প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৮
মারশিয়া জাহান মেঘ
আভা গা’ল ফুলিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। গা’লে দুই হাত রাখলো সে। তাশরীফ খাবারের প্লেট সামনে নিয়ে মেখে আভার দিকে এগিয়ে বলল,
“হা কর।”
“আমি খাব না।”
“দেখ আভা, রা’গ কিন্তু যায়নি এখনো। খেতে বলছি খা।”
তাশরীফের দাম্ভিক কন্ঠ শুনে হা করল সে। তাশরীফ ধীর কন্ঠে বলল,
“ওনাকে খাওয়াতে আমাকে আসতে হলো এইখানে। মেয়েরা এত রং তা’মা’শা কিভাবে করে!”
“রং তা’মা” শা করলে যদি এমন কেয়ার পাওয়া যায় তাহলে রং তা’মা’শায় করা উচিৎ।”
তাশরীফ কথা বলছে না। সে চুপচাপ খাইয়ে দিচ্ছে আভাকে। তাশরীফের নিরবতা আভার বোধহয় একদম ভালো লাগছে না। সে খুঁ’চি’য়ে বলল,
“মানুষ এত গো’ম’ড়া কিভাবে যে হয়! আল্লাহ এই জানে।”
তাশরীফ একদম নিচু স্বরে জবাব দিলো,
“ডাক্তারদের চরিত্রই এমন।”
“দুশ্চরিত্র ডাক্তার হলে সমস্যা কোথায় শুনি?”
তাশরীফ তাকালো আভার দিকে। আভার একদম কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
“দুশ্চরিত্র হলে তোরই সমস্যা। ২ দিন আর দাঁড়াতে পারবি না।”
তাশরীফের এহেন বাক্য শুনে থমকে গেল আভা। দুশ্চরিত্র হতে বলেছে বলে সত্যি সত্যিই হয়ে যাবে! মানুষ এমনও হয়!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাশরীফ প্লেটে পানি ঢা’ল’তে ঢা’ল’তে বলল,
“এখন চুপ করে গেলি কেন? আয় ওই ব্যবস্থা করি।”
“কোন ব্যবস্থা?”
আভার চোখ মুখে বিস্ময়। সে আমতা আমতা করে আবারও বলল,
“বিয়ের পর।”
“আমাকে বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থার কথা বলেছি। তুই কি কোনোভাবে অন্য কিছু ভেবেছিস!”
চোখ মুখে ল’জ্জা ভাসমান আভার। সে কি ভেবেছিল! আর তাশরীফ কি বলল। তার আর কথা বলার মু’খ রইলো না।
“কি হলো, চল নিচে আয়। দরজা বন্ধ করতে হবে না?”
“এসেছিলেন কিভাবে? এত রাতে দরজা খু’লে দিলো কে?”
“কে আবার? ফুপ্পি আম্মু।”
“এখন চলে যাবেন কেন? থাকেন। সকালে যাইয়েন। এই রাতে আপনাকে পাঠাতে চাই না। রাস্তাঘাটও ভালো না।”
“এত ভাবলে এত দূর থেকে আনাতি না।”
আভা অন্য দিকে মুখ ঘুরালো। নিষ্পাপ আবদার,
“থেকে যান না। এই রাতে যাওয়ার কি দরকার? ভোরে না হয় চলে যাবেন।”
“দুইদিন পর বিয়ে। এখন থাকলে খারাপ দেখায় না?”
আভা অবাক হলো। সে তড়িঘড়ি করে বলল,
“আজবতো! এমনভাব যেনো আমরা অবিবাহিত যুবক-যুবতী। আমরাতো বিবাহিত দম্পতি।”
“বাব্বাহ্ তোর মুখেতো বেশ কথা ফুটেছে আভা।”
তাশরীফের রসিক স্বরের কথা শুনে ঝি’ম মে’রে রইল সে।
তাশরীফ বিছানায় বসে মুজা জোড়া খু’লতে খু’ল’তে বলল,
“সকালে ডেকে দিস কিন্তু। নয়তো ল’জ্জা’য় পড়তে হবে।”
আভা চঞ্চল হয়ে মুখে হাসি ফুটালো। কিছুটা উচ্চস্বরেই বলল,
“আচ্ছা।”
তাশরীফ ঘুম থেকে উঠতেই রুমটাকে অচেনা অচেনা লাগছে ভাবতে ভাবতে হুট করেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো তার। চমকে উঠে সে। মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখে মাথায় হাত তার। ১০:১৫ বাজে। জলদি টিশার্ট পড়তে পড়তে বিছানা থেকে নামে সে। আভা আসে রুমে নাস্তা নিয়ে। তাশরীফ বিরক্ত হয়ে বলল,
“তোকে না বলেছি? ভোরে ডেকে দিতে। এখন আমি কিভাবে যাব? মানুষ কি ভাববে?”
