প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৮
মারশিয়া জাহান মেঘ
“কি হয়েছে? গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?”
“ছাড়ুন আমাকে, নিচে যেতে হবে।”
“আমি চাই না, নুডলসে তোর এই টমেটোর মত লাল রাগ ঢালিস। কি হয়েছে বল?”
“বলার প্রয়োজন নেই।”
“প্রেমিকের সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি?”
আভার রাগ আকাশ সমান হয়ে গেছে। তার প্রেমিক আসবে কোথা থেকে? আজব কথা কেন তাশরীফ তাকে বলবে। তাই জেদ নিয়ে বলল,
“আপনার মত সুন্দর না আমি, যে আমার প্রেমিক পুরুষ থাকবে।”
“আমার মত সুন্দর হবি কেন? তুইতো গোলাপের মত সুন্দর। আজকাল ফুলের দোকানে ফুল দেখলে আর সুন্দর লাগে না। কারণ, আমার ঘরেইতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গোলাপ ফুল আছে।”
আভা তাকালো তাশরীফের দিকে। তাশরীফ সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠল,
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নুডলস কি আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আনবি?”
আভা চলে গেল। যেতে যেতে মনে নানান প্রশ্ন উদয় হয় তার। তাশরীফ আসলে চায় কি? কাছে যখন ইচ্ছে তখন নিবে, আবার দূরেও সরিয়ে রাখবে। এইসবের শেষ কোথায়? সে ভেবে কোনো জবাবই পেলো না। ড্রইং রুমে গিয়ে দেখে তোহা চুপসে বসে আছে। উদাস হয়ে। আভা বুঝতে পারলো না, কি হয়েছে তোহার। সে এগিয়ে যায় তোহার কাছে। থুতনিতে হাত রেখে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কিরে তোহা, কি হয়েছে?”
তোহা জবাব দিলো না। সে শো’কে কাতর হয়ে আছে। কাব্যের সাথে একটু আগেও তার কথা হয়েছে অনলাইনে গিয়ে। ছেলেটাকে সে বার বার বলছে, দেশে আসতে, ওদিক থেকে সীন হলো ঠিকিই, তবে রিপ্লাই এলো না।
“এই তোহা…”
তোহা বিরক্ত নিয়ে বলল,
“কি হয়েছে আভা? কানের কাছে এসে চি’ৎ’কা’র করছিস কেন?”
আভা বুঝল কিছু একটা হয়েছে৷ সে সন্তপর্ণে বসলো তোহার পাশে। বলল,
“তোর মন খারাপ?”
তোহা আভার কাঁধে মাথা রাখলো। মলিন সুরে বলল,
“তুই জানিস না?”
“কি?”
“ভাইয়া, ফারাবীর সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।”
আভা চমকে উঠলো এক নিমিষেই। চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,
“কি বলছিস! আমাকেতো বলেনি।”
“আভা…”
“আমি বিয়েটা করতে চাই না।”
“কেন?”
তোহা চুপসে গেল। সেতো জানে, আগেই তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। সে ভেবেছিল, লুকায়িতভাবে যেইরকম বিয়েটা হয়েছে, ঠিক সেইভাবেই ডি’ভো’র্স’টা দিতে। তার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ পাল্টি খেয়ে গেল। আভা আবার বলল,
“কেন তোহা? ফারাবী ভাইয়াকে তোর পছন্দ না?”
