প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৫
মারশিয়া জাহান মেঘ
আভার ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামতেই আভা দেখতে পেল, ফারাবী ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে। ফারাবী ঢাকার ছেলে। আভা গ্রাম থেকে এসে চৌধুরী বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দিতো। তখনি ফারাবীর সাথে তার পরিচয় ঘটে। ফারাবীর পড়াশোনা অনেক আগেই শেষ। সে ক্যাম্পাসে এমনিতেই মাঝেমাঝে আসে। সে এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা, ফারাবী কেন তার সাথে এমন করল। তাশরীফ বিষয়টা লক্ষ করল। তারপর গাড়ি থেকে নেমে রাহাকে বলল,
“রাহা, তুমি বসে থাকো। আমি আসছি…”
“কি দেখছিস ওদিকে?”
আভা তাশরীফের দিকে তাকায়। তারপর বলল,
“ফারাবী…”
তাশরীফ আভার হাত ধরে বলল,
“আমার সাথে চল…”
তাশরীফ আর আভা ফারাবীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ফারাবীর হাসিমুখ মুহুর্তেই মলিন হয়ে গেল। রক্তিম চক্ষু নিয়ে আভা তাকিয়ে আছে ফারাবীর দিকে। মুহুর্তেই নিজেকে আর সামলাতে না পেরে ফারাবীর শার্টের কলার চে’পে বলল,
“কেনন? আমার সাথে এমন করলেন মিস্টার ফারাবী রাজ? হোয়াই? কি অ’প’রা’ধ ছিল আমার?”
ফারাবী নিশ্চুপ। সে জবাব দিলোনা। আভা আবার বলে উঠল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনোই ছিলনা। কিন্তু খুব পছন্দ করতাম৷ ওই পছন্দ থেকেই আপনার বিয়ের প্রপোজাল এক্সসেপ্ট করেছিলাম আমি। আপনি সেই সুযোগে আমার জীবনটাই বদলে দিলেন? দেখুন… দেখুন না, এখন আমার সামনে আমার স্বামী আছে। ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী। সে আমার জন্য বেটার অপশন নয়, কিন্তু আমার জন্য আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ রহমত।”
ফারাবী কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি আভা ফারাবীর গা’লে ক’ষি’য়ে এক থাপ্পড় দেয়। তাশরীফ স্বাভাবিক। তার মাঝে অবাককর কিছুই নেই। তাশরীফ আভাকে বলল,
“তুই এখন ক্লাসে যা।”
আভা তাশরীফের কথার বিপরীতে কথা না বলে ক্লাসে চলে যায়। তাশরীফ ফারাবীকে বলল,
“ফারাবী, আই ডোন্ট নো হোয়াই, ইউ ডিড ইট, বাট ট্রাস্ট মি, ইটস ভেরি রং ওয়ে। খুব ভুল একটা পথ ছিল। তুমি যা করেছ খুব বা’জে করেছ। আজ আমার হাতে সময় নেই। তাই তোমার সাথে বুঝাপড়াটা ঠিক ভালোভাবে বুঝে নিতে পারলাম না। খুব শীঘ্রই তাশরীফ চৌধুরীর মুখোমুখি তুমি হতে যাচ্ছ ফারাবী রাজ।”
কথাগুলো বলেই তাশরীফ গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। ফারাবী গা’লে হাত রেখে মনে মনে বলল,
“আভা, আ’ম রিয়েলি সরি। আমার কাছে প্রতিশোধের চেয়ে ভালোবাসা বড় নয়।”
“তাশরীফ চৌধুরী ঠিকিই বলেছে। তুই কেন ভ’রা বিয়ে বাড়িতে মেয়েটাকে এত বড় একটা অ’প’বা’দ দিয়েছিস ফারাবী? তাশরীফ চৌধুরী না থাকলে মেয়েটার আজ কি হতো ভাবতে পারছিস?”
তাশরীফ কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরেছে। তার মা আয়মান রাজ দেখলেন ছেলের মন খারাপ। তখন কারণ জিগ্যেস করলেন। জবাবে ফারাবী মাকে ক্যাম্পাসের সব ঘটনা বলল। কথাগুলো শুনে আয়মান রাজ ছেলেকে উপরোক্ত কথাগুলো বললেন। ফারাবী অবাক হয়ে বলল,
“মম, আমি তোমার ছেলে? নাকি তাশরীফ? তুমি ওর হয়ে কথা বলছ কেন?”
