প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৪
মারশিয়া জাহান মেঘ
প্ল্যানে বসে আছে তোহা আর ফারাবী পাশাপাশি। তোহার কান্না কিছুতেই থামছে না। ফারাবী বিরক্ত। একটা মানুষ কত কাঁদতে পারে? তোহার এত এনার্জি কোথা থেকে আসে, তা সে বুঝতে পারে না। তোহার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,
“সবাই এইদিকেই তাকিয়ে আছে তোহা, প্লিজ কান্না থামাও। আর কত কাঁদবে?”
কে শুনে কার কথা? তোহা ফারাবীর কথা তোয়াক্কা করলো না। ফারাবী তখন আবার বলল,
“তোহা, তুমি কি কান্না থামাবে? নাকি…”
তোহা চুপসে গেল। এখন এইখানে তাশরীফ নেই, আভাও নেই। তাই সে কোনোভাবেই আর কিছু বললো না। ওইটা নিজের বাড়ি ছিল বলে, বড় বড় কথা শুনাতো সে ফারাবীকে। এখন? এখনতো সে কিছুতেই কিছু বলতে পারবে না। যদি ফারাবী তাকে মা’রে? ভেতরে ভেতরে ভ’য় পায় তোহা। ফারাবী আর কিছু বললো না। প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফেইসবুকে ঢু’কে সে। ফেইসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ খেয়াল করলো তোহা তার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ -মুখে বিস্ময়ের ছাপ। ফারাবী ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি হয়েছে?”
“আপনার আইডির নাম কি?”
“জায়ান কাব্য।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাশরীফ হসপিটাল থেকে ফিরেছে মাত্রই। বাড়িতে মানুষ নেই মনে হচ্ছে তার। তোহা থাকতে পুরো বাড়ি সে একাই মাতিয়ে রাখতো। যদিও, একাকীত্ব তোহাকে ছুঁতে পারেনি তার এই মাতিয়ে রাখা স্বভাবের জন্যই। তাশরীফকে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, আভা বলল,
“আপনি কখন এলেন?”
আভার কথায় যেন হুঁশ ফিরে আসে তাশরীফের। সে সোফায় গিয়ে পায়ের মোজা জোড়া খু’ল’তে খু’ল’তে বলল,
“এইতো, মাত্রই আসলাম।”
“ফ্রেশ হয়ে আসুন, খেতে দিচ্ছি।”
“আজ ডিনারে ভাত খাব না।”
“কি খাবেন?”
ভ্রুঁ কুচকে বলল আভা। তাশরীফ ঠোঁ’টে দুষ্টু হাসি চে’পে রেখে বলল,
“তোকে খাব।”
চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো আভা। তুতলিয়ে বলল,
“ক্ কি?”
“সুন্দর করে গিয়ে, গোলাপি শাড়ি পড়ে, সেজে বিছানায় বসে থাক।”
“গোলাপি শাড়ি মানে? এখন? সাজব আমি!?”
“তো কখন সাজবি? প্রত্যেকটা মেয়েরই, তার স্বামীর সামনে সেজে থাকা উচিৎ। যেন, আকর্ষিত হয়।”
“আমার এত আকর্ষণ দরকার নেই, যা আছে তাই এনাফ। সারা রাত ঘুমাতে পারি না। এখন যদি ২ রাত ২ দিন, ২ রাত না ঘুমিয়ে থাকতে হয়, তাহলে ওই আকর্ষণের কি দরকার আছে?”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে, আভা চট করে রান্নাঘরে চলে যায়। দাঁড়ালেই বিপদ এখন। তাশরীফ হয়তো এখন তার দিকেই চেয়ে আছে।
তাশরীফ উঠে দাঁড়ালো। আভার মুখ আজকাল একটু বেশিই ফুটেছে। আগেতো ভ’য়ে কথায় বলতো না। ইদানীং, কথা বলতে শিখে গেছে। তাশরীফ ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে গেল। আভা তাশরীফকে নিজের দিকে আসতে দেখে শুকনো ঢোক গিলল। দেখেও না দেখার ভান ধরে, কাঁ’পা কাঁ’পা হাতে কাজ করছে সে। তাশরীফ পেছন থেকে আভার কো’ম’ড়ে ঝা’প’টে ধরে। আভা কেঁ’পে উঠে কিছুটা। তাশরীফ, আভার কাঁধে থুতনি রেখে, ফিসফিস করে বলল,
“আজ রাত, তোর আমার রাত আভা। আজ রাতে পৃথিবীর সবচেয়ে কৌতুহলী সুখ অনুভব করবি তুই। যার উপহার সরুপ, আল্লাহ তোকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতির সাধ গ্রহণ করাবে।”
কি যেন হলো আভার। নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না সে। উল্টো হয়ে, তাশরীফের ঠোঁ/টে ঠোঁ/ট মিশিয়ে দেয় সে।
তোহার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফারাবী। সে অজানা একটা মেয়ের সাথেই মাঝে মাঝে চ্যাট করতো ফেইসবুকে। কারণ, তার মেয়েটির কথার ধরণ শুনে মনে হয়েছিল, ছোট্ট একটা মেয়ে, সবসময় মন খারাপ নিয়ে বসে থাকে। ফারাবী সবসময় কথা বলতো না মেয়েটির সাথে। মাঝে মাঝে ওপাশ থেকে ম্যাসেজ আসলে, এই পাশ থেকে সে ২/৩ দিন পর পর রিপ্লাই দিতো। একদিন ওপাশ থেকে মেয়েটির অভিমান সুরের কথা বলা বুঝতে পেরে দূরে সরে আসে ফারাবী। সে যা ভাবছে না, মেয়েটি তা ভেবেছিল৷ কিন্তু সেই মেয়েটাই যে তোহা, তা ওর ধারণার বাহিরে ছিল। চোখে মুখে বিস্ময় ফারাবীর। চোখ গুলোর মনি এক্ষুণি বুঝি, কুটির থেকে বেরিয়ে আসবে। তার বু’কে মাথা রেখে, জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তোহা। সবটাই যেন স্বপ্ন! কাকতালীয়ভাবে ম্যাজিক হয়ে গেছে তার জীবনে। তোহাকে পাল্টা শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরল ফারাবী। তোহা কাঁদছে। ভে’জা কন্ঠে বারংবার বলছে,
“আমার কাব্য, আপনি আমার কাব্য! আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, আপনিই আমার সেই মানুষটা, যার প্রতি অনুভূতি আমার আকাশসম। যাকে ভেবে দিন-রাত কাটিয়ে ফেলতাম। এতদিন বলেননি কেন? বলুন, বলেননি কেন? বললে কি এতসব হতো?”
তোহার সংকোচহীন কথা শুনে আবারও অবাক হলো ফারাবী। তোহা তার সাথে এমন অভিমান, ভালোবাসা জড়িত কন্ঠে কথা বলছে! তোহা! ভাবতেইতো সময় লাগছে তার। ফারাবীর মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। হবে কেমন করে? মানুষ যখন অল্পতে অনেক কিছু পেয়ে যায়, তখন মুখে কথা ফুটে নাতো…
ফারাবী নরম কন্ঠে বলল,
“তোহা….”
তোহা ছোট করে জবাবে বলল,
‘হুম।’
“তুমিই, কাব্য মেঘের অনুভূতি নামক আইডি চালাতে?”
“হ্যাঁ, আমিইতো সে।”
“অথচ তোমার ম্যাসেজ দেখে মনে হতো, আমি একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে কথা বলছি।”
“কেননন? বাস্তবে আমি বুঝি বুড়ি?”
“না না তা নয়, বাস্তবেতো তুমি পরী। বুড়ি হতে যাবে কেন?”
আভাকে গোলাপি রংয়ের শাড়িতে বসে থাকতে দেখে, তাশরীফ বলল,
“আমার আদেশ অমান্য করার, সাধ্য আছে কার?”
আভা নাক ভেংচি কা’ট’লো বোধহয়। স্পষ্ট শুনতে পেল তাশরীফ। সে টিশার্ট, খু’ল’তে খু’ল’তে বলল,
“তো, শুরু করা যাক?”
আভা অবাক না হয়ে পারে না। ভাই, একটা ছেলে এমন বেহায়াপনা কিভাবে দেখাতে পারে? তাশরীফ বলল,
“বউয়ের সাথে সব পারা যায়।”
চমকায়িত হলো আভা। এই তাশরীফটা বুঝলো কিভাবে তার মনের অগোচরের কথা?
তাশরীফকে নিজের একদম কাছে এগিয়ে আসতে দেখে আভা বলল,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৩
“ইশ, হচ্ছেটা কি? কি করছেন এইসব? সবসময় ভালো লাগে না এইসব।”
“ফাইনাল হানিমুনটাতো তোর সাথে ভালো করে সারিইনি আভা। বাড়ি পুরা ফাঁ/কা। আমাকে আর আটকায় কে?”
“গোলাপে কিন্তু কাঁ’টা থাকে তাশরীফ ভাই।”
“ভালোবাসা গোলাপের মত সুন্দর। একটুতো বিরহ নিতেই হবে। কাঁটাতো থাকবেই। এখন, এত ডিস্টার্ব করিস নাতো, যেইটা করতে চাচ্ছি, করতে দে।”