প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৪৬
তানিশা সুলতানা
গভীর ভাবনায় বিভোর মনা। হিসাব মিলছে না। অভিরাজের সাথে চালাকিতে পেরে উঠছে না। ২৮ দিন হয়ে গেলো তারা একসাথে আছে। এখনো অভিকে বিছানায় আনতে পারে নি। কথায় বলে “পুরুষ নারীর শরীরে সুখ খুঁজে পায়”
আগুন আর ঘী পাশাপাশি থাকলে জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছারখার করবেই এমনটাই লোকমুখে প্রচলিত কথা। কিন্তু অভিরাজ কেনো জ্বলছে না?
কেনো আকৃষ্ট হয়ে মনাকে কাছে টেনে নিচ্ছে না? নরম শরীরের ছোঁয়ার নিজেকে শান্ত করছে না। কেনো অশান্ত হচ্ছে না?
তবে কি সত্যিই অভিরাজের পুরুষত্বে সমস্যা রয়েছে? সমস্যা থাকলে পূর্ণতাকে কাছে টেনে নিলো কি করে?
“এক নারীতে আসক্ত পুরুষ ভয়ংকর। তারা অনুভূতি লুকাতে পারে। শখের নারী ছাড়া দ্বিতীয় নারীর নিকট অনুভূতি জাহির করে না”
কথাটা বোধহয় মনা জানে না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আপাদমস্তক নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে মনা। ঢিলেঢালা পোশাকে তাকে বেশ আবেদনময়ী লাগছে। বক্ষবিভাজের সুগঠিত ভাজ স্পষ্ট। যেকোনো পুরুষের নজর কাড়তে সক্ষম। কমলার কোয়ার ন্যায় ওষ্ঠে সর্বক্ষণ লিপস্টিকিকে প্রলেপ লাগিয়ে রাখে। যেনো অভি তাকাতেই আকৃষ্ট হয়।
কিন্তু অভিরাজের নজরই পড়ছে না।
নিজের সাজানো পরিকল্পনা বিফলে যাচ্ছে ভাবতেই রাগে ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করে মনার। পরাজিত সৈনিকের ন্যায় হুঙ্কার ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে সাজানো প্রয়োজনীয় কসমেটিকস ফেলে দেয়। তাতেও ক্ষ্যান্ত হয় না। ড্রেসিং টেবিলের ডয়ারে রাখা অভিরাজের দামি ফোনখানা দেয়ালে স্ব জোরে আঘাত করে। মুহুর্তেই ভেঙে গুড়িয়ে যায় ফোনখানা। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ভাঙা ফোনের অংশ।
সকল প্রমাণ বোধহয় লোটপাট হয়ে গেলো। মিষ্টির করা আকুতিভরা মেসেজ গুলো নিঃশেষ হয়ে গেলো। অভিরাজ কখনো জানতেই পারলো না “তার আদরের কলিজার টুকরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে তাকে শেষবার দেখতে চেয়েছিলো। বাঁচার জন্য ছটফট করেছে প্রতি মুহুর্তে”
শান্ত হয়ে বসে মনা৷ এবার শান্তি লাগছে। হেরে যেতে শিখেছি সে। সঠিক সমাধান বের করতে হবে। ফোনের মতোই ভেঙে গুড়িয়ে দিতে হবে অভিরাজের সকল পরিকল্পনা। সূত্র খুঁজতে থাকে মনা।
মনে পড়ে অভির বলা কথা গুলো
“সে পাপী। খু ন করেছে। নারী প্যাচারও সে করেছে।
নিজেকে যেসব কাজের মেইন কালপ্রিট হিসেবে মনোনীত করলো আসলে সেসব কাজ অভিরাজ করেই নি। তাহলে কেনো বললো? নির্দোষ দাবি করতেই পারতো।
কি চলছে অভির মনে?
আবার কোন নতুন চাল দিয়ে বাজিমাত করতে চলেছে সে?
ছোট থেকেই অভিরাজকে দেখছে মনা। অত্যাচার নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। একবেলা খাবার পেয়েছো তো আরেক বেলা পায় নি। তার কারণ অভাব নয়। অভির প্রতিবাদ।
অভিকে থামাতে পারছিলো না কেউ। জমিদারদের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো অভি এবং তার মা অনামিকা বেগম। ছোট্ট অভিরাজ বাবা দাদার মাথার ওপর দিয়ে ছুঁড়ি ঘুরিয়ে চলেছিলো দিনের পর দিন।
অতঃপর জমিদার সাহেবের কুটিল বুদ্ধির প্রবলে অভির চোখের সামনেই তার মাকে অপবাদ দেওয়া হলো। মুখে চুনকালি লাগিয়ে জমিদার বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো। পরকীয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো অনামিকাকে।
অভি তার মায়ের সাথে চলে যেতে চাইলে তাকে আটকায় মনোয়ার।
অসহায় অনামিকা বেগমের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা ছিলো না। মনোয়ারের পা জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলো কিন্তু বিশ্বাস করে নি মনোয়ার।
অভি চিৎকার করে কান্না করে বলছিলো ” সে মায়ের সাথে চলে যেতে চায়”
তাকে চিলেকোঠার কক্ষে আটকে রাখে জমিদার বাড়ির প্রহরিগণ।
তারপর থেকেই অভিরাজ আর প্রতিবাদ করে নি। যেনো প্রতিবাদ শব্দটাকে ভুলেই গিয়েছিলো। জমিদার বাড়িতে এমন কোনো পাপকার্য নেই যা করা হতো না। অভি চুপচাপ দেখে যেতো।
আনামিকা বাড়ি ছাড়া কিছু ঘন্টা পরেই মনোয়ার নতুন বউ বাড়ি তুলে।
বউ বিয়ে সম্পর্কে তখন অভির জ্ঞান ছিলো। চুপচাপ অভিরাজ পড়াশোনার বাইরে কোনোদিকেই মন দিতো না। অতঃপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মনোয়ারের দ্বিতীয় স্ত্রীর কোল আলো করে জন্ম নেয় মিষ্টি। মা চলে যাওয়ার পরে সেইদিনই হেসেছিলো অভি। ছোট্ট বোনটাকে বুকে জড়িয়ে গোটা জমিদার বাড়ি হেঁটেছিলো।
নারীর প্রতি ঝোঁক কখনোই ছিলো না তার।
সুন্দরী সুন্দরী নারীদের মধ্যরাতে অভির রুমে ঢুকিয়ে দিতেন জমিদার সাহেব। কিন্তু অভি তাদের দিকে ফিরেও তাকাতো না।
ঠিক এই কারণেই অভিকে মনা এতো ভালোবাসে। মানতেই হবে জমিদার বাড়ির একমাত্র শুদ্ধ পুরুষ।
মনার মনে পড়ে পূর্ণতার সেই জোর গলায় বলা কথাগুলো
“গোটা জমিদার বাড়ির একমাত্র শুদ্ধ পুরুষ আমার এমপি সাহেব”
সত্যিই তাই।
পূর্ণতা ভাগ্যবতী। কপাল করে শুদ্ধ পুরুষকে পেয়েছে।
তবে আবার পূর্ণতা অভাগ্যবতীও। কপাল দোষে শুদ্ধ পুরুষকে হারিয়েছে।
প্রাণ থাকতে মনা অভি পূর্ণকে এক হতে দেবে না।
প্রচন্ড তেষ্টায় গলা শুকিয়ে আসে মনার। খাটের পাশে টি-টেবিলের ওপরে থাকা পানির গ্লাস হাতে তুলে ঢকঢক করে গিলে ফেলে। অতঃপর মিনিট পাঁচেক পরেই ঘুমে চোখ ভেঙে আসে। বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। কোনোরকমে হেলেদুলে হেঁটে খাটের নিকট এসেই শুয়ে পড়ে। পরপরই ঘুমের অতল গভীরে তলিয়ে পড়ে।
