প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ শেষ পর্ব 

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ শেষ পর্ব 
মারশিয়া জাহান মেঘ

“শায়ান ভাইয়ার ফ্যামিলিতে কি কোনো প্রবলেম আছে ধ্রুব ভাই? শায়ান ভাইয়া ফ্যামিলির কথা শুনতেই এমন চুপসে গেল কেন? উনার চোখে আমি চকচক কিছু দেখতে পেয়েছি।”
ধ্রুব ক্ষীণ শ্বা’স ফেলল। বললো,
“পরে একদিন সব তোকে বলব। এখন ওসব তুলতে চাই না। আমিও কি যে করলাম, মাথা গ’র’মে ওই কথাটা তখন ভুলবশত তুলে ফেললাম।”
ধ্রুবর মন খারাপ বুঝে আঁধারীনি ধ্রুবর হাতটা শ’ক্ত করে ধরলো। তারপর বললো,
“আমরা বিয়ে কখন করব ধ্রুব ভাই?”
“খুব শীঘ্রই আঁধার। তার আগে শায়ানকে বুঝতে হবে এইটা যে, একা ভালোবাসলেই হয় না। অপরপক্ষকেও ভালোবাসতে হয়।”

“শায়ান ভাইয়া এইটা কখনো মানবে?”
“মানতে হবে।”
হঠাৎ পেছনে কারো পায়ের শব্দে পেছনে তাকায় ওরা দুজন। শায়ানকে দেখতে পেলো। শায়ান এক চিলতে হাসি ঠোঁ/টের কোণে ঝু’লি’য়ে বললো,
“বিয়ের ডেইট ফিক্সড কর। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোদের বিয়ে দিব।”
অবাক চোখে শায়ানের দিকে তাকায় ধ্রুব আর আঁধারীনি। ধ্রুব সন্দিহান দৃষ্টিতে বললো,
“তুই!”
“হ্যাঁ, আমি।”
“শায়ান…”
“তুই ভাবছিস হঠাৎ আমার কি হলো?”
“ভাবার বিষয় নয়?”
“আমি সবটা মেনে নিয়েছি। তাহলে তুই সবটা বুঝে নিতে পারছিস না কেন?”
“১০ মিনিটে সিদ্ধান্ত বদল?”
“ওই যে, জো’র করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শায়ান পেছনের সিটে বসে আছে। সামনের ড্রাইভিং সিটে ধ্রুব আর তার পাশে আঁধারীনি। দুজনের মুখে ঝলমলে হাসি। পৃথিবীর সমস্ত সুখ বোধহয় এখন তাদের মাঝেই। শায়ান ছলছল চোখে দেখছে দুজনকে। তখনি শায়ানের ফোনে কল আসে। শায়ান ফোনটা রিসিভ করতেই বললো,
“আমি সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। ওখানে ২ দিন থেকেই ব্যাক করব।”
ওপাশ থেকে একজন বললো,
“স্যার, আপনাকে এইখানে প্রয়োজন। আপনি মা ব্যাক করলে আরেকটা ডিল ক্যান্সেল করতে হবে।”
শায়ান আঁধারীনি আর ধ্রুবর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে জবাব দিলো,
“একটা অসম্পূর্ণ কাজ, সম্পূর্ণ করা বাকি হায়দার। ডেইট পিছিয়ে দাও।”
“ওকে স্যার।”
ধ্রুব পেছনে তাকিয়ে বললো,
“কে কল করেছিল শায়ান?”

“আমার এসিস্ট্যান্ট কল দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ব্যাক করার কথা বলেছে।”
“তা কি করে হয়? তুইতো বাসাতেই থাকলি না।”
“২ দিন আছিতো। এই দুইদিনে তোদের বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে।”
“২দিনে!”
আঁধারীনির অবাক হওয়া দেখে শায়ান হেসে ফেললো। বললো,
“এক সেকেন্ডে মানুষ হারিয়ে যায়। ২ দিনে বিয়ে করা যায় না? অনেকটা লম্বা সময়তো ২ দিন আঁধারীনি।”
আঁধারীনি চুপসে গেল। ধ্রুবের মনের সন্দেহ এখনো পুরোপুরি কা’ট’ছে’ না। হুট করেই শায়ানের এই পরিবর্তন ভাবাচ্ছে ধ্রুবকে।
“ধ্রুব… কি ভাবছিস?”
“কই, কিছু নাতো।”
শায়ান হেসে বললো,

“আজ গিয়েই পুরো বাড়িটা সাজিয়ে ফেলব। আন্টি আঙ্কেল আশা করছি সবটাই সহজভাবে দেখবে।”
আঁধারীনি লাজুক হেসে বললো,
“ওরা অনেক আগেই আমাদের বিয়ের কথা ভেবে রেখেছিল। দুজনের মত মেলার সময়টুকু যা লেগেছে আর কি…”
ধ্রুব আঁধারীনির দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাগ্যিস সময়টা নিয়েছিলাম জীবনে। নয়তো, অনেক আগেই ঘাড়ে পেত্নী ভ’র করে, ঘাড় মঁ’চ’কে দিতো।”
আঁধারীনি কোমড়ে দু হাত রেখে বললো,
“কি! আমি পেত্নী?”
“আমি কি কারো নাম নিয়েছি?”
“আমাকেইতো বলেছেন। আমি বুঝি না ভেবেছেন?”
শায়ান হাসতে হাসতে বললো,
“এই তোরা থাম, থাম। ঝগড়াঝাঁটি করিস না।”

শায়ানকে দেখে শ’ক্ত করে বু’কে জড়িয়ে ধরলেন মিসেস আভা চৌধুরী। শায়ানকে সেই ছোট্ট বেলা তিনি দেখেছিলেন। তারপরতো এই দেশে সে ছিলোই না। তাশরীফ চৌধুরী ভীষণ খুশি। ধ্রুব ফাইনালি বিয়ে করছে। তাও, আঁধারীনিকে। মিসেস আভা চৌধুরী বললেন,
“তোহা আর ফারাবী আসবে না?”
শায়ান বললো,
“এত জলদিতো আসা সম্ভব নয় আন্টি। তবে একটা জিনিস পসিবল।”
“কি শায়ান?”
“আমিতো থাকতে পারব না এইখানে। ২ দিন আছি। এরমধ্যে একবার বিয়েতো হবেই হবে। আবার যখন তোহা আন্টি আর ফারাবী আঙ্গেল আসবে, তখন আরেকবার বিয়ে দিয়ে দিবেন ওদেরকে।”
“২ বার বিয়ে!”
শায়ান শব্দ করে হেসে বললো,

“বিয়ে ২ বার। কিন্তু, জামাই-বউতো ওরাই তাই না?”
শব্দ করে হেসে ফেললো উপস্থিত সবাই। আঁধারীনি ল’জ্জা’য় ওই স্থান ত্যাগ করে দ্রুত পায়ে উপর তলায় চলে গেল। আভা চৌধুরী হাসিমুখেই বললেন,
“দেখো, দেখো মেয়ে কেমন ল’জ্জা পেয়েছে।”
“মা, আমিও যাই, ফ্রেশ হব।”
“আচ্ছা, যাহ.. যাহ। ফ্রেশ হয়ে জলদি খেতে আয়।”
ধ্রুবও চলে গেল। শায়ান সোফায় বসে পা থেকে মোজা জোড়া খু’ল’তে খু’ল’তে বললো,
“আন্টি, ক্ষিধে পেয়েছে। খেতে দিন।”
“তুই গোসলটা সেরে আয় বাবা, আমি খাবার দিচ্ছি।”
“আচ্ছা।”

