প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৯
মারশিয়া জাহান মেঘ
“ধ্রুব ভাই…”
আঁধারীনি চোখ মেলে ধ্রুবকে ডাকতেই ধ্রুব চিন্তিত মুখটা উঁচু করে তাকালো। দ্রুত পায়ে বিছানায় গিসে বসলো সে। আঁধারীনির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“এখন কেমন লাগছে আঁধার?”
“ভালো। তোমাকে একটা কথা বলি?”
“হুম বল…”
“আপনার আমাকে পছন্দ নয় তাই না?”
“এইসব কি বলছিস আঁধার?”
শব্দ করে হাসলো আঁধার। তারপর এক ধ্যানে তাকালো ধ্রুবর দিকে। বললো,
“উন্মাদ আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনার মন পাথরের মতো। ব্যর্থই চেষ্টা করে গেলাম, আমার অনুভূতি বুঝাতে। ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনি ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী। ডক্টর ধ্রুব চৌধুরীর মন ঘায়েল করা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী, মানুষের রোগ নির্ণয় হয়তো করতে পারে। কিন্তু, প্রেমিকার চোখের ইশারা বুঝতে অসক্ষম। আপনি ডক্টর হিসেবে বেস্ট, ধ্রুব ভাই। তবে, প্রেমিক হিসেবে ভীষণ ব্যর্থ, অনুভূতিহীন।”
“আঁধারররর….”
“কষ্ট হচ্ছে ধ্রুব ভাই? কথাগুলো খুব কঠিন তাই না? এই কয়টা কঠিন বাক্য স’হ্য হলে না? এইবার ভাবুনতো, দিনের পর দিন ভালোবাসার অনুভূতি না বুঝাতে পেরে আমার কতোটা ক’ষ্ট স’হ্য করতে হয়েছিল।”
শায়ান খাবার হাতে নিয়ে রুমে আসে। ধ্রুবকে আঁধারীনিকে কাছে বসে থাকতে দেখে গম্বীর স্বরে বললো,
“তুই আঁধারের কাছে কি করছিস ধ্রুব? ওকে রেস্ট করতে দে।”
আঁধারীনি আচমকাই বললো,
“শায়ান ভাইয়া…”
“কি হয়েছে আঁধারীনি? কিছু বলবে?”
“আমাকে আপনি বিয়ে করবেন?”
ধ্রুব বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। মুহুর্তেই চিন্তিত মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। শায়ানের চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। মেঘ না চায়তেই জল পেয়ে গেল যেন সে। শায়ান এগিয়ে এলো আঁধারীনির কাছে। তারপর বললো,
“তুমিই বলছোতো আঁধার? মজা করছ নাতো?”
“আপনার আমার মুখ দেখে কোন দিক দিয়ে মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?”
“করব, আঁধারীনি। তোমায় আমি বিয়ে করব। অনেক আগে থেকেই তোমায় আমি পছন্দ করতাম।”
ধ্রুব দাঁড়ালো না এক মুহুর্তও সেইখানে। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে। আর একটু থাকলে দূ’র্ব’ল হয়ে পড়তো। তার দূ’র্ব’ল’তা আর যাইহোক শায়ানের সামনে সে প্রকাশ করতে চায় না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আমি কিয়ারাকে বিয়ে করতে চাই মা।”
ফোনে এই কথা বলতে দেখে আঁধারীনি থেমে গেল। সে বেরিয়ে ধ্রুবর কাছে এসেছিল। কিন্তু এই কথা শুনতে পেয়ে আর ধ্রুবর কাছে যায়নি সে। দু হাত গুঁজে দাঁড়ালো ধ্রুবর পেছনে। ফোন কে’টে দিতেই ধ্রুবকে বললো,
“অবশেষে কিয়ারা? কেন? আপনার শখের স্মিতা কোথায়?”
