প্রিয় ডাক্তার সাহেব গল্পের লিংক || মারশিয়া জাহান মেঘ

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১
মারশিয়া জাহান মেঘ

“এই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবনা, এই মেয়ে প্রেগনেন্ট।”
কথাটা শুনতেই চমকে উঠে বাড়ি সদ্য লোক। পাঠান সাহেব কোমল কন্ঠে বললেন,
“এইসব কি বলছ বাবা? তোমার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আমার মেয়ে এমন নয়।”
“আমার কোথাও ভুল হচ্ছেনা আংকেল। আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবনা।”

কথাটি বলেই বর, বরপক্ষকে তাড়া করে চলে যাওয়ার জন্য। সবাই নিরব। বধূ সেজে বসে থাকা আভার চোখ ছলছল করছে। সে চাইলে চিৎকার করে অনেক কিছুই বলতে পারতো, কিন্তু বলেনি। যাকে এতটা বছর ভালোবেসে বিয়ের পিরিতে বসেছিল সে কিনা তাকে এত বড় অ’প’বা’দ দিয়ে চলে গেল! যেই মেয়ে আজ অব্দি হাত ছুঁতে দেয়নি সে কিনা!.. আর কিছু ভাবতে পারলোনা আভা। বসে পড়ল ফ্লোরে। ঝাপসা চোখে আনমনে তাকিয়ে আছে। পাঠান সাহেব স্ত’ব্ধ। রাত্রি বাবার কাছে গিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“বাবা, তোমার মনে হয়? আভা এমন।”
জবাব দিলেন না পাঠান সাহেব। দুটো মেয়েকে বেশ ভালোভাবেই, ভালো শিক্ষা দিয়েই বড় করেছেন তিনি। একটু আগের সব কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে গেল মনে হচ্ছে। তখনি আভার মামা রাফসান চৌধুরী বললেন,
“আমার ছেলে তাশরীফ করবে আভাকে বিয়ে।”
পাঠান সাহেব অবাক হয়ে কাছে আসলেন রাফসান চৌধুরীর। তারপর বললেন,
“এইসব কি বলছেন ভাইজান?”

“হ্যাঁ, তাশরীফ করবে আভাকে বিয়ে। তাশরীফ এদিকে আসো….”
এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা তাশরীফ বাবার কথায় হতবাক!। কি বলছে তাঁর বাবা? সে আভাকে বিয়ে করবে? সেতো গ্রামে আসতেই চাইনি। তার বাবা বেশ কয়েকবার বলার পর হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে আভার বিয়েতে এসেছিল। তাশরীফ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“এইসব কি বলছ বাবা? হুট করে আমি আভাকে বিয়ে করব?”
“হ্যাঁ করবে। এই বাড়ির মান-সম্মান এখন তোমার হাতে।”
তাশরীফ তাকালো আভার দিকে। আভা কথা বলছেনা। তার দৃষ্টি অন্যদিকে। তার ফুফু অশ্রু চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। তাশরীফ কিছু একটা ভেবে বলল,
“আমি আভাকে বিয়ে করব।”

একটু আগেই তাশরীফ আর আভার বিয়ে হয়ে গেল। চোখে পা’নি টলমল করছে রাত্রির। সে তাশরীফকে পছন্দ করত। তাশরীফের জন্যই সে এতদিন কাউকে বিয়ে করছেনা। ‘পড়াশোনা করব, পড়াশোনা করব’ বলে বিয়ে থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তখনি বিছানা থেকে উঠে বসে সে। চোখের পানি মু’ছে নিজেই নিজেকে বলল,
“যা হবার ছিল তাইই হয়েছে। আমি তাশরীফ ভাইকে পছন্দ করতাম। সেতো আমাকে পছন্দ করতোনা।”

গাড়িতে বসে আছে তাশরীফ আর আভা। আভার দৃষ্টি জানালার বাইরে। সে গভীরভাবে কিছু ভাবছে। তাশরীফও জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। সে ভাবতেই পারছেনা সে আভাকে বিয়ে করেছে। হুট করে কি থেকে যে কি হয়ে গেল!। আভা ঘাড় ফিরিয়ে এক পলক তাকালো তাশরীফের দিকে। আর শুকনো একটা ঢো’ক গিলে মনে মনে বলল,
“যাকে কিনা, য’মের মত ভ’য় পাই, তাকেই বিয়ে করতে হয়েছে?”
তখনি তাশরীফ ড্রাইভারকে বলল,
“গাড়িটা এইখানে একটু রাখো।”
“কেন স্যার?”

তাশরীফ কোনো জবাব দিলোনা। মাঝপথে এইভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে বলে বেশ ভীত হয়ে পড়ল আভা। কি জানি এখন আবার কি করে তাশরীফ। তাশরীফ দাম্ভিক একটা ছেলে। শান্ত স্বভাবের। বেশি কথা বলেনা। আবার যেই কথা বলে সেই কথাতে অটুট থাকে। তার চেহারায় সবসময় রাগী রাগী একটা ভাব থেকেই যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাশরীফ ফিরে আসে। আভা দেখল হাতে খাবার।
“চলুন…”
তাশরীফ আভার দিকে না তাকিয়েই খাবারের প্যাকেটটা আভার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“খাবারটা খেয়ে নে।”

হকচকিয়ে উঠে আভা। সে সত্যিই কি কথাটা শুনেছে? নাকি স্বপ্ন দেখছে। তাশরীফ বিরক্ত হয়ে তাকালো আভার দিকে। তারপর বলল,
“কি বলছি, শুনতে পাসনি?”
সঙ্গে সঙ্গেই আভা চট করে তাশরীফের হাত থেকে খাবারের প্যাকেটটা নেয়। নয়তো কখন ধ’ম’ক দিয়ে বসবে কে জানে।
তাশরীফ গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে। সেদিকে তাকিয়েই আভাকে বলল,
“খাবারটা হাতে সাজিয়ে রাখার জন্য আনিনি, খাওয়ার জন্য এনেছি।”
“আমার ক্ষিদে পাইনি।”
তাশরীফ তাকায় আভার দিকে। খাবারটা আভার হাত থেকে নিয়ে নিজে মেখে আভার মুখের সামনে ধরে বলল,
“হা কর।”

আভার বিস্ময় এখন আকাশসম। চোখগুলো বড় বড় করে বলল,
“কি?”
তাশরীফ আভার দুই গা’ল চে’পে হা করিয়ে আভার মুখে খাবার ভ’রে দেয়। তারপর মিনমিনিয়ে বলল,
“ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী খুব ভাল করেই জানে, কিভাবে রোগীকে খাওয়াতে হয়।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ২