প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১০
মারশিয়া জাহান মেঘ
তাশরীফ ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই দেখলো, বিছানায় আভা নেই। বিছানার সাইডে চা রাখা। গত রাতের কথা ভাবতেই সে হতভম্ব হয়ে যায়। আভার ঠোঁ/টে সে ঠোঁ/ট রেখেছে! মেয়েটা ওইসময় পারলে পা’লি’য়ে চলে যায় রুম থেকে। কোনোরকমে তার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। তাশরীফ আর ভাবতে পারছে না। কি জানি! আভা কি ভাবলো।
চা খেয়ে হসপিটালের যাবে বলে তাশরীফ নিচ তলায় যায়। গিয়ে দেখে আভা রুটি বানাচ্ছে। তাশরীফের দিকে এক পলক তাকাতেই, ল’জ্জা’য় মাথা নুইয়ে ফেলে আভা। আভার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, তোহা। তাশরীফ আভার দৃষ্টি এড়িয়ে তোহাকে বলল,
“আমি হসপিটালে যাচ্ছি।”
“খেয়ে যাবে না ভাইয়া?”
“না, বাইরে খেয়ে নিব।”
তাশরীফ বেরুতে যাবে ঠিক সেইসময়, কলিংবেল বেজে উঠে। তাশরীফ তোহা আর আভার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
“এ সময় আবার কে এলে বাড়িতে!”
তোহা দরজা খু’ল’তে যাবে, ঠিক সেইসময় তাশরীফ বলল,
“আমি দেখছি…”
তাশরীফ দরজাটা খু’ল’তে’ই দেখলো, গ্রিন টপ, ব্লু জিন্স পড়া একটা মেয়ে। চুলগুলো ছোট ছোট, হিল পড়ে আছে। এক হাতে ঘড়ি, অন্য হাতে ব্রেসলেইট। এক হাতে ধরে আছে বড় ট্রলিটা। তাশরীফ না চিনতে পেরে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ইয়েস…”
“আমি লারা, আমেরিকা থেকে এসেছি। ফারাবীর ফিয়ান্সে।”
আভা আর তোহা একে অপরের দিকে তাকালো৷ তাশরীফ অবাক হয়ে বলল,
“লারা? তুমি বাংলাদেশে!”
লারা তাশরীফের কথার বিশেষ জবাব দিলো না। তাশরীফকে এড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। এদিক/ওদিক উঁকিঝুঁকি দিয়ে বলল,
“ফারাবী, ফারাবী কোথায় তুমি? ফারাবী….”
তাশরীফ বেশ রুঢ় কন্ঠেই বলল,
“এক্সকিউজ মি, মিস লারা, এইটা ভদ্রলোকের বাড়ি। এইখানে এইভাবে চিৎকার করার কিছু নেই। আপনি অনেক লং জার্নি করে এসেছেন। রেস্ট করুন। আভা….”
আভাকে তাশরীফ ডাকতেই আভা বুঝলো কিসের জন্য তাশরীফ তাকে ডেকেছে। আভা মাথা নাড়ালো। তাশরীফ বেরিয়ে গেছে হসপিটালে যাওয়ার জন্য। তোহা নাক বেংচি কে/টে বলল,
“এই মেয়েকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাই না? বেশ অহংকারী। বিদেশের কালচার নিয়ে বাংলাদেশে আসে কেন বুঝি না।”
“বা দে এসব। যা, এখন.. শরবত বানা এক গ্লাস মেয়েটার জন্য।”
লারা সোফায় বসে আশেপাশে বার বার ফারাবীকে খুঁজছে। তোহা শরবতের গ্লাসটুকু লারার দিকে এগিয়ে দিতেই লারা হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলে দেয়। আকস্মিক ঘটনায়, তোহা চমকে উঠে৷ রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে আভা। প্রশ্ন করে বলল,
“এইটা তুমি ফেলে দিলে কেন?”
“হু আর ইউ?”
তোহা রে’গে গেল। বলল,
“এই মেয়ে যার বাড়িতে এসেছ, তাকেই বলছ? ‘হু আর ইউ? ফেললে কেন গ্লাসটা?”
“আমি এইসব খাই না তাই। ছোটলোকের মত, শরবত কেন দিয়েছ? কুল ড্রিংকস দিতে পারতে।”
আভা ঠান্ডা স্বরে বলল,
“এইটা আমেরিকা নয়, এইটা বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কুল ড্রিংকস পাওয়া যায় না তা নয়। তুমি বললেই দিতাম। এই গরমে আমার মনে হলো শরবতটাই ভালো তাই এইটা দিয়েছি। তোমার ফেলে দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল?”
“আমি তোমাদের সাথে কথা বলতে চাই না। আমার ফারাবী কোথায়?”
তোহা বলল,
“আমার ফারাবী, আমার ফারাবী করছ কেন? এমন ভাব যেন বিয়ে করা বউ। এখনো বিয়ে করেনি ওকে?”
“হাউ ডেয়ার ইউ…”
লারা যেই তোহাকে থা’প্প’র দিতে যাবে, এমন সময় ফারাবী এসে লারার হাত ধরে ফেলে। ফারাবী দাঁতে দাঁত চে’পে বলল,
“লারা, ইটস নট ইউর আমেরিকা। এন্ড নট, ইউর প্রোপার্টি। যে, যাকে তাকে গায়ে হাত তুলবে। তোমার বাবার রাজপ্রসাদ পাওনি এইটা। ওদের বাড়ি এসে, ওদের সাথেই তোমার এইসব উ’গ্র মে/জা/জ দেখাচ্ছ?”
