প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৬

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৬
মারশিয়া জাহান মেঘ

বাসায় ফিরে ওয়াশরুমে যায় তাশরীফ। হসপিটালে পেশেন্টের পেছন ছুটতে ছুটতে ঠিক যেন সে রানার হয়ে গেল। ওয়াশরুম থেকে গোসল করে বের হতেই আভা দৌঁড়ে তার বু’কে জড়িয়ে পড়ে। তাশরীফের লো’ম’শ বুকের সাথে লে’প্টে থাকা আভাও যেন ভে’জা বু’কে’র সাথে ভি’জে যাচ্ছে। তাশরীফকে শ’ক্ত করে জ’ড়ি’য়ে ধরে আছে আভা। তাশরীফ চমকে উঠল। তড়িঘড়ি করে বলল,
“ক্ কি হয়েছে?”
“তেলাপোকা, তাশরীফ ভাই। তেলাপোকা?”
“কোথায় তেলাপোকা দেখি…”

তাশরীফ আভাকে দাঁড় করিয়ে খুঁজতে শুরু করল, না এইখানেতো তেলাপোকা নেই। তাশরীফ পেছনে তাকালো। চোখ আবদ্ধ করে আছে আভা। তাশরীফ আভার একদম কাছে গেল। কি জানি হলো, হঠাৎ আভার ঠোঁ/টে আলতো ছোঁয়া পেল সে তার ঠোঁ/টে। আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠল আভা আর তাশরীফ দুজনেই। কি হলো ব্যাপারটা বুঝতে এক মিনির সময় লাগলো তাদের। তাশরীফ পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল, তোহা ধা’ক্কা দিয়ে তাশরীফকে আভার দিকে নিয়েছিল। ফলস্বরূপ ঠোঁ/টের সাথে ঠোঁ/ট স্প’র্শ হয়ে গেছে।
আচমকা কি থেকে কি হয়ে গেল তারা বুঝতে পেরে একে অপরের দূরে সরে আসলো। তোহা চোখ সাথে সাথে বন্ধ করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ইশশ, ভুল সময়ে এন্ট্রি নিয়ে ফেললাম।”
কথাটি বলেই দৌঁড়ে এই রুম ত্যাগ করল তোহা। আভা আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে আসলে….”
“চোখ কি মাথায় নিয়ে ঘুরিস? তেলাপোকা কই এইখানে?”
“দেখেছিলামতো।”
“অন্ধ চোখে দেখবিই বা কি?”
“ডাক্তারের বউ অন্ধ, এইটা কেউ মেনে নিবে? আপনি মেনে নিলেও বিষয়টা আমি মেনে নিতে পারলাম না ধন্যবাদ।”
ছোট মুখে ইয়া বড় একটা কথা বলে নিজের মুখ নিজেই চে’পে ধরল আভা। তাশরীফের সামনে কথাটা বলা বোধহয় তার উচিত হয়নি। চোখ বড় বড় করে বলল,
“না না, আমি এটা বলতে চাইনি। আসলে….”

তাশরীফ এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে থাকলো আভার দিকে। আভা ভীতু হয়ে পেছুচ্ছে। তাশরীফ এক পা এগিলো, আভাও এক পা পিচাচ্ছে।
এক সময় আভার পি’ঠ ওয়ারড্রবে ঠে’কে গেল।
আভা চোখ বন্ধ করে আছে। শ্বাস যেন বাতাসের গতিতে নামছে, উঠছে তার।
তখনি অনুভব করল, তাশরীফ ওয়ারড্রবের উপর থেকে টিশার্ট নিলো হাতে, সরে এলো আভার কাছ থেকে। আভা টিপটিপ করে চোখ খু’ল’ল। দেখলো তাশরীফ ওয়াশরুমের দিকে আবারও গেল। নিমিষেই মুখখানি মলিন হয়ে এলো আভার। নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। তারইতো দো’ষ। সে বোধ হয় একটু বেশিই চেয়ে ফেলেছিল।

“কিরে, আমার ভাইটাকে আঁচলে বাঁধাই করে ফেললি এত সহজেই?”
তোহার কথা শুনে আভা মুখ পানসে করে ফেলল। মুখ চোখ শক্ত করে বলল,
“তোর ভাই কি নরম মনের মানুষ? যে সহজেই আমার হয়ে যাবে। বিয়েটাতো ওনি বাধ্য করেই করেছে।”
আভার কথার ধরণে অবাক হলো তোহা। সে কিচেন থেকে সোফায় গেল আভার কাছে। দুই গা’লে হাত রেখে বলল,
“কি হয়েছে আভা?”
“কিছু না।”
“বল না, কি হয়েছে?”
“কিছু না বললামতো।”

কথাটি বলেই কেঁদে ফেলল আভা। সে যেন কান্নাকে আ’ট’কে’ই রাখতে পারছিল না। তাইতো তোহা কিছু জানতে চাইতে না চাইতেই চোখে পা’নি চলে এসেছে। আভা অবাক হলো ভীষণ। সে বুঝেই পাচ্ছে না কিছু। উঠে দাঁড়ালো সে। চিৎকার করে ভাইকে ডাকলো সে।
“ভাইয়া… ভাইয়াআআআ…”
উপরতলা থেকে সাড়া দিলো তাশরীফ। বলল,
“কি হয়েছে? ডাকছিস কেন?”
“নিচে নেমে এসো।”
“কেন?”
“তুমি কি আসবে ভাইয়া??”

