প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৯

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৯
মারশিয়া জাহান মেঘ

“আপনি আপনার বন্ধুকে বলেছেন আমি ভালো রান্না পারি না তাই না?”
তাশরীফ ল্যাপটপে হসপিটালের কিছু কাজ করছিল। আভার কথা শুনে হাত থেকে ফাইল পড়ে গেছে তার। তাশরীফ ফিরে তাকালো আভার দিকে। আমতা আমতা করে বলল,
“কখন? কবে? তুই কি স্বপ্ন দেখিস? আমি এসব ওসব বলব। তুই কি ভেবেছিস? আমি বলে দিয়েছি ওকে? ওইদিন যে এত মরিচের গুঁড়ো দিয়ে, তরকারি রান্না করেছিস?”
তাশরীফ নিজের মুখ নিজেই চে/পে ধরে। তাড়াহুড়োই, নিজের কথা দিয়ে, নিজেই সে ধরা খেলো! আভা কো’ম’ড়ে দু হাত গুঁজে, রাগী লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাশরীফের সামনে। বলল,
“দেখলেনতো? সত্যি কথা কিভাবে মু’খ দিয়ে বের হয়ে গেল।”

ফারাবীর অবস্থা সূচনীয়। সে টেবিলে সবার সামনে খে’য়েতো নিলো, কিন্তু রুমে এসে নড়তেই পারছে না। পে’টে প্রচুর পরিমাণে পেইন। তাশরীফ তাকে বলেছিল, ওয়াশরুমে যেতে হবে। কিন্তু বিপরীত ঘটেছে। সে ওয়াশরুমে আশা যাওয়া করছে না। সে, বিছানায় পড়ে আছে। তখনি কারো খিলখিল শব্দের হাসি শুনে পে’টে হাত রেখে দরজার সামনে তাকালো ফারাবী৷ তোহাকে দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাকই হলো। ফারাবী কোনোরকমে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এই মেয়ে এইভাবে হাসছ কেন?”
“কেমন ছিল? আজকের মজার রান্নাটা।”
“এত মজা ছিল, যে আমি এখন উঠতে পারছি না।”
ফারাবীর কথাটা শুনে, তোহা দুলতে দুলতে নিজের হা’তের ন’খে’র দিকে তাকাতে তাকাতে বলল,
“অবশ্য খাবারের কিইবা দোষ? খাবার আজ বেশ দারুণই ছিল খেতে। আপনার খাবারটাই শুধু একটু অন্য রকম টেস্ট ছিল। যদিও ওই টেস্টটা আমিই বাড়িয়েছি।”
ফারাবী কথাটাকে তেমনভাবে নিলো না। মুহুর্তেই অবাক হয়ে তাকিয়ে তোহাকে বলল,
“তার মানে….!”
তোহাকে পায় কে? মুহুর্তেই সে সেইখান থেকে পা’লি’য়ে আসে।
“মিস তোহা, তুমি আমাকে চিনো না, এর শা’স্তি তোমাকেও আমি দিব। একবার শুধু, ঠিক হতে দাও.. আ/হ/হ…”

গা’ল ফুলিয়ে রেখেছে আভা। তাশরীফ সোফায় বসে আঁড়চোখে বার বার দেখছে আভাকে। আভা, বইয়ের পাতা বেশ রাগ নিয়েই যে উল্টাচ্ছে, তা বেশ বুঝতে পারছে সে। শুধু উল্টাচ্ছেই, পড়ছে আর না। পড়বে কেমন করে? সে রে/গে আছে তাশরীফের উপর। কিন্তু, সেই রা’গ দেখানোর সা’হ’সতো নেই তার। তাশরীফ আভার কার্যকলাপ বেশ পর্যবেক্ষণ অনুসারে দেখে গ’লা কাশি দিয়ে ঝাড়ল। আভা গুরুত্ব দিলো না দেখে, আরেকটু উচ্চ স্বরে গ’লা ঝেড়ে বলল,

“বই এত না উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে, পড় না…”
আভা তাকালো না তাশরীফের দিকে। তার দৃষ্টি, বইয়ে। কান তাশরীফের দিকে থাকলেও, গুরুত্ব দিতে চাইলো না সে। তাশরীফ ল্যাপ্টপের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,
“এত রাগ দেখাচ্ছে কাকে বুঝি না! ম্যাডামের দেখি, তে’জ্বের শে’ষ নেই।”
আভা আর বেশিক্ষণ পড়ার ভান ধরে থাকতে পারলো না। ভীষণ বিরক্ত অনুভব করছে সে। বই বেশ উচ্চ আ’ও’য়া’জে টেবিলে ফে’লে বিছানায় আসে সে। এত সাউন্ড হয়েছে যে তাশরীফ ওদিকে তাকাতে বাধ্য হলো। ল্যাপ্টপটা সোফায় রেখে আভার কাছে আসলো সে। আভার হাত বেশ শ’ক্ত করেই ধরল সে। আভা বলল,

“ইশশ, কি হচ্ছে? ছাড়ুন। ভালো লাগছে না আমার।”
“সমস্যা কি তোর? এমন কেন করছিস? সামান্য রান্না নিয়ে এত রাগ দেখানোর মানে কি?”
“ছাড়তে বলেছিতো…”
তাশরীফ আরও শ’ক্ত করে ধ’রে বলল,
“ছাড়ব না, কি করবি?”
“কি করব?”
“হুম, কি করবি?”
আভা শান্ত হয়ে দাঁড়ালো। তাশরীফের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে সাথে সাথেই, তাশরীফের হাতে কা’ম’ড় বসিয়ে দিলো। তাশরীফ মৃদু চি’ৎ’কা’র করে, ছে’ড়ে দেয় আভাকে। আভা এমন কান্ড করে মাথায় হাত। রা’গে’র বশে এইটা কি করে বসলো!

তাশরীফ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো, বেশ ভালো করেই দা’গ বসে গেছে। তাশরীফ তাকালো আভার দিকে। আভা ভ’য়ে পিছ পা হচ্ছে, আর তাশরীফ দু কদম করে এগিয়ে যাচ্ছে।
“কাছে আসবেন না, ভ্ ভুল, ভুলে করে ফেলেছি.. প্লিজ….”
তাশরীফ এক হেঁ’চ’কা টা’ন দিয়ে কো’ম’ড় এক হাত দিয়ে চে’পে ধ’রে আভার। আভা নিষ্পাপ চাহনি দেয় তাশরীফের দিকে। তাশরীফ আলতো করে এগিয়ে যায় আমার মুখমণ্ডলের দিকে। আভার ঠোঁ/টগুলো নিজের দ’খ’লে নিয়ে নেয় সে। মুহুর্তের আভার ছ’ট’ফ’টা’নি স্থগিত হয়ে যায়। সাড়া দিতে থাকে, এক অনন্য অনুভূতির ডাকে।

ঘুম থেকে উঠে ফোনের স্ক্রিনে যখন দেখে ১১ টা বাজে লা’ফি’য়ে উঠে ফারাবী। ১১ টা বেজে গেছে সকাল! অথচ কেউ তাকে ডাকেনি? বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যায় ফারাবী। গোসল করে টাওয়াল প্যাঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই চোখাচোখি হয় তোহার সাথে। তোহা আর ফারাবী একসাথে দুজনেই চি’ৎ’কা’র দিয়ে উঠে “আ/হ/হ/ মাম্মীইইইইই…”
তোহার মুখ চে/পে ধ’রে ফারাবী। তোহা “উ’ম’ম’ম করছে। মু’খ চে’পে ধরায় বেচারি কিছু বলতেও পারছে না।

