প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১
মারশিয়া জাহান মেঘ
“ভাইয়া, ভাইয়া তুমি কোথায়? প্লিজ আভাকে বাঁচাও, বাঁচাও আভাকে ভাইয়া।”
ফোনের ওপাশ থেকে তোহার কথা শুনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাশরীফ। ব্যস্ত স্বরে বলল,
“কি হয়েছে তোহা? কাঁদছিস কেন?”
“ভাইয়া, এত কিছু বলার সময় নেই ভাইয়া। তুমি জলদি হসপিটাল থেকে বিয়ে বাড়িতে এসো। এসো ভাইয়া, প্লিজ এসো।”
ওপাশ থেকে বোনের করুণ কন্ঠ শুনে হসপিটাল থেকে একপ্রকার বিদ্যুৎ গতিতেই তাশরীফ বেরিয়ে পড়ল। সে বরাবরই শান্ত স্বভাবের দাম্ভিক মানুষ। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানেই তাকে দেখা যায় না। কেউ সেরুমভাবে বলেও না। কারণ জানে তাশরীফ কখনোই কোনো ইভেন্টে থাকে না। তার কাছে পরিবারের থেকে বেশি ইম্পর্টেন্ট হসপিটাল। সে মনে করে ডক্টরদের ‘নিজস্ব’ বলতে কোনো শব্দ নেই। ডক্টর মানেই হসপিটাল। তাশরীফ এক প্রকার দৌঁড়েই চাচাতো বোন আভার বিয়েতে উপস্থিত হলো। সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো সবকিছু কেমন যেন মলিন। আভা অশ্রু চোখে বসে আছে ফ্লোরে। তার চাচা, মাথা নিচু করে বসে আছে। তোহা ভাইকে দেখে দৌঁড়ে আসে ভাইয়ের কাছে। কান্না করে করে বোনটা তার চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। অদ্ভুতভাবে আজ তোহাকে ভালোভাবো পরখ করলো সে। বোনটা কেমন বাচ্চাদের মত কাঁদছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ভাইয়া, ভাইয়া প্লিজ তুমি আভাকে বিয়ে করো ভাইয়া। দেখ, আশেপাশের লোকজন কত আজে’বা’জে কথা বলছে আভাকে। পাত্র পা’লি’য়ে গেছে অন্য মেয়েকে নিয়ে। অথচ ব’দ’না’ম হচ্ছে আভার। সবাই বলছে আভার নাকি চ’রি’ত্র খা’রা’প তাই বর আসেনি।”
এক মিনিটের জন্য থমকে গেল তাশরীফ। আভাকে সে বিয়ে করবে! না এইটা তার পক্ষে কখনোই সম্ভব না।
“ভাইয়া, এই ভাইয়া, কথা বলছ না কেন?”
তোহার কথার জবাবে তাশরীফ বলল,
“এইটা কখনোই সম্ভব না তোহা। আভা আমার কাজিন।”
“ভাইয়া, আভাকে ওরা ভালো থাকতে দিবে না। প্লিজ বিয়ে করো ভাইয়া, প্লিজ বিয়ে করো।”
তোহার না’ক চোখ লাল হয়ে গেছে একেবারে। তাশরীফের কাছে তার বড় চাচা পাঠান সাহেব আসেন। তাশরীফ চাচাকে শান্ত কন্ঠে বলল,
“আমি আভাকে বিয়ে করব।”
হসপিটাল থেকে রাতে ব্যাক করল তাশরীফ। নিজের রুমে যাবে এমন সময় থেমে যায় তোহার রুমের সামনে। মুহুর্তেই ভে’ত’রে চিনচিন ব্যথা অনুভব করে সে। হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে তোহা আর আভা। এতদিন সে একটা বাচ্চাকে সামলাতেই হি’ম’শি’ম খাছিলো। এখন ২ টাকে সে কিভাবে সামলাবে ভেবে পেলো না। একটা লম্বা দীর্ঘ’শ্বা’স ফেলল তাশরীফ। পা বাড়ালো নিজের রুমের দিকে। তোহার রুম পেরিয়ে তার রুমে যেতে হয়। রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে যায় সে। গোসল করে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।
এক মিনিটেই জীবনের অধ্যায় কিভাবে বদলে গেল তার। অথচ সে বিয়ে করার এক মিনিট আগেও ভেবেছিল কখনো সে বিয়ে করবে না। রাতের আকাশটা তাশরীফের আজ মোটেও ভালো লাগছে না। বিরক্ত হলো সে নিজের উপর। রুমে চলে গেলো। রুমে যেতেই আলমারি থেকে বের করল একটা বড় ফ্রেমের ছবি। হাসিমুখের দুইটা মানুষের পাশে দুইটা সুন্দর বাচ্চা। এই যে তোহা। বাবার কোলে কেমনভাবে হেসে বসে আছে। আর এই যে এইটাতো তাশরীফ। তার মায়ের কোলে বসে আছে। কি সুন্দর ছিল পরিবারটা! একদিন? একদিন একটা গাড়ি এক্সি’সে’ডে’ন্টে সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। তোহা আর তাশরীফ বেঁচে থাকলেও বেঁচে নেই মিস্টার রাফসান চৌধুরী আর মিসেস নীরা চৌধুরী। তাশরীফ ছবিটিতে হাত বু’লি’য়ে বলল,
“ডেড, জানো? এই অনিশ্চিত জীবনে কখনো কাউকে জড়াতে চাইনি। হুট করেই জড়িয়ে ফেললাম।”
” এই তোহা, তোহা…, এত বেলা হয়ে গেছে উঠছিস না কেন? উঠ।”
ঘুম কন্ঠে তোহা বলল,
“ইশশ, আভা ঘুমুতে দে। সারা রাত ভালোভাবে ঘুমাইনি।”
“আরে ১১ টা বেজে গেছেতো।”
“কি! ১১ টা!”
লাফিয়ে উঠে বসে তোহা। তড়িঘড়ি করে বলল,
“আজব! আগে ডাকলি না কেন?”
“আমিইতো উঠেছি মাত্র।”
তোহা কিছু একটা ভেবে দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তোহার পেছন পেছন আভাও গেল। তাশরীফের রুমে ঢু’ক’লো তোহা। দেখলো ভাই রুমে নেই। সাথে সাথে তোহার ফোন বে’জে উঠল। তাশরীফ কল দিয়েছে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,
“ঘুম ভেঙ্গেছে তোহা?”
“ভাইয়া, তুমি ডাকলে না কেন আমাদেরকে? এখন কলেজ যেতে কত্ত লেইট হয়ে যাবে।”
“আজ কলেজ যেতে হবে না। গতকাল অনেক রাত অবধি জেগেছিস আমি জানি, তার জন্যই ডাকিনি।”
তোহা আলতো হেসে বলল,
“তুমি খেয়ে গেছ ভাইয়া?”
“না, বাইরে থেকে লাঞ্চ করে নিব একেবারে। নিচে টেবিলে খাবার সাজানো আছে। তুই আর ওহ খেয়ে নে।”
তোহা মিনমিনিয়ে হাসলো আভার দিকে তাকিয়ে। তারপর ভাইকে বলল,
“ওহ কে ভাইয়া?”
ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,
“আভা আর তুই।”
“আভা না ভাইয়া, তুই আর তোর ভাবী বলো।”