প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২২
মারশিয়া জাহান মেঘ
বোরকা পড়ে, বাড়ির দেয়াল টপকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে তোহা। এই বাড়িতে থাকলে আজ নিশ্চিত, ‘বিবাহিতা’ তকমা লাগাতে হবে তাকে। আভা এই পথ অবলম্বন করতে বলেছে তাকে। এ ছাড়াতো উপায়ও নেই। গেইট দিয়ে বের হতে গেলে সিকিউরিটি গার্ড বলবে,
“কে আপনি? এই রাতে কোথায় যাচ্ছেন?”
নানান প্রশ্নের সম্মুখীন থেকে, এইভাবে বেরিয়ে যাওয়াই ভালো। তোহা যখনি দেয়াল টপকাতে যাবে, ঠিক তখনি পেছন থেকে ভেসে এলো ফারাবীর কন্ঠ।
“আমি হেল্প করব?”
চমকে উঠে তোহা। পেছন তাকায় সে। আমতা আমতা করে বলল,
“আপ্ আপ্ন আপনি!”
ফারাবী তোহার হাত ধরে ফেলে। দৃষ্টি শান্ত তার। পরক্ষণেই বলল,
“আমাকে বিয়েতো তোমায় করতেই হবে তোহা।”
“হাত ছাড়ুন ফারাবী, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। এইটা অন্যায় করছেন আমার সঙ্গে।”
“ভালোবাসার মানুষকে পেতে যদি অন্যায় করতে হয়, আমি হাজারটা অন্যায় করতে রাজি তোহা। চলো, সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের সাথে। এইটা শোভা পাচ্ছে না, যে তুমি দেয়াল টপকে পালিয়ে যাচ্ছ। তাশরীফের সম্মানতো ধূলোয় মিশবেই, সাথে আমার ডেডও এইটা ভালোভাবে নিবেন না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আভা তোহাকে দেখে চমকে গেছে। তোহাতো কিছুক্ষণ আগেই চলে গিয়েছিল। এখন আবার এইখানে কিভাবে! পেছনে ফারাবীকে দেখে আভা যা বুঝার বুঝে ফেলল। কাজী এসেছে। তাশরীফ বোনকে লাল শাড়িতে দেখে মনে মনে বলল,
“ছোট্ট তোহা, কত বড় হয়ে গেছে!”
তোহার চোখে পানি। কখনোই সে আসতো না। একমাত্র ভাইয়ের জন্য এই জায়গায়। পালিয়েইতো যাচ্ছিলো সে। কিন্তু, ফারাবী! ফারাবী তার মস্তিষ্কে কথাগুলো এমনভাবে ঢু/কি/য়ে/ছে যে, সে বাধ্য হয়ে আবার ফিরে এসেছে।
তোহার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো আভা। ফিসফিস স্বরে বলল,
“কি হয়েছে তোহা? আসলি কেন? চলে যেতি… এইদিক দিয়ে না হয়, আমি সব ম্যানেজ করে নিতাম।”
তোহা জবাব দেয় না। তাশরীফ বোনের দিকেই তাকিয়ে আছে। সে বুঝে পায় না, কাঁদবে কেন তোহা? সে কি বুঝে না? তাশরীফ সবসময় তার ভালোটাই চায়। কাজী সাহেব এলেন, কিছু সময়ের ব্যবধানে বিয়ে হয়ে গেল তোহা আর ফারাবীর। যদিও তারা বিবাহিতই। কিন্তু, অগোচরে ছিল। এখন? পারিবারিকভাবে এইটাই সত্য, তোহা ফারাবীর স্ত্রী। ফারাবী আড়চোখে তাকায় তোহার দিকে। কেঁদে গাল কালো করে ফেলেছে মেয়েটা। চোখের পানি শুকানোর সময় দিচ্ছে না। ফারাবীর বাবা তোহার চোখ মুছে দিয়ে বললেন,
“এই বোকা মেয়ে, এইভাবে কান্না করছ কেন? এইখানে তোমার ভাই আছে৷ ওইখানে, আমি আছি, ফারাবী আছে, ফারাবীর মাও আছে। আদরে কোনো খামতি রাখব না আমরা।”
তোহা ছলছল চোখে তাকালেন ভদ্রলোকের দিকে। ঠিক যেন নিজের বাবার ছোঁয়া পেল তোহা। তাশরীফ বলল,
“আভা, তোহাকে নিয়ে যা।”
আভা বলল,
“চল, তোহা। রুমে যাই।”
আভা আর তোহা চলে যেতেই ফারাবীর বাবা তাশরীফকে বলল,
“আগামীকাল তাহলে, আমরা চলে যাচ্ছি। কি বলো বাবা?”
