প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৬

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৬
মারশিয়া জাহান মেঘ

আঁধারীনি প্যাকেজিং করছে কাপড়চোপড়। বাংলাদেশে এসে এই প্রথম সে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। আভা এসে বললো,
___সাবধানে থেকো আঁধার, রাতে বের হবে না রিসোর্ট থেকে।
__আচ্ছা মামী। আমার ভালো লাগছে যেতে, কিন্তু আরও ভালো লাগতো যদি আপনারাও যেতেন।
হাসলো আভা। বললো,
___একসময় তোমার মামা আমায় নিয়ে অসংখ্য জায়গায় ঘুরেছে। তাই এখন আর ঘুরতে ইচ্ছে করে না। তোমরদ যাও, গিয়ে ঘুরে আসো। ভোরে বের হতে হবেতো, ঘুমিয়ে পড়ো।
___আচ্ছা মামী।
এইদিকে অজানা কষ্টে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে ধ্রুব। বার বার মনে হচ্ছে, যা হবে ভালো হবে না তার জন্য। যেই তীব্র অসুখে সে পুড়ছে, তাতো কমবে না বরং বাড়বে। ফোন হাতে নিলো সে। কল দিলো পরিচিত সেই নাম্বারে। ওপাশ থেকে রিসিভ করতেই ধ্রুব বললো,
___আমরা ভোরে বের হবো। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে সোজা সিলেট ওকে? আর হ্যাঁ, কিছুটা সময় দিতে হবে ওকে। ওর হয়তো ভাবতেও সময় লাগবে বিষয়টা। যেহেতু হঠাৎ সবকিছু জানবে।
ওপাশ থেকে কিছু একটা বলতেই ধ্রুব রাগী স্বরে বললো,
___অন্যের জিনিসে ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী নজর রাখে না।

ভোরের আলো এখনো ফুটেনি। চারিদিকে গভীর তিমির। ধ্রুব ঘুম থেকে উঠে, দাঁত ব্রাশ করে নিলো। ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো। অফ হোয়াইট টিশার্ট, ব্লু ব্লেজার পড়েছে সে। সাথে, জিন্স। হাতে ঘড়ি। পারফিউম স্প্রে করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলগুলো ঠিক করতে করতে নিজেকে পরখ করে দেখে নিলো সে।
__সবকিছু ঠিকঠাক। যাই, আঁধারকে ডেকে তুলি।”
ধ্রুব নিজের রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মা, ড্রইংরুমে নাস্তা রেডি করছে। এই অসময়ে, আভাকে জাগ্রত দেখে অবাক হলো সে। বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে বললো,
__তুমি এত ভোরে জেগেছ কেন মা? শ’রী’র খারাপ করবেতো।
___সিলেট যাচ্ছিস। কিছু না খেয়ে বেরিয়ে পড়বি? আমিতো আমার সন্তানকে চিনি। না খেয়ে গেলে, বাইরেও যে কিছু খাবি তাতো নয়। তুইতো বাইরের খাবার ছুঁয়েও দেখিস না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

__আজ না হয় খেতাম।
___মুখেতো বেশ বলে ফেললি, কিন্তু আদৌ কি খেতি? তুই বস, আমি আঁধারকে ডেকে আসছি।
__তোমার ক’ষ্ট করে যাওয়ার দরকার নেই মা। আমি যাচ্ছি। তুমি সব রেডি করো।
কথাগুলো বলেই ধ্রুব আঁধারীনির রুমের দিকে পা বাড়ায়। দরজা অল্প ধা’ক্কা দিতেই খু’লে যায়। ধ্রুব গিয়ে দেখলো, বাচ্চাদের মতো মুখে আঙ্গুল দিয়ে ঘুমাচ্ছে আঁধারীনি। ধ্রুব খুব কাছে এগিয়ে যায় আঁধারীনির। তারপর ধীর কন্ঠে ডাকে,
__আঁধার… উঠ, আমাদের বেরুতে হবে।
কোনো হেলদোল দেখা গেলো না আঁধারীনির মাঝে। সে ঘুমাচ্ছেই। ধ্রুব এইবার জো’রে ডাকলো,
__আঁধারররর, উঠ…..
লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো আঁধারীনি। বললো,
__ক্ কি হয়েছে?
__এখনো ঘুমে থাকলে, যাবি কখন? রেডি হয়ে নে কুইক।
আঁধারীনির মনে পড়লো আজ তারা সিলেট যাচ্ছে। সে বিছানা থেকে নেমে হামি ছাড়লো। তারপর বললো,

__আপনি যান, আমি এক্ষুনি আসছি।
আঁধারীনি যেই ওয়াশরুমে যাবে ফ্রেশ হতে, ঠিক তখনি ধ্রুব বললো,
__দাঁড়া।
আঁধারীনি ফিরে তাকালো। বললো,
__কি?”
ধ্রুব আঁধারীনির কাছে গেল। আঁধারীনির ড্রেসের কুটি টে’নে ফিসফিস করে বললো,
__একটু সাবধানে চলাফেরা করবিতো আঁধার। মেয়েদের এত অসাবধানে চলাটা শোভা পায় না। যাইহোক, তোর গলার নিচের তিলটা দেখতে সুন্দর।
ধ্রুব কথাগুলো বলেই চলে এলো রুম থেকে বেরিয়ে। আঁধারীনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর যাওয়ার দিকে।
__ধ্রুব ভাই এইটা কি বললো!”