চোখ বন্ধ করার আগে বিরবির করে বলেছিলো
“একদম ঠিক কাজ করছো না অভি। এর মাসুল তোমায় দিতে হবে
কালো গোলাপের বাগান পরিচর্যা করা শেষ। “অভি পূর্ণের সুখের নিবাস” পুরোপুরি তৈরি।
অভি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে পুরো বাড়িটা। কোথাও কোনো ক্রুটি রয়েছে কি না এটা দেখাই তার মূখ্য বিষয়। তবে এতো বড় প্রসাদে কেনো ভুল দেখতে পায় না। মানতেই হবে কর্মচারীদের নিখুঁত সৃষ্টি এই প্রাসাদ।
প্রসন্ন হাসে অভি। আরও কিছু টাকা বকশিস দিতে চায় তাদের।
আসবাবপত্র চলে এসেছে৷ সকল কক্ষ সাজাচ্ছে কর্মচারীরা। তবে মিষ্টির কক্ষ নিজ হাতে সাজানোর উদ্যোগ নেয় অভি।
মিষ্টির কক্ষের সামনে বড়বড় আকারে “মিষ্টি” নামখানা লেখা হয়েছে। কিছু মুহুর্তের মধ্যে নিজ হাতে রুম খানা গুছিয়ে ফেলে অভি। দেয়ালে বড় করে টাঙিয়েছে মিষ্টি একখানা হাসিমাখা ফটো। ফটোখানার বয়স দুই মাস। বোনের অগোচরে তুলেছিলো অভি।
আর মাত্র দুটো দিন। তারপর মিষ্টি এই রুমে থাকবে। দাভাই বলে উচ্চস্বরে ডাকবে। এটা সেটা কিনে দেওয়ার বায়না করবে।
কতোদিন বোনটাকে দেখা হয় না। কেমন আছে কে জানে?
শেষবার যখন কথা হয়েছিলো তখন মিষ্টি বলেছিলো “তার বুকে ব্যাথা”
অভি তখুনি মনোয়ারকে জানিয়েছিলো কথাটা। ডাক্তারকে কল করে বাড়িতে যেতে বলেছিলো। শিউলি, রেশমা, রিমা তাদের সবাইকে কল করে বলেছিলো “মিষ্টির খেয়াল রাখতে”
মিষ্টির যত্নের বিনিময়ে শিউলির হাতে বেশ অনেক গুলো টাকা গুঁজে দিয়েছিলো অভি।
মনা অভির ফোন খানা নিয়ে নিয়েছে। শতবার চাওয়ার পরেও ফেরত দেয় না। অভিরও কিছু করার ছিলো না মেনে নেওয়া ছাড়া।
“একটা সুখের দিনের জন্য মানুষ কতোগুলো দুঃখ দিন কাটিয়ে ফেলে”
অভিও তাই করেছে।
বাকি জীবন সুখে কাটাবে বলে কিছু দিন নিজে সহ প্রাণপ্রিয় স্ত্রী এবং কলিজার টুকরো বোন অসুখে জীবন অতিবাহিত করেছে।
তবে এবার তাদের দুঃখের দিন শেষ। সুখ এসে দরজায় কড়া নারছে।
বুকশেলফে মিষ্টির বই গুলো সাজানো শেষ হতেই অভির চাকচিক্য ফোনখানা বেজে ওঠে।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে অভির। পুলিশ কল করেছে নিশ্চিত৷
অতিদ্রুত কল রিসিভ করে কানে তুলে
“হ্যালো পুলিশ
আমার বউ আর বোনকে পেয়েছেন?
পুলিশ অফিসার জামিল আমতাআমতা করতে থাকে। কিভাবে বলবে কথা খানা? শুকনো ঢোক গিলে জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
” স্যার আপনার দাদিমা পুরো শহর রটিয়ে দিয়েছে পূর্ণতার সঙ্গে ইফতিয়ারের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে৷ আর আপনি বউয়ের শোকে এমপি পদ ত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। আপনসর বউয়ের নামে থা
বাকিটা শেষ করার আগেই গর্জে ওঠে অভিরাজ। হুঙ্কার ছেড়ে বলে
“শু”””””””বাচ্চার মুখ সেলাই করে দে। আমার ফুলের পবিত্র বউকে অপবাদ দেওয়ার সাহস হয় কি করে?