লারা ফারাবীকে দেখে জ’ড়ি’য়ে ধরে। ফারাবী আভা আর তোহার সামনে বেশ সংকোচকর একটা পরিস্থিতিতে পরে গেছে। আভা আর তোহা অন্য দিকে দৃষ্টি রাখলো। ফারাবী লারাকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
“কি করছ লারা? ছাড়ো। মানুষ দেখছে। হচ্ছে টা কি? ছাড়ো…”
বেশ জো’র করেই লারার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় ফারাবী। ফারাবী বলল,
“তুমি এইখানে এসেছ কেন?”
“তুমি আমেরিকাতে নেই তাই তোমাকে নিতে এসেছি বেবি। ফাস্ট সব গুছিয়ে নাও।”
“আর ইউ ম্যাড? আমি তোমার সাথে যাব? আমি কোথায় যাব না লারা। তুমি আগামীকালই আমেরিকা ব্যাক করবে।”
“তোমাকে না নিয়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
আভা বলল,
“তোহা চল আমরা ব্রেকফাস্ট রেডি করি। ওনারা কথা বলুক।”
“হ্যাঁ, চল।”
ফারাবী তোহার দিকে এক পলক তাকিয়ে লারার হাত ধরে টা’ন’তে টা’ন’তে উপরতলায় নিয়ে গেল।
“মেয়েটা এত বে’য়া’দ’ব যে না বলে পারছি না।”
আভার কথায় তোহাও সঙ্গ দিলো। বলল,
“লাল বান্দর এসেছে আমাদের বাড়িতে। দেখিসনি? চুলগুলো কি লাল লাল।”
“ফারাবী ভাইয়া আর কোনো মেয়ে পেলো না? এই মেয়েকে কেন বিয়ে করবে বুঝতে পারলাম না।”
তোহা ভাবুক হয়ে বলল,
“আমারতো সন্দেহ হচ্ছে।”
“কিসের?”
“ফারাবী ভাইয়ের ফেইস দেখেছিস? কেন জানি মনে হলো, মেয়েটাকে এইখানে দেখে ওনি মোটেও হ্যাপি নন।”
“আমারও মনে হয়েছে জানিস? হয়তো রে’গে আছে তাই।”
তোহা অন্য মনস্ক হয়ে বলল,
“হতে পারে…”
আভা বিরক্ত নিয়ে বলল,
“ফরিদা আপা আজ ৩ দিন ধরে কাজে আসছে না। মনে হয় না, এইবার তাশরীফ ভাই ওনাকে কাজে রাখবে। আগেতো যাইহোজ জিগ্যেস করতো, ” ফরিদা আপা আসেনি?” এখনতো তাও বলে না।”
তোহা বলল,
“একবার কল করে দেখব?”
“দিলেতো খারাপ হয় না। কল দিয়েই দেখ।”
তোহা সঙ্গে সঙ্গে কল লাগালো ফরিদা আপার নাম্বারে। ওপাশ থেকে ফরিদা আপা তাড়াতাড়ি কন্ঠে বলে উঠল,
“আপামনি, আইতাছি আমি।”
“আপা, ভাইয়া কিন্তু তোমার উপর অনেক রে/গে আছে। ভালোভাবে মিথ্যে কথা বলিও।”
“আমি ভাইবাই রাখছি আপামনি।”
কল রাখতেই তোহা খিলখিল করে হাসে। ফরিদা আপাকে সেই সবসময় প্রটেক্ট করে তাশরীফের থেকে। ফরিদা আপা বেশিরভাগই আসে না। পরিবারে নানান সমস্যা।
“তোমার ডে’ড এর থেকে আমার ডে’ড ১ কোটি টাকা পায় বলে কি, তার বিনিময়ে আমাকে তোমরা কিনে নিয়েছ লারা? তোমার সব কথা আমার কেন শুনতে হবে?”
লারা ন্যা’কা কান্না কেঁদে বলল,
“কি? তুমি আমাকে এইভাবে কথাটা বলতে পারলে ফারাবী? তুমি ভুলে যাচ্ছ? তোমার ডে’ড আমার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে।”
“বিয়ে ঠিক করেছে, কিন্তু আমিতো এই বিয়েতে রাজি নয়। দেখো লারা, তুমি সুন্দর, তোমার জন্য ছেলের অভাব হবে না। প্লিজ আমার পিছু ছেড়ে দাও।”
লারা ফারাবীর টিশার্ট ধরে টা’ন দিয়ে ফারাবীকে নিজের কাছে আনে। চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমার অন্য কাউকে নয়, তোমাকেই লাগবে ফারাবী। আই ওনলি ওয়ান্ট ইউ ফর মাই লাইফ।”
“বাট, আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইউ।”
“ফারাবী… তুমি যদি আমার সাথে এমন করতে থাকো, তাহলে আমি আমার ডে’ডকে বলতে বাধ্য হব। এর ফলাফল কিন্তু ভালে হবে না… তোমার ডে’ড… আই হোপ, বুঝতেই পারছ।”
কথাগুলো বলেই লারা ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুমের দরজা লা’গাতে যাবে এমন সময় আবার ফারাবীকে ডাকলো।
“ফারাবী…”
“হুম…”
“এই রুমেই থেকো। আমি টাওয়াল চাইলে আমাকে তুমি দিবে। দরজা বন্ধ করে দাও রুমের। আজ তোমাকে একদম কাছে চাই আমি।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৯
কথাটি বলেই ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দেয় লারা। ফারাবী চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল,
“ডে’ড এর জন্য এমন একটা মেয়ের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হচ্ছে আমাকে। ফারাবী রাজকে মেয়েটা পুতুলের মত নাচাচ্ছে! না, বিষয়টার একটা সমাধান করতেই হবে। আজ রাতেই তাশরীফকে পুরো বিষয়টা জানাতে হবে।”