প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৯
মারশিয়া জাহান মেঘ
মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গতেই, ধ্রুব লক্ষ করলো, শায়ান তার পাশে নেই। সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসলো সে। দরজা খো’লা। ধ্রুব বিছানা থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে আঁধারের রুমের দিকে গেল। আঁধারও নেই! ধ্রুব ওদেরকে খুঁজতে খুঁজতে রিসোর্টের বাইরে বেরিয়ে এলো। এত রাত, অথচ কাপলদের আনাগোনা কমেনি। ধ্রুব পকেট থেকে ফোন বের করতে গিয়ে দেখলো ফোন নেই। বিরক্তে বলে উঠল,
“ওহ শীট, ফোনটাও রুমে ফেলে এসেছি।”
হঠাৎ ধ্রুবর চোখ যায় সুইমিংপুলের দিকে। আঁধারীনি আর শায়ান বসে আছে সেইখানে। সুইমিংপুলে পা রেখে বসে আছে দুজন। হাতে হাত রেখে কথা বলছে। ধ্রুব এক মুহুর্তও দাঁড়ায় না সেইখানে। কান্না পাচ্ছে ওর। কিন্তু সেতো সহজে কাঁদার পাত্র নয়। আঁধারীনির কাছে গেল সে। বেশ চিৎকার করেই ডাকলো,
“আঁধার….”
সঙ্গে সঙ্গে পানি থেকে উঠে দাঁড়ালো আঁধারীনি। হাত ছেড়ে দেয় শায়ানের। ধ্রুব চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,
”এত রাতে এইখানে কি করছিস? তুই না ঘুমাবি? তোর না ভালো লাগছে না?”
“ধ্রুব ভাই, আমার আসলে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে, একা একা হাঁটছিলাম। তখনি শায়ান ভাইয়াকে চোখে পড়ল। কথা বলতে বলতে দুজনে এইদিকে চলে আসি।”
“রুমে যা, চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়।”
ধ্রুবর মেজাজ গরম। এই মুহুর্তে সে যা তা করতে পারে। দুজন হাঁটবি ভালো কথা, একসাথে এত ঘনিষ্ঠ অবস্থায় কেন থাকতে হবে? সে এইটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। আঁধারীনি বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আরেকটু থাকি না, ভালোইতো লাগছে।”
ধ্রুব এইবার বেশ রেগে বললো,
“যেতে বলছি না? যাহ এইখান থেকে।”
আঁধারীনি ঘাবড়ে চলে গেল সেইখান থেকে। ধ্রুব শায়ানের দিকে তাকালো। শায়ান বাঁকা হেসে বললো,
“তো ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী, ইউ ফিল জেলাস আই থিংক। এত রিয়েক্ট করলি কেন?”
“আমার জেলাস ফিল কেন হবে শায়ান? এত রাতে অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে একসাথে বিষয়টা কেমন না? এইটা লন্ডন নয়, বাংলাদেশ। লন্ডনে যেমন অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়, এইখানে তা করা যায় না।”
“কাম ডাউন ধ্রুব, মাথায় তোর মেইবি বরফ লাগবে, আনব নাকি বরফ?”
“ডোন্ট ফান উইথ মী শায়ান, আই ডোন্ট লাইক দিজ।”
কথাটি বলেই ধ্রুব রুমের উদ্দ্যেশে হাঁটা শুরু করে। শায়ান পেছন থেকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ধ্রুবের পানে। ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না ধ্রুব। সে সেইটা ভালো করেই জানে।
ধ্রুব নিজের রুমে না গিয়ে আঁধারীনির রুমে গেল। হঠাৎ আঁধারীনির রুমের দরজা খো’লা পেলো সে। ধ্রুব রুমে গিয়ে দেখলো, আঁধারীনি হাঁচি-কাশি দিতে দিতে নাক -মুখ লাল করে ফেলেছে। শক্ত করে হাত মুঠো বদ্ধ করলো ধ্রুব। কার সাথে যে সে মেজাজ দেখাচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছে না।
“এত রাতে, সুইমিংপুলের পানি স্প’র্শ কেন করলি? এইটা কি লন্ডন পেয়েছিস? জানিস না? তোকে শ্যুট করে না বাংলাদেশের আবহাওয়া। তাওতো, নিয়ে এসেছি তোকে। এখন বুঝতে পারছি ভুল করেছি।”
ধ্রুবর চড়া কথা নিতে পারলো না আঁধারীনি। কিঞ্চিৎ অভিমান নিয়ে বললো,
“আপনি সবসময় আমাকে এমনভাবে ধমকে কেন কথা বলেন ধ্রুব ভাই? একটু ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না?”
“তোর সাথে আমার পিরিতের সম্পর্ক না আঁধার, যে মধুর আলাপ জমাবো।”
আঁধারীনি মুখ কালো করে ফেললো। ধ্রুব তার সাথে কেন এমন করে, সে নিজেও তা মাঝেমধ্যে বুঝে পায় না। ধ্রুব বেশ কড়া কন্ঠে বললো,
“জলদি চেইঞ্জ করে শুয়ে পড়, নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে। লেগে যাবে কি? অলরেডি লেগে গেছে। রাতে অনেক ঘুরার শখ হয়েছেতো আবার।”
কথাগুলো বলেই ধ্রুব, তার নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। রাগে শ’রী’র কাঁ’প’ছে তার। ইচ্ছে করছে আঁধারীনিকে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিতে। এই মেয়ের কত বড় সাহস হলে, উইথআউট পারমিশন শায়ানের সাথে নাইট এনজয় করে। ভাবতেইতো অবাক লাগছে ধ্রুবের। ধ্রুব রুমে প্রবেশ করতেই, শায়ান এলো। সে ওয়াশরুমের দিকে গেল। তারও কাপড়চোপড় বদলাতে হবে। ধ্রুব কিছু বললো না। বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লো সে। শায়ান বললো,
“আমি আঁধারীনির রুমে গিয়ে দেখে আসি, ওর কি অবস্থা।”
“তার কোনো প্রয়োজন নেই। আঁধারীনি শুয়ে পড়েছে। আর তাছাড়া আমি ডক্টর শায়ান, তুই নয়।”
“ডক্টর হলেই যেতে পারব, নয়তো নয়, ওই কথা কে বললো? তুই?”
“হ্যাঁ আমি। বিয়ে হয়নি এখনো ঠিক আছে? ওর রুমে যাওয়া-আসা অফ কর।”
“আমার বিষয়টা আমাকেই সামলাতে দে। তুই ঘুমা।”
“শায়ান তুই যাবি না, মানে যাবি না। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে।”
“হোয়াটস ইউর প্রবলেম ধ্রুব? আমার থেকে বেশি চিন্তা তোর দেখছি।”
“কারণ, আঁধারীনি আমার দায়িত্বে। তোর নয়….”
“ওকে আমার অনুভূতি বুঝাতে হলে, আমাকে ওর সাথে মিশতে হবে। ওর কাছে যেতে হবে। তাতে তুই বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিস বলে আমি মনে করছি। এইটা কিন্তু কথা ছিল না।”
“কোনটা কথা ছিল? দিন নেই, রাত নেই আঁধারের কাছে যাওয়াটা?”
শায়ান শুনলো না ধ্রুবর কথা। চলে গেল আঁধারীনির কাছে সে। ধ্রুব পেছন থেকে এতবার ডাকলো তাও শুনলো না অবাধ্য শায়ান। তার মন খুব করে চাইছে, আঁধারের কাছে যেতে।
শেষ প্রহরে ঘুম ভাঙ্গে ধ্রুবর। প্রচুর মন খারাপ, ও কষ্ট নিয়ে চিন্তায় বিভোর ছিল সে। হঠাৎ চোখে ঘুম এসে বাসা বেঁধেছে। অবাক হয়ে পাশ ফিরে দেখলো শায়ান এখনো রুমে আসেনি। অথচ, ৫:২০ বাজতে চললো। ধ্রুব উঠে বাইরে গেল৷ আড়াল থেকে দেখতে পেলো, শায়ান আঁধারীনির ঘুম থেকে বের হচ্ছে মাত্রই। আঁধারীনি হেসে হেসে বলছে,
“আজ ভীষণ এনজয় করেছি রাতটা। অবশ্যই শুধুমাত্র আপনার জন্য।”
ভেতরটা ছটফট করে উঠলো ধ্রুবর। এ কি দেখেছে সে?! এই দিনটাও তার দেখতে হলো? শায়ানকে আসতে দেখে ধ্রুব বিছানায় গিয়ে বসলো। শায়ান আসার পর বললো,
“এত্ত সকালে তুই এখনো সজাগ! নাকি সারা রাত ঘুমাসনি?”
ধ্রুব জবাব দিলো না৷ শুয়ে পড়লো। শায়ান বললো,
“চোখ এত লাল হয়ে আছে কেন ধ্রুব?”
ধ্রুব তখনও জবাব দিলো না। চোখ বন্ধ করে ভাবলো,
“কিছু একটা করতেই হবে। শায়ান একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে। এইবার বিষয়টা অনেক দূর গড়িয়ে যাচ্ছে। এখন কিছু না করতে পারলে পরে পস্তাতে হবে। আর আঁধার…তোকেতো আমি ঠিক দেখে নিব। তোকে কতো ভালো ভাবতাম আমি! মানে, ডক্টর ধ্রুব চৌধুরীর চুজ এত বা’জে! এইটাই প্রুভ করালি তাই না? ওয়েট ফর….”
সকালের সূর্য আকাশে দেখা দিয়েছে চমৎকারভাবে। আজকের সকালটা একদম ভিন্ন আধাঁরিনীর কাছে। চায়ের শহরের স্নিগ্ধ একটা সকালের শুরু। তখনি আঁধারীনির দরজায় কড়া নাড়া কেউ। আঁধারীনি দরজা খু’লে দেখে ধ্রুব। বেশ ব্যস্ত স্বরে বললো,
“শায়ান এসেছে?”
“নাতো, ধ্রুব ভাই। কেন? উনি রুমে নেই?”
“না, সেই কবে থেকে খুঁজছি। সব জায়গা খুঁজে ফেললাম। কোথাওইতো পাচ্ছি না। গেল কোথায় ওহ? এইখানের তেমন কিছুইতো চিনে না শায়ান। কোথায় গেল?”
আঁধারীনি বললো,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ৮
“চলুন, নিচে যাই।”
“তুই যা, আমি আসছি।”
আঁধারীনি যেতেই ধ্রুবের ফোনে কল আসলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,
“বাগে পেয়ে ফেলেছি শিকারকে।”