গাড়িতে বসে আছে আঁধারীনি আর ধ্রুব। ধ্রুবর মুখশ্রী মলিন। আঁধারীনি বিষয়টা বুঝতে পারলো না। গাড়িতে উঠার পর থেকেই ধ্রুব কেমন জানি অন্য মনস্ক হয়ে বসে আছে। সকালের নাস্তা সেরে, প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে দুজন। ধ্রুব”র দিকে তাকিয়ে আঁধারীনি বললো,
__বাবাই জানে? আমি যে আপনার সাথে সিলেট যাচ্ছি।
__কেন? তোর বাবা কি নিষেধ করেছে? আমার সাথে কোথাও যেতে।
__আমি একবারও ওই কথা বলেছি? আপনি এত কথা প্যাঁচান কেন ধ্রুব ভাই?
__আমি মানুষটাই প্যাঁচানো স্বভাবের।

আঁধারীনি অবাক হয়ে কেবল শুনছে ধ্রুবর কথা। এমনভাবে কথা বলতে ধ্রুবকে সে কখনোই দেখেনি। কথার জবাব দিতে ১ সেকেন্ডও সময় লাগছে না ছেলেটার। হলোটা কি আজ?
আঁধারীনি আর কথা বললো না। বাইরের প্রকৃতিতে মনকে মনোনিবেশ করলো সে। কি অপরূপ সবকিছু! ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ভোরের আলো ফুটতে উঠার মত অপরূপ দৃশ্য দেখতে পেরে সে উৎফুল্লিত। সূর্য ধীরগতিতে রশ্মি ছড়াচ্ছে। তারপর? কেবল গাছপালা আর গাছপালা।
__কফি খাবি?
__না, আপনিই খান। চায়ের শহরে এসে কফি খাওয়াটা তেমন জমবে না।
ধ্রুব ফ্লাস্কটা রেখে দিলো। চা খেতে ইচ্ছে করছে এখন। কফিটাতে আগ্রহ পাচ্ছে না সে আঁধারীনির কথা শুনে। আঁধারীনি আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখলো ধ্রুবর কার্যকলাপ। তারপর নিঃশব্দে হাসলো সে।
__ধ্রুব ভাই দেখুন, চা বাগান। কি সুন্দর!
আঁধারীনির কথা শুনে সেইদিকে তাকালো ধ্রুব। চা বাগানে সেজে আছে দুদিক। আঁধারীনি উৎফুল্লে কখন যে ধ্রুবর ব্লেজার খা’ম’চে ধরেছে, তা সে নিজেই জানে না। ধ্রুব এক ধ্যানে তাকালো আঁধারীনির দিকে। সে অধীর আগ্রহ নিয়ে সিলেটের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে মশগুল। ধ্রুব মিনমিন করে বললো,
__তাকাস না ধ্রুব, সত্য সত্যই থাকে, মিথ্যে হতে পারে না।

দীর্ঘ জার্নির পর, সিলেট রিসোর্টে এসে পৌঁছালো আঁধারীনি আর ধ্রুব। ধ্রুবকে আঁধারীনির সাথে রুমে ঢু’ক’তে দেখে,আঁধারীনি আমতা আমতা করে বললো,
__রুম কি একটাই নিয়েছেন?
ধ্রুব গলা কাশি দিয়ে ঝেড়ে বললো,
__তুই কি চাস? একটাই রুম নিই। অবশ্য একটাই নেওয়া উচিত। অনেক কিছু করা বাকি।
__কি!
__না, মানে একসাথে বসে বসে সিনেমা দেখা, স্ন্যাকস খাওয়া, ভালো হতো না? কিন্তু, রুম নিয়েছি ২ টা। বিয়ের আগেতো আর ওইসব করা যায় না।
__মানে! কিসব? আর বিয়ে মানে কি? কি বলছেন এইসব ধ্রুব ভাই? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
__না, কিছু না। তুই ফ্রেশ হতে যা, আমি আমার রুমে যাচ্ছি।
তখনি ধ্রুবর ফোনে একটা কল আসলো। ধ্রুব আঁধারীনিকে বললো,
__তুই থাক, আমি আসছি।
_আচ্ছা।
ধ্রুব বেরিয়ে ফোন রিসিভ করে বললো,

__এসেছিস? আচ্ছা, ওইখানেই থাক, আমি আসছি।
আঁধারীনি ব্যগ রেখে, জানালার পর্দা ছড়িয়ে দিলো। পর্দা ছড়াতেই দেখতে পেলো প্রকৃতির চমৎকার সৌন্দর্য। রিসোর্টটা সুন্দর। রুমটা বেশ বড়ো। মজার ব্যাপার হলো, রুমটাতে এডজাস্ট একটা কিচেন রুমও আছে। খানিক বাদেই আঁধারীনি শুনতে পেলো,
__আঁধার…
ধ্রুবর ডাকে পেছন ফিরে তাকালে আঁধারীনি। ধ্রুবর পাশে অজানা কাউকে দেখতে পেলো সে। সুদর্শন মানুষটা কালো স্যুট পড়ে আছে। আঁধারীনি কিছু বলার পূর্বেই ধ্রুব বললো,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৫

__আঁধার, এদিয়ে আয়।
আঁধার এগিয়ে গেল। অবুঝ চাহনি নিয়ে বললো,
__উনি?
__আমার বন্ধু শাফায়েত খন্দকার শায়ান। আমেরিকার একজন টপ বিজনেসম্যান।

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৭