প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৫

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৫
মারশিয়া জাহান মেঘ

শপিং মলে এসেছে ১ ঘন্টার উপরে হয়ে গেল তাও তোহা আর আভার শপিং শেষ হচ্ছে না। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে তাদের পেছন পেছন তাশরীফেরও যেতে হচ্ছে। তাশরীফ বিরক্ত হয়ে বলল,
“তোরা কি আজ পুরো শপিং মলটাকেই বাড়ি নিয়ে যাবি?”
তোহা বলল,
“আরে ভাইয়া, আরেকটু।”
হঠাৎ তোহা চিৎকার দিয়ে আভাকে ডেকে বলল,
“আভাআআআ দেখ দেখ, এইটা ওই ছেলেটা না? যে তোকে বিয়ে করার কথা ছিল?”
আভা তাকালো সেদিকে। আসলেইতো এইটাইতো পাত্র ছিল। একি! পাত্রের একি বেহাল অবস্থা। হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ কেন!
তোহা বলল,

“চল… আজ এই ব্যাটাকে আমি দেখে নিব। চল…”
আভার কথার জবাবের অপেক্ষা না করেই তোহা চলে গেল ওই ছেলের কাছে। তাশরীফ থামানোর চেষ্টা করতেও পারলো না। আভা আর তাশরীফ পেছন পেছন গেল। তোহা ছেলেটার টিশার্টের কলার চে’পে বলল,
“কিরে, যেই মেয়ের সাথে পালিয়েছিস, সেই মেয়ে কি মে’রে তক্তা বানিয়ে দিয়েছে?”
ছেলেটা আচমকা হা’ম’লা’তে ভ’য় পেয়ে গেল। আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি পালায়নি, আমাকেতো পালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।”
আভা অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
“মানে… ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছেলেটা কিছু বলতে যাবে এমন সময় দৃষ্টি যায় তাশরীফের দিকে। মুহুর্তেই ছেলেটার মুখ থেমে যায়।
আভা বলল,
“কি হলো? চুপ করে আছেন কেন? বলুন, কেন করলেন এমনটা?”
“না না কিছু না।”
বেশ উ’ত্তে’জি’ত কন্ঠে কথাটি বলে সে দৌঁড়ে চলে গেল।
তোহা পেছন ছুটতে যাবে তাশরীফ তোহার হাত ধরে দাম্ভিক কন্ঠে বলল,
“তোহা, শপিং করতে এসেছিস, এইসব উ’ট’কো মানুষের পেছন ছুটতে আসিসনি।”
আভা তোহার দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,
” তোহা, বাদ দে এইসব চল।”
তোহা মনে মনে বলল,
“সম্পূর্ণ বিষয়টা আমাকেতো জানতেই হবে। ছেলেটা ভাইয়াকে দেখে এইভাবে পালালো কেন?”

“আভা, দেখ দেখ, তোকে এই কাঁচা হলুদ রংয়ের শাড়িটাতে বেশ মানাবে। নিয়ে নে।”
আভা মিররে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নিজেকে দেখল। হুট করেই নজর যায় পেছনে। এক ধ্যানে তাশরীফ তার দিকে তাকিয়ে আছে। আভা চোখ নিচু করে তোহার দিকে ছুটল। বলল,
“হুম, এইটা নিয়ে নে।”
“তোদের হলো তোহা?”
তাশরীফ বেশ বিরক্ত স্বরে কথাটি বলতেই আভা ফিসফিস করে বলল,
“তোহা, তোর ভাই এমন কেন? কখনোই আজ অবধি দেখলাম না, সুষ্ঠুভাবে শপিংমলে আসতে। সবসময় কি এমন তিতামুখো হয়ে থাকে নাকি?”

“এমন এক ভাব করছিস, যেন ভাইয়াকে ছোট বেলা থেকে তুই দেখে আসছিস না।”
“তখন কি জানতাম? ছোট বেলায় যেমন তিতামুখো থেকেছিল, বড় হয়েও এমন তিতুমুখো থাকবে।”
তাশরীফ আবার ডাকলো,
“তোহাআআআ…”
“এইতো ভাইয়া হয়ে গেছে। তুমি গিয়ে গাড়িতে বসো। আমরা আসছি।”
তাশরীফ হাতের ঘড়ির দিকে দৃষ্টি রাখলো। তারপর বলল,
“অনলি ফাইভ মিনিটস, ওকে?”
“ওকে ভাইয়া।”

তাশরীফ চলে গেল বাহিরে। গাড়িতে উঠে সে বসে আছে। দূর থেকে দেখলো তোহা আর আভা আসছে। আভাকে আজ এত বেশি সুন্দর লাগছে কেন? নাকি আজকাল আভাকে নিয়ে সে একটু বেশিই ভাবছে?
গাড়িতে উঠে বসল আভা আর তোহা। তাশরীফ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
“এই প্যারায়ই মেয়েদের সঙ্গে কখনো শপিংয়ে আসি না।”
আভা তোহাকে পেছন ফিরে বলল,

“তোহা… তা, আজকাল ডাক্তার সাহেবরাও বুঝি মেয়েদের নিয়ে শপিং টপিংয়ে আসতে প্যারা মনে করে? তার মানে ডাক্তারদেরকে কোনো মেয়ে শপিংয়ে আসার জন্য অফার করে।”
হেসে ফেলল তোহা। কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলল,
“না ভাই, আমার ভাইয়া এমন না। আমার ভাইয়াকে কেবল অপারেশনের জন্য অফার করে, শপিংয়ের জন্য না। কারণ আমার ভাইয়া যথেষ্ট কঠিন মানুষ। সে নিশ্চয়ই মানুষকে মুখের উপর না বলে দেওয়ার অভ্যাস আছে।”
আভা হেসে ফেলল তোহার কথায়।
তাশরীফ মনে মনে বলল,
“বুঝলাম না? এইটা কি আমার বোন নাকি শত্রু? আমাকে অপমান করল নাকি প্রশংসা করল বুঝলামই না।”

আভা, আর তোহাকে নামিয়ে তাশরীফ হসপিটালে গেছে। তাশরীফ হসপিটালে পৌঁছাতেই ডক্টর রাহা তাশরীফের কাছে গেল। অনেকটা ন্যাকাস্বরেই বলল,
“হেই ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী, আর ইউ বিজি? না মানে, আজ লেইট যে?”
তাশরীফ রাহার থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে বলল,
“আমার ওয়াইফ আর বোনকে নিয়ে একটু শপিংমলে গিয়েছিলাম।”
“ওয়াইফ!”

ডক্টর রাহা বেশ অবাক হয়ে উচ্চারণ করলেন শব্দটাকে।
“আপনি বিয়ে করেছেন? ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী!”
“জি মিস রাহা।”
তাশরীফের মুখের কথাটা ঠিক বিশ্বাস হলো না রাহার। সে আবারও জিগ্যেস করল,
“সরি….”
“জি, আমি বিয়ে করেছি রিসেন্টলি। বাট, ঘরোয়াভাবে। অনুষ্ঠান পরে হবে।”
“রিয়েলি!”
“ইয়েস মিস রাহা। এনি ডাউট?”

“ইয়াহ, ইয়াহ.. আমি আপনার ওয়াইফকে দেখব, তারপর বিলিভ করব।”
ডক্টর রাহা চলে গেল তার চেম্বারে। তাশরীফ একটা নি’শ্বা’স ফেলল। ডক্টর রাহাকে তার একদমই ভালো লাগে না। সে পারলে একদম শ’রী’রে’র উপর এসে ঝা’প’টে পড়ে।

সারা হসপিটাল ছড়ে গেছে যে তাশরীফ বিয়ে করেছে। একটু পর পর তাশরীফের চেম্বারে একজ একজন করে এসে বলে যায়,
“স্যার, আপনি বিয়ে করেছেন অথচ ইনভাইট পাইনি। এইটা কিন্তু খুব খা’রা’প হলো স্যার।”
কেউ কেউ এসে বলছে,
“স্যার, ভাবীর চাঁদ মুখটা কখন আমাদের দেখাবেন?”
তাশরীফ সংকোচে পড়ে গেল। মিনমিনিয়ে বলল,

“মিস রাহা একটু বেশিই অন্যের কথাকে ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসেন।”
তখনি তার চেম্বারে আসে ডক্টর ফাহিম। তিনি এসে বলল,
“বসতে পারি ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী।”
“হুম শিউর বসুন।”
“বিয়ের মিষ্টি তিতা তা আমি অনেক আগেই টেস্ট করেছি। আপনি টেস্ট করে কেমন ফিল করছেন?”
তাশরীফ গলায় কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে বলল,
“সরি মিস্টার ফাহিম…”
“মানে, বিয়ের পর আপনার কি মনে হচ্ছে, বিয়ে কেমন?”
“আপনিও ডক্টর ফাহিম?”
হাসলেন ডক্টর ফাহিম। হাসতে হাসতে বললেন,
“সিনিয়র ডক্টর বলে কি রসবান কথাও বলতে পারব না নাকি ডক্টর চৌধুরী।”

বাসায় ফিরে ওয়াশরুমে যায় তাশরীফ। হসপিটালে পেশেন্টের পেছন ছুটতে ছুটতে ঠিক যেন সে রানার হয়ে গেল। ওয়াশরুম থেকে গোসল করে বের হতেই আভা দৌঁড়ে তার বু’কে জড়িয়ে পড়ে। তাশরীফের লো’ম’শ বুকের সাথে লে’প্টে থাকা আভাও যেন ভে’জা বু’কে’র সাথে ভি’জে যাচ্ছে। তাশরীফকে শ’ক্ত করে জ’ড়ি’য়ে ধরে আছে আভা। তাশরীফ চমকে উঠল। তড়িঘড়ি করে বলল,
“ক্ কি হয়েছে?”
“তেলাপোকা, তাশরীফ ভাই। তেলাপোকা?”
“কোথায় তেলাপোকা দেখি…”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৪

তাশরীফ আভাকে দাঁড় করিয়ে খুঁজতে শুরু করল, না এইখানেতো তেলাপোকা নেই। তাশরীফ পেছনে তাকালো। চোখ আবদ্ধ করে আছে আভা। তাশরীফ আভার একদম কাছে গেল। কি জানি হলো, হঠাৎ আভার ঠোঁ/টে আলতো ছোঁয়া পেল সে তার ঠোঁ/টে। আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠল আভা আর তাশরীফ দুজনেই। কি হলো ব্যাপারটা বুঝতে এক মিনির সময় লাগলো তাদের। তাশরীফ পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল, তোহা ধা’ক্কা দিয়ে তাশরীফকে আভার দিকে নিয়েছিল। ফলস্বরূপ ঠোঁ/টের সাথে ঠোঁ/ট স্প’র্শ হয়ে গেছে।

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৬