“ইশ ধ্রুব ভাই, কি করছেন?”
ধ্রুব কো’ম’ড়ে ঝা’প’টে ধরতেই আঁধারীনি চোখ বন্ধ করে উপরোক্ত কথাটি বলে উঠল। ধ্রুব ফিসফিস করে বললো,
“ছাড়ব না। কি করবি?”
“আমার আবার কি করার আছে? ছাড়ুন। বিয়ের আগে এইসব মোটেও ঠিক নয়।”
“বিয়ের আগে কাউকে পাগল বানানো ঠিক?”
“আমি আবার কাকে পাগল বানালাম?”
“কেন? আমাকে।”
দাঁত কেলিয়ে হেসে ফেললো আঁধারীনি। ধ্রুব বিছানায় বসে গা’লে হাত রেখে মুগ্ধ হয়ে আঁধারীনির হাসি দেখছে। আঁধারীনি হাসি থামিয়ে বললো,

“কি দেখছেন?”
“তোর হাসি আঁধার।”
“আমি খুব কুৎসিতভাবে হাসি?”
“ভুবন ভুলানো হাসি কুৎসিত হয় নাকিরে আঁধার?”
“বেশি হয়ে গেল না?”
“বেশি হয়নিতো এখনও, হবে। বিয়েটা হতে দে শুধু। দেখবি, ফুটবল টিম বানিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করব।”
“কি!”
“জি…”
“আমি যাই এখন। খামাখা সময় ন’ষ্ট করলাম তোর কাছে থেকে।”
“আমি আসতে বলেছি?”
“ঠিকইতো মনে মনে চাইছিলি, আমি যেন আসি।”
কথাটা বলেই ধ্রুব চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আঁধারীনি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে অবাক স্বরে বললো,
“কি!”

সারা বাড়ি সুন্দরভাবে সাজানো হচ্ছে। শায়ান সবাইকে এইটা ওইটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। মিসেস আভা চৌধুরী তোহা রাজকে ভিডিও কলে সব দেখাচ্ছে। ধ্রুব শায়ানের কাছে এসে বললো,
“সবকিছু এত তাড়াহুড়োই না করলেই হচ্ছিলো না?”
“তুই সবকিছুতে পাকামো করিস ধ্রুব। সরতো, সর… কাজ করতে দে।”
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বললো,
“হ্যাঁ, তোদের যা করার কর। এখনতো আমাকে কেউ পাত্তাই দিবি না।”
শায়ান দূর থেকে বললো,
“এখন আমাদের পাত্তা কিসের প্রয়োজন? তোর আঁধার আছে না? ওর কাছে যাহ। ওই তোকে আসল পাত্তাটা দিবে।”

আঁধারীনিকে হলুদ শাড়িতে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না ধ্রুব। ঠিক যেন হলুদ পরী চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ধ্রুবকে আঁধারীনির পাশে বসানো হলো। ধ্রুব মিনমিনিয়ে নিচু স্বরে বললো,
“চোখ অন্ধ করে ফেলবিতো।”
“কি করলাম আমি?”
“এত সুন্দরভাবে সেজেছিস কেন? চোখ দুটোতে এখন কেবল তুই আর তুই।”
“আমি ছাড়া আর কেউ থাকলে চোখ অন্ধ হয়ে যাক।”
“বিয়ে হতে না হতেই অভিশাপ?”
“পবিত্র দোআ এইটা, অভিশাপ না।”

বিয়ের সাজে আঁধারীনিকে দেখে থম মে’রে আছে ধ্রুব। কি সুন্দর লাগছে আঁধারীনিকে! আঁধারীনি ধ্রুবর চোখের দিকে তাকাতেই ধ্রুব চোখ টি’প মারলো। সাথে সাথে আঁধারীনি দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো ল’জ্জা’য়। কাজী বললো,
“দেনমোহর কত দিবেন?”
ধ্রুব বললো,
“লিখুন, ৩০ লাখ।”
শায়ান ধ্রুবর পাশেই বসা ছিল। বললো,
“এই, কিসের ৩০ লাখ?”
“কেন? কম হয়ে গেল? আচ্ছা ৫০ লাখ।”
“এত বেশি না, কম ধর।”
“আমি কি ওকে ছাড়ব কখনো? তাহলে কিসের চিন্তা?”
“পরিশোধ করতে হয় বউকে স্প’র্শ করার আগে।”
ধ্রুব শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“১ টাকা লিখুন কাজী সাহেব। আমার বড্ড ইচ্ছে ছিল ছোট থেকে। বিয়ে করলে, ১ টাকা কাবিন দিয়ে বউ ঘরে নিয়ে আসব।”
শায়ান খুব কষ্টে হাসি চে’পে রাখলো। ধ্রুবর কানের কাছে গিয়ে বললো,
“কিপ্টামি তুইও করিস ধ্রুব?”
“শায়ান….”