“আজব! কি ভাববে? জামাই মধ্যরাতে বউয়ের কাছে এসেছে। মানুষ কি বোকা নাকি? বুঝে না কিছু?”
“মানে! এই আভা, তুই কি বলছিস এইসব হুম? এমন ভাব করছিস যেনো তোর সাথে রোমাঞ্চ করতে এসেছি।”
“ভুল কি বলেছি? সারা রাততো আপনার বু’কে’ই আমার মাথা ছিল।”
“কি!”
“জি, এখন যান জলদি ওয়াশরুমে যান। ফ্রেশ হয়ে আসুন। মা নাস্তা পাঠিয়েছে আপনার জন্য।”
তাশরীফ আভার হাত টে’নে নিজের কাছে একদম নিয়ে আসে। তারপর দাঁতে দাঁত চে’পে বলল,
“কি একটা বিশ্রী ব্যাপার হয়েছে বুঝতে পেরেছিস হুন? মানুষ বলবে ২ টা দিন বউকে ছাড়া থাকতে পারলো না?”
আভা গা’লে হাত রাখে তাশরীফের। তারপর নে’শা’লো কন্ঠে বলল,
“থাকতে পারবে কেন? বউ ছাড়া পুরুষ মানুষ ভালো থাকে? অবিবাহিত থাকলে আলাদা হিসাব। কিন্তু বিয়ে করার পর, বউ ছাড়া কোনো পুরুষই থাকতে পারে না। বুঝলেন ডাক্তার সাহেব? ছাড়ুন এইবার। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
কথাটি বলেই আভা হেসে দৌঁড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। তাশরীফ আভার দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে বলল,
“কেন যে নিজের হাঁটুর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করতে গেলাম।”
তাশরীফ যখন এইসব ভাবছিল তখনি আভা রুমের বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে বলল,
“আচ্ছা, ও বাড়িতে কি বলে আসেননি? যে আপনি এইখানে এসেছেন। না মানে, বাবা সকালে আপনার ফুপ্পিকে কল দিয়ে বলল, ” তাশরীফ গেছে ওখানে?”
তাশরীফ মাথায় আবারও হাত রাখল। ইশশ কি ল’জ্জা’টাই না সে পেলো।
তাশরীফ রেডি হয়েছে চলে যাওয়ার জন্য। আভার মুখের হাসি মলিন। তার ইচ্ছে করছে তাশরীফের সাথেই চলে যেতে। কিন্তু ওই যে, ঘটা করে আবার বিয়ের আয়োজন শুরু হয়েছে। পাঠান সাহেব বললেন,
“তাশরীফ, সাবধানে যেও বাবা। তোমার ফুপ্পি এই ব্যগে খাবার দিয়ে দিয়েছে। যাওয়ার পথে খেয়ে নিও।”
“আংকেল এইগুলোর কি দরকার ছিল? আমি নিব না এইসব। প্লিজ রেখে দিন।”
তাশরীফের ফুপ্পি বলে উঠল,
“নিবি না মানে, নিতেই হবে। আর আংকেল কি? বাবা বলতে শিখ তাশরীফ। আর আমাকে শুধু আম্মু ডাকতে পারলে ডাকিস নয়তো ডাকার দরকার নেই।”
“ফুপ্পি আম্মুইতো ভালো।”
“না, একদম না।”
তাশরীফ হেসে বলল,
“আচ্ছা আম্মুই ডাকব। এখন তাহলে যাই।”
“আচ্ছা সাবধানে যাস। আভা যা তাশরীফকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আয়।”
আভা তাশরীফের সাথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসলো। তাশরীফ গাড়ির দরজা খু’লে বসতে যাবে এমন সময় আবার বেরিয়ে আসলো। আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৭
“মুখ মলিন করার দরকার নেই। ২ দিন পরই হাসিমুখে নিয়ে যাব। আর খাবার না খেয়ে থাকার কথা যেনো আর না শুনি। দেখি কপালে কি এইটা…
কথাটি বলে আভাকে কাছে টে’নে আভার কপালে চট করেই একটা ” চু’মু দিয়ে ফেললো তাশরীফ।”