুয়ারে ।।
– দিনের বেলায় চাঁদ কোথায় পেলে?
পুরুষ এক কন্ঠে থেমে যায় রিধিমা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আয়ান এসেছে মুখ ঘুড়িয়ে নেয় আয়ান ধীরে ধীরে এসে দাঁড়ায় রিধিমা পাশে। তালে তাল মিলিয়ে দেখতে থাকে গাছের পাতা। বেশ কিছু সময় নিরবতা চলে দু’জনের মাঝে। মৃদু বাতাসে , রিধিমার বেবি হেয়ার গুলো উঠছে।
পিনপতন নীরবতা দু’জনে মাঝে সময় অতিক্রম হলো অনেক পাখির কিচিরমিচির ওই কান আসছে দুর হতে।
– জানো ভেবেছি , বয়স যখন ৪০কোটায় তখন
একটা মেয়ে বাবু adopt করবো। নিজের না হোক তাকে ভেবেই নাহয় সারাজীবন পার করে দিবো।
মনের মতো গড়ে , সন্তান না থাকার আক্ষেপ পূরণ করবো।
রিধিমা কিছুটা ঘুড়ে চোখে চোখ রাখে আয়ানের, কিছু বলতে যাবে এমন সময় আয়ান আবারো বলে ,
– জানতে চেও না কিভাবে জানলাম।
বেশ গাঢ় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রিধিমা আকাশের পানে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে
– শারীরিক অক্ষম এক নারীকে বিয়ে করে , সুন্দর জীবন নরকে ঠেলে মহান হতে চাইছেন ?
বেশ উচ্চস্বরে হেসে ওঠে আয়ান , হেয়ালি গলায় বলে —
– আমি এমনিতেই মহান মিসেস সিকদার। কথা বাড়াবেন না প্রস্তুতি নিন আমি আপনাকে বিবাহ করছি।
তা আপাতত নিচে চলুন কেনাকাটা করাও তো বাকি ! রিধিমা আর ঘাটে না মাথা নিচু করেই হাঁটা ধরেন ঘরের দিক।
রত্না চৌধুরী দাঁতে দাত কটমট করতে করতে রেহানের ঘরে আসেন , বেশ চটেছেন তিনি। রেহান তখনো ঘুমে .. আশেপাশের দিন দুনিয়ার খবর নেই তার । রত্না চৌধুরী এসেই এক জগ পানি পুরোটাই ঢেলে দেয় তার উপর। ঘুমের মাঝেই ধরফর করে ওঠে ছেলেটি।
-কে কে ?
– আমি ।
চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর করেন রত্না চৌধুরী। রেহান দুহাতে চোখ ডলে নিয়ে তাকায় রত্নার দিকে।
ফুপি তুমি ,কি হয়েছে টা কি ?
– ওরে মুখ পোড়া ,এত ঘুম তোর ওদিকে বাড়িতে বিয়ে লেগেলে গন বিবাহের আয়োজন হচ্ছে। তোর বউ অন্য কেউ নিয়ে ভাগবে ..
রেহানে মুখ টা কেমন পানসে হয়ে যায়। তার রোজ অন্য কারো –
এইটা ভুল সে অন্য কারো জিনিস ধরেছে।
– কবে বিয়ে ?
– আজ রাতে !
ওও তা ভালো তো আয়োজন না করে এখানে কি করছো সময় নেই।
তুই কি মজা করছিস?
– অলরেডি সিলেট গিয়ে তাদের বিয়ে হয়েছে ফুপি এখন চাইলেও কিছু সম্ভব না। কথা না বাড়িয়ে সব মেনে নাও…
আমি আজকের ফ্লাইটে ইন্ডিয়া যাচ্ছি।
রত্না চৌধুরী মুখ কেমন চুপসে যায়। কি হলো ব্যাপারটা এই ছেলের মন মর্জি কিছুই বুঝে না সে।
-তা বুঝলাম তোর সাথের মেয়েটা কই ?
– কবরে
– মানে
-মানে এখন যাও ঘুমাতে দেও ।
রত্না চৌধুরী রাগি চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে .. রাগ নিয়ে ঘর হতে বেড়িয়ে যায় ।
বসার ঘরে ভীর জমেছে , পোশাক ওর্নামেন্সের আসর জমেছে। নির্ণয় আঙ্গুল কামড়ে বসে আছে এদিকে একের পর এক লেহেঙ্গা
বাছাই করছে রোজা। একটাও তার মন মতো নয়। রিধিমা এক লাল রঙের লেহেঙ্গা পছন্দ করেছে ,তৃধাও তাই । তবে দুজনের পছন্দ হলেও রোজা বুঝতে পারছেনা কি নিবে
ধৈর্য্য হার মানছে নির্ণয় বসা থেকে উঠে এসে দাঁড়ায় রোজার পাশে , পিংক রঙের এর কারু কাজের লেহেঙ্গা বেছে তুলে দেয় রোজার। রোজা কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকায় নির্ণয়ের দিকে
এইটাই পড়বি সন্ধ্যায় । এর বাহিরে যেন আর কোনো ড্রেস নেওয়া না হয়।
রোজা আশেপাশে তাকাতেই খেয়াল হয় সকলে মুখ চেপে হাসছে। সকলেই তাদের পছন্দ ওর্নামেন্স বেছে নিয়ে যার যার ঘরে চলে যায় পার্লার থেকে লোক এসেছে
ঘড়ির কাটাতে সময় তখন বিকেল পাঁচটা
তিন ঘরে সাজানো হচ্ছে তিন কনে তবে বর দের খবর কারোর জানা নেই ।
তিন বউ কেই সাজনো তিন বিউটিশিয়ান দিয়ে রোজা মেকআপ প্রায় শেষের দিক। এবার পালা ওর্নামেন্স পড়ানো।
হাঠাৎ কেমন গা গুলিয়ে আসে মেয়েটার সাজ অপূর্ণ রেখেই ছুট লাগায় ওয়াস রুমে দিকে।
বেশ কিছু সময় পড় বেরিয়ে আসে রোজা নাজেহাল লাগছে। আবারো এসে বসে সাজতে। মাথাটা কেমন ঘুরছে।
অতিক্রম হতে থাকে সময় চারপাশে সন্ধ্যার আগমনী ঘটছে। মসজিদের মাইকে আযান হচ্ছে।
সাজ পুরো শেষের দিক। রোজা কে শেষ গহনা গায়ে জড়িয়ে দিয়েই হাফ ছাড়ে মেয়েটি।
– মাশাআল্লাহ ম্যাম কি সুন্দর লাগছে আপনাকে।
হালকা লজ্জা পায় মেয়েটা আজ তার বিয়ে । আচ্ছা নির্ণয় ভাই কি তাকে দেখে লজ্জা পাবে। ধুর কি বলছে সে নির্ণয় ভাই না তার উচিত হবে নির্ণয় ভাইকে দেখে লজ্জা পাওয়া।হাহ
রোজা বসা থেকে উঠে দ্বারায় ভাড়ি লেহেঙ্গা কোনো মতে ধরে দৌড় লাগায় বাকি বউ দের দেখতে।
কিছু সময়ের মধ্যে এসেও পড়ে প্রথমে আসে তৃধার ঘরে একমাত্র ভাবি বলে কথা তৃধার সাজ শেষ হয়েছে অনেক সময় নতুন বউ তাই আর বের হয়নি রোজা এসে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে “হায় আমি শেষ ” । কি লাগছে গো তোমাকে
_ তৃধাও একটু নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে , উফফ বার্বি ডল তোমাকে তো পুরাই আজকে অন্যরকম লাগে। ইসস কারো নজর না লাগে।
হ্যা হয়েছে এবার এসো আপা কে দেখে আসি !
কথাটুকু বলেই এক টানে তৃধাকে সা থেকে টেনে তুলে রোজা। এদিক ওদিক না তাকিয়ে রিধিমা ঘর পেড়িয়ে গিয়ে বসে।
– ওরে আম্মা তোমাকে তো সে লাগছে আপা পুরোই যেন পরি।
লজ্জা মাথা নুইয়ে নেয় রিধীমা। তৃধা এগিয়ে এসে দেখে তাকে..
খুব সুন্দর লাগছে।
নিচ হতে ডাক পড়েছে , রত্না চৌধুরী ডাকতে এসেছে, যদিও এই বিয়েতে তার মত নেই তবুও মুখ ফোটে কিছু বলার উপায় নেই।
রত্না বেগম তাড়া দিয়ে বলেন নিচে চলো তোমাদের অপেক্ষায় সকলে।
রোজা বসা ছেড়ে উঠে দাড়ায় রত্না চৌধুরীর কাছে ,আসতে নিলেই থামিয়ে দেয় তিনি বেশ কড়া গলায় বলেন ,
-প্রয়োজন নেই নিচে চলো !
মূহুর্তেই হাসি হাসি মুখটা পানসে হয়ে যাঢয় তৃধার খেয়ালে আসে ব্যাপারটা কিছু না বলে রোজার পাশে এসে দাড়িয়ে বলে।
– চলো তবে ,
তিনজন মিলে নিচে আসে তবে , আসতেই যেন চোখ কপালে। তিন পাত্র যেন গেঞ্জি পড়ে বিয়েতে বসেছে মানে কারো কোনো সাজ নেই। রোজা , রিধিমা, তৃধা। তিন জনের এসেই বসে যার যার বরের পাশে।
রোজা মুখ ফুলিয়েছে , নির্ণয় পাশ থেকে তাদের বিয়ের কাখজ হাতে তুলে দেন কাজির হাতে। সে-ই আগের মতোই সব ঠিক থাকে শুধু সাক্ষী হিসাবে আরো দুজন যোগ হয়। রায়হান চৌধুরী আর রওশনা চৌধুরী।
এক এক তিন জনের কাগজে সই করে। একের পর এক সকলের বিয়ে শেষ হয় ।
দোতলার ওই সিঁড়ি ফাঁক হতে নীরবে সম্পূর্ণ কাহিনী কেউ শান্ত চোখে দেখে চোখের পানি ফেলে।
বিয়ে কার্যক্রম শেষ হতে লাগেজ হাতে নিচে নেমে আসে সে।
কাজি সাহেব বিদায় নেয়। রেহান এসেছে দেখেই এগিয়ে যায় রত্না চৌধুরী। মুখ ফুটে কিছু বলতে নিবে তার আগেই থামিয়ে দেয় রেহান ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় নির্ণয়ের রোজার কাছে।
প্রথমেই হাত বাড়িয়ে দেয় রোজার দিকে , রোজা হাত মিলায় না। আবারো ঘুড়িয়ে নেয় সে। কাঁপা কাঁপা গলায়, এক রাশ দুঃখ নিয়ে
বলে ” ভালো থেকো ।
নির্ণয়ের দিকে হাত বাড়ানো আগেই নির্ণয় দুহাতে বুকে জড়িয়ে নেয় রেহান । কানের কাছে ফিসফিস করে বলে ,
দাবার চাল টা পাল্টে গেলো তো ?
বাকা হাসে রেহান , বেশ কটাক্ষ করে বলে — নিয়তির খেলা ভীষণ নিষ্ঠুর যা বুঝা দায়। চলে যাচ্ছি ফিরবো না তা বলিনি !
কথাগুলো শেষ করেই নির্ণয় কে ছেড়ে বেড়িয়ে যায় রেহান যাওয়ার আগেই শেষ একবার ঘুরে তাকায় তার প্রিয়সীর মুখের পানে।
একে একে সব ঝামেলা শেষ , রত্না চৌধুরী মেয়েদের ঘরে যেতে বলেন । উপরের ঘর সাজানোর হয়েছে তাদের জন্য , এসব তিন ভাই বেশ যত্নে লোক দিয়ে সাজিয়েছে। একে একে তিন বউকে তাদের ঘরে পাঠানো হয় ।
বাকিরাও যার যার মতো স্থান ত্যাগ করে। বসার ঘরে আপতত তিন পাত্র সাহেব!
এদের মধ্যে সবার প্রথমেই আয়ান কে উপরে যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দেয় নির্ণয়। বেচারা রিয়ান কে আটকে দেয় নিজের কাছে।
দোতালার একদম শেষের ঘরটায় রিধিমা কে দেওয়া হয়েছে আয়ান বেচারা বেশ নারভাস গুটি গুটি পায়ে প্রবেশ করে ঘরের ভেতর বেশ আগ্রহ নিয়েই প্রবেশ করছে সে । তবে একি
চোখ দুটো যেন তার বেড়িয়ে আসার উপক্রম বউ তার অপেক্ষা না করে ঘুমের সাথে পারি জমিয়েছে ওই দুরে। মানে ঘুমের রাজ্যে..