” আমার রুমে তুমি কি করছ হুম?”
তোহা ইশারা দিয়ে বুঝালো, “মু’খ চে’পে রাখলে কিভাবে বলব?”
“ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ,… কথাটি বলে সাথে সাথে তোহার মু’খ থেকে হাত সরায় ফারাবী। সাথে সাথে তোহা উল্টো দিকে ঘুরে বলল,
” ছি’হ্ এইভাবে কেউ ওয়াশরুম থেকে বের হয়? আপনার কি কাপড়চোপড় নেই?”
ফারাবী কালো টিশার্ট আর শর্ট প্যান্ট কোনোরকমে পরে বলল,
“না নেই, তুমি কি কিছু দেখেছ? দেখলেও সমস্যা নেই। আগে-পরে কেউ না কেউতো আমার সবকিছুই দেখবে তাই না?”

ফারাবীর মুখে এমন বে’হা’য়া’প’না কথা শুনে বরফের মত দাঁড়িয়ে রইল তোহা। সে ভেবেই পাচ্ছে না, এই ছেলেকে কি বললে একটু ল’জ্জা হবে।
ফারাবী মিটিমিটি হাসলো। বলল,
“তাকাও আমার দিকে।”
তোহা সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“ছি’হ, ছি’হ্, বিদেশী বিড়ালগুলো এত ল’জ্জাহী! আমারতো মানতেই ক’ষ্ট হচ্ছে।”
শব্দ করে হেসে ফেলল ফারাবী। বলল,
“আরে, জামা-কাপড় পরে ফেলেছি। তাকাও।”
তোহা পেছন তাকালো। চেইঞ্জ করে ফেলল তাকে রেখেই! ভাবতেই গ’লা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। তোহা দৌঁড়ে রুমের বাইরে চলে গেল। যেতে যেতে বলল,
“চা রেখে গেলাম, খেয়ে নিচে আসুন।”
ফারাবী হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা। মেয়েটা কেমন ল’জ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলো তার কথা শুনে।

তাশরীফ ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই দেখলো, বিছানায় আভা নেই। বিছানার সাইডে চা রাখা। গত রাতের কথা ভাবতেই সে হতভম্ব হয়ে যায়। আভার ঠোঁ/টে সে ঠোঁ/ট রেখেছে! মেয়েটা ওইসময় পারলে পা’লি’য়ে চলে যায় রুম থেকে। কোনোরকমে তার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। তাশরীফ আর ভাবতে পারছে না। কি জানি! আভা কি ভাবলো।
চা খেয়ে হসপিটালের যাবে বলে তাশরীফ নিচ তলায় যায়। গিয়ে দেখে আভা রুটি বানাচ্ছে। তাশরীফের দিকে এক পলক তাকাতেই, ল’জ্জা’য় মাথা নুইয়ে ফেলে আভা। আভার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, তোহা। তাশরীফ আভার দৃষ্টি এড়িয়ে তোহাকে বলল,

“আমি হসপিটালে যাচ্ছি।”
“খেয়ে যাবে না ভাইয়া?”
“না, বাইরে খেয়ে নিব।”
তাশরীফ বেরুতে যাবে ঠিক সেইসময়, কলিংবেল বেজে উঠে। তাশরীফ তোহা আর আভার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
“এ সময় আবার কে এলে বাড়িতে!”
তোহা দরজা খু’ল’তে যাবে, ঠিক সেইসময় তাশরীফ বলল,
“আমি দেখছি…”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৮

তাশরীফ দরজাটা খু’ল’তে’ই দেখলো, গ্রিন টপ, ব্লু জিন্স পড়া একটা মেয়ে। চুলগুলো ছোট ছোট, হিল পড়ে আছে। এক হাতে ঘড়ি, অন্য হাতে ব্রেসলেইট। এক হাতে ধরে আছে বড় ট্রলিটা। তাশরীফ না চিনতে পেরে বলল,
“ইয়েস…”
“আমি লারা, আমেরিকা থেকে এসেছি। ফারাবীর ফিয়ান্সে।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১০