“আমি কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলছিনা, ফারাবী। যা সত্যি তা শুধু প্রকাশ করছি।”
ফারাবী তার রুমে চলে গেল। রুমের ভেতরে সে যে ছোট্ট সিক্রেট একটা রুম রেখেছে সেইটাকে চাবি দিয়ে খু’ল’ল। এই রুমটার কথা শুধু ফারাবীর মম, আর ডেড জানে। ফারাবী ওই রুমটায় প্রবেশ করতেই দেয়ালে টাঙ্গানো আভার ছবির দিকে তাকালো। ফারাবীর চোখে পা’নি। তারতো প্রতিশোধ নেওয়া প্রায় শেষ। অ’প’বা’দ দিয়ে অ’প’মা’ন করেছে আভাকে। এখন, আভাকে ভালোবেসে আবার কাছে টা’ন’বে সে। কে’ড়ে নেবে ডক্টর তাশরীফ চৌধুরীর কাছ থেকে আভাকে। এইসব ভাবতেই পকেট থেকে ফোনটা বে’র করে সে। একটা নাম্বারে কল দেয়। ওপাশ থেকে কল কা’ট’তেই ফারাবীর ফোনে একটা মেসেজ এলো,
“আমি একটু পর কল ব্যাক করছি তোমায়, ফারাবী।”
“ডক্টর তাশরীফ, আপনি বিয়ে করেছেন আমরা জানলাম না, আপনি ম্যামকে নিয়ে হসপিটালে আসবেন তাও জানালেন না। আমাদেরওতো একটা দায়িত্ব আছে নাকি?”
হেসে হেসে কথাগুলো বলছিলেন তিনজন ডক্টর। তাশরীফের পাশে রাহাকে দেখে তারা কথাগুলো বলছিল। তাশরীফ কিছু বলতে যাবে, এমন সময় রাহা মুচকি হেসে বলল,
“আসলে তাশরীফ সময় পায়নি জানানোর। একদিন অবশ্যই সময় করে বাসায় ইনভাইট রইল। আসবেন কিন্তু…. ”
বিনিময়ে ডক্টর’রা হেসে বলল,
“অফকোর্স ম্যাম।”
তাশরীফ তার চেম্বারে যেতে যেতে বলল,
“তুমি এইটা কি বললে রাহা? ওনারা ভুল বুঝছে। ভুলটা ভাঙ্গানো উচিৎ।”
রাহা হেসে বলল,
“সারপ্রাইজ রাখো এইটা। তোমাদের রিসিপশনেই না হয় সবাই আভার সাথে পরিচিত হলো। সমস্যা কোথায়?”
তাশরীফ ভেবে বলল,
“ওকে, তাই হোক।”
“আচ্ছা তাশরীফ, তোমার কি আভার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট আছে?”
তাশরীফ তাকালো রাহার দিকে। বলল,
“কোন ইন্টারেস্টের কথা বলছ তুমি রাহা?”
“ওয়াইফ।”
“দেখ রাহা, বিয়েটা এমনভাবে হয়েছে যে সবকিছুই অগোছালো লাগছে। ইন্টারেস্ট না থাকলেও এইটা আমাকে মানতেই হয়, যে আভা আমার ওয়াইফ। এখন নেই, তাই বলে যে কখনো ইন্টারেস্ট হবেনা তা কিন্তু নয়।”
“তাশরীফ, মনে আছে? তোমাকে আমি বলেছিলাম একদিন, উইল ইউ ম্যারি মি তাশরীফ?” তখন তুমি বলেছিলে, বিয়ের প্রতি তোমার আপাতত কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
“৫ বছরে ইন্টারেস্ট তৈরি হয়নি তা কে বলেছে তোমায় রাহা?”
রাহা কোনো উত্তর পেলোনা। তাশরীফকে বলল,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৪
“আমি একটু আসছি…”
তখনি রাহার ফোনে কল আসে। রাহা এদিক ওদিক তাকিয়ে কলটা রিসিভ করতেই বলল,
“হোয়াটস ইউর প্রবলেম ফারাবী? বলেছিলাম না? আমি কল দিব।”