পরিচিত কন্ঠে পেছন ফিরে তাকায় শায়ান। অবাক হয়ে ওই মানুষটাকে দেখে বললো,
“সুনয়না?!”
ধ্রুব আর আঁধারীনি বিছানায় পাশাপাশি বসে আছে। হঠাৎ অপরিচিত একটা মেয়েকে দেখে শায়ানের দিকে তাকালো। শায়ানের কাছে এসে সুনয়না শায়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কি করতাম বলো? তোমাকে অনেক বেশি মিস করছিলাম। গতকাল যখন কল দিয়ে আমাকে তুমি বিয়ের কথা বললে, আর থাকতে পারলাম না। চলেই এলাম তোমার কাছে।”
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো,
“বিয়ে?”
শায়ান বললো,
“তোরাতো তোদের মতো সুখে থাকবি, আমিও আমার জীবনটাকে গুছিয়ে নিই। নিঃসঙ্গ হয়ে বেঁচেতো আর থাকা যায় না। ওহ সুনয়না, আমার ফ্রিয়ন্সে।”
শায়ান সুনয়নাকে কাছে টে’নে কথাটি বললো। ধ্রুব আঁধারীনির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
“জোড়ায়, জোড়ায় শালিক পাখি।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ২১

গুমটা তুলতেই আঁধারীনির চেহারা দেখে ধ্রুব বু’কে হাত রাখে। পড়ে যাওয়ার ভঙ্গিমা করে বললো,
“হায়েএএ, এত সুন্দর বউ তুই পেলি কি করে ধ্রুব?”
আঁধারীনি ল’জ্জা’য় মিইয়ে গেল। তারপর বললো,
“হয়েছেতো। এত প্রশংসা করতে হবে না।”
“বউয়ের প্রশংসা করব না?”
ধ্রুব বু’কে টে’নে নেয় আঁধারীনিকে। শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আঁধার, আজ রাতে পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোকে দিব আমি। আমার হওয়ার সুবাদে এইটাই তোর আজ রাতের শ্রেষ্ঠ উপহার।”
আঁধার ধরা কন্ঠে বললো,
“ধ্রুব ভাই…”
ধ্রুব ধমকে উঠে বললো,
“কি ধ্রুব ভাই, ধ্রুব ভাই করছিস আঁধার? জামাই ডাক, জামাই…”
আঁধার চুপসে গেল মুহুর্তেই। মুডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে ধ্রুব। মলিন মুখে বললো,
“বাসর রাতেও মানুষ এমনভাবে ধমকে কথা বলে? বাসর রাতে ধমকে উঠা প্রথম স্বামী শুধু আপনিই ধ্রুব ভা…”
“কি?”
“না না, ভাই না। জামাই…”
ধ্রুব নেশালো কন্ঠে বললো,
“কাছে আয় আঁধার। জীবনের সুন্দর দিনটাতে, সুন্দর কিছু মুহুর্ত তোকে দিতে চাই আমি।”
আঁধারীনি বিছানায় মাথা রাখতেই, ধ্রুব ঠোঁ/টে ঠোঁ/ট মিশিয়ে দেয় আঁধারীনিট।
(বাকিটা কল্পনা করে নিন, ওদেরকে এখন রোমান্স করতে দিন আপনারা😒)

সমাপ্ত