প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৩

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৩
মারশিয়া জাহান মেঘ

খাবার টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। তাশরীফ একটা আকাশী রংয়ের পলো শার্ট পড়ে আছে। চুলগুলো ভে’জা। হাতে সিলভার রংয়ের ঘড়ি। ব্ল্যাক জিন্স। কি সুন্দর লাগছে! একটা ছেলে এত সুন্দর হয় কেমন করে? ভাবছে আভা। তাশরীফ তাকালো তোহার দিকে। বলল,
“ফরিদা আপা কোথায়?”
“রান্না করে বাসায় গেছে ভাইয়া।”
তাশরীফ নিজের প্লেটে খাবার নিচ্ছে আভা আর তোহা শুকনো ঢো’ক গি’ল’ছে। তাশরীফ তাকালো ওদের দুজনের দিকে। বলল,

“কি হয়েছে? তোরা খাবার নিচ্ছিস কেন?”
তোহা আমতা আমতা করে বলল,
“আগ্ আগে তুমি খাও না ভাইয়া। এই নাও, টমেটো দিয়ে চিংড়ি মাছের ঝোলটা আগে নাও।”
ভাইয়ের প্লেটে চিংড়ি মাছ তুলে দিলো তোহা।
তাশরীফ মুখে খাবার দিতেই চোখ বন্ধ করে ফেলল আভা। ভ’য়ে তার কলিজা যায় যায়।
তাশরীফ খাবার খেতে খেতে তাকালো আভা আর তোহার দিকে।
“আজকেতো ফরিদা আপা আমার মনের মত রান্না করেছে? এইরকমভাবে রোজ রান্না করলে আমাকেতো কষ্ট করে বাহিরে লাঞ্চ করতে হয় না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অবাক হলো তোহা। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“সত্যি ভাইয়া? অনেক ভালো হয়েছে? আরও দিই? আরও নাও না, নাও। এই বাটির সবটুকু নিয়ে নাও। আমাদেরটা আছে।”
তাশরীফ বোনের দিকে না তাকিয়েই বলল,
“না, আর লাগবে না। তোরা চেয়ে আছিস কেন? খেতে বস।”
“ভাইয়া আরেকটু নাও না…”

বোনের মন রক্ষার্থে তাশরীফ নিলো আরেকটু তরকারি। খাওয়া- দাওয়া শেষে উঠে দাঁড়ালো চেয়ার ছেড়ে। আভার দিকে তাকালো সে। আভা দৃষ্টি নত করে দাঁড়িয়ে আছে। তাশরীফ বলল,
“আভা, সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থাকিস। আমি হসপিটাল থেকে এসে তোকে আর তোহাকে শপিংয়ে নিয়ে যাব।”
কথাটি বলে এক মুহুর্তও সেইখানে দাঁড়ায় না তাশরীফ। বিদ্যুৎ গতিতে সিঁড়িতে পা বাড়ায় উপরতলায় যাওয়ার জন্য।
তোহা বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আভার দিকে৷ আভাকে ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বলল,
“এই আভা… আভা, আমাকে একটু চিমটি কা’ট’তো। ভাইয়া কি সত্যিই এই কথাটা বলেছে?”
আভা রসিকতার স্বরে বলল,
“না, স্বপ্নে বলেছে।”

তাশরীফ রুমে এসে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখলো। চোখ লাল হয়ে গেছে। ঠোঁ/ট জ্ব’লে গোলাপি রং ধারণ করে আছে। রান্নার সবই ঠিক ছিল শুধু ঝালটা একটু বেশি দিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। সে জানে ফরিদা আপা আজ আসেনি। আজ আভা রান্না করেছে। সে পারলে টেবিলেই ঝালে খাবার ছেড়ে পালিয়ে আসে।
“এই খাবার খেয়ে ভাইয়া এত প্রশংসা করল! আমার ঠিক হজম হচ্ছে না আভা।”
ঝালে হাত ঠোঁ/টের সামনে নাড়াতে নাড়াতে কথাটি বলল তোহা। আভা নিজেও খাবার মুখে তুলতে পারছে না। এত ঝাল! সে রান্নায় মরিচের গুঁড়োটা বোধহয় একটু বেশিই দিয়ে ফেলেছিল। সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না, এই খাবার তাশরীফ খেলো কেমন করে!
“আভা, তুই কি খাওয়ানোর জন্য রেঁধেছিস? নাকি মা’রা’র জন্য, ইশশ কি ঝাল!”
কথাটি বলে সাথে সাথে গ্লাস ভ’রে ভ’রে পানি খাচ্ছে তোহা।
আভা নাক বেংচি কে’টে বলল,
“আমি না রান্না করলে আজতো ফরিদা আপার কপালে দুঃখ ছিল।”

তাশরীফ হসপিটাল থেকে ফিরতেই দেখল তোহা সেজেগুজে বসে আছে। সে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“শপিংয়ে যাচ্ছি তোহা, বিয়ে বাড়িতে না।”
তোহা মুখ গুমড়ো করে বলল,
“ভাইয়া, মেয়েদেরকে না সাজলে মানায় না। তা তুমি জানো না বোধহয়।”

তাশরীফ কিছু বলল না। সে মেয়েদের ব্যাপারে নেই। আজ যে শপিংয়ে যাবে, তাতেই তার বিরক্ত লাগছে। এই দোকান থেকে ওই দোকান মেয়েদের ৫ ঘন্টায়ও শপিং শেষ হয় না। একবার সে তোহাকে নিয়ে শপিংয়ে গিয়েছিল। তোহা ৪০ মিনিটেও কোন ড্রেস নিবে তা সিলেক্ট করতে পারলো না। তাশরীফ উপরতলায় যায় ফ্রেশ হতে। তাশরীফ নিজ রুমে আসতেই বি’ষ’ম খেল। তা বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে আভা। তার পা নড়ছে না। সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে থাকল। হুঁ’শ ফিরতেই সে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে নিজ রুম থেকে। জলদি উপরতলা থেকে ডাকে তোহাকে। তোহা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“কি হয়েছে ভাইয়া? ডাকছ কেন?”
“আভা ঘুমাচ্ছে কেন? ওহ যাবে না?”
“এখনো উঠেনি?”
“না।”
“দেখেছ? ১ ঘন্টা আগে ডেকে আসলাম। সে ঘুমের মধ্যে বললও, তুই যা আমি আসছি এক্ষুনি।”
“তুই এসে ডেকে তুল ওকে।”
“তুমি ডাকতে পারছ না? তোমার হাত নেই নাকি মুখ নেই ভাইয়া?”
“তোহা…”

ভাইয়ের গম্ভীর স্বরনালী শুনতেই চুপসে যায় তোহা। সে বলল,
“আচ্ছা তুমি অন্য রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি ওকে ডাকছি।”
তাশরীফ যেতেই তোহা উদাসীন হয়ে বলল,
“ভাইয়া আর আভার সম্পর্কটা কি কখনো স্বাভাবিক স্বামী- স্ত্রীদের মত হবে না?”
তোহা উপরতলায় যায়। আভাকে আলতো ধা’ক্কা দিয়ে ডাকতে থাকে,
“এই আভা, আভা…. যাবি না? ভাইয়া কিন্তু খুব রে’গে আছে।”
“আরেকটু ঘুমাই না… ”

“না, আর একটুও না। উঠ। নয়তো এইবার সত্যি সত্যি ভাইয়া এসে অনেক রাগ দেখাবে।”
আভা উঠে বসে। বলল,
“তাশরীফ ভাই এসেছে?”
“সে কখনইতো।”
“কি!”
চমকে উঠে আভা। তোহা আভার রিয়াকশন দেখে বলল,
“তুই মুখ অমন করে আছিস কেন?”
“এই রুমে এসেছিল?”
তোহা স্বাভাবিক ভঙ্গিমা নিয়ে বলল,
“হুম, এসেছিল। তো আসবে না? ভাইয়ার রুম না এইটা?”
“হায় আল্লাহ!”

আভার মাথায় হাত। তোহা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না। সে আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি হলো বুঝলাম না। তুই এইসব বলছিস কেন?”
“আমার পায়ে তাকা।”
তোহা তাকিয়ে ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“তাকালাম। কি হয়েছে?”
“আরে তিতার বইন দেখিস না? আমার প্লাজু প্রায় হাঁ’টু’র উপরে। গ’র’ম লাগছিল বলে খো’লা’মে’লা হয়ে শুয়েছিলাম। ইশশ, কি ল’জ্জা’র বিষয়”
“আশ্চর্য আভা, এইখানে লজ্জার কি আছে? তোর জামাইইতো দেখছে।”
আভা কিছু একটা ভেবে বলল,

“আমার টিশার্ট, আমার টিশার্ট…. তার মানে!”
তোহা আবার বলল,
“কি বিড়বিড় করছিস আভা?”
আভা কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে বলল,
“কিছু না।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২

সে কিভাবে তোহাকে বলবে? গ’র’মে’র জ্বা’লা’য় টিশার্ট পে’টে’র উপরে তু’লে রেখেছিল। কিন্তু এখনতো দেখছে সোজা হয়ে একদম ঠিকঠাক ভাবে আছে। তার মানে! তার মানে তাশরীফ ভাই….
আর ভাবতে পারলো না আভা। থতমত খেয়ে বসে রইলো বিছানায়।

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৪