কেঁপে ওঠে জামিল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” প….পূর্ণতাকে ইফতিয়ার চৌধুরী নিয়ে গিয়েছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অভি। রাগ কমলো বোধহয় কিছুটা। ঠান্ডা গলায় বলে
“আপনি আমার মা আর বোনকে এখানে আনার ব্যাবস্থা করুন। ইফতিয়ার চৌধুরী নিজ দায়িত্বে আমার পূর্ণকে আমার কাছে পৌঁছে দিবে।
” স্যার এতোটা বিশ্বাস বউয়ের ওপর?
হাসে অভি। মিষ্টির রুমের বারান্দায় চলে এসেছে ততক্ষণে। আসমান পানে তাকিয়ে বলে
“অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। পূর্ণকে ছেড়ে চলে এসেছি। মনাকে বিয়ে করেছি এমন খবরও জেনেছে। ভীষণ আঘাত দিয়েছি তাকে। তবুও যদি তাকে জিজ্ঞেস করেন ” অভি সম্পর্কে কিছু বলুন”
সে অকপটে বলে দিবে “এই পৃথিবীর সব থেকে শুদ্ধ পুরুষটি হচ্ছে আমার এমপি সাহেব। ফুলের ন্যায় পবিত্র”
এমন একটা মেয়ের প্রতি এইটুকু বিশ্বাস থাকবে না?
জামিলও তৃপ্তির হাসি হাসে।
“আমি মন থেকে দোয়া করি। আল্লাহ আপনাদের নতুন যাত্রা শুভ করুক।
পূর্ণতার জ্ঞান ফিরেছে দীর্ঘক্ষণ হলো। চোখ খুলেই ইফতিয়ারের কাছে আবদার করেছে ” আমাকে আপনার স্বামীর কাছে দিয়ে আসুন”
ইফতিয়ার কথা দিয়েছে “খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণতাকে তার স্বামীর কাছে পৌঁছে দিবে”
এই মুহুর্তে তারা দাঁড়িয়ে আছে চৌধুরী বাড়ির সামনে। ইসমাইল চৌধুরী পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না৷ এবং কিছুতেই ঢুকতে দিবে না।
“ইফতিয়ার মেয়েটিকে পুলিশের কাছে দিয়ে দাও।
গম্ভীর কন্ঠস্বর তার। এতোটা গম্ভীর বাবাকে কখনোই দেখে নি ইফতিয়ার।
পূর্ণতা ইফতিয়ারের পেছনে লুকিয়েছে। পুলিশ ধরলে তাকে বাঁচতে দিবে না। জমিদারদের নিকট দিবে। বা পতিতালয়ে দিয়ে আসবে। জমিদারদের কুটিল বুদ্ধি সম্পর্কে বেশ অবগত পূর্ণতা। কিন্তু ইফতিয়ার তো অবগত নয়। সে যদি সত্যিই পুলিশে দিয়ে দেয়?
কলিজা কেঁপে ওঠে পূর্ণতার। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে।
ইফতিয়ার বাবার চোখে চোখ রেখে বলে
” উনি আমাদের বাড়িতে থাকবে বাবা। সুরক্ষিত
বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে ইসমাইল।
“এই মেয়েটার জন্য তোমার নাম উঠেছে পুলিশের খাতায়। একে দিয়ে আসবে এখুনি।
ইফতিয়ারও সমান জেদ দেখিয়ে বলে
” দিয়ে আসবো না বাবা।
“তাহলে তোমারও জায়গা হবে না আমার বাড়িতে।
” বাবা বাড়াবাড়ি করছো তুমি।
“বাড়াবাড়ি তো এখন করবো। আমিই কল করছি পুলিশকে।
নিজ কক্ষে হয়ত ফোন রেখে এসেছে ইসমাইল। তাই বড়বড় পা ফেলে নিজ কক্ষের পানে এগোয়। ইফতিয়ার বাবার মতিগতি বুঝতে পারে। মুহুর্তেই পূর্ণতার হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ধরে
” পূর্ণতা আমাদের পালাতে হবে।
বলতে বলতেই দৌড়ে কালো গোলাপ বাগানের ভেতরে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে।
পুলিশ চৌধুরী বাড়ির আশেপাশেই ছিলো। তাই কল করতেই তারা পাঁচ মিনিটেই চলে আসে।
ইসমাইল অবাক হয়। কেনোনা পূর্ণতা ইফতিয়ার কেউ নেই। এতো দ্রুত কোথা গেলো ওরা?
