প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১১
মারশিয়া জাহান মেঘ
“তোমার ডে’ড এর থেকে আমার ডে’ড ১ কোটি টাকা পায় বলে কি, তার বিনিময়ে আমাকে তোমরা কিনে নিয়েছ লারা? তোমার সব কথা আমার কেন শুনতে হবে?”
লারা ন্যা’কা কান্না কেঁদে বলল,
“কি? তুমি আমাকে এইভাবে কথাটা বলতে পারলে ফারাবী? তুমি ভুলে যাচ্ছ? তোমার ডে’ড আমার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে।”
“বিয়ে ঠিক করেছে, কিন্তু আমিতো এই বিয়েতে রাজি নয়। দেখো লারা, তুমি সুন্দর, তোমার জন্য ছেলের অভাব হবে না। প্লিজ আমার পিছু ছেড়ে দাও।”
লারা ফারাবীর টিশার্ট ধরে টা’ন দিয়ে ফারাবীকে নিজের কাছে আনে। চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমার অন্য কাউকে নয়, তোমাকেই লাগবে ফারাবী। আই ওনলি ওয়ান্ট ইউ ফর মাই লাইফ।”
“বাট, আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইউ।”
“ফারাবী… তুমি যদি আমার সাথে এমন করতে থাকো, তাহলে আমি আমার ডে’ডকে বলতে বাধ্য হব। এর ফলাফল কিন্তু ভালে হবে না… তোমার ডে’ড… আই হোপ, বুঝতেই পারছ।”
কথাগুলো বলেই লারা ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুমের দরজা লা’গাতে যাবে এমন সময় আবার ফারাবীকে ডাকলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ফারাবী…”
“হুম…”
“এই রুমেই থেকো। আমি টাওয়াল চাইলে আমাকে তুমি দিবে। দরজা বন্ধ করে দাও রুমের। আজ তোমাকে একদম কাছে চাই আমি।”
কথাটি বলেই ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দেয় লারা। ফারাবী চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল,
“ডে’ড এর জন্য এমন একটা মেয়ের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হচ্ছে আমাকে। ফারাবী রাজকে মেয়েটা পুতুলের মত নাচাচ্ছে! না, বিষয়টার একটা সমাধান করতেই হবে। আজ রাতেই তাশরীফকে পুরো বিষয়টা জানাতে হবে।”
ফরিদা আপাকে দেখে বেশ গম্ভীর স্বরে তাশরীফ বলল,
“৩ দিন ধরে কাজে আসছ না কেন আপা? এখন আবার তোমার কোন দাদী/নানী মা’রা গেছে?”
তাশরীফ সবে মাত্রই হসপিটাল থেকে ফিরেছে। মেজাজ বেশ হ’ট তা দেখেই বুঝে ফেলেছে আভা। আভা তোহাকে চিমটি কে’টে বলল,
“ফরিদা আপাকে বল চুপ থাকতে। তোর ভাইয়ের মতিগতি সুবিধের নয়।”
তোহাও বুঝলো ব্যাপারটা। তোহা তাশরীফকে বলল,
“ভাইয়া আজ সকালে কি হয়েছিল জানো?”
তাশরীফ মোজা খু’ল’তে খু’ল’তে তোহাকে বলল,
“তুই একদম কথা এড়াতে আসবি না। কি হলো ফরিদা আপা, কিছু বলেছিতো…”
“ভাইজান, সমস্যা আছিলো, এর লাইগাই আহিনাই।”
“মাসে ১৬ দিনই তোমার সমস্যা থাকে, তো কাজে না আসলেইতো পারো।”
“মুখেই এইসব কন, গেলেগাতো, ঠিকিই আলা মুখ কালা কইরা লাইবেন।” [ মিনমিনিয়ে]
“কিছু বললে নাকি আপা?”
ফরিদা আপা সাথে সাথে জিহ্ব কে’টে বলল,
“না না ভাইজান, কিছু কইনাই।”
তাশরীফ আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি রুমে যাচ্ছি, এক কাপ কফি হলে ভালো হয়।”
“আপনি যান, আমি নিয়ে আসছি।”
তাশরীফ নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে আবারও থেমে গেল। তোহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোহা…”
“হ্যাঁ ভাইয়া?”
“আজ সকালে কি হয়েছিল বলছিলি না?”
“আসলে ভাইয়া ওই…”
” না না কিছু না, আপনি রুমে যান আমি আসছি কফি নিয়ে।”
আভা থামিয়ে দিলো কথা বলে। তাশরীফের সন্দেহ বেড়ে গেল খানিকটা। বোনের কাছে গিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে বোনের চেহারা দেখছে সে। তোহা যে সত্যিই কিছু বলতে চেয়েছিল, তা তার মুখে ভাসমান। তাশরীফ নরম সুরে বলল,
“কি হয়েছে তোহা?”
“লারা মেয়েটা খুব জঘন্য আচরণ করেছে আমার সাথে।”
“কি! কেন?”
“লেবুর শরবত দিয়েছিলাম বলে।”
তাশরীফ হাত মুঠোবন্দি করল। বোনের কথা শুনে, সে নিজের রুমের দিলে গেল। আভা অবাক হয়ে বলল,
“আজব! এইটা কেমন ভাই? বোন বিচার দিলো কোনো জবাবই দিলো না?”
তোহা মুচকি হেসে বলল,
“এইটা আমার ভাইয়ের রাগ হওয়ার আগের পজিশন। তুই বুঝবি না। একটু পর দেখিস কি হয়।”
“ফরিদা আপা, আর বন্ধ করো না, এইবার থেকে রেগুলার এসো।”
তোহার কথা শুনে ফরিদা আপা বলল,
“আমুতো আফামনি অবশ্যই। ওই বিদেশী বা’ন্দ’র’নী’ডা’রে মজা দেহাইবার লাইগা। কত বড় সাহস, আমার আফামনিরে অ’প’মা’ন করছে?নাম কি জানি আফামনি? ঝাড়া না কি জানি?”
তোহা আর আভা ফরিদার কথা শুনে হাসে। তোহা হাসতে হাসতে বলল,
“আপা, ওইটার নাম লারা।”
“হ আফামনি ওইডাই। নাম তাহার লারা, শরবত আবার দিমু চিনি ছাড়া। হাহাহাহা।”
তাশরীফ গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই দেখে তোহা কফি নিয়ে রুমে হাজির। তোহা এক ধ্যানে তাকালো তাশরীফের দিকে। ভে’জা শ’রী’র থেকে ফোঁটা ফোঁটা পা’নি ঝড়ছে। তাশরীফ টাওয়াল দিলে চুল মুছতে মুছতে বলল,
“ওই মেয়েটা এখন কোথায়?”
“কে? লারা?”
“হ্যাঁ।”
“ফারাবি ভাইয়ার রুমে।”
“ওহ আচ্ছা।”
“ওহ আচ্ছা বললেন আপনি? আমিতো অবাক হয়ে আছি। একই রুমে বিয়ের আগে দুইটা ছেলে-মেয়ে বুঝতে পারছেন বিষয়টা!?”
আভা বেশ বিস্ময় কন্ঠে কথাটি বলে। তাশরীফ অতটা গুরুত্ব না দিয়ে বলল,
“এইটা কালচার।”
“বিদেশের?”
“হুম।”
“তাহলে আর কি দরকার কাপড়চোপড় পড়ার? ওইসময় গিয়ে দেখি, ছোট ছোট হাফপ্যান্ট পড়ে আছে। বুঝলাম এইটা ফ্যাশন, তাই বলে বাংলাদেশেও? ক্ষেত একটা।”
তাশরীফ কফি আভার হাত থেকে নিতে নিতে বলল,
“কাপড়চোপড় ছাড়া কি সুন্দর ওকে থাকতে বললি, তাও ওদের এখনো বিয়ে হয়নি। আর আমিতো বলে তোকে বিয়ে করেছিলাম। কই, ওই ভাবনাতো তোর মাঝে আনিসনি”
থতমত খেয়ে যায় আভা। কি বলে এই ছেলে এসব?! না সে আর এক মুহুর্তও এইখানে থাকতে পারবে না। বরফ হতে না চাইলে এক্ষুনি এই রুম থেকে বের হতে হবে তাকে। তারপর? তারপর আভাকে আর পায় কে? দ্রুত গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে। তাশরীফ এদিকে হাসতে হাসতে শেষ প্রায়।
তাশরীফ, ফারাবীর রুমে বসে আছে। বসে বসে লারার নাটক দেখছে। ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে লারা সাজছে ফারাবী আর তাশরীফ সার্কাস দেখছে। লারা বেশ ন্যাকামি করে বলল,
“বেব, প্লিজ কাম। লি’প’স্টি’ক পড়িয়ে দাও আমায়।”
চোখ বড় বড় করে তাকালো তাশরীফ। এই মেয়ে বলে? ল’জ্জা শরম নেই জানতো, ফারাবী তাকে বলেছে। কিন্তু এত বেশি যে লাজ ছাড়া তা জানতো না সে। ফারাবীর জবাব,
“পারব না। তুমি আগামীকালই ব্যাক করবে আমেরিকা। এন্ড, ইটস ফাইনাল লারা।”
“তোমাকে না নিয়ে আমি যাচ্ছি না ফারাবী।”
“বেশি হচ্ছে না লারা?”
“ডেডকে কল দিব?”
তাশরীফ বুঝলো না বিষয়টা। ফারাবী চুপচাপ লারার কাছে গিয়ে লি’প’স্টি’ক পরিয়ে দিচ্ছে লারাকে। তাশরীফ অবাক না হয়ে পারে না। কি এমন আছে? যে মেয়েটা তার ডেডকে কল দেওয়ার ভয়ে ফারাবী চলে গেল।
“ওহ, ডেড কল দিয়েছে বেব। আমি কথা বলে আসি। তোমরা থাকো।”
ফারাবী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাশরীফ ফারাবীকে বলল,
“চল, ছাঁদে যাই।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১০
“চল, তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে তাশরীফ।”
তাশরীফকে সব খু’লে বলল ফারাবী। তাশরীফ থুতনিতে হাত রেখে সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে বলল,
“একটা দারুণ আইডিয়া পেয়েছি। কিন্তু… ”
“কিন্তু?”
“এই আইডিয়াতে, তোহা আর আভাকে মাস্ট লাগবে।”