“কিছু না। আমি বিয়েটা সত্যিই করতে চাই না আভা। প্লিজ ভাইয়াকে তুই বুঝা। তুই বুঝালে, ভাইয়া ঠিক বুঝবে।”
উপরতলা থেকে সবই দেখছিলো তাশরীফ। আভাকে ডেকে, তোহাকে শুনিয়ে বলল,
“আমার কথাই শেষ কথা আভা, ওকে বলে দে। আর তুই এখনো বসে আছুস কেন? আমার ক্ষিদে পেয়েছে বললামতো।”
আভা এক মুহুর্তও বসলো না সেইখানে। রান্না ঘরে চলে গেল। তাশরীফ ভীষণ রাগী। সে একবার রেগে গেলে শান্ত করা অনেক কঠিন। তার এই রাগ সম্পর্কে মোটামুটি অনেকের ধারণা আছে। কাজেই, আভারও তা অজানা নয়।
“আপনিতো জানেন, আমি একজনকে ভালোবাসি। তাহলে কেন আপনি ইনসিস্ট করে আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন? আমি আপনার কি ক্ষ’তি করেছিলাম বলুনতো?”
“তোহা, তুমি বার বার কেন ভুলে যাচ্ছ? তুমি আপাতত ম্যারিড। দ্যটস হুয়াই, তোমার উচিৎ পেছনের সব ভুলে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া।”
ফারাবীর শান্ত স্বরের কথা শুনে দ্বিগুণ রেগে গেল তোহা। এই ছেলেকে সে যা নয় তা বলছে, তাও এত শান্ত হয়ে কথা বলছে! এইটা ঠিক মেনে নিতে পারছে না। তোহা বলল,
“আপনি কি চান বলুনতো? আমি বি’ষ খেয়ে ম’রে যাই?”
সাথে সাথেই তোহার গালে পাঁচ আঙ্গুলের দা’গ পরলো যেন। লাল হয়ে আছে পুরো গাল। ফারাবীর দৃষ্টি অনলের ন্যায়। চিৎকার করে বলল সে,
“৬ বছর তোকে না ছুঁয়ে, না দেখে, তোর সাথে সময় না কাটিয়ে, তোকে আমি ভালোবেসেছি। এইটা আমার অপরাধ? বার বার তোর ভাইয়ের ফোন লুকিয়ে লুকিয়ে তোর ছবি দেখতাম, এইটা আমার অপ’রা’ধ? তোকে ভালোবেসে বাংলাদেশে পা রেখেছি এইটা আমার অপ’রা’ধ? তোকে ভালোবাসাটাই কি অ’প’রা’ধ? তোকে নিজের সবটা দিয়ে চেয়েছি পবিত্রভাবে এইটা আমার অ’প’রা’ধ? এত বড়ই অ’প’রা’ধ করেছি আমি যে, শা’স্তি হিসেবে নিজেকে মে’রে ফেলতে চাইছিস? শুন… তুই ম’রে গেলে ম’রা লা’শ’টাও আমার। আর বেঁচে থাকতে তোকে অন্যের হতে দেখাতো অনেক দূর। তুই চাইলেও আমার, না চাইলেও আমার। নেক্সট টাইম, তুই আর ম’রে যাওয়ার কথা বললে, আমি নিজেও ম’র’ব, তোকেও মা’র’ব। মাইন্ড ইট?”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৭
তোহা গা’লে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ চোখে পা’নি তার। ভীষণ লেগেছে তার। যেই মেয়েটাকে তার ভাই কখনো টাচও করেনি, সেই মেয়েটাকে ফারাবী মে’রে’ছে। এইটা জেনেও কি তার ভাইয়া তাকে এই ছেলের হাত তুলে দিবে? ভাবতেই ক’ষ্ট হচ্ছে তার। এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না তোহা ছাঁদে। ছাঁদ থেকে দৌঁড়ে নেমে পড়ল। ফারাবীর চোখ অশ্রুসিক্ত। বাচ্চাদের মত কাঁদছে সে। তোহাকে মা’র’তে চায়নি। ম’রা’র কথা শুনে, নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি সে। মাথা ভীষণ গ’র’ম হয়ে গিয়েছিল। তাই তোহাকে থা’প্প’ড় মেরেছে। এইসব ভাবতেই বু’কে কষ্ট অনুভব করে ফারাবী। মিনমিনিয়ে বলল সে,
“ভালোবাসতে গিয়ে, তোহাকে কি ভালে রাখতে পারছি আমি?”