“লিসেন আঁধার, আমার বিষয়ে তুই কোনো ইন্টারফেয়ার করবি না। তোর হবু বরের কাছে যাহ।”
“আমার ইচ্ছে, আমি কোথায় যাব বা না যাব। আপনাকে বলে দিতে হবে না ধ্রুব ভাই।”
“শোন আঁধার আজকের পর থেকে আর আসব না তোর কাছে। রাখব না চোখে চোখ। ওই তারা যেমন অকারণে চাঁদের পাশে থাকে, আমিও তুই নামক চাঁদের পাশে স্বার্থহীনভাবে মিটিমিটি করে জ্বলব।”
“এত ভালোবাসার পরও যে আমায় বুঝার চেষ্টা মাত্র করেনি, সে আর লোক দেখিয়ে পাশে থাকার কি প্রয়োজন ধ্রুব ভাই।”
“সিরিয়াসলি আঁধার! তুই আমাকে বুঝাতে চেয়েছিলি? আচ্ছা বলতো, কখনো চোখে চোখ রেখে বুঝাতে চেয়েছিস? মনের অনুভূতি।”
“সত্যিই আপনার মন কিছু টের পায়নি?”
চুপসে গেল ধ্রুব। এইখানে এখন দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। আঁধারীনির পাশ এড়িয়ে চলে গেল সে। পেছন থেকে আঁধারীনি তার ধ্রুব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যিই কি ধ্রুব তার চোখে আর চোখ রাখবে না?
ধ্রুব রুমে এসে ট্রলি গুছাতে শুরু করলো। আঁধারীনির ইচ্ছেকে সে মেনে নিয়েছে। যে মন থেকেই তাকে চায়লো না, তাকে নিয়ে সারাজীবন সে থাকবে কি করে? সে ভাবছে তার ফুপ্পি মায়ের কথা। তার ফুপ্পি মা ভীষণ ভাবে চেয়েছিল, আঁধারীনির জীবনসঙ্গী ধ্রুব হোক।
“কাপড়চোপড় গুছাচ্ছেন কেন?”
আঁধারীনির কন্ঠ শুনে ধ্রুব তার দিকে না তাকিয়েই বললো,
“গুছিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন আছে তাই।”
“সোজাসাপটা উত্তর দিন ধ্রুব ভাই।”
“বাসায় ব্যাক করছি।”
“আজতো বাসায় ব্যাক করার কথা ছিল না।”
“তুইওতো, আমার না হওয়ার কথা ছিল না আঁধার।”
“এই ধ্রুব আঁধারীনি কোথায়? দেখেছিস ওকে? আর তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
“বাসায় যাচ্ছি।”
“আমাদের ছাড়া?”
“আমাদের বলতে? আমার সাথে আঁধারীনি এসেছিল। আর আঁধারীনিকে তুই-ই নিয়ে যাবি। আমি নয়।”
“কিন্তু আঁধারীনি কোথায়?”
“কেন? রুমে নেই?”
“রুমে থাকলে তোকে বলতাম?”
ধ্রুব ট্রলি ব্যাগের চেইন লা’গি’য়ে বসলো বিছানায়। তারপর বললো,
“তুই গিয়ে দেখ কোথায় আছে।”
“কোথাও নেই ধ্রুব, আ’ম সিরিয়াস।”
“সো হুয়াট?”
“ধ্রুব আঁধারীনি নেইইই ভাই।”
ধ্রুব এইবার সিরিয়াসভাবে নিলো। আঁধারীনিতো এইখানের কিছুই তাকে ছাড়া চিনে না। গেল কোথায়?
“রিসোর্টের নিচে দেখেছিস?”
“হ্যাঁ।”
“একটু আগেইতো আমার সাথে দেখা হলো। হঠাৎ কোথায় গেল? চলতো গিয়ে দেখি…”
ধ্রুব বেরিয়ে গেল রুম থেকে। শায়ানও চিন্তিত হয়ে ধ্রুবর পেছন পেছন গেল। ধ্রুব সব জায়গায় দেখে আঁধারীনিকে না পেয়ে বললো,
“আঁধারীনির ফোনে কল দিয়েছিস?”
“সুইচ অফ।”
“সুইচ অফ! ওর ফোনতো অফ থাকে না সহজে।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৮
তখনি ধ্রুব কিছু একটা ভেবে ফোনটা হাতে নেয়। পরিচিত সেই নাম্বারে কল দিতেই রিসিভ করলো কেউ একজন। তাচ্ছিল্য স্বরে ওপাশ থেকে স্মিতা বললো,
“আমি জানতাম ধ্রুব, তুমি আমাকে কল দিবেই দিবে। আর যাইহোক, তোমার জান আমার কাছে কিনা….!”