প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৩

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৩
মারশিয়া জাহান মেঘ

“এইইই তুই নাক ডাকছিস কেন আভা?”
মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে তাশরীফ। আভার না’ক ডাকাতে সে ঘুমাতেই পারছেনা। আভার হেলদোল নেই। সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাশরীফের চোখ আটকে যায় আভার থুতনির সেই ছোট্ট তিলটার দিকে। ঘুমন্ত আভাকে এমনিতেই সুন্দর লাগছে। তার মধ্যে তিলটা একটু বেশি আকর্ষণ করছে তাকে। তাশরীফ আভার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। প্যান্টের দুই পকেটে দুই হাত রেখে দাঁড়াল সে। অন্ধকারে আবৃত শহর। রাস্তার পাশে কু’কু’র বসে আছে৷ নির্জন পরিবেশে তাশরীফ মনে মনে ভাবল,

“কিছুক্ষণ আগেই, মাত্র কয়েক ঘন্টায় জীবনের ঘন্টা বদলে গেল! এত সহজ জীবনের মোড় ঘুরানো? আমি হয়তো এখন আর আগের জীবনটা পাবনা। কারণ এখন আমার জীবনের সাথে আরও একজনের জীবন জড়িত। আই হোপ, সবকিছু ধীরে ধীরে মানিয়ে নিব।”
১০.
মিঠা মিঠা রোদুরে আলোতে ঘুম ভাঙ্গে আভার। ঘুম ভাঙ্গতেই সামনে রাত্রিকে দেখে ভূ’ত দেখার মত চমকে উঠে সে। আভা চি’ৎ’কা’র করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপুওওওওও”
“আরে আ’স্তে… কান ফে’টে যাবেতো।”
“তুমি কখন এলে? বাবা, মা এসেছে?”
“না, শুধু আমি এসেছি।”
“এসেছ, ভাল করেছ। আমি তোমার সাথে যাব।”
রাত্রি অবাক হয়ে বলল,
“তুই আবার কোথায় যাবি?”
“কেন আমাদের বাড়িতে।”
“না, এখন মামী যেতে দিবেনা। বিয়েটা মামা মানলেও, মামী এখনো পুরোপুরি মেনে নেয়নি। কাজেই আপাতত ওই বাড়িতে না যাওয়াই ভাল।”

তখনি আভা রুমের চারিদিকে চোখ বুলালো। রাত্রি আভার দৃষ্টি দেখে বলল,
“কাকে খুঁজছিস? ডাক্তারকে বুঝি?”
আভা ল’জ্জা পেয়ে বলল,
“আরে আপু, কি বল? আমি কেন ওই রা’গী মানুষকে খুঁজতে যাব?”
রাত্রি হেসে বলল,
“তাশরীফ ভাই হসপিটালে গেছে। ইমার্জেন্সি তাই।”
তখনি রাত্রির ফোনে কল আসে। রাত্রি অবাক হয়ে ফোনের স্কিনে তাকাল। আভা বলল,
“কি হয়েছে আপু?”
রাত্রি জবাব না দিয়ে কল ধরে। তারপর ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,

“রাত্রি, আভা উঠেছে?”
“উঠেছে।”
“ওকে ফোনটা দেতো।”
রাত্রি আভাকে বলল,
“নে, তাশরীফ ভাই… ”
আভা আর রাত্রির বিস্ময় কাটছেইনা। তাশরীফ কখনো তাদের সাথে তেমন কথাই বলতোনা। গ্রামে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে যেতো আর কিছুসময় থেকে ঢাকায় চলে আসতো।
“শুন, মা কিছু বললে তুই কিছু বলবিনা। ফ্রেশ হয়ে, চুপচাপ গিয়ে খেয়ে নে। আমি সন্ধ্যে বেলায় চলে আসব। এসে তোকে নিয়ে একটু শপিংমলে যাব। কি কি লাগবে একটা লিস্ট করে নে।”
আভার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছেনা। তাশরীফ তার প্রতি এত কেয়ার দেখাচ্ছে কেন? এই তাশরীফ চৌধুরীকেতো সে চিনেনা।

সন্ধ্যায় তাশরীফ হসপিটাল থেকে বাসায় আসে। এসে দেখে আভা চুপচাপ বেলকনিতে বসে বই পড়ছে। লাল রংয়ের শাড়িতে মেয়েটাকে মায়াবতী বললেও কম বলা হবে। তখনি আভা বলল,
“আপনি কখন আসলেন? আমাকে ডাকলেন না যে?”
“না, ইয়ে..মানে.. এখনি এসেছি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুই রেডি?”
“হ্যাঁ।”
“রাত্রি চলে গেছে?”
“বলেছিলাম থাকতে।”
“বলেছিলি, জো’র করিসনি?”
এইটা বলেই তাশরীফ ওয়াশরুমে চলে যায়। আভা বিড়বিড় করে বলল,
“আজব, এমন ভাব, যেনো আমি চাইনি আমার বোন থাকুক।”

তাশরীফের সাথে শপিং মলে এসে আভা পড়েছে আরেক বিপদে। মাথায় ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে থাকতে হচ্ছে। মুখে মাস্ক পড়িয়েছে তাশরীফ। বার বার শাড়ির আঁচল ঠিক করে ধরতে বলছে আভাকে। আভা মনে মনে বলল,
“এইরকম না করে….আপনার মনে লুকিয়ে রাখলেইতো পারেন ডাক্তার সাহেব। তাহলেইতো এত লুকিয়ে থাকতে হয়না আমাকে।”
আভার ভাবনার মাঝে তাশরীফ মুখ গম্ভীর করে বলল,

“তুই কি শপিংমলে ছেলে দেখতে এসেছিস আভা? ওইদিকে তাকিয়ে আছিস কেন? আবার ছেলেটাও তোকে দেখে হাসছে। তুই এইসব করতেই পারিস, আমার জেলাস-টেলাস হচ্ছেনা, কিন্তু দেখতে হবেনা? তুই কার সাথে বেরিয়েছিস? আমারওতো একটা রেসপেক্টের ব্যাপার আছে।”
আভা অবাক হয়ে সামনে তাকালো। আসলেই ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে। আজব, সেতো ছেলেটির দিকে তাকায়নি। তাহলে তাকে কেন এইসব বলছে? আর ওনি কি বাঘ? যে ওনার সাথে বেরুলে… আর কিছু ভাবতে পারলোনা আভা। তাশরীফ ধমক দিয়ে বলল,

“এই, ওইখানে তাকিয়ে আছিস কেন আবার? চল ভেতরে চল। কেনাকাটা করে বাসায় গিয়ে ছেলেদের মুখ দেখিস।”
“বাসায় ছেলে পাব কোথায়? বাসায়তো কেবল দুজনই পুরুষ মানুষ। একজন মামা, আরেকজন আপনি। মামীতো মামার দিকে তাকায়। তাহলে, আমি কি… আমি কি আপনার দিকে তাকাব?”
শেষের কথাটি বেশ উচ্চস্বরে বলে ফেলল আভা। সে তাকায় তাশরীফের দিকে। সে এইবার জিহ্বায় কা’ম’ড় দেয়। সে বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে, ভুল সময় ভুল প্রশ্ন করেছে তাশরীফকে।

আভা মুখ গোমড়ো করে বসে আছে সোফায়। তাশরীফ বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপ্টপ টি’প’ছে। আভার মুখ গোমড়ো করার কারণ হলো, তারা শপিংমল থেকে আসতেই দেখল, রাহা এসেছে এই বাড়িতে। রাহা হলো তাশরীফের ফ্রেন্ড৷ লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। মেডিকেলে সে তাশরীফের সাথেই পড়েছিল। তাশরীফকে দেখতেই রাহা জ’ড়ি’য়ে ধরল। আভা ভেবেই পায়না, বন্ধু বন্ধুর মত থাকবে, সে কেন জড়িয়ে ধরবে? তাও আবার সে নাকি এইখানে কিছুদিন থাকবে। তখনি রুমে রাহা আসে। রুমে ঢু’ক’তে ঢু’ক’তে বলল,

“হেই তাশরীফ, রাতে তোদের রুমে আসলাম, কিছু মনে করিসনিতো?”
তাশরীফ চোখ তুলে তাকায় রাহার দিকে। তারপর হেসে বলল,
“কোনো প্রবলেম নেই রাহা। বস এইখানে। আভা, যাহতো.. ২ কাপ কফি নিয়ে আয়তো।”
আভা মুখ বাঁকিয়ে বলল,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ২

“আমার ক্লা’ন্ত লাগছে। ঘুমাব। আপনারা স্টোর রুমে গিয়ে কথা বলুন। আর কফি নিজে বানিয়ে নিন।”
তাশরীফ আভার দিকে ক’ঠি’ন চোখে তাকাল। আভা পাত্তা দিলোনা। তাশরীফ কথা এড়াতে বলল,
“চল রাহা, স্টোর রুমে গিয়ে কথা বলি। শুনব, কেমন কাটালি লন্ডন লাইফ।”
তাশরীফ আর রাহা রুম থেকে যেতেই আভা গিয়ে বিছানায় বসল। তারপর নিজে নিজে বলল,
“আমাদের সামনে এমনভাবে থাকে, যেনো হাসতেই জানেনা। অথচ, নিজের বান্ধবীর সাথে কি হাসি! যেনো হাসি ছাড়া তিনি কথায় বলেননা।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৪