বোনের কন্ঠে বলা কথাটি স্বাভাবিক ভাবে নিলো না সে। এপ্রোন পড়তে পড়তে নামলো সে। আভার দিকে এক পলক তাকালো। নাক লাল চোখ ফো’লা হয়ে আছে কেন! সে মনের কথার জবাব পেলো না।
“আভাকে কি বলেছ তুমি?”
“কোথায় কি বলেছি?”
আভা থামানোর চেষ্টা করলো তোহাকে সে থামতে চাইলো না। আভাকে ধমক সুরে বলল,
“তুই চুপ থাক আভা, কত আর চুপসে থাকবি?”
ভাইয়ের দিকে পুনরায় তাকালো সে। আবারও বলতে শুরু করল,

“বিয়েটা বাধ্য হয়ে করেছ বলে বউয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত কেন হবে আভা? কি অপরাধ তার? ওহ কি কোনো পা’প করেছে তোমাকে বিয়ে করে? নাকি আমি পা’প করেছি তোমাকে আভাকে বিয়ে করতে বলার জন্য। আসলেই, ভুল আমিই করেছি। আমি যদি তোমাকে না বলতাম, আজ আভা এই বাড়িতে বধূরুপে থাকতোই না।”
তাশরীফ বিস্ময় ভ’রা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইলো বোনের দিকে। আজ অবধি গলা উঁচু করে কখনো কথা বলেনি তোহা তার সাথে। কখনো চোখে চোখ রেখে তাকায়নি অবধি। আজ সেই তোহাই তার সাথে এমন বিহেভ করছে! তাশরীফ প্যান্টের দুই পকেটে দ হাত রেখে, হাত কুনুই ভেঙ্গে ভাঁজ করে রেখে বোনের কথা চুপসে শুনলো। সীমা অতিক্রম করছে বলে সে গম্ভীর কন্ঠে তোহাকে শুধালো,

“তোহা, তুমি কিন্তু এইবার একটু বেশিই কথা বলছ।”
ব্যাস, তাশরীফের এক কথাতে দমে গেল তোহা। আভার দিকে তাকালো সে। মাথা নিচু করলো দুজন। তাশরীফ আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি কাউকে বলিনি, যে আমি তাকে স্ত্রীর অধিকার দিব না। আমি শুধু একটু সময় নিচ্ছি। বিয়ে সবার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা সিদ্ধান্ত। তা কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়াই আমি করে ফেলেছি। সময়তো একটু লাগবেই।”
কথাগুলো বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল তাশরীফ। তোহা চোখ বড় বড় করে চিৎকার করে আভাকে বলল,
“এই আভা, আভাআআআ আমি যা শুনেছি, তুইও কি তাই শুনেছিস?”
আভার কানে এখনো তাশরীফের বলা একটু আগের কথাগুলো বাজছে। তাশরীফ তাকে এইগুলো বলল! সেতো নিজের কানকেও বিশ্বাস করছে না এখন।

তোহা দরজা খু’ল’তেই মু’খে এক বালতি পা’নি ঢে’লে দিলো। কিন্তু ভুল মানুষকে দেওয়াতে তার চোখ মুখে ভীতুতা সুস্পষ্ট। একটু আগেই তোহা আভাকে গালে কাজলের কালি লাগিয়ে দিয়েছে। তোহা আর আভা ছিল বাগানে। আভার দৌঁড়ানিতে তোহা ড্রইংরুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজতে শুরু করায় সে ভাবে এইটা আভা। তাই মাথায় আনে দুষ্টু আইডিয়া। এক বালতি পানি নেয় আভার মুখে ঢালার জন্য। কিন্তু একি! এতো আভা নয়, এইটাতো একটা ছেলে! ছেলেটার পেছনে এসে দাঁড়ায় আভা। সে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে তোহার দিকে। একবার তাকায় তোহার দিকে, আরেকবার তাকায় ছেলেটার দিকে।
আভা বলল,

“এই তোহা, ওনি কে? আর পানি ঢে’লে’ছিস কেন?”
তোহা আমতা আমতা করে বলল,
“আরে, ইয়ে মানে আমিতো ভেবেছি তুই এসেছিস, তাই…”
আভা ফিক করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বলল,
“ইশ, ভুল মানুষের উপর দিয়ে ফেললি তাইতো?”
ওরা ওদের মত কথা বলেই যাচ্ছে, সামনে যে কেউ একজন আছে তারা যেন পাত্তাই দিচ্ছে না। আভা হাসি থামিয়ে বলল,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৫

“আপনিতো একদম ভি’জে গেছেন? আপনি কে? এইখানে কেন?”
হাত দিয়ে মুখের পা’নি কোনোরকমে মু’ছে ছেলেটি বলল,
“আমি ফারাবী, তাশরীফ এর বেস্ট ফ্রেন্ড।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৭