আয়ান বেচারার যৌবনে কড়া পুরুক নিজেরে একশত একটা গালি দিয়ে নিজেও গিয়ে শুয়ে পড়ে রিধিমার পাশে রজনীগন্ধা ফুলে সুভাস আসছে নাকে।
নিচতালায় বসার ঘরের সোভায় গা এলিয়ে দিয়েছে নির্ণয় তার পায়ের কাছে বসেই পা টিপে চলেছে রিয়ান। বেচারা শুধু কান্না বাকি রেখেছৈ ঘড়িতে রাত ১২টা কাছাকাছি নতুন বউটা নিশ্চয়ই রাগ করছে উপায়ান্তর না পেয়ে সে বলে
– ও ভাই ভাই ….
নির্ণয় ফট করে তাকায় রিয়ানে চোখের ইশারায় বলতে বলে কাহিনী কি ?
– ঘরে রোজ তোমার অপেক্ষায় করছে তো ।
– তো কি হয়েছে ?
– তুমিও যাও আমাকেও যেতে দাও !
– কোথায় যাবি ?
– ঘরে বউ একা ভাই ।
– বিয়ে না করতেই বউয়ের আঁচল ধরেছিস ছিঃ তুই না পুরুষ সিংহ।
এবার বুঝি কান্নাই করে দিবে রিয়ান। নির্ণয় বেশ শান্ত , মুখে কোন হাসি না
-ব্রো আজ আমার চাঁদ রাত এতো গুলো বছরের সাধনার রাত।
প্লিজ ভাই ছাড়ো।
আমার রুচা এতো খারাপ নয় , আমার সুন্দরী বউ ছেড়ে তোকে ধরবো। ছিঃ কি সব নোংরা কথাবার্তা
– ভাই
– যাহ সর
রিয়ান কে আর পায় কে দ্রুত উঠে দূর মারছ দোতালার ঘরে।
বেশ উচ্চস্বরে হেসে ওঠে নির্ণয় নিজেও পা বাড়ায় ঘরে দিকে।
”
প্রায় বিকেল থেকেই প্রায় কয়েকবার বমি হয়েছে রোজার – কাহিনী কি নিজেও যেন বুঝতে পারছে না। শরীর ভাল লাগছে না ভীষণ না দুর্বল অনুভব ভাড়ি লেহেঙ্গা আর গহনার সাজে নিজেকে আরো বিরক্ত লাগছে ।
নির্ণয় ঘরে ঢোকে রোজাকে দেখেই বেশ চিন্তিত লাগছে। ঘরের দরজা লক করে এসে গাঁয়ের টিশার্ট এক টানে খুলে এসে বসে রোজার পাশে।
পাশে নির্ণয় অস্তিত্ব অনুভব হতেই নির্ণয়ে কাঁধে মাথা রাখে রোজা।
দুচোখ বুঝে নেয় আবশে বেশ শান্তি লাগছে। নির্ণয় হাত বুলায় তার চুল। হঠাৎ আবারো গা গুলিয়ে আসে নির্ণয়ের গা হতে ভেসে আসা পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই নিজকে সামলাতে পারে না রোজা ছুটে যায় .. ওয়াস রুমের দিকে। ভরকে যায় নির্ণয় দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় রোজার কাছে। বেশ কিছু সময় পর ঘরে আসে দুজনেই।
– খেয়েছি কিছু ?
নির্ণয়ের আদুরে গলা পেয়ে , রোজা বেশ বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বলে , চকলেট এনেছে।
মুসকি হাসে নির্ণয় ঘরে আসার আগে ফোনে মেসেজ ঢুকেছে চকলেট খেতে ইচ্ছে তার। একমাত্র বউয়ের আবদায় ফেলা যায় কিহ? ফ্রিজে থেকে এনে রেখেছে
-যাহ ভুলে গেছি , এখন কি হবে ?
-কচু হবে ! সরুন তো আমি চকলেট আনছি গিয়ে।
নির্ণয় কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠতে নিলেই রোজাকে টেনে কোলে বসায় নির্ণয়। নজর দেয় গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় ..
সরুন তো বমি করেছি আপাতত স্বাদ নেই।
– উহু তুই মানেই স্বাদে ভরপুর।
-কেমন জানি লাগছে সরুন আপনি !!
নির্ণয় পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে তা নিজের মুখে নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় রোজার দিকে।
– কেমন জান । এই যে একটু চকলেট লাগিয়ে নিয়েছি আপতত মজা লাগবে। খাবে ? যাহ পাখি তুমি তো খেতে পারবে না আপতত আমি চেটে চেটে খাই।
– কি চাটবেন?
কোনো প্রকার ওয়ার্নিং ছাড়াই রোজার ঠোট জোড়া নিজের আয়ত্তে নেয় নির্ণয়। বেশ কিছু সময় উপভোগ করে রোজার ঠোঁটে স্বাদ। রোজাও তাল মিলায় তাতে।
নিঃশ্বাস আটকে আসছে রোজার কোনোমতেই নির্ণয়ের থেকে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে নিয়ে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নেয় সে।
ঠোঁট মুছে বাকা হাসে নির্ণয়। জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট চেটে বলে
বেইবি বিলিভ মি , এতো দিন ডার্ক পছন্দ ছিলো তবে,এখন পছন্দ বদলে ডার্ক পিংক। অনলি জাস্ট ফর ইউ জান
রোজা হতভম্ভ চমকিত। বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে ,
– ডার্ক পিংক মানে ?
-পিংক কালারের সাথে চকলেট। উফফ কি কম্বিনেশন জাস্ট লুক এন্ড ফিল
কথাটা শেষ করেই আবারো রোজার ঠোট জোড়া দখলে নেয় নির্ণয়। বেশ অনেক সময় পড় আবারো ছেড়ে দেয় রোজা….
গা ভর্তি ভাড়ি গহনা আর লেহেঙ্গার ভাড়ে ভীষণ নাজেহাল মেয়েটা। নির্ণয় এক এক করে খুলে দেয় রোজার সকল গহনা।
ভাইয়ের থেকে ছাড়া পেয়ে বউয়ের আদর খেতে এসে যেন বেশ বড় এক বিপদে পড়েছে বেচাড়া। তৃধা কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রেখেছে রিয়ান কে।
– ও বউ কথা শোন পাখি ,
রাগে দাঁতে দাঁত কটমট করছে তৃধা। আজ নাকি তার বাসার রাত। হু কোন রাত হবে না, মারামারি হবে!
– ও বউ এইভাবে কিন্তু এনার্জি লস হচ্ছে বুঝ একটু।
আবারো রাগি চোখে তাকায় রিধিমা বেশ চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ,
– তুই আমার তোর এনার্জি দুটোই ঘরের বাহিরে ভাগ শালা।
– আমি কিন্তু ভার্জিন ছিলাম, বুঝলিনা।
হাতে কাছে থাকা গ্লাস ভর্তি পানি পুরোটাই রিয়ানের গায়ে ছুড়ে মারে তৃধা। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রিয়ান। নিজের দিকে তাকিয়ে পুরাই যেন বোকা সেজে গেছে সে .. একহাতে কাপড় ঝেড়ে তৃধাকে কিছু বলতে নিবে হঠাৎ কানে বাহিরের চেঁচামেচি।
এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না রিয়ান দ্রুত গিয়ে খোলে ঘরের দরজা। নির্ণয় রোজাকে কে কোলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। কাহিনী যেন পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে যায় তৃধা। এইতো ভালোই ছিলো রোজা।
রিয়ান ছুটে এসে ধরে নির্ণয় কে , ব্যস্ত স্বরে বলে …
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৬ (২)
কি হয়েথে ভাই ? কি করেছো ওর সাথে তুমি ?
– বিষ খাওয়াইছি ! এখন কথা না বলে জলদি দরজা খুল হাসপাতালে নিতে হবে।
রিয়ান দ্রুত গিয়ে খোলে গাড়ির দরজা ! নির্ণয় রোজাকে কোলে নিয়েই বসে বেক সিটে ।