“ওরা বেশিদূর পালাতে পারে নি। আপনারা বাড়ির চারিদিক ঘিরে ধরুন এবং খুঁজুন।
মুহুর্তেই পুলিশরা এদিকে ওদিক খুঁজতে শুরু করে। ইসমাইল কপাল চুলকাতে চুলকাতে চিন্তা করে
” কোথায় যেতে পারে?
কোনোভাবেই পালাতে দেওয়া যাবে না। পূর্ণতাকে চাই আমার।
ভয়ে কাঁপছে পূর্ণতা। ইফতিয়ার বারবার আশ্বাস দিচ্ছে
“ভয় পেয়ো না পূর্ণতা। আমি তো আছি। প্রাণ থাকতে তোমার ক্ষতি হতে দিবো না।
পূর্ণতা বিশ্বাস করে ইফতিয়ারকে। তবে ইফতিয়ারকে নয় অভিকে পাশে চায় সে।
ভাগ্যক্রমে কখনোই বিপদে অভির সাহায্য পায় না। জীবনের সব থেকে বড় অভিমান এটাই পূর্ণতার। একদিন অভির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করবে ” আমার বিপদে আপনি কেনো থাকেন না এমপি সাহেব? আমি যে আপনার অপেক্ষায় থাকি। আমার অপেক্ষার অবসান কেনো ঘটে না?”
দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে পূর্ণতার দুচোখ বেয়ে। হাতের উল্টো পিঠে মুছে নেয় পানি টুকু। বাঁকা নয়নে ইফতিয়ারের মুখ পানে তাকায়।
ইফতিয়ার চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে থাকে এখান থেকে কি করে বের হবে? পুলিশ চারদিকে থেকে ঘিরে ধরেছে ওদের। যেকোনো মুহুর্তে ধরা পড়তে পারে। বুক কাঁপছে ইফতিয়ারের। হাত পায়েও মৃদু কাঁপন অনুভব করে।
পুলিশ এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। যখন তখন পুলিশের চোখ পড়বে ওদের পানে। আর শেষ হয়ে যাবে সবটা।
ঠিক তখনই ইফতিয়ারের বন্ধ চোখের পাতায় ভেসে ওঠে মিষ্টির ডাইরির পাতায় লেখা কিছু কথা।
” চৌধুরী সাহেব
আমাদের একটা সংসার কবে হবে? সারাদিন শেষে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে মিষ্টি বলে কবে ডাকবেন? কবে আপনার জন্য রান্না করবো আমি? কবে আপনার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে দু পা হাঁটবো? আপনার ঘামে ভেজা বুকের বা পাশে কবে মাথা রাখবো?
এইজীবনে কি আমার স্বপ্ন পূরণ হবে না? আপনাকে দুচোখ ভরে দেখার আক্ষেপ কি এ জীবনে মিটবে না?
আপনার ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য কি আমার নেই? আমার ভাগ্যটা এতো খারাপ কেনো চৌধুরী সাহেব?
অপর পৃষ্ঠায় লেখা ছিলো
প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৪৫
“আপনার সাথে দূরে কোথাও চলে যেতে চাই এমপি সাহেব। যেখানে আমি আপনি ছাড়া পরিচিত কেউ থাকবে না। শান্তিতে নিঃশ্বাস টানতে পারবো। পাপ থাকবে না সে শহরে। বিলাসিতা চাই না আমার। শুধু ছোট্ট একটা ঘর হলেই চলবে।
নিয়ে যাবেন আমায়?
মুক্তি দিবেন এই পাপের রাজ্য হতে?
চট করক ইফতিয়ার চোখ খুলে। পূর্ণতার পানে তাকিয়ে বলে
” দূরে কোথাও যাবে পূর্ণতা? যেখানে শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারবে। যেখানে পাপ থাকবে না।
যাবে আমার সাথে?