“জি আংকেল। এইখানেতো আমার আর কিছুই বলার নেই। শুধু বলব, তোহা এখনো মনের দিক দিয়ে বাচ্চাদের মতই। ওকে আগলে রাখার দায়িত্ব আপনাদেরই।”
“ইনশাআল্লাহ।”
ফারাবী রুমে প্রবেশ করতেই তোহা চিৎকার দিয়ে বলল,
“আমার রুমে কি করছেন আপনি? বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।”
“এইটা আমার স্ত্রীর রুম। এখন স্বামী হিসেবে অস্বীকার করার কোনো অপশন নেই তোহা। কারণ, আমি কোনো অপশন রাখিনি।”
“আপনি যেই চালাকিটা আজ আমার সাথে করেছেন, সেই চালাকির মাশুল আপনাকে সারাজীবন ভো/গ করতে হবে ফারাবী রাজ।”
“তুমি পাশে থাকলে, আমি সব কিছু স/হ্য করতে রাজি।”
তোহা অবাক হয় ফারাবীকে দেখে। এই ছেলেটা কতটা ল’জ্জা’হী’ন হলে, এত অপমানের পরও এইভাবে কথা বলে। তোহা বলল,
“এইবার বের হোন, রাত হয়েছে। আমি ঘুমাব।”
“আজ কিসের ঘুম? আজতো অন্যরকম এক রাত। যা মানুষের জীবনে কেবল একদিনই আসে।”
তোহা ঘাবড়ে গেল। বলল,
“মানে কি? দেখুন.. স্বামীর অধিকার আমি আপনাকে কখনোই দিব না। কারণ, বিয়েটা আমি স্বেচ্ছায় করিনি।”
“দিতে হবে কেন? ফারাবী রাজ তার হক সে আদায় করে নিতে জানে।”
কথাটি বলেই, তোহাকে ধা’ক্কা দিয়ে বিছানায় ফে’লে দেয় ফারাবী। তোহা মানা করা সত্ত্বেও তোহার সাথে নিজেকে মিশিয়ে নেয় ফারাবী। আজকের রাতটা তাদের স্মৃতি হয়ে থাকুক।
আভা মন খারাপ করে শুয়ে আছে বিছানায়। তাশরীফ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। আভাকে চুপসে শুয়ে থাকতে দেখে বলল,
“তোর আবার কি হলো?”
“যাই হোক না কেন, আমার মনের খোঁজ কেই বা রাখে?”
“যেইখানে নিজের মনটা তোকে দিয়ে, নিজেই এলোমেলো, সেইখানে মনের খোঁজ রাখাটা কি আবশ্যক?”
আভা বিছানা থেকে নামলো। পরক্ষণেই বলল,
“মাথাটা ধরেছে, চা খেয়ে আসি।”
তাশরীফ হাত টেনে ধরে আভার। নিজের বু’কে আনে আভাকে। আভা নেশালো চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে তাশরীফের দিকে। তাশরীফ পলকহীন ভাবে চেয়ে থেকে বলল,
“পালাচ্ছিস কোথায়? অজুহাতে।”
“অজুহাত দিলাম কোথায়? ছাড়ুন চা নিয়ে আসি।”
“আজ চায়ের প্রয়োজন নেই। মাথা ব্যথা কমাতে, আমার আদরই যথেষ্ট তোর জন্য।”
আভা আমতা আমতা করে বলল,
“আজ নয় প্লিজ…”
“স্বামীর ডাকে স্ত্রীদের সাড়া দিতে হয়।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২১
“দে’হে’র খা’য়ে’শ মেটালেই সংসার হয়ে যায়? মন থেকে কি আদৌ আমাকে মেনে নিতে পেরেছেন তাশরীফ ভাই?”
আভাকে ছেড়ে দিলো তাশরীফ। এত অবুঝ কোনো মেয়ে হয়? সে এত কিছু করেও নিজেকে বুঝাতে পারলো না আভার কাছে? আভা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
” ইচ্ছের বিরুদ্ধে সাময়িক সুখ হয়তো উপভোগ করা যায়, সংসার করা যায় না।”
রুম থেকে বেরিয়ে গেল আভা। তাশরীফ দাঁড়িয়ে আছে৷ মিনমিন করে বলল,
“তোহা, ফারাবী চলে যাক, তোর ব্যবস্থা আমি করছি। অনেক বেশি বুঝিস তাই না? তাহলে আমার মনটা কেন বুঝলি না?”