প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৩

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৩
মারশিয়া জাহান মেঘ

___তুমি যেহেতু এত বুঝো, তাহলে তুমি কেন বিয়ের আগে এত খেতে না হুম? এই বয়সে থাকতেতো তুমি নিজেই আঁধারের মত অনীহা অনীহা ভাব নিয়ে থাকতে। রান্নাটাও ভালোভাবে পারতে না। তোহা আর তুমি মিলে, আমাকে একদমম ঝাল ঝাল শুধু মরিচের গুঁড়ো দিয়ে ভাত খাইয়েছিলে মনে আছে তোমার? আর নাম দিয়েছিলে, কাজের আপার।
মুহুর্তেই হেসে ফেলল আঁধারীনি। তার হাসির শব্দ এত বেশিই ছিল যে, ধ্রুব খাওয়া ছেড়ে কেবল ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল৷ আভাও সেইমভাবে তাকিয়ে আছে আঁধারীনির দিকে। আঁধারীনি সবার দিকে তাকিয়ে হাসি থামিয়ে ফেলল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল,
__আসলে…
সঙ্গে সঙ্গে হেসে ফেলল আভা। হাসতে হাসতে বলল,
__আরে আঁধার তুমিতো একদম তোহার মত শব্দ করে হাসো।
ল’জ্জায় মিইয়ে গেল আঁধারীনি। ধ্রুব খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,
___ ফুফুর হাসিতো যাইহোক অনেক সুন্দর। নেওয়া যায়৷ কিন্তু, আঁধারের হাসি শুনলেতো আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ভূমিকম্প চলে এসেছে।

খাওয়া-দাওয়া শেষে ধ্রুব নিজের রুমে এলো। আপাতত রেস্ট নেওয়া উচিত। সে শুতে যাবে ঠিক সেই সময়ই আঁধারীনি দরজার সামনে এসে বলল,
___ধ্রব ভাই…
___হুম্মম…
___আমি এই ম্যাথটা বুঝতে পারছি না। আপনি আমাকে বুঝিয়ে দিবেন?
___আমার মত সহজ মানুষটার হৃদয়ক্ষরণইতো বুঝতে পারিস না। ম্যাথের মত কঠিন জিনিসটা কিভাবে বুঝবি?
আঁধারীনি বুঝতে পারলো না। পুনরায় বলল,
__জি…
___কানের চিকিৎসা করাতে হবে? আমি করিয়ে দিব? যদিও আমি অটোলারিঙ্গোলজিস্ট নয়।
আঁধারীনি ঝিম মে’রে রইল। কোনো কিছুই বললো না। এই ধ্রুবটা তার সাথে কেমন খোঁ’চা মে’রে মে’রে কথা বলে। একটু দো’ষ পেলেই লেগে যায় পেছন পেছন। ধ্রুব আঁধারীনিকে চুপ থাকতে দেখে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

____কোন ম্যাথ দেখি?
___এই যে এই ম্যাথটা।
___কাছে আয় আমার।
আঁধারীনি শুকনো ঢোক গি’লে থমথমে গলায় বললো,
___কি!
___তুই লন্ডনের শেষ সীমানায়, আর আমি বাংলাদেশে থাকলে, দেখব কিভাবে?
আঁধারীনি আরেকটু এগিয়ে যায় ধ্রুবর কাছে। খাতাটা দেখিয়ে বললো,
___এইটা।
ধ্রুব আঁধারীনির এক হাত টা’ন দিয়ে নিজের কাছে আনে। দাম্ভিক কন্ঠে চোখে চোখ রেখে বললো,
__আমি কাছে আসতে বলেছি। এক-পা, দু-পা করে এগিয়ে আসতে বলিনি তোকে।

চারিদিক রঙ্গিন আলোয় আলোকিত। জোড়ায় জোড়ায় মানুষজন হাঁটছে। ওই যে অদূরেই কালো ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা মেয়েটা বসে বসে ড্রিংক করছে। আঁধারীনির আনইজি ফিল হলো। ধ্রুব এই পার্টিতে ওকে এনে, এইখানে দাঁড় করিয়ে, ‘তুই এইখানে দাঁড়া, আমি আসছি’ কথাটি বলেই কোথায় যেন চলে গেল। আঁধারীনি আজ কালো রংয়ের জরজেট একটা শাড়ি পরেছে। চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে। চোখে টানাভাবে কাজল পড়েছে। ঠোঁ/টে লাল লি’প’স্টি’ক দিয়েছে। যদিও এইসব সে কিছুই পরতে চায়নি। ধ্রুব’র কড়া দৃষ্টিতে বাধ্য হয়েই পরতে হয়েছে তাকে। এই পার্টিতে সবাই ওয়েস্টার্ন পরেছে। যদিও আঁধারীনির কাছে এইগুলো খুব নরমাল মনে হচ্ছে। কারণ, বিদেশি কালচারের সাথে সে পরিচিত। লন্ডনেও এইসব পরে মেয়েরা। কিন্তু, তোহা আর ফারাবী কখনোই এইসব পরতে দেয়নি মেয়েকে। দেশীয় কালচারে বড় করেছে তারা আঁধারীনিকে।

___এক্সকিউজ মী ম্যাম, ডিড ইউ কাম এলং?
কালো ব্লেজার পরা, একটা হ্যান্ডসাম যুবক আঁধারীনিকে কথাটি বলতেই আঁধারীনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ছেলেটার দিকে। দেখততো যথেষ্ট ভদ্রই মনে হচ্ছে। কিন্তু, অভদ্রের মত আচরণ কেন? ছেলেটা আবারও বলে উঠলো,
__আপনাকেই বলছি।
আঁধারীনি জবাব দিলো না। তার চোখ জোড়া ব্যস্ত ধ্রুবকে খুঁজতে।
___আমি রোবায়েত খান স্নিগ্ধ। আমিও আপনার মতো একা এসেছি এই পার্টিতে। এজ আ সিঙ্গেল হিসেবে। সো… ক্যান উই এনজয় টুগেদার?
তখনি ধ্রুবকে দেখতে পেলো আঁধারীনি। এক মুহুর্তও দাঁড়ায় না সে সেইখানে। ধ্রুবের হাতে হাত রেখে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো,

___নো। বিকজ, দেয়ার ইজ সামওয়ান। থেঙ্কইউ।
ধ্রুব আঁধারীনির দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,
__কি হয়েছে আঁধার?
__কিছু না। আমাকে একা রেখে যেহেতু আপনি ঘুরবেনই, তাহলে আমায় নিয়ে আসলেন কেন? সিঙ্গেল হিসেবে আসতে লজ্জা করবে বলে?
স্নিগ্ধ হেসে ফেললো আঁধারীনির কথা শুনে। ধ্রুবর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সে বললো,
“হাউ আর ইউ ধ্রুব? নাইস টু মিট ইউ। অনেকদিন পর তোকে দেখলাম।
ধ্রুব হেসে বললো,

___সেইম টু ইউ স্নিগ্ধ। অপ্রত্যাশিতভাবে তোর সাথে দেখা হয়ে গেল।
___তো? গোপনে গোপনে অনেক কিছু হুম? বাট অনেস্টলি, শী ইজ এ প্রেটি গার্ল।
আঁধারীনি ভরকে গেল স্নিগ্ধর কথা শুনে। স্নিগ্ধ ভুল বুঝছে তাদেরকে। আঁধারীনি যেই বলতে যাবে, _আপনি ভুল ভাবছেন, আমরা কাজিন। ঠিক তখনি ধ্রুব জবাবে বললো,
__শী ইজ এ বেড গার্ল। বিকজ, শী মেড মী ক্রেজী।
চোখ দুইখানা বড় বড় করে তাকালো আঁধার ধ্রুবর দিকে। এইসব কি বলছে ধ্রুব!

আঁধার দেয়ালে একদম লে’গে আছে। ধ্রুব তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আঁধার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখছে, পার্টিতে এনজয় করছে। সে এসেছিল, চোখে -মুখে আলতো পা’নি দিতে এসেছিল ওয়াশরুমের দিকে। তার পেছন পেছন ধ্রুব কখন চলে এসেছে তা সে নিজেও টের পায়নি। আঁধারীনি আমতা আমতা করে বললো,
__কি হলো ধ্রুব ভাই? আপনি আসলেন কেন এইখানে?
__কি হয়নি সেইটা বল? আর একটু হলেইতো আমার ই’জ্জ’ত শেষ করতে যাচ্ছিলি।
আঁধারীনি অবাক স্বরে বললো,

__মানে?
___স্নিগ্ধর সামনে আর একটু হলেইতো বলে দিতি যে আমরা কাজিন। তুই আমার গার্লফ্রেন্ড নয়।
___এতে সমস্যা কোথায়?
___কেউ কি বিলিভ করবে? এত হ্যান্ডসাম ছেলের একটা গার্লফ্রেন্ড নেই।
আঁধারীনি ভুল করেই শব্দ করে হেসে ফেলল ধ্রুবর সামনে। ধ্রুব মুখশ্রী গম্ভীর করে বললো,
__হাসলি কেন? হেসেতো অপরাধ করেছিস তুই।
আঁধারীনি ঠোঁ/টে আঙ্গুল চে’পে ধরে বললো,
__আমি কি হাসতে পারি না?
___না হাসতে পারিস না। কারণ হাসলে তোকে আমার রেড চেরী লাগে। ( মনে মনে)
__হাত সরান ধ্রুব ভাই। যেতে দিন আমাকে।
__যেতে দিবো না। কি করবি তুই?

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ২

নিরব রইলো আঁধারীনি। ধ্রুব আঁধারের আকর্ষণীয় কিছু একটাতে এগিয়ে যেতেই আঁধার বললো,
__এইসব কি করছেন ধ্রুব ভাই, মানুষ আছে এইখানে।
___সো হোয়াট? আই হ্যাভ নো প্রবলেম। চল দিই।
আঁধার আমতা আমতা করে বললো,
__কি?
___চু’মু।

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৪