প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ গল্পের লিংক || মারশিয়া জাহান মেঘ

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১
মারশিয়া জাহান মেঘ

পুরো হসপিটালের ডক্টর, নার্স, স্টাফ সবাই হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ একজন সিনিয়র ডক্টর এই হসপিটালে অবস্থান করবে। তাকে ওয়েলকাম করার জন্যই, এত শত আয়োজন। ডক্টর নীল চৌধুরী, হাতের ঘড়ির দিকে দৃষ্টি রেখে পাশে থাকা ডক্টর মিনতিকে বলল,
_ডক্টর রেখা উনি এখনো আসছে না কেন? একটু কল দিয়ে দেখুনতো কোথায় আছে।
_হয়তো চলেই এসেছে৷ এখন কল না দেওয়াই ভালো। এমনও হতে পারে তিনি জ্যামে আটকে আছেন।
_এতোক্ষণেতো চলে আসার কথা আসছে না কেন?
_আপনারইতো বন্ধু ডক্টর নীল। আপনি যেমন মিস্টার লেইট, তিনিও কি তেমন?
ডক্টর রেখার কথা শুনে নীল হাসলো। শব্দহীন হাসি। সে লেইট করে ঠিক আছে। তাই বলে ‘মিস্টার লেইট’ নাম ফেলে দিবে? নীল বলল,

_আমার মত লেইট তিনি কখনোই করে না। টাইম মেইনটেইন করাই উনার লিস্টের প্রথম রুলস। ডিসিপ্লিন অনুযায়ীই তিনি চলাফেরা করে থাকেন।
_তাহলে এখনো আসছে না কেন?
_কে আসছে না? মিস রেখা?
অপরিচিত কন্ঠস্বর শুনে সামনে তাকালো রেখা। ডিপ স্কাই কালার শার্ট, হাতা হোল্ড করা। ডিপ হোয়াইট প্যান্ট। হাতে ঘড়ি। চুলগুলো সিল্ক৷ গায়ের রং ফর্সা। লম্বা, ৫ ফুট ৭/৮ হবে। হাতে এপ্রোন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুদর্শন সুঠাম দেহের এক যুবক। পাশ থেকে নীল হেসে বলল,
_এসে গেছে।
নীল এগিয়ে গিয়ে ফুলের তুড়াটা সামনে থাকা মানুষটার দিকে বাড়িয়ে দিলো। মুচকি হেসে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_ওয়েকলাম ইন আউয়ার হসপিটাল ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী।
_থেঙ্ক ইউ, থেঙ্ক ইউ সো মাচ।
সবার হাতে থাকা ফুল একে একে ধ্রুবে’র হাতে দিলো সবাই। ধ্রুব সৌজন্যমূলকভাবে হেসে বলল,
_কাজ রেখে আমাকে ওয়েলকাম করার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে৷ সবার সাথে দেখা হয়ে বেশ ভালো লেগেছে আমার। আপাতত সবাই সবার কাছে এটেন্ড করুন কাইন্ডলি।
ধ্রুব’র কথা শুনে স্টাফরা সবাই সবার কাজে চলে গেল। শুধু থেকে গেল, নীল, রেখা, তুরান্ব, মিশ্মি, প্রগতি। তাঁরা সবাই ডাক্তার। আরও অনেক ডক্টর এই হসপিটালে আছে। সবাই এইখানে থাকা সম্ভব হয়নি। নীল এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ধ্রুবের দিকে। ছোট থেকেই ধ্রুব ভীষণ শান্ত প্রকৃতির একটা ছেলে। কথা কম বলতে সে বরাবরই পছন্দ করে। ধ্রুব’র দৃষ্টি যায় নীলের দিকে। বন্ধুত্বপূর্ণ ছেলেটা তার দিকেই চেয়ে আছে। বলল,

_কিছু বলবেন নীল?
ধ্রুব’র মুখ থেকে ‘আপনি’ সম্বোধন শুনে নীরব হাসলো নীল। হসপিটালে রেসপেক্ট করে ধ্রুব তাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করেছে।
_না কিছু না। মা-বাবার সাথে দেখা করে এসেছেন? নাকি সোজা হসপিটালে উঠেছেন?
_এয়ারপোর্ট থেকে সোজা হসপিটালে চলে এসেছি।
_আসুন, আপনার কেবিনে নিয়ে যাই।
_এক্সকিউজ মি…
সবাইকে পাশ কাটিয়ে নীলকে ফলো করতে করতে হাঁটা শুরু করে ধ্রুব।
নীল আর ধ্রুব চলে যেতেই রেখা লক্ষ করলো, মিশ্মি সেদিকে তাকিয়ে আছে। কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে নিয়ে বলল,

_মিস মিশ্মি, মনে কি কোনো কিছুর ঘন্টা বেজেছে?
_বেজেছে বোধহয় ডক্টর রেখা।
_ভালো লাগার নাকি….
রেখার অর্ধেক বাক্যের অর্থ বুঝে মিশ্মি বলল,
_জানা নেই। বিষয়টা বুঝতে, আরও বোধহয় কিছুদিন লাগবে।

_কইগো, কল ধরল?
বিরক্ত স্বরে আভা চৌধুরী বললেন,
_ধরবে কেন? ছেলে কি বাবার কোনো গুণ না পেয়ে আছে?
_ইশ আভা, কথায় কথায় আমাকে এত টানো কেন? ছেলে সব খারাপ গুণ আমার পেয়েছে। আর ভালো গুণ তোমার পেয়েছে তাই না?

_ভালো গুণ দেখেছেন এই অবধি? আমিতো দেখিনি।
_কি বলতে চাও? তোমার ছেলে, তোমার কিছুই পায়নি?
_একদম নয়। কিছুই পায়নি। আমারতো মাঝে মাঝে মনে হয়, আপনার কার্বন কপি সে।
তাশরীফ চৌধুরী, হতাশ স্ত্রী আভার কথায়। এই ছেলেকে নিয়েও সে আর পারে না। আরে বাবা, কলটা ধরেতো বলবি? আমি এইখানে আছি, নাকি ওইখানে আছি। কল ধরছে অবধি না। বলবে কি?
_নীলকে একবার কল করো।
_আপনি করেন না।
_আচ্ছা, ফোনটা দাও। ভুলই করেছি বুঝলেতো? আজ বাসায় না থেকে হসপিটালে থাকলেই ভালো হতো। ভেবেছিলাম ছেলেটা আজ আসবে, আজ আর না যাই। এখন দেখি, আমাকে বাসায় বসিয়ে সে বেপাত্তা।
আভা চৌধুরীর বোধহয় কথাটা পছন্দ হলো না। সে মিনমিনিয়ে বলল,
_ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী। সান অফ ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী। বাবার মত হবে তাতো জানা কথাই ছিল।”

_আপনি কল ধরছেন না কেন ধ্রুব? আঙ্কেল কল করেছে। নিন, কথা বলুন।
ধ্রুব কিছুক্ষণ হলো বসলো মাত্র। এক্ষুনি সে মায়ের কল ফোনে দেখতে পেলো। যেই কল দিতে যাবে, ঠিক তখনি নীল তার কেবিনে আসে। এসেই, উপরোক্ত কথাটি বলে। ধ্রুব ফোনটা ধরলো না। নীলকে বলল,
_কে’টে দিন, আমি ব্যাক করছি।”
নীল কে’টে দিলো। বলল,
_আমার ফোনে কথা বললে কি কোনো দিক দিয়ে কমে যেত ধ্রুব?
_না, বাট আই থিংক, মা আমার নাম্বারে কল গেলেই বেশি খুশি হবে। কারণ, আমার নাম্বার তিনি ‘গুড্ডু’ দিয়ে সেইভ করে রেখেছে। আমার নাম্বার দেখেই চিন্তিত ভাবটা কে’টে যাবে।
নীলের মুখের ভাবভঙ্গি মুহুর্তেই বদলে গেল। যা চোখ এড়ায়নি ধ্রুব’র। সে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,

_আমাদের বাসায় যাবেন আমার সাথে। বাবা বলেছিল, আপনাকে সাথে নিয়েই যেন আমি যাই।
_আমি কেন?
_আপনার বাড়িতে আপনি যাবেন না? আর, হসপিটালে আমি ডক্টর হিসেবে এসেছি। এজ আ ব্রাদার হিসেবেতো, আমার বাসায় যাওয়ার উপলক্ষে, আপনি সেইখানে উপস্থিত থাকতেই হয়।
মুহুর্তেই হাসির রেখা ফোটে উঠল নীলের ঠোঁ/টের কোণে। মা-বাবার কথা মনে এসেছিল তার। তাই মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল, তার আরেকটা পরিবার আছে। চৌধুরী বাড়িই তার বাড়ি। চৌধুরী বাড়ির সবাই তারইতো পরিবারের সদস্য।
ধ্রুব উঠলো ইজি চেয়ারটার থেকে। নীলের কাঁধে হাত রেখে বলল,
_ডোন্ট মুড অফ নীল। একটা সময় পর, সবাইকেই পৃথিবীর মায়া ত্যা’গ করতে হবে। যার কেউ না থাকে তার জন্য সৃষ্টিকর্তা থাকে। তোর যখন মনে হবে, তোর জীবনে কিছু নেই। চোখ বন্ধ করবি। দেখতে পাবি, এক জীবনে অনেক কিছুই আছে। হয়তো তোর যা আছে, তা অনেকের কাছে নেই।

_এক্সকিউজ মি, ডক্টর ধ্রুব কোথায় আছেন?
_ওইতো সামনে গিয়ে, বাম দিকে একটা কেবিন পড়বে। ওই কেবিনটাই ডক্টরের।
ধীর পায়ে হেঁটে সে সেইদিকে পা বাড়ালো। কাঙ্ক্ষিত সেই কেবিনটা পেয়েও গেল৷ উপরে গুটা গুটা করে লেখা ‘ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী’ সে যখনি ভেতরে যাবে, ঠিক তখনি ডক্টর রেখা বলল,
_এই যে, ডক্টর আজই মাত্র আসলেন। আপাতত উনি কোনো রোগীকে দেখবেন না।
পা জোড়া থেমে গেল তার। আমতা আমতা করে বলল,
_আসলে…
_কোনো আসলে-টাসলে নয়। উনি আজ কোনো রোগী দেখবেন না।
সে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কিছু একটা করলো। তারপর, পাশের বেঞ্চটাতে গিয়ে বসলো। ডক্টর রেখা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা পরখ করলো তাকে। চুলগুলো স্ট্রেইট করা। কোমড়ের নিচ অবধি লম্বা চুল। গায়ের রং উজ্জল ফরসা। হলুদ রংয়ের ড্রেস পরে আছে। কাঁধে ব্যাগ আর এক হাতে, ফাইল। চোখগুলোতে কাজল টানা। ঠোঁ/টে নু’ড কালার লি’প’স্টি’ক। কপালে টিপ। মেয়েটার বোধহয় গ’র’ম লাগছে ভীষণ। চোখ মুখে বিরক্তির ছাপ ভাসমান। সেই সাথে অস্বস্তি ভাবটাও আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধ্রুব বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। তাকে বসে থাকতে দেখে বলল,

_ইউ….
মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো। মলিন হেসে বলল,
_ফারাবী রাজের একমাত্র মেয়ে মাহদিয়া রাজ আঁধারীনি।
_হোয়াট ননসেন্স আঁধারীনি? বাইরে বসে আছিস কেন? ভেতরে আয়।
ডক্টর রেখা বিস্ময় নিয়ে বললেন,
_ভেতরে মানে? আজতো আপনি কোনো রোগী দেখছেন না ডক্টর ধ্রুব।
_সেতো পেশেন্ট নয়।
_তাহলে?
_শী ইজ মাই সোলম্যাট

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ২