প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৫
মারশিয়া জাহান মেঘ
গাড়িতে চুপসে বসে আছে আঁধারীনি। রাতের চাঁদ তার সঙ্গে সঙ্গে বোধহয় পথ চলছে। আঁধারীনি নিরবতা ভেঙ্গে বললো,
___কিয়ারা মেয়েটা ওইভাবে আপনার হাত ধরলো কেন?
ধ্রুব ড্রাইভ করতে করতে বললো,
___আমাকে ভালোবাসে তাই।
___ভালোবাসে!
___হ্যাঁ, ভালোবাসে। কিন্তু, আমার ওর মতো কাউকে পছন্দ নয়।
___কার মতো কাউকে পছন্দ?
___তোর মতো কাউকে।
___কার মতো?
___তোর মতো। তুই যেমন ভয় পাস, এমন ভয় পেতে হবে আমাকে। লুঙ্গি সামলানোর মত, বউ সামলানোও কঠিন। ওই জন্য, ভীতু মেয়ে প্রয়োজন।
___কিয়ারা মেয়েটার চোখে সত্যিকারের, ভালোবাসার ছাপ ভাসমান ধ্রুব ভাই।
___তোর এত মায়া লাগলে, তোর ভাইকে দিয়ে বিয়ো করিয়ে ফেল।
___আমার ভাইতো আপনিই, তো করে ফেলুন ওকে বিয়ে।
সঙ্গে সঙ্গে কাশি পেলো ধ্রুবর। আঁধারীনি পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,
___খান, খান।
ধ্রুব পানি খেয়ে বললো,
___আমি তোর কি লাগি?
___ভাই।
___তোর বাপের এত সম্পত্তি! আমাকে বল কিছু লিখে দিতে। আফটার অল আমিতো তোর ভাই তাই না?
___ ভাই হলেই দলিল লিখে দিতে হবে?
___আমিতো দলিল চাইনি। তোর বাপের তুই নামক সম্পত্তি, আমার করতে চাই।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাসায় ফিরেই নিজের রুমে ঢু’কে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেল ধ্রুব। পার্টিতে সে কখনোই আজ যেতো না। কয়েকজনের রিকুয়েষ্টে ওই বার্থডে পার্টিতে সে এটেন্ড করেছিল। ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো, আঁধারীনি তার রুমে। অবাক হয়ে বললো,
___তুই এইখানে কেন?
___মামী ডাকছে।
___আমাকে?
____হুম।
___এত রাতে? মা ঘুমায়নি?
___না।
__তুই গিয়ে শুয়ে পড়। আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।
___ঠিক আছে।
আঁধারীনি যেতেই ধ্রুব ড্রেস বদলে মায়ের রুমের দিকে যায়। তাশরীফ ঘুমাচ্ছে। আভা বললো,
___এসেছিস? এইখানে বস।
ধ্রুব বসলো চেয়ারে। তার দৃষ্টি মায়ের দিকে। কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া এইভাবেতো ডাকবে না তাকে। বললো,
___কিছু বলবে?
____বলারতো অনেক কিছুই আছে। তোর কি শোনার সময় হবে?
____বলো, শুনছি।
____বিয়ে করবি কখন?
এক মিনিটও বসলো না ধ্রুব। উঠে দাঁড়ালো। বললো,
___এইসব ছাড়া কোনো কথা আছে মা?
____এইসব কি তোর কথা মনে হয় না?
____কিছু কথা বলার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। আমার মনে হয় ওই সময়টা এখন নয়।
কথাটি বলেই ধ্রুব বেরিয়ে গেল মায়ের রুম থেকে। ছাঁদে যাবে সে। আপাতত, একটা সিগারেট খাওয়াই যায়। যদিও সে সবসময় খায় না। খুব বেশি চিন্তিত থাকলেই এক দুটো টা’ন দেয়।
আঁধারীনি ঘুমাচ্ছে। ধ্রুব এক ধ্যানে তাকিয়ে ওকে দেখছে। আঁধারীনি হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না, এত রাতে কেউ একজন তার রুমে এসে তার দিকে মত্ত হয়ে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব আঁধারীনির দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায় ওই রুম থেকে। সবকিছু কেমন অন্যরকমভাবে হচ্ছে। সে যেমনভাবে চাচ্ছে সেইরকম কিছুই হচ্ছে না। ধ্রুবর ফোনে কল আসে। ধ্রুব কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ কিছু একটা বললো। এপাশ থেকে ধ্রুব বললো,
___হ্যাঁ, ঘুমিয়েছে। ঠিক আছে আঁধার।
মুহুর্তেই কল লাইন কে’টে দিলো ওপাশ থেকে। ধ্রুব গভীর কিছু ভাবতে বিভোর। আনমনে বললো,
___ওই দিনটা কখন আসবে? যখন আঁধার সবটা সত্যি জানতে পারবে।
ধ্রুব আর ভাবতে চাইলো না। শুয়ে পড়লো। ফোনটা সাইলেন্ট করলো সবার আগে। সকাল হতে না হতেই ফোনে কল আসতে শুরু করে হসপিটাল থেকে। যদিও সে জানে, নীল অপ্রয়োজনে তাকে খুব কমই কল দেয়।
সকাল হতেই এলাহি কান্ড বাঁধিয়ে বসলো আঁধারীনি। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বললো,
___আমার সাদা শার্টে যে লিপ’স্টি’ক ভ’রা’লি, এখন আমি কি পড়ে যাব হসপিটালেরে?
আসলে বিষয়টা হলো, আঁধারীনি না দেখেই তড়িঘড়ি করে হেঁটে উপরতলায় যাচ্ছিলো। তখনি ধ্রুবর সাথে সে ধা’ক্কা খায়। আঁধারীনি আমতা আমতা করে বললো,
____আমি দেখিনিতো ধ্রুব ভাই।
___চল…
___কোথায়?
____আমার সাথে হসপিটালে।
___কেন? আমি হসপিটালে যাব কেন?
____আমি বলেছি তাই।
___ব্যগটা নিয়ে আসি?
___জলদি আয়। আমি বাইরে ওয়েট করছি।
___আচ্ছা।
আঁধারীনি ঠিকঠাকভাবে রেডি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। ধ্রুব বললো,
___সিলেট ঘুরতে যাবি আঁধার?
___সিলেটে? চা বাগান দেখব!!
অনেকটা উৎফুল্লে কথাটা বলে উঠে আঁধারীনি। ধ্রুব ড্রাইভ করতে করতে বললো,
___হুম, আমরা আগামী সপ্তাহেই যাচ্ছি।
__হঠাৎ? মামী, মামা যাবে না?
___না।
__আমি আর আপনি শুধু?
___হুম, তবে, আরেকজন বিশেষ মানুষ আছে।
___কে? বাবা, মা আসবে?
___সময় হলেই দেখতে পাবি।
আঁধারীনি র’ক্ত দিচ্ছে একজন গর্ভবতী মহিলাকে। ধ্রুব’র অসহ্য লাগছে। এই মেয়েটাকে তার সাথে আনাই তার ভুল হয়েছে। ওই মহিলার ব্লা’ড গ্রুপের র’ক্ত হসপিটালে নেই। আঁধারীনি স্বেচ্ছায় বলে উঠল,
__আমি দিব র’ক্ত।
এইদিকে ধ্রুবর রাগ দেখে কে আর? সে না পারছে সবার সামনে কিছু বলতে, না পারছে এইসব দেখতে। ওই কেবিন থেকে বেরুতে বেরুতে তীব্র রাগ নিয়ে নার্সকে বললো,
___ফলমূল রেডি রাখুন উনার জন্য।
ধ্রুবর রাগ দেখে নীল কিছু একটা আঁচ করলো। পেছন পেছন ছুটলো ধ্রুবর। বললো,
__আপনারও কি ফলমূল দরকার?
__হোয়াট ননসেন্স নীল? আমি ফান মুডে নেই।
___আমি জানি। র’ক্ত দিচ্ছে একজন। আর গায়ে লাগছে আপনার।
ধ্রুব দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
___এইখান থেকে কি আপনি যাবেন? মন মেজাজ ভালো না, যান।
নীল আর কথা বাড়ালো না। বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে।
আঁধারীনি বেডে শুয়ে ফল খাচ্ছে। ধ্রুব চেয়ে চেয়ে দেখছে। আঁধারীনি বুঝলো ধ্রুব রেগে আছে। সেই রাগে আরেকটু নুন দিয়ে বললো,
___ডাক্তার সাহেব, কিয়ারা আপু কিছু বলেছে? মুখ এমন করে আছেন কেন?
___কিয়ারাতো আমার কোলে বসে আছে দেখছিস না? ওহতো আমার জানু, বাবু, কলিজা, লিভার, কিডনি। তাই না?
___ওমা! এত কিছু? আমি জানতাম নাতো। ভাগ্যিস জানালেন।
___বাই দ্য ওয়ে, আমি ছুটি নিয়ে নিয়েছি হসপিটাল থেকে। আমরা সিলেট যাচ্ছি।
___এত সিলেট সিলেট কেন করছেন ডাক্তার সাহেব?
___ওইখানে আমার বিয়ে করা বউ আছে তাই।
ধ্রুবর এমন জবাব শুনে অবাক হয় আঁধারীনি। ধ্রুব আজকাল টিকটকারি মে’রে কথাও বলতে পারে! নীল এলো কেবিনে। ধ্রুবকে বললো,
___কল এসেছে, আপনার।
ধ্রুব হাতে ফোনটা নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আঁধারীনির দিকে। তারপর কল ধরতেই বললো,
___হ্যাঁ, সিলেট আমরা যাচ্ছি। অপেক্ষা করব বিশেষ কিছুর জন্য।
বলেই কল কে’টে দিলো ধ্রুব। ধ্রুব আঁধারীনির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,
___সিলেট তোর জন্য বড় কিছু অপেক্ষা করছে আঁধার।
আঁধারীনি প্যাকেজিং করছে কাপড়চোপড়। বাংলাদেশে এসে এই প্রথম সে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। আভা এসে বললো,
___সাবধানে থেকো আঁধার, রাতে বের হবে না রিসোর্ট থেকে।
__আচ্ছা মামী। আমার ভালো লাগছে যেতে, কিন্তু আরও ভালো লাগতো যদি আপনারাও যেতেন।
হাসলো আভা। বললো,
___একসময় তোমার মামা আমায় নিয়ে অসংখ্য জায়গায় ঘুরেছে। তাই এখন আর ঘুরতে ইচ্ছে করে না। তোমরদ যাও, গিয়ে ঘুরে আসো। ভোরে বের হতে হবেতো, ঘুমিয়ে পড়ো।
___আচ্ছা মামী।
এইদিকে অজানা কষ্টে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে ধ্রুব। বার বার মনে হচ্ছে, যা হবে ভালো হবে না তার জন্য। যেই তীব্র অসুখে সে পুড়ছে, তাতো কমবে না বরং বাড়বে। ফোন হাতে নিলো সে। কল দিলো পরিচিত সেই নাম্বারে। ওপাশ থেকে রিসিভ করতেই ধ্রুব বললো,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৪
___আমরা ভোরে বের হবো। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে সোজা সিলেট ওকে? আর হ্যাঁ, কিছুটা সময় দিতে হবে ওকে। ওর হয়তো ভাবতেও সময় লাগবে বিষয়টা। যেহেতু হঠাৎ সবকিছু জানবে।
ওপাশ থেকে কিছু একটা বলতেই ধ্রুব রাগী স্বরে বললো,
___অন্যের জিনিসে ